বৌদ্ধধর্মে অনেক বড় একটা অংশ জুড়ে রয়েছে দানের মহিমা। তাই দান সম্পর্কে আমরা কমবেশী সকলেই জানি। আজ আমরা জ্ঞানী পুরুষের দান সম্পর্কেই জানব।
সুমেধ তাপস দীপংকর বুদ্ধের কাছে অনাগতে সম্যক সম্বুদ্ধ হওয়ার আশীর্বাদ লাভ করে চিন্তা করেছিলেন- বুদ্ধগণের বাক্যের কখনোই অন্যথা হয়না, সূর্য উদিত হলে অস্তগমন করবে এটা যেমন চিরন্তন সত্য বুদ্ধগণের বাণীও সেরকমই। তাই আমি যে অনাগতে বুদ্ধ হবো এটা সুনিশ্চিত। পরক্ষণে তিনি চিন্তা করলেন প্রথমে আমি কোন পারমী পূর্ণ করব? দিব্যজ্ঞানে তিনি জ্ঞাত হলেন অতীতের সকল বুদ্ধগণ প্রথমে দান পারমীই পূর্ণ করেছিলেন তাই তিনিও প্রথমে দান পারমী পূরণে সচেষ্ট হলেন।আর পরবর্তীতে তিনি গৌতম বুদ্ধ রুপেই আবির্ভূত হয়েছিলেন। এ জগতে সদ্ধর্ম বিশ্বাসী প্রত্যেক নরনারীর ইহকাল পরকালের সুখ সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় দানময় কুশল কর্ম সম্পাদন করা প্রয়োজন। চাষ করার জন্য জমি ব্যতীত ফসলের আশা যেমন করা যায়না তদ্রুপভাবে দানহীন ব্যক্তির ভোগশ্বৈর্যের আশা নিষ্ফল-ই হয়। দানের কারণে ইহলোকে দাতা পাঁচ প্রকার ফল লাভ করেন- তিনি বহুজনের প্রিয় ও মনোজ্ঞ হন, সৎপুরুষগণ তাঁহার ভজনা করেন, তাঁহার কল্যাণজনক কীর্ত্তি চর্তুদিকে ঘোষিত হয়, গৃহীধর্ম হতে তিনি চ্যুত হননা, মৃত্যুর পর সুগতি স্বর্গে উৎপন্ন হন।
আমরা অনেকেই দান করি বটে কিন্তু এটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করিনা। জ্ঞানী ব্যক্তিগণ ৭টি বিষয় চিন্তা করেই দান দেয় সেগুলো হল- ১. তাঁরা শ্রদ্ধা সহকারে দান দেন ২. সাদরে দান দেন ৩. উপযুক্ত সময়ে দান দেন ৪. স্বহস্তে দান দেন ৫. নির্লোভ চিত্তে দান দেন ৬. এই কুশল কর্মের ফল লাভ করবেন এই ধারণা পোষণ করে দান দেন ৭. আত্মপ্রশংসা ও পরনিন্দা না করে দান দেন।
জ্ঞানী ব্যক্তিরা দানে তিন প্রকার চেতনা রাখেন। দান দেওয়ার অনেক পূর্ব থেকেই তারা দান দেবেন এই চেতনা মনে পোষণ করে পুণ্য বর্ধিত করেন এটাকে পূর্ব চেতনা বলে। দান দেওয়ার সময় তারা ক্ষান্তি, মৈত্রী ও করুণা চিত্ত পোষণ করে সন্তোষ চিত্তে দান দেয়। এটাকে বলে মোচন চেতনা। দান দেওয়ার বহুকাল পরেও তারা প্রীতিচিত্তে চিন্তা করে আমি এটা দান করেছিলাম। এতেও তাদের পুণ্যবর্ধিত হয় ।এটাকে অপর চেতনা বলা হয়।
কেউ নিজে দানকার্য সম্পাদন করে পুণ্য অর্জন করেন, কেউবা অন্যের পুণ্যকাজে নিজে অংশ নিয়ে পুণ্য অর্জন করেন। আবার অনেকে এ দুটির কোনটাতেই অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়না। কিন্তু জ্ঞানী বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা এ দুটির কোনটিতে অংশ নিতে না পারলেও অনুমোদন এবং প্রশংসা করে পুণ্যের ভাগীদার হয়ে যান- তাই চলুন জ্ঞানী হই, মহাপুন্যের ভাগীদার হই।
তথ্যসূত্র : ১)সদ্ধর্ম দীপিকা, শ্রীমৎ বিমলানন্দ স্থবির