বুদ্ধ জগতে অদ্বিতীয় একজন মহামানব। আমরা তো বুদ্ধকেই পূজা করি-গৌরব করি কিন্তু বুদ্ধ কাকে গৌরব করতেন?
ইলা মুৎসুদ্দী
এক সময় ভগবান সম্বোধিলাভের প্রমাবস্থায় উরুবিল্বে নৈরঞ্জনা নদীর তীরে অজপাল বটবৃক্ষের মূলে বাস করছিলেন। তখন ভগবানের মনে এ চিন্তার উদয় হল গৌরবহীন বা নিরালম্ব হয়ে বাস করা দুঃখ। কোন শ্রমণ কিংবা ব্রাহ্মণকে সম্মান করে সেবা করে গৌরব দেখিয়ে আশ্রয় করে বাস করি। তখন তাঁর মনে হল অপরিপূর্ণ শীলসমূহের পরিপূর্তির জন্য অন্য শ্রমণ কিংবা ব্রাহ্মণকে সেবা করে গৌরব দেখিয়ে আশ্রয় করে বাস করব, আমি দেব-মার-ব্রহ্মলোক সহ জগতে শ্রমণ ব্রাহ্মণ দেবমানব জনতার মধ্যে নিজের চেয়ে অধিকতর শীলসম্পন্ন অন্য কোন শ্রমণ ব্রাহ্মণকে দেখছিনা যাকে সেবা করে গৌরব দেখিয়ে আশ্রয় করে বাস করব, অপরিপূর্ণ সমাধিসমূহের পরিপূর্তির জন্য …. অপরিপূর্ণ প্রজ্ঞা …. অপিরপূর্ণ বিমুক্তি …. অপরিপূর্ণ বিমুক্তি জ্ঞানদর্শন পরিপূর্তির জন্য …. নিজের চেয়ে অধিকতর বিমুক্তি জ্ঞানদর্শন সম্পন্ন অন্য কোন শ্রমণকে দেখছিনা যাকে সেবা করে গৌরব দেখিয়ে আশ্রয় করে বাস করব। তবে যে ধর্ম আমার অভিসম্বুদ্ধ বা উপলব্ধ, সে ধর্মকেই সম্মান করে গৌরব দেখিয়ে আশ্রয় করে বাস করব। ব্রহ্মা সহম্পতি নিজের চিত্ত দিয়ে ভগবানের মনের চিন্তা অবগত হয়ে বলবান ব্যক্তি যেমন সঙ্কুচিত বাহুকে প্রসারিত করে অথবা প্রসারিত বাহুকে সঙ্কুচিত করে তেমনি (ক্ষিপ্রভাবে) ব্রহ্মলোক থেকে অন্তর্হিত হয়ে ভগবানের সম্মুখে প্রাদুর্ভূত হলেন এবং উত্তরীয়ে একাংশ আবৃত করে কৃতাঞ্জলিপুটে ভগবানকে বললেন “ভগবন! সুগত! এ এমনিই, এ এমনিই!
ভদন্ত, অতীত কালে যে অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধগণ ছিলেন, তাঁরাও ধর্মকেই মেনে গৌরব দেখিয়ে আশ্রয় করে অবস্থান করেছিলেন, অনাগত কালে যে অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধগণ আবির্ভূত হবেন, তাঁরাও ধর্মকেই মেনে গৌরব দেখিয়ে আশ্রয় করে অবস্থান করবেন; ভগবন্ ভদন্ত, বর্তমান অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধ (আপনিও) ধর্মকেই মেনে গৌরব দেখিয়ে আশ্রয় করে অবস্থান করুন।” একথা বলে ব্রহ্মা সহম্পতি আবার গাথায় বললেন
যে সম্বুদ্ধগণ অতীত হয়েছেন, যে সম্বুদ্ধগণ অনাগত
এবং এখন যিনি বহুজনের শোকনাশক সম্বুদ্ধ,
তাঁরা সকলেই যথাμমে সদ্ধর্মকে
গৌরব প্রদর্শন করে অবস্থান করেছিলেন,
করবেন এবং করছেন।
এটিই বুদ্ধগণের ধর্মতা বা স্বাভাবিক নিয়ম। তাই অর্থকামী মহত্ত্বালাভিলাষী ব্যক্তিমাত্রেরই বুদ্ধশাসন স্মরণ পূর্বক সদ্ধর্মের প্রতি গৌরব সম্পন্ন হওয়া উচিত।
সূত্র-সংযুক্ত নিকায় ১ম ও ২য় খন্ড, অনুবাদক-শীলানন্দ ব্রক্ষ্মচারী