দান দিয়ে অনুতাপ করা এবং কৃপণতার সহিত চলা, দান না করার ফলে শ্রেষ্ঠী কোন নরকে গমন করেছিলেন?
ইলা মুৎসুদ্দী
কোশলরাজ প্রসেনজিৎ মধ্যাহ্নে ভগবানের নিকট উপস্থিত হলেন। ভগবান তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন “মহারাজ, আপনি কোত্থেকে আসছেন?” উত্তরে রাজা বললেন “ভদন্ত, শ্রাবস্তীতে জনৈক পরলোক গমন করেছেন। আমি তাঁর অপুত্রক সম্পদ রাজান্তঃপুরে আনিয়ে এখানে আসছি। তাঁর সঞ্চিত স্বর্ণমুদ্রা শত লক্ষ, রৌপ্যের কথাই বা কি! এ শ্রেষ্ঠীর এরকম অন্নভোগ বা আহার ব্যবস্থা ছিল তিনি খুদের ভাত খেতেন, তিন টুক্রো জোড়া শণবস্ত্র পরতেন এবং জর্জর রথে পর্ণছত্র ধারণে চলাফেরা করতেন।
ভগবান বললেন – হাঁ, মহারাজ অতীতকালে এ শ্রেষ্ঠী গৃহপতি তগরশিখি নামক জনৈক প্রত্যেক বুদ্ধকে অন্নদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। তখন শ্রমণকে ভিক্ষা দাও বলে নির্দেশ দিয়ে তিনি আসন থেকে উঠে চলে গিয়েছিলেন। গিয়ে তিনি পরে অনুতপ্ত হয়েছিলেন যে এ অন্ন তো আমার দাস কিংবা কর্মচারীরা খেতে পারত, তাই ভাল হত। আবার তিনি সম্পত্তির কারণে নিজের ভ্রাতার পুত্রকে হত্যা করেছিলেন। মহারাজ, সে শ্রেষ্ঠী যে প্রত্যেক বুদ্ধ তগরশিখিকে অন্নদানের ব্যবস্থা করেছিলেন, সে কর্মের ফলে সাত বার সুখময় স্বর্গলোক জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। সে কর্মেরই ফলাবশেষ ভোগের জন্য এ শ্রাবস্তীতেই সাত বার শ্রেষ্ঠীত্ব লাভ করেছিলেন। সে শ্রেষ্ঠী যে এ অন্ন আমার দাস কর্মচারীদের দিলে ভাল হত ভেবে অনুতপ্ত হয়েছিলেন, সে অনুতাপের ফলে তার উদারভাবে খাওয়া দাওয়ার ইচ্ছা জাগেনি, উত্তম বস্ত্রাদি পরণের ইচ্ছা হয়নি, উত্তম রথারোহণের ইচ্ছা হয়নি এবং উত্তমরূপে পঞ্চ কাম্য বিষয়ভোগে তৃপ্ত হবার বাসনা জাগেনি।
তিনি যে সে জন্মে সম্পত্তির কারণে ভ্রাতার একমাত্র পুত্রকে হত্যা করেছিলেন, সে কর্মের ফলে বহু বহু লক্ষ বৎসর নরকে পচেছিলেন। সে কর্মেরই ফলাবশেষ ভোগের জন্য শ্রাবস্তীতেই সপ্তম বার তাঁর অপুত্রক সম্পদ রাজকোষে প্রবেশ করল। মহারাজ, সে শ্রেষ্ঠীর পুরাতন পুণ্য ক্ষয় হয়েছে, নুতন পুণ্য সঞ্চিত হয়নি। আজ সে শ্রেষ্ঠী মহারৌরুব নিরয়ে পচিতেছেন।
রাজা- তাহলে সে শ্রেষ্ঠী মহারৌরুব নিরয়ে জন্ম নিয়েছেন!
ভগবান- হাঁ, মহারাজ, তিনি মহারৌরুব নিরয়ে জন্ম নিয়েছেন।
ধন, ধান্য, রজত, স্বর্ণ যা কিছু সম্পদ আছে এবং দাস কর্মচারী পেয়াদা যে পোষ্যবর্গ আছে, সমস্তই ফেলে যেতে হবে, কিছুই সঙ্গে নেয়া যাবে না। লোক কায় বাক্ মনে যা কিছু করে, তাই তার নিজস্ব হয়, তা নিয়েই যায় এবং তা অনপনেয় ছায়ায় মত তার অনুগামী হয়। সেজন্য (সুখাভিলাষীর) চয়নীয় পারলৌকিক হিতকর পুণ্য সম্পাদন করা উচিত। পুণ্য কর্মসমূহ পরলোকে প্রানীদের প্রতিষ্ঠা হয়।
সূত্র ঃ সংযুক্ত নিকায় ১ম ও ২য় খন্ড, অনুবাদক-শীলানন্দ ব্রক্ষ্মচারী