জগতে চার প্রকার লোক বিদ্যমান। কোন চার প্রকার?
ইলা মুৎসুদ্দী
কোশলরাজ প্রসনজিৎ ভগবানের কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকে অভিবাদন করে একান্তে বসলেন। ভগবান রাজাকে বললেন, মহারাজ জগতে চার প্রকার লোক বিদ্যমান। কোন চার প্রকার?
তমোতমপরায়ণ, তমোজ্যোতিপরায়ণ, জ্যোতিতমপরায়ণ, এবং জ্যোতিজ্যোতিপরায়ণ।
মহারাজ, কিরূপে লোক তমোতমপরয়ণ হয় বা অন্ধকার থেকে অন্ধকারের দিকে চলে? ধরুণ, কোন ব্যক্তি নীচকুলে জন্ম নেয়, যেমন চন্ডাল কুল, বেণুকার কুল, নিষাদ কুল, চর্মকার কুল, পুষ্পনিক্ষেপক (ঝাড়–দার) কুল, এরূপ ব্যক্তি দারিদ্র্যক্লিষ্ট অল্পান্নভোজী কষ্টজীবী নীচ কুলে জন্মগ্রহণ করে, যেখানে কষ্টে গ্রাসাচ্ছাদন লাভ হয়। সে কুৎসিত দুর্দশ বμ নাসারোগাμান্তও কানা বা বিকলহস্ত বা খঞ্জ বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত এবং অন্নপান-বস্ত্রযান-মালাগন্ধবিলেপনশয্যাসন-উপকরণ বঞ্চিত বা ভাগ্যহীন। সে (এতাদৃশ ব্যক্তি) কায়মনোবাক্যে দুঃশ্চরিত আচরণ করে বা পাপে লিপ্ত হয়। পাপে রত হয়ে সে দেহভঙ্গে মৃত্যুর পর দুঃখদুর্গতিময় বিনিপাত বা অধঃপাত নরকে জন্মগ্রহণ করে। মহারাজ, যেমন লোক অন্ধকার থেকে অন্ধকারে গমন করে, তম থেকে তমের দিকে যাত্রা করে অথবা রক্তমল থেকে রক্তমলে যায়, আমি এ ব্যক্তিকে তাদৃশ বলি এভাবে লোক তমোতমপরায়ণ হয়।
মহারাজ, কিরূপে লোক তমোজ্যোতিপরায়ণ হয় বা অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাত্রা করে? ধরুন, কোন ব্যক্তি নীচকুলে জন্ম নেয়, যেমন চন্ডালকুল, বেণুকার কুল, নিষাদকুল, চর্মকারকুল, পুষ্পনিক্ষেপ কুল এরূপ দারিদ্র্যক্লিষ্ট অল্পান্নভোজী কষ্টজীবী নীচকুলে জন্মগ্রহণ করে …. ভাগ্যহীন। সে (এতাদৃশ ব্যক্তি) কায়মনোবাক্যে সুচরিত বা পুণ্য কর্ম সম্পাদন করে। পুণ্য কর্ম সম্পন্ন করে সে দেহভঙ্গে মৃত্যুর পর সুখময় স্বর্গলোকে জন্মগ্রহণ করে। মহারাজ, যেমন লোক মাটি থেকে পালঙ্ক আরোহণ করে, অথবা পালঙ্ক থেকে অশ্বপৃষ্ঠ আরোহণ করে অথবা অশ্বপৃষ্ঠ থেকে হস্তিষ্কন্ধে আরোহণ করে অথবা হস্তিষ্কন্ধ থেকে প্রাসাদ আরোহণ করে, আমি এ ব্যক্তিকে তাদৃশ বলি। এভাবে লোক তমোজ্যোতিপরায়ণ হয়।
মহারাজ কিরূপে লোক জ্যোতিতমপরায়ণ হয় বা আলো থেকে অন্ধকারের দিকে চলে? ধরুণ, কোন ব্যক্তি আঢ্য মহাধনী সম্পদশালী স্বর্ণরৌপ্য, ধনধান্য বিত্তোপকরণে সমৃদ্ধ ক্ষত্রিয়োত্তম পরিবারে কিংবা ব্রাহ্মণোত্তম পরিবারে অথবা গৃহপতিশ্রেষ্ঠ পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। সে হয় রূপবান সুদর্শন প্রসন্নতাবহ পরম রূপশোভাসম্পন্ন এবং অন্নপান-বস্ত্রযানমালগন্ধ- বিলোপন-শয্যাবাস-দীপোপকরণ লাভী। সে (এতাদৃশ ব্যক্তি) কায়মনোবাক্যে দুশ্চরিত আচরণ করে বা পাপে লিপ্ত হয়। পাপে রত হয়ে সে দেহভঙ্গে মৃত্যুর পর দুঃখদুর্গতিরময় বিনিপাত নিরয়ে জন্মলাভ করে। মহারাজ যেমন লোক প্রাসাদ থেকে হস্তিষ্কন্ধে অবতরণ করে বা হস্তিষ্কন্ধ থেকে অশ্বপৃষ্ঠে অবরোহণ করে বা অশ্বপৃষ্ঠ থেকে পালঙ্কে অবরোহণ করে বা পালঙ্ক থেকে ভূতলে অবতরণ করে এবং ভূতল থেকে অন্ধকারে পতিত হয়, আমি এ ব্যক্তিকে তাদৃশ বলি। এভাবে লোক জ্যোতিতমপরায়ণ হয়।
মহারাজ, কিরূপে লোক জ্যোতিতম পরায়ণ হয়? কোন লোক আঢ্য মহাধনী সম্পদশালী স্বর্ণ-রৌপ্য, ধনধান্য ও বিত্তোপকরণে সমৃদ্ধ ক্ষত্রিয়োত্তম পরিবারে …. জন্মগ্রহণ করে। সে হয় রূপবান …. দীনোপকরণলাভী। সে কায়মনোবাক্যে সুচরিত বা পুণ্য কর্ম সম্পাদন করে। পুণ্যকর্ম সম্পন্ন করে সে দেহভঙ্গে মৃত্যুর পর সুখময় স্বর্গলোকে জন্মগ্রহণ করে। মহারাজ, যেমন লোক পালঙ্ক থেকে পালঙ্কে সংμমণ করে অথবা অশ্বপৃষ্ঠ থেকে অশ্বপৃষ্ঠে সংμমণ করে অথবা হস্তিষ্কন্ধ থেকে হস্তিষ্কন্ধে গমন করে অথবা প্রাসাদ থেকে প্রাসাদে গমন করে, আমি এ ব্যক্তিকে তাদৃশ বলি। এভাবে লোক জ্যোতিপরায়ণ হয়।
মহারাজ, জগতে এ চার প্রকার লোক বিদ্যমান। যে দরিদ্র ব্যক্তি অশ্রদ্ধ মৎসর দানকুণ্ঠ পাপচিন্তায় রত মিথ্যাদৃষ্টিযুক্ত ভক্তিহীন হয়, শ্রমণ ব্রাহ্মণ কিংবা অন্য যাচকদিগকে আক্রোশ করে, তিরস্কার করে, নাস্তিক ও রোগকারী হয় এবং যাচকদিগকে ভোজন দানে বাধা দেয়, তাদৃশ লোক মৃত্যুকালে তমোতমপরায়ণ হয়ে ঘোর নরকে উপগত হয়।
মহারাজ, যে দরিদ্র ব্যক্তি শ্রদ্ধাশীল অমৎসর সুচিন্তারত ও অনুদ্বিগন্নচিত্ত হয়ে দান শ্রমণ ব্রাহ্মণ কিংবা অন্যান্য যাচকদিগকে উঠে অভিবাদন করে, শিষ্টাচার শিক্ষা করে এবং যাচকদিগকে ভোজন দানে বাধা দেয় না, সে ব্যক্তি মৃত্যুকালে তমোজ্যোতিপরায়ণ হয়ে ত্রিদিবোপম বা স্বর্গগামী হয়।
মহারাজ, যে ধনাঢ্য ব্যক্তি অশুদ্ধ মাৎসর্যপরায়ণ দানকুণ্ঠ পাপচিন্তায় রত ভ্রান্ততাবলম্বী ভক্তিহীন হয়, শ্রমণ ব্রাহ্মণ কিংবা অন্য যাচকদিগকে আক্রোশ করে, নাস্তিক ও রোষকারী হয় এবং যাচকদিগকে ভোজনদানে বাধা দেয়, সে ব্যক্তি মৃত্যুকালে জ্যোতিতমপরায়ণ হয়ে ঘোর নরকে গমন করে।
মহারাজ, যে ধণাঢ্য ব্যক্তি শ্রদ্ধাবান অমৎসর সুসংকল্প ও অনুদ্বিগ্নচিত্ত হয়ে দান করে, শ্রমণ ব্রাহ্মণ কিংবা অন্যান্য যাচকদিগকে উঠে অভিবাদন করে, শিষ্টাচার শিক্ষা করে এবং যাচকদিগকে ভোজনদানে বাধা দেয় না, সে ব্যক্তি মৃত্যুকালে জ্যোতিজ্যোতিপরায়ণ হয়ে ত্রিদিবগত হয়।
সূত্র ঃ সংযুক্ত নিকায় ১ম ও ২য় খন্ড, অনুবাদক-শীলানন্দ ব্রক্ষ্মচারী