বুদ্ধ রাহুলকে জিজ্ঞেস করলেন, রাহুল, তুমি কি জান আয়নায় আমরা কি দেখতে পাই?
রাহুল উত্তর দিলেনঃ আমাদের প্রতিবিম্ব দেখতে পাই ভান্তে।
ঠিকই বলেছ রাহুল। আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখতে পাওয়া যায়। রাহুল, আমাদের মন হচ্ছে আয়নার মত। যে কাজই আমরা করি না কেন তার সবই মনরূপ আয়নায় প্রতিভাত হয়।
মুলতঃ তিনভাবে আমরা আমাদের কর্ম সম্পাদন করে থাকি – কায়ের দ্বারা, বাক্যের দ্বারা ও মনের দ্বারা। এ তিনভাবে সম্পাদিত আমাদের কর্মসমূহ ভাল ও মন্দ ভেদে দু’প্রকারের হয়ে থাকে।
রাহুল জিজ্ঞেস করলেনঃ কিভাবে বুঝব কোনটি ভাল কাজ আর কোনটি মন্দ কাজ?
বুদ্ধ বললেনঃ রাহুল, যে কাজ নিজের জন্য আনন্দ ও মঙ্গল বয়ে আনে; অপরের জন্য আনন্দ ও মঙ্গল বয়ে আনে; এবং উভয়ের জন্য আনন্দ ও মঙ্গল বয়ে আনে, সেটাই হচ্ছে ভাল কাজ। আর যে কাজ নিজের জন্য, অপরের জন্য, এবং উভয়ের জন্য অমঙ্গল ও দুঃখ বয়ে আনে, সেটা হচ্ছে মন্দ কাজ।
রাহুল আবার জিজ্ঞেস করনেলঃ কিন্তু কোন ধরনের কাজ আনন্দ ও মঙ্গলদায়ক এবং কোন ধরনের কাজই বা অমঙ্গল ও পীড়াদায়ক?
বুদ্ধ বললেনঃ শোন রাহুল, অকুশল ও অসুন্দর মানসিকতা, যেমনঃ লোভ, হিংসা, অজ্ঞানতা ইত্যাদির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সম্পাদিত কাজ নিশ্চিতভাবে অমঙ্গল ও দুঃখ বয়ে আনে। অপরপক্ষে, কুশল ও সুন্দর মানসিকতা, যেমনঃ ত্যাগ, প্রেম, মৈত্রী, ভালবাসা, প্রজ্ঞা ইত্যাদির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সম্পাদিত কাজ মানুষের জীবনে আনন্দ ও মঙ্গল বয়ে আনে।
রাহুল, পরোপকারী হও। মানুষের কল্যাণে ব্রতী হও। কেউ তোমার ক্ষতি করলে তুমি যেমন দুঃখিত ও ব্যাথিত হবে; অনুরূপভাবে অন্যজনের ক্ষতি করলে সেও দুঃখগ্রস্ত হবে ও কষ্ট পাবে। সুতরাং নিজের সাথে তুলনা করে কাউকে আঘাত কিংবা ক্ষতি করোনা। এটাই তথাগত বুদ্ধের শিক্ষা বলে জানবে।
রাহুল, কায়, বাক্য ও মনের দ্বারা কোন কাজ সম্পাদন করার পুর্বে, সম্পাদনের সময় এবং সম্পাদিত হওয়ার পর মনে মনে ভাববে তোমার এ কাজ নিজের জন্য, অপরের জন্য ও উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক নাকি অমঙ্গলজনক। যদি মনে কর মঙ্গলজনক তাহলে অনুরূপ কাজ বারবার সম্পাদন কর। কিন্তু যদি দেখ যে কাজটি মানুষের জন্য ক্ষতিকারক তাহলে সেখানে সেমুহুর্তে সেকাজ থেকে বিরত হও। এটাই তথাগত বুদ্ধের প্রকৃত শিক্ষা।
রাহুল বুদ্ধের উপদেশ শুনে আনন্দিত হন এবং বুদ্ধকে বন্দনাপূর্বক বিদায় নেন।
সাধু সাধু সাধু।।