চারজনকে ছোট বলে অবজ্ঞা করা উচিত নয়, অবহেলা করা বিধেয় নয়। কোন চারজন? —-বুদ্ধ কাকে এবং কখন বলেছিলেন?
ইলা মুৎসুদ্দী
এক সময় ভগবান শ্রাবস্তীর জেতবনে অনাথপিন্ডিকের বিহারে বাস করার সময় কোশলরাজ প্রসেনজিৎ ভগবানের কাছে উপস্থিত হয়ে ভগবানকে সম্ভাষণ করলেন এবং ভগবানকে জিজ্ঞেস করলেন “ভবৎ গৌতমও অনুত্তর সম্যক সম্বোধি বা উত্তম পূর্ণ জ্ঞান আয়ত্ত করেছেন বলে স্বীকার করেন কি?”
ভগবান- মহারাজ! যাঁকে ‘অনুত্তর সম্যক সম্বোধি অভিসম্বুদ্ধ সম্যক্ ভাবে বলতে গিয়ে যথার্থভাবে বলতে পারে, সে আমাকেই বলতে পারে। মহারাজ! আমি অনুত্তর সম্যক সম্বেধি লাভ করেছি।
রাজা- ভবৎ গৌতম, জনসমাজে সাধুসম্মত সঙ্ঘপ্রবর্তক গণপ্রবর্তক গণাচার্য বিখ্যাত যশস্বী যে তীর্থঙ্কর শ্রমণব্রাহ্মণ আছেন, যথা- পূরণ কাশ্যপ, মক্ষলি গোশাল, নির্গ্রন্থ নাথপুত্র, সঞ্জয় বেলাস্থিপুত্র, প্রকুধ কাত্যায়ন, অজিত কেশকম্বলী, তাঁরাও আমার প্রশ্নের উত্তরে অনুত্তর সম্যক সম্বোধি লাভ করেছেন বলে দাবী করেন না; আপনি তো বয়সে ছোট, প্রব্রজ্যায় বা দীক্ষায় নবীন।
ভগবান- মহারাজ! চারজনকে ছোট বলে অবজ্ঞা করা উচিত নয়, অবহেলা করা বিধেয় নয়। কোন চারজন? ক্ষত্রিয় বা রাজকুমার, উরগ বা সর্প, অগ্নি এবং ভিক্ষু- এ চারজনকে ছোট বলে অবজ্ঞা করা উচিত নয়, অবহেলা করা বিধেয় নয়। এ উক্তির পর তিনি পুনরায় বললেনঃ
জাতিসম্পন্ন অভিজাত যশস্বী ক্ষত্রিয় বা রাজকুমারকে বালক বলে অবজ্ঞা করা উচিত নয়, লোক তাকে অবহেলা করবেনা। কারণ, সে রাজকুমার রাজত্ব লাভ করে রাজা হয়ে μোধবশত অবমাননাকারীর ওপর রাজদন্ড প্রয়োগ করতে পারে। তাই নিজের জীবন রক্ষার জন্য তাকে এড়িয়ে চলা উচিত।
গ্রামে কিংবা অরণ্যে যেখানে বিষধর সর্প দেখবে, তাকে ক্ষুদ্র বলে উপেক্ষা করবে না। লোক তাকে ঘাঁটায় না। সে সর্প স্বীয় তেজে নানারূপে বিচরণ করে। (আμমণকারী) অজ্ঞ নরনারীকে একদা কাছে এসে দংশন করতে পারে। তাই নিজের জীবন রক্ষার জন্য তাকে এড়িয়ে চলবে।
প্রজ্জ্বলিত সর্বভূক্ অগ্নিকে ক্ষুদ্র বলে উপেক্ষা করবে না। লোক তাকে অবহেলা করেনা। কারণ, সে অগ্নি উপাদান লাভে প্রকাশ্য হয়ে একদা কবলগত করতে পারে। তাই নিজের জীবন রক্ষার জন্য তাকে এড়িয়ে চলা উচিত।
অগ্নি যখন দগ্ধ করে, দিবারাত্রি শেষে সে দগ্ধ বনে আবার (তৃণগুল্মবৃক্ষলতাদি) উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়। কিন্তু শীলসম্পন্ন ভিক্ষু যাকে শীলতেজে দগ্ধ করে, তার পুত্রগণ ও পশুসম্পদ ধ্বংস হয় এবং উত্তরাধিকারীরাও ধনলাভে বঞ্চিত হয়। তারা পুত্রহীন উত্তরাধিকারশূন্য হয়ে ছিন্নমস্তক তালবৃক্ষের মত শ্রীবৃদ্ধিহীন হয়। তাই পন্ডিত বা বিজ্ঞ ব্যক্তির নিজের হিতার্থ ভুজঙ্গ, অগ্নি, যশস্বী ক্ষত্রিয় এবং শীলসম্পন্ন ভিক্ষুর প্রতি সম্যকভাবে সৎ আচরণ করা উচিত।
এ উক্তির পর কোশলরাজ প্রসেনজিৎ ভগবানকে বললেন ভদন্ত, অতিসুন্দর! অতিমনোরম! ভদন্ত যেমন অধোমুখ পাত্রকে উর্দ্ধমুখ করে অথবা আবৃতকে অনাবৃত করে অথবা পথভ্রষ্টকে পথ বলে দেয় অথবা চক্ষুষ্মানরা রূপ দেখবে বলে অন্ধকারে তৈলদীপ ধারণ করে, তেমনি ভাবে ভগবান নানা পর্যায়ে ধর্ম প্রকাশ করেছেন। ভদন্ত, আমি ভগবানের শরণগত হলাম, ধর্ম ও ভিক্ষুসঙ্ঘের শরণ নিলাম। ভদন্ত, আজ থেকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আমাকে পারণগত উপাসক বলে মনে করুন।
সূত্র ঃ সংযুক্ত নিকায় ১ম ও ২য় খন্ড, অনুবাদক-শীলানন্দ ব্রক্ষ্মচারী