সিগালোবাদ সূত্রের মাধ্যমে বুদ্ধ গৃহীদের কিভাবে শিক্ষা দিয়েছেন? (১ম পর্ব)
ইলা মুৎসুদ্দী
একদা ভগবান রাজগৃহের বেণুবনে কলন্দক নিবাপে অবস্থানকালে শৃগালক গৃহপতি-পুত্রকে প্রত্যুষে সিক্ত শরীর ও সিক্ত বসনে করজোড়ে সর্বদিক নমস্কার করতে দেখে তাঁর এ ভূল সংশোধনের নিমিত্তে বুদ্ধ কর্তৃক শৃগালোবাদ সূত্র দেশনারপ্রেক্ষাপট রচিত হয়। শৃগালক গৃহপতি-পুত্রকে প্রত্যুষে ষড়দিক নমস্কার করতে দেখে বুদ্ধ তাঁর কাছে জানতে চেয়েছেন কেন তিনি এভাবে নমস্কার করছেন। শৃগালক বললেন তাঁর পিতা মৃত্যুর আগে তাঁকে এভাবে ষড়দিক নমস্কার করতে বলেছেন, তাই তিনি পিতৃ আজ্ঞা পালন করছেন। তাঁর কথা শুনে বুদ্ধ বললেন এভাবে ছয় দিক নমস্কার করলে হয় না। তখন শৃগালক কর্তৃক প্রার্থিত হয়ে বুদ্ধ নিম্নোক্ত শৃগালক সূত্র ভাষণ করেন। শৃগালক সূত্রের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় বুদ্ধ শৃগালক গৃহপতিপুত্রকে বললেন, হে গৃহপতিপুত্র! আর্য্য- শ্রাবক অথবা ধার্মিক গৃহী চার প্রকার কলুষ কর্ম হতে বিরত থাকেন, চার কারনে পাপ কাজ করেন না, সম্পত্তি নষ্ট হয় এ রকম ছয় প্রকার কু-অভ্যাস ত্যাগ করেন।
বর্জনীয় চার প্রকার কলুষ কর্ম :
ধার্মিক গৃহীরা প্রাণী হত্যা, চুরি, মিথ্যা কামাচার, মিথ্যাভাষণ- এ চার কলুষ কর্ম বর্জন করেন।
পাপকর্ম না করার চারটি কারণ :
ধার্মিক গৃহীরা ছন্দ, দ্বেষ,ভয় ও মোহের বশীভূত হয়ে পাপকর্ম বর্জন করেন।
সম্পত্তি নাশক ছয় প্রকার কু-অভ্যাস :
ধার্মিক গৃহীরা ভোগহানিকর নেশাদ্রব্য সেবন,
অসময়ে পথে পথে ভ্রমন, নৃত্য-গীত দর্শন, জুয়া খেলা,
পাপীলোকের সংসর্গ ও আলস্যপরায়ণতা পরিহার করেন।
নেশাদ্রব্য সেবনের ছয়টি বিষময় ফল :
নেশাদ্রব্য সেবনের ফলে প্রত্যক্ষ ধন নাশ হয়, ঝগড়া বাড়ে, রোগের উৎপত্তি হয়, দুর্নাম রটে, লোকের মনে ক্রোধ জন্মে, হিতাহিত জ্ঞান কমে যায়।
অসময়ে পথে পথে ভ্রমনের ছয়টি বিষময় ফল :
অসময়ে পথে পথে ভ্রমনের ফলে নিজের গোপন বিষয় গোপন থাকে না, স্বীয় অসাবধানতার কারণে স্ত্রী-পুত্রের গোপন বিষয়ও অন্য লোকের কাছে প্রকাশ করে দেয়, স্বীয় ধন-সম্পত্তির বিষয়ও গোপন থাকে না, গোপন বিষয় গোপন না থাকার কারণে সদা ভয়ে থাকতে হয়, মিথ্যা অপবাদের বশীভূত হতে হয়, আরো অনেক রকমের দু:খের মখোমুখি হতে হয়।
নৃত্য-গীত দর্শনের ছয়টি বিষময় ফল :
নৃত্য-গীত অথবা মজা- মজলিসে রত থাকার কারণে ছয়টি বিষময় ফল ভোগ করতে হয়। যেমন: কোথা নৃত্য হবে, কোথায় গান হবে, কোথায় বাদ্য বাজবে, কোথায় নাটক পরিবেশিত হবে, কোথায় পাণিস্বর বা কাংস্যতাল হবে, কোথায় পাণিস্বরযুক্ত অস্মণ তাল হবে ইত্যাদি বিষয়ে উৎকন্ঠিত থাকতে হয়।
জুয়া খেলার ছয়টি বিষময় ফল :
জুয়া খেলায় জয়লাভে শত্রুতা বাড়ে, পরাজয়ে অনুশোচনা আসে, প্রত্যক্ষভাবে ধনহানি হয়, বিচারালয়ে অভিযোগ গ্রাহ্য হয় না, আত্মীয়-স্বজন সম্পর্ক ত্যাগ করে, আবাহ-বিবাহে কেউ তার সাথে সম্বন্ধ স্থাপন করতে চায় না, কারণ লোকে মনে করে সে স্ত্রী-পুত্রের ভরণ-পোষণ দিতে অক্ষম।
পাপীমিত্র সংস্রবের ছয়টি বিষময় ফল :
পাপীমিত্র সাধারণত ধূর্ত, নেশাপায়ী, অভাবগ্রস্ত, প্রবঞ্চক, শঠ ও দুর্বৃত্ত হয়। এ কারণে এর সংস্রবে থাকলে নিজেরও অনিষ্ট সাধিত হয়।
আলস্যপরায়ণ ব্যক্তি ছয় কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় :
আলস্যপরায়ণ ব্যক্তি অতি ঠান্ডা লাগছে, অতি উঞ্চ লাগছে, অতি বিলম্ব হয়ে গেছে, এখনো অতি সকাল, এখন অত্যন্ত ক্ষুধার্ত, অধিক আহার করেছি ইত্যাদি অজুহাতে যথাসময়ে কাজ করে না। আর এ সমস্ত কারণে সে আলস্যপরায়ণ ব্যক্তির বহু কর্তব্য কাজ অসম্পুর্ণ থেকে যায়। তাই অনুৎপন্ন ভোগ্য বস্তু উৎপন্ন হয় না, উৎপন্ন ভোগ্য বস্তু কমে যায়।
সূত্র- ভিক্ষু শীলভদ্র রচিত দীর্ঘ নিকায় ৩য় খন্ড