তৃতীয় শতাব্দীর প্রাক্কালে রোমান রাজা ক্লডিয়াস সে দেশের জনগণের জন্য বিবাহ নিষিদ্ধ করলেন । তিনি মনে করতেন যে, সৈনিকরা বিয়ে করলে ঠিকমত যুদ্ধ করতে পারবে না। সংসারের মোহ তাদের আচ্ছন্ন করে রাখে। তাই যখনি তিনি শুনতেন কোন সৈনিকের বিয়ের কথা সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করতেন তাকে।
ঠিক সেই সময়কার একজন খ্রিষ্টান ধর্মযাজক ছিলেন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন। রাজার এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানালেন তিনি। কারণ সমাজে তখন আর প্রেম ভালোবাসা বলে কিছু নেই। বহুগামীতায় ছেয়ে গিয়েছিল পুরো সমাজ। অন্যায়, অনাচার আঁকড়ে ধরেছিলে সেই মানুষগুলোকে। আর এসব বিষয়টি ব্যথিত করল সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে। যুবক যুবতীদের বিয়ে করতে উদ্বুদ্ধ করলেন তিনি। চার্চে ডেকে নিয়ে তাদের বিয়ের সকল ব্যবস্থা তিনিই করতেন। এতে চরমভাবে ক্ষুব্ধ হন রাজা ক্লডিয়াস। তার সৈনিকদের আদেশ করেন এই ধর্মযাজককে কারাগারে নিক্ষেপ করতে। বন্দী হন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন। মৃত্যুদণ্ডের নিষ্ঠুর আদেশ আরোপিত হয় তার উপর। কিন্তু একজন আদর্শ বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসেবে সবার কাছে সমাদৃত ছিলেন ধর্মের এই সেবক।
প্রতিদিনই অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী দেখা করতে আসত সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন এর সাথে। ফুল, খাবার দিয়ে যেত মহান এই সাধককে। আস্টেরিয়াস নামে ওই কারাগারের রক্ষীর জুলিয়া নামের এক অন্ধ মেয়ে ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন খ্রিষ্টান ধর্মের অলৌকিকতা সুস্থ করে তুলতে পারবে তার মেয়েকে। আর তাই খ্রিষ্ট ধর্মে দিক্ষিত হলেন আস্টেরিয়াস এবং নিজ কন্যাকেও উৎসাহিত করতে লাগলেন | আস্টেরিয়াস এর মাধ্যমে জুলিয়া এবং ভ্যালেন্টাইন্স এর পরিচয় হলো | দিনের পর দিন যেতে থাকল আর জুলিয়া-ভ্যালেন্টাইনের সখ্যতাও বাড়তে লাগল এবং সেই সাথে ভ্যালেন্টাইন্স এর মৃর্ত্যুর দিনও ঘনিয়ে আসতে লাগলো |
প্রথমে প্রহার , অতপর পাথর নিক্ষেপ এবং সবশেষে শিরচ্ছেদ এর মাধ্যমে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ধর্মযাজক সেইন্টস ভ্যালেন্টাইন্স কে হত্যা করা হলো | মৃত্যুর আগ মুহুর্তে ভ্যালেন্টাইন্স জুলিয়ার উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখলো যেখানে নিজেকে উল্লেখ করলো your valentine হিসেবে |
এই ধর্ম যাজক এর আদর্শ কে সম্মান জানিয়ে ৪৯৬ সাল থেকে তার নামানুসারে ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করা হচ্ছে |সেই থেকে ভ্যালেন্টাইন্স ডে বা বিশ্ব ভালাবাসা দিবসের পথচলা।।