♠ বুদ্ধই জগৎ গুরু পতিত পবন, ♠
♠ ধর্মই তাঁহার বাণী অমূল্য রতন। ♠
পরিনির্বাপিত হওয়ার পূর্বে লোকনাথ বুদ্ধ কুশীনারায় মল্লদের যমক শালবনে যমক শালতরুর মধ্যবর্তী স্থানে সিংহশয্যায় শয়ন করে স্নিগ্ধ কন্ঠে আনন্দকে বললেন, ‘দেখো আনন্দ, এই যমক শালতরু অকালে পুষ্পিত হয়েছে। অগ্রভাগ থেকে মূলদেশ পর্যন্ত সর্বাঙ্গ হয়েছে ফুলে ফুল্লময়। তথাগতের পূজা মানসে শাল কুসুমরাশি বৃষ্টি বর্ষণের মতো নিরন্তর ঝরে পড়ছে তথাগতের শরীরে, দেবতা কর্তৃক অন্তরীক্ষ থেকে দিব্য সৌরভময় দিব্য চন্দনচূর্ণ, মন্দার ও পারিজাত পুষ্প বর্ষিত হচ্ছে বাদল ধারার মতো। অন্তরীক্ষ হতে তথাগতের পূজার নিমিত্ত মোহন সুরে ধ্বনিত হচ্ছে দিব্য তূর্যধ্বনি ও দিব্য সঙ্গীত। বিবিধ উপাচারে অনুপম ও অসাধারণভাবে পূজা হচ্ছে তথাগতের। কিন্তু আনন্দ, এরূপ অপ্রমাণ পূজা দ্বারাও তথাগতের প্রতি প্রদর্শন করা হচ্ছে না যথোপযুক্ত সম্মান! আনন্দ, তোমরা এরূপই শিক্ষা করবে – যেকোন ভিক্ষু-ভিক্ষুণী ও উপাসক-উপাসিকা যদি ধর্মানুধর্ম প্রতিপন্ন, সমীচীন প্রতিপন্ন ও অনুধর্মাচারী হয়ে অবস্থান করেন অর্থাৎ বুদ্ধের উপদেশানুসারে বৃহত্তর ও ক্ষুদ্রতর কর্তব্যসমূহকে অবিরত পালন করেন, তাঁরাই যথার্থরূপে তথাগতকে ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সম্মান করেন, তারাই তথাগতকে সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত অর্ঘ্য দান করেন।
অতএব, আনন্দ, অবিচ্ছিন্নভাবে বৃহত্তর ও ক্ষুদ্রতর কর্তব্য পালনে রত হও। উপদেশাবলীর অনুসরণ কর; এরূপ করলে তোমরা বুদ্ধের সম্মান রক্ষা করবে।’ তবে এতেই করা হবে তথাগতের প্রতি যথার্থ সৎকার, সম্মান, গৌরব, অর্চনা ও আরাধনা। এটিই পরম পূজা নামে অভিহিত।’
কাজেই শাস্তার মুখনিঃসৃত মহামূল্যবান বাণীগুলো পাঠ করে, আত্মস্থ করে, প্রতিনিয়ত আচরণ করে সত্য পথে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া যে আমাদের বিকল্প কোন পথ নেই যদি ত্রিলোক পূজ্য সম্যক সম্বুদ্ধকে যথাযথ ভক্তি, সম্মান জানাতে চাই, সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত অর্ঘ্য দিতে চাই। কেননা দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে দেব-মানবের হিতার্থে প্রচারিত মহাকারুণিকের এমন মহামূল্যবান ধর্মদেশনা গুলোই তো কেবল তাঁর অবর্তমানে আমাদের আলোর পথ দেখায়, দেখাচ্ছে এবং দেখাবে। বুদ্ধের এমন অসংখ্য দূর্লভ মহৎ বাণীগুলো তাঁর মহাপরিনির্বাণের পর বহু পণ্ডিত, অর্হৎ ভিক্ষুসংঘের প্রচেষ্টায় ১ম সঙ্গীতি হতে ৬ষ্ঠ সঙ্গীতি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সংরক্ষণ হয়ে আসছে পবিত্র “ত্রিপিটক গ্রন্থ”এ লিপিবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে।
কিন্তু কখনো পরম পূজনীয় অগ্রমহাপণ্ডিত ভদন্ত প্রজ্ঞালোক মহাস্থবির, বিনয়াচার্য আর্যবংশ মহাথেরো, জ্ঞানতাপস শান্তরক্ষিত মহাস্থবির, বিদর্শনাচার্য প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাথেরো, সাধক সাধনানন্দ মহাস্থবির (বনভন্তে), পণ্ডিতপ্রবর প্রজ্ঞাবংশ মহাথেরো’র মত এমন অগ্রগণ্য ভিক্ষুসংঘ নিরন্তর স্বপ্ন দেখেছিলেন সমগ্র ত্রিপিটক বাংলায় প্রকাশিত হোক। তাঁদের সে স্বপ্নই সর্বপ্রথম বাস্তবায়িত হয় রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ‘ত্রিপিটক পাবলিশিং সোসাইটি’ হতে একসাথে বাংলায় ২৫ টি খন্ডে ত্রিপিটক প্রকাশনার মধ্য দিয়ে। এরপর ‘বোধিদর্পন প্রকাশনী’ কর্তৃক সর্বশেষ ৬ষ্ঠ সঙ্গায়নের আলোকে ৫৯ টি আলাদা খন্ডে সম্পূর্ণ বাংলায় ত্রিপিটক গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে। তাই আজ আর বলতে গিয়ে বাংলা ভাষা-ভাষীদের দ্বিধায় পড়তে হয় না যে – ‘আমাদের মাতৃভাষায় রচিত কোন ত্রিপিটক গ্রন্থ নেই।’
ত্রিপিটক গ্রন্থ অনুবাদক, সদ্ধর্মানুরাগী উজ্জ্বল বড়ুয়া বাসু’র স্বপ্ন ছিল – দেশের প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে ত্রিপিটকগ্রন্থ পৌঁছে যাক এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসুক ত্রিপিটক গ্রন্থগুলো। সে লক্ষ্যেই “ত্রিপিটক রিসার্চ সোসাইটি” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা এক ঝাঁক তরুণ প্রজন্ম উনার স্বপ্নের সারথী হলাম। আমাদের কয়েক মাসের নিরলস প্রচেষ্টায় আমরা আগামী ১০ মে ২০১৯ ইং দেশের ৩০০ এর অধিক বিহার ও ভাবনা কেন্দ্রে বিনামূল্যে এবং গৃহীদের হাতে মাত্র ১১০০০ টাকায় সম্পূর্ণ বাংলায় অনুবাদকৃত “ত্রিপিটক গ্রন্থ”র আংশিক বই তুলে দিতে যাচ্ছি। চট্টগ্রাম নগরস্থ ঐতিহাসিক ‘চান্দগাঁও সার্বজনীন শাক্যমুণি বিহার’ এ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আমাদের এই আয়োজন। তাই সমগ্র বৌদ্ধ জাতির প্রতি আহ্বান – এমন অনন্য আয়োজনের স্বাক্ষী যদি আপনারা হতে চান, যদি নিজ হাতে ত্রিপিটক গ্রন্থদানে অংশ নিতে চান তবে ক্ষণিকের তরে সব পিছুটান ছেড়ে চলে আসুন আগামী ১০ মে চান্দগাঁও শাক্যমুণি বিহারে সকাল ০৯ঃ৩০ মিনিটে।
♠ বুদ্ধের শাসন চিরস্থিতি হোক ♠
রিজয় চৌধুরী
সম্পাদনা পরিষদ
[][][] ত্রিপিটক রিসার্চ সোসাইটি [][][]