ইলা মুৎসুদ্দী
ঞাণ কৌন্ডিণ্যের জ্ঞান লাভের পশ্চাতে আয়ুষ্মান বপ্প, আয়ুষ্মান ভদ্দিয়, আয়ুষ্মান মহানাম এবং আয়ুষ্মান অশ্বজিত ধর্মচক্ষু লাভ করেন। এই ধর্মচক্ষুর অর্থ হলো যা কিছু সমুদয় ধর্ম তা নিরোধ শীল, এতে কারো অধিকার নেই। এরূপ যথাযথ রূপে জ্ঞাত হওয়া।
ধর্মচক্ষু প্রাপ্তির পর ঞাণ কৌন্ডিণ্য ভগবানের নিকট উপসম্পদা প্রার্থনা করেন।
অতঃপর ভগবান বললেন- “ হে ভিক্ষু! আস! ধর্ম সুব্যাখ্যাত, ধর্মে আরোহন করো। জীবন দুঃখ থেকে মুক্ত হয়ে বিশুদ্ধ রূপে ব্রহ্মচর্য পালন করো।” এই বাক্যে ঞাণ কৌন্ডিণ্য উপসম্পদা প্রাপ্ত হন। তৎপর অবশিষ্ট চার জনেরই এরূপ উপসম্পদা প্রাপ্ত হন।
প্রারম্ভে বলা হয়েছে- ঞাণ কৌন্ডিণ্য ভগবান কর্তৃক দেশিত ধর্মজ্ঞান লাভী প্রথম ভিক্ষু শিষ্য ছিলেন। যখন ভগবান জ্ঞাত হলেন যে কৌন্ডিণ্য যথার্থরূপে আমার ধর্ম জ্ঞাত হয়েছে তখন ভগবান উদাত্ত স্বরে বললেন- “ অঞ্ঞসো বত, ভো কৌন্ডঞ্ঞ” অর্থাৎ “কৌন্ডিণ্য তুমি জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছ।” তদ্ধেতু তৎপর থেকে তার নাম ‘অঞ্ঞ কৌন্ডঞ্ঞ বা জ্ঞাণ কৌন্ডিণ্য’ সুপ্রসিদ্ধ হয়।
অতঃপর ভগবান জেতবনে ভিক্ষুসংঘ পরিবৃত হয়ে সভামাঝে দেশনা কালে জ্ঞাণ কৌন্ডিণ্যকে সম্বোধন করে বললেন- “সর্ব প্রথম আমার দেশিত ধর্ম অধিগত কারী, জ্ঞান লাভী অগ্র ‘জ্ঞান কৌন্ডিণ্য’। তৎপর ভগবান ইহাও প্রকাশ করলেন যে- দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দন্ডায়মান কারীদের মধ্যে অন্যতম ‘জ্ঞান কৌন্ডিণ্য’।
ভগবান বুদ্ধের দেশনা প্রদান কালে জ্ঞাণ কৌন্ডিণ্য ভিক্ষুসভায় দু’প্রধান শিষ্যের পেছনে আসন গ্রহণ করতেন। ভিক্ষুদের মধ্যে বর্ষায় জৈষ্ঠ্য হলেও তিনি কখনো চাইতেন না যে, ভগবানের সমীপে অবস্থান করে স্বয়ং নিজের এবং অন্যের অসুবিধার কারণ হোক।
দ্রোণবস্তু গ্রামে কৌন্ডিণ্যের মন্তানী নাম্নী এক বোন বাস করত। তার পূর্ণ নামক এক পুত্র ছিল। সারনাথে ধর্মচক্র প্রবর্তন করার পর ভগবান যখন রাজগৃহে গমন করেছিলেন তখন কৌন্ডিণ্যও ছিলেন। তখন স্বীয় ভাগিনা পূর্ণকে প্রব্রজ্যা দীক্ষা প্রদান করেন। তিনিও বুদ্ধের অমৃতোপদেশে স্বীয় কৃত্য সম্পাদন করেন।
অতঃপর সেখান হতে ভগবান বুদ্ধের সাথে আবার রাজগৃহে আগমন করেন। জন সমাগম তার কাছে আনন্দের ছিল না। তা তিনি সর্বদা উপেক্ষা করতেন। জন সমাগম থেকে দূরে একাকী নির্জন স্থানে তার চিত্ত রমিত হতো। তদ্ধেতু তিনি ভগবানের অনুমতি নিয়ে রাজগৃহ ত্যাগ করে মন্দাকিনী নদীর তীরস্থ ছদ্দন্ত বনে বিহার করতেন। সেখানে দ্বাদশ বর্ষাকাল বিহার করেন। বিহার কালে অরণ্যেবাসী বনহস্তী স্বীয় শুড়ে তার জন্য ফলমূলাদি সংগ্রহ করে দান করত। এছাড়াও অন্যান্য সেবাদিও সম্পাদন করত।
অতঃপর একদিন ‘জ্ঞান কৌন্ডিন্য’ ভগবানের সকাশে এসে অন্তিম বিদায় গ্রহণ পুনঃরায় সেই ছদ্দন্ত বনে গমন করেন। সেই স্থানে বেশ কিছু দিন অবস্থান করে সেই ঐকান্তিক লক্ষ্য পরম শান্তি চির অজর পরিনির্বাণ অধিগত করেন।
কথিত আছে যে, কৌন্ডিণ্যের পরিনির্বাণের সময় সমস্ত হিমালয়ও অশ্রু স্নাত হয়েছিল। চারিদিকে শোকের ছায়া নেমে এল। তার দাহকার্যের সময় আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ স্থবিরের নেতৃত্বে পাঁচশত ভিক্ষু উপস্থিত ছিলেন। অতঃপর তার দেহাবশেষ বেলুবনে নিয়ে যাওয়া হলো। পরবর্তীতে ভগবানের শ্রীহস্তে তার স্তুপ প্রতিষ্ঠাপিত করেন।
সূত্র – বুদ্ধের সমকালীন ভিক্ষুসংঘ, মুদিতারত্ন ভিক্ষু