তথ্য উপস্থাপনঃ- সবুজ বড়ুয়া। লিখেছেনঃ- দীপানন্দ ভিক্ষু।
(আলোচনার বিষয়)
(১)বুদ্ধের সময়কালীন নারী ও সামাজিক প্রসঙ্গ ।
(২)ভিক্ষুণী সংঘের বিলুপ্তি ও ভিক্ষু মহাসভার যুক্তি।
(৩)আধুনিক সমাজে প্রবজ্জিত নারী ও তাদের ভূমিকা।
(৪)বাংলাদেশে বৌদ্ধ নারী ও তাদের ধর্মীয় মর্যাদা।
সম্প্রতি নারীদের সামাজিক এবং ধর্মীয় মর্যাদা সম্পর্কে যখন খুব বেশি আলোচনা ও সমালোচনা উঠছে, ঠিক এ সময়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বৌদ্ধধর্মে নারীদের মর্যাদা সম্পর্কে প্রত্যেককে অবগত হওয়া আবশ্যক। সমাজে শত বাধা-বিপত্তি থাকা সত্ত্বেও নারী আজ সর্বোচ্চ শাসনক্ষমতার অধিকারী যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষই তাদের পাহারাদার। নারীদের এ অগ্রগতি অনেকের কাছে দৃষ্টিকটু হলেও আধুনিক রুচিসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে তা শুধু গ্রহনযোগ্য নয়, উৎসাহ ব্যঞ্জকও। সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত বৌদ্ধসমাজের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে বর্তমান প্রবন্ধের অবতারণা। বৌদ্ধদের আদর্শ তথ্য কেন্দ্র ‘ধম্মইনফো’ অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ (বুধবার মে ০৮, ২০১৩) পড়ে অবগত হই বাংলাদেশে নারীদের জন্যে প্রব্রজ্জ্যা গ্রহন বিধেয় নয় এবং যথারীতি বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা কর্তৃক ভদন্ত ডঃ বরসম্বোধি থেরোকে ব্রহ্মদন্ড প্রদান যা বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে পুনরায় অধিক গবেষণার সু্যোগ সৃষ্টি করে। অতঃপর ত্রিপিটকীয় গ্রন্থাবলীর উদাহরণ সম্বলিত বৌদ্ধধর্মে নারীর মর্যাদা সম্পর্কে এ প্রবন্ধ পাঠকের কাছে উপস্থাপিত হলো।
বুদ্ধের সময়কালীন নারী ও সামাজিক ব্যবস্থা।
বুদ্ধের সম-সাময়িককালে নারীরা শুধু সামাজিকভাবে নিগৃহীত হয়নি ধর্মীয়ভাবেও তাদের মর্যাদা ছিল অতিনগন্য যা বৈদিক ধর্মীয় গ্রন্থ ‘মনুস্মৃতি’র শ্লোক উদাহরণ স্বরূপ প্রদত্ত হল।
নাস্তি স্ত্রীনাম পৃথগ্ যজ্ঞো ন ব্রতম্ নাপ্যুপোষথম্
পতিম্ শুশ্রুষতে যেন তেন স্বর্গে মহীয়তে। – শ্লোক ।১৫৩
“প্রয়োজন নেই পৃথক কোন যজ্ঞ কিংবা উপোসথের
পতি সেবায় স্বর্গ লাভ হবে স্ত্রীদের।”
এ শ্লোকে উল্লেখ করা হয় শুধু স্বামীকে সেবার মাধ্যমে নারীদের স্বর্গ লাভ হয় এবং অন্যান্য ধর্মীয় কাজে অংশগ্রহনের প্রয়োজন নেই। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় নারীদের ধর্মীয় কাজে স্বাধীনাতা ছিল যৎসামান্য এবং ঘরের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ। এরকম ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে গৌতম বুদ্ধ শুধু সমালোচনা করেননি যথারীতি নারীদের অধিকার দিয়ে সামাজিক এবং ধর্মীয় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। সংযুক্ত নিকায়ের কোসল সংযুক্তে উল্লেখ আছে, তখনকার সমাজে মেয়ে শিশু জন্মের চেয়ে ছেলে শিশুর জন্মে অধিকতর আনন্দ লাভ করত। এটাকে বুদ্ধ হীনমন্যতা হিসেবে প্রাধান্য দিয়ে বলেন, সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা করার ক্ষেত্রে মেয়েরা অগ্রগণ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। পরিবারে মেয়েরা অধিক ভালবাসা পায় এবং মেয়েদের দ্বারা পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়, যেমন একজন সুপুত্রের সাথে মাতার সম্পর্ক। তিনি আরও বলেন লিঙ্গ কোন বিষয় না, চরিত্রই সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমনকি মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি অবদান রাখে। যেমন –
ইত্থি’পি হি একচ্চিযা সেয়্যা পোসা জনাধীপা, মেধাবিনী সীলাবাতী সস্সুদেবা পতিব্বতা।
তস্সা যো জাযতি পোসো সূরো হোতি দিসম্পতি , এবং সুভগিযা পুত্তো রজ্জং’পি অনুসাসতি।
– সংযুক্ত নিকায় ১। ৮৬
“জনাধিপতি! একজন মেয়ে অনেক ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারে। তিনি মেধাবিনী, শীলাবতী, শাশুড়-শাশুড়ী সেবী, পতিব্রতা হয়ে নিজেকে গড়ে তুলে। সুন্দরভাবে নিজের সন্তানকেও গড়ে তুলে এবং এরকম ভাগ্যবতীর পুত্র সুন্দরভাবে রাজ্য অনুশাসন করে।”
সংযুক্ত নিকায়ে বুদ্ধ আরো বলেন, একজন মেয়ে যিনি ধর্ম পরায়ণ, শীলবান, মেধাবী এবং শিক্ষামনা, তিনি এই পৃথিবীতে সফলতা অর্জন করতে পারে। যেমন –
সদ্ধায সীলেন চ য’ইধ বডঢতি, পঞঞায় চাগেন সুতেন চ’উভযং।
সা তাদিসি সীলবতি উপাসিকা, আদিযতি সারং ইধ’এব আত্তনো’তি। – সংযুক্ত নিকায়, ৪।২৫০
“যিনি শ্রদ্ধাসম্পন্ন, শীলবান, মেধবী, প্রজ্ঞাবান এবং ত্যাগী, সে রকম শীলবতী উপাসিকা এ পৃথিবীতে নিজে সফলতা অর্জন করে।”
এখানে শীলবতী বলতে তাকে বুঝানো হয়েছে যিনি নিজের জীবনকে ইহলোক-পরলোক উভয় লোককে অর্থবহ করার জন্যে ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাসম্পন্ন হয়ে পাপের প্রতি ভীত এবং লজ্জাসম্পন্ন হয়। পাশাপাশি তিনি রাগহীন,ঈর্ষাহীন, মাৎসর্যহীন, চরিত্রবান, শীলবতী, বহুশ্রুত, বীর্যবান, মানসিক ভাবে দৃঢ় এবং জ্ঞানী হয়। এ সব গুনসম্পন্ন মেয়েরাই পারিবারিক বন্ধনকে করে সুদৃঢ় যা পরিবারের অন্যান্য পুরুষদেরও সুন্দর জীবনযাপনে সহয়তা করে। এটাকেই বৌদ্ধধর্মে সামাজিক এবং পারিবারিক শান্তি-শৃংখলার অন্যতম উপাদান বলা হয়েছে। এরকম নারীরাই পরিবারকে সুখী এবং সমৃদ্ধশালী করে তুলে যা সামাজেও প্রভাব বিস্তার করে। অপরদিকে অঙ্গুত্তর নিকায়ে বুদ্ধ বলেন, আটটি গুনের দ্বারা মেয়েরা গুনবতী হয় যা স্বর্গ লাভের অন্যতম সোপান। যেমন –
সুসংবিহিতকম্মন্তা সংঘহিতপরিজ্জনা, ভত্তু মনাপং চরতি সম্ভতংনুরক্খতি।
সদ্ধাসীলেন সম্পন্না বদঞু বিতমচ্ছরা, নিচ্চং মগ্গং বিসোধেতি সোতানং সম্পরাযিকং।
ইচ্চতে অট্ঠধম্মা চ যস্সা বিজ্জতি নারিযা, তং পি সীলবতং আহু ধম্মট্ঠং সচ্চবাদিনিং।
সোলসাকারাসম্পন্না অট্ঠংগসুসমাগতা, তাদিসী সীলবতী উপাসিকা উপপজ্জাতি দেবলোকং মানাপং। – অঙ্গুত্তর নিকায় ৪।২৭১
১।পরিবারের কাজকর্ম সুসংহতভাবে সম্পাদন করে, ২। কর্মচারীদের সাথে সুন্দরভাবে ব্যবহার করে, ৩। স্বামীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, ৪। স্বামীর অর্জিত সম্পত্তি যথাযথভাবে রক্ষা করে, ৫। ধর্মের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করে, ৬। শীলসম্পন্ন হয়, ৭। দয়ালু এবং ৮। প্রজ্ঞাবান হয়।
প্রথম ছয়টি গুনের সাথে ত্রিপিটকের অন্যতম গ্রন্থ দীর্ঘনিকায়ের সিগালোবাদ সূত্রের সাথেও যথার্থ মিল দেখা যায়। সিগালোবাদ সূত্র মূলতঃ গৃহী বিনয় হিসেবে পরিচিত অন্যতম বুদ্ধবাণী যা বুদ্ধ গৃহীদের জন্য উপদেশ হিসেবে প্রচার করেছেন।
অপরদিকে তৎকালীন সমাজে বলা হত নারীরা বুদ্ধিমত্তার দিক থেকেও পুরুষের চেয়ে অনেক নিচু তাই তারা আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভে অক্ষম। এর বাস্তবিক উদাহরণ আমরা পাই সংযুক্ত নিকায়ে। একসময় এক মার ভিক্ষুণী সোমা’র নিকট এসে বলেন –
যং তং ইসীহি পত্তব্বং ঠানং দুরভিসম্ভাবং
ন তং দ্বংগুল পঞঞায সক্কা পপ্পোতুং ইত্থিযা। – সংযুক্ত নিকায় ১।১২৯
“মেয়েরা দুই আঙ্গুল পরিমাণ প্রজ্ঞা নিয়ে কিভাবে শুধুমাত্র ঋষি অর্জিত জ্ঞান লাভ করার আশা পোষণ করে?”
মার কর্তৃক এ রকম প্রশ্নের উত্তরে ভিক্ষুণী সোমা বলেন –
ইত্থিভাবো নো কিং কযিরা চিত্তম্হি সুসমাহিতে,
ঞান্মহি বত্তমানম্হি সম্মা ধম্মং বিপস্সতো। – সংযুক্ত নিকায় ১।১২৯
“যখন কারো চিত্ত সুসমাহিত এবং সদ্ধর্মকে বর্তমান জ্ঞান দ্বারা বিশেষ ভাবে দর্শন করে, সেখানে কোন মেয়ে ভাবা উচিত কি?”
এ থেকে প্রতীয়মান হয় বৌদ্ধধর্মে মেয়েরা আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম এবং নারী-পুরুষ উভয়ই সমান আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের অধিকার রাখে। যে সকল ব্যক্তি নারীদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাড়ায় তাদের বুদ্ধ মূর্খের সাথেও তুলনা করেন। যেমন, ত্রিপিটকের অপদান গ্রন্থে উল্লেখ আছে বুদ্ধের বিমাতা ভিক্ষুণী মহাপ্রজাপতি গৌতমী পরিনির্বাণের পূর্বে বুদ্ধের সাথে শেষ দেখা করতে গেলে বুদ্ধ তাকে বলেন –
ইত্থীনং ধম্মাভিসমযে যে বালা বিমতিং গতা,
তেসং দিট্ঠিপহানত্থং ইদ্ধিং দস্সেহি গোতমি। – অপদান ২।৫৩৫
“গৌতমী! আপনি ধর্মজ্ঞান লাভ করে মূর্খদেরকে একপ্রকার অলৌকিক শক্তি প্রদর্শন করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, যাদের সন্দেহ ছিল মেয়েদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের কোন ক্ষমতা নেই।”
উপরে প্রদত্ত ত্রিপিটকীয় গ্রন্থ থেকে গৃহীত উদাহরণ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, বুদ্ধের সমকালীন সমাজে মেয়েরা সামাজিক এবং ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত হত। বুদ্ধই প্রথম নারীদের সামাজিক এবং ধর্মীয় মর্যাদা প্রদান করে যা মেয়েরা দীর্ঘদিন ভোগ করে। কিন্তু পরবর্তীতে ভারত থেকে বৌদ্ধধর্ম পতনের সাথে সাথে পুনরায় মেয়েরা তাদের সে অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
ভিক্ষুণী সংঘের বিলুপ্তি ও ভিক্ষু মহাসভার যুক্তি।
——————————————————————
ত্রিপিটকের বিনয় পিটকে ভিক্ষুণী সংঘ প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত সহ ভিক্ষুণীদের নিয়ম-নীতি ইত্যাদি সম্পর্কে বিষদ আলোচনা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে আলোচনা না করে ‘ধম্মইনফো’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে প্রবন্ধে পর্যালোচনা করব। পত্রিকা মতে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন “সংঘায়নের মাধ্যমে নারীদের প্রব্রজ্জ্যা গ্রহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে”। (বুধবার মে ০৮, ২০১৩)। প্রদত্ত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত বিষয় সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত কোন ঐতিহাসিক সত্যতা পাওয়া যায়নি। তদুপরি বৌদ্ধধর্ম বিষয়ে কোন পন্ডিত এ বিষয়ে এ রকম যুক্তি প্রদান করেছে এমন জানা যায়নি। বুদ্ধের সময় থেকে ধারাবাহিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায়, বুদ্ধের সময়েও নারীদের প্রব্রজ্জ্যা গ্রহন নিয়ে অনেকের মতানৈক্য ছিল। সমাজপতিদের বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা ছাড়াও ভিক্ষু সংঘের মধ্যেও এ নিয়ে অনেক মতামত রয়েছে। যদিওবা বুদ্ধ জীবিত অবস্থায় এ বিষয় নিয়ে ভিক্ষুরা চুপচাপ ছিলেন কিন্তু বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পরপরই এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। যার ফলস্বরূপ প্রথম বৌদ্ধ সংগীতিতে ভদন্ত মহাকাশ্যপ থেরো কর্তৃক থেরো আনন্দকে প্রশ্ন করা হয়, মেয়েদের পক্ষ হয়ে কেন আনন্দ বুদ্ধের নিকট গিয়ে ভিক্ষুণী সংঘ প্রতিষ্ঠার জন্যে অনুরোধ করে। অবশ্য থেরো আনন্দ কর্তৃক প্রদত্ত উত্তর ছিল যুক্তি সংগত, তাই উপস্থিত ভিক্ষু সঙ্ঘ এটা মেনে নেন। তিনি বলেন নারী যদি মার্গ ফল লাভ করতে পারে তাহলে কেন তারা প্রব্রজ্জ্যা গ্রহন করতে পারবে না? ভিক্ষু আনন্দের এ যুক্তিকে বুদ্ধও গুরুত্ব দেন এবং অষ্ট গুরুধর্ম প্রবর্তনের দ্বারা নারীদের সংঘে প্রবেশর অনুমতি দেন। সংঘায়নে আরো একটি প্রশ্ন লক্ষনীয়, বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পূর্বে আনন্দ বুদ্ধকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে মেয়েদের আগে সুযোগ দেন যা ভদন্ত মহাকাশ্যপ কর্তৃক আনন্দকে প্রশ্ন করা হয়, কেন আনন্দ মেয়েদের আগে সুযোগ দেয়। এসব বিষয় থেকে অনুমান করা যায় নারীদের সংঘে প্রবেশ এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠালাভ অনেকে মেনে নিতে পারেননি। এর অন্যতম কারন হল তখনকার সামাজিক পরিস্থিতি ছিল মেয়েদের প্রতিকুলে এবং ব্রাহ্মণ সমাজে এটা ছিল অগ্রহনযোগ্য। এমনকি ভিক্ষু সংঘে অনেক ভিক্ষু ছিলেন ব্রাহ্মণ বংশ থেকে যারা নারীদের সামাজিক এবং ধর্মীয় বিপ্লব সহজে মেনে নিতে পারেননি।
সম্রাট অশোক কর্তৃক আয়োজিত তৃতীয় সংঘায়নের পর অশোকের কন্যা ভিক্ষুণী সংঘমিত্রা কর্তৃক শ্রীলংকায় বুদ্ধধর্ম প্রচার থেকে সহজে বুঝা যায় তৃতীয় সংঘায়নে নারীদের প্রব্রজ্জ্যা গ্রহন নিষিদ্ধ করেনি। বৌদ্ধ ইতিহাসে জানা যায় চতুর্থ সংঘায়ন (থেরবাদীদের মতে) [খৃষ্ঠপূর্ব ১ম শতাব্দী] অনুষ্ঠিত হয় শ্রীলংকায় এবং সেখানেও এটা নিষিদ্ধ করেনি। ৫ম (১৮৭১ সাল) এবং ৬ষ্ঠ সংঘায়ন (১৯৫৬ সাল) অনুষ্ঠিত হয় বার্মাতে (মায়ানমার) এবং সেখানেও নারীদের প্রব্রজ্জ্যা গ্রহন নিষিদ্ধ করা হয় তা এখনও জানা যায় নি। অপরদিকে মহাযান বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস অনুযায়ী অনুষ্ঠিতব্য সংঘায়নেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে নারীদের প্রব্রজ্জ্যা গ্রহন নিষিদ্ধ। যদি তা হত মহাযান বৌদ্ধধর্ম অনুসারী দেশে (চীন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম ইত্যাদি) হাজার হাজার ভিক্ষুণী দেখা যেত না।
মহাপন্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়ন কর্তৃক লিখিত “ভারতে বৌদ্ধধর্মের উত্তান ও পতন” (সংঘরাজ জ্যোতিঃপাল মহাথের কর্তৃক বাংলায় অনূদিত) গ্রন্থসহ কয়েকজন ভারতীয় গবেষকের গ্রন্থে উল্লেখ আছে ভারতে বৌদ্ধধর্ম পতনের মূল কারণ ভিক্ষুদের অনৈতিক জীবন যাপন এবং তারা ভিক্ষুণীদের সাথে ভিক্ষুদের মেলামেশাকে অধিকতর গুরুত্ব দেন। বস্তুত তাদের এ গবেষণা যথার্থ নয়। এখানে ভিক্ষুণী সংঘকে দোষরোপ মোটেই উচিত নয়। ভারত থেকে বৌদ্ধধর্মের পতনের কারণ সম্পর্কে নতুন গবেষণা একান্ত অপরিহার্য মনে করি। ধারাবাহিক ইতিহাস গবেষণা করে প্রতীয়মান হয়, বুদ্ধের সময় থেকে এক শ্রেণীর ভিক্ষু সংঘ নারীদের সংঘে প্রবেশ সহজে মেনে নিতে পারেননি এবং তা পরবর্তীতে ভারতে বৌদ্ধধর্ম বিলুপ্তির সাথে সাথে ভিক্ষু কর্তৃক নারীদের সংঘে প্রবেশে অনুৎসাহ করা হত। ফলে নারীদের সংঘে প্রবেশ ভাটা পড়ে এবং একসময় ভারতবর্ষ থেকে তা বিলুপ্ত হয়। অপরদিকে ভিক্ষুণীদের জন্যে প্রবর্তিত কঠোর নিয়মাবলীও পরবর্তী সময়ে নারীদের অনুৎসাহ সৃষ্টি করে। তবুও দীর্ঘ বছর পর্যন্ত শ্রীলংকায় ভিক্ষুণী সংঘের অস্থিত্ব ছিল। বৌদ্ধ পন্ডিত আমেরিকার ভিক্ষু বোধি’র মতে (The Revival of Bhikkhuni Ordination in the Theravada Tradition – p. 01) ১১ শতাব্দীর দিকে শ্রীলংকা থেকে ভিক্ষুণী সংঘ বিলুপ্ত হয় এবং এর সাথে সাথে থেরেবাদ ভিক্ষুণী সংঘের অস্থিত্ব লোপ পায়। এ থেকেও বুঝা যায় শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংঘায়নে নারীদের সংঘে যোগদান নিষিদ্ধ করেনি।
আধুনিক সমাজে প্রব্রজ্জিত নারী ও তাদের ভূমিকা।
————————————————————————
যদিও মহাযান এবং বজ্রযান বৌদ্ধধর্মে ভিক্ষুণী সংঘ ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে কিন্তু থেরবাদ বৌদ্ধধর্মে ১১ শতাব্দী থেকে ১৯ বিংশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত ভিক্ষুণী সংঘের কোন ইতিহাস পাওয়া যায়নি। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে শ্রীলংকার নারীরা সংঘে প্রবেশের ইচ্ছাপোষণ করায় ১৯৯০ সালে মহাবোধি সোসাইটির পৃষ্ঠপোষ্কতায় এবং কোরিয়ার ভিক্ষুণী সংঘের সহযোগিতায় শ্রীলংকায় ভিক্ষুণী সংঘ পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অমরাপুরা নিকায়ের প্রয়াত ভদন্ত ধম্মালোক অনুনায়ক থেরো, ডঃ বজিরা নায়ক থেরো, উপাচার্য – বুড্ডিস্ট এন্ড পালি বিশ্ববিদ্যালয়, শ্রীলংকা, শ্রী সুমংগল নায়ক থেরো, অধ্যক্ষ – রাংগিরি দম্বুল্লা বিহার, শ্রীলংকা। ভিক্ষুণী সংঘ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন মহাবোধি সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার ভদন্ত ডি রেবত মহাথের এবং প্রয়াত এম বিপুলসার মহাথের। ১৯৯০ সালের পর থেরবাদ ভিক্ষুণী সংঘের আরেকটি উপসম্পদা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সারনাথে। সেখানে ১০ জন শ্রীলংকার নারী ভিক্ষুণী হিসেবে দীক্ষা গ্রহন করেন। এ অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেন ভারতের মহাবোধি সোসাইটি এবং পরিচালনা করেন কোরিয়ার ভিক্ষু এবং ভিক্ষুণী সংঘ। এ ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালে তাইওয়ানের ফো গুয়াং শান (Fo Guang Shan)সংগঠনের আয়োজনে বুদ্ধগয়ায় বিভিন্ন দেশের নারীদের অংশগ্রহনে এক বিশাল অনুষ্ঠানে শত শত নারী সংঘে প্রবেশ করে। ১৯৯৮ সাল পরবর্তী থেকে শ্রীলংকায় প্রায়ই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শত শত নারী সংঘে প্রবেশ করছে। কিন্তু বৌদ্ধ প্রধান দেশ মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডে নারীদের সংঘে প্রবেশে এখনও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে তারা মনে করেন নারীদের সংঘ প্রবেশে অনুমতি প্রদান করলে ধর্মের পরিহানি ঘটবে। তবে অনেক ভিক্ষু সংঘ এ মতের সম্পূর্ণ বিরোধী এবং তারা বলেন নারীদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সমীচিন নয়। বর্তমানে ইংল্যান্ডের ভিক্ষু ব্রহ্মবংশ থাইল্যান্ডের ভিক্ষু সংঘের বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং অষ্ট্রেলিয়ায় তার বিহার সংলগ্ন ভিক্ষুণী সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে নারীদের সংঘে প্রবেশের পথ উন্মুক্ত করে দেন। বর্তমানে সেখানে বিভিন্ন দেশের নারীরা প্রব্রজ্জ্যা ধর্মে দীক্ষা লাভ করে ভিক্ষুণী সংঘের পরিধি বিস্তারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ধর্মপ্রচারে বিশেষ অবদান রাখছেন। তন্মধ্যে ভিক্ষুণী হসপন্ন, ভিক্ষুণী কুসুমা অন্যতম। তারা বিভিন্ন দেশে আমন্ত্রিত হয়ে নারীদের প্রব্রজ্জ্যা প্রদানের পাশাপাশি ধর্মদেশনাও করেন যেখানে শত শত উপাসক -উপাসিকা উপস্থিত হয়ে ধর্মশ্রবণ করে, এবং ভিক্ষুণী সংঘের জন্যে অনুদান সংগ্রহ করেন। বর্তমানে মহাযান বৌদ্ধধর্মের ভিক্ষুণী সংঘ ছাড়াও বজ্রযান (তিব্বতী বৌদ্ধধর্ম) বৌদ্ধধর্মের অসংখ্য ভিক্ষুণী পশ্চিমা দেশে বৌদ্ধধর্ম প্রচারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। পাশ্চাত্যে দেশেও অনেক নারী ভিক্ষুণী সংঘে প্রবেশ করছে এবং বড় বড় বিহার, ধ্যান কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে বুদ্ধের ধর্মপ্রচারে নিয়োজিত আছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের অনলাইন ভিত্তিক ধর্মদেশনা এবং ধ্যান শিক্ষা অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
শ্রীলংকার ভিক্ষুণী সংঘের আবেদন
১৯৯০ সাল থেকে শ্রীলংকায় পাঁচশতের অধিক নারী প্রব্রজ্জ্যা ধর্মে দীক্ষা গ্রহন করলেও শ্রীলংকার সরকার এখনও তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। এর পিছনে মহানায়ক থেরসহ কিছু সিনিয়র ভিক্ষুর অসম্মতি সরকারের স্বীকৃতি দানে চরম বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেক ভিক্ষু সংঘ এতে সম্মতি দিলেও এখনও সরকার এবং ভিক্ষু সমিতি কর্তৃক স্বীকৃতি না দেয়ায় ভিক্ষুণীদের মনে হতাশা সৃষ্টি হয়। ফলে তারা একপ্রকার সামাজিক ও ধর্মীয় মর্যাদা লাভের জন্যে ৩০ শে অক্টোবর ২০১৩ মানবাধিকার সংস্থায় (Human Rights Commission) আবেদন করেন যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাদের মতে সম্রাট অশোকের কন্যা ভিক্ষুণী সংঘমিত্রা শ্রীলংকায় ধর্মপ্রচারে এসে ভিক্ষুণী সংঘ প্রতিষ্ঠা করে নারীদের ধর্মীয় মর্যাদা দেন যা থেকে আমরা আজ বঞ্চিত। তাই আমাদের প্রাপ্য অধিকার আমরা ফেরত চাই। ইতিমধ্যে তাদের আবেদন আন্তর্জাতিক মহলেও সাড়া জাগায় এবং তাদের পক্ষে ব্যাপক জনমত তৈরি হচ্ছে।
থাইল্যান্ড নারীদের আবেদন
অপরদিকে, থাইল্যান্ডের অনেক নারীও সংঘে প্রবেশে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।কিন্তু ভিক্ষু সংঘ কর্তৃক তাদের স্বীকৃতি না দেওয়ায় অনেকে যে দেশে ভিক্ষুণী সংঘ বর্তমান সেখানে পাড়ি জমাচ্ছে। অপরদিকে অন্যান্যরা এক প্রকার ক্ষোভ প্রকাশ করেন যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ‘ইউরোশিয়া’ (ডিসেম্বর ২৩, ২০১৩) পত্রিকার এক সাংবাদিক থাইল্যান্ডের এক মহিলা ডঃ সিরিবান রত্নাকরন থেকে সাক্ষাৎকার নিলে তিনি বলেন,থাইল্যান্ডের প্রতিটি সেক্টরে মেয়েরা দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু ভিক্ষুণী হিসেবে এখনও ভিক্ষু সংঘ আমাদের গ্রহন করেনা। সমাজের বিভিন্ন ভাল দিক উদাহরণ দিয়ে তিনি জোরালো আবেদন করেন নারীদের সংঘে প্রবেশের অধিকার দেওয়ার জন্যে। হয়ত এমনও হতে পারে নিকট ভবিষ্যতে বুদ্ধ কর্তৃক প্রদত্ত নারীদের ধর্মীয় মর্যাদা ফিরে পাওয়ার জন্যে বিশাল আন্দোলন গড়ে তুলবে। যেমনটি হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। ৪ সেপ্টম্বর ২০১৩, কোরিয়ায় ভিক্ষুণীদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্যে অনেক ভিক্ষুণী রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে যেখানে প্রচুর অন্যান্য নারীরাও যোগ দেন। কোরিয়ায় ভিক্ষুণী সংঘ বর্তমান থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। অতএব নিঃসন্দেহে বলা যায় নিকট ভবিষ্যতে নারীরা শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে প্রাপ্য ধর্মীয় অধিকার আদায়ে একত্রিত হবে।
মায়ানমারে নারী ব্রহ্মচারী
মায়ানমারে নারীদের পুরোপুরি ভিক্ষুণী হিসেবে গ্রহন না করলেও তারা একপ্রকার শ্রামণীর মত জীবনযাপন করতে পারে। সম্প্রতি The New York Times (সেপ্টম্বর ১৯, ২০১৩)অনলাইন পত্রিকায় ভিডিও হিসেবে ধারন করা হয় মায়ানমারে অসংখ্য নারীর সন্ন্যাস জীবনযাপনের কাহিনী যেখানে ০৯ থেকে ৯৪ বছর বয়সী নারী রয়েছে। একদিন এক ধার্মিক উপাসক ২৫ হাজার নারী সন্ন্যাসীদের দান দেয় যা খন্ডিত ফিল্ম হিসেবে The New York Times পত্রিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। যদিওবা মায়ানমার ভিক্ষুণী সংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি কিন্তু নারীদের ব্রহ্মচর্য জীবনযাপনে কোন বাধা নেই।
বাংলাদেশে বৌদ্ধনারী ও তাদের ধর্মীয় মর্যাদা।
—————————————————————-
বাংলাদেশে সামগ্রিকভাবে নারীর অধিকার সম্পর্কে কম-বেশি সকলেই অবগত। বর্তমান তাদের এ অধিকারের জন্যে অনেক নারী সামাজিক আন্দোলন করে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন। সমাজের কার্পন্য দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে নারীরা আজ সবস্থানে অধিকার আদায় করে নিয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের অনেক ত্যাগ এবং সংগ্রাম অন্যজনের কাছে অনুকরণীয়। বিশ্বের অনেক দেশেও নারীরা সংগ্রাম করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। তাই নারীর আর্থ-সামাজিক অধিকার একটি সংগ্রামী অধিকারও বলা চলে। অপরদিকে বাংলাদেশে বৌদ্ধনারীরা সামাজিক অধিকারের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে ধর্মীয় অধিকারেও অনেক উন্নত। তাই প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। পাশাপাশি সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে নারীরাও সমান অবদান রাখছেন। আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভের জন্যে ধ্যান চর্চার ক্ষেত্রেও তাদের উপস্থিতি অন্যতম, এমন কি অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক বেশি। তবুও সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতি সবসময় নারীদের অনুকুলে নয়। যেমন, সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ তাই প্রমাণ দেয়। নারীরা প্রব্রজ্জ্যা গ্রহন করতে পারবে কিনা এ নিয়ে অনেকের মনে অসংখ্য প্রশ্ন জাগে। আমাদের দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নারীদের অনুকুলে না হওয়ার ফলে নারীদের সংঘে প্রবেশ যতটুক ধর্মীয় দিক থেকে বাধা নয় ততটুক রাষ্ট্রের দিক থেকে বাধা। যেখানে নারীদের চলাচলে হাজারো বাধা সেক্ষেত্রে প্রব্রজ্জিত হয়ে চলাফেরা আরো বেশি চিন্তার বিষয়। অনেকে মনে করেন মহিলারা চীবর (কাষায় বস্ত্র) পরিধান করতে পারবে কিনা, ভিক্ষুদের সারিতে বসতে পারবে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। যেহেতু আমাদের দেশে নারীদের প্রব্রজ্জ্যা গ্রহন আদি থেকে নেই সেক্ষেত্রে নতুনভাবে ভিক্ষু সংঘ এবং বৌদ্ধ সমাজকর্মীরা উদ্যোগ নিয়ে অনন্য অবদান রাখতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং সমাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নারীদের ধর্মীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
এপর্যায়ে নিজের কিছু মতামত তুলে ধরলাম। ১। যেহেতু অনেকের মনে সংশয় রয়েছে সেহেতু প্রব্রজ্জিত নারীদের জন্যে একধরনের চীবর প্রচলন করতে পারে, ২। তাদের জন্যে আলাদা বিহার প্রতিষ্ঠা করতে পারে যেখানে যাতায়তের নিয়মকানুন থাকবে, ৩। ভিক্ষুণী সংঘ প্রতিষ্ঠার অপারগতা থাকলে প্রব্রজ্জ্যা প্রদানের মাধ্যমে ব্রহ্মচর্য জীবনযাপনের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে, ৪। যে দেশে প্রব্রজ্জিত নারী আছে সে দেশে বাংলাদেশের প্রব্রজ্জিত নারীদের প্রেরণের দ্বারা তাদের ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে এবং ৫। ধর্মীয় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত প্রব্রজ্জিত নারীরাই পরবর্তী প্রব্রজ্জিত নারীদের শিক্ষাদান করবে।
পরিশেষে, মানসিক ভাবে এক প্রকার প্রস্তুতি নিয়ে উপসংহারে বলতে চাই, আমার মতামত অনেক পূজনীয় ভিক্ষু সংঘ এবং গৃহী সংঘ যারা নারীদের প্রব্রজ্জ্যা গ্রহনের বিপক্ষে তারা শুধু সমালোচনাই করবে না এর বিপক্ষে অনেক যুক্তি দাড় করাবে, এবং তা জানা সত্বেও এ প্রবন্ধের অবতারনা করলাম। কারণ এ বিষয়ের উপর আমাদের জানা উচিত যে, কেন থেরবাদ বৌদ্ধধর্মে ভিক্ষুণী সংঘের অস্তিত্ব লোপ পায়। অপরদিকে মহাযান বৌদ্ধধর্ম নারীদের সংঘে প্রবেশ উন্মুক্ত থাকায় বর্তমানে অনেক নারী বুদ্ধের ধর্মপ্রচারে ব্যাপক অবদান রেখে যাচ্ছেন। এমনকি বর্তমান দালাইলামা অষ্ট্রেলিয়ায় এক অনুষ্ঠানে (জুন ১২, ২০১৩) ঘোষণা করেন পরবর্তী দালাইলামা হতে পারে একজন নারী। নারীদের প্রব্রজ্জ্যা প্রদান মহাকারুণিক বুদ্ধই প্রচলন করেছিলেন। তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা নারীদের অনুকুলে না থাকা সত্বেও বুদ্ধ নারীদের সংঘে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিলেন। তাই আধুনিক সমাজে বৌদ্ধ নারীদেরকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয় মনে করি।