আজ জানব অষ্ট অক্ষণ কি? আমরা অনেকেই এই শব্দটির সাথে হয়তোবা পরিচিত নই। আবার অনেকেই
আমাকে অনুরোধ করেছেন এই বিষয়ে কিছু লিখার জন্য। চলুন জেনে নিই অষ্ট অক্ষণ বলতে কি
বোঝায়?
অষ্ট অক্ষণ মানে দোষযুক্ত কাল। প্রথমেই জানব অষ্ট অক্ষণসমূহ কি কি?
১) প্রেতলোক, ২) তীর্যকলোক, ৩) নরকলোক, ৪) অরূপ ব্রক্ষ্মলোক, ৫) প্রত্যন্ত অঞ্চল,
৬) বিকল ইন্দ্রিয়, ৭) মিথ্যা দৃষ্টিসম্পন্ন মাতা-পিতার গর্ভে জন্ম নেয়া, ৮ )
বুদ্ধশূন্য কল্প
** প্রেতলোক – প্রেতলোকে যদি জন্ম হয় সেখানে ধর্ম চর্চার কোন সুযোগ নাই। কারণ
প্রেতলোকে দু:খ ছাড়া সুখ নাই। কোন কোন প্রেতলোকে আহার নেই, কাপড় নেই। খুবই দুর্বিসহ
জীবন যাপন।
** তীর্যকলোক – পশু-পাখি হয়ে জন্ম নিলে সারাক্ষণ আতংক আর উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটে।
কারণ কখন কে কোনদিক দিয়ে মেরে ফেলে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এখানে যেমন ধর্মচর্চার
সুযোগ নেই তেমনি ভয়ের মধ্যেই দিন অতিবাহিত করতে হয়।
** নরকলোক – নরকলোকে সাধনা বা ধর্মচর্চা কখনোই সম্ভব নয়। কারণ এখানে শুধুই যন্ত্রণা
এবং বিভীষিকাময় জীবন যাপন।
** অরূপ ব্রক্ষ্মলোক – আমরা জানি ব্রক্ষ্মলোক মানেই খুবই সুখের একটি জায়গা। আমরা
কামনা করে থাকি দেবলোক ব্রক্ষ্মলোকে যাতে যেতে পারি। কিন্তু আমরা জানি না অরূপ
ব্রক্ষ্মলোক মানে রূপহীন
ব্রক্ষ্মলোক। যেখানে কোন ইন্দ্রিয় থাকে না। তাই সেখানে ধর্মচর্চা বা সাধনা করা
সম্ভব হয় না।
** প্রত্যন্ত অঞ্চল – দেখা যায় অনেক গ্রাম আছে, যেখানে একটি বিহার নেই, কোন ভিক্ষু
শ্রমণ-কে ছোয়াইং দেবার সুযোগ থাকে না, দর্শন করতে পারে না। একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান
করার, ধর্মদেশনা শোনার সুযোগ হয় না। এইরকম
প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করলে ও অষ্ট অক্ষণের মধ্যে পড়ে।
কারণ এখানে পুণ্য অর্জন করার কোন উপায় নেই।
** বিকল ইন্দ্রিয় – কেউ যদি বিকলাংগ হয়ে জন্মগ্রহণ করে অর্থাৎ কারো যদি হাত, বা পা
না থাকে কিংবা চোখের দৃষ্টিশক্তি না থাকে, বধির হয়ে থাকে, মানসিক ভারসাম্যহীন হয়
তাহলে তাদের পক্ষে ধর্ম আয়ত্ত করা সম্ভব হয় না। এটাকে বলা হয় নির্বাণ মার্গের
সাধনার বিপরীতে জন্ম নেয়া।
** মিথ্যা দৃষ্টিসম্পন্ন মাতা-পিতার গর্ভে জন্ম নেয়া – যে মাতা-পিতার ঘরে জন্ম
হয়েছে সেই মাতা-পিতা যদি মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্ন হয়ে থাকে, যাদের কারণে ধর্ম শ্রবণ বা
ধর্ম চর্চা করার সুযোগ থাকে না তাহলে
দু:খ মুক্তির পথ সূদুর পরাহত। এজন্য এটা ও
দোষযুক্ত স্থান বলেই গণ্য।
** বুদ্ধশূন্য কল্প – আমরা তো মহাপুণ্যবান তাই গৌতম বুদ্ধের শাসন পেয়েছি। কিন্তু এই
বুদ্ধ শাসনের ৫০০০ বছর চলে গেলে আর্যমিত্র বুদ্ধের জন্য এক অর্ন্তকল্প অপেক্ষা করতে
হবে। মাঝখানের যে সময়টা একে বলা হয় বুদ্ধশূন্য কল্প। ২৫১টি অন্তর্কল্প হবে
বুদ্ধশূন্য কল্প। সেটাও
হবে নির্বাণ সাধনার প্রতিকূল ক্ষেত্র।
তাহলে চিন্তা করে দেখুন আমরা সকলেই এখনো কতই না সৌভাগ্যবান বুদ্ধের শাসন পেয়েছি,
সেই সাথে অষ্ট অক্ষণ পার হয়ে নবম ক্ষণে আমাদের জন্ম। তাহলে আমরা সকলে একটু সচেষ্ট
হইলে দু:খমুক্তির পথ লাভ করতে পারব সহজেই। সকলের মংগল হোক।