দশম অধ্যায়

স্বাধীনতা ও নম্রতা

দুই ধরনের স্বাধীনতা

আমাদের পৃথিবীতে দু ধরনের স্বাধীনতা আছে : আকাঙক্ষার স্বাধীনতা এবং আকাঙক্ষা হতে স্বাধীনতা।

 

আমাদের আধুনিক পশ্চিমা সংস্কৃতি কেবল প্রথমটাকে জানে : আকাঙক্ষার স্বাধীনতা। এই সংস্কৃতি তাই জাতীয় সংসদের সামনে সুউচ্চ বেদীতে এবং মানবাধিকারের আইনের মাধ্যমে এমন স্বাধীনতাকে পূজো করে। বলা যায় যে, বেশির ভাগ পশ্চিমা গণতন্ত্রের পিছনের মতবাদ হচ্ছে তাদের জনগণের আকাঙক্ষাগুলো বুঝতে পারার স্বাধীনতাকে রক্ষা করা, যতদূর সম্ভব। এটা বলা চলে যে এমন দেশের জনগণ খুব একটা স্বাধীন বলে অনুভব করে না।

 

দ্বিতীয় ধরনের স্বাধীনতা হচ্ছে আকাঙক্ষা হতে স্বাধীনতা, যা কেবল কয়েকটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে উদযাপন করা হয়। এতে তারা শ্রদ্ধা জানায় সন্তুষ্টি ও শান্তিকে, যা আকাঙক্ষা থেকে মক্তু । এটা বলা চলে যে এমন সংযমী সমাজে লোকজন স্বাধীন বলে অনুভব করে, উদাহরণ হিসেবে আমার এই বিহারের কথা বলা যায়।

 

আপনি কোন ধরনের স্বাধীনতা পছন্দ করেন?

দুজন খুব উচ্চতর আধ্যাত্মিক জ্ঞানলাভী থাই ভিক্ষুকে তাদের এক ভক্তের বাড়িতে সকালের নাস্তা খাওয়ার আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল। তারা দুজন সেই বাড়িতে ড্রয়িং রুমে বসে অপেক্ষা করছিল। সেই রুমে ছিল একটি একুয়ারিয়াম, যেখানে অনেক ধরনের মাছ ছিল। সেটা দেখে কনিষ্ঠ ভিক্ষু অভিযোগ করল যে, একুয়ারিয়ামে মাছ রাখা বৌদ্ধ মতবাদের মৈত্রীর বিরোধী। এটা যেন তাদের কারাগারে রেখে দেওয়া। সেই মাছটা এমন কী করেছে, যার জন্য তাকে এই গ্লাসের দেয়ালবেষ্টিত জেলখানায় বন্দী হয়ে থাকতে হবে? তারা থাকবে নদীতে, খালে, বিলে যেখানে তারা সাঁতার কাটবে মুক্ত হয়ে, যেখানে খুশি সেখানে যাবে। দ্বিতীয় ভিক্ষুটা কিন্তু এতে একমত হলো না। এটা সত্যি, সে মানল যে এই মাছগুলো তাদের আকাঙক্ষা অনুযায়ী কাজ করবে এমন স্বাধীন নয়। কিন্তু এমন মাছের টাংকিতে থাকাটা তাদের অনেক বিপদ থেকে মুক্তি দিয়েছে। তাদের স্বাধীনতার একটা তালিকা তৈরি করল সে।

১. তুমি কী কোনো জেলেকে কারো বাড়ির একুয়ারিয়ামে বড়শির টোপ ফেলতে দেখেছ? না। তাই টাংকিতে থাকার প্রথম স্বাধীনতা হলো

জেলেদের হাতে পড়ার বিপদ থেকে মুক্তি। কল্পনা করো খালে বিলে থাকা একটা মাছ হলে কী অবস্থা হবে। যখন তারা টসটসে কোনো পোকা অথবা রসালো এবং মোটা একটা মাছিকে দেখতে পায়, তারা কখনোই নিশ্চিত হতে পারে না যে সেটা খাওয়া নিরাপদ হবে কি হবে না। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে তারা অনেকবার তাদের অনেক বন্ধু ও আত্মীয় স্বজনকে এমন সুস্বাদু পোকা প্রাণভরে খেতে দেখেছে, আর পরক্ষণেই তারা সারা জীবনের জন্য পানির উপরে অদৃশ্য হয়ে গেছে। উন্মুক্ত পানির মাছের জন্য খাওয়াটা বিপদে পরিপূর্ণ আর প্রায়ই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এর পরিসমাপ্তি ঘটে। খাওয়াটাও হয় ভীষণ উদ্বেগপূর্ণ প্রত্যেকবার খাবারের বেলায় এমন উদ্বেগজনিত কারণে সকল মাছ নিশ্চিতভাবেই দীর্ঘস্থায়ী বদহজমে ভুগে থাকে।

যারা বেশি সন্দেহবাতিকগ্রস্থ তারা তো নির্ঘাত উপোস থেকেই মরে যাবে। বুনো মাছগুলো সম্ভবত মানসিক রোগী। কিন্তু টাংকির মাছগুলো এমন বিপদ

থেকে মুক্ত ও স্বাধীন।

 

২. বুনো মাছগুলোকে অন্যান্য বড় বড় মাছখেকো মাছ সম্বন্ধে সতর্ক থাকতে হয়। বর্তমানে কয়েকটি শুকিয়ে যাচ্ছে এমন নদীতে তো রাতের বেলা কোনো অন্ধকার খাঁড়িতে যাওয়াই নিরাপদ নয়! অথচ কোনো মালিকই কিন্তু তাদের টাংকিতে এমন মাছ রাখবে না যারা একে অপরকে ধরে ধরে খায়। তাই টাংকির মাছগুলো এমন মাংসাশী মাছের বিপদ থেকে স্বাধীন।

 

৩. প্রকৃতির করাল চক্রে পড়ে বুনো মাছগুলোকে মাঝেমধ্যে পেটে কোনো দানাপানি ছাড়াই থাকতে হয়। কিন্তু টাংকির মাছের জন্য এটা যেন অনেকটা কোনো হোটেলের পাশে থাকার মতো। দিনে দুবার তাদের দরজায় পৌঁছে দেওয়া হয় সুষম খাবার যা বাসায় বসে পিৎজা ডেলিভারি পাওয়া থেকেও অনেক সুবিধাজনক, কেননা তাদের তো কোনো টাকা- পয়সা দিতে হয় না। তাই টাংকির মাছগুলো বিপদ থেকে স্বাধীন।

 

৪. ঋতু পরিবর্তনের ফলে নদীনালা, খালবিলগুলোর তাপমাত্রাও চরমভাবে উঠানামা করে। শীতকালে এমন ঠান্ডা পড়ে যে কোথাও হয়তো বরফে

ঢেকে যায় এসব নদীনালা। গরমকালে সেগুলো হয়তো মাছদের জন্যও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, সেগুলো এমনকি শুকিয়েও যায়। কিন্তু টাংকির মাছগুলোর জন্য আছে এসির আবহাওয়া। সেখানে পানির তাপমাত্রা থাকে সমান এবং আরামদায়ক, সারা দিন ও সারা বছর জুড়ে। তাই গরম ও ঠান্ডার বিপদ থেকে টাংকির মাছেরা স্বাধীন।

 

৫. বন্য পরিবেশে, মাছদের কোনো রোগবালাই হলে তাদের চিকিৎসার কেউ থাকে না। কিন্তু টাংকির মাছদের আছে বিনামূল্যে চিকিৎসাসুবিধা। তাদের কোনো অসুখ-বিসুখ দেখা দিলেই গৃহকর্তা ফোন করে একজন মাছের ডাক্তার ডেকে আনবে। তাদের এমনকি কোনো ক্লিনিকেও যেতে হয় না। তাই টাংকির মাছেরা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিপদ থেকে মুক্ত।

 

দুজনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সেই দ্বিতীয় ভিক্ষুটা এবার তার যুক্তিগুলোর একটা সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরল। সে বলল, একুয়ারিয়ামের মাছ হওয়ার অনেক সুবিধা। এটা সত্যি যে তারা তাদের আকাঙক্ষা অনুযায়ী স্বাধীন নয়, এখানে-ওখানে ইচ্ছেমতো সাঁতার কাটতে পারে না। কিন্তু তারা অনেক বিপদ-আপদ ও ঝামেলা থেকে স্বাধীন। জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুটি আরও বলল যে, মানুষের মধ্যে যারা ধার্মিক জীবন যাপন করে, তাদের অবস্থাও এ রকম। সত্যি কথা যে তারা তাদের আকাঙক্ষা অনুযায়ী স্বাধীন নয়, এখানে-ওখানে নিজের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করতে পারে না। কিন্তু তারা অনেক বিপদ-আপদ ও ঝামেলা থেকে স্বাধীন।

আপনি কোন ধরনের স্বাধীনতা পছন্দ করেন?

 

স্বাধীন জগৎ

আমার একজন বন্ধু ভিক্ষু কয়েক সপ্তাহ ধরে ধ্যান প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল পার্থের নিকটে অবস্থিত একটি নতুন সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জেলখানায়। কয়েদিদের ছোট

দলটি ভিক্ষুটিকে ভালো করে চিনত ও শ্রদ্ধা করত। একবার ধ্যানের পালা শেষ হলে তারা তাকে বৌদ্ধ বিহারের রুটিন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করল।

 

সে বলতে শুরু করল, ‘আমাদের প্রত্যেক দিন সকাল চারটায় উঠতে হয় ঘুম থেকে। মাঝে মাঝে খুব ঠান্ডা লাগে। কারণ, আমাদের ছোট ছোট রুম, সেখানে

কোনো রুম হিটার নেই। আমরা দিনে কেবল একবারই খাই, খাবার দাবার যা কিছু পাই, সব একসাথে একটা পাত্রে মিশিয়ে খাই ওই একবারই। বিকেলে ও রাতে আমরা কিছুই খেতে পারি না। অবশ্যই সেখানে কোনো সেক্স নেই, মদের ব্যাপার নেই, আমাদের কোনো টেলিভিশন নেই, রেডিও নেই। গান শোনার কিছু নেই। আমরা কখনোই ফিল্ম দেখি না। আর আমরা খেলাধুলাও করতে পারি না। আমরা কথা বলি কম কম, কঠোর পরিশ্রম করি, আর অবসর সময়টা ধ্যানে বসে নিঃশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকি। আমরা মেঝেতে ঘুমাই।’

 

জেলের বন্দীরা আমাদের এমন কঠোর অনাড়ম্বর সন্ন্যাসজীবনের বর্ণনা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল। এর তুলনায় তাদের এই উচ্চ নিরাপত্তার জেলখানাটা পাঁচতারা হোটেলের মতো মনে হলো। প্রকৃতপক্ষে তাদের একজন কয়েদী তার এই ভিক্ষু বন্ধুর এমন দুর্দশা শুনে এমন করুণার্দ্র হয়ে উঠল যে, সে ভুলে গেল

যে সে কোথায় আছে, আর বলে বসল : ‘তোমার বিহারে থাকাটা তো খুবই ভয়ঙ্কর! তুমি এখানে এসে আমাদের সাথে থাকো না কেন?’

 

ভিক্ষুটি আমাকে পরে বলেছিল যে, এই কথা শুনে রুমের সবাই তো হেসে খুন। সে যখন কাহিনীটা আমাকে বলেছিল আমিও এমন হেসেছিলাম। পরে আমি একটু গভীরভাবে ভাবতে শুরু করলাম। এটা সত্যি যে সমাজের দুষ্কৃতকারীদের জন্য বানানো সেই কঠিন জেলখানাগুলো থেকে আমার এই বিহারটা অনেক অনেক গুণ সাদামাটা, তবুও অনেকেই স্বেচ্ছায় এখানে থাকতে আসে, আর এখানে তারা সুখী। অথচ এমন সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন জেলখানা থেকে অনেকেই পালাতে চায়। তারা সেখানে অসুখী। কেন?

 

কারণ, আমার বিহারে সতীর্থরা এখানে আসতে চায়, আর জেলখানায় সেখানে সতীর্থরা যেতে চায় না। পার্থক্যটা এখানেই।

 

আপনি যেখানে থাকতে চান না, সেখানে শত সুযোগ-সুবিধাই থাকুক না কেন, আপনার জন্য তা কারাগার। ‘কারাগার’ হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যেখানে আপনি থাকতে চান না। এটাই কারাগার শব্দের আসল অর্থ যদি আপনি এমন একটা চাকরি করেন, যেখানে আপনি থাকতে চান না, তাহলে আপনি তখন কারাগারে আছেন। যদি আপনি এমন কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, যা আপনি চান না, আপনি তখন কারাগারে আছেন। যদি আপনি অসুস্থ ও পীড়িত দেহে থাকেন যা আপনি চান না, সেটাও তখন আপনার জন্য একটা কারাগার।

 

কারাগার হচ্ছে এমন একটা পরিস্থিতি যা আপনি চান না।

 

তো, আপনি কীভাবে জীবনের এই কারাগারগুলো থেকে পালাবেন? সহজ। শুধু বর্তমান অবস্থার প্রতি আপনার উপলব্ধিকে বদলে দিন ‘সেখানে থাকতে চাই’ এমন মনোভাব দিয়ে। এমন স্যান কোয়েন্টিন অথবা তার চেয়ে একটু ভালো হচ্ছে আমার বিহারটা, যখন আপনি সেখানে থাকতে চাইবেন, সেটা আর আপনার জন্য কারাগার বলে মনে হবে না। আপনার চাকরি, ব্যক্তিগত সম্পর্ক অথবা অসুস্থ দেহের প্রতি যে মনোভাব, তা বদলে নিয়ে আর এরূপ অবস্থা না চাওয়ার বদলে, বরং এরূপ অবস্থাকেই মেনে নিলে তখন এটাকে আর কারাগার বলে মনে হবে না। যখন আপনি এখানে থেকে খুশি, তখন আপনি স্বাধীন।

স্বাধীনতা হচ্ছে আপনি যেখানে আছেন সেখানেই সন্তুষ্ট থাকা। কারাগার হচ্ছে অন্য কোথাও যেতে চাওয়া। স্বাধীন জগৎ হচ্ছে যারা সন্তুষ্ট, তাদের দ্বারা দেখা জগৎ। সত্যিকারের স্বাধীনতা হচ্ছে আকাঙক্ষা হতে স্বাধীনতা, কখনোই আকাঙক্ষার স্বাধীনতা নয়।

 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাথে রাতের ভোজ

আমার বিহারের কঠিন ও কঠোর জীবনের কথা বিবেচনা করে আমি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের স্থানীয় গ্রুপের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে খুব সতর্ক তাই বিশ্ব মানবাধিকার সনদের পঞ্চাশতম পূর্তি উপলক্ষে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আয়োজিত একটি ডিনারের আমন্ত্রণে আমি তাদের নিচের চিঠিটা লিখলাম।

 

প্রিয় জুলিয়া, প্রচার সম্পাদক,

৩০ মে, শনিবারের বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের পঞ্চাশতম পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত রাতের ভোজসভায় আমন্ত্রণের জন্য তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ।

 

এমন অনুষ্ঠানে যোগদানের আমন্ত্রন পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত।

 

তবে কথা হলো, আমি থেরবাদী মতাদর্শের এক বৌদ্ধ ভিক্ষু, যে মতাদর্শে খুব কঠিন নিয়ম মেনে চলতে হয়। দুর্ভাগ্যবশত, এই নিয়ম আমাকে দুপুর হতে পরের দিন ভোর হওয়া পর্যন্ত সময়টাতে খেতে নিষেধ করে। হায়! এজন্যই ডিনারে আমি নেই! মদের বিষয়েও না - না। আর এটা সব ধরনের মদের

বেলায় প্রযোজ্য। তোমার আমন্ত্রন গ্রহণ করলে আমাকে খালি একটা প্লেট ও খালি একটা গ্লাস নিয়ে বসে থাকতে হবে, যেখানে চারপাশের সবাই তৃপ্তির সাথে খানাপিনায় ব্যস্ত থাকবে। আমি নিশ্চিত, এমন খানাপিনা নিশ্চয়ই মুখরোচক হবে। সবাই খাবে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখব, তা হবে আমার উপর এক ধরনের নির্যাতন, যা তোমরা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশাল নিশ্চয়ই সহ্য করবে না। তা ছাড়া, বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে আমি টাকা-পয়সা গ্রহণও করতে পারি না, রাখতেও পারি না। আমি দারিদ্র্যসীমার এত নিচে বাস করি যে, অনেক সরকারি পরিসংখ্যান আমি লেজে-গোবরে করে ফেলি! তাই সেই ডিনারের পয়সা দেওয়ার আমার কোনো উপায় নেই, আর তা আমি খেতেও পারব না কোনোমতে।

আমি আরও বলতে যাচ্ছিলাম, এমন অনুষ্ঠানে পোশাক পরিচ্ছদের যে একটা নিয়ম আছে, ড্রেস কোড আছে, তাতেও আমার মতো একজন ভিক্ষুর সমস্যায় পড়ে যেতে হবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমি অনেক বলে ফেলেছি। তাই বিনীতভাবে এই বলে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যে, আমি ডিনারে উপস্থিত থাকতে পারব না।

দারিদ্রের মাঝে সুখে থাকা, তোমারই,

ব্রাহম্

 

একজন ভিক্ষুর পোশাকের নিয়ম

আমার মতাদর্শের ভিক্ষুরা বাদামী চীবর পরে। আর আমাদের এটা বাদে আর কিছু নেই। কয়েক বছর আগে, আমাকে কয়েক দিনের জন্য একটি অস্ট্রেলিয়ান হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আমি আমার প্যান্ট এনেছি কি না। আমি বললাম যে ভিক্ষুরা প্যান্ট পরে না। তারা হয় এই চীবর পরবে, আর না-হলে কিছুই পরবে না! তাই তারা আমাকে চীবর পরতে দিল।

সমস্যা হচ্ছে যে ভিক্ষুদের পোশাকটি আসলেই একটা ড্রেসের মতো দেখায়।

 

এক রবিবার বিকেলে পার্থ শহরের উপকণ্ঠে আমি আমাদের বিল্ডিংয়ের নির্মাণকাজের মালপত্রগুলো তুলছিলাম আমাদের বিহারের গাড়িতে। কাছের এক বাড়ি থেকে তের বছর বয়সের এক অস্ট্রেলিয়ান মেয়ে আমার সাথে কথা বলতে এলো। সে এর আগে কখনোই কোনো বৌদ্ধ ভিক্ষু দেখে নি। আমার সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে সে আমার পুরো আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করল পরম অবজ্ঞার সাথে। তারপর সে বিরক্তিভরা কণ্ঠে আমাকে বিদ্রুপ করা শুরু করল : ‘তুমি তো মেয়েদের পোশাক পরেছ! কী জঘন্য! ওয়াক!’

 

সে এমনভাবে কথাগুলো বলল যে আমি না হেসে পারলাম না। আমার গুরু আজান চাহ্-র কথা মনে পড়ল। তিনি তার শিষ্যদের উপদেশ দিতেন কী করে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের প্রতি সাড়া দিতে হয়। ‘যদি কেউ তোমাকে কুকুর বলে, তাতে রাগ করো না। তার বদলে তোমার পিছনে নিচের দিকে তাকাও। যদি সেখানে কোনো লেজ দেখতে না পাও, তার মানে হচ্ছে তুমি কুকুর নও। সমস্যা খতম।’ মাঝে মাঝে আমি জনসমক্ষে চীবর পরার জন্য প্রশংসাও পাই।

 

একবার যদিও এটা আমাকে বেশ কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

আমার তখন শহরে কাজ ছিল। আমার ড্রাইভার (ভিক্ষুদের গাড়ি চালানো নিষেধ) আমাদের বিহারের গাড়িটাকে একটা বহুতল গাড়ি পাকিংয়ে এ রাখল। সে ঘোষণা করল যে তাকে এখুনি টয়লেটে যেতে হবে। কিন্তু গাড়ি পাকিংয়ের টয়লেটগুলো নোংরা মনে করাতে সে নিকটস্থ সিনেমা হলের টয়লেট ব্যবহার করতে চায়। অতএব, সে যখন ভেতরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ব্যস্ত আমি তখন সিনেমা হলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি ব্যস্ত সড়কের উপর আমার ভিক্ষু ড্রেস পরে।

 

এক তরুণ আমার কাছে এসে মিষ্টি করে হাসল, আর বলল আমার সময় আছে কি না। আমার মতো ভিক্ষুরা খুব সহজ সরল হয়। আমি জীবনের বেশির ভাগ সময় বৌদ্ধ বিহারে কাটিয়েছি। তা ছাড়া ভিক্ষুরা কোনো ঘড়ি পরে না। তাই আমাকে নম্রভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হলো যে আমার সময় জানা নেই।

সে ভ্রকুটি করে হাঁটতে শুরু করল।

 

কয়েক কদম যাওয়ার পরেই হঠাৎ আমার উপলব্ধি হলো তরুণটি কী বুঝাতে চেয়েছে : ‘তোমার কি সময় আছে?’ এটা সম্ভবত যেকোনো বইয়ের সবচেয়ে পুরনো ডেটিংয়ে আমন্ত্রণের কথা। আমি পরে জেনেছিলাম যে, আমি যে জায়গাতে দাঁড়িয়েছিলাম, তা হচ্ছে পার্থে সমকামী পুরুষদের দেখা করার জনপ্রিয় জায়গাগুলোর একটি!

 

সেই সমকামী তরুণটি ফিরে এসে আরেকবার আমাকে নিরীক্ষণ করে বলল, তার শ্রেষ্ঠ মেরিলিন মনরোর কন্ঠে : ‘ওহ, তোমাকে কিন্তু এমন পোশাকে সত্যিই সুন্দর দেখাচ্ছে!’

 

আমি স্বীকার করছি যে ওই সময় আমি ঘামতে শুরু করেছিলাম। তখনই সিনেমা হলের ভেতর থেকে আমার ড্রাইভার এসে আমাকে উদ্ধার করল। তখন

থেকে আমরা গাড়ি পাকিংর্য়ের টয়লেটগুলো ব্যবহার করি।

 

নিজেকে হাসা

নবীন স্কুলশিক্ষক হিসেবে আমার পাওয়া সেরা উপদেশগুলোর একটি হচ্ছে যখন আপনি একটি ভুল করবেন আর পুরো ক্লাস আপনাকে হাসা শুরু করবে, তখন আপনিও হাসুন। এতে করে আপনার ছাত্ররা আর কখনোই আপনাকে হাসছে না, হাসছে আপনার সাথে সাথে।

 

অনেক বছর পরে, পার্থে একজন শিক্ষক ভিক্ষু হিসেবে আমাকে হাইস্কুলগুলোতে ডাকা হতো বৌদ্ধধর্ম বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। পশ্চিমা

স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা আমাকে লজ্জা দিয়ে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করত। একবার বৌদ্ধ সংস্কৃতির উপরে একটা ক্লাস শেষে আমি প্রশ্ন আহবান করলাম তাদের কাছ থেকে। একজন চৌদ্দ বছরের কিশোরী তার হাত তুলল এবং জিজ্ঞেস করল : ‘মেয়েরা কী তাহলে তোমার মধ্যে যৌন কামনা জাগিয়ে তোলে?’

 

সৌভাগ্যবশত, ক্লাসের অন্যান্য মেয়েরা আমাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলো, আর এভাবে তাদের সবাইকে লজ্জা দেওয়ার জন্য বকা দিল। আমি হাসলাম আর পরবর্তী দেশনার বিষয়বস্ত্ত হিসেবে মনে মনে ব্যাপারটা নোট করে নিলাম।

 

অন্য একসময় আমি একটা মেইন রোড ধরে হাঁটছিলাম। এই কয়েকজন স্কুলছাত্রী এগিয়ে এলো আমার দিকে।

তারা খুব বন্ধুভাবাপন্ন স্বরে আমাকে বলল, ‘হাই! আমাদের মনে আছে তোমার? কয়েক দিন আগে তুমি আমাদের স্কুলে একটা বক্তৃতা দিতে এসেছিলে।’

 

‘আমি আনন্দিত ও গর্বিত যে তোমরা আমাকে মনে রেখেছ।’ আমি উত্তর দিলাম।

তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল, ‘আমরা তোমাকে কখনোই ভুলব না। কী করে আমরা এমন সন্ন্যাসীকে ভুলি যার নাম ‘ব্রা’!

 

যে কুকুরটি শেষ হাসি হেসেছিল

উত্তরপূর্ব থাইল্যান্ডে ভিক্ষু হিসেবে আমার প্রথম বছরটা ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ বছর। আজান চাহ্-র বিহারের কাছেই আঞ্চলিক শহর উবনের নিকটে একটা আমেরিকান বিমানঘাঁটি ছিল। আজান চাহ্ তখন কী করে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সাথে ডিল করতে হয় তা বলতে গিয়ে আমাদের নিচের সত্যি কাহিনীটি শোনাতেন।

এক আমেরিকান যোদ্ধা বিমান ঘাঁটি থেকে রিকশায় করে শহরে যাচ্ছিল। শহরের সীমানায় রাস্তার পাশে একটা মদের দোকানের সামনে রিকশাওয়ালার কয়েকজন বন্ধু বসেছিল অর্ধমাতাল অবস্থায়। তারা থাই ভাষায় চিৎকার করল, ‘এই যে! তুমি এই নোংরা কুকুরটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?’ এই বলে তারা আমেরিকান সৈন্যটাকে দেখিয়ে হাসিতে ফেটে পড়ল।

 

রিকশাওয়ালাটিও কিছুটা মজা করার আশায় চিৎকার করে জবাব দিল, ‘আমি এই নোংরা কুকুরটিকে চাঁদের নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিতে যাচ্ছি যাতে সে একটা গোসল দিয়ে পরিষ্কার হতে পারে!’

 

রিকশাওয়ালা ও তার মাতাল বন্ধুরা হাসল, সৈন্যটি অভিব্যক্তিহীন। গন্তব্যে পৌঁছে রিকশাওয়ালা ভাড়া নেওয়ার জন্য হাত পাতল। কিন্তু

আমেরিকান সৈন্যটি নিরবে চলে যেতে লাগল।

 

রিকশাওয়ালা উত্তেজিত হয়ে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বলে উঠল, ‘হেই! স্যার! আপনি আমাকে ডলার দিন!’

বিশালদেহী আমেরিকান তখন শান্তভাবে ঘুরে দাঁড়াল, আর থাই ভাষায় সাবলীলভাবে বলল, ‘কুকুরদের কোনো টাকা থাকে না।’

 

বিদ্রুপ এবং অর্হত্ত্ব

অভিজ্ঞ ধ্যান শিক্ষকদের প্রায়ই এমন সব শিষ্যদের মোকাবেলা করতে হয় যারা মনে করে তারা অর্হৎ হয়ে গেছে। তাদের এমন দাবি সত্যি কি না তা যাচাই করার জন্য একটা পদ্ধতি হচ্ছে শিষ্যটাকে এমন বিদ্রুপ করা যাতে করে সে রেগে যায়। সব বৌদ্ধ ভিক্ষু ও ভিক্ষুণী জানে যে, বুদ্ধ স্পষ্ট বলে গেছেন, যে রেগে যায় সে নিশ্চিতই অর্হৎ নয়।

 

একজন তরুণ জাপানী ভিক্ষু, যে এই জীবনেই নির্বাণ লাভে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সে একটা বিখ্যাত বিহারের কাছেই অবস্থিত হ্রদের মধ্যস্থিত একটি দ্বীপে নির্জনে ধ্যান-সাধনা করছিল। সে জীবনের প্রথমভাগেই নির্বাণ পেতে চায়, যাতে করে পরবর্তীকালে অন্যান্য কাজে মনোযোগ দিতে পারে।

 

বিহারের তত্ত্বাধায়ক তাকে রসদপত্র দেওয়ার জন্য সপ্তাহে একবার যেত। একবার তরুণ ভিক্ষুটি একটি নোট লিখে দিল যে, তার কিছু দামী কাগজ, একটা পালক ও কিছু ভালো মানের কালি লাগবে। সে শীঘ্রই তার নির্জনবাসের তিন বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে। আর সে তার গুরুকে জানিয়ে দিতে চায় কতদূর এগিয়েছে সে তার সাধনায়।

 

পরের সপ্তাহে কাগজ, পালক ও কালি এসে গেল। পরের কয়েকটা দিন অনেক ধ্যান ও গভীর চিন্তাভাবনা শেষে দামী কাগজের উপর সুন্দর ডিজাইনের হাতের লেখায় সে নিচের ছোট্ট কবিতাটি লিখল :

‘বিবেকবান তরুণ ভিক্ষু,

তিন বছর ধরে একাকী ধ্যানরত; তাকে আর টলাতে পারবে না, চারি মহাবায়ুও।’

 

সে ভাবল, এই কথাগুলো পড়লে এবং এমন যত্ন নিয়ে লেখা স্টাইল দেখলে নিশ্চিতই তার বিজ্ঞ বুড়ো অধ্যক্ষ বুঝতে পারবে যে তার শিষ্য এখন অর্হৎ। সে আলতো করে কাগজটা গুটিয়ে নিল। ফিতে নিয়ে যত্ন করে এটাকে বাঁধল, আর এটাকে তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমে অধ্যক্ষের কাছে পাঠানোর জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।

 

এর পরবর্তী দিনগুলোতে সে কল্পনা করতে লাগল, এমন নিখুঁতভাবে লেখা বুদ্ধিদীপ্ত কবিতা পড়ে তার অধ্যক্ষ কীরূপ আনন্দ পাবে। সে কল্পনার চোখে

দেখতে পেল, এটিকে একটি দামী ফ্রেমে বাঁধাই করে বিহারের প্রধান কক্ষে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই, এবার তারা তাকে কোনো বিখ্যাত শহরের কোনো এক বিহারের অধ্যক্ষ বানাতে চাইবে। পরের বার তত্ত্বাবধায়ক যখন তার সাপ্তাহিক রসদ পৌঁছে দিতে আসল, তরুণ ভিক্ষুটি তখন তার জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছিল। তত্ত্বাবধায়ক তার হাতে তুলে দিল আরেকটা রোল করা কাগজ, সে যে কাগজটা পাঠিয়েছে তার মতোই; কিন্তু অন্য রঙের ফিতা দিয়ে বাঁধা। ‘অধ্যক্ষের কাছ থেকে’ তত্ত্বাবধায়ক তীক্ষ্ণ সুরে বলল।

 

ভিক্ষুটি উত্তেজিত হয়ে ফিতেটি ছিঁড়ে কাগজটি বিছিয়ে নিল। তার চোখগুলো কাগজটি পড়তে পড়তে চাঁদের মতো গোল হয়ে উঠল, আর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। এটা তার নিজেরই পাঠানো কাগজ, যেখানে তার এত সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা লাইনের পাশে অধ্যক্ষ লাল কালিতে অবহেলাভরে লিখে দিয়েছেন, ‘পাদ!’ দ্বিতীয় লাইনের পাশেও আরেকটা জঘন্য লাল কালির ‘পাদ!’ তৃতীয় লাইনেও আছে এমন ‘পাদ!’ এমনটা আছে চতুর্থ লাইনের পাশেও।

যথেষ্ট হয়েছে! এই জরাজীর্ণ বুড়ো অধ্যক্ষ এমন বোকা যে তার নাকের ডগায় লেখা থাকা নির্বাণকেও চিনল না। আর সে এমন অমার্জিত ও অসভ্য যে, এত সুন্দর একটা শিল্পকে অশস্নীল আকিবুকি করে নষ্ট করে দিল। অধ্যক্ষ উচ্ছৃঙ্খল ছেলের মতো আচরণ করছে, ভিক্ষুর মতো নয়। এটা শিল্পের অপমান! ঐতিহ্যের অপমান! সত্যের অপমান!

 

তরুণ ভিক্ষুর চোখ রাগে ছোট হয়ে এলো। তার মুখ রাগে লাল হয়ে গেল। সে ফোঁস ফোঁস করে তত্ত্বাবধায়ককে বলল, ‘আমাকে অধ্যক্ষের কাছে নিয়ে

যাও! এক্ষুনি!’

 

তিন বছরের মধ্যে এই প্রথম তরুণ ভিক্ষুটি তার দ্বীপাশ্রমের বাইরে পা দিল। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে সে অধ্যক্ষের রুমে ঝড়ো হাওয়ার বেগে প্রবেশ করল, কাগজটা টেবিলের উপর বিছাল এবং এর ব্যাখ্যা দাবি করল।

 

অভিজ্ঞ অধ্যক্ষ ধীরে সুস্থে কাগজটা তুলে নিল, গলা খাঁকারি দিল এবং কবিতাটা পড়ল :

বিবেকবান তরুণ ভিক্ষু,

তিন বছর ধরে একাকী ধ্যানরত, তাকে আর টলাতে পারবে না, চারি মহাবায়ুও।

 

এরপর সে কাগজটা নামিয়ে রাখল, আর তরুণ ভিক্ষুটির দিকে চেয়ে বলল, ‘হুম! তো, তরুণ ভিক্ষু! চারি মহাবায়ুও তোমাকে নড়াতে পারে না। অথচ চারটা

ছোট্ট ‘পাদ’ তোমাকে হ্রদের এপারে উড়িয়ে নিয়ে এলো!’

 

যখন আমি অর্হৎ হলাম

থাইল্যান্ডে আমার ভিক্ষু হওয়ার চতুর্থ বছরে উত্তরপূর্বাঞ্চলে একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলের বনবিহারে দীর্ঘদিন ধরে কঠোর সাধনা করছিলাম আমি। এক রাতে দীর্ঘক্ষণ চংক্রমণের সময়ে আমার মন অস্বাভাবিক পরিষ্কার হয়ে উঠল। গভীর অন্তর্দৃষ্টি আসল যেন পাহাড়ি ঝরনাধারার মতো। যে নিগূঢ় রহস্যগুলোর আগে কোনো কুল কিনারা পাই নি, সেগুলোই আজ খুব সহজে বুঝতে পারছিলাম আমি। এর পরে একটা কিছু আসল। এটা আমাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল। এটাই সেটা। অর্হত্ত্ব।

 

এমন সুখ আগে কখনো পাই নি। এত সুখ! এত শান্তি আমি গভীর রাত পর্যন্ত ধ্যান করলাম, ঘুমালাম খুব কম, ৩টার ঘণ্টা বাজার অনেক আগেই বিহারের হলরুমে গিয়ে ধ্যান শুরু করলাম আবার। সাধারণত রাত ৩টায় থাইল্যান্ডের এমন গরম ও ভ্যাপসা জঙ্গলে আমাকে অলসতা ও ঘুমের সাথে লড়তে হতো। কিন্তু এই সকালটা তেমন নয়। আমার দেহটা বিনা চেষ্টাতেই খাড়া। স্মৃতি ডাক্তারদের ক্ষুরের মতো ধারাল। মনোযোগ সহজেই কেন্দ্রীভূত হচ্ছিল। অর্হৎ হওয়া এমন চমৎকার। তবে দুঃখের বিষয় এটা বেশিক্ষণ থাকে নি।

 

তখনকার দিনে উত্তরপূর্ব থাইল্যান্ডে খাবার-দাবার ছিল জঘন্য। উদাহরণস্বরূপ একবার দিনে যে একবেলা খেতাম, তাতে পেলাম আঠালো ভাতের একটা দলা, আর তার উপরে অর্ধ সেদ্ধ মাঝারি সাইজের একটা ব্যাঙ। কোনো শাকসবজি নেই, ফলমূল নেই, শুধূ ব্যাঙ-ভাত। তাই দিয়ে সারা দিন কাটাতে হবে। আমি পায়ের মাংসগুলো দিয়ে শুরু করলাম । এর পরে ব্যাঙের ভেতরের অংশগুলো। আমার পাশেই এক ভিক্ষু ব্যাঙের নাড়িভুড়িগুলো দিয়ে খাওয়া শুরু করেছিল। দুর্ভাগ্যবশত ব্যাঙের মুত্রথলিতে চাপ পড়ল। মুত্রথলিতে তখনো মূত্র ছিল। এতে করে ব্যাঙটা তার ভাতের উপর প্রস্রাব করে দিল। ফলে খাওয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলো সে।

 

সাধারণত আমাদের প্রতিদিনের প্রধান তরকারি ছিল পঁচামাছের ঝোল। ছোট ছোট মাছগুলো বর্ষাকালে ধরা হয়। আর মাটির পাত্রে সংরক্ষণ করে রাখা হয় এবং সেখান থেকে সারা বছর ধরে ব্যবহার করা হয়। আমাদের বিহারের রান্নাঘর পরিষ্কার করার সময় আমি এ রকম একটা মাটির পাত্র পেয়েছিলাম। এটি শুককীটে কিলবিল করছিল। তাই আমি এটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে গেলাম।

 

সেই গ্রামের হেডম্যান, যে ছিল তাদের মধ্যে সবচেয়ে শিক্ষিত ও রুচিসম্পন্ন সে আমাকে এটা ফেলে দিতে মানা করল।

‘কিন্তু এটা তো শুককীটে পরিপূর্ণ’ আমি বললাম।

 

‘সেটা আরও বেশি মজাদার!’ সে জবাব দিল। আর আমার কাছ থেকে পাত্রটা নিয়ে নিল। পরের দিন আমরা সেই পঁচা মাছের ঝোল খেলাম আমাদের

দৈনিক একবেলা খাবারে।

 

আমার অর্হত্ত্বের পরের দিন অবাক হয়ে দেখলাম আঠালো ভাতের সাথে দুই সসপ্যান ঝোল। একটাতে ছিল সেই দুর্গন্ধযুক্ত পঁচা মাছের ঝোল, আরেকটাতে শুকরের মাংসের ঝোল। আমি ভাবলাম, আজকে আমার অর্হত্ত্বের উদযাপন উপলক্ষে ভালো একটা খানা খাব।

 

আমার আগে অধ্যক্ষ সেই খাবারগুলো পছন্দ করলেন। তিনি বড় চামচে করে তিন চামচ সেই সুস্বাদু শুকরের মাংসের ঝোল নিলেন - পেটুক। তবে এর

পরেও আমার জন্য প্রচুর থাকল। কিন্তু সসপ্যানটা আমার কাছে দেওয়ার আগে তিনি আমার সেই জিভে জল এনে দেওয়া শুকরের মাংসের ঝোলকে ঢেলে দিলেন পঁচা মাছের ঝোলের মধ্যে। এর পরে তিনি সেই ঝোলটা নেড়েচেড়ে মিশিয়ে দিয়ে বললেন, ‘সবই তো একই!’

 

আমি হতবাক। রাগে ফুঁসছি। ভীষণ রেগে গেছি। যদি তিনি সত্যিই ভাবতেন, ‘সবই তো একই’ তাহলে কেন বড় বড় তিন চামচ শুকরের মাংসের

ঝোল নিতে গেলেন মিশিয়ে দেওয়ার আগে? ভন্ড তারচেয়ে বড় কথা, তিনি তো এখানকারই ছেলে। বড় হয়েছেন এমন দুর্গন্ধযুক্ত পঁচা মাছের ঝোল খেয়ে। তার তো সেটাকেই পছন্দ করা উচিত। নকল! শুয়োর! প্রতারক!

 

এর পরে উপলব্ধি আমাকে আঘাত করল। অর্হৎদের খাবার দাবারের উপরে কোনো বাছবিচার থাকে না। তারা ক্রুদ্ধও হয় না, আর তাদের অধ্যক্ষকে শুয়োর বলেও ডাকে না, যদিও তা চাপা স্বরে। আমি সত্যিই খুব রেগে গিয়েছিলাম। আর তার মানে হচ্ছে ... ওহ্ না! ... আমি অর্হৎ হই নি।

তৎক্ষণাৎ আমার রাগের আগুন চাপা পড়ে গেল বিষণ্ণতার ভারে। হতাশার ভারী কালো মেঘে ছেয়ে গেল আমার হৃদয়ের আকাশ, যা আমার অর্হত্ত্বের সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দিল। মনমরা হয়ে আমি দুই চামচ দুর্গন্ধযুক্ত পঁচা মাছের ঝোল ও শুয়োরের ঝোলের মিশণ্র ঢাললাম ভাতের উপর। কী খাচ্ছি, তাতে এখন আমার আর কিচ্ছু আসে যায় না। আমি এমন নিরাশ হয়ে গেলাম। আমি যে অর্হৎ নই, তা জেনে আমার পুরো দিনটাই মাটি হয়ে গেল।

 

রাস্তার শুয়োর

শুয়োর বিষয়ে আরেকটা গল্প। একজন ধনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নতুন একটা খুব দামী ও শক্তিশালী স্পোর্টস কার কিনেছে। আপনি অবশ্যই শহরের ধীরগতিতে চলা যানবাহনের ভিড়ে চালানোর জন্য এত দাম দিয়ে এমন শক্তিশালী গাড়ি কিনবেন না। তাই এক রোদেলা দিনে সে শহর থেকে বেরিয়ে নৈসর্গিক দৃশ্যে ভরা গ্রামের দিকে রওনা দিল। স্পিড ক্যামেরা নেই এমন জায়গায় গিয়ে সে জোরে একসিলারেটরে চাপ দিল। গর্জে উঠল তার স্পোর্টস কার। গাড়ির ইঞ্জিন বিশাল শব্দে গর্জে উঠছে আর গ্রামের রাস্তায় সাঁই সাঁই করে ছুটে চলেছে তার চকচকে গাড়ি। দ্রুত গতির উল্লাসে হাসিতে ফেটে পড়ল ডাক্তার।

 

রোদে পোড়া একজন কৃষক কিন্তু এতটা উল্লসিত ছিল না। স্পোর্টস কারের গর্জন ছাপিয়ে শোনা যায় মতো করে সে চিৎকার করল, ‘শুয়োর!’

ডাক্তার জানত যে, সে যেভাবে চালাচ্ছে তা চারপাশের পরিবেশের সাথ বেমানান। কিন্তু সে ভাবল, ‘চুলোয় যাক ব্যাটা! আমার নিজেকে উপভোগ করার অধিকার আছে।’

 

তাই সে কৃষকের দিকে ফিরে চিৎকার করল, ‘কাকে শুয়োর বলছ তুমি?’

 

যে কয়েক সেকেন্ড সে রাস্তা থেকে চোখ সরিয়ে নিয়েছিল, এর মাঝেই তার গাড়িটা রাস্তার মাঝখানে একটা শুয়োরকে চাপা দিল।

নতুন ব্রান্ডের স্পোর্টস কার পুরো বিধ্বস্ত হলো। আর শুয়োরটা, তাকে অনেক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে হলো আর অনেক টাকা গচ্চা দিতে হলো, তার গাড়ির সাথে সাথে।

 

হরে কৃষ্ণ

আগের গল্পে ডাক্তারের অহমিকার ফলে দয়ালু হৃদয়ের কৃষকের সতর্কবাণীকে সে ভুলভাবে বিচার করেছিল। নিচের গল্পে আমার ভিক্ষুর অহমিকার ফলে অন্য এক দয়ালু হৃদয়ের ব্যক্তিকে আমি ভুলভাবে বিচার করেছিলাম, যা পরে আমার বেশ মনোকষ্টের কারণ হয়েছিল।

 

আমি লন্ডনে আমার মায়ের সাথে দেখা করে ফিরছিলাম। সে আমার সাথেই আসছিল ইয়েলিং ব্রডওয়ে রেলস্টেশনে, আমাকে টিকেটের ব্যাপারে সাহায্য করতে। স্টেশনে যাওয়ার পথে, সেই ব্যস্ত রাজপথে আমি শুনলাম, কেউ আমাকে ঠাট্টা করে বলছে, ‘হরে কৃষ্ণ! হরে কৃষ্ণ!’

 

ন্যাড়া মাথা ও বাদামী চীবর পরা বৌদ্ধ ভিক্ষু হওয়াতে প্রায়ই আমাকে ‘কৃষ্ণ চেতনা আন্দোলনের’ সমর্থক বলে মনে করে সবাই। অস্ট্রেলিয়ায় অনেকবার আমাকে অভদ্র ব্যক্তিরা ‘হরে কৃষ্ণ, এই যে হরে কৃষ্ণ!’ বলে উত্যক্ত করার চেষ্টা করেছে নিরাপদ দূরত্ব থেকে, আর আমার চেহারা নকল করেছে। আমি দ্রুত খুঁজে নিলাম ‘হরে কৃষ্ণ’ বলে চিৎকার দেওয়া লোকটাকে, আর সিদ্ধান্ত নিলাম একজন ভালো বৌদ্ধ ভিক্ষুকে প্রকাশ্যে এভাবে বিদ্রুপ করাটা ঠিক নয় বলে তাকে জানিয়ে দিতে হবে।

 

আমার মা আমার ঠিক পিছনে ছিল। আমি সেই জিনস, জ্যাকেট ও ন্যাড়া মাথার সেই তরুণটিকে বললাম, ‘দেখো বন্ধু, আমি একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু। আমি

কোনো ‘হরে কৃষ্ণ’ সমর্থক নই। তোমার এটা ভালো জানা উচিত। তুমি শুধু শুধু আমাকেই ‘হরে কৃষ্ণ’ বলছ, তা তো ঠিক নয়!’

 

তরুণটি হেসে তার টাক খুলে ফেলল। ফলে টাকমাথার আড়াল থেকে লম্বা বেণী করা চুল বেরিয়ে এলো। ‘হ্যাঁ, আমি জানি তুমি একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু। আমি একজন হরে কৃষ্ণ। হরে কৃষ্ণ! হরে কৃষ্ণ!’

 

সে আমাকে ঠাট্টা করছে না। সে শুধু তার হরে কৃষ্ণই করছে। আমি খুব বিব্রত বোধ করলাম। কেন শুধু মা সাথে থাকলেই এমন জিনিস ঘটে?

হাতুড়ি

আমরা সবাই সময়ে সময়ে ভুল করি। জীবনটা হচ্ছে ভুল যতটা পারা যায় কম করতে শেখা। এটা বুঝে নিয়ে আমাদের বিহারে একটা নীতি চালু আছে এ রকম যে, ভিক্ষুরা ভুল করতে পারবে। যখন তারা ভুল করতে ভয় পায় না, তখন তারা এতটা ভুল করে না।

 

একদিন আমার বিহারের মাঠে হাঁটার সময় ঘাসের মধ্যে একটা হাতুড়ি পড়ে থাকতে দেখলাম। সেটি নিশ্চয়ই দীর্ঘদিন ধরে সেখানে পড়ে ছিল। কারণ, এতে বেশ জং ধরে গেছে। আমি আমার সতীর্থ ভিক্ষুদের অযত্ন অবহেলাতে খুব ক্ষুদ্ধ হলাম। আমরা বিহারে যা কিছু ব্যবহার করি, আমাদের চীবর থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি, সবই আমাদের কঠোর পরিশ্রমী গৃহী ভক্তদের দান করা। একজন গরিব কিন্তু উদার বৌদ্ধ উপাসক হয়তো সেই হাতুড়িটা কিনে দিতে গিয়ে সপ্তাহের পর সপ্তাহ টাকা জমিয়েছে। এই দানগুলোকে অবিবেচকের মতো ব্যবহার করা ঠিক নয়। তাই আমি ভিক্ষুদের একটি সভা আহবান করলাম।

আমাকে বলা হয় যে আমার চরিত্র নাকি ডালের মতো নরম। কিন্তু সেই সন্ধ্যায় আমি ছিলাম থাই মরিচের মতো ঝাঁঝালো। আমি আমার ভিক্ষুদের আসলেই জিহবা দিয়ে পিটিয়েছিলাম। তাদের একটা শিক্ষা পাওনা ছিল। তাদের শেখা বাকি ছিল কী করে আমাদের অল্প কয়েকটি সম্পত্তির দেখাশোনা করতে হয়।

 

যখন আমি আমার বক্তব্য শেষ করলাম, ভিক্ষুরা সবাই তখন ঋজু হয়ে বসা, ছাই বর্ণের মুখ ও নিরব। আমি কিছু্ক্ষণ অপেক্ষা করলাম এই আশায় যে, অপরাধী তার দোষ স্বীকার করবে। কিন্তু ভিক্ষুদের কেউই স্বীকার করল না। তারা ঋজু হয়ে নিরবে অপেক্ষায় বসে রইল। আমি আমার সতীর্থ ভিক্ষুদের নিয়ে বেশ ঝামেলা অনুভব করলাম। তাই উঠে হল থেকে বেরিয়ে গেলাম। আমি ভেবেছিলাম অন্ততপক্ষে যে ভিক্ষুটা এভাবে হাতুড়িটা ঘাসে ফেলে রেখেছে, নিজের দোষ স্বীকার করার মতো সাহস তার থাকবে ও ক্ষমা চাইবে। আমার বক্তব্য কী খুব কড়া হয়ে গিয়েছিল?

 

আমি যখন হলের বাইরে বেরিয়ে গেলাম, তখন হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম কেন কোনো ভিক্ষুই এর দায় স্বীকার করে নি। আমি ফিরে হলে চলে এলাম। আমি ঘোষণা করলাম, ‘ভিক্ষুরা! আমি খুঁজে পেয়েছি কে এই হাতুড়িটাকে ঘাসের মধ্যে ফেলে রেখেছে। সেটি ছিলাম আমি!!’

আমি পরিষ্কার ভুলে গিয়েছিলাম যে আমিই তখন বাইরে কাজ করছিলাম, আর তাড়াহুড়োতে হাতুড়িটা তুলে রাখতে ভুলে গিয়েছিলাম। সেই অগ্নিঝরা কথাগুলো বলার সময়েও স্মৃতি আমার সাথে লুকোচুরি খেলেছে। কেবল যখন আমি ভিক্ষুদের চলে যেতে বলেছি, তখনই স্মৃতিটা ফিরে এসেছিল পুরো অর্থসহ। আমিই এই কাজটি করেছিলাম। ওহ! কী লজ্জার!

 

সৌভাগ্যবশত আমার বিহারে আমরা ভিক্ষুরা ভুল করলে মেনে নিই, এমনকি অধ্যক্ষ ভুল করলেও।

 

কাউকে আঘাত না দিয়েই কৌতুক উপভোগ করা

যখন আপনি আপনার ইগো বা অহংবোধকে ত্যাগ করবেন, তখন কেউই আর আপনাকে ঠাট্টা করতে পারবে না। যদি কেউ আপনাকে বোকা বলে, তাতে আপনার রেগে যাওয়ার একমাত্র কারণ হতে পারে যে আপনি বিশ্বাস করেন, তারা হয়তো ঠিক কথাই বলছে।

 

কয়েক বছর আগে, পার্থে অনেক লেনের একটা হাইওয়েতে গাড়িতে করে যাওয়ার সময় একটা পুরনো ধাঁচের গাড়িতে কয়েকজন যুবক আমাকে দেখে তাদের গাড়ির খোলা জানালা দিয়ে আমাকে ব্যঙ্গ করতে শুরু করল, ‘এই যে! টাকওয়ালা! এই যে ন্যাড়া মাথা!’ তারা আমাকে প্যাঁচে ফেলতে চাচ্ছিল, তাই আমিও আমার জানালার কাচ নামিয়ে চিৎকার দিলাম, ‘তোমাদের চুলগুলো কাটো! মেয়েদের দল!’ সম্ভবত আমার সেটা করা উচিত ছিল না, কেননা এতে করে সেই তরুণদের উৎসাহ আরও বেড়ে গেল। তারা তাদের গাড়িটাকে আমাদের গাড়িটার পাশে এনে একটা ম্যাগাজিন দেখাল, আর মুখ বড় বড় করে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গী করা শুরু করল ম্যাগাজিনের ছবিগুলোর দিকে তাকানোর জন্য। এটা ছিল প্লেবয় ম্যাগাজিনের একটা কপি। আমি তাদের এমন অশালীন রসবোধ দেখে হেসে উঠলাম। তাদের বয়সের হলে এবং বন্ধুরা সাথে থাকলে আমিও এমনটা করতাম। আমাকে হাসতে দেখে তারা তাড়াতাড়ি সরে পড়ল। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপে হাসাটা ভদ্রতার খাতিরে লজ্জায় চুপ থাকার চেয়ে অনেক উত্তম।

 

আমি কি সেই প্লেবয় ম্যাগাজিনের ছবিগুলোর দিকে তাকিয়েছিলাম? অবশ্যই না। আমি একজন সংযত আচরণকারী ব্রহ্মচারী ভিক্ষু। তাহলে কীভাবে জানলাম যে ওটা একটা প্লেবয় ম্যাগাজিনের কপি ছিল? কারণ, আমার ড্রাইভার আমাকে সেটা বলেছিল, অন্ততপক্ষে আমি এই গল্পটাই সবাইকে বলি।

 

বোকা

কেউ আপনাকে বোকা বলে ডাকে। এরপর আপনি ভাবতে থাকেন, ‘তারা কীভাবে আমাকে বোকা ডাকে? আমাকে বোকা ডাকার তাদের কোনো অধিকার

নেই! কী অভদ্র সে, যে আমাকে বোকা ডাকে! আমাকে বোকা ডাকার জন্য তাদের আমি ধরব!’ আর আপনি হঠাৎ উপলব্ধি করেন যে আপনি এইমাত্র তাদের আরও চারবার বোকা ডাকতে দিলেন।

 

প্রত্যেকবার আপনি যখন তারা কী বলেছে তা স্মরণ করেন, আপনি তাদের বোকা ডাকার অনুমতি দেন। সেখানেই সমস্যার বীজ লুকিয়ে আছে।

যদি কেউ আপনাকে বোকা ডাকে আর আপনি তৎক্ষণাৎ সেটিকে যেতে দেন, তাহলে সেটি আর আপনাকে বিরক্ত করবে না। সেখানেই আছে এর সমাধান।

আপনার অন্তরের সুখটাকে কেন অন্যদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে দেবেন?