আলবক যক্ষ কেন বুদ্ধের শরণ গ্রহণ করেছিলেন?

 

আলবক সূত্রের বঙ্গানুবাদ এর মাধ্যমে আমরা জানব আলবক যক্ষ কেন বুদ্ধের শরণ গ্রহণ করেছিলেন?

 

এক সময় ভগবান আলবী নামক স্থানে আলবক যক্ষের বাসস্থানে অবস্থান করিতেছিলেন। অতঃপর সেই সময় আলবক যক্ষ ভগবানের নিকট উপস্থিত হইয়া ভগবানকে এইরূপ বলিলেন,-

শ্রমণ, আমি তোমাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে চাই, যদি প্রশ্নের উত্তর না দাও, তাহা হইলে তোমার চিত্তকে উন্মত্ত করিব, কিম্বা তোমার বক্ষঃস্থল ছিঁড়িয়া ফেলিব অথবা দুই পায়ে বাঁধিয়া তোমাকে গঙ্গার পরপারে নিঃক্ষেপ করিব।

আবুস দেব-নরলোকে মার ও ব্রহ্মলোকে, বর্ত্তমান শ্রমণ-ব্রাহ্মণকুলে, দেবতা আর মানবগণের মধ্যে এমন কাহাকেও দেখিতেছি না, যে আমার চিত্তকে উন্মত্ত করিতে পারে, বক্ষঃস্থল ছিঁড়িয়া ফেলিতে পারে কিম্বা দুই পায়ে বাঁধিয়া আমাকে গঙ্গার অপরতীরে নিক্ষেপ করিতে পারে। তবুও আবুুস, তোমার যাহা ইচ্ছা তাহা জিজ্ঞাসা কর।

তারপরে, আলবক যক্ষ গাথার সাহায্যে ভগবানকে সম্বোধন করিলেন-

০১। এই জগতে পুরুষের শ্রেষ্ঠ বিত্ত (ধন) কি? কোন্ জিনিস সুন্দররূপে সংগ্রহ করিলে সুখজনক হয়? সর্বাপেক্ষা রসনাতৃপ্তিদায়ক মিষ্ট জিনিস কি? কিভাবে জীবন-যাপন করিলে উহা শ্রেষ্ঠ জীবন বলা যায়?

০২। এই জগতে পুরুষের শ্রেষ্ঠ বিত্ত হইল শ্রদ্ধা; ধর্ম সুন্দরভাবে সংগ্রহ করিলে সুখজনক হয়। সবচেয়ে তৃপ্তিকর মিষ্ট জিনিস হইল সত্য, প্রজ্ঞার দ্বারা জীবন-যাপন করিলে, সেই জীবনই শ্রেষ্ঠ জীবন বলা হয়।

০৩। কিভাবে ওঘ অতিক্রম করিতে হয়? কিভাবে অর্ণব উত্তীর্ণ হইতে হয়? দুঃখকে কিভাবে জয় করিতে হয়? কিভাবে পরিশুদ্ধতা লাভ করিতে পারা যায়?

০৪। শ্রদ্ধা দ্বারা ওঘ (প্লাবন) অতিক্রম করিতে হয়; অপ্রমাদ দ্বারা অর্ণব উত্তীর্ণ হইতে হয়; দুঃখকে বীর্য্যরে দ্বারা জয় করিতে হয়; প্রজ্ঞার সাহায্যেই, পরিশুদ্ধতা লাভ করিতে পারপ যায়।

০৫। কি উপায়ে প্রজ্ঞা লাভ করা যায়? কিভাবে ধন সংগৃহীত হয়? কি প্রকারে কীর্ত্তি প্রাপ্ত হওয়া যায়? কিরূপে মিত্র লাভ হয়? ইহকাল হইতে পরকালে গমন করিয়া কি উপায়ে দুঃখ বর্জন করিতে হয়?

০৬। নির্বাণধর্ম লাভ করিবার জন্য অরহত্বের প্রতি শ্রদ্ধাসম্পন্ন, ধর্ম শ্রবণে ইচ্ছুক, অপ্রমত্ত ও বিচক্ষণ হইয়া প্রজ্ঞালাভ করা যায়।

০৭। প্রতিরূপকারী, ধুরবান উৎসাহশীল ব্যক্তি ধন লাভ করেন; সত্যের সাহায্যে কীর্ত্তি প্রাপ্ত হওয়া যায়। দানশীলতার দ্বারা মিত্র লাভ করা যায়।

০৮। সত্য, ধর্ম, অধ্যবসায় ও ত্যাগ-এইচারি প্রকার ধর্ম যেইসকল শ্রদ্ধাবান গৃহীগণ লাভ করিয়াছেন, মরণের পর তাঁহারা অপায়-দুঃখ লাভ করিবেন না। ইহকালে ত্যাগ করিয়া পরকালে তাঁহাদের কোন অনুশোচনা করিতে হয় না।

০৯। সকল পৃথকজন, শ্রমণ আর ব্রাহ্মণগণকেও জিজ্ঞাসা করিয়া দেখ, এই সংসারে সত্য, সংযম, ত্যাগ ও ক্ষান্তি হইতে শ্রেষ্ঠতর ধর্ম আর অন্য কিছু আছে কিনা।

১০। সকল পৃথকজন শ্রমণ ও ব্রাহ্মণগণকে আমি কি কারণে আর জিজ্ঞাসা করিব? অনাগত জীবনে যাহা মঙ্গলজনক তাহা আমি আজ জানিতে পারিলাম।

১১। আমার অর্থহিতের জন্যই বুদ্ধ আলবীতে, আগমণ করিয়া অবস্থান করিতেছিলেন; কিভাবে দান করিলে মহাফল লাভ করা যায়-তাহা আজ আমি জানিতে পারিলাম।

১২। সম্বুদ্ধও ধর্মের পূর্ণ সফলতার সৎকার করিতে করিতে আমি গ্রামে গ্রামে ও নগরে বিচরণ করিব।

এইরূপ উক্ত হইলে, আলবক যক্ষ ভগবানকে বলিলেন ঃ- খুবই উত্তম, গৌতম, খুবই উত্তম। যেভাবে উৎপাতিতের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়, আচ্ছাদিত বস্তু প্রকাশিত হয়, চক্ষুষ্মানের দেখিবার জন্য অন্ধকারে তৈলপ্রদীপ ধারণ করা হয়। ঠিক সেইরূপ শ্রদ্ধেয় গৌতম অনেক প্রকারে ধর্ম প্রকাশিত করিয়াছেন; আমি মাননীয় গৌতমের আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি তাঁহার ধর্মের শরণ গ্রহণ করিতেছি ও ভিক্ষুসঙ্ঘের শরণ গ্রহণ করিতেছি; আজ হইতে জীবনের শেষকাল পর্যন্ত আমাকে আপনার উপাসক হিসাবে অবধারণ করুন।