আমরা সবাই জানি ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্রের কথা। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এটাই
ছিল তথাগত মহাকারুণিক সম্যক সম্বুদ্ধের প্রথম ধর্মদেশনা। আজ জানব ধর্মচক্র প্রবর্তন
সূত্রের উৎপত্তি তথা বুদ্ধের প্রথম ধর্মদেশনার কথা।
ছয় বৎসর কাঠোর তপস্যার পর ভগবান বুদ্ধ উরুবিল্বের নৈরঞ্জনা নদীর তীরে বোধিবৃক্ষমূলে
পবিত্র বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে বুদ্ধত্ব লাভ করেন। তারপর অনন্ত দুঃখরাশির উদয়-বিলয়
চিন্তা করিতে করিতে মুচলিন্দমূলে বিবেকসুখ উপভোগ করিলেন। পরে রাজায়তন বৃক্ষমূলে
বণিক তপসু-ভল্লিকের দান গ্রহণ করিয়া তাঁহাদিগকে ত্রিরতেœর
শরণাপন্ন করিলেন।
অতঃপর তিনি চিন্তা করিলেন- আমি যে ধর্মরতœ
লাভ করিয়াছি তাহা অতিশয় গম্ভীর এবং বড়ই দুর্বোধ্য। লোভ, দ্বেষ ও মোহান্ধ সাধারণ
মানুষ এই গভীর সত্য উপলব্ধি করিতে পারিবে না। শ্রোতারা যদি ইহার মূল তত্ত্ব
হৃদয়ঙ্গম করিতে না পারে তবে আমার এই ধর্মদেশনার প্রয়োজন নাই। এই ভাবিয়া তিনি
ধর্মদেশনা করিবেন কিনা ইতস্ততঃ করিতে লাগিলেন। এমতাবস্থায় ব্রহ্মা সহম্পতি বুদ্ধের
মনোভাব জানিয়া জগতের কল্যাণার্থ ধর্মদেশনা করিবার জন্য নতজানু হইয়া ভগবানকে অনুরোধ
করিলেন। তখন মহাকারুণিক সর্বজ্ঞ বুদ্ধ বুঝিতে পারিলেন যে তাঁহার ধর্ম হৃদয়ঙ্গম
করিবার মত লোক পৃথিবীতে আছে। কাজেই তিনি ধর্মপ্রচারে উৎসাহিত হইলেন।
কিন্তু কাহাকে প্রথম এই ধর্ম দেশনা করিবেন চিন্তা করিতে করিতে তাঁহার আলাড় কালাম ও
উদ্রক রামপুত্রের কথা মনে পড়িল। কিন্তু তিনি দিব্যচক্ষুতে দেখিতে পাইলেন যে তাঁহারা
উভয়ে কালগত হইয়াছেন। তারপর তাঁহার মনে উদিত হইল পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুদের কথা, যাঁহারা
তাঁহার সহবাসী ছিলেন। অতএব সেই পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুদের নিকটেই সর্বপ্রথম তাঁহার
নবধর্ম প্রচার করিবেন মনস্থ করিয়া জ্ঞাননেত্রে অবলোকন করিয়া দেখিতে পাইলেন যে,
তাঁহারা বারাণসীর ঋষিপতন মৃগদায়ে বাস করিতেছেন।
অনন্তর ভগবান ঋষিপতন অভিমুখে যাত্রা করিলেন। এদিকে সেই পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুগণ ভগবানকে
আসিতে দেখিয়া তাঁহাদের মনে অশ্রদ্ধা এবং অবহেলার ভাব জন্মিল। তাঁহারা ঠিক করিলেন
যে, শ্রমণ গৌতম আসিলে তাহারা তাঁহার প্রতি কোন প্রকার সম্মান প্রদর্শন করিবেন না।
কিন্তু ভগবান আসিয়া পৌঁছিবার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁহাদের সেই মনোভাব দূরীভূত হইল এবং
সকলেই নতমস্তক হইয়া পড়িলেন। তখন ভগবান তাঁহাদিগকে কহিলেন,
হে ভিক্ষুগণ, আমি যে অমৃতের সন্ধান পাইয়াছি, সেই অমৃতের বাণী তোমাদিগকে
শুনাইতে আসিয়াছি। তোমরা শ্রবণ কর। ভগবান তাঁহাদের কুশলচিত্ত দেখিতে পাইয়া “দ্বেমে
ভিক্খবে অন্তা পব্বজিতেন ন সেবিতব্বা” বলিয়া জগতের হিতার্থে ধর্মচক্র প্রবর্তন
করিলেন।
পরবর্তী সংখ্যায় ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্রের বাংলা অনুবাদ জানাব। আশা করি সাথেই
থাকবেন।