বাংলাদেশে বৌদ্ধ আইন প্রসঙ্গে এক দুই করে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করার অভিপ্রায় রয়েছে। আজকের প্রসংগ কোন ব্যক্তি বৌদ্ধ ভিক্ষু হবার পর তার বৈধ নাম কি? তার ব্যাঙ্ক একাঊণ্ট, জাতীয় পরিচয় পত্র ইত্যদি কি নামে হবে এবং সে ব্যক্তি ভিক্ষুত্ব ত্যাগ করিলে তখন কি হইবে? আইন কি বলে? বিষয়টি ছোট্ট সমস্যা নয় বিষফোড়া – তাই কষ্ট করে পড়ূন প্লীজ।
বাংলাদেশের আইনানুসারে আপনার আমার গৃহী নাম যা আমার আপনার প্রকৃত নাম কিন্তু আমার সে নাম ব্যবহার না করে আমি যদি অন্য নাম ব্যবহার করি তবে তা হবে জালিয়াতি যা হবে দণ্ডবিধি ১৮৬০ এ অনুসারে একটি শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ। শাস্তি হচ্ছে দুই বছর পর্যন্ত কারাবাস বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। এতটুকু পড়ে অনেকেই বুঝতে পারেনি বলে অনেকে তাঁর ব্যাখা চেয়েছেন – উদাহরন ধরুন আপনার নাম ধনঞ্জয় বড়ুয়া এবার আপনি যদি বিকিরন বড়ুয়া নামে জনগনের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন তা যেমন অপরাধ বলে বিবেচিত তাঁর উপরে বিকিরন বড়ুয়ার কাছে গচ্ছিত টাকা যদি ধনঞ্জয় বড়ুয়ার নামে ব্যাঙ্ক একাঊন্ট করে ব্যাঙ্কে রাখেন তবেঁ অপরাধের মাত্রা আর ও বেড়ে যায় বৈকি। আপনাকে যদি নাম পরিবর্তন করতেই হয় তবেঁ তা করতে হবে হলফনামার মাধ্যমে।
প্রশ্ন হচ্ছে কেউ যখন বৌদ্ধ ভিক্ষু হন তখন তার বৈধ নাম কি? ভিক্ষু ও যেহেতু বাংলাদেশের একজন নাগরিক অতএব তিনি আইনের উর্ধে নয়। প্রথা মতো কেউ যখন বৌদ্ধ ভিক্ষু হন তখন তাকে পারিবারিক নাম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ভিক্ষুর গুরু তাকে নুতন নাম দেন এবং তারপর থেকে সে নামটা হয় তাঁর প্রকৃত বৌদ্ধ ভিক্ষুর নাম। সে ক্ষেত্রে তিনি হলফনামার (এফিটডেভিট) মাধ্যমে উনার ভিক্ষু নাম বৈধ করিবেন। যারা করবেন না বা এখনও করেন নি তাদের উদ্ধেশ্য বলছি আইন না মানা যেমন অপরাধ, আইন না জানাও তেমিন অপরাধ। এমতাবস্থায় তিনি যদি কোন কাজে তাঁর পারিবারিক নাম ব্যবহার করে লেখাপড়া, ব্যাঙ্ক একাঊণ্ট, জাতীয় পরিচয় পত্র ইত্যদি যদি তাঁর পারিবারিক নামে করেন তা হবে জালিয়াতি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বৌদ্ধ ধর্মের সর্বোচ্চ গ্রন্থ সাড়া ত্রিপিটক এর বিরুদ্ধাচারন করার প্রশ্নই আসে না।
বর্তমানে এ শাস্তিযোগ্য অপরাধের ভয়াবহতা ভয়ংকর তাঁর মাত্র দুএকটি উল্লেখ সহ প্রতিকার বলে ইতি টানছি ছোট্ট পরিসরে। একঃ ভিক্ষু থকাকালীন যদি কেউ কোন অর্থ সম্পদ প্রতি পত্তি সংগ্রহ করে থাকেন তবেঁ তা তিনি অবশ্যি তাঁর পারিবারিক নামে রাখতে পারেন না কারন জনগন যখন তাকে যে দান দিচ্ছেন তা বৌদ্ধ ভিক্ষুকে দিচ্ছেন কোন ব্যক্তি বিশেষকে নয় এবং ভিক্ষুত্ব ত্যাগ করিলে তা হবার কথা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সম্পত্তি এবং বর্তমান আইনানুসারে সংঘ সম্পত্তি বা জনগনের সম্পত্তি। দুইঃ ভান্তে নামের সুবাদে সেই অর্থ সংগ্রহ চলছে দেশ-বিদেশ থেকে বিরাট অংকের টাকা যা পরবর্তীতে দেখা যাচ্ছে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ভোগ করছে , ভোগ করছেন তাঁর আত্নীয় স্বজনেরা। শুধু তাই নয় এ টাকা যখন তিনিরা বিদেশ ঘুরে সংগ্রহ করার পরে বাংলাদেশে ঢুকছেন তখন সরকারকে সে অর্থ সম্পর্কে অবহিত করছেন না অতএব তা হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের জঘন্যতম অপরাধ যাকে বলে মানি লন্ডারিং। বর্তমান সারা বিশ্বে জঙ্গীদের দমন করার জন্য অনেক ধরনের পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানি লন্ডারিং ঠেকানো। এত অর্থ কোত্থেকে আসে সে প্রশ্ন যেভাবে জন্ম হয়েছে দুদকের। তিনঃ এ নামের সুবাদে এবং ভান্তে নামে্র সুযোগ নিয়ে একদল লোক হিঊম্যান ট্রাফিকিং যাকে বলে আদম ব্যবসা মানব পাচারের মত জগন্যতম কাজ ও করছেন যা মোটেই বুদ্ধধর্মের কিংবা সত্য ধর্মের প্রচার প্রসার ঘটাতে পারে না বরং অপরাধ প্রবৃত্তিকে উতসাহ দেয়া হয় মাত্র। এভাবে অসংখ্য উপমা আছে যার ভয়াবহতা অসীম তাই অতিসত্বর এ অপরাধ রোধ কল্পে সরকারের দৃষ্টি আনয়ন এবং সুধী সমাজের পক্ষ থেকে এদের বিরুদ্ধে আদালতের শরনাপন্ন হওয়া অতীব জরুরী হয়ে পরেছে যে তা আমরা জানি কিন্তু কথা হচ্ছে বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে? আমি প্রস্তুত আর্থিক কায়িক বাচনিক সমস্ত ধরনের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে – জগতের সকল্ প্রানী সুখী হোক – সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হোক – মানবতার জয় হোক।