তথাগত কেন ছোট্ট সংকিচ্চ শ্রামণকে অরণ্যে নিয়ে যেতে বলেছিলেন?

শ্রাবস্তীর এক মহাধনী ব্রাহ্মণ-পরিবারের সন্তান সংকিচ্চ শ্রামণ। অতীত জন্মের শক্তিশালী পুন্যপারমীর প্রভাবে বুদ্ধের সময়কালীন সপ্তবর্ষ বয়ঃক্রমকালে ধর্মসেনাপতি শারীপুত্রের নিকট তিনি প্রব্রজিত হন এবং কেশচ্ছেদনের সময় প্রতিসম্ভিদাসহ অর্হত্ত্ব সাক্ষাৎ করেন।

একসময় ত্রিশজন ভিক্ষু বুদ্ধ হতে কর্মস্থান গ্রহণ করে ভাবনার জন্য অরণ্যে যাচ্ছিলেন। ভগবান জানতেন অরণ্যে তাঁদের বিপদ হবে। তাই ছোট শ্রামণ সংকিচ্চকে সঙ্গে নিতে বলেন। ভিক্ষুগণ প্রথমে অনিচ্ছুক হলেও বুদ্ধ পুনঃ পুনঃ বলায় সেই শ্রামণকে সঙ্গে নেন।

শ্রাবস্তী হতে অনেক দূরে এক পার্বত্য গ্রামকে অবলম্বন করে তাঁরা সাধনা করবেন এই উদ্দেশ্যে অরণ্যে ছোট ছোট পর্ণকুটির নির্মাণ করিয়ে তাঁরা ভাবনায় নিরত হন। কিছুদিন পর সেই পর্বতবাসী ডাকাতদের নায়ক সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁদের নিকটে এক ব্যক্তিকে প্রার্থনা করে। কেন এক ব্যক্তিকে প্রয়োজন তার কারণ জানতে চাইলে দলপতি বলে যে তাদের মানস অনুসারে নরবলি দিয়ে বনদেবীর পূজা দিতে হবে। সে বিপদে সংঘপ্রধান হতে প্রত্যেকে অন্যদের রেখে দস্যুপতির সঙ্গে যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

সর্বশেষে সংকিচ্চ বলেন- আপনারা অপ্রমত্ত হয়ে ভাবনা কারুন, আমিই যাব। ভিক্ষুরা কেউ তাতে সম্মত না হওয়ায় তিনি সবাইকে বুঝায়ে বলেন- তথাগত মহাকারুণিক আমাদের গুরুদেব এ বিপদের বিষয় জেনেই আমাকে পাঠিয়েছেন। আপনারা দৃঢ়তার সহিত ভাবনা করুন। আমিই যাব। সঙ্গী ভিক্ষুগণ অত্যন্ত শোকাকুল হয়ে শ্রামণকে বিদায় দেন।

ডাকাতদের দলপতি পূজার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করে শ্রামণকে বধ্যভূমিতে নিয়ে যায়। শ্রামণ যুপকাষ্ঠের সম্মুখে বসে ধ্যানস্থ হন। দলপতি তার সুতীক্ষè অসি দিয়ে শ্রামণের গ্রীবাদেশে আঘাত করে। শ্রামণের শরীর স্পর্শ না করে অসি বাঁকা হয়ে যায়। তা সোজা করে পুনঃ আঘাত করে। তাতে অসি দুই টুকরা হয়ে যায়। এই ছোট সন্ন্যাসীর এমন অদ্ভুত শক্তি দেখে দলপতি তাঁর পায়ে লুটিয়ে পড়ে এবং অপরাধের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করে। সেই শ্রামণের ধর্মদেশনা শুনে সেই পাঁচশত ডাকাত তাঁর নিকট প্রব্রজিত হয়।

শ্রামণের জন্য চিন্তায় সেই ত্রিশজন ভিক্ষুর চিত্ত এমন ব্যাকুল হয়েছিল যে তাঁদের কেউ ভাবনায় অগ্রসর হতে পারেন নি। শ্রামণ যখন পাঁচশত শিষ্য নিয়ে ফিরে আসেন তাঁরা অত্যন্ত আনন্দিত হন। তাঁরা তখন হতে অপ্রমত্তভাবে ভাবনা করে বর্ষাবাসের মধ্যেই সবাই অর্হত্ত্ব মার্গফলে প্রতিষ্ঠিত হন।

বর্ষাশেষে শ্রামণ পাঁচশত শিষ্যসহ শ্রাবস্তীতে বুদ্ধের নিকট গমন করেন। বুদ্ধের ধর্মদেশনা শুনে তাঁরা সকলেই প্রতিসম্ভিদা সহ অর্হত্ত্ব সাক্ষাৎ করেন।

পরশমণির সংস্পর্শে লৌহের সোনা হওয়ার ন্যায় পন্ডিত-শ্রামণের সংসর্গ লাভে ডাকাতদল সর্বদুঃখ হতে মুক্তি লাভ করে। তাই বলা হয়, ছোট হলেও অবজ্ঞা করতে নেই। ছোট সংকিচ্চ শ্রামণের ধর্মগুণের দ্বারা সবাই জয়ী হলো এবং দুঃখমুক্তির পথ নির্বাণ মার্গে উপনীত হলো। সাধু সাধু সাধু জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।

 

সূত্র ঃ মহামঙ্গল সূত্র