ত্রিপিটক শাস্ত্র লিখার সুফল

 

তথাগত মহাকারুণিক ভগবান বুদ্ধ পরিনির্বাণ-মঞ্চে শায়িত অবস্থায় আনন্দ স্থবিরকে বলিয়াছিলেন- “হে আনন্দ, আমার কর্তৃক যেই ধর্ম-বিনয় দেশনা এবং প্রজ্ঞাপ্ত করা হইয়াছে, আমার অবর্তমানে তাহাই তোমাদের শাস্তা বা শিক্ষকরূপে বিদ্যমান থাকিবে আমার বুদ্ধত্ব লাভের পর হইতে পরিনির্বাণ পর্য্যন্ত এই সুদীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে আমার ভাষিত ৮৪ হাজার ধর্মস্কন্ধ প্রতিষ্ঠিত আছে ও থাকিবেআমি একজনই পরিনির্বাপিত হইতেছে এযাবৎ আমি একজনেই উপদেশ দিয়াছি ও অনুশাসন করিয়াছি আমার পরিনির্বাণের পর এই ৮৪ হাজার  ধর্মস্কন্ধ ৮৪ হাজার বুদ্ধরূপে তোমাদেরকে উপদেশ প্রদান ও অনুশাসন করিবে ভগবান বুদ্ধ  নিজেই  যেই  ধর্ম প্রচার করিয়াছেন, সেই ৮৪ হাজার  শ্রেষ্ঠ  ধর্মস্কন্ধই  বুদ্ধের  ধর্মকায় যেহেতুঃ- এই ধর্মস্কন্ধসমূহ বুদ্ধ হইতে সম্ভুত তদ্ধেতু বুদ্ধ ৮৪ হাজার ধর্মস্কন্ধকে ৮৪ হাজার বুদ্ধের পর্যায়ে স্থাপন করিয়াছেনজাতক পন্নাস গ্রন্থে ত্রিপিটক লিখার যেই বিস্তৃত ফল বর্ণনা আছে, তাহা নিম্নে দেওয়া হইল

ত্রিপিটক শাস্ত্রের এক একটি অক্ষর এক একটি বুদ্ধমূর্তির ন্যায় সেই কারণে পন্ডিতগণ (এই কল্পনা নিয়া) ত্রিপিটক লিখিবেন

ত্রিপিটক প্রতিষ্ঠিত থাকিলে ৮৪ হাজার পরিমাণ সম্বুদ্ধও বিদ্যামান থাকিবে

ভগবান বুদ্ধের বিনয়, সূত্র ও অভিধর্ম এই পরিয়ত্তি ধর্মে যে অক্ষর সমূহ আছে, তার মধ্যে প্রত্যেকটি অক্ষর এক একটি বুদ্ধমূর্তি প্রতিষ্ঠার ন্যায় সমফলদায়ক

সেই জন্য পন্ডিতগণ দেব-নর ও নির্বাণ সম্পত্তি লাভের ইচ্ছা পোষন করিয়া ধর্ম-চৈত্যরূপী ধর্মগ্রন্থ লিখিবেন বা লিখাইবেন

  ত্রিপিটক  গ্রন্থ লেখক দশবিধ পূণ্যক্রিয়া বস্তু এবং কায়-বাক্য-মন, এই ত্রিবিধ সুচরিত ধর্ম পূর্ণ করেন

ত্রিপিটক লেখকগণ বুদ্ধের শাসনে পরিয়ত্তি, পটিপত্তি ও পরিবেধ অর্থাৎ ত্রিপিটকে বর্ণিত শিক্ষা, আচরণ ও অধিগম এই ত্রিবিধ সদ্ধর্ম উত্তমরূপে পূর্ণ করেন

লোকনাথ বুদ্ধের শাসনে অর্থাৎ সমুদয় ত্রিপিটক গ্রন্থে যতগুলি অক্ষর আছে, উহার প্রত্যেকটি অক্ষর বুদ্ধমূর্তি প্রতিষ্ঠার ন্যায় ফলদায়ক

সেই কারণে ত্রিবিধ সম্পত্তি লাভের ইচ্ছাকারী পন্ডিতগণ  ত্রিপিটকের অক্ষর সমূহ নিজে লিখিবেন অথবা অপরের দ্বারা লিখাইবেন

সমগ্র ত্রিপিটকে অক্ষরের পরিমাণ ৯৪,৬৪,০০০ (চুরানব্বই লক্ষ চৌষট্টি হাজার)

১০ যাঁহারা ত্রিপিটক শাস্ত্র লিখিবেন, তাঁহারা যেন মনে করেন, চুরানব্বই লক্ষ চৌষট্টি হাজার বুদ্ধমূর্তি প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন

১১ শাস্তার মূর্তি প্রতিষ্ঠার করার ন্যায় যাঁহারা ত্রিপিটকের অক্ষর সমূহ লিখিয়া থাকেন, ত্রিজগতে তাঁহারা সর্বাপেক্ষা মনোজ্ঞ দেহধারী ও সূর্য্যের ন্যায় তেজবান হইয়া থাকেন

১২ যাঁহারা ত্রিপিটকের অক্ষর লিখান, তাঁহারা কোন সময় নারী, নপুংসক ও উভয় ব্যঞ্জকত্ব প্রাপ্ত হন না সর্বাঙ্গ পরিপূর্ণ দেহ লাভ করেন

১৩ তাঁহাদের কোন প্রকার উপদ্রবে মৃত্যু হয় না  বিষ, অস্ত্র অথবা মন্ত্রশক্তি দ্বারাও মৃত্যু হয় না শত্রু রাজাগণও হিংসা করেন না, শত্রুর করুণা লাভ করেন

১৪ সুবিশুদ্ধ শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণকূলে জন্মগ্রহণ করেন  কখনও  হীন, নীচকূলে  জন্মগ্রহণ  করেন  না

১৫ তাঁহারা কখনও মৃত্যুর পর প্রেত লোকে উৎপন্ন  হন না; পক্ষাঘাত, মুখ, বধির কিংবা অন্ধ হইয়া জন্মগ্রহণ করেন না এবং চারি অপায় (তির্য্যকলোক, নরক বা নিরয়, অসুরলোক ও প্রেতলোক) হইতে বিমুক্ত থাকেন

১৬ যিনি ত্রিপিটকের অক্ষর লিখাইয়া থাকেন, তিনি জন্মে জন্মে কখনও মাতৃগর্ভে দুঃখ পান না, ভূমিষ্ঠ হইবার সময়েও দুঃখ পান না এবং প্রসবিনী মাতারও কোন দুঃখ হয় না 

১৭ তাঁহারা জন্মে জন্মে সর্বদা সুখেই অভিবর্দ্ধিত হন এবং ধন-সম্পত্তি ও যশঃকীর্তি প্রভৃতি সর্ববিষয়ে তাঁহাদের অভিবৃদ্ধি হয়

১৮ তাঁহারা পরজন্মে মাতৃ-জঠরে উৎপন্ন হইলেও গর্ভমলে লিপ্ত হন না, শ্লেস্মাদিতে অপবিত্র না হইয়া পরিশুদ্ধ বস্ত্রে উজ্জ্বল মণির ন্যায় ভূমিষ্ঠ হন

১৯ তাঁহারা জন্মে জন্মে মাতৃ-জঠরে সুখে অভিবর্দ্ধিত হইয়া ধর্মাসন হইতে অবতরণ করার ন্যায় মাতৃ-জঠর হইতে ভূমিষ্ঠ হইয়া থাকেন 

২০ ইন্দ্ররাজ যেমন বিপুলভাবে সুধা দ্বারা পূজিত হন এবং চক্রবর্তী রাজা যেমন শ্রেষ্ঠ রাজন্যবর্গাদি দ্বারা পূজা প্রাপ্ত হন, তাঁহারাও জন্মে জন্মে সেইরূপ পূজিত হন

২১সেই শান্ত মনুষ্যগণ ইহলোক হইতে মৃত্যুর পর যদি দেবলোক প্রাপ্ত হন, তথায় তাঁহারা অতি মনোরম শ্রেষ্ঠ বিমান লাভ করেন

২২ সর্ব্বোৎকৃষ্ট দিব্য মনোরম তুর্য্য শব্দে দেবলোকে নিত্য উত্তমরূপে প্রমোদিত হন এবং সর্বদা সর্ববিষয়ে আনন্দ উপভোগ করেন তাহারা চিরকাল অতি উত্তম সুখ ভোগ করিতে থাকেন

২৩ তাঁহাদের দেব-আয়ু ক্ষীন হয়ে আসিলে, পুনঃ তাঁহাদের  প্রার্থনানুসারে  আরও  শ্রেষ্ঠতর জন্ম লাভ করেন

২৪ তাঁহারা ত্রিভবের একমাত্র সারভূত সম্বুদ্ধত্ব, পচ্চেক বুদ্ধত্ব, শ্রাবকত্ব ও মহানুভবত্ব প্রাপ্ত হইয়া অতি শ্রেষ্ঠ ও অগ্র নির্বাণ-সুখ প্রাপ্ত হইয়া থাকেন যাঁহারা ত্রিপিটকান্তর্গত যে কোন বই বাঁধাইয়া দেন, ত্রিপিটকান্তর্গত বই লিখিবার জন্য কাগজ, কলম, দোয়াত, কালি, টেবিল ও কাঁচি দান করেন, তাঁহারাও জন্মে জন্মে শ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞাবান হইয়া থাকেন

২৫ যাঁহারা নিজে ত্রিপিটক শাস্ত্র লিখেন কিংবা অপরের দ্বারা লিখাইয়া থাকেন, আর যাঁহারা ইহার অনুমোদন করেন, তাঁহারা ভবিষ্যতে মৈত্রেয় বুদ্ধের প্রজ্ঞাবান শিষ্য হইবেন

২৬ তাঁহারা যেই মনোজ্ঞ সুখ কামনা করেন, ভবিষ্যতে সেই সমস্ত মনোজ্ঞ সুখ লাভ করিবেন

 

 

সহায়ক গ্রন্থঃ  শ্রীমৎ জিনবংশ মহাস্থবিরঃ সদ্ধর্ম-রত্ন-চৈত্য