১.যশবতী প্রমুখা আঠার হাজারভিক্ষুণীঅপদান
১.আমাদের সমস্ত ভব পরিক্ষীণ হয়েছে। আমাদের জন্মসকল বিমোহিত হয়েছে। আমাদের আর কোনো আসব নেই। হে মহামুনি, আমরাই আপনাকে অবগত করছি।
২.হে মহামুনি, পূর্বে আমরা যা কিছু কুশল কর্ম করেছিলাম ংএবপরিভোগ্য জিনিস দান দিয়েছিলাম, তা একমাত্র আপনারই জন্য।
৩.হে মহামুনি আমরা বুদ্ধ, পচ্চেবুদ্ধ ওশ্রাবকদের পরিভোগ্য জিনিস দান করেছিলাম, আর তা একমাত্র আপনার জন্যেই।
৪.হে মহামুনি, ভিক্ষুদের উচ্চনীচময় নানা কাজকর্ম ও উচ্চকুলীয় নানাবিধ কর্ম আমরা করেছিলাম।
৫. সেই পূর্বকৃত ুশলক কর্মের প্রভবে আমরা সাধারণ মানবীয় সবকিছূ অতিক্রম করে ক্ষত্রিয় কুলেজন্মেছিলাম।
৬.এই শেষ জন্মেও আমরা একত্রে কর্ম করার দরুন ক্ষত্রিয় কুলে একত্রে জন্মগ্রহণ করেছি।
৭.হে মহাবীর, আমরা রূপবতী, ভোগবতী ও লাভ-সৎকারে পূজিতা হয়ে অন্তপুরে দেবনন্দনতুল্য হয়েছি।
৮.গৃহের প্রতি অনাসক্ত হয়ে আমরা অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছি। কিছুদিন গত হওয়ারপরই আমরা সবাই নির্বাণ লাভ করেছি।
৯.বহুমানুষ আমাদের চীবর, পিণ্ডপাত, শয্যাসন ও ওষুধপথ্য দান করে থাকে। আমরা সব সময় তাদের দ্বারা পূজিত হয়েছি।
১০.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
১১.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
১২.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই যশবতী প্রমুখা আঠারাহাজার ক্ষত্রিয় কন্যা ভিক্ষুণীভগবানের সামনে এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন।
[যশবতী প্রমুখা আঠার হাজারভিক্ষুণীঅপদান প্রথম সমাপ্ত]
২.চুরাশি হাজারভিক্ষুণীঅপদান
১৩.হে মহামুনি, আপনার শাসনে ব্রাহ্মণ কুলে জন্ম নেওয়া সুকোমল হস্ত-পদসম্পন্না চুরাশি হাজার কন্যা আছে।
১৪.হে মহামুনি, আপনার শাসনে বৈশ্য-শূদ্র কুলে জন্ম নেওয়া কন্যা, দেবতা, নাগ ও কিন্নর-চারি দ্বীপের বহুকন্যা আছে।
১৫.তন্মধ্যে কিছু আছে যারা সর্বদশী বুদ্ধের কাছে প্রব্রজ্জিত হয়েছেন। আর দেবতা, কিন্নর ও নাগেরা ভবিষ্যতে নির্বাণ লাভ করবে।
১৬.তারা সর্ববিধ যশকীর্তি ও ভোগসম্পত্তি ভোগ করে আপনার প্রতি শ্রদ্ধান্বিত হওয়ার ফলে ভবিষ্যতে নির্বাণ উপলদ্ধি করবে।
১৭.হে মহাবীর, আমরা ব্রাহ্মণ কুলে জন্ম নেওয়া ব্রাহ্মণকন্যা। চক্ষুষ্মান, আমরা আপনার পায়ে বন্দনা নিবেদন করছি।
১৮.আমাদের সমস্ত ভব ক্ষয় হয়েছে। দুঃখের মূল তৃষ্ণা ধ্বংস হয়েছে। , অনুশয়গুলো সমুচ্ছিন্ন হয়েছে এবংপুণ্যসংস্কার ক্ষয় হয়েছে।
১৯.আমরা সবাই সমাধি গোচরা ও সমাপত্তিলাভী। আমরা সব সময় ধ্যান ও ধর্মরতিতে অবস্থান করব।
২০.আমরা ভবনেত্রি তৃষ্ণা, অবিদ্যা ও সংস্কার ক্ষয় করেছি। হে নায়ক, অনুমতি দিন, আমরা সুর্দদশনির্বাণে গমন করব।
২১.ভগবান বললেন, তোমরা আমার বহু অপকারিনী, দীর্ঘদিন শীল-সমাধি অনুশীলন করেছ। সকলের সংশয় দূর করেই তোমরা সবাইনির্বাণে গমন কর।
২২.অতঃপর তারা মুনিশ্রেষ্ঠ বুদ্ধের পায়ে বন্দনা করে নানা প্রকার অলৌকিক ঋদ্ধি দেখাতে লাগলেন। কেউ আলো, কেউ অন্ধকার দেখালেন।
২৩.তারা চন্দ্র, সূর্য, সাগর, সিনেরূপর্বত, নানান জিনিসপত্র ও পারিজাতপুষ্প দেখালেন।
২৪.তাদের কেউ কেউ ঋদ্ধিযোগে তাবতিংস যাম, তুষিত, নির্মাণরতি ও পরনির্মিত বশবতী দেবলোকে মহশ্বর দেবতাদের দেখালেন।
২৫.কেউ কেউ ব্রহ্মাও তাদের মহার্ঘ চংক্রমণশালা দেখালেন। কেউ কেউ ব্রহ্মবর্ণ ধারণ করে শূন্যে বসে ধর্মদেশনা করলেন।
২৬.তারা নানা প্রকারে শাস্তাকে ঋদ্ধি দেখালেন, নিজেদের সমস্ত শক্তি প্রদর্শন করলেন। শেষে শাস্তার পায়ে বন্দনা নিবেদন করলেন।
২৭-২৮. হে মহামুনি, আমরা বিবিধ ঋদ্ধি, দিব্যশ্রোত্র, পরচিত্তবিজাননজ্ঞান ও পূর্বনিবাসানুস্মৃতিজ্ঞান লাভ করেছি। আমাদের দিব্যচক্ষু অত্যন্ত বিশুদ্ধ। আমাদের সর্বাসব পরিক্ষীণ হয়েছে। এখন আর আমাদের পুনর্জন্ম নেই।
২৯.হে মহাবীর, আপনার কাছে এসে আমাদের অথর্, ধর্ম, নিরুক্তি ও প্রতিভাণ এই চারিপ্রতিসম্বিদায় জ্ঞান উৎপন্ন হয়েছে।
৩০.আপনার সাথে যে আমাদের দেখাসাক্ষাৎ হবে তার পূর্বপূর্ব লোকনাথ বুদ্ধগণ বলে দিয়েছিলেন। হে মহামণি, একমাত্র আপনার জন্যেই আমরা বহু পুণ্যকর্ম করেছি।
৩১.হে মুনি, আমাদের কতৃ কুশলকর্ম স্মরণ করুন। হে মহাবীর, একমাত্র আপনার জন্যেই আমরা পুণ্যসঞ্চয় করেছি।
৩২.আজ থেকে লক্ষ কল্প আগে পদুমুত্তর মহামুনি উৎপন্ন হয়েছিলেন। সম্বুদ্ধের কুলাবাস ছিল হংসবতি নগরে।
৩৩.হংসবতি নগরদ্বারের সামনে দিয়ে এক নদী সদা প্রবাহিত হতো। সেই নদীটির পার পর্যন্ত পানিতে পূর্ন থাকায় ভিক্ষুরা পরপারে যেতে পারছিলনা।
৩৪.একদিন গেল, দুদিন, তিনদিন গেল, তারপর সপ্তাহ, মাস, এমনকি চারমাস পরও নদীটি পানিতে পূর্ণ থাকায় তারা পরপারে যেতে পারছিল না।
৩৫.তখন সেখানে সত্তসার নামক এক জটিল বসবাস করত। ভিক্ষুগণ নদীটি পার হয়ে পরপারে যেতে পারছেন না দেখে তিনি সেখানে একটি সেতু নিমার্ণ করে দিয়েছিলেন।
৩৬.প্রায় লক্ষ টাকা ব্যয় করে তিনি সেই সেতুটি নির্মাণ করেছিলেন। তারপর পরপারে সংঘের উদ্দেশে একটি বিহার নিমার্ণ করিয়েছিলেন।
৩৭.তার সেতু ও বিহার নির্মাণকালে বহু স্ত্রী-পুরুষ ও উচ্চ-নীচকুলগুলো তাকে সাহায্য করেছিল।
৩৮.সেই নগর ও জনপদের আমরাসহ অন্য লোকেরা যারা বিপ্রসন্নমনে সেতুও বিহার নির্মাণে সাহায্য করেছিল তারা সবাই তার ধর্মের উত্তরাধিকারী হয়েছিল।
৩৯.বহু স্ত্রী-পুরুষ, বালক-বালিকা সবাই সেতু ও বিহারের জন্যে বালি ছিটিয়েছিল।
৪০.তারা রাস্তা ঝাঁট দিয়ে, কলাগাছ ও পূর্ণঘটে ধ্বজা টাঙিয়ে, ধূপ, চূর্ণ ও মালা তৈরি করে শাস্তার উদ্দেশে নিবেদন করেছিল।
৪১.তারপর আমরা সবাই সেতু ও বিহার নির্মাণ করে, বিনায়ক বুদ্ধকে নিমন্ত্রণ করে, মহাদান দিয়ে পরম সম্বোধি প্রার্থনা করেছিলাম।
৪২.তারপর সকল প্রাণির উদ্ধারকারী, মহামুনি, মহাবীর পদুমুত্তর বুদ্ধ জটিলের প্রার্থনা অনুমোদন করেছিলেন।
৪৩.আজ থেকে লক্ষ কল্প পরে ভদ্রকল্পে সে জন্ম নেবে। ভবভবান্তরে বহু সুখসম্পত্তি ভোগ করে বোধিজ্ঞান লাভ করবে।
৪৪.পুণ্যকর্মে অংশগ্রহণকারী সবাই দীর্ঘকাল পরে ভবিষ্যতে একত্রে একইসময়ে জন্ম নেবে।
৪৫.সেই কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে তোমাদের জন্যে এক দেবভবন উৎপন্ন হবে। সেই দেবভবনে তারা সবাই আপনার পরিচারিকা ছিল।
৪৬.অসংখ্যদিবসুখ ও মনুষ্যসুখ ভোগ করে ভবভবান্তরে বিচরণকালে আমরা সবাই আপনারই সেবা-পরিচর্যা করেছিলাম।
৪৭.অহো, আজ থেকে লক্ষকল্প আগে আমরা সুকর্ম সম্পাদন করেছিলাম! তার ফলে আমরা জন্মজন্মান্তরে মনুষ্য ও দেবলোকে সুখুমালয় হজেন্মেছিলাম।
৪৮.সেই সুকৃত কর্মের ফলে আমরা সবাই সর্বত্র ও সব সময় রূপ, ভোগ, যশ, কীর্তি, ও সৎকার লাভ করেছিলাম।
৪৯.এই শেষ জন্মে আমরা সবাই ব্রাহ্মণ কুলে জন্মেছি। শাক্যপুত্রের নিবাসে আমরা সবাই সুকোমল হস্ত-পদসম্পন্না হয়েছি।
৫০.হে মহামুনি, আমরা সব সময় অনলংকৃত ও অসজ্জিত পৃথিবীর দেখা পাই ।নাআমরা কখনো উঁচু-নিচু, গর্তযুক্ত, কর্দমাক্ত, দুর্গন্ধযুক্ত ভূমি দেখতে পাই না।
৫১.আমরা গৃহে থাকাকালীন ও সদা সর্বদা আমাদের সৎকার-সম্মান করা হতো। ইহা আমাদের পূর্বকৃত কর্মেরই ফল।
৫২.গৃহত্যাগ করে আমরা অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছি। এখন আমরা সংসারসাগর পাড়ি দিয়ে সম্পূর্ণ বীতরাগ হয়েছি।
৫৩.লোকজন আমাদের সব সময় হাজারো চীবর, পিণ্ডপাত, শয্যাসন ও ওষুধপথ্য দান করে থাকে।
৫৪.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
৫৫.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
৫৬.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই চুরাশি হাজার ব্রাহ্মণকন্যাভিক্ষুণী ভগবানের সামনে এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন।
[চুরাশিহাজার ভিক্ষুণীঅপদান দ্বিতীয় সমাপ্ত]
৩.উৎপলদায়িকা থেরী অপদান
৫৭.অরুণবতী নগরে অরুণ নামে এক ক্ষত্রিয় ছিলেন। আমি ছিলাম তার ভার্যা। আমরা উভয়ে একত্রে বিচরণ করছিলাম।
৫৮.একসময় নির্জনে বসে থাকার সময় আমি এরূপ চিন্তা করেছিলাম: ‘আমি এমন কোনো কুশল কর্ম করিনি, যা মৃত্যুর পর সঙ্গে নিয়ে যেতে পারি।’
৫৯.আমি যে মৃত্যুর রপমহাজ্বালাময়, নিদারুণ, ঘোর দুঃখপূর্ণ নিরয়ে যাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
৬০.এভাবে চিন্তা করার পর আমি আমার মনকে প্রফুল্ল করে রাজার কাছে গিয়ে এই কথা নিবেদন করেছিলাম।
৬১.প্রভু, আমরা হচ্ছি স্ত্রীজাতি। আমাদের অবশ্যই পুরুষের অনুগত হয়ে চলতে হয়। হে ক্ষত্রিয়, আমাকে একজন শ্রমণ দেন। আমি তাঁেক ভোজন করাব।
৬২.রাজা আমাকে একজন ভাবিতেন্দ্রিয় শ্রমণ দিলেন। আমি তাঁর পাত্রটি নিয়ে তাতে উত্তম অন্ন দিয়ে পূর্ণ করেদিলাম।
৬৩.উত্তম অন্ন পূর্ণ করে দিয়ে, তাতে সুগন্ধি মেখে দিয়ে, বিশাল কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়ে আমি অতীব তুষ্ট মনে দান করেছিলাম।
৬৪.সেই সুকৃতকর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মেছিলাম।
৬৫.আমি হাজার বার হাজারো দেবরাজের মহেষী হয়েছিলাম এবং হাজারবার হাজারো চক্রবর্তী রাজার মচিষী হয়েছিলাম।
৬৬.আর প্রাদেসিক রাজার মহেষী তো আমি অসংখ্যবার হয়েছিলাম। পূর্বকৃত কর্মের ফলে আমি অন্য আরও অনেক কিছু ভোগ করেছিলাম।
৬৭.আমি উৎপলবর্ণের ন্যায় অভিরূপা সুর্দশনা, সর্বাঙ্গ পরিপূর্ণা, অভজাতা ও জ্যোতিময়ী স্ত্রীলোক হয়েছিলাম।
৬৮.এই শেষ জন্মে আমি শাক্যকুলে জন্মেছি। শুদ্ধোধন রাজার হাজারো নারী মধ্যে আমিই প্রমুখা ও শ্রেষ্ঠা ছিলাম।
৬৯.গৃহের প্রতি নির্বেদপ্রাপ্ত হয়ে আমি অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছি। প্রব্রজ্যা গ্রহণের পর সপ্তম দিনের রাতে আমি চতুর্সত্যজ্ঞান লাভ করেছি।
৭০.এ যাবৎ আমি যে পরিমাণ চীবর, পিণ্ডপাত শয্যাশন, ওষুধপথ্য পেয়েছি, তা পরিমাণ করা সমব্ভ নয়। ইহা আমার পিণ্ডপাত দানেরই ফল।
৭১.হে মুনি, আমি কুশল-পুণ্যকর্ম সঞ্চয় করেছি তা স্মরণ করুন। হে মহাবীর, একমাত্র আপনার জন্যেই আমি বহুপুণ্যসঞ্চয় করেছি।
৭২.আজ থেকে একত্রিশ কল্প আগে আমি যেই দান করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার পিণ্ডপাত দানেরই ফল।
৭৩.দেবত্ব ও মনুষ্যত্ব এই দুইজাতিই মাত্র আমি জানি। আমার অন্য গতি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। ইহ আমার পিণ্ডপাত দানেরই ফল।
৭৪.আমি সব সময় উচ্চকুলে, মহাধনী, মহাশাল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। অন্য কোনো কুলে জন্মেছি বলে আমার জানা নেই। ইহা আমার পিণ্ডপাত দানেরই ফলে।
৭৫.পূর্বকৃতপুণ্যপ্রভাবে আমি ভবভবান্তরে বিচরণ করেও কোনো অমনোপুত দৃশ দেখতে পাইনি। ইহা আমার আনন্দিত মনে দানেরই ফল।
৭৬-৭৭. আমি বিবিধ ঋদ্ধি, দিব্যশ্রোত্র, পরচিত্তবিজাননজ্ঞান ও পূর্বনিবাসানুস্মৃতি জ্ঞান লাভ করেছি। আমার দিব্যচক্ষু অত্যন্ত বিশুদ্ধ। আমার সর্বাসব পরিক্ষীণ হয়েছে। আমার আর কোনো পুনর্জন্ম নেই।
৭৮.হে মহাবীর, আপনার কাছে এসেই অথর্, ধর্ম, নিরুক্তি ও প্রতিভাণ এই চারি প্রতিসমিদায়্ভ আমার জ্ঞান উৎপন্ন হয়েছে।
৭৯.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
৮০.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
৮২.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি। ঠিক এভাবেই উৎপলদায়িকা ভিক্ষুণী ভগবানের সামনে এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন।
[উৎপলদায়িকা থেরী অপদান তৃতীয়সমাপ্ত]
৪.সিঙ্গালমাতা থেরী অপদান
৮২.আজথেকে লক্ষ কল্প আগে সর্ববিধ ধর্মে বিশেষ পারদর্শী নায়ক পদুমুত্তর জিন উৎপন্ন হয়েছিলেন।
৮৩.তখন আমি হংসবতী নগরে নানাবিধ রত্নসমন্বিত, সমৃদ্ধ ও ধনাঢ্য এক অমাত্য পরিবারে জন্মেছিলাম।
৮৪.পিতার সাথে ধর্মসভায় গিয়ে মহাজনতা সামনে বুদ্ধের ধর্মকথা শুনে আমি অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম।
৮৫.প্রব্রজ্যা গ্রহণের পর আমি কায়িক পাপকর্ম বর্জন করেছিলাম। সেই সাথে বাচনিক দুশ্চরিত বর্জন করে জীবিকা পরিশুদ্ধ করেছিলাম।
৮৬.তখন আমি বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের প্রতি প্রসন্না, তীব্র গারবী, সদ্ধর্মশ্রবণে নিয়োজিতা ও বুদ্ধদর্শনাকাঙ্ক্ষী।
৮৭.একদিন বুদ্ধ একভিক্ষুণীকে শ্রদ্ধাবিমুক্তদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলছেন শুনে আমি সেই শ্রেষ্ঠপদ প্রার্থনা করে শীল-সমাধি-প্রজ্ঞা এই ত্রিবিধ শিক্ষা পূরণ করেছিলাম।
৮৮-৮৯. তখন করুণাঘন সুগত আমাকে বললেন, তথাগতের প্রতি যার শ্রদ্ধা অচলা ও সুপ্রতিষ্ঠিত; যার শীল কল্যাণকর, আর্যকান্ত ও প্রশংসিত এবং সংঘের প্রতি যার ঋজুভূত নির্মর প্রসন্নতা আছে, আর যা-ই হোক তাকে অন্তত দরিদ্র বলা যায় না। তার জীবন পুরোপুরি সার্থক।
৯০.তাই মেধাবী ব্যক্তিরা বুদ্ধানুশাসন স্মরণ করে শ্রদ্ধা, প্রসাদকর ধর্মদর্শনে নিয়েজিত হও।
৯১.তা শুনে আমি ভীষণ রকম আনন্দিত হয়েছিলাম এবং আমার প্রার্থনা বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তার উত্তরে বিনায়ক বুদ্ধ বলেছিলেন, তুমি বুদ্ধের প্রতি প্রসন্না, কল্যাণযুক্তা তোমার প্রার্থনা পূরণ হবে।
৯২.আজ থেকে লক্ষ কল্প পরে ওক্কাকুকুলে গৌতম নামক শাস্তা পৃথিবীতে উৎপন্ন হবেন।
৯৩.তাঁর ধর্মে তুমি ধর্মৌরসজাত উত্তরাধিকারী সিঙ্গালকের মাতা নামে শাস্তাশ্রাবিকা হবে।
৯৪.তা শুনে আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। তারপর থেকে আমি মৈত্রীচিত্তে আজীবন নায়ক জিনকে প্রতিপত্তিধর্মের মাধ্যমে সেবা-পরিচর্যা করেছিলাম।
৯৫.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মেছিলাম।
৯৬.এই শেষ জন্মে আমি রাজগৃহের এক সমান্ত্ভ্র মহাধনাঢ্য শ্রেষ্ঠীকুলে জন্মেছি।
৯৭.আমার পুত্র সিঙ্গালক মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্নহয়ে মিথ্যাপথে গিয়ে ষড়দিক পূজায় নিয়োজিত হয়েছিল।
৯৮.একদিন আমার পুত্র সিঙ্গালক এক এক করে ষড়দিক নমস্কার করছিল। এমন সময় বিনায়ক বুদ্ধ নগরে পিণ্ডচারণের জন্যে বের হন।
৯৯.তাকে ধর্শ দেশনা করার দুই কোটি নরনারীর র্ধম জ্ঞান উৎপন্ন হয়েছিল।
১০০.তখন আমি সেই পরিষদে গিয়ে সুগতের ধর্মকথা শুনে স্রোতাপত্তিফল লাভ করেছিলাম এবং অনাগরিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম।
১০১.মুহূতের মধ্যেই আমার পূর্বপ্রথিত বুদ্ধদর্শনেচ্ছার কথা মনে পড়েছল। সেটি ভাবনা করেই আমি সঙ্গে সঙ্গে অর্হত্ত্ব লাভ করেছিলাম।
১০২.আমি সব সময় বুদ্ধকে দেখার জন্যে যেতাম। বুদ্ধের দৃষ্টিনন্দন রূপলাবন্য দেখে দেখে আমার কখনো তৃপ্তি হতো না।
১০৩.আমি সর্ববিধ পারমী সমন্বিত সুন্দর চক্ষুবিশিষ্ট, অনিন্দ্যসুন্দর রূপলাবন্যময় বুদ্ধকে এতকরে দেখা সত্ত্বেও অতৃপ্তি নিয়ে সববাস করে থাকি।
১০৪.আমার এই গুণে তুষ্ট হয়ে বুদ্ধ আমাকে এই বলে শ্রেষ্ঠপদে বসালেন, শ্রদ্ধাবিমুক্তাদের মধ্যে সিঙ্গালকের মাতাই শ্রেষ্ঠ।
১০৫-১০৬. আমি বিবিধ ঋদ্ধি, দিব্যশ্রোত্র, পরচিত্তবিজাননজ্ঞান ও পূর্বনিবাসানুস্মৃতিজ্ঞান লাভ করেছি। আমার দিব্যচক্ষু অত্যন্ত বিশুদ্ধ। আমার সর্ববিধ আসব পরিক্ষীণ হয়েছে। এখন আর আমার পুর্নজননেই।্ম
১০৭.হে মহাবীর, আপনার কাছে এসে অথর্, ধর্ম, নিরুক্তি, প্রতিভাণ এই চারি প্রতিসমিদায়্ভ আমার জ্ঞান উৎপন্ন হয়েছে।
১০৮.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
১০৯.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
১১০.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই সিঙ্গালমাতা ভিক্ষুণী এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন।
[সিঙ্গালমাতা থেরী অপদান চতুথসমাপ্তর্]
৫.সুক্কা থেরীঅপদান
১১১.আজ থেকে একানব্বই কল্প আগে সর্ববিধ ধর্মে বিদর্শক, নায়ক, চারুদর্শন বিপশ্বী ভগবান উৎপন্ন হয়েছিলেন।
১১২.তখন আমি বন্ধুমতি নগরে অন্যতর এক পরিবারে জন্ম নিয়েছিলাম। একদিন আমি মহামুনির ধর্মদেশনাকুনে অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম।
১১৩.তখন আমি ছিলাম বহুশ্রুতা, ধর্মধরা, প্রতিভাণবতী, বিচিত্রকথিকা ও বুদ্ধের উপদেশ পালনকারিনী।
১১৪.তখন আমি বহুজনতার হিত, সুখ, মঙ্গলের জন্যে ধর্মকথা বলেছিলাম। সেখান থেকে চ্যুত হয়ে আমি তুষিত স্বর্গে যশস্বিনী হয়েছিলাম।
১১৫.আজ থেকে একত্রিশ কল্প আগে দেদীপ্যমান শিখী জিন মহান যশস্বী হয়ে পৃথিবীতে উৎপন্ন হয়েছিলেন।
১১৬.তখনো আমি বুদ্ধের শাসনে প্রব্রজ্যা নিয়ে বুদ্ধশাসনে অভিজ্ঞ হয়েছিলাম। এবং মানুষের কাছে জিনোপদেশগুলো প্রকটিত করে তখনো আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মেছিলাম।
১১৭.আজ থেকে একত্রিশ কল্প আগে পৃথিবীতে মহাজ্ঞানী বেস্সভূ ভগবান উৎপন্ন হয়েছিলেন। তখনো সেভাবেই আমি জন্ম নিয়েছিলাম।
১১৮.তখনো আমি শাসনে প্রব্রজ্যা নিয়ে জিনশাসনকে আলোকিত করেছিলাম এবং রমনীয় দেবপুরীতে গিয়ে মহাসুখ ভোগ করেছিলাম।
১১৯.এই ভদ্রকল্পে নরশরণ জিনোত্তম ককুসন্ধবুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছিলেন। তখনো আমি সেভাবেই জন্মেছিলাম।
১২০.তাঁর শাসনে প্রব্রজ্যা নিয়ে আমি যথা আয়ুস্কাল শাসনকে আলোকিত করে নিজ ঘরে ফিরে যাবারন্যায় তাবতিংস স্বর্গে জন্মেছিলাম।
১২১.এই ভদ্রকল্পেই লোকশরণ, অরণ, অমৃতদায়ক, নায়ক কোণাগমন বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছিলেন।
১২২.তখনো আমি তাঁর শাসনে প্রব্রজ্যা নিয়ে বহুশ্রুতা, ধর্মধরা হয়ে জিনশাসনকে উজ্জ্বল করেছিলাম।
১২৩.এই ভদ্রকল্পেই লোকশরণ, অরণ, মন্ত্রধর, মুনিশ্রেষ্ঠ কাশ্যপ ভগবান উৎপন্ন হয়েছিলেন।
১২৪-১২৫. সেই নরবীর বুদ্ধের শাসনে প্রব্রজ্যা নিয়ে আমি সদ্ধর্মে পারদর্শী, প্রশ্নবিশারদ সুশীলা, লজ্জী ও ত্রিবিধ শিক্ষায় অভিজ্ঞ হয়ে আজীবন বহু ধর্মকথা বলেছিলাম।
১২৬.সেই কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস স্বর্গে জন্মেছিলাম।
১২৭.এই শেষ জন্মে আমি রাজগৃহে বহু নত্নের মালিক এক সমন্ত্ভ্র শ্রেষ্ঠী পরিবারে জন্মেছি।
১২৮.হাজারো ভিক্ষু পরিবৃত লোকনায়ক বুদ্ধ যখন রাজগৃহে প্রবেশ করছিলে তখন দেবরাজ শত্রু এই বলে তার ভূয়শী প্রশংসা করছিলেন:
১২৯.ভগবান বুদ্ধ নিজে দান্ত হয়ে পূর্বজটিল দান্তদের সঙ্গে ও নিজে বিপ্রমুক্ত হয়ে বিপ্রমুক্তদের সঙ্গে সুবর্ণেরমতো উজ্জ্বল রূপ ধারণ করে রাজগৃহে প্রবেশ করছেন।
১৩০.এমন বুদ্ধানুভব তথা প্রভাব দেখে ওতাঁর গুণের কথা শুনে আমি প্রসন্নমনে শক্তি প্রমাণে তাঁকে প্রজা করেছি।
১৩১.পরবর্তীকালে আমি মহামতি ধর্মদিন্না ভিক্ষুণীর কাছে গিয়ে গৃহত্যাগ করেঅনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছি।
১৩২.ক্লেশ ছেদনের সময়েই আমি সমস্ত ক্লেশকে দগ্ধ করেছি। প্রব্রজ্যা নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই আমি সমস্ত বুদ্ধের শিক্ষাগুলোশিখেছি।
১৩৩.তার পর একদিন আমি মহাজনসমবেশে ধর্ম দেশনা করেছি এবং আমার ধর্মদেশনা শুনে উপস্থিত শ্রোতৃমণ্ডলীর ধর্মজ্ঞান হয়েছে।
১৩৪.বহু হাজার জনতার ধর্মজ্ঞান লাভ করার ঘটনা দেখে বিস্মিত হয়ে এক যক্ষ সমগ্র রাজগৃহ ঘুরে আমার প্রতি প্রসন্ন হয়েছিল।
১৩৫.আমি রজগৃহের মানুষদের কী এমন করেছি অথবা কী এমন মধু পান করিয়েছি, যে তারা অমৃতপদ নির্বাণ দেশনারতা সক্কাকে সেবা-সম্মান করবে না ?
১৩৬.তা এমন বিশুদ্ধ, খাটি ও মধুর ছিল যে তারা সচেতনভাবেই ধর্মবারি পান করছিল।
১৩৭-১৩৮. আমি বিবিধ ঋদ্ধি, দিব্যশ্রোত্র, পরচিত্তবিজাননজ্ঞান ও পূর্বনিবাসানুস্মৃতিজ্ঞান লাভ করেছি। আমার দিব্যচক্ষু অত্যন্ত বিশুদ্ধ। আমার সর্বাসব পরিক্ষীণ হয়েছে। এখন আর আমার কোনো পুনর্জননেই।্ম
১৩৯.হে মহাবীর, আপনার কাছে এসে অথর্, ধর্ম নিরুক্তি ও প্রতিভাণ এই চারিপ্রতিসমিদায়্ভ আমার জ্ঞান উৎপন্ন হয়েছে।
১৪০.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
১৪১.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
১৪২.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই সুক্কাভিক্ষুণীএই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [সুক্কা থেরীঅপদান পঞ্চম সমাপ্ত]
[পঞ্চম ভাণবার সমাপ্ত]
৬.অভিরূপানন্দা থেরী অপদান
১৪৩.আজ থেকে একানব্বই কল্প আগে সর্ববিধ ধর্মে চক্ষুষ্মান, চারুদর্শন, নায়ক বিপশ্বী ভগবান উৎপন্ন হয়েছিলেন।
১৪৪.তখণ আমি বন্ধুমতি নগরে এক ধনাঢ্য পরিবারে জন্ম নিয়ে ভীষণ রূপবতী দয়াময়ী ও জনসাধারণের পূজনীয় হয়েছিলাম।
১৪৫.একদিন আমি মহাবীর, লোকনায়ক বিপশ্বী ভগবানের নিকট গিয়েছিলাম। তাঁর ধর্মদেশনা শুনে আমি তার শরণ গ্রহণ করেছিলাম।
১৪৬.আমি ছিলাম ভীষণ শীলসংযত। নরোত্তম বুদ্ধ পরিনির্বাপিত হলে পরে তার উদ্দেশে নির্মিত ধাতুস্তুপের উপর সুবর্ণছাতা দিয়ে পূজা করেছিলাম।
১৪৭.আমি আজীবন দানবতীও শীলবতী হয়ে মৃতুর পর মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে তাবতিংস দেবলোকে জন্মেছিলাম।
১৪৮-১৪৯. তখন আমি নির্মোক্ত দশটি বিষয় -সমন্বিত হয়েছিলাম। আমি রূপ, শব্দ, গন্ধ, রস, স্পর্শ, আয়ু, বর্ণ, সুখ, যর্শ ও আধিপত্য এই দশটি বিষয়ে বিচিত হয়েছিলাম।
১৫০.এই শেষ জন্মে আমি কপিলাবস্তু নগরে ক্ষেমক শাক্যের কন্যা নন্দা নামে জন্মগ্রহণ করেছি।
১৫১-১৫২. তখন আমি ছিলাম ভীষণ রূপবতী ও কোমলকান্তি। রূপ- লাবন্যে ভূষিতা ও যৌবনপ্রাপ্তা হলে পরে আমাকে নিয়ে শাক্যরা ভীষণ রকম বিবাদে লিপ্ত হলো। তখন আমার পিতা ‘তোমার কারণে শাক্যরা ধ্বংস না হোক’ এই বলে আমাকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রব্রজ্জিতা করিয়ে দিলেন।
১৫৩.প্রব্রজ্জিত হওয়ার পর আমি শুনতে পেলাম যে, নরোত্তম তথাগত নাকি রূপলাবন্যের নিন্দা করেন। তাই আমি আমার রূপলাবন্যে গর্বিতা হয়ে তাঁর কাছে যেতাম না।
১৫৪.এমন কি আমি বুদ্ধদর্শনেরভয়ে উপদেশ শুনতে পর্যন্ত যেতাম না। তখন জিনশ্রেষ্ঠ বুদ্ধ আমাকে সুকৌশলেতাঁর কাছে নিয়ে গেলেন।
১৫৫.তখন মার্গজ্ঞ বুদ্ধ আমাকে ঋদ্ধিযোগে তিন ধরণের স্ত্রী দেখালেন। সেগুলো হলো, অস্পরাসদৃশ রূপবতী তরুনী, তারপর জরাগ্রস্ত স্ত্রী ও সবশেষে একদম মৃত স্ত্রী।
১৫৬.স্ত্রীলোকের এই ত্রিবিধ অবস্থা বা পরিণতি দেখে আমি ভীষণভাবে সংবেগপ্রাপ্ত হলাম এবং অচিরেই এই দেহের রূপলাবন্যের প্রতি বিরক্তচিত্ত হলাম। আমি দেহের প্রতি নিরাসক্ত হলো পরে নায়ক বুদ্ধ আমাকে বললেন
১৫৭.হে নন্দে, পূতি, অশুচি ও ব্যাধির এই সমষ্টিকে দেখো। এই অশুচি দেহতে একমাত্র মূর্খরাই অভিনন্দিত করে।
১৫৮.একাগ্র ও সুসমাহিত হয়ে অশুভ ভাবনায় চিত্তকে নিয়োজিত করো। এই দেহ যেমন, অন্য দেহও তেমন। অন্য দেহ যেমন, এই দেহও তেমন।
১৫৯.এভাবে এই দেহকে রাতদিন অতন্দ্রভাবে দেখতে নিজ প্রজ্ঞায় উপলদ্ধি করে অবস্থান কর।
১৬০.তারপর থেকে অপ্রমত্তভাবে ও জ্ঞানযোগে বিচরণ করতে করতে আমি এই অশুচিদেহের র্যথার্থ স্বভাব দেখতে পেলাম।
১৬১.অতঃপর আমি এই দেহের প্রতি সম্পূর্ণ নিস্পৃহ হলাম, সম্পূর্ণ নিরাসক্ত হলাম।অপ্রমত্তও নিরাসক্ত ও উপশান্ত হলাম।
১৬২-১৬৩. আমি বিবিধ ঋদ্ধি দিব্যশ্রোত্র, পরচিত্তবিজাননজ্ঞান ও পূর্বনিবাসানুস্মৃতিজ্ঞান লাভ করেছি। আমার দিব্যচক্ষু অত্যন্ত বিশুদ্ধ। আমার সর্বাসব পরিক্ষীণ হয়েছে। এখন আমার আর পুনর্জন্ম নেই।
১৬৪.হে মহাবীর, আপনার কাছে এসে অথর্, ধর্ম, নিরুক্তি, ও প্রতিভাণ এই চারিপ্রতিসমিদায়্ভ আমার জ্ঞান উপন্ন হয়েছে।
১৬৫.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
১৬৭.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
১৬৮.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি। ঠিক এভাবেই অভিরূপানন্দা ভিক্ষুণীএই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন।
[অভিরূপানন্দা থেরী অপদান ষষ্ঠ সমাপ্ত]
৭.অর্ধকাশি থেরী অপদান
১৬৮.এই ভদ্রকল্পে ব্রহ্মবন্ধু, মহাযশস্বী কাশ্যপ ভগবান উৎপন্ন হয়েছিলেন।
১৬৯-১৭১. তখন সেই বুদ্ধের শাসনে প্রব্রজ্জিত হয়ে প্রাতিমোক্ষমীলে ও পঞ্চেন্দ্রিয়ে সংযত, ভোজনে মাত্রাজ্ঞ, সদা জাগরণযুক্ত ও যোগযুক্ত তথা ধ্যানী হয়ে অবস্থান করছিলাম। একদিন আমি বিগত আসব ভিক্ষুণীকে প্রদুষ্টমনে‘পতিতা’ বলে গালি দিয়েছিলাম। সেই পাপকর্মের ফলে আমি নিরয়ে দগ্ধ হয়েছিলাম।
১৭২-১৭৩. দীর্ঘকাল নিরয়ে দগ্ধ হবার পর আমি এক পতিতা পরাধীন হয়ে দুঃখ ভোগ করেছিলাম। এই শেষ জন্মে আমি পূর্বজন্মে ব্রহ্মচর্যা আচরণের ফলে কাশি রাজ্যের এক শ্রষ্ঠী েপরিবারে ভীষণ রূপবতী দেবঅস্পরা সদৃশ হয়ে জন্মেছি।
১৭৪. রাজগৃহে নগরের লোকেরা আমার রূপমাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে মআকে পতিতাবৃত্তিতে নিযুক্ত করল। ইহা আমার প্রদুষ্টচিত্তে গালি দেওয়ারই ফল।
১৭৫.একদিন আমি বুদ্ধশ্রেষ্ঠ দেশিত সদ্ধর্ম শুনে পূর্বকৃত কুশল সংস্কারের বলে অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছি।
১৭৬.তখন আমি উপসম্পদা লাভের জন্যে জিনশ্রেষ্ঠের কাছে যাবার সময় পথিমধ্যে ধূর্তরা আছে শুনে এক দূতের মাধ্যমেউপসম্পদা লাভ করেছিলাম।
১৭৭.আমার সমস্ত কর্ম পরিক্ষীণ হয়েছে। তদ্রুপ আমার সমস্ত পাপ-পুণ্যও পরিক্ষীণ হয়েছে। এখন আমি সমস্ত সংসার হতে মুক্ত। গণিকাবৃত্তি এখন আমার কাছে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত।
১৭৮-১৭৯. আমি বিবিধ ঋদ্ধি, দিব্যশ্রোত্র, পরচিত্তবিজাননজ্ঞান ও পূকর্বানিবাসানুস্মৃতিজ্ঞান লাভ করেছি। আমার দিব্যচক্ষু অত্যন্ত বিশুদ্ধ। আমার সর্বাসব পরিক্ষীণ হয়েছে। এখন আমার আর কোনো পুনর্জন্ম নেই।
১৮০.হে মহাবীর, আপনার কাছে এসে অথর্, ধর্ম, নিরুক্তি ও প্রতিভাণ এই চারিপ্রতিসমিদায়্ভ আমার জ্ঞান উৎপন্ন হয়েছে।
১৮১.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
১৮২.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
১৮৩.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই অর্ধকাশি ভিক্ষুণীএই গাথ াগুলো ভাষণ করেছিলেন। [অর্ধকাশি থেরী অপদান সপ্তম সমাপ্ত]
৮. পূর্ণিকা থেরী অপদান
১৮৪-১৮৬. পূর্বে আমি বিপশ্বী, শিখী, বেস্সভূ, ককুসন্ধ, কোণাগমন ও কাশ্যপ বুদ্ধের শাসনে প্রব্রজ্যা নিয়েছিলাম। আমি ছিলাম শীলসম্পন্না, প্রাজ্ঞ, সংযতেন্দ্রিয়, বহুশ্রুতা, ধর্মধরা, ধর্মার্থ জিজ্ঞাসাকারী, ধর্মশিক্ষালাভী ও ধর্মের স্বাদলাভী।
১৮৭.একদিন আমি এক বুদ্ধের শাসনে বিশাল জনতার মাঝে দেশনা করছিলাম তখন আমার পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে আমি নিজেই নিজেকে পণ্ডিত শীলবতী বলে অহংকার করেছিলাম।
১৮৮.এই শেষ জন্মে আমি শ্রাবস্তী নগরে অনাথপিণ্ডিক শ্রেষ্ঠীর ঘরে এক কমদাসী্ভ হয়ে জন্মেছি।
১৮৯.একদিন আমি জল আনার জন্যে ঘাটে গেলে পাপ প্রক্ষালনের আশায় এক ব্রাহ্মণকে প্রবল শীতের মাঝেও স্নান করতে দেখতে পাই। তাকে দেখে আমি বললাম:
১৯০.আমি হচ্ছি কুমদাসী।্ভ প্রভুর দণ্ড ও তিরস্কারের ভয়েএকান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাকে জল নিয়ে যেতে হয়।
১৯১. হে ব্রাহ্মণ, কার ভয়ে আপনি এই প্রচণ্ড শীতেও এত কষ্টের মাঝে জলে স্নান করছ?
১৯২-১৯৩. হে পূর্ণিকা, তুমি যখন আমায় কারণ জিজ্ঞেস করছ, তাই তোমায় বলছি। এই প্রচণ্ড শীতে স্নান করে আমি কুশল কর্ম করছি ও কৃতপাপকর্ম ক্ষয় করছি। বৃদ্ধ হোকআর বালক হোক যে ব্যক্তি জীবনে বহুপাপকর্ম করেছে, সেও এই প্রচণ্ড শীতে স্নানের মাধ্যমে পাপকর্ম হতে মুক্ত হতে পারে।
১৯৪.তখন আমি তাকে পাপ হতে উত্তোরণের জন্যে একটি সদথপূর্ণ গাথা বলেছি। তা শুনে তিনি ভীষণ রকম সংবিগ্ন হলেন এবং প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে অচিরেই অর্হত্ত্ব লাভ করলেন।
১৯৫.আমি যখন দাসীকুলে জন্মনিই তখন আমাকে দিয়ে একশজন পূরণ করা হয়েছে বিধায় আমার নাম রাখা হলো পূর্ণা। তারা আমায় দাসত্ব হতে মুক্তি দিল।
১৯৬.আমি শ্রেষ্ঠীর অনুমতি নিয়ে অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছি। এবং অচিরেই অর্হত্ত্ব লাভ করেছি।
১৯৭-১৯৮. আমি বিবিধ ঋদ্ধি, দিব্যশ্রোত্র পরচিত্তবিজাননজ্ঞান ও পূর্বানিবাসানুস্মৃতিজ্ঞান লাভ করেছি। আমার দিব্যচক্ষু অত্যন্ত বিশুদ্ধ। আমার সর্বাসব পরিক্ষীণ হয়েছে। এখন আর আমার কোনো পুনর্জন্ম নেই।
১৯৯.বুদ্ধশ্রেষ্ঠের আর্শীবাদে অথর্, ধর্ম, নিরুক্তি ও প্রতিভাণ এই চারি প্রতিসমিদায়্ভ আমার বিশুদ্ধ বিমল জ্ঞান উৎপন্ন হয়েছে।
২০০.পূর্বকৃত ভাবনা বলেআমি মহাপ্রাজ্ঞ ও পণ্ডিত হয়ে জন্মেছি। কিন্তু মান-অহংকারের কারণে আমি নীচকুলে জন্মেছি। সেই কর্ম বিনষ্ট হয়নি।
২০১.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
২০২.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
২০৩.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি। ঠিক এভাবেই পূর্ণিকাভিক্ষুণীএই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন।
[পূর্ণিকাথেরী অপদান অষ্টম সমাপ্ত]
৯.আম্রপালি থেরী অপদান
২০৪.তখন ষড়রশ্মিতে উজ্জল ফুশ্য মহামুনি ছিলেন। আমি ছিলাম তাঁর বোন। আমি ক্ষত্রিয় কুলে জন্মেছিলাম।
২০৫.তারঁ কাছে ধর্ম দেশনা শুনে অতীব প্রসন্নমনে মহাদান দিয়ে আমি রূপসম্পদ প্রার্থনা করেছিলাম।
২০৬.আজ থেকে একত্রিশ কল্প আগে জগতে লোকপ্রদ্যেৎ, ত্রিলোকশরণ, জিন, লোকাগ্রনায়ক শিখী বুদ্ধ উৎপন্নহয়েছিলেন।
২০৭.তখন আমি অরুণ নগরে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নিয়ে এক বিমুক্তচিত্ত ভিক্ষুণীকে ক্রুদ্ধ মনে অভিশাপ দিয়েছিলাম।
২০৮-২০৯. আমি তাঁকে, ‘বেশ্যা, অনাচারিনী, জিনশাসন দূষিতা’ বলে তিরস্কার করেছিলাম। সেই পাপকর্মের ফলে আমি বিনিপাত নিয়য়ে গিয়ে মহাদুঃখ ভোগ করেছিলাম। সেখান থেকে চ্যুত হয়ে আমি মনুষ্যলোকে এক তপস্বিনী হয়ে জন্মেছিলাম।
২১০.আমি দশ হাজার জন্মধরে গনিকা পতিতাবৃত্তি করেছিলাম। দূষিত বিষ পান করার ন্যায় তারপরও আমি সেই পাপ হতে মুক্ত হতে পারিনি।
২১১.আমি কাশ্যপ বুদ্ধের শাসনে ব্রহ্মচর্যা অনুশীলন করেছিলাম। সেই কর্মের ফলে আমি তাবতিংস স্বর্গে জন্মেছিলাম।
২১২.এই শেষ জন্মে আমি ঔপপাতিক সত্ত্ব হয়ে আম্রগাছের এক শাখায় জন্মেছি। তাই আমাকে সবাই ‘আম্রপালি’ নামে চেনে।
২১৩.আমি কোটি প্রাণিকুল পরিবৃত হয়ে জিনশাসনে প্রব্রজ্যা নিয়েছি। আমি অচলস্থান নির্বাণ লাভ করেছি। এখন আমি বুদ্ধের ঔরসজাত কন্যা।
২১৪.আমি বিবিধ ঋদ্ধি, দিব্যশ্রোত্র পরচিত্তবিজাননজ্ঞান ও পূর্বানিবাসানুস্মৃতিজ্ঞান লাভ করেছি। আমার দিব্যচক্ষু অত্যন্ত বিশুদ্ধ। আমার সর্বাসব পরিক্ষীণ হয়েছে। এখন আর আমার কোনো পুনর্জন্ম নেই।
২১৫.বুদ্ধশ্রেষ্ঠের আর্শীবাদে অথর্, ধর্ম, নিরুক্তি ও প্রতিভাণ এই চারি প্রতিসমিদায়্ভ আমার বিশুদ্ধ বিমল জ্ঞান উৎপন্ন হয়েছে।
২১৬.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
২১৭.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
২১৮.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আম্রপালি ভিক্ষুণীএই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [আম্রপালি থেরী অপদান নবম সমাপ্ত]
১০.পেসলা থেরী অপদান
২২০.এই ভদ্রকল্পে ব্রহ্মবন্ধু, মহাযশস্বী কাশ্যপ বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছিলেন।
২২১.আমি শ্রাবস্তী নগরে এক উপাসকের ঘরে জন্মেছিলাম। একদিন আমি জিনশ্রেষ্ঠ বুদ্ধকে দেখে তার কাছে ধর্মদেশনা শুনেছিলাম।
২২২-২২৪. তখন আমি সেই বীর বুদ্ধের শরণ গ্রহণ করে শীল গ্রহণ করেছিলাম। একদিন সেই মহাবীর বুদ্ধ মহাজনসমাবেশে নিজের সম্বোধি জ্ঞান লাভের কথা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘পূর্বে আমার অশ্রুতপূর্ব দুঃখাদি আর্যসত্যে ,চক্ষুজ্ঞান, প্রজ্ঞা ও বিদ্যালোক উৎপন্ন হয়েছিল।’ তা শুনে আমি ভিক্ষুগণকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করেছিলাম।
২২৫.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মেছিলাম।
২২৬.এই শেষ জন্মে আমি এক শ্রেষ্ঠী পরিবারে জন্মেছি। একদিন বুদ্ধের কাছে গিয়ে আর্যসত্য বিষয়ক সদ্ধর্ম শ্রবণ করেছি।
২২৭.তারপর আমি অচিরেই প্রব্রজ্যা নিয়ে সেই আর্যসত্যসমূহ বিশেষভাবে ভেবেছি। সর্বাসব ক্ষয় করে আমি অর্হত্ত্ব লাভ করেছি।
২২৮-২২৯. আমি বিবিধ ঋদ্ধি, দিব্যশ্রোত্র পরচিত্তবিজাননজ্ঞান ও পূর্বানিবাসানুস্মৃতিজ্ঞান লাভ করেছি। আমার দিব্যচক্ষু অত্যন্ত বিশুদ্ধ। আমার সর্বাসব পরিক্ষীণ হয়েছে। এখন আর আমার কোনো পুনর্জন্ম নেই।
২৩০.বুদ্ধশ্রেষ্ঠের আর্শীবাদে অথর্, ধর্ম, নিরুক্তি ও প্রতিভাণ এই চারি প্রতিসমিদায়্ভ আমার বিশুদ্ধ বিমল জ্ঞান উৎপন্ন হয়েছে।
২৩১.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
২৩২.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
২৩৩.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি। ঠিক এভাবেই পেসলা ভিক্ষুণীএই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন।
[পেসলা থেরী অপদান দশম সমাপ্ত] [ক্ষত্রিয়া বর্গ চর্তুথ সমাপ্ত]
স্মারক-গাথা
ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণী, ও উৎপলদায়িকা থেরী, সিঙ্গালমাতা, সুক্কা, অভিরূপ ও অর্ধকাশি; পূর্ণা, আম্রপালি ও পেসলা থেরী,
মোট দুশ তেত্রিশটি গাথায় এই বর্গ সমাপ্ত।
অতঃপর বর্গের স্মারক-গাথা:
সুমেধা, একোপোসথা, কুণ্ডলকেশী ও ক্ষত্রিয়া,
এক হাজার তিনশ সাতচল্লিশটি গাথা হয়েছে গ্রন্থিত। তবে স্মারক-গাথাসহ মোট গণনা করলে
এক হাজার তিন শ সাতান্নটি গাথা হয়েছে বিধৃত। [থেরী অপদান সমাপ্ত]
[অপদান সমাপ্ত]