একদা ভগবান
বুদ্ধকে এক দেবতা জিজ্ঞেস করলেন, কি দানে বলদাতা, কি দানে বর্ণদাতা, কি দানে
সুখদাতা, কি দানে চক্ষুদাতা এবং কি দানে সর্বদাতা হওয়া
যায়? তখন ভগবান বললেন, অন্নদানে বলদাতা, বস্ত্রদানে বর্ণদাতা, যান দানে সুখদাতা এবং
দীপদানে চক্ষুদাতা হন। কিন্তু যিনি বিহার দান করেন তিনি সর্বদাতা হন। তাই বিহার
দানের ফলে বল, রূপ, সুখ, চক্ষুকে দান করা হয়েছে বলা হয়। বিহারের বাইরে বিভিন্ন
উপদ্রব, অন্তরায়, বিষাক্ত পোকামাকড়, প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি, হিংস্র জীব জন্তুর আক্রমণ
থাকে। কিন্তু বিহারে অবস্থান করলে এসব অন্তরায় মুক্ত হয়ে চিত্তকে স্থির করে
ধর্মচর্চা করা যায় বলে বিহার দান সুখ দান করার অনুরূপ।
প্রচন্ড গরমে
বিহারের বাইরে অবস্থান করলে শরীর ঘর্মাক্ত হয়, শরীর অবসন্ন হয়ে আসে। রোদ্র স্থান
হতে বিহারে প্রবেশ করলে চক্ষু প্রসন্ন হয় বলে বিহার দান চক্ষু দানের অনুরূপ।
একজন ভিক্ষু
পিন্ডাচরণে বের হয়ে ভিক্ষান্ন না পেয়ে ফিরে এসে শীতল পানিতে স্নান করলে, বিহারে
বিশ্রাম নিলে কায়িক শক্তি সঞ্চিত হয় বলে বিহার দান কায়িক বল দান স্বরূপ।
বিহারের বাইরে
ধুলা-বালি মিশ্রিত বাতাস সূর্যতাপে মানুষের রূপ বর্ণ বিবর্ণ হয়ে যায়। বিহারে
বিশ্রাম নিলে রূপ সতেজ প্রসন্ন হয় বলে বিহার দান রূপ দানের অনুরূপ।
বিহার দানের ফল –
১। দেব এবং
মনুষ্যলোকে জন্মগ্রহণ করে।
২। ঘরবাড়ি,
প্রাসাদ, অট্টালিকার অধিকারী হয়।
৩। শরীর কম্পিত হয়
না, চেহারা বীভৎস হয় না, ভীতগ্রস্থ হয় না।
৪। বিবিধ হিংস্র
প্রাণী থেকে রক্ষা পায়।
৫। দু;স্বপ্ন দেখে
না সুখে নিদ্রা হয়।
৬। বিক্ষিপ্তহীণ
চিত্তে দৃঢ়ভাবে স্মৃতি সহকারে ভাবনা কর্ম সুসম্পন্ন করতে পারে এবং অনাগত জন্মে
অরহত্ত্ব মার্গফল লাভ করতে সক্ষম হয়।
৭। শীতকালে তীব্র
শীত এবং গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরম থেকে রক্ষা পায়।
৮। মশা, মাছির
উপদ্রব, সূর্যের খরতাপ, বিষধর সাপ, বিভিন্ন ঋতু অনুযায়ী উপদ্রব, অন্তরায় থেকে রক্ষা
পায়।
৯। চিত্ত প্রসন্ন
করে সুখ প্রাপ্ত হয়।
১০। বিপদ অন্তরায়
থেকে মুক্ত হয়ে সুখ শান্তিতে অবস্থান করে।
১১। ভোজন, আহারাদি
এবং ঔষধ পানীয় প্রয়োজন অনুসারে প্রাপ্ত হয়।
১২। চতুরার্য
সত্যকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়।
১৩। শ্রবণকৃত
দেশনার প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করে ধর্মজ্ঞান বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়।
১৪। আসবক্ষয়
করেঅরহত হয়ে নির্বাণ দর্শন করতে সক্ষম হয়।