বুদ্ধ ভাষিত প্রতীত্যসমুৎপাদ দেশনা (১ম পর্ব)
ইলা মুৎসুদ্দী
আমি এমন শুনেছি- এক সময় ভগবান শ্রাবস্তীর জেতবনে অনাথপি-দের বিহারে বাস করতেন। তথায় ভগবান ভিক্ষুদের ‘হে ভিক্ষুগণ’ বলে সম্বোধন করলেন। ভিক্ষুগণ ভদন্ত বলে সাড়া দিলেন। ভগবান বললেন- হে ভিক্ষুগণ, তোমাদের প্রতীত্যসমুৎপাদ দেশনা করব, তা শোন সুন্দরভাবে মনোনিবেশ কর, বলছি। ভিক্ষুগণ ‘হাঁ ভদন্ত’ বলে সায় দিলেন। ভগবান বলতে লাগলেন- প্রতীত্যসমুৎপাদ কি?
(প্রতীত্যসমুৎপাদ বলতে বোঝায়) অবিদ্যার১ প্রত্যয়ে বা কারণে সংস্কার২, সংস্কারের প্রত্যয়ে বিজ্ঞান৩, বিজ্ঞানের প্রত্যয়ে নামরূপ৪, নামরূপের প্রত্যয়ে ষড়ায়তন১, ষড়ায়তনের প্রত্যয়ে স্পর্শ২, স্পর্শের প্রত্যয়ে বেদনা৩, বেদনার প্রত্যয়ে তৃষ্ণা৪, তৃষ্ণার প্রত্যয়ে উপাদান৫, উপাদানের প্রত্যয়ে ভব৬, ভবের প্রত্যয়ে জাতি বা জন্ম, জাতির প্রত্যয়ে জরা মরণ শোকবিলাপ দুঃখ দৌর্মনস্য ক্ষোভ উৎপন্ন হয়। এভাবে সমগ্র দুঃখরাশির সমুদয় হয়। হে ভিক্ষুগণ, একেই বলা হয় প্রতীত্যসমুৎপাদ (কার্যকারণ প্রবাহ)।
অবিদ্যারই অশেষ বিরাগ নিরোধে সংস্কার নিরোধ, সংস্কারের নিরোধে বিজ্ঞান নিরোধ, বিজ্ঞানের নিরোধে নামরূপ নিরোধ, নামরূপের নিরোধে ষড়ায়তন নিরোধ, ষড়ায়তনের নিরোধে স্পর্শ নিরোধ, স্পর্শে নিরোধে বেদনা নিরোধ, বেদনার নিরোধে তৃষ্ণা নিরোধ, তৃষ্ণার নিরোধে উপাদান নিরোধ, উপাদানের নিরোধে ভব নিরোধ, ভব নিরোধে জাতি নিরোধ, জাতি নিরোধে জরা মরণ-শোকবিলাপ-দুঃখদৌর্মনস্য ক্ষোভ নিরুদ্ধ হয়। এভাবে সমস্ত দুঃখস্কন্ধের নিরোধ হয়। ভগবানের এই ভাষণ সে ভিক্ষুগণ হৃষ্টমনে অভিনন্দিত করলেন।
টীকা ঃ
১ অবিদ্যা- দুঃখ, দুঃখের উৎপত্তি, দুঃখের নিরোধ এবং দুঃখনিরোধের উপায় সম্পর্কে অজ্ঞানতা।
২ সংস্কার- শুভাশুভ কর্মানুষ্ঠান।
৩ বিজ্ঞান- এখানে জানা চিন্তা করা অর্থে বিজ্ঞান বা চিত্ত, তা বিপাক চিত্ত।
৪ নামরূপ- নাম হচ্ছে মানসিক দেহ এবং রূপ হচ্ছে ভৌতিক দেহ।
১ ষড়ায়তন- চক্ষুআয়তন, শ্রোত্রায়তন, ঘ্রাণায়তন, জিহ্বায়তন,
কায়ায়তন ও মনায়তন- এ ছয়টি আয়তন বা মনোৎপত্তি ভূমি।
২ স্পর্শ- চক্ষুশ্রোত্রাদির সঙ্গে বিষয়ের সংযোগ।
৩ বেদনা- সুখদুঃখাদি অনুভূতি।
৪ তৃষ্ণা- আসক্তি।
৫ উপাদান- তৃষ্ণার প্রাবল্যে দৃঢ় গ্রহণ (উপ+আদান)।
৬ ভব- কম
সূত্র-সংযুক্ত নিকায় ১ম ও ২য় খন্ড, অনুবাদক-শীলানন্দ ব্রক্ষ্মচারী