৫৩.তৃণদায়ক বর্গ

১.তৃণমুষ্ঠিদায়ক স্থবির অপদান

১.হিমালয়ের অদূরে নম্বক নামক নামক একটি পর্বত ছিল। সেই পর্বতে তিষ্য সম্বুদ্ধ খোলা আকাশের নিচে চংক্রমণ করছিলেন।

২.অতীতে আমি গহীন অরন্যে এক পশুশিকারী ছিলাম। দেবাতিদেব সম্বুদ্ধকে দেখে আমি একমষ্টি তৃণ দান করেছিলাম।

৩.বসার জন্য বুদ্ধকে এক মুষ্টি তৃণ দান রকআেমার মন প্রসন্নতায় ভরে উঠেছিল। তারপর আমি সম্বুদ্ধকে অভিবাদন করে উত্তরমুখী হয়ে চলে গিয়েছিলাম।

৪.চলে যাবার সাথে সাথেই আমাকে পশুরাজ সিংহ ভীষণভাবে আঘাত করেছিল। সিংহের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আমি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেছিলাম।

৫.মাত্র কিছুক্ষণ আগেই আমি অনাসক্ত বুদ্ধশ্রেষ্ঠের কাছে পুণ্যকর্ম করেছিলাম। সেই কৃতকর্মের ফলে আমি তীরের গতিতে দেবলোকে জন্মগ্রহণ করেছিলাম।

৬.সেখানে আমার পুণ্যপ্রভাবে সহস্রহকাণ্ডবিশিষ্ট শতভাণ্ড, ধ্বজালু, হিরন্ময় এক সুন্দর যজ্ঞস্তম ্ভ ছিল।

৭.মধ্যহ্ন সূর্যের ন্যায় সখান েথেকে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছিল। দেবকন্যা-পরিবেষ্টিত হয়ে তাতে আমি পঞ্চকামগুণে আমোদিত হয়েছিলাম।

৮.দেবলোক হতে চ্যুত হয়ে আমি পূর্বকৃপুণ্যপ্রভাবেত মনুষ্যত্ত্ব লাভ করে আসবক্ষয়জ্ঞান লাভ করেছি।

৯.আজ থেকে চুরানব্বই কল্প আগে আমি যেই বসার আসন দান করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার তৃণমুষ্টিদানেরইফল।

১০.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

১১.বুদ্ধের কাছে আসাটাআমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

১২.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানতৃণমুষ্টিদায়কস্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [তৃণমুষ্টিদায়কস্থবির অপদান প্রথম সমাপ্ত]

২.মঞ্চদায়ক স্থবির অপদান

১৩.আমি অতীব প্রসন্নমনে নিজ হাতে লোকশ্রেষ্ঠ বিপশ্বী ভগবানকে একটি মঞ্চদান করেছিলাম।

১৪.সেই মঞ্চদানের ফলে আমি জন্মে জন্মে হস্তিযান, অশ্বযান ও দিব্যযান লাভ করেছি। পরিশেষে আমি কাঙ্কিত আসবক্ষয়জ্ঞান লাভ করেছি।

১৫.আজ থেকে একানব্বই কল্প আগে আমি যেই মঞ্চদান করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার মঞ্চ দানেরই ফল।

১৬.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

১৭.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

১৮.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানমঞ্চদায়ক স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [মঞ্চদায়ক স্থবির অপদান দ্বিতীয় সমাপ্ত]

৩.শরণগমনীয় স্থবির অপদান

১৯.তখন আজীবক সন্ন্যাসী আমি ও এক ভিক্ষু একই নৌকায়উঠেছিলাম। এক পর্যায়ে নৌকাটি যখন ভেঙ্গে যাচ্ছিল তখন সেই ভিক্ষুটি আমাকে শরণে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

২০.আজ থেকে একানব্বই কল্প আগে আমি যেই মঞ্চদান করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার মঞ্চ দানেরই ফল।

২১.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

২২.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

২৩.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানশরণগমনীয় স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [শরণগমনীয় স্থবির অপদান তৃতীয়সমাপ্ত]

৪.অব্‌ভঞ্জনদায়ক স্থবির অপদান

২৪.আমি বন্ধুমতি নগরের রাজ-উদ্যানে বসবাস করছিলাম। তখন আমি চর্মবস্ত্রপরিহিত পাত্রধারী ছিলাম।

২৫.একদিন আমি ভাবনানিরত, ভাবিতাত্না, ধ্যানী, ধ্যানরত, সয়মূ্ভ অপরাজিত বিমল বুদ্ধকে দেখতে পেয়েছিলাম।

২৬.আমি সর্বকামনাসিদ্ধ, স্রোতোত্তীর্ণ, অনাসক্ত বুদ্ধকে দেখতে পেয়ে অতীব প্রসন্নমনে মলম দান করেছিলাম।

২৭.আজ থেকে একানব্বই কল্প আগে আমি যেই দান করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার মলম দানেরই ফল।

২৮.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

২৯.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

৩০.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানঅব্‌ঞ্জনদায়ক স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [অব্‌ঞ্জনদায়ক স্থবির অপদান চর্তুথসমাপ্ত]

৫.সুপটদায়কস্থবির অপদান

৩১.লোকনায়ক বিপশ্বী ভগবান দিবাবিহার হতে নিষ্ক্রান্ত হয়েছিলেন এমন সময় আমি তাঁকে সূক্ষ্ণ বস্ত্র দান করে কল্পকাল স্বর্গে আমোদিত হয়েছিলাম।

৩২.আজ থেকে একানব্বই কল্প আগে আমি যেই সূক্ষ্ণবস্ত্র দান করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার বস্ত্র দানেরই ফল।

৩৩.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

৩৪.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

৩৫.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানসুপটদায়কস্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [সুপটদায়ক স্থবির অপদান পঞ্চম সমাপ্ত]

৬.দণ্ডদায়ক স্থবির অপদান

৩৬.আমি তখন গহীন বনে প্রবেশ করে বাঁশ কেটেছিলাম। সেই বাঁশ দিয়ে লাঠিতৈরি করে অনেকগুলো লাঠি সংঘকে দান করেছিলাম।

৩৭.তারপর প্রসন্নমনে সুব্রত সংঘকে অভিবাদন করেছিলাম। এবং ভর দেওয়ার লাঠি দান করে উত্তরমুখী হয়ে চলে গিয়েছিলাম।

৩৮.আজ থেকে চুরানব্বই কল্প আগে আমি যেই লাঠিদান করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার লাঠি দানেরই ফল।

৩৯.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

৪০.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

৪১.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানদণ্ডদায়ক স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন।

[দণ্ডদায়ক স্থবির অপদান ষষ্ঠ সমাপ্ত] [তেইশতম ভাণবার সমাপ্ত]

৭.গিরিনেলপূজকস্থবির অপদান

৪২.অতীতে আমি এক পশুশিকারী ছিলাম এবং গহীন অরন্যে বিচরণ করতাম। হঠাৎ একদিন আমি সর্ববিধ ধর্মে বিশেষ পারদর্শী বিরজ বুদ্ধকে দেখতে পেয়েছিলাম।

৪৩.সর্বসত্ত্বগণের হিতসাধনকারী সেই মহাকারুণিক বুদ্ধকে আমি প্রসন্নমনে নেলপুষ্প দিয়ে পূজা করেছিলাম।

৪৪.আজ থেকে একত্রিশ কল্প আগে আমি যেই পুষ্পপূজাকরেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার পুষ্প পূজা করারইফল।

৪৫.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

৪৬.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

৪৭.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানগিরিনেল পূজকস্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [গিরিনেলপূজকস্থবির অপদান সপ্তম সমাপ্ত]

৮.বোধিসম্মার্জক স্থবির অপদান

৪৮.অতীতে আমি বোধিকৃক্ষের পাতাচৈত্যঙ্গনে এসে ঝুলে পড়লে ঝুলে পড়া পাতার বর্ধিতাংশ কেটে দিয়েছিলাম।

৪৯.সেই কর্মের প্রভাবে আমি ভবসংসারে জন্মপরিভ্রমণকালে দেবলোক ও মনুষ্যলোক এই দুই লোকে জন্মগ্রহণ করেছিলাম।

৫০.দেবলোক হতে চ্যুত হয়ে মনুষ্যলোকে জন্মগ্রহণ করলেও আমি ক্ষত্রিয় ও ব্রাহ্মণ এই দুইকুলে জন্মগ্রহণ করেছিলাম।

৫১.আমি সব সময় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিপূর্ণ, দীর্ঘদেহী, অীভরূপ ও শুচি হতাম।

৫২.দেবলোকে অথবা মনুষ্যলোকে যেখানেই আমি জন্মগ্রহণ করতাম, সর্বত্র আমি উজ্জ্বল কনকতুল্য সুবর্ণবর্ণ হতাম।

৫৩.আমার দেহের চামরা সব সময় সৃদু, কোমল, স্নিগ্ধ, সূক্ষ্ণ ও সুকুমার হতো। ইহা আমার বোধিবৃক্ষের পাতার ঝুলেপড়া বর্ধিতাংশ কেটে দেওয়ারই ফল।

৫৪.এই বোধিপাতা কেটে দেওয়ার ফলস্বরূপ কী দেবলোকে, কী মনুষ্যলোকে- সর্বত্রই আমার শরীরে মলিনতা স্পর্শ করত না।

৫৫.এই বোধিপাতা কেটে দেওয়ার ফলস্বরূপ তীব্রগরম খরতাপেও আমার দেহ হতে ঘাম ঝরত না।

৫৬.এই বোধিপাতা কেটে দেওয়ার ফলস্বরূপ আমার শরীরে কখনও কুষ্ঠ, ফোঁসকা, খোঁচ-পাঁচড়া, আঁচিল, ফোঁড়াও দাউদ হতো না।

৫৭.এই বোধিপাতা কেটে দেওয়ার ফলস্বরূপ জন্মজন্মান্তরে অপর এই একগুণ এ লাভ হয়েছিল : আমার দেহে কোনো রোগ হয় না।

৫৮.এই বোধিপাতা কেটে দেওয়ার ফলস্বরূপ জন্মজন্মান্তরে অপর এই এক গুণ ও লাভ হয়েছিল : আমি কোন মনোকষ্ট অনুভব করতাম না।

৫৯.এই বোধিপাতা কেটে দেওয়ার ফলস্বরূপ জন্মজন্মান্তরে অপর এই এক গুণ ও লাভ হয়েছিল: শত্রু বলতে আমার কেউ থাকত না।

৬০.এই বোধিপাতা কেটে দেওয়ার ফলস্বরূপ জন্মজন্মান্তরে অপর এই এক গুণ ও লাভ হয়েছিল: আমার ভোগসম্পত্তির কোন অভাব থাকত না।

৬১.জন্মজন্মান্তরে অপর এই এক গুণও আমার লাভ হয়েছিল: অগ্নিভয়, রাজভয়, চোরভয়, ও জলভয় আমার ছিল না।

৬২.জন্মজন্মান্তরে অপর এই এক গুণও আমার লাভ হয়েছিল: আমার একান্ত দাসদাসী ও অনুসরবৃন্দ ছিল।

৬৩.মনুষ্যলোকে জন্মগ্রহণ করলে তখনকার মানুষের স্বাভাবিক গড় আয়ুর পুরোটাই বেঁচে থাকতাম। আমার কখনও অকাল মৃত্যু হত না।

৬৪.শ্রীবৃদ্ধিকামী, সুখাকাঙ্খী ভিতরের বাইরের গ্রাম-নিগমবাসী, কেউই আমার সমকক্ষ হতে পারত না।

৬৫.জন্মে জন্মে আমি ধনাঢ্য, যশস্বী, সুশ্রী, জ্ঞাতিপরিবেষ্ঠিত ও সম্পূর্ণ ভয়ভীতিহীন হতাম।

৬৬.আমার জন্মপরিভ্রমণের সময় আমাকে সব সময় দেবমনুষ্য, অসুর, যক্ষ, রাক্ষস, গন্ধর্ব-সবাই রক্ষা করত।

৬৭.দেবলোকে ও মনুষ্যলোকে উভয়লোকেযশ ভোগ করে অবশেষে আমি অনুত্তর নির্বাণ লাভ করেছি।

৬৮.সম্বুদ্ধকে উদ্দেশ্য করে সেই শাস্তারবোধিবৃক্ষকে সঠিক পরিচর্যা করে যেই ব্যক্তি পুণ্য প্রসব করে, তার কী-ই বা দুর্লভ হতে পারে!

৬৯.মার্গফলে, শাস্ত্রশিক্ষায় ও ধ্যান-অভিজ্ঞাগুণে অন্যদের চেয়ে বিশিষ্ট হয়ে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়েই নির্বাণ লাভ করেছি।

৭০.বহুকাল পূর্বে খুশীমনে বোধিবৃক্ষের পাতা কেটে দিয়ে আমিসব সময় এই বিশটি গুণের অধিকারী হয়েছি।

৭১.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

৭২.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

৭৩.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানবোদিসম্মার্জক স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [বোধিসম্মার্জক স্থবির অপদান অষ্টম সমাপ্ত]

৯.আমণ্ডফলদায়ক স্থবির অপদান

৭৪.সর্ববিধ ধর্মে বিশেষ পারদর্শী লোকনায়ক পদুমুত্তর জিন সমাধি হতে উঠে চংক্রমণ করছিলেন।

৭৫.আমি তখন লাঠিতে ভর করে ফল আনতে গিয়ে মহামুনিবিরজ বুদ্ধকে চংক্রমণ করতে দেখেছিলাম।

৭৬.তারপর আমি প্রসন্নমনে নতশিরে কৃতাঞ্জলি হয়ে সম্বুদ্ধকে অভিবাদন করে আমণ্ডফল দান করেছিলাম।

৭৭.আজ থেকে লক্ষ কল্প আগে আমি যেই আমণ্ডফল দান করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার আমণ্ডফল দানেরই ফল।

৭৮.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

৭৯.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

৮০.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানআমণ্ডফলদায়ক স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [আমণ্ডফলদায়ক স্থবির অপদান নবম সমাপ্ত]

১০.সুগন্ধস্থবির অপদান

৮১.এই ভদ্রকল্পে ব্রহ্মবন্ধু, মহাযশস্বী, বরশ্রেষ্ঠ কাশ্যপ বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছিলেন।

৮২-৮৪. তিনি ছিলেন অনুব্যঞ্জন সম্পন্ন, বত্রিশ মহাপুরুষলক্ষণ বিশিষ্ট, ব্যামপ্রভাসমন্বিত, মশ্মিজালে সমচ্ছন্ন, চাঁদের ন্যায় স্নিগ্ধ, সূর্যের ন্যায় প্রভাংকর, মহামেঘের ন্যায় অগ্নিনির্বাপক, সাগরের ন্যায় গুনধর, শীলে ধরণীসম, সমাধিতে হিমবাহতুল্য, প্রজ্ঞায় আকাশ সম, বায়ুর ন্যায় নির্লিপ্ত ও পরিষদে বিশারদ।

৮৫. পরিষদে বিশারদ সেই মহাবীর বুদ্ধ মহাজনতাকে উদ্ধারের মানসে চতুরার্যসত্য প্রকাশ করছিলেন।

৮৬.তখন আমি বারাণসীতে এক মহাযশস্বী শ্রেষ্ঠীপুত্র হয়ে জন্মেছিলাম। তখন আমার প্রভূত ধনধান্য ও ধনসম্পত্তি ছিল।

৮৭.একদিন আমি হাঁটতে হাটঁতে মৃগদায়েপৌঁছেছিলাম। তখন আমি বিরজ বুদ্ধকে অমৃতপদ নির্বাণ দেশনা করতে দেখতে পেয়েছিলাম।

৮৮.তিনি সুষ্পষ্টভাবে কোকিলের মতো মধুর স্বরে রাজহাঁসীয় নির্ঘোষে মহাজনতাকে ধর্ম জ্ঞাত করাচ্ছিলেন।

৮৯.সেই দেবাতিদেব বুদ্ধকে দেখে, তাঁর সুমধুর কথা শুনে, প্রভূত ভোগসম্পত্তি ত্যাগ করে আমি অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম।

৯০.এভাবে প্রব্রজ্যা গ্রহণের পর আমি অচিরেই বহুশ্রুত, ধর্মকথিক ও বিচিত্র প্রতিভাণের অধিকারী হয়েছিলাম।

৯১.আমি বিশাল পরিষদে হৃষ্টচিত্তে বার বার হেমবর্ণ বুদ্ধের গুণগান করেছিলাম। আমি ছিলাম বুদ্ধের গুণকীর্তনে অভিজ্ঞ।

৯২.ইনিই ক্ষীণাসব বুদ্ধ, দুঃখহীন, সংশয়মুক্ত, সর্ববিধকর্মের ক্ষয়সাধনকারী ও উপাধি ক্ষয়ে বিমুক্ত।

৯৩.ইনিই সেই ভগবান বুদ্ধ, ইনিই অনুত্তর সিংহ, যিনি সদেবলোকে ব্রহ্মচক্র তথা শ্রেষ্ঠচক্র প্রর্বতনকারী।

৯৪.ইনিদান্ত, দমনকারী, শান্ত, শান্তকারী নিবৃত, ঋষি, নির্বাপক, মুক্তিলাভী ও মহাজনতাকে উপশান্তকারী।

৯৫.সেই জিন বীর, নির্ভীক, ধীর, প্রজ্ঞাবান, কারুণিক, বশীপ্রাপ্ত, বিজয়ী, লজ্জী, নিরহংকারী ও আলয়হীন।

৯৬.নিশ্চল, অচল, ধৃতিমান, মোহহীন, অসদৃশ মুনি এবং গুরুদের মধ্যে নীতিবান, বৃষভ, নাগ, সিংহ ও শক্র।

৯৭.বিরাগ বিমল ব্রহ্মা, যুক্তিবাদী, সাহসী, যুদ্ধজয়ী, অখিল, শল্যহীন, অসদৃশ, সংযত ও শুচি।

৯৮.ব্রাহ্মণ, শ্রমণ, নাথ, চিকিৎসক, শল্যবিদ, যোদ্ধা শ্রুতাশ্রুত বুদ্ধ, অচল, মুদিতাপরায়ন ও অদ্যবসায়ী।

৯৯.ভগবান বুদ্ধ হচ্ছেন পরিতৃ,প্ত স্থিরপ্রতিজ্ঞ, শান্ত, কর্মঠ, নেতা, প্রকাশকারী, সম্প্রহৃষ্টকারী, ছেদনকারী, শ্রোতা ও প্রশংসাকারী।

১০০.ভগবান বুদ্ধহচ্ছেন অখিল, শল্যহীন, দুঃখহীন, নিঃসন্দেহ, বাসনামুক্ত, বিরজ, কৃতিমান, গন্ধী, বক্তা ও প্রশংসাকারী।

১০১.ভগবান বুদ্ধহচ্ছেন র্তীকারী, অর্থহীতকারী, নির্মাণকারী, সম্পাদক, পাপেরকর্তনকারী ও হত্যাকারী, উদ্যমশীল তাপস।

১০২.ভগবান বুদ্ধ হচ্ছেন সমচিত্ত, সমসমো, অসহায়, দয়ালয়, অচ্ছেরসত্ত্ব, অকুহো ও কতাবী এই সাতজন ঋষি।

১০৩.ভগবান বুদ্ধ হচ্ছেন সন্দেহোত্তীর্ণ, নিরহংকারী, অপ্রমেয়, অনুপম, সর্ববিধ বাক্যপথের অতীত ও নত্যনীবিদ জিন।

১০৪.সেই উত্তম শতরশ্মি বুদ্ধের প্রতি উৎপন্ন প্রসাদ অমৃতবাহী। অতএব বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের প্রতি শ্রদ্ধবান ব্যক্তিরা মহাহিত সাধন করে থাকেন।

১০৫.এভাবে আমি পরিষদের মাঝে ত্রিলোকের শ্রেষ্ঠ শরণ বুদ্ধের গুণগান করতে করতে ধর্মকথা বলেছিলাম।

১০৬.সেখান থেকে চ্যুত হয়ে তুষিত স্বর্গেহাসুখম ভোগ করেছিলাম এবং তার পর আবার সেখান থেকে চ্যুত হয়ে মানুষ হয়েজন্মেছিলাম। তখন আমার দেহ ও মুখ থেকে সুগন্ধ বের হতো।

১০৭.মুখেরগন্ধ, নিশ্বাস, দেহগন্ধ, ঘামেরগন্ধ- আমার সবকিছুই সুগন্ধীযুক্ত হয়েছিল।

১০৮.আমার মুখ থেকেসব সময় পদ্ম, উৎপল ও চম্পক ফুলের গন্ধ বের হতো; এমনকি আমার শরীর থেকেও তেমন গন্ধ বের হতো।

১০৯.এভাবে বুদ্ধের গুণগান করার কারণে অতি আশ্চর্যরকম পরম ফল আমি পেয়েছি। তোমরা সবাই আমার সেই গুণগান করার ফলের কথা একাগ্রমনে শ্রবণ কর।

১১০.বুদ্ধের গুণগান করার পর হিত-সুখে আমার মত কেউ ছিল না। আমি সর্বত্রই বীরোচিত সংঘসমন্বিত হয়ে সুখী হতাম।

১১১.অনুরূপভাবে আমি যশস্বী, সুখী, প্রিয়, জ্যোতিমান, প্রিয়দর্শন, বক্তা, নির্দোষ ও প্রজ্ঞাবান হয়েছিলাম।

১১২.বুদ্ধভক্তির কারণে আমার পক্ষে নির্বাণ লাভ যে সহজতর হয়েছে এখন আমি তোমাদের নিকট তার কারণ সম্বন্ধে যথাযথা ব্যাখ্যা করব।

১১৩.আমি শান্তশিষ্ট, যশস্বী ভগবানকে যথানিয়মে অভিবাদন করেছিলাম। তার ফলে আমি জন্মে জন্মে যশস্বী হয়েছিলাম।

১১৪.দুঃখের অন্তসাধনকারী বুদ্ধ ও শান্ত, অসংস্কৃত ধর্মের গুণগান করা আমার পক্ষে পরম সুখকর। অন্য সত্ত্বগণের কাছে ছিল ততোধিক সুখকর।

১১৫.বুদ্ধপ্রীতিসমন্বিত হয়ে বুদ্ধের গুণগান করে আমি নিজের ও পরের ক্ষান্তি উৎপন্ন করেছিলাম।

১১৬.তৈর্থিক-পরিবেষ্ঠিত সেই জিন দুষ্ট তীর্থিয়দের পরাভূতকরেছিলেন। আমি বুদ্ধের গুণকীর্তন করেছিলাম আর নায়ক বুদ্ধ আরো জ্যোতির্ময় হয়েছিলেন।

১১৭.জনসাধারণের অত্যন্ত প্রিয়কর সম্বুদ্ধের গুণগান করে আমিশরতের আকাশে স্নিগ্ধ চাঁদের ন্যায় প্রিয়দর্শন হয়েছিলাম।

১১৮.আমি যথাশক্তি সকল প্রকারে সুগতের ভূয়শী প্রশংসা করেছিলাম। তার ফলে আমি বিচিত্র প্রতিভাণী বাক্যবাগীশ হয়েছিলাম।

১১৯.যে মূর্খরা মহামুনির সম্বন্ধে ভীষণভাবে সন্দেহবাতিকগ্রস্ত, আমি তাদের সদ্ধর্ম ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে নিগ্রহ তথা তিরস্কার করতাম।

১২০.আমি বুদ্ধগুণের কথা বলে বলে সত্ত্বগণের ক্লেশ অপনোদন করতাম। তার ফলস্বরূপ আমি ক্লেশমুক্ত মনের অধিকারী হতাম।

১২১.আমি বুদ্ধানুস্মৃতি তথা বুদ্ধের গুণ ব্যাখাকরে শ্রোতাদের ভক্তি উৎপাদন করেছিলাম। সেই কর্মের ফলে আমি প্রজ্ঞাবান ও নিপুণার্থ বিদর্শক হয়েছিলাম।

১২২.আমি সর্বাসব ক্ষয় করে ও সংসার সার সাগর পাড়ি দিয়ে আমিও সম্পূর্ণ অনাসক্ত শিখী বুদ্ধের ন্যায় পরম নিবৃতি লাভ করব।

১২৩.এই ভদ্রকল্পে আমি জিনকে যেই ভূয়শী প্রশংসা করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার বুদ্ধের গুণকীর্তন করারই ফল।

১২৪.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

১২৫.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

১২৬.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মান সুগন্ধস্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [সুগন্ধস্থবির অপদান দশম সমাপ্ত]

[তৃণদায়ক বর্গ তেপ্পান্নতম সমাপ্ত]

স্মারক-গাথা

তৃণমুষ্টি, মঞ্চদায়ক, শরণগমনীয় ও অব্‌ভঞ্জন, সুপটদায়ক, দণ্ডদায়ক, গিরিনেলপূজক, বোধিসম্মার্জকদ আমণ্ডফল ও সুগন্ধস্থবির এই দশে মিলে

মোট একশত ছাব্বিশ গাথায় এই বর্গ সমাপ্ত।