বিপাকান্তরায়
পূর্ব পূর্ব জন্মে অকুশল কর্ম ও অতিশয়
ক্ষীণ পূণ্য কর্মের প্রভাব এই জন্মের প্রতিসন্ধি বা জন্ম পরিগ্রহ বলতে গেলে জন্মটাই
অন্তরায়কর কর্ম বিপাকে পরিগণিত। জন্ম সাধারণতঃ তিন প্রকার। যথা-
১) অহেতুক জন্ম (অকুশল অহেতুক ও কুশল অহেতুক),
২) দ্বিহেতুক জন্ম (অলোভ ও অদ্বেষ),
৩) ত্রিহেতুক জন্ম (অলোভ, অদ্বেষ, অমোহ)।
পশুপাখী, কীট-পতঙ্গ প্রভৃতি তির্যক প্রাণীগণ অকুশল অহেতুক জন্মের অন্তর্গত।
জন্ম-বধির, খঞ্জ, কানা বোবা প্রভৃতি বিকলাঙ্গ মনুষ্যগণ ও ভূম্যাশ্রিত নিম্নশ্রেণীর
অসুরাদি কুশল অহেতুক জন্মাধীন। পরিপূর্ণ অবয়ব সম্পন্ন মনুষ্য রূপে জন্ম গ্রহণ
করলেও শক্তিশালী সংস্কারের অভাবে দ্বিহেতুক সত্ত্বরূপে জন্ম গ্রহণ করে। তাদের
বুদ্ধি বিবেচনা, স্মৃতিশক্তি ও জ্ঞান দূর্বল হবার কারণে তারা মোক্ষ বা নির্বাণ
লাভের হেতু উৎপন্ন হয় না। দ্বি হেতুক
পুরুষ ইহ জীবনে মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করতে না পারলেও অবিরাম ভাবনার অনুশীলন দ্বারা
ভবিষ্যতের জন্য পূণ্য-সংস্কার বর্ধন করতে পারে। যোগাভ্যাসের ফলে পূঞ্জীভূত বলিষ্ঠ
সংস্কার একদিন জগৎ ও জীবনের প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করবে। ত্রিবিধ বলবান হেতু
সম্প্রযুক্ত(অলোভ-অদ্বেষ-অমোহ) জন্ম পরিগ্রাহক বিচক্ষণ ব্যক্তিই চিত্তবিমুক্তি,
প্রজ্ঞা-বিমুক্তি ও নির্বাণ লাভে সক্ষম। প্রথমোক্ত তিনপ্রকার সত্ত্বগণের মার্গফল বা
মোক্ষ নির্বাণ লাভের যে অন্তরায় তা জন্মগত, পূর্ব জন্মাজিত। অপূণ্য, পাপ সংস্কার,
অতিশয় ক্ষীণ পূণ্য সংস্কার জনিত। তাও মোক্ষ নির্বাণের অন্তরায়। বিদর্শন ভাবনা না
করা পর্যন্ত সাধারণ জ্ঞানে কোন ব্যক্তির বিপাকান্তরায় আছে কিনা অথবা সে দ্বিহেতুক
কিনা অনুমান করে বোঝা অতি কঠিন। সুখ শান্তি প্রয়াসী ব্যক্তি মাত্রেরই বিদর্শন
ভাবনা দ্বারা স্বীয় কর্মফল পরীক্ষা করে দেখা কর্ত্তব্য। যেহেতু বিদর্শন ভাবনা
দ্বারা ইহজন্মে মহাস্রোতাপত্তি ফল লাভ করতে না পারলেও পরমার্থ নামরূপ পরিচ্ছেদ
জ্ঞান ও প্রত্যয় পরিগ্রহ জ্ঞান লাভ করে জগৎ ও জীবনের স্বাভাবিক
লক্ষণ-অনিত্য-দুঃখ-অনাত্ন বোধ উপলব্ধি করে-‘ক্ষুদ্র স্রোতাপত্তি’ লাভ করতে পারেন।