যখন আমি অর্হৎ হলাম
একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলের বনবিহারে দীর্ঘদিন ধরে কঠোর সাধনা করছিলাম । এক রাতে দীর্ঘক্ষণ চংক্রমণের সময়ে আমার মন অস্বাভাবিক ভাবে পরিষ্কার হয়ে উঠল। গভীর অন্তর্দৃষ্টি আসল যেন পাহাড়ি ঝরনাধারার মতো । যে নিগূঢ় রহস্যগুলোর আগে কোনো কুল কিনারা পাই নি, সেগুলোই আজ খুব সহজে বুঝতে পারছিলাম । এর পরে একটা কিছু আসল । এটা আমাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল । এটাই সেটা । অর্হত্ত্ব । এমন সুখ আগে কখনো পাই নি ।
তখনকার দিনে উত্তরপূর্ব থাইল্যান্ডে খাবার-দাবার ছিল আমার জন্য জঘন্য। পরের দিন বিহারের রান্নাঘর পরিষ্কার করার সময় একটা মাটির পাত্র পেয়েছিলাম যেটা শুক কীটে কিলবিল করছিল। তাই এটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে গেলাম। কিন্তু এক উপাসক, যে ছিল উপাসকদের মধ্যে সবচেয়ে শিক্ষিত ও রুচিসম্পন্ন সে আমাকে এটা ফেলে দিতে মানা করল। কারন সেটা নাকি আরও বেশি মজাদার!
আমার অর্হত্ত্বের পরের দিন অবাক হয়ে দেখলাম আঠালো ভাতের সাথে দুই সসপ্যান ঝোল। একটাতে ছিল সেই দুর্গন্ধযুক্ত পঁচা মাছের ঝোল যেটা আমি পছন্দ করি না, আরেকটাতে শুকরের মাংসের ঝোল যেটা আমি পছন্দ করি।
আমার আগে অধ্যক্ষ সেই সুস্বাদু শুকরের মাংসের ঝোল খেলেন কয়েক চামচ তারপর সেই শুকরের মাংসের ঝোলকে ঢেলে দিলেন পঁচা মাছের ঝোলের মধ্যে । এর পরে তিনি সেই ঝোলটা নেড়েচেড়ে মিশিয়ে দিয়ে বললেন, ‘সবই তো একই!’
আমি হতবাক। রাগে ফুঁসছি। ভীষণ রেগে গেছি। যদি তিনি সত্যিই ভাবতেন, ‘সবই তো একই’ তাহলে কেন বড় বড় তিন চামচ শুকরের মাংসের ঝোল তিনি নিজে খেলেন মিশিয়ে দেওয়ার আগে ? ভন্ড তারচেয়ে বড় কথা, তিনি তো এখানকারই ছেলে। বড় হয়েছেন এমন দুর্গন্ধযুক্ত পঁচা মাছের ঝোল খেয়ে । তার তো সেটাকেই পছন্দ করা উচিত । নকল! শুয়োর! প্রতারক!
এর পরে উপলব্ধি আমাকে আঘাত করল । অর্হৎদের খাবার দাবারের উপরে কোনো বাছবিচার থাকে না । তারা ক্ষুব্দ হয় না, আর তাদের অধ্যক্ষকে শুয়োর বলেও ডাকে না, যদিও তা চাপা স্বরে। আমি সত্যিই খুব রেগে গিয়েছিলাম। আর তার মানে হচ্ছে … ওহ্ না! … আমি অর্হৎ হই নি।
তৎক্ষণাৎ আমার রাগের আগুন চাপা পড়ে গেল বিষণ্ণতার ভারে । হতাশার ভারী কালো মেঘে ছেয়ে গেল আমার হৃদয়ের আকাশ, যা আমার অর্হত্ত্বের সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দিল । মনমরা হয়ে আমি দুই চামচ দুর্গন্ধযুক্ত পঁচা মাছের ঝোল ও শুয়োরের ঝোলের মিশ্রন ঢাললাম ভাতের উপর। কী খাচ্ছি, তাতে এখন আমার আর কিচ্ছু যায় আসে না । আমি নিরাশ হয়ে গেলাম । আমি যে অর্হৎ নই, তা জেনে আমার পুরো দিনটাই মাটি হয়ে গেল ।
শ্রধ্যেয় আযান ব্রাহ্ম বংশ মহাথেরোর জীবনাচরন অবলম্বনে রচিত ।
উপস্থাপনায় স্নেহাশীষ প্রিয় বড়ুয়া