“প্রবারণা” – বিনয় পিটকের মহাবগ্গ মতে, সংঘ প্রতিষ্ঠা লগ্নে প্রবারণা উৎসবের রীতি ছিল না। তথাগত শ্রাবস্তীর জেতবন বিহারে যখন অবস্থান করছিলেন, তখন কোশল থেকে একদল ভিক্ষু বর্ষাবাস সমাপনান্তে উপস্থিত হইলে তিনি তাঁদেরকে কীভাবে বর্ষাবাস যাপন করেছেন জানতে চাইলে ভিক্ষুগণ বলেন, তাঁরা ঝগড়া-বিবাদ এড়ানোর জন্য মৌনভাবে দিন যাপন করেছেন এবং বর্ষাবাস শেষে কেহ কারো সাথে কথা না বলে বুদ্ধকে দর্শন করতে এসেছেন। এরুপ উক্ত হলে তথাগত দেশনা করিলেন — হে ভিক্ষুগণ, তোমাদের এরূপ আচরণ প্রশংসাযোগ্য নহে। একসাথে বসবাস করিলে বাদ-বিবাদ হতেই পারে। কারণ প্রত্যেকেরই দোষ ত্রুটি আছে। একস্থানে বাস করার সময় পরষ্পর পরষ্পরকে অনুশাসন করলে উভয়েরই মংগল হবে এবং বুদ্ধ শাসন পরিশুদ্ধ হবে। তথাগত তখন বর্ষাবাস সমাপ্তির পর প্রবারণা অনুজ্ঞা প্রদান করেন। সেই থেকে প্রতিবছর বর্ষাব্রত পালন শেষে প্রবারণা। তথাগত ভাষিত সারার্থ, বর্ষাবাস শেষে তোমরা পরষ্পরের দোষ-ত্রুটি স্বীকার করে, পরষ্পরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
প্রবারণা দুই প্রকার। যথা – পূর্ব কার্তিক প্রবারণা ও পশ্চিম কার্তিক প্রবারণা।
পূর্ব কার্তিক প্রবারণাঃ আষাঢ়ী পূর্ণিমা হতে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত এ তিন মাস বর্ষাব্রত পালন শেষে আশ্বিনী পূর্ণিমা উদযাপনকে বলা হয়।
পশ্চিম কার্তিক প্রবারণাঃ পূর্ব কার্তিক প্রবারণার পর দিন হতে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ কোন কারণে কোন ভিক্ষু বা ভিক্ষুসংঘ যদি কোন বিহারে আষাঢ়ী পূর্ণিমা হতে বর্ষাব্রত পালন না করে শ্রাবণী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত বর্ষাবাস পালন শেষে কার্তিকী পূর্ণিমা উদযাপন করে থাকে তবে তাকে পশ্চিম কার্তিক প্রবারণা বলে।
প্রবারণা হচ্ছে যথার্থরূপে বারণ ও প্রকৃষ্টরূপে বরণ সকল প্রকার অসুন্দর ও অন্যায়কে বর্জন বা বারণ করে কুশল সত্য ও সুন্দরকে বরণ করার মধ্যে দিয়ে আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের অনুশীলন।
তথাগত আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথিতে জগতের কল্যাণার্থে ভিক্ষুসংঘকে আহবান করে বলেছিলেন, হে ভিক্ষুগণ — তোমরা দিকে দিকে বিচরণ কর; বহুজনের হিতের জন্য, বহুজনের সুখের জন্য, জগতের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শনের জন্য, দেব ও মনুষ্যের সুখের জন্য। হে ভিক্ষুগণ! তোমরা ধর্ম দেশনা কর, যার আদিতে কল্যাণ, মধ্যে কল্যাণ ও অন্তে কল্যাণ এবং অর্থযুক্ত, ব্যঞ্জনযুক্ত সমগ্র পরিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধ ব্রক্ষ্মচর্য প্রকাশিত কর।
এ বছর বাংলাদেশের ইতিহাসে সেই সঙ্গে যুক্ত হলো নুতন সমস্যা মধু পূর্নিমা না প্রবারনা পূর্নিমাঃ সমস্যাটা হচ্ছে মুর্খ, অল্প বিদ্যা ভয়ংকর, যারা ফতুয়াবাজ তাদের নিয়ে, এরা কারা যা ইচ্ছা তাই করে বসে এবং সমগ্র বৌদ্ধ সমতলীয়দের নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে?
—————-উত্তম বডুয়া Uttam Barua লিখেছেন:
বিষয়টা হল আশ্বিন পূর্ণিমার আগের অষ্টমীতে হিন্দুদের দুর্গা পুজা অনুষ্ঠিত হয় এবং দশমীতে দুর্গা পুজা বিসর্জন দেওয়া হয় । তাঁর পরের পূর্ণিমা অর্থাৎ আশ্বিনই পূর্ণিমাতে আমাদের প্রবারনা পূর্ণিমা এবং হিন্দুদের লক্ষ্মীপূজা হয়। আমার বুদ্ধি বয়স থেকে অর্থাৎ বিগত ৬০ বছর থেকে এটাই দেখে আসছি । তাঁর মানে হল আমরা জ্যোতিষ শাস্ত্র বা জ্যোতির্বিদ্যা কে মানিনি । মল মাস বা অধিমাস কে গণনা করিনি । মল মাস বা অধিমাস অনেকটা ইংরেজি মাস ফেব্রুয়ারি (Leap year) এর মত । Leap year হলে যেমন ফেব্রুয়ারি মাস ১ দিন বেরে ২৯ দিনে হয় তেমনি বাংলা মাসে মল মাস বা অধিমাস হলে ১ টা পূর্ণিমাকে বাদ দেওয়া হয় অথবা একটা পূর্ণিমা বেশি গণনা করা হয় । এই রেওয়াজ শত শত বছর ধরে গণনা করা হচ্ছে । এইবার শুধু ব্যতিক্রম দেখা গেছে । কিন্তু পাহাড়ি বা উপজাতীয় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী জ্যোতিষ শাস্ত্র বা জ্যোতির্বিদ্যা এবং মলমাস বা অধিমাস মান্য করাতে তাহারা আগামী পূর্ণিমাতেই প্রবারনা পূর্ণিমা পালন করবে । বিগত শত শত বছরের ধারাবাহিকতায় পাহাড়ি বা উপজাতীয়রাই সঠিক বলে আমার মনে হচ্ছে ।
জ্ঞানে বা অজ্ঞানে কারো মনে কোন প্রকার কষ্টের কারন হইলে কিংবা বিনয় পরিহানি করিলে তার জন্য ক্ষমা –প্রার্থনা করছি, জগতের সকল প্রানী সুখি হউক। সকলের হিতার্থে পোষ্টটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।