ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা । এ উৎসব কে সামনে রেখে বৌদ্ধ বিহার গুলোতে উড়ানো হচ্ছে রঙিন ফানুস। আর তা অবলোকন করতে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্প্রীতির মেল বন্ধন রচনা করেছে। ১৬ অক্টোবর উৎসবের সমাপনী। ওইদিন বিকালে শহরের কেন্দ্রীয় মাহাসিংদোগ্রী মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দু ও মুসলিমদের দীর্ঘ মিছিল। এ মিছিলে ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে আবাল বৃদ্ধা বনিতারাও এক কাতারে সামিল হয়েছে। এ যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” এ উক্তির বাস্তব প্রতিফলন।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যতার মধ্য দিয়ে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে গিয়ে প্রার্থনা করছে। অপরদিকে তাদের নিরাপদে পূজার উৎস তৈরি করে দিচ্ছে অন্যান্য ধর্মের মানুষ। সন্ধ্যায় মন্দিরের মাঠ থেকে একটু পর পর উড়ানো হচ্ছে শান্তির বারতা রঙ-বেরঙের ফানুস। আর এসব ফানুস নীল আকাশের অদূরে গিয়ে তারার ন্যায় রূপ নিচ্ছে। এসময় ফানুসের আলোয় বর্ণিল হয়ে উঠে রাতের আকাশ।
মাহাসিংদোগ্রী মন্দিরের পাশাপাশি মোহাজের, বাজারঘাটা, বইল্যাপাড়া, জাদিরাম পাড়া ও বৈদ্য ঘোনা বৌদ্ধ বিহারেও একই পরিবেশ দেখা যায়। এছাড়া রামু, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, চকরিয়া ও কুতুবদিয়ার বৌদ্ধ বিহার গুলোতে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয় এ উৎসব।
এদিকে প্রবারণা পূর্ণিমা সফল ও নিরাপদে পালনের জন্য বৌদ্ধ মন্দিরের মোড় এবং বিহারের অভ্যন্তরে জেলা পুলিশের একাধিক টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন। তাদের পাশাপাশি রয়েছে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব। যার ফলে নিরাপত্তা নিয়ে তেমন একটা চিন্তিত দেখা যায়নি পূণ্যার্থীদের। ১৭ অক্টোবর দুপুর ২টায় অ¹মেধা ক্যাং থেকে শোভা যাত্রা সহকারে সৈকতের ডায়াবেটিস পয়েন্টে জাহাজ ভাসাতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ মিলিত হবে। আর এতে শরীক হবে পর্যটকসহ অন্যান্য ধর্মালম্বীর মানুষও। মঙ্গল শোভাযাত্রায় জাহাজ ভাসাবে রাখাইন ডেভলপম্যান্ট ফাউন্ডেশন (আরডিএফ), রাজধানী ফ্রেন্ডস সার্কেল, বাংলাদেশ রাখাইন স্টুডেন্ট কাউন্সিল কক্সবাজার শাখা, রাখাইন তরুন-তরুণী সংঘ, ও মাছ বাজার তরুণ-যুবক সংসদ। এছাড়া রামুর বাঁকখালী নদীর তীরেও ভাসানো হবে জাহাজ।
পূণ্যার্থী উথেন য়াইন, মং বাওয়ান, মং হ্লা ওয়ান, ছ লাইন, জ জ, জ জ উ, জহিন, আক্য, আবুরি, হাপু, মংথেন নাই, উসেনমি বাবু, নাই নাই, মিলুং, বোথেন, জনি, থেন থেন নাই, উহ্লাজ্য, ওয়াশে, মংচেন ওয়ান বাবু, মংছেন য়াইন, মংবা সান, ওয়ান ওয়ান, সো সো, ওয়াহ ওয়াহ, মিলি সে, লিলিউ, অভি, ওয়ান শে, নাই নাই থেন, কিংজ, ববি, মংমং, জ্যাক, পেমংগি জানান, প্রত্যেক ধর্মের প্রধান উৎসবে সরকারি ছুটি রয়েছে। কিন্তু বৌদ্ধদের অন্যতম প্রধান এই উৎসবে সরকারি কোন ছুটি নেই। প্রবারণা পূর্ণিমায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হলে সব ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।
রামু সীমা বিহারের সহকারী পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানান, প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে রামুর প্রায় বিশটি বৌদ্ধ বিহার ও গ্রামে ফানুস ওড়ানো হয়। শুধুমাত্র এখান থেকে ওড়ানো হয় শতাধিক ফানুস। বৌদ্ধদের প্রার্থনা, শুভ প্রবারণার ফানুসের আলোয় আলোকিত হবে পৃথিবী,দূর হবে পৃথিবীর সমস্ত সাম্প্রদায়িক অন্ধকার।
কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ দৈনিক সমুদ্রবার্তার সম্পাদক অধ্যক্ষ ক্যথিং অং জানান, অত্যন্ত আনন্দঘণ পরিবেশে পালিত হচ্ছে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে জাহাজ ভাসা উৎসব সফল ভাবে সমাপ্তির জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। তিনি জানান, তাবতিংস স্বর্গে রক্ষিত রয়েছে তথাগত বুদ্ধের অমূল্য কেশধাতু। বুদ্ধের সেই ধাতুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে বৌদ্ধ সম্প্রদায় আকাশে এই ফানুসগুলো উড়িয়ে থাকে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী মাবু আমাদের রামু কে জানান, প্রবারণা পূর্ণিমা সফল ভাবে সমাপ্তির জন্য পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। পূজা চলাকালে আমি প্রত্যেক বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। তাতে কোন সমস্যা দেখা যায়নি।
জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন ও পুলিশ সুপার আমাদের রামু কে জানান, প্রবারণা পূর্ণিমায় জেলায় কঠোর নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে। জাহাজ ভাসা উৎসবেও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক তা কঠোর ভাবে দমন করা হবে। সম্প্রীতি বিনষ্টকারী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দেশের উন্নয়ন সকল ধর্মের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এগিয়ে চলছে। সকলের যৌথ প্রয়াসে জঙ্গিবাদ মুক্ত সুখী ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে অচিরেই।