আয়ুষ্মান উপবাণ
স্বভাবতঃ স্থূল দেহ,
আরও
মোটা পাংশুকুল চীবর পরিহিত হওয়ায় অধিকতর স্থুল হইয়াছিলেন।
তিনি
ভগবানের সম্মুখে দাঁড়াইয়া ভগবানকে ব্যঞ্জন করায় কতিপয় দেবতা ভগবানের মুখ দেখিতে
পাইতে ছিলেন না।
তাই
তাঁহারা বলিতে ছিলেন;Ñ“আমরা বহু দূর হইতে আসিয়াছি------এই মহাশক্তিশালী ভিক্ষু
ভগবানের সম্মুখে তাঁহাকে আচ্ছাদন করিয়া দাঁড়াইয়া থাকায় আমরা অন্তিম সময়ে তথাগতের
দর্শন লাভ করিতে পারিতেছিনা”।
দেবগণ
সাধারণ ব্যক্তিকে ভেদ করিয়া দেখিতে পারেন বটে কিন্তু ক্ষীণাস্রবকে (অর্হৎকে ) ভেদ
করিয়া দেখিবার তাঁহাদের সাধ্য নাই।
আয়ুষ্মান উপবাণ অর্হৎ,
তাতে
আবার মহাতেজস্বী বলিয়া তাঁহার অতি সন্নিকটে আসিবার সাধ্যও নাই।
তিনি
মহাতেজস্বী কেন হইলেন?
আয়ুষ্মান
উপবাণ অতীত জন্মে ভগবান্ কশ্যপ সম্যকসম্বুদ্ধের অস্থি-ধাতু-¯তূপ রক্ষক দেবতা ছিলেন।
ভগবান্
বিপস্সী সম্যকসম্বুদ্ধ পরিনিব্বান প্রাপ্ত হইলে তাঁহার অস্থি-ধাতু একবদ্ধ ছিল।
দীর্ঘায়ু বুদ্ধগণের অস্থি অত্থ ভাবেই থাকেন।
তাঁহাদের একটি অস্থি-¯তূপ নির্ম্মিত হইয়া থাকে।
ভগবান্ বিপস্সী সম্যকসম্বুদের অস্থি-ধাতু অত্থ ভাবেই থাকায়
মানবেরা এক হাত দীর্ঘ এক বিগত প্রস্ত,
দুই
আঙ্গুল পুরু স্বর্ণময় ইটের দ্বারা হরিতাল এবং মনোশিলায় মাটীর কার্য্য ও তিল-তৈল
দ্বারা উদক-কার্য্য সম্পাদন করতঃ যোজন প্রমাণ উচ্চ চৈত্য নির্ম্মাণ করেন।
তৎপর
ভূমিবাসী দেবগণ মিলিত হইয়া আর এক যোজন উচ্চ করেন।
অতঃপর আকাশস্থ দেবগণ আর এক যোজন,
উষ্ণবলাহক দেবগণ মিলিয়া আর এক যোজন,
অনন্তর (অন্ধবলাহক) দেবগণ আর এক যোজন,
চতুর্মহারাজিক দেবগণ মিলিয়া আর এক যোজন এবং ত্রয়স্ত্রিংশ
দেবগণ আর এক যোজন উচ্চ করেন,
এই রূপে সপ্ত
যোজন উচ্চ চৈত্য নির্ম্মিত হইয়াছিল।
লোকে মাল্য সুগন্ধাদি দ্বারা পূজা করিতে আসিলে চৈত্য-রক্ষক
দেবতা তাঁহাদের হস্ত হইতে পূজার সামগ্রী লইয়া তাঁহাদের সম্মুখে উহার দ্বারা চৈত্য
পূজা করিতেন।
তখন এই আয়ুষ্মান উপবাণ ব্রাহ্মণ মহাশাল কুলে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন।
তিনি
পীত বর্ণ বস্ত্র লইয়া ঐ চৈত্যে পূজা করিতে গিয়াছিলেন।
রক্ষক দেবতা তাঁহার হস্ত হইতে বস্ত্র লইয়া চৈত্যে পূজা করেন।
ব্রাহ্মণ তদ্দর্শনে প্রসন্ন চিত্ত হইয়া ঈদৃশ বুদ্ধের চৈত্য-রক্ষক দেবতা হইতে
প্রার্থনা করেন।
তৎপর
তিনি মরণান্তে স্বর্গে উৎপন্ন হইলেন।
দেব মনুষ্য লোকে সংসরণ করিতে করিতে ভগবান্ কশ্যপ
সম্যকসম্বুদ্ধ উৎপন্ন হইয়া যথাসময়ে পরিনির্ব্বাপিত হইলেন।
তাঁহার
অস্থিধাতু ও অত্থু ভাবে ছিলেন।
সকলে সম্মিলিত হইয়া যোজন প্রমাণ উচ্চ চৈত্য নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন।
এই
উপবাণ তাঁহার পূর্ব্ব প্রার্থনা অনুযায়ী ভগবান্ কশ্যপ সম্যকসম্বুদ্ধের চৈত্য-রক্ষক
দেবতা হইয়া যাবজ্জীবন চৈত্য রক্ষাও পূজা করিয়াছিলেন।
তৎপর আয়ুশেষে স্বর্গে উৎপন্ন হইয়া দিব্য সম্পত্তি পরিভোগ
করেন।
আমাদের
ভগবানের সময় তথা হইতে চ্যুত হইয়া মহাকুলে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করতঃ বয়োপ্রাপ্তে
গৃহত্যাগ পূর্ব্বক প্রব্রজিত হন এবং অচিরেই অর্হত্ব ফলপ্রাপ্ত হন।
তিনি
পূর্ব্বে চৈত্যরক্ষক দেবতা ছিলেন বলিয়া মহাতেজস্বী হইয়াছেন।
তাই তাঁহাকে ভেদ করিয়া বা তাঁহার সন্নিকটে আসিয়া দেবগণ
ভগবানের মুখদর্শন করিতে পারিতেছেন না।
সেই কারণেই দেবগণ ঐরূপ বলিতেছেন।
সূত্র-মহাপরিনির্বাণ
সূত্র।