মহারাজ বিম্বিসারের সুমন নামক এক মালাকর ছিল।
সে প্রত্যহ পূর্বাহ্নে মহারাজের সেবার জন্য আট কিলো সুমনপুষ্প প্রদান করত। তার
পরিবর্তে যে অর্থ পাওয়া যেত তাতে সে সপরিবারে জীবন-যাপন করত। একদিন সে সকালে পুষ্প
নিয়ে রাজসেবায় যাবার সময় নক্ষত্র-পরিবেষ্টিত পূর্ণচন্দ্রের ন্যায় ভিক্ষুসংঘ পরিবৃত
ষড়রশ্মি প্রতিমন্ডিত বুদ্ধকে দেখে
তার মনে প্রবল ভক্তি ও শ্রদ্ধা উৎপন্ন হল। সে চিন্তা করতে থাকে- রাজা স্বকৃত
পুণ্যপ্রভাবে এত মহৎ ও সুখী। পুণ্যের অভাব হেতু আমি এমন হীন ও দুঃখী। আজ পুষ্প না
পেয়ে রাজা যদি আমাকে নির্বাসিত বা হত্যা করে তাও ভাল। এই পুষ্পে আমি আজ বুদ্ধপূজা
করে ভবিষ্যৎ সুখের হেতু পুণ্যসম্পদ সঞ্চয় করব। সে প্রবল শ্রদ্ধার আবেগে আনন্দে
আত্মহারা হয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে সেই পুষ্প দিয়ে বুদ্ধপূজা করে। তার অগাধ
শ্রদ্ধা ও বুদ্ধের গুণপ্রভাবে প্রথম দু’মুষ্টি পুষ্প বুদ্ধের তিন পার্শ্বে
পর্দাকারে অবস্থান করে। ভগবান যেন পুষ্পতোরণের মধ্যদিয়েই চলেছেন। ভগবানের এই অদ্ভুত
প্রভাব দেখে শ্রদ্ধা ও আনন্দে মাতোয়ারা নগরবাসী বুদ্ধকে দান দেবার জন্য বাইরে আসে
এবং বুদ্ধও ভিক্ষুসংঘের সাথে চলতে থাকে।
এই অভূতপূর্ব দৃশ্যে সুমন মালাকরের শরীর ও মন
পঞ্চপ্রীতিতে পরিপূর্ণ হয়। দরিদ্র বলে ইচ্ছা থাকলেও সে সেই আনন্দময় শোভাযাত্রায় যোগ
দিতে পারেনি। সেই অপূর্ব শোভাযাত্রা ও তার দানের বিষয় তন্ময় চিত্তে চিন্তা করতে
করতে সে বাড়ী ফেরে।
বুদ্ধ বহু রাস্তা ঘুরে ভিক্ষুসংঘ ও বিপুল
জনতাসহ রাজপ্রাসাদের সুবিশাল অঙ্গনে সকলের দান গ্রহণ করলেন। রাজা এই বিস্ময়কর
শোভাযাত্রা দেখে শ্রদ্ধায় ও আনন্দে অভিভূত হলেন এবং স্বহস্তে বুদ্ধপ্রমুখ
ভিক্ষুসংঘকে দান দিলেন।
বুদ্ধসেবক আনন্দ সুমন মালাকরের এ কর্মের
বিপাক সম্বন্ধে বুদ্ধকে জিজ্ঞাসা করলেন। বুদ্ধ বললেন- “প্রবল শ্রদ্ধায় জীবনের মায়া
ত্যাগ করে তথাগতকে পুষ্প-পূজার ফলে সুমন মালাকর এজন্মেই বিপুল ভোগ-সম্পদের অধিকারী
হবে এবং লক্ষকল্প নরকে না গিয়ে দেব-নরলোকে অপ্রমেয় আনন্দ ও সুখভোগ করে শেষে ‘সুমন’
নামক প্রত্যেকবুদ্ধ হয়ে নির্বাণ প্রাপ্ত হবে।”
মহারাজ বিম্বিসার সুমন মালাকরকে জীবনের প্রতি
নিরাসক্ত হয়ে তার বুদ্ধপূজার বিষয় অবগত হয়ে তাকে আটটি করে হস্তী অশ্ব দাস দাসী ও
প্রসাধনদ্রব্যাদি এবং প্রয়োজনীয় সকল বস্তু প্রদান করেন। সেদিন হতেই সে মহাধনী হয়ে
যায়।
সেদিন সন্ধ্যার পর সভাগৃহে বুদ্ধ ভিক্ষুদের
ধর্মদেশনা করার সময় বলেন ----
-যে কর্ম সম্পাদন করে অনুতপ্ত হতে হয় না, যার
ফল প্রীতিসুখে ভোগ করা যায়, তেমন লৌকিক-লোকোত্তর সুখদায়ক কর্ম সম্পাদন করা উত্তম।