ভগবান বুদ্ধের একনিষ্ঠ সেবক আনন্দ স্থবির রাজগৃহে প্রথম মহাসঙ্গীততে আহূত মহাকাশ্যপ প্রমুখ সঙ্ঘকে উপলক্ষ্য করিয়া বলিয়াছেন-
আমি এরূপ শুনিয়াছি- এক সময়ে ভগবান শ্রাবস্তীর জেতবনোদ্যানে অনাথপিন্ডিক শ্রেষ্ঠীর নির্মিত বিহাওে অবস্থান করিতেছিলেন। তখন দিব্য আভরণে সজ্জিত একজন দেবতা দিব্যজ্যেতিতে সমুদয় জেতবন আলোকিত করিয়া শেষরাত্রিতে বুদ্ধের নিকট উপনীত হইয়া অভিবাদন পূর্বক একপার্শ্বে দাঁড়াইয়া সুললিত গাথায় বলিলেন-
০১। প্রভো, বহু দেবতা ও মনুষ্য মঙ্গলবিষয় চিন্তা করিয়াছেন। কিন্তু কেহই তাহা অবগত হইতে পারেন নাই। আপনি দয়া করিয়া দেব-মানবের হিত-সুখদায়ক মঙ্গলসমূহ বলুন।
দেবতার প্রার্থনায় ভগবান বুদ্ধ বলিতে লাগিলেন-
০২। মূর্খ লোকের সেবা না করা, জ্ঞানী লোকদের সেবা করা ও পূজনীয় ব্যাক্তিগণের পূজা করা, ইহাই উত্তম মঙ্গল।
০৩। (ধর্মত জীবনযাপনের উপযোগী) প্রতিরূপ দেশে বাস করা, পূর্বকৃত পুণ্যপ্রভাবে প্রভাবান্বিত থাকা ও নিজেকে সম্যক পথে পরিচালিত করা, ইহাই উত্তম মঙ্গল।
০৪। নানা শাস্ত্রে জ্ঞানলাভ করা, বিবিধ শিল্পশিক্ষা করা, বিনয়ী ও সুশিক্ষিত হওয়া এবং সুবাক্য ভষণ করা, ইহাই উত্তম মঙ্গল।
০৫। মাতা-পিতার সেবা করা, স্ত্রী-পুত্রের উপকার করা ও নিষ্পাপ ব্যবসাবাণিজ্যেও দ্বারা জীবিকা নির্বহ করা, ইহাই উত্তম মঙ্গল।
০৬। দান দেওয়া, ধর্মাচরণ করা, জ্ঞাতিবর্গেও হিতসাধন করা ও সদ্ধর্মে অপ্রমত্ত থাকা, ইহাই উত্তম মঙ্গল।
০৭। কায়িক ও মানসিক পাপে অনাসক্তি, শারীরিক ও বাচনিক পাপে বিরতি, মদ্যপানে সংযম ও অপ্রমত্তভাবে পুণ্যকর্ম সম্পাদক করা, ইহাই উত্তম মঙ্গল।
০৮। গৌরবনীয় ব্যাক্তির গৌরব করা, তাঁহাদের প্রতি বিনয়প্রদর্শন করা, প্রাপ্ত বিষয়ে সন্তুষ্ট থাকা, উপকারীর উপকার স্বীকার করা ও যথাসময়ে ধর্ম শ্রবণ করা, ইহাই উত্তম মঙ্গল।
০৯। ক্ষমাশীল হওয়া, আদেশ পালনে সুবাধ্যতা, শ্রমণগণকে দর্শন করা ও সময়ে ধমালোচনা করা, ইহাই উত্তম মঙ্গল।
১০। তপশ্চর্য্যা ও ব্রহ্মচর্য পালন, চতুরার্যসত্য হৃদয়ঙ্গম করা এবং পরমপদ নির্বাণ সাক্ষাৎ করা, ইহাই উত্তম মঙ্গল।
১১। লাভ-অলাভ, যশ-অযশ, নিন্দা-প্রশংসা, সুখ-দুঃখ, এই আট প্রকার লোকধর্মে অবিচলিত থাকা, শোকহীনতা, লোভ-দ্বেষ-মোহরূপ কলুষহীনতা ও নিরাপদ থাকা, ইহাই উত্তম মঙ্গল।
১২। হে দেবপুত্র, এই সমস্ত মঙ্গলকার্য সম্পাদন করিয়া দেবমানবগণ সর্ব বিষয়ে জ্ঞাললাভ ও সর্বত্র নিরাপদে জীবনযাপন করে; অতএব এইগুলি শ্রেষ্ঠ মঙ্গল বলিয়া অবধারণ কর।