বিশ্বের জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে মায়ানমারে মুসলিমের উপর নির্যাতনের বিভিন্ন মিথ্যা ছবি দিয়ে মুসলিম উম্মাহকে বিভ্রান্তির চেষ্টা করছে একটি মহল। এইসব বিভ্রান্তিকর ছবির কারণে দেশে আবারো সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। আতংকে রয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
ফেইসবুক সূত্রমতে,গত ২/৩ মাস ধরে মায়ানমারে চলছে নির্বিচারে গণহত্যা,নারী ধর্ষন, শিশু নির্যাতন। তাদের মতে মায়ানমারে চলছে এক নিরব যুদ্ধ। এই যুদ্ধকে তারা নাম দিয়ে মুসলিম নিধনের যুদ্ধ।
এই যুদ্ধে বৌদ্ধরা মুসলমান বালেগ-নাবালেগ মা-বোনদের করা হচ্ছে ধর্ষন। ধর্ষনের পর খন্ড বিখন্ড করে কেটে জলে,স্থলে ও রাস্তাঘাটে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
আগুনে জালানো হচ্ছে কিংবা গণকবর দেওয়া হচ্ছে। এমন কি কছিকাঁচা দুধের শিশুদেরকে ঝুলানো হচ্ছে ফাঁসির দড়িতে অথবা গণহারে আগুন দিয়ে জালানো হচ্ছে। তারা বিশ্ব- বাসীকে বিশ্বাস করানোর জন্য ফেইসবুকে এই রকম ছবি পোষ্ট করছে। তারা আরো বলেন, তুর্কী প্রেসিডেন্ট জালিমদের হাত থেকে মুসলিমদের বাঁচানোর জন্য তিনটি যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে মায়ানমারে যুদ্ধ করার জন্য গেছে।
এবং তুর্কীতে যত বৌদ্ধ আছে তাদেরকে গ্রেফতার করে না ফেরার দেশে পাঠাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদের মানুষ কেন আজ পর্যন্ত চুপচাপ বসে আসে এই ভাবে বাংলাদের মুসলিমকে সংখ্যালঘুদের উপর ক্ষেপিয়ে তুলছে।
কেন মুসলিম জাতি আজ ঘুমিয়ে আছে তাদের কী ঈমান ঘুমিয়ে গেছে? এভাবে আরো বিভিন্ন কমেন্ট করে মুসলমানকে ধিক্কার দিচ্ছে কিছু ফেইসবুক ভূয়া আইডি। আর তাদের পোষ্ট করা ছবি এবং কমেন্ট দেখে ফেইসবুকে কিছু মুসলিম প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে। এভাবে ফেইসবুক থেকে প্রতিবাদ চলে আসবে রাষ্টে।
এদিকে ফেইসবুকের ভূয়া আইডিতে পোষ্ট করা ছবিগুলো বিশে¬ষণ করে দেখা যায়, থাইল্যন্ডে নৌকাযোগে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী লোকেদের আটকের দৃশ্যকে মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্যাতনের দৃশ্য হিসেবে অপপ্রচার করছে। কঙ্গোতে ২০১০সালে জুলাই মাসে তেলের ট্যাংকার বিস্ফোরণে প্রায় ২২০জন নিহত হয়েছিল আর এই ছবিকে মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমকে নির্যাতনের ছবি হিসেবে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এবং চীনের গণতন্ত্রের দাবীতে একজন লোক শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করছিল আর এই ছবিকে মায়ানমারে রোহিঙ্গাদেরকে এভাবে পুড়িয়ে মারছে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে ঘটে যাওয়া ছবিগুলো সংগ্রহ করে প্রতিদিন একটি দুইটি করে ফেইসবুকে ছবি পোষ্ট করে মুসলিম উম্মাহকে বিভ্রান্তি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি মহল। যা আগামীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনের জন্য হুমকি স্বরূপ।
এই ব্যাপারে টেকনাফের বেশ কয়েকজন বৌদ্ধ বলেন,আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারে এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটলে শুধুমাত্র ফেইসবুকে কেন? এতগুলে টিভি চ্যানেল আছে কোথায়ও তো কোন খবর দেখা যাচ্ছে না। মায়ানমারের সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি আমরাও পর্যবেক্ষন করছি। ফেইসবুকের মতো ঘটনার সন্ধান পাচ্ছিনা।
এইসব ঘটনা শুনি নাই সুতরাং এটা সম্পূর্ণ ভূয়া, মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। এইসব সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়ানোর জন্য বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্র। যাদের কারণে ২০১২ সালে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হয়েছি।আমরা দ্বিতীয় কোন রামু ট্র্যাজেডি দেখতে চাই না।
ইতিমধ্যে অনেকের মাঝে ভীতি এবং আতংক কাজ করছে সন্দেহ নেই। এই ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান এইচ এম ইউনুছ বাঙ্গালী জানান,পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারে মুসলিমদের উপর গণহত্যা হচ্ছে বলে ফেইসবুকে যে ছবি এবং কমেন্ট পোষ্ট করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নই। তবে পার্শ্ববর্তী দেশে কি হচ্ছে বা কি করছে এটা নিয়ে আমাদের দেশে কোন অঘটন না ঘটে তার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান।
এই ব্যাপারে টেকনাফ ৪২ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পরিচালক আবু রাসেল ছিদ্দিকী জনান,এই রকম আমরা কিছু শুনি নি।
এই ব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার ওসি আতাউর রহমান খোন্দকার জানান, ফেইসবুকে কিছু ভূয়া ছবি পোষ্ট করা হয়েছে বলে আমিও শুনেছি এটা নিয়ে যাতে কোন নাশাকতা করতে না পারে তার জন্য আমরা এলার্ট আছি।
সুতরাং দেশে বড় ধরনের কোন সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির আগেই ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উসকানি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে সচেতন মহল মনে করেন।
লেখকঃ কমালিস্ট সময়ের কণ্ঠস্বর