প্রশ্ন আসে আমরা যখন কোন প্রশ্নের উত্তর দেই আমরা কী তা বুদ্ধ প্রদর্শিত নির্বান প্রাপ্তির সহায়ক নিমিত্তে উত্তর দেই বা প্রশ্ন করি ?
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য সম্প্রতি ফেইসবুকে একটি সত্তার প্রদর্শনের মর্মাথ এ রকমঃ “ আজকাল ফেইসবুকে তর্কাতর্কি করলেই নির্বান পেয়ে যাবেন বা সোতাপত্তি, সকৃদাগামী, অনাগামী, অরহত এর সার্টিফিকেট আছে কিনবেন কিনা ?” ভেবে দেখুন কেন বা কী কারনে এ ধরনের প্রশ্নের অবতারনা করেছেন প্রশ্নকর্তা ? বুদ্ধের অনুসারী কারা ? বাদ বা বাদীদের থেরবাদ, বজ্রযান, মহাযান, জেন ইত্যাদি ইত্যাদির সদস্য হলেই কী তাকে বুদ্ধের অনুসারী বলা যাবে ? যার পিতার নাম লৌকিক খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বুদ্ধের অনুসারী বলে তার পুত্র কী অটোমেটিক বুদ্ধের অনুসারী বা নির্বান পথের পথিক ? আর যাদের নাম লৌকিক খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়নি বুদ্ধের অনুসারী বলে যেমনঃ বাংলাদেশে কিছু মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া ব্যাক্তিকে দেখে গেছে তারা মুসলিম পরিবারে বসবাস অব্যাহত রেখেই নিয়মিত ভাবে বুদ্ধ প্রদত্ত চারি আর্য সত্যকে স্বীকার করে নিয়মিত আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ পথে – শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞার অনুশীলন করছেন নির্বানের অভিপ্রায়ে এবং এদের মধ্যে একজনকে সত্বার ভাতিজা হত্যা করেন বাসায় ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ছুরিকাঘাতের মাধ্যমে । এ সত্বাগুলি কি বুদ্ধের অনুসারী নয় ? না কী যারা এভাবে অনুশীলন করছেন তাদেরকে নির্বানের সার্টিফেকেট দেওয়া যাবে না ? পক্ষান্তরে এক সত্ত্বা ভিক্ষুত্ব বা শ্রমনত্ব গ্রহন করেছেন কোন এক বুদ্ধ মন্দিরে – তার গায়ে বুদ্ধ বস্ত্র আছে কিন্তু তিনি সমাধি করেন না , শীলের পরিচর্যা ও নাই বরং লোক চক্ষুর অন্তরালে স্বইচ্ছায় শীল ভংগ করেন তথাপি ও কী তিনি বুদ্ধের অনুসারী ? সংঘের অন্তর্গত ? বুদ্ধ যেমন বিশুদ্ধ সংঘ ও কী তেমনি বিশুদ্ধ নয় ? ভিক্ষু কী ব্রাক্ষন নয় ? জেনে শুনে সে সত্বাকে শ্রদ্ধা জানালে কী সত্যি চিত্তে শ্রদ্ধা উৎপন্ন হয় ? বস্তুতঃ কোন চিত্ত উৎপন্ন হয় ? সে চিত্ত কী নির্বান সহায়ক ? ইশ্বর আছে কী ? যদি ইশ্বর থেকে থাকে তবে পাপের জন্ম দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিলো শুধুমাত্র পুণ্যের ব্যাবস্থা রাখলেই তো লেটা চুকে যেতো ? তাহলে কি ইশ্বর সর্বজ্ঞ নন ?
স্বভাবতঃই প্রশ্ন আসে আমরা যখন কোন প্রশ্নের উত্তর দেই আমরা কী তা বুদ্ধ প্রদর্শিত নির্বান প্রাপ্তির নিমিত্তে উত্তর দেই বা প্রশ্ন করি, না কোন বাদ বা বাদী যথা থেরবাদ, বজ্রযান, মহাযান, জেন ইত্যাদি ইত্যাদি কে প্রতিনিধিত্ব করি মাত্র? আর নির্বান কি কোন বাদ বা বাদীর সাথে চললেই পাওয়া যাবে ? কেন আমরা কোন বাদ বা বাদীর প্রতিনিধিত্ব করছি ? যেখানে বাদ বাদী আছে সেখানে নেতা আছে কথাটা কি সত্যি ? এ প্রশ্নটির অনুর দিকে গেলে বলতে হয় – এক্স ওয়াই জেড কেউ সোতাপত্তি, সকৃদাগামী, অনাগামী, অরহত হয়েছেন বা হননি এ বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উত্তর দেওয়া কতটুকু নির্বান সহায়ক ? এক্স ওয়াই জেড কেউ সোতাপত্তি, সকৃদাগামী, অনাগামী, অরহত হয়েছেন বা হননি প্রমান করতে পারলেই কি নির্বান পাওয়া যায় ? তথাগত বুদ্ধের ৪৫ বছরের মধ্যে যারা তার সান্নিধ্যে এসেছেন তারা সবাই কী সোতাপত্তি, সকৃদাগামী, অনাগামী, অরহত হয়েছেন ? সমস্ত বাদ এবং বাদীগুলো কি তথাগত বুদ্ধ কতৃক প্রদত্ত না তথাগত বুদ্ধ পরবর্তী উৎপন্ন ? স্বইচ্ছামতো মনের মাধুরী মিশিয়ে কি নির্বান পাওয়া যায় ?
স্বভাবতঃই প্রশ্ন আসে আমরা যখন কোন প্রশ্নের উত্তর দেই আমরা কী তা বুদ্ধ প্রর্দশিত নির্বান প্রাপ্তির নিমিত্তে উত্তর দেই বা প্রশ্ন করি, না কী প্রশ্ন কর্তা ও প্রশ্ন দাতার লৌকিক তৃষ্ণা নিবারণের অভিপ্রায়ে এ সমস্ত প্রশ্ন-উওরের উৎপত্তি ? যেমন যিনি প্রশ্ন করছেন – তিনি ভাবছেন আমি প্রশ্ন করলে উত্তর দাতা উত্তর দিতে পারবেন না অতএব আমি হিরো হবো – এ টা কী নির্বান প্রাপ্তির সহায়ক ? অথবা সঠিক উত্তর দিলে তা আমি গ্রহন করবো না কারন আমি কোন না কোন বাদ বা বাদীকে সমর্থন করি এবং সেই বাদ বা বাদী সে উত্তর গ্রহন করে না অথবা গ্রহন করলে সে ই বাদ বা বাদী থেকে আমাকে ত্যাজ্য পুত্র করা হবে । অন্য পক্ষে যিনি উত্তর দাতা – “আমি” কী নির্বান বিমুখ নয় ? উত্তর গৃহীত হলে উত্তরদাতা সুখি হন অথবা ঘৃনিত হলে দুখঃ পান , রাগ করেন, রাগের বশবর্তী হয়ে প্রতি উত্তর করেন এটা কী নির্বান বিমুখ নয় ? তিনি যেটা যে রকম সে টাকে সে রকম বলে যেতে দিতে পারেন না এটা কী নির্বান বিমুখ নয় ?
একটা গল্পের উদ্ধৃতি না দিয়ে শেষ করতে পারলাম না, তথাকথিত বৌদ্ধ পরিবারে জন্ম নেয়া একটি সত্বা কে প্রতিদিন দেখি তার পিতা মাতা তাকে শিখিয়েছেন, প্রতিদিন বুদ্ধের ঘট তোলা, পুজা করা, মন্দিরে যাওয়া বছরের পর বছর এই বলে যে অন্যথায় তাকে নরকে যেতে হবে যেখানে নাকি শাস্তি দেওয়া হয় এবং তা খুউব ই কষ্টদায়ক অতএব ভয়ে তিনি কখনও ই পুজা করা, মন্দিরে যাওয়াতে ভুল করেন না এবং ভান্তেদের সাথে দেখা হলেই অর্থ দান করেন । ইশ্বর কী তবে ঘুষ গ্রহন করেন নাকী ? আর তিনি যদি তা গ্রহন করেন তবে আপনার ঘুষটুকু ইশ্বরের প্রতিনিধিকে না দিয়ে সরাসরি ইশ্বরকে দিলে বেশী ফলপ্রসু হতো না কী ? তবে দান কাকে বলে ? মুল সত্য হচ্ছে সমস্ত “বাদ ব বাদীরা” কিন্তু একটি বিষয়ে একমত এবং সকলের অভীষ্ট ও এক আর তা হচ্ছে নির্বান । নির্বান পাওয়ার পথ কী তথাগত বুদ্ধ আমাদের বিশ্লেষন করে যাননি ? এক সত্বা বলেছিল, বিভিন্ন বাদ বা বাদীগুলো ভিন্ন ভিন্ন ভাবে নির্বানে পৌছে দেবে ? তবে কী তথাগত বুদ্ধ প্রদত্ত বুদ্ধ বাদ থেকে ও “বাদ বাদীদের” পথ শর্টকার্ট ? “বাদ বাদীদের” ঘুষ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে আরো ও শর্টকার্ট হতে পারে ?
আজ লেখার টাইম আউট অতএব পরবর্তীতে আবার দেখা হবে সেই সঙ্গে এ লেখা পড়ে যাদের পছন্দ হবে না তাদের যেমন নির্বান সাক্ষাত করার কামনা রইলো ঠিক তেমনি যাদের ভালো লাগবে তাদের জন্য ও নির্বান সাক্ষাত করার কামনা রইলো এবং যাদের এই দুটোর কোনটাই নয় তাদের জন্য ও রইলো নির্বান কামনা তবে উল্লেখ্য এ সত্বার কাছে নির্বানের সার্টিফিকেট বিক্রি করার মতো কোন সার্টিফিকেট নেই ।