মনুষ্যলোক

মানবজন্ম অতি দুর্লভ। এই পৃথিবীতে সত্ত্বগণের মধ্যে যাহারা অকুশলকর্ম (পাপকর্ম) হইতে বিরত হইয়া কুশলকর্মে (পুণ্যকর্মে) রত হন, তাহারা মৃত্যুর পর কর্মানুসারে মনুষ্যলোকে উৎপন্ন হন। বহু সঞ্চিত পূরিত পুণ্য পারমীর ফলে মানবজন্ম লাভ হয়।  জীবগণের মধ্যে জ্ঞানে-প্রজ্ঞায়, বুদ্ধি বিবেচনায়, ধ্যান-সাধনায় মানুষই অদ্বিতীয়। মানুষ ইচ্ছা করিলে রাজা-মহারাজা, স্বর্গ-ব্রক্ষ্মাদিসহ নির্বাণ পর্যন্ত লাভ করিতে পারে। এইজন্য মনুষ্যভূমিই হচ্ছে দু:খমুক্তির সাধনভূমি। অতীতের পাপ-পুণ্যানুসারে মানুষের মধ্যে কেহ গরীব, কেহ ধনী, কেহ সুশ্রী, কেহ বিশ্রী, কেহ রোগী, কেহ নীরোগ, কেহ জ্ঞানী, কেহ মূর্খ, কেহ সুখী, কেহ দু:খী এইরূপে নানাবিধ পার্থক্য হইয়া থাকে। একত্রিশ লোকভূমির সত্ত্বগণের নানা পার্থক্যের মূল কারণ তাহাদের স্ব স্ব কর্ম। সত্ত্বগণের মধ্যে যাহারা চিরকাল সুখে অবস্থান করেন, তাহাদের দু:খ সম্বন্ধে কিছুই উপলব্ধি হয় না। মনুষ্যলোকে সুখ-দু:খ উভয়ই বিদ্যমান বলিয়া মনুষ্যগণ সুখ-দু:খকে উপলব্ধি করিতে সক্ষম হয় এবং দু:খের কারণ জ্ঞাত হইয়া মুক্তির প্রয়াসী হয়। পুণ্যফলে যুগে যুগে মহাপুরুষগণ এই মনুষ্যভূমিতে জন্মগ্রহণ করিয়া থাকেন। পুণ্য ব্যতীত মনুষ্যকূলে জন্ম নেয়া অসম্ভব। অন্যদিকে শীল রক্ষা ব্যতীত এই মানবজীবন একেবারেই বৃথা।

 

সূত্র : পঞ্চশীলের মাহাত্ম্য, আনন্দমিত্র স্থবির।