শত বছরের ঐতিহ্যের বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা ও বৌদ্ধধর্মের প্রচার শত বছরের ঐতিহ্যের বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভার আরেক নাম বেঙ্গল বুদ্ধিষ্ট এসোসিয়েশন। ১২৫বছরের এই সংগঠন মূলত ভারত হতে বৌদ্ধধর্ম নতুন করে প্রচার করতেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বেঙ্গল বুদ্ধিষ্ট এসোসিয়েশনের সম্পাদক হেমেন্দু বিকাশ চৌধুরীর মতে, “ভারতের সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা। ব্রিটিশ ভারতে (বর্তমানে বাংলাদেশের পটিয়ার উনাইনপুরা গ্রামে) জন্মজাত বাঙালি বৌদ্ধ ভিক্ষু কর্মযোগী কৃপাশরণ মহাস্থবির ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে বৌদ্ধ সংস্কৃতির সামগ্রিক ঐতিহ্য অনুধাবন, সংরক্ষণ ও প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে এই সভা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে এই সভা বিহারে ভিত্তি স্থাপনের পর ১৯০৩ সালে বিহারে দ্বারোদঘাটন হয়। এই সভা ১২৫ বছরে বহু গৌরবময় ঐতিহ্য দেখেছে।বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত বৌদ্ধধর্মীয় একটি প্রতিষ্ঠান; প্রতিষ্ঠাতা কৃপাশরণ মহাস্থবির। ভারতে বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণ এবং বৌদ্ধ সমাজের শিক্ষা-সংস্কৃতির বিকাশ সাধনের উদ্দেশ্যে ১৮৯২ সালের ৫ অক্টোবর এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সভার প্রথম সভাপতি ও সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে কৃপাশরণ মহাস্থবির ও সুরেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দী। কলকাতার ললিতমোহন দাশ লেনের (বর্তমান বুদ্ধিস্ট টেম্পল স্ট্রিট) অস্থায়ী কার্যালয়ে এর কর্মকান্ড শুরু হয়। এ সভার উদ্যোগেই কলকাতায় নির্মিত হয় ধর্মাঙ্কুর বিহার, ১৯০৩ সালের আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে যার উদ্বোধন হয় এবং এর সঙ্গে যুক্ত থেকেই খ্যাতি অর্জন করেন বৌদ্ধশাস্ত্রবিদ ও ভারততত্ত্ববিদ বেণীমাধব বড়ুয়া। কৃপাশরণ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, মহামহোপাধ্যায় সতীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণ প্রমুখের সহায়তায় পালি ভাষা ও সাহিত্যের পঠন-পাঠন প্রচলন করেন। ১৯০৮ সালে প্রকাশিত হয় সভার মুখপত্র জগজ্জ্যোতি। এর সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন গুণালঙ্কার স্থবির এবং শ্রমণ পুণ্ণানন্দ স্বামী। বেণীমাধব বড়ুয়াও কিছুকাল এর সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। পত্রিকাটি বারকয়েক বন্ধ থাকার পর ১৯৭০ সালে দীপক কুমার বড়ুয়ার সম্পাদনায় পুনঃপ্রকাশিত হয় এবং পরবর্তীতে হেমেন্দু বিকাশ চৌধুরী জগজ্জ্যোতি সম্পাদনা করে আসছেন। ১৯৮০ সাল থেকে তা দ্বিভাষিক পত্রিকারূপে প্রকাশিত হয়ে আসছে। ধর্মাঙ্কুর সভার মুখপত্র হিসেবে এর গুরুত্ব অপরিসীম। বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভার বহুমুখী কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে সভা, সম্মেলন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন, গুণিজন সম্বর্ধনা ইত্যাদি। ১৯১০ সালে তিববতের ধর্মগুরু ত্রয়োদশ দালাই লামাকে এ সভা সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করে। ১৯২৪ সালে সভা বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কে এক আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সম্মেলনের আয়োজন করে। এছাড়া কৃপাশরণ (১৯৬৫), বি.আর আম্বেদকর (১৯৯১), বেণীমাধব বড়ুয়া (১৯৮৮) প্রমুখ মনীষীর জন্মশতবার্ষিকী পালন করে বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে। ১৯৮৬ সালে বিশ্বশান্তির উদ্দেশ্যে সর্বধর্ম সম্মেলনের আয়োজন ছিল ধর্মাঙ্কুর সভার একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ধর্মাঙ্কুর সভা জ্ঞানচর্চার উদ্দেশ্যে ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করে গুণালঙ্কার লাইব্রেরি। আকিয়াব থেকে আনীত অষ্টধাতুর বুদ্ধমূর্তি এনে এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়া একটি নৈশ বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করা হয়। বেণীমাধব বড়ুয়ার প্রচেষ্টায় ১৯৩৫ সালে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় পালি শিক্ষা ও গবেষণাকেন্দ্র নালন্দা বিদ্যাভবন। শেঠ যুগলকিশোর বিড়লার সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয় ত্রিতল আর্য বিহার। এখানে রয়েছে কয়েকটি শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃপাশরণ কন্টিনেন্টাল ইনস্টিটিউশন (১৯৬৭), কৃশাপরণ হোমিও দাতব্য চিকিৎসালয় (১৯৭৩) এবং অতীশ ভবন (১৯৮৭)। এসবের মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কলকাতার বাইরে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এর শাখা আছে।এই সভার সাথে বহু স্বধনামব্যক্তি জড়িত, তাঁদের মধ্যে ভুবনজয়ী শান্তির দূত ২৩তম দলাই লামা, স্যার আশুতোষ মুখার্জী, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হরিনাথ দে, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মহারাজা মাণীন্দ্র চন্দ্র নন্দী, স্যার শ্যামাচরণ মুখার্জী, ডাঃ সর্ব পল্লী রাধাকৃষ্ণাণ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
এটা ও দেখতে পারেন
পূজনিয় শরনংকর বনাম ডঃ হাছান মাহমুদ বা এরশাদ শিরোনামটা শতভাগ সঠিক নয়
(লেখাটি যে কোন কেউ ছাপাতে পারেন আমার অনুমতির প্রয়োজন নাই) পূজনিয় শরনংকর বনাম ডঃ হাছান …