মহাসুদর্শন জাতক (পর্ব ২)
সর্বদা ত্রিবিধ সুখের অধিকারী হতে চাইলে মনোযোগ সহকারে পড়ুন মহাসুদর্শন জাতক এবং জানুন কি কি দান করলে কিরকম মহাপুণ্যের ভাগী হয়? পড়ুন, জানুন এবং জন্ম জন্মান্তর সুখের অধিকারী হবার চেষ্টা করুন।
ইলা মুৎসুদ্দী
বোধিসত্ত্ব স্থবিরের এ ধর্মদেশনা শুনে অতিশয় প্রসন্ন হলেন। তিনি সে আশ্রমে সুদৃঢ় ঘেরা দিয়ে সুরক্ষার ব্যবস্থা করলেন। সারা জীবন তিনি পঞ্চশীল এবং অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও অষ্টমী তিথিতে উপোসথ শীল রক্ষা করতেন ও দান ধর্ম পুণ্য কর্ম করতেন। অতঃপর পরমায়ুর অবসানে তিনি কৃতপুণ্য স্মরণ করার পর ইহলোক হতে চ্যুত হয়ে দেব লোকে উৎপন্ন হলেন। তথায় তাঁর সুবর্ণময় বিমান শতযোজন উ”” হয়েছিল। এ বিষয় প্রকাশ মানসে শাস্তা বললেন-
· সেই কৃত সুকর্ম ও সৎচিত্তে প্রার্থনা দ্বারা মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে তাবতিংশ দেবলোকে গিয়েছিলাম। তথায় আমার জন্য ব্যাম প্রভা সম্পন্ন প্রভাস্বর, ষাট যোজন দীর্ঘ ও ত্রিশ যোজন প্রস্থ শত যোজন উচ্চ প্রাসাদ উৎপন্ন হয়েছিল। সে প্রাসাদ নানা বর্ণ ধ্বজা ও কুট প্রতিমণ্ডিত। সে প্রাসাদের স্তম্ভাবলী লোহিতাঙ্কময়, মণিময় স্বর্ণময় ভিত্তি; ইন্দ্র নীল মণিময় ছাউনি; স্ফটিকময় কবাট। সে প্রাসাদে নিত্য সুমধুর স্বরে তুর্যধ্বনি ঘোষিত হ’ত। কবাট বিবৃত ও বন্ধনকালে মধুর শব্দ নিঃসৃত হত। মণিময় গবাক্ষ, ভাস্বর বৈদুর্যে তৈরী কবাট, শ্রেষ্ঠ কূট সম্পন্ন পালংক যথাস্থানে সুন্দররূপে স্থাপিত। খোম বস্ত্রের দুগ্ধ ফেননীভ শয্যা মনোহর দিব্য রক্ত কম্বলে শোভিত অপ্সরাগণ পরিবৃত শ্রেষ্ঠ পালংকে পরিশোভিত এই দিব্য বিমান। সর্বদা বহু দেবাপ্সরা সর্বালংকারে সুশোভিতা হয়ে আকাশে বিদ্যুৎ লহরীর ন্যায় শোভা পেতো। গীত-বাদ্যে মধুর নৃত্যে এবং মৃদঙ্গ পণব, শংখ ও ভেরী সমূহের মধুর শব্দে সর্বদা সে প্রাসাদ মুখরিত থাকত। সে প্রাসাদ দিব্য ময়ুর বকাদি সুন্দর পক্ষী এবং কিংকিনীকালে পরিবেষ্টিত ছিল। এমন দিব্য প্রাসাদে সপরিবারে সর্বদা আনন্দময় সুখ পরিভোগ করেছি। তথায় সুবর্ণ, মণি, রৌপ্য ও লোহিতাঙ্কময় থালাই নিত্য ব্যবহার করতাম। দিব্যাসনে বসে দিব্যময় থালাই নিত্য ব্যবহার করতাম। দিব্যাসনে বসে দিব্য মালা-গন্ধ-বিলেপন ধারণ করে সর্বদা দিব্য ভোজন ভোগ করতাম। নানা মনোহর পরিপূর্ণ প্রাসাদে দিব্য পঞ্চ কামগুণ পরিভোগ করতাম।
বোধিসত্ত্ব তাবতিংশ স্বর্গে দীর্ঘকাল ধরে দিব্য সম্পত্তি ভোগ করার পর যথাকালে সেখান হতে চ্যুত হয়ে কুশাবতি নামক মহানগরে রাজকুলে জন্মগ্রহণ করলেন। তিনি সে মহাপরিবারে অতি যত্নে র সহিত বর্ধিত হয়ে দর্শনীয়, সুপ্রসন্ন সুবর্ণবর্ণ হয়েছিলেন। রাজা যথাকালে বোধিসত্ত্বকে উপরাজ্যে অভিষিক্ত করে অচিরেই পরলোক প্রাপ্ত হলেন। সে হতে মহাসত্ত্ব ক্রমে চারদ্বীপের সুদর্শন নামক চক্রবর্তী রাজা হয়ে সপ্তবিধ রত্ন সম্পন্ন মহাতেজশালী হয়েছিলেন। সপ্তরত্ন হল এই- চক্ররত্ন , হস্তীরত্ন , অশ্বরত্ন , মণিরত্ন , স্ত্রীরত্ন , গৃহপতিরত্ন , ও পরিনায়ক রত্ন । এ সপ্তবিধ রত্ন পিতা, মাতা, দেবতা, দেবরাজ ইন্দ্র ও ব্রহ্মাদি কেহই দেননি। ইহা নিজের পূর্বকৃত কর্মের দ্বারা লাভ করেছেন।
সপ্ত রত্নে র আগমন বিবরণী-
যতদিন যাবৎ চক্রবর্তী রাজা হবার যোগ্য পুণ্যবান সত্ত্ব পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ না করেন ততদিন যাবৎ চক্ররত্ন প্রথম কল্প হতেই মহাসমুদ্র গর্ভে সুপ্রতিষ্ঠিত থাকে। যখন যশবান চক্রবর্তী রাজা হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি পৃথিবীতে উৎপন্ন হন, তখন দেবরাজ ইন্দ্রের বৈজয়ন্ত রথচক্র প্রমাণ সপ্তরত্ন সমুদ্র গর্ভ হতে অই পুণ্যবান চক্রবর্তী রাজার নিকট এসে উপস্থিত হয়। হস্তীরত্ন সর্বলক্ষণ সম্পন্ন, সর্বশ্বেতবর্ণ, কৈলাস কূট সদৃশ ও অভিমঙ্গল স্বভাব হস্তীকে হস্তীরত্ন বলা হয়। ছদ্দন্ত, কূলাবক অথবা উপোসথ জাতীয় হস্তীকুল হতেই কর্মানুরূপ চক্রবর্তী রাজার নিকট এসে উপস্থিত হয়। অশ্বরত্ন সর্ব সুলক্ষণ সম্পন্ন, সর্বশ্বেত রৌপ্যবর্ণ দর্শনীয় অশ্বকেই অশ্বরত্ন বলে। বলাহক দেবপুত্রই তা রক্ষা করেন। যখন চক্রবর্তী রাজা উৎপন্ন হন, তখন যথাকালে ঐ অশ্বরত্ন বলাহককুল হতে রাজার নিকট উপস্থিত হয়। মণিরত্ন – এ মণিরত্ন বৈপুল্ল পর্বতবাসী কুম্ভণ্ড নামক যক্ষ সহস্র পরিবার দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। যখন চক্রবর্তী রাজা উৎপন্ন হন তখন যথাকালে বৈপুল্য পর্বত হতে এসে তা রাজার হস্তগত হয়। স্ত্রীরত্ন – এ স্ত্রী রত্ন উত্তর কুরুতেই বাস করেন। যখন পুণ্যবান চক্রবর্তী রাজা পৃথিবীতে উৎপন্ন হন, তখন যথাকালে দেবরাজ ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণ উত্তর কুরুদ্বীপ হতে এ স্ত্রীরত্ন এনে চক্রবর্তী রাজাকে দিয়ে যান। গৃহপতি রত্ন – এ গৃহপতি রত্ন জম্বুদ্বীপেই বাস করেন। পুণ্যবান চক্রবর্তী রাজা যখন পৃথিবীতে উৎপন্ন হন, তখন যথাকালে দেবরাজ প্রমুখ দেবতা বৃন্দ এ গৃহপতি রত্ন কে এনে দিয়ে যান। পরিনায়ক রত্ন – এ পরিনায়ক রত্ন পূর্ব বিদেহ দ্বীপেই বাস করেন। চক্রবর্তী রাজা অভিষিক্ত হওয়ার পর দেবরাজ ইন্দ্র প্রমুখ দেবতা বৃন্দ এ পরিনায়ক রত্ন কে পূর্ববিদেহ হতে এনে চক্রবর্তী রাজাকে দিয়ে যান।
সূত্র –জাতক পঞ্চাশক, জিনবংশ মহাথেরো