নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অদ্য ১৯/০২/১৯ইং রোজ মঙ্গলবার, খাগড়াছড়ি সদর উত্তর খবং পড়িয়া দশবল বৌদ্ধ বিহারের নানা ফলমূল পূজা উপকরণ দিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরেরও দশবল বিহারের বুদ্ধ পূজা, সিবলী পূজা, অষ্টবিংশতি পূজা ও স্বধর্ম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক পূণ্যর্থীর মাঝে সাধু সাধু সাধু ধ্বনি মুখরিত হয়।
বাংলাদেশ পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানিত সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, ভদন্তঃ অগ্রজ্যোতি মহাথের মহোদয়ের সভাপতিত্বে ধর্মদেশনা প্রদান করেন, উদীয়মান সাংঘিক ব্যক্তিত্ব, খাগড়াছড়ি সদর ভিক্ষু সংঘের সাধারণ সম্পাদক, ভদন্ত কল্যাণদ্বীপ ভিক্ষু, আর্যমিত্র স্থবির, জিনানন্দ স্থবির প্রমূখ ভিক্ষু সংঘ।
অনুষ্ঠানের অনেক জ্ঞানীগুণী ভিক্ষু সংঘ ও উপাসক-উপাসিকা বৃন্দা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত মূলত এই দিনটি বিশ্ব বৌদ্ধদের একটি কালজয়ী দিন ও স্মৃতিবিজড়িত দিন
“হে আনন্দ, তথাগতের চারিঋদ্ধিপাদ ভাবিত, বহুলীকৃত, রথগতি সদৃশ অনর্গল অভ্যস্থ, বাস্ত-ভূমি সদৃশ সুপ্রতিষ্ঠিত, অধিষ্ঠিত, পরিচিত্ত ও সম্যক নিষ্পাদিত হয়েছে। আনন্দ, সেজন্য তথাগত ইচ্ছা করলে কল্পকাল অথবা অবশিষ্ট কল্প অবস্থান করতে পারেন।”
এত প্রাঞ্জল ভাষার ঈঙ্গিত আনন্দ স্থবির আচ করতে পারলেন না। তাই তিনি বলতে পারলেন না- প্রভূ সুগত, বহুজনের হিত এবং সুখের জন্য জীবগণের প্রতি অনুকম্পাবশত, দেব-মানবের হিতার্থে আপনি কল্পকাল অবস্থান করুন। কারণ তিনি তখন মারকর্তৃক প্রভাবিত হয়েছিলেন অর্থাৎ পাপমতি মার ভয়ানক রূপ দেখিয়ে ভান্তে আনন্দ স্থবিরকে বুদ্ধের কথার তাৎপর্য বুঝার মত সুযোগ দেয়নি। একে একে তিনবার বলার পর ও বুঝতে না পারায় বুদ্ধ আনন্দ স্থবিরকে বললেন- “আনন্দ, এখন তুমি যথোচ্ছিত স্থানে যেতে পার।” “সাধু ভন্তে” বলে বুদ্ধসেবক আনন্দ বুদ্ধকে অভিবাদন ও প্রদক্ষিণ পূর্বক নিকটস্থ একটি বৃক্ষমূলে গিয়ে বসলেন।
তিনি যাওয়ার সাথে সাথে ওতপেতে থাকা পাপমতি মার এসে বুদ্ধকে পরিনির্বাপিত হওয়ার প্রার্থনা করেছিলেন। বুদ্ধ বললেন- “হে পাপমতি মার, তুমি এখন নিশ্চেষ্ট হও, অচিরেই তথাগতের পরিনির্বাণ হবে। আজ হতে তিনমাস পরে শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা দিনে তথাগত পরিনির্বাণ প্রাপ্ত হবেন।”
বুদ্ধ এবার স্মৃতি ও জ্ঞান যোগে অধিষ্ঠান করে বললেন, “এখন হতে তিনমাস পর বৈশাখী পূর্ণিমা পর্যন্ত আমার প্রাণ বায়ু চলতে থাকুক, অতপর নিরুদ্ধ হউক।” সাথে সাথে শুরু হল ভীষন লোমহর্ষকর ভূমিকম্প, দেব দুন্দুভি অর্থাৎ দেব গর্জন, অকাল বিদ্যুৎ, ঘন বৃষ্টি। সেদিন ছিল শুভ মাঘী পূর্ণিমা। এই অবিস্মরণীয় ঘটনাকে স্মৃতিতে চিরভাস্বর করে রাখার জন্য বৌদ্ধরা যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় ভাবগম্ভীর পরিবেশে প্রতি বছর শুভ মাঘী পূর্ণিমা পালন করে থাকেন।
সবাইকে শুভ মাঘী পূর্ণিমার শুভেচ্ছা জানাই।