মার বিজয়ী অরহত উপগুপ্ত মহাথেরোর জন্ম কাহিনী
পূণ্যভূমি মথুরা নগরে বাস করত সুপ্রসিদ্ধ স্বনামধন্য গুপ্ত নামের একজন সুপ্রসিদ্ধ সুগন্ধ বণিক। তাঁর ছিল প্রচুর ধন ঐশ্বর্য, বহু হস্তি-রথ-অশ্ব-শকট। আর ছিল সুরম্য প্রসাদ। গুপ্ত নামের সুগন্ধ বণিক ও তাঁর সহধর্মিনী এতো ধন ঐশ্বর্য্য থাকা সত্ত্ব্ওে একটি সন্তানের অভাবে ছিলেন অববই অসুখী। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী উভয়েই ছিলেন ধর্মপরায়ন। দানে ছিলেন অকৃপণ, শীলগুণে ছিলেন বিমন্ডিত। দীন দুঃখীর দুঃখ মোচনে তাঁরা ছিলেন সদা তৎপর। সুগন্ধ বণিকের স্ত্রী সবসময় মনে মনে প্রার্থনা করতেন —– এই পুণ্যে তিনি যেন হতে পারেন সন্তানের জননী। আর সুগন্ধ বণিক প্রার্থনা করতেন— তাঁর যদি সন্তান হয় সে যেন শাণবাসী ভিক্ষুর অনুচর হয়। বহু সাধনার পর স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মনের বাসনা পূর্ণ হতে চললো। এক শুভক্ষণে জন্ম নিলেন পুণ্যবতী সুমনাদেবীর গর্ভে বিভূতি বিমন্ডিত স্বর্গচ্যুত এক দেবপুত্র, যিনি হবেন ভাবী —মার বিজয়ী অর্হৎ উপগুপ্ত। পুণ্যময় ছেলের জন্ম হলো পুণ্যবতীর পুণ্যময় গর্ভে। মহাসৌভাগ্য উদিত হলো সুমনাদেবীর। তাঁর সকল দিকে হলো কল্যাণময়, সুখৈশ্বর্যের অভিবৃদ্ধি। তাঁর শরীর হলো সমুজ্জ্বল, লালিত্যপ্রভায় তিনি হলেন অতিশয় জ্যোতির্ময়ী। গর্ভস্থ পুত্র সন্তানের পুণ্য প্রভায় মহা মঙ্গল সূচিত হতে লাগল বণিকের ব্যবসায়। পুর্ণ হতে লাগল ধন ভান্ডার। প্রচুর দুগ্ধ দিতে লাগল ধেনু সকল। গ্রামের সর্বত্র বিরাজ করতে লাগল পরম শান্তি। এতেই সকলে উপলব্ধি করলেন, গর্ভস্থ সন্তান নিশ্চয়ই মহাপুণ্যবান সত্ত্ব। তারপর এক শুভমুহুর্তে পূর্ণ চাঁদনী রাতে চন্দ্র রজতচ্ছটার ন্যায় সুমনাদেবীর ঘর আলোকিত করে জন্ম নিলেন এক জ্যোতির্ময় শিশু। সদ্যোজাত সন্তানের দীপ্ত প্রভায় উদ্ভাসিত চারিদিক। খুশীর পীযুষ ধারা বহন করে নেমে এলেন যেন অমরাপুরী থেকে মর্ত্যধামে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের বাসনা পূর্ণ হলো। সানন্দে সুগন্ধ বণিক দান করলেন প্রভূত দানীয় সম্ভার। সকলেই সেই জ্যোতির্ময় শিশুটিকে আশীর্বাদ করলেন —-”তুমি জগতের অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কসম হয়ে খ্যাতি অর্জনে সমর্থ হও। নিরাময় দীর্ঘায়ু জীবন লাভ করে সুখী হও।” একদিন যে শিশু সংসারের যাবতীয় ভোগ বিলাস পরিত্যাগ করে ব্রক্ষ্মচর্য পালনে উৎসাহিত হবে, বুদ্ধের ধর্মের মশাল হাতে নিয়ে দেশ-দেশান্তরে বিচরণ করবে, মানুষের অন্তরে শান্তি বিলাবে, ধর্মচক্ষু দান করবে, বুদ্ধের বাণী প্রচারে আপন স্বাদের জীবনকে উৎসর্গ করবে, নশ্বর মানব জীবনকে সার্থক করবে, শান্তিদাতা হিসাবে সকলের আশ্রয়স্থল হবে, পতিতের উদ্ধারকর্তা , অত্রাণের ত্রাণকর্তা, স্বনামধন্য স্বধর্ম-শাসন সমাজ হিতৈষী হবে তাঁদের আশীর্বাদে ঐ সমুদয় গুণপনাই নিহিত ছিল। এহেন সুবর্ণ প্রতিমা সদৃশ পুত্ররতœ নিশ্চয়ই স্বর্গচ্যুত দেবতা। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই এই চিন্তা করে নামকরণ দিবসে পিতার নামের সাথে যুক্ত করে নাম রাখা হলো শ্রীমান উপগুপ্ত। অর্হৎ উপগুপ্ত মহাথেরোর মাতার নাম ছিল সুমনাদেবী আর পিতার নাম ছিল গুপ্ত। পিতাকে সকলেই সুগন্ধ বণিক হিসাবে চিনতেন।
☸ উপগুপ্ত ভান্তে বন্দনা :
ইদ্ধিমন্তো জ্যোতিমন্তো মহামারং পমদ্দনো‚
সাসনো রকখিতো সন্তো কপ্পকালো অধিটঠিতো;
লোকলযং বজ্জিতা মহাসমুদ্দে বসিতো মুণি;
তং উপগুপ্তং পূজিতা অহং বন্দামি সব্বদা।
ইদং পূজং অনুমোদিতা থেরো মহাকারুণিকো‚
সব্ব মারং অন্তরাযং পমাদন্তো।
সূত্র ঃ মেত্তা বংশ ভিক্ষু রচিত মার বিজয়ী অর্হৎ উপগুপ্ত