আজ মহান স্বাধীনতা দিবস।
আজ জানব মুক্তিযুদ্ধে বৌদ্ধ সমাজের কতটুকু ক্ষতি হয়েছিল? দীর্ঘ নয় মাস ব্যাপী
যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে পাক-বাহিনী কর্তৃক বৌদ্ধদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রকাশ করা
সম্ভব না হলেও মাহবুবু উল
আলম রচিত ‘বাংগালির মুক্তিযুদ্ধের ইতিবৃত্ত’ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে -----‘ঢাকায় ৬
ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ সালে নিখিল ভারত ভিক্ষু রিলিফ কমিটি এবং দক্ষিন পূর্ব এশিয়া বৌদ্ধ
সমিতির সাধারণ সম্পাদক ধম্মবিরীয় ভিক্ষু বলেন, বাংলাদেশে দখলদার বাহিনীর হাতে প্রায়
৫ হাজার বৌদ্ধ নিহত হয়েছে। ৪ হাজারের অধিক আহত হয়। ২০টি বিহার ক্ষতিগ্রস্থ হয়
তন্মধ্যে ১০টি বিহার একেবারে ভষ্মীভূত হয়েছে। ১ হাজারের অধিক বৌদ্ধ কিশোরীদের উপর
পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি বিনষ্ট হয়েছে। একমাত্র কক্সবাজার
মহাকুমাতেই হানাদারেরা ১০০ বুদ্ধমূর্তি বিধ্বস্ত, ৪টি স্বর্ণমূর্তি, ১০০টি
বুদ্ধমূর্তি লুণ্ঠন করেছে। মহেশখালীর বিখ্যাত লামার পাড় বিহার পুড়িয়ে দেয়।এতে ৪টি
প্রাচীন বুদ্ধ মূর্তি বিধ্বস্ত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে শতকরা ৮০ ভাগ পল্লী
জ্বালিয়ে দেয়া হয়। একমাত্র মারিস্যাতে ৩০০ পুরুষকে হত্যা, ১০০ তরুণীকে ধর্ষণ এবং
রাজাকার বাহিনীতে যোগ না দিয়ে ভারতে চলে যাবার অভিযোগে রাংগামাটিতে ৪শতের অধিক
তরুণকে গুলি করে মারে। উখিয়া থানার প্রায় বৌদ্ধ গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়। বৌদ্ধদের
ধর্মগুরু সংঘনায়ক অভয়তিষ্য মহাথেরো এবং তার শিষ্যদের উপর নির্যাতন চালানো হয়। পটিয়া
থানার সাতবাড়িয়া বিহারেরও ক্ষতিসাধন হয়।
আরো অনেক ক্ষতির কথা
হয়তো উল্লেখ নেই। এতকিছুর পর বৌদ্ধরা থেমে থাকেনি। দেশমাতৃকার টানে বারে বারে দেশের
যে কোন দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে নিজেদের ঐক্য সুদৃঢ় রেখে দেশের জন্য জাতির উন্নয়নের
জন্য কাজ করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন অনেকেই। অনেকেই আজো পায়নি
মুক্তিযোদ্ধার সম্মান। বৌদ্ধ লেখক-সাংবাদিকরা কলম সৈনিক হয়ে আত্মনিবেদিত ছিলেন
যুদ্ধের সহায়তায় তেমনি বৌদ্ধ চিকিৎসক সমাজ, শিল্পীরাও
গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। শিল্পীদের বিপ্লবী গান মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা
যুগিয়েছে। দেশপ্রেমে উজ্জ্বীবিত করেছে, সাহস যুগিয়েছে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের
চিকিৎসা এবং সেবা করার কাজে এগিয়ে এসেছিলেন বৌদ্ধ চিকিৎসক সমাজ। আজ সকলের পূর্ণাংগ
তালিকা প্রণয়ন সময়ের অপরিহার্য দাবি। আমরা চাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানুক। মুক্তিযুদ্ধে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের গৌরবোজ্জ্বল
ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকুক এই প্রত্যাশা।