বন্ধন হতে বিমুক্তিই নির্বাণ

 

পূজনীয় আর্যশ্রাবক বনভন্তে দেশনায় বলেন ---তোমারা সুখ দুঃখ উভয় ত্যাগ কর। কারণ সুখ সেটাও বন্ধন, দুঃখ সেটাও বন্ধন; সুখ দুঃখ উভয় বন্ধন হতে মুক্তই নির্বাণ।

সুখ দুঃখের মধ্যে নিজেকে  আবদ্ধ করে রাখলে সংসার দুঃখ হতে
মুক্ত হতে পারে না। তোমরা এরূপ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হও, আমরা সুখের মধ্যেও থাকবো না, আমরা দুঃখের মধ্যেও থাকবো না। সত্ত্বগণ সুখ পেলে আনন্দে আত্মহারা হয় আর দুঃখ পেলে ব্যথিত মনে ভেঙ্গে পড়ে। বস্তুত পক্ষে এ সংসারে সুখ ও দুঃখ দুটো ধর্ম রয়েছে। সংসারে যে দুঃখ ভোগ করতে হয় তা দুঃখ বন্ধন, এবং যা সুখ করতে হয় তা সুখ বন্ধন- এ উভয় বন্ধন। এ উভয় বন্ধন হতে বিমুক্তিই নির্বাণ, যা সর্ব বন্ধন মুক্ত, সর্বদুঃখগত চরম এবং পরম উপশম অবস্থা। কাজেই সুখের মধ্যে থাকতে চাইলে সংসারে আবদ্ধ থাকতে হবে; দুঃখের মধ্যে থাকলেও সংসারে আবদ্ধ থাকতে হবে। গৃহীরা যে স্বামী-স্ত্রী হয়ে বসবাস করতে থাকে সেখানেও সুখ দুঃখ দুটো ধর্ম বিদ্যামান। সব সময় সুখ যেমন হয় না অন্যদিকে সবসময় দুঃখও হয় না। তারা সুখ দুঃখের বন্ধনে আবদ্ধ। ক্ষণিক সুখ উপভোগের পরিণামে তাদের দুঃখ বেড়ে যায় মাত্র। তোমরা সেই ক্ষণিক সুখের ইচ্ছা ত্যাগ কর। তাতে সংসার বন্ধন হতে মুক্তি লাভে সক্ষম হবে। এই সংসারে ক্ষণিক সুখ দুঃখের বন্ধনে নিজেকে আবদ্ধ না করলে নির্বাণ লাভ হয়। তাই তোমরা সংসারের সুখ ভোগের ইচ্ছা কখনো মনের মধ্যে স্থান দিবে না। তোমরা নিজের মুক্তি নিজেই আয়ত্ত কর, নিজের মুক্তি নিজে চেষ্টা না করলে কেহ তোমাদেরকে মুক্ত করতে পারবে না।
       আত্ম দমন, আত্ম জয় এবং নিজেকে উদ্ধার করা তোমাদের আসল কাজ। অপরকে দমন করতে নয় বরং নিজেকে দমন, নিজেকে জয় করা হোক তোমাদের প্রব্রজ্যা জীবনের আসল কর্তব্য। স্বয়ং নিজে দমন না হলে অপরকে দমন করা সম্ভব নয় এবং নিজে পাপপঙ্ক হতে উদ্ধার না হলে অপরকে উদ্ধার করা অসম্ভব।


তুমি যে কে তা চিনলে না,

এ সংসারে আপনাকে ধরতে পারলে না।

কে নেবে তোর রক্ষার ভার,

তুই সামনে চলনা, নইলে যাবে যমের দ্বার।

কেবা যাবে কেবা রবে এই তত্ত্ব পায় না ভেবে,

বাস্তু ঘুঘু বাসা হবে জীবের কল্পনা।

ঘুরছে ঐ মরণের চাকা ধরবে কে তা বল,

ভাঙলে কপাল জ্বলবে আগুন সত্যমিথ্যা সবই জল।

খেলছে পাশা ধর্ম থেকে আটক দিলে কর্ম থেকে,

তোমরা ফাঁকা গুটি ফরল ফাঁকে,

ধর্ম কাছে হইবে তোমার সুবিচার।। 

সূত্র - বনভন্তের ধর্ম দেশনা থেকে সংগৃহীত