জয়মঙ্গল অষ্ট গাথায় তথাগত মহাকরুণিক সম্যক সম্বুদ্ধের জীবনের আটটি ঘটনার কথা উল্লেখ রয়েছে। আমার এই ক্ষুদ্রতম জ্ঞানে “জয়মঙ্গল অষ্ট গাথায়” বর্ণিত আটটি ঘটনার বিবরণ ধারাবাহিক ভাবে উপস্হাপন করার মধ্যেদিয়ে ধর্মদানপূর্বক পূণ্য অর্জনের প্রয়াস ব্যক্ত করছি। আজকের বর্ণনায়- সত্যক সন্ন্যাসীকে পরাজয়ের কাহিনী। সময় নিয়ে পড়ার অনুরোধ থাকল সবার প্রতি।
যষ্ঠ গাথা–
সচ্চং বিহায় মতি সচ্চক-বাদকেতুং,
বাদাভিরো পিতমানং অতি-অন্ধভূতং।
পঞ্ঞাপদীপজলিতো জিতবা মুনিন্দো,
তন্তেজসা ভবতু তে জয়মঙ্গলানি।
অনুবাদ : অসত্যভাষী মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্ন বাদ-বিবাদ পরায়ণ, অভিমানীঅ ও অন্ধতুল্য সত্যত নামক নির্গ্রন্থকে মুনীন্দ্র বুদ্ধ যে প্রজ্ঞপ্রদীপ জ্বালিয়ে জয় করেছিলেন, ভগবান বুদ্ধের সেই ধর্মের (সত্যক্রিয়া) তেজ-প্রভাবে আপনার জয়মঙ্গল হোক।
সত্যক সন্ন্যাসীকে পরাজয়ের কাহিনী :
সত্যক ছিলেন বৈশালীর একজন নিগ্রৃস্থ সন্ন্যাসী। স্বভাবে তিনি ছিলেন প্রচন্ড তার্কিক। এবং শুধু তিনি নয় তাঁর চার বোন এবং পরিবারের সবাই ছিলেন তর্ক-শাস্ত্রে পারদর্শী। তাঁর চার বোনের নাম ছিল- সত্যা, লোলা, অবধারিকা ও প্রতিচ্ছদা।
তাদের মাতাপিতা কন্যাদের তর্কবিদ্যা শিক্ষাদানকালে বলেছিলেন- যদি কোন গৃহীর কাছে পরাজিত হও তবে তার ভার্যা হবে, আর যদি কোন পরিব্রাজকের কাছে পরাজিত হও তাহলে তার কাছে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে সংসার ত্যাগ করবে। ঐ চার বোন সবাই এক এক করে ভগবান বুদ্ধের অগ্রশ্রাবক সারিপুত্রের কাছে তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে, পরাজয় বরণ করে মাতাপিতার কথা অনুযায়ী এবং ভগবান বুদ্ধের আদেশে উৎপলবর্ণা থেরীর কাছে প্রব্রজিতা হয়ে ভিক্ষুণী হয়ে পরবর্তীকালে ধ্যান-সাধনা করে সবাই রহত্ব প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
তাদের সবার ছোট ভাই ছিলেন সত্যক। সত্যক লিচ্ছবীগণের শিক্ষক ছিলেন। তর্কবিদ্যায় অতুলনীয় হওয়াতে তাকে কেউ পরাস্থ করতে পারতো না। জনসমাজে উচ্চ প্রশংসিত হওয়াতে তার ভেতরে আত্মাভিমান জন্মে। অভিমানে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। বৈশালীতে তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধের সাথে দুইবার দেখা হয় সত্যকের। আর যতবারি বুদ্ধের সাথে দেখা হয় ততবারি সে তর্কযুদ্ধে পরাজয় বরণ করে। লিচ্ছবীগণের শিক্ষকের এম পরাজয় দেখে সবাই হতভাগ হয়ে যান। পরাজয় স্বীকার করার পর তিনি তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধকে নিজ বাড়ীতে নিমন্ত্রন গ্রহন করার জন্যে নিমন্ত্রন করেন। ভগবান বুদ্ধ তার নিমন্ত্রন গ্রহন করেন। এবং তারপর হতে ভগবান বুদ্ধের অনুগত হয়ে বাকী জীবন অহিবাহিত করেন। পরবর্তীকালে ধ্যান-সাধনা করে অচিরেই তার চার বোনের মত অরহত্ব প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
এই অসত্যভাষী মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্ন বাদ-বিবাদ পরায়ণ, অভিমানীঅ ও অন্ধতুল্য সত্যক নির্গ্রন্থকে তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধ প্রজ্ঞপ্রদীপ জ্বালিয়ে জয় করেছিলেন ।
☸•°*”˜˜”*°• চিরং তিট্ঠতু বুদ্ধ সাসনং •°*”˜˜”*°•☸
উপরোক্ত জয় গাথা বর্ণনায় আমার, আপনার প্রত্যেকের নিরন্তর জয়মঙ্গল হোক। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক, দুঃখ হীন হোক, রোগ-ব্যাধি, ভয়-ভীতি, অন্তরায় মুক্ত হোক। প্রত্যেকে সাধুবাদের সহিত অনুমোদন করুন।
সাধু_সাধু_সাধু !!!