ইলা মুৎসুদ্দী
এক সময় ভগবান শ্রাবস্তীর নিকটে জেতবনে অনাথপিণ্ডিকের বিহারে অবস্থান করছিলেন। সে সময়ে একদিন আয়ুষ্মান সারিপুত্র সমবেত ভিক্ষুগণকে আহ্বান করে বললেন, বন্ধুগণ!। ভিক্ষুরা প্রত্যুত্তরে হ্যাঁ ভন্তে বলে সাড়া দিলেন। আয়ুষ্মান সারিপুত্র বললেন’ বন্ধুগণ! এই যে লোকে সম্যকদৃষ্টি , সম্যকদৃষ্টি বলে; কিসে আর্যশ্রাবক সম্যকদৃষ্টিসম্পন্ন হন? কিসে তাঁর দৃষ্টি ঋজু হয়? কিসে বা ধর্মে তিনি অচল চিত্ত প্রসাদসম্পন্ন হয়ে এই সদ্ধর্মে আগত (প্রবিষ্ট) হন?
আয়ুষ্মান সারিপুত্র বল্লেন-
বন্ধুগণ! যেহেতু আর্যশ্রাবক অকুশল কি ও অকুশলের মূল কি উভয়ই প্রকৃষ্টরূপে জানেন; এবং কুশল কি, ও কুশলের মূল কি তা-ও প্রকৃষ্টরূপে জানেন; সেহেতুই তিনি সম্যকদৃষ্টিসম্পন্নœ হন। ফলে তাঁর দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং ধর্মে অচল চিত্ত প্রসাদসম্পন্ন হয়ে সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন। প্রথমতঃ অকুশল কি? প্রাণীহত্যা, অদত্ত গ্রহণ, অবৈধ কামাচার, মিথ্যাবাক্য, ভেদবাক্য, কর্কশ বাক্য ও সম্প্রলাপ বাক্য, অভিধ্যা (লোভ প্রবৃত্তি), ব্যাপাদ (হিংসা প্রবৃত্তি), মিথ্যাদৃষ্টি এ সকল অকুশল।
দ্বিতীয়তঃ অকুশল মূল (মুখ্য কারণ) কি? লোভ, দ্বেষ এবং মোহ। কুশল কি? প্রাণীহত্যা হতে বিরতি, অদত্তগ্রহণ হতে বিরতি, অবৈধ কামাচার হতে বিরতি, মিথ্যাবাক্য, ভেদবাক্য, কর্কশ বাক্য ও সম্প্রলাপ বাক্য হতে বিরতি, অনভিধ্যা (অলোভ), অব্যাপাদ (অহিংসা) এবং সম্যকদৃষ্টি- এ সকল কুশল।
কুশলের মূল কি? অলোভ, অদ্বেষ, অমোহ কুশলের মূল।
যেহেতু আর্যশ্রাবক এভাবে অকুশল কি, অকুশল মূল কি, তা জানেন; কুশল কি, কুশলের মূল কি তা ও জানেন; ফলে তিনি সর্বাংশে রাগানুশয় (মনের গভীরে স্থিত লোভ প্রবৃত্তি) পরিত্যাগ করে, প্রতিঘানুশয় (আঘাত প্রবৃত্তি) সমুচ্ছিন্ন করে, অবিদ্যা পরিত্যাগ ও বিদ্যা উৎপাদন করে, দৃষ্টধর্মে (প্রত্যক্ষ-জীবনে) দুঃখের অন্তসাধন করেন। এভাবে আর্যশ্রাবক সম্যকদৃষ্টিসম্পন্ন হন। তখন তাঁর দৃষ্টি ঋজু হয়, এবং তিনি ধর্মে অবিচল চিত্ত প্রসাদসম্পন্ন হয়ে সদ্ধর্মে প্রবিষ্ট হন।
সম্যকদৃষ্টি ঃ অর্থে যাহা শোভন ও প্রশান্ত দৃষ্টি। সম্যকদৃষ্টি দ্বিবিধ লৌকিক ও লোকুত্তর। লৌকিক সম্যকদৃষ্টি এক প্রকার জ্ঞান, যা চারি আর্যসত্যে অনুকুল এবং যার দ্বারা কেহ জানতে পারে, যা আমি কায়-বাক্য-মনে সম্পাদন করি সেই কর্মই আমার সুখ-দুঃখের মূল কারণ ইহাই আমার স্বকীয় বা আপন; বন্ধু-বান্ধবাদি অন্য কেহ নহে।
আর্যমার্গ (স্রোতাপত্তি, সদকৃগামী, অনাগামী ও অরহত্ব) সম্প্রযুক্ত প্রজ্ঞাই লোকুত্তর সম্যকদৃষ্টি। পৃথগ্জনের পক্ষে কর্মফলে বিশ্বাসই সম্যকদৃষ্টি। বুদ্ধশাসনের বাইরে যাহা সম্যকদর্শী তাঁরা কর্মফলবাদী হলেও আত্মবাদী, বিধায় সম্যকদৃষ্টিসম্পন্ন নহেন।
ভগবান বুদ্ধের মতে শুধু দুঃখ সত্য কি জানিলাম, অপর তিন সত্য জানিলাম না, এতেও মিথ্যাদৃষ্টি দূর হয় না। দুঃখ সত্য কি, সমুদয় সত্য কি, জানিলাম; কিন্তু অপর দুই সত্য জানিলাম না; এতেও মিথ্যাদৃষ্টি দূর হয় না। অতএব, চারি সত্যের সমগ্র তথা পূর্ণাঙ্গ যথার্থভাবে না জানলে দৃষ্টি সম্যক হয় না। অত্র সূত্রের সর্বত্র ইহাই প্রদর্শিত হয়েছে।
সূত্র-সম্যকদৃষ্টি সূত্র