৪৯.পাংশুকূল বর্গ

১.পাংশুকূলসংজ্ঞক স্থবির অপদান

১.সয়মূ,্ভ অগ্রপুদ্গল, জিন, তিষ্য ভগবান পাংশুকূল চীবর রেখে বিহারে প্রবেশ করেছিলেন।

২.তখন আমি সুসজ্জিত তীরধনুক নিয়েকিছুখাওয়ার জন্য বিচরণ করেছিলাম।

৩.সেখানে আমি গাছের শাখায় ঝুলানো পাংশুকূল চীবরটিকেদেখতে পেয়েছিলাম। তৎক্ষনাৎ আমি সেখানেই তীর-ধনুক ও তলোয়ার ফেলে দিয়ে নতশিরেকতাঞ্জলিৃ হয়েছিলাম।

৪.তারপর আমি প্রীতিপূর্ণ হয়ে অতীব প্রসন্নমনে বুদ্ধশ্রেষ্ঠকে স্মরণ করে সেই পাংশুকূল চীবরকে বন্দনা করেছিলাম।

৫.আজ থেকে বিরানব্বই কল্প আগে আমি যেই, বালি ছিটিয়েছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার বালি ছিটানোরই ফল।

৬.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

৭.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

৮.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানপাংশুকুলসংজ্ঞকস্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [পাংশুকুলসংজ্ঞকস্থবির অপদান প্রথম সমাপ্ত]

২.বুদ্ধসংজ্ঞকস্থবির অপদান

৯.আমি তখন অধ্যাপক, মন্ত্রধর, ত্রিবেদ বিশেষ পারদর্শী এবং লক্ষণশাস্ত্র, ইতিহাস ও বিচিত্র সব বিষয়ে অভিজ্ঞ ছিলাম।

১০.তখন আমার কাছে নদীর স্রোতের ন্যায় শিষ্য আসত। আর আমি রাতদিন অতন্দ্রভাবে তাদের মন্ত শিক্ষা দিতাম।

১১.সেই সময় পৃথিবীতে সিদ্ধার্ সম্বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছিলেন। তিনি অজ্ঞতারূপ অন্ধকার বিদূরিত করে জ্ঞানালোকের প্রবর্তন করেছিলেন।

১২.আমার জনৈক শিষ্য আমার অন্য শিষ্যদের বিষটি জানিয়েছিল। বুদ্ধ আর্বিভাবে কথাটি শুনে তারা তখন বিষয়টি আমাকে জানিয়েছিল।

১৩.জগতে লোকনায়ক সর্বজ্ঞ বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছেন। বহু মানুষ তার উপদেশ মান্য করছেন। কিন্তু আমাদের সে সুযোগ হবে না।

১৪.চক্ষুষ্মান মহাযশস্বী বুদ্ধগণ স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই উৎপন্ন হন। অহো, আমি যদি লোকনায়ক বুদ্ধশ্রেষ্ঠকে দেখতে পেতাম, তাহলে খুবি ভালো হতো!

১৫.আমি আমার বল্কচীবর ও পাত্র নিয়ে আশ্রম হতে বের হয়ে শিষ্যদের সম্বোধন করে বলেছিলাম :

১৬.ডুমুর গাছে ফুল ধরা যেমন দুলর্ভ, চাঁদে খরগোশ থাকা যেমন দুর্লভও কাকদের থেকে দুধ পাওয়া যেমন দুর্লভ, ঠিক তদ্রুপ জগতে লোকনায়ক বুদ্ধের উৎপত্তি ও দুর্লভ।

১৭.অথচ জগতে বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছেন। আর এদিকে মনুষ্যত্বলাভ করাও দুর্লভ। এই উভয়ের বিদ্যমানতা সত্ত্বেও সদ্ধর্মশ্রবণ অতীব দুলর্ভ।

১৮.জগতে বুদ্ধ উৎপন্নহয়েছেন। অহো, আমরা যেন আমাদের চক্ষুপেলাম। এসো, আমরা সবাই সম্যকসম্বুদ্ধের কাছে যাই।

১৯.আমার শিষ্যরা সবাই তখন হাতে পাত্র নিয়ে, অজিনবস্ত্র পরিধান করে মাথার চটাভারে র্জজরিত হয়ে গহীন্য হতে বের হয়েছিল।

২০.আমার শিষ্যরা ছিল সামনের চারিহাত মাত্র দর্শনকারী, উত্তমার্থ (নির্বাণ) গবেষণাকারী, সম্পূর্ণরূপে সংসর্গদোষ বর্জিত ও পশুরাজ সিংহের ন্যায় নির্ভীক।

২১.আমার শিষ্যরা ছিল, অল্পকৃত্য, অলোলুপ, প্রজ্ঞাবান ও শান্তপ্রকৃতির। পথে পথে ভিক্ষা করতে করতে তারা বুদ্ধশ্রেষ্ঠর নিকট পৌঁছেছিল।

২২.এদিকে আমি মাত্র দেড় যোজন পথ পাড়ি দেওয়ার পর ভীষণভাবে রোগাক্রান্ত হয়েছিলাম। বুদ্ধশ্রেষ্ঠকে স্মরণ করে তখন আমি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেছিলাম।

২৩আজ থেকে চুরানব্বইকল্প আগে আমি যেই, বুদ্ধসংজ্ঞা লাভ করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার বুদ্ধ সংজ্ঞারইফল।

২৪.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

২৫.বুদ্ধের কাছে আসাট আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

২৬.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানবুদ্ধসংজ্ঞকস্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [বুদ্ধসংজ্ঞক স্থবির অপদান দ্বিতীয় সমাপ্ত]

৩.ভিসদায়ক স্থবির অপদান

২৭.নানা কুঞ্জরে পরিপূর্ণ এক পূষ্করিনীতে নেমে আমি ঘাস হিসেবে ঞ্জরিপদ্ম সংগ্রহ করছিলাম।

২৮.সেই সময় পদুমুত্তর ভগবান অনেকটাক্তকম্বলেরর রূপধারণ করে সুনীল আকাশপথে যাচ্ছিলেন।

২৯.আমি পাংশুকূল চীবর ধুনছিলাম এমন সময় একটি শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। তারপর উপরে তাকাতেই আমি লোকনয়ক বুদ্ধকেদেখতে পেয়েছিলাম।

৩০. সেখানে দাঁড়িয়েই আমি লোকনায়ক বুদ্ধকে প্রার্থনা জানিয়েছিলাম। পদ্মফুলের ডাঁটা থেকে মধু নির্গত হচ্ছে, আর পদ্মফুলের মূল হতে দুধ ও ঘি নির্গত হচ্ছে।

৩১-৩২. হে চক্ষুষ্মান বুদ্ধ, অনুকম্পা পরবশ হয়ে আমার এই দান গ্রহণ করুণ। তারপর মহাযশস্বী মহাকারুণিক শাস্তা সেখান থেকে অবতরণ করে আমার ভিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। গ্রহণ করার পর এই বলে আমার দান অনুমোদন করেছিলেন।

৩৩.হে মহাপন্য, তুমি সুখী হও। তোমার আশা পূরণ হোক। তোমার গতি শুভ হোক। এই পদ্মফুলের ডাঁটা ও মূল দানের ফলে তুমি বিপুল সুখ লাভ। কর

৩৪.ইহা বলার পর পদুমুত্তর সম্বুদ্ধ আমার ভিক্ষা গ্রহণ করে আকাশ পচেলে গিয়েছিলেন।

৩৫.তারপর পদ্মফুলের ডাঁটা নিয়ে আমি আমার আশ্রমে চলে এসেছিলাম। পদ্মফুলের ডাঁটা গাছে টাঙিয়ে রেখে আমি বুদ্ধকে দান করার কথা স্মরণ করেছিলাম।

৩৬.তখন হঠাৎ করে প্রবল বেগে বাতাস বইতে শুরু করেছিল। সমগ্র বনভূমি যেন বাতাসের বেগে দুলছিল। মাঝে মাঝে বজ্রপাতের শব্দে সমগ্র আকাশ ফেটে পড়ছিল।

৩৭.তার পর হঠাৎ আমার মাথার উপর বজ্র এসে আঘাত করেছিল। বজ্রের আঘাতে আমি বসা অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করেছিলাম।

৩৮.সুকৃতপুণ্যকর্মের ফলে আমি তুষিত স্বর্গে উৎপন্ন হয়েছিলাম। আমার মনুষ্য কলেবর ছেড়ে আমি দেবলোকে রমিত হয়েছিলাম।

৩৯.সুসজ্জিতা, সমলংকৃতা ছিয়াশি হাজার নারী সকাল-সন্ধ্যা আমাকে সেবা করত। ইহা আমার পদ্মফুলের ডাঁটা দানেরই ফল।

৪০.পরে মনুষ্য জন্মে এসে ও আমি প্রতিনিয়ত সুখী হয়েছিলাম এবং আমার ভোগসম্পত্তির কোনো ঊনতা ছিল না। ইহা আমার পদ্মফুলের ডাঁটা দানেরই ফল।

৪১.আমি দেবাতিদেব বুদ্ধের পরম অনুকম্পা পেয়েছি। সর্বাসব ক্ষয় করে এখন আমার কোনো পুনর্জন্ম নেই।

৪২.আজ থেকে লক্ষ কল্প আগে আমি যেই, পদ্মফুলের ডাঁটা দানকরেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার ভগবান বুদ্ধকে পদ্ম ফুলের ডাঁটা দান করারই ফল।

৪৩.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

৪৪.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

৪৫.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানভিসদায়ক স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [ভিসদায়ক স্থবির অপদান তৃতীয়সমাপ্ত]

৪.জ্ঞানথবিকা স্থবির অপদান

৪৬.হিমালয়ের দক্ষিণে আমার একটি আশ্রম ছিল উত্তমার্থ নির্বাণ গবেষণা করতে করতে আমি তখন গহীন অরন্যে বসবাস করছিলাম।

৪৭.আমি লাভ-অলাভে সন্তুষ্ট ছিলাম এবং শুধুমাত্র ফলমূল ভোজন করেই জীবন ধারণ করতাম একজন আচার্যের খোঁজে আমি একাকীই বসবাস করছিলাম।

৪৮.ঠিক সেই সময় পৃথিবীতে সুমেধ সম্বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছিলেন। তিনি বহু সত্ত্বকে উদ্ধার করার জন্যে চতুরার্যসত্য দেশনাকরছিলেন।

৪৯.আমি কখনও সম্বুদ্ধের কথা শুনতে পাইনি। তাঁর একটি কথাও আমার শোনার সুযোগ হয়নি। দীর্ঘ আট বৎসর পর আমি লোকনায়ক বুদ্ধের কথা শুনতে পেয়েছিলাম।

৫০.জ্বালানী কাঠগুলো যথাস্থানে সরিয়ে রেখে, গোটা আশ্রমটিকে সম্মার্জন করে, তারপর লাঠি নিয়ে আমি গহীন অরন্য হতে বের হয়েছিলাম।

৫১.গ্রাম-নিগমোদিতে একরাত করে বসবাস করে ক্রমান্বয়ে আমি চন্দ্রাবতীতে পৌঁছেছিলাম।

৫২.সেই সময় লোকনায়ক সুমেধ ভগবান বহু সত্ত্বকে উদ্ধার করার জন্যে অমৃতপদ নির্বাণ দেশনা করছিলেন।

৫৩.বিপুল জনতাকে অতিক্রম করে জিনসাগর বুদ্ধকেবন্দনা করেছিলাম এবং আমার পরিধেয় আজিন চীবরকে একাংশ করে আমি লোকনায়ক বুদ্ধের ভূয়শী প্রশংসা করেছিলাম।

৫৪.হে শাস্তা, আপনিই সত্ত্বগণের কেতু, ধ্বজা, যূপ, পরায়ণ, প্রতিষ্ট, দ্বীপ ও দ্বিপদশ্রেষ্ঠ। [একুশতম ভাণবার সমাপ্ত]

৫৫.হে বীর, আপনি নিপুণ দর্শনীয়। আপনি বহু মানুষকে মুক্ত করেছেন। হে মুনি, জগতে আপনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উজ্জ্বল অন্য কোনো তারকা নেই।

৫৬.হে সর্বজ্ঞ, সুশাগ্র দ্বারা বিশাল সাগরকে মাপা সমব্ভ হলেও হতে পারে; তার পরও আপনার জ্ঞানের পরিমাপ করা সমব্ভ নয়।

৫৭.হে চক্ষুষ্মান, এই বিশাল পৃথিবীকে তুলাদণ্ডে তথদাঁড়ি পাল্লায় রেখে ওজন মাপা সমব্ভ হলেও হতে পারে; তারপরও আপনার জ্ঞানের পরিমাপ ঠিক কী পরিমাপ তা জানা সমব্ভ নয়।

৫৮.হে সর্বজ্ঞ, রশি বা আঙুল দিয়ে অনন্ত আকাশকে মাপা সমব্ভ হলেও হতে পারে; তার পরও আপনার শীলকে পরিমাপ করা সমব্ভ নয়

৫৯.হে চক্ষুষ্মান, মহাসমুদ্রের জলরাশি, অনন্ত আকাশ ও এই বসুন্ধরাকে পরিমাপ করা সমব্ভ হলেও হতে পারে; কিন্তু আপনি হচ্ছে অনন্ত অপ্রমেয়।

৬০.এই ছয়টি গাথায় মহাযশস্বী সর্বজ্ঞ বুদ্ধের ভূয়শী প্রশংসা করে, হস্তদ্বয় অঞ্জলিবদ্ধ করে আমি তখন নিরবে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

৬১.ভূরিপ্রজ্ঞা সুমেধ ভগবান ভিক্ষুসংঘের মাঝেউপবেশন করে এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন।

৬২.যে ব্যক্তি অতীব প্রসন্নমনে আমার জ্ঞানের গুণকীর্তন করেছে, এখন আমি তার ভূয়সী প্রশংসা করব। তোমরা আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর।

৬৩.সে দেবলোকে সাতত্তর কল্প রমিত হবে। আর হাজার বার দেবেন্দ্র হয়ে দেবরাজত্ব করবে।

৬৪.বহুশতবার সে চক্রবর্তী রাজা হবে। আর প্রাদেসিক রাজা তো অসংখ্যবার হবে।

৬৫.পুণ্যকর্মসমন্বিত হওয়ার কী দেবলোকে কী মনুষ্যলোকে তার সকলআশা পূরণ হবে এবং সে তীক্ষ্ণপ্রাজ্ঞ হবে।

৬৬.আজ থেকে ত্রিশ কল্প পরে ওক্কাকু কুলে গৌতম গোত্রে পৃথিবীতে এক শাস্তা জন্মগ্রহণ করবেন।

৬৭.গৃহত্যাগ করে সে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করবে এবংজন্মের মাত্র সাতবৎসর বয়সে অর্হত্ত্ব লাভ করবে।

৬৮.আমি নিজের অতীত বিষয়ে যতটুকু স্মরণ করতে পারি, আর যত দিন হলো আমি এই শাসন লাভ করেছি, এর মধ্যে কোনো অমনোজ্ঞ চেতনা উৎপন্ন হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

৬৯.সকলভবে জন্মগ্রতণ করে বহু সম্পত্তি আমি ভোগ করেছি। আমার ভোগ সম্পত্তির কোনো ঘাটতি ছিল না। ইহা আমার বুদ্ধজ্ঞানকে ভূয়শী প্রশংসা করারই ফল।

৭০.রাগাগ্নি, দ্বেষাগ্নি ও মোহাগ্নি- এই ত্রিবিধ অগ্নি আমার সম্পূর্ণ নিভে গিয়েছে। আমার জন্মসকল ধ্বংস হয়েছে। সর্বাসব পরিক্ষীন হয়ে এখন আমার আর পুনর্জন্ম নেই।

৭১.আজ থেকে ত্রিশহাজার কল্প আগে আমি যেই, বুদ্ধজ্ঞানের ভূয়শী প্রশংসাকরেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার বুদ্ধজ্ঞানকে ভূয়শী প্রশংসা করারই ফল।

৭২.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

৭৩.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

৭৪.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানজ্ঞানথবিক স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [জ্ঞানথবিক স্থবির অপদান চতুথসমাপ্তর্]

৫.চন্দনমালিয় স্থবির অপদান

৭৫.প্রিয় ও মনোজ্ঞ পঞ্চকামগুণসহ আশিকোটি ধন ত্যাগ করে আমি অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম।

৭৬.প্রব্রজ্যা গ্রহণের পর আমি কায়িক পাপাকর্ম ও বাচনিক দুশ্চরিত্র ত্যাগ করে নদীর কুলে বসবাস করছিলাম।

৭৭.আমি যখন একাকী অবস্থান করছিলাম তখন বুদ্ধশ্রেষ্ঠ আমার কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু আমি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারিনিযে, ইনি বুদ্ধ। তারপরও আমি তাঁকে বন্ধুত্বপূর্নভাবে সমাদর করেছিলাম।

৭৮.সমাদর করার পর আমি তাঁর নাম-গোত্রাদি জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি কি দেবতা, গন্ধর্ব নাকি দেবরাজ ইন্দ্র শত্রু ?

৭৯.কে আপনি? কার পুত্র?কোনো মহাব্রহ্মা এখানে এসেছেন কি যিনি পূর্বের আকাশে উদিত সূর্যের ন্যায় সর্বদিকে বিরোচিত হচ্ছেন ?

৮০.হে বন্ধু, আপনার পায়ে সহস্রঅরযুক্ত চক্র দেখাযাচ্ছে। কে আপনি? কার পুত্র? কীভাবে আমরা আপনাকে চিনতে পারি ? অনুগ্রহ করে আপনার নামগোত্র আমরায় বলুন। আমার সন্দেহ দূর করুন।

৮১.আমি কোনো দেবতা, গন্ধর্ব অথবা কোনো দোবরাজ ইন্দ্র শক্র ও নই। আমি কোনো ব্রহ্মাও নই। আমি এদের চাইতেও উত্তম, শ্রেষ্ঠ।

৮২.আমি অতীতের সমস্ত কামবন্ধন, বিষয়-আশা দুমরে-মুচরে পদদলিত করেছি। আর সমস্ত ক্লেশ অরিকে দগ্ধ করে আমি পরম সম্বোধি লাভ করেছি।

৮৩.আমি তাঁর কথা শুনে এই কথা বলেছিলাম : হে সর্বজ্ঞ, হে মহামুনি, সত্য যদি আপনি বুদ্ধ হন, তবে এখানে বসুন।

৮৪.আমি আপনাকে পূজা করব। আপনিই দুঃখের অন্তসাধনকারী। আমি তখন শাস্তার জন্য আমার মৃগচর্ম বিছিয়ে দিয়েছিলাম।

৮৫.ভগবান পশুরাজ সিংহ নির্ভীকভাবে পর্বতকন্দরে বসার ন্যায় তাতে বসেছিলেন। তারপর আমি শিগগির পর্বতের উপর আরোহণ করে আম্রফল নিয়েছিলাম।

৮৬.শালকল্যাণী পুষ্প, মহার্ঘ চন্দন এই সমস্ত নিয়ে আমি শিগগির লোকনায়ক বুদ্ধের কাছে ফিরে এসেছিলাম।

৮৭.তারপর আমি বুদ্ধকে আম্রফল দান করেছিলাম। শালকল্যাণী পুষ্প দিয়ে পূজা করেছিলাম। আর মহার্ঘ চন্দন বুদ্ধের গায়ে মেখে দিয়ে বন্দনা করেছিলাম।

৮৮-৯০. আমার তখন বিপুল প্রীতিতে আর চিত্তপ্রসন্নতায় ভরে উঠেছিল। লোকনায়ক সুমেধ ভগবান অজিনচর্মে বসে আমাকে পরম আনন্দে ভাসিয়ে দিয়ে আমার কৃতকর্মের গুণকীর্তন করেছিলেন। এই আম্রফল ও গন্ধমাল্য দানের ফলে সে একশ পঁচিশ কল্প দেবলোকে রমিত হবে। সেখানে তার মনের আশা অপূর্ন বলতে কিছুই থাকবে ।নাপরে সে পরনির্মিত বশবর্তীদেবলোকে জন্ম নেবে।

৯১.আজ থেকে একশ ছাব্বিশ কল্প শেষে সে মনুষ্যলোকে জন্ম নেবে। সেখানে সে চতুরন্ত বিজেতা মহা ঐশর্যশালী চক্রবর্তী রাজা হবে।

৯২.তখন সেখানে তার বিশ্বকর্মা নির্মিত বেতার নামক একটি নগর থাকবে, যেটি সম্পূর্ণ স্বর্ণময় ও নানাবিধ রত্নে ভূষিত।

৯৩.এভাবেই সে ভবসংসারে জন্মপরিভ্রমণ করবে। কী দেবলোকে কী মনুষ্যলোকে সর্বত্রই সে পূজিত হবে।

৯৪.শেষ জন্মে সে ব্রহ্মবন্ধু হবে। গৃহত্যাগ করে সে অনাগারিক প্রব্রজ্যাধারী হবে। অভিজ্ঞা সকল লাভ করে সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়েই নির্বাপিত হবে।

৯৫.ইহা বলার পর লোকনায়ক সুমেধ বুদ্ধ আমার দিকে চেয়ে চেয়ে সুনীল আকাশ পথ দিয়ে চলে গিয়েছিলেন।

৯৬.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্না অনুযায়ী মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মগ্রহণ করেছিলাম।

৯৭.তুষিত স্বর্গ হতেচ্যুত হয়ে আমি মাতৃগর্ভে জন্মেছিলাম। আমি যখন মাতৃগর্ভে বাস করছিলাম তখন আমার ভোগ্যসম্পত্তির কোন ঊনতা ছিল না।

৯৮.মাতৃগর্ভে থাকাকালে আমার মায়ের ইচ্ছানুযায়ী অন্ন-পানীয়-ভোজন সবকিছু উৎপন্ন হতো।

৯৯.আমি জন্মের মাত্র পাঁচ বৎসর বয়সে অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম। আর মাথার চুল কাটার সময়ই আমি অর্হত্ত্ব লাভ করেছিলাম।

১০০.আমার পূর্বকৃত কর্মের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমি খারাপছুইকি দেখতে পাইনি। আমি ত্রিশহাজার কল্প পর্যন্ত আমার কর্মের কথা স্মরণ করেছিলাম।

১০১.হে পুরুষশ্রেষ্ঠ, আপনাকে নমস্কার। হে পরুষোত্তম, আপনাকে নমস্কার। আপনার শাসনে এসেই আজ আমি অচলপদ নির্বাণ লাভ করেছি।

১০২.আজ থেকে ত্রিশহাজার কল্প আগে আমি যেই, বুদ্ধজ্ঞানের ভূয়শী প্রশংসা করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার বুদ্ধজ্ঞানকে ভূয়শী প্রশংসা করারই ফল।

১০৩.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

১০৪.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

১০৫.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানচন্দনমালিয় স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন।

[চন্দনমালিয় স্থবির অপদান পঞ্চম সমাপ্ত]

৬.ধাতুপূজকস্থবির অপদান

১০৬.লোকনায়ক সিদ্ধার্ লোকনাথ পরিনির্বাপিত হলে পরে আমি আমার জ্ঞাতিবর্গকে সজ্ঞে নিয়ে ধাতুপূজা করেছিলাম।

১০৭.আজ থেকে চুরানব্বইকল্প আগে আমি যেই, ধাতুপূজাকরেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার ধাতুপূজাকরারই ফল।

১০৮.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

১০৯.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

১১০.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানধাতুপূজকস্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [ধাতুপূজকস্থবির অপদান ষষ্ঠ সমাপ্ত]

৭.পুলিনুপ্পাদকস্থবির অপদান

১১১.হিমালয় পর্বতে আমি দেবল নামক এক তাপন ছিলাম। সেখানে আমার জন্য অমুষ্যগণ একটি চংক্রমণশালাতৈরি করে গিয়েছিল।

১১২.আমি তখন জটাভরে জর্জরিত হয়ে ভিক্ষাপাত্র নিয়ে উত্তমার্ ের খোঁজে গহীন অরন্য হতে বের হয়েছিলাম।

১১৩.চুরাশি হাজার শিষ্য আমাকে সেবা করত। তারা নিজ নিজ কাজে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে গহীন্যে বসবাস করত।

১১৪.আশ্রম হতে বের হয়ে এসে আমি একটি বালির চৈত্য তৈরি করেছিলাম। নানা ধরণের ফুল সংগ্রহ করে সেই চৈত্যকে পূজা করেছিলাম।

১১৫.পরিপূর্ণ চিত্তপ্রসন্নতা নিয়ে আমি আশ্রমে প্রবেশ করেছিলাম। তখন আমার সকল শিষ্যরা সমবেত হয়ে আমাকে এই বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল।

১১৬.প্রভূ, আপনি যে বালির স্তুপ তৈরি করেছেন তা আসলে কী ? এই বিষয়টি সম্পর্কে জানার খুব আগ্রহ আমাদের। অনুগ্রহ করে আপনি আমাদেরবলুন।

১১৭.আমি একটি মন্ত্রপদে চক্ষুষ্মান মহাযশস্বী বুদ্ধগণ সর্ম্পকে পড়েছি। আমি সেই মহাযশস্বী শ্রেষ্ঠবুদ্ধগণেকেই নমস্কার করেছি।

১১৮.সেই মহাবীর, সর্বজ্ঞ, লোকনায়ক বুদ্ধগণ কীরূপ? কীরূপ তাঁদের বর্ণ তথা রূপ? তাঁদের শীল কীরূপ?

১১৯.বুদ্ধগণ বত্রিশ মহাপুরুষ লক্ষণবিশিষ্ট, গোচক্ষুবিশিষ্ট ও যষ্টিমধুফলসদৃশ।

১২০.বুদ্ধগণ যখন হেঁটে যান তখনতাঁরা যুগমাত্র (চারি হাত দূরে) সামনের দিকে তাকান। তাদের জানুদ্বয় শব্দ করে না এবংতাঁদের হাঁটার শব্দ কেউই শুনতে পায় না।

১২১.সুগতগণ যখন হেঁটে যান তখন প্রথমে ডান পা তুলে হাঁটেন। ইহাই বুুদ্ধগণের রীতি।

১২২.সেই বুদ্ধগণ পশুরাজ সিংহের ন্যায় নির্ভীক হন। তাঁরা নিজেদের গুণগান করেন না। তাঁরা কখনও কাউকে দুর্ব্যহার বা গালিগালাজ করেন না।

১২৩.তারা মান-অপমান হতে সম্পূর্ণ মুক্ত এবং সকল প্রাণির সমদৃষ্টি পোষণকারী। বুদ্ধগণ কখনও আত্মপ্রশংসাকারী হন না। ইহাই বুদ্ধগণের রীতি।

১২৪.সম্বুদ্ধগণ পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে সত্ত্বগণকেআলোর পথ দেখান এবং এই পৃতিবীতে জন্ম নিয়ে সত্ত্বগণকে আলোর পথ দেখান এবং এই পৃতিবীকে ছয় প্রকারে প্রকম্পিত করেন।

১২৫.তাঁরা নিরয়কে সরাসরি দেখতে পান এবং তারা নিরয়কে নিবারিত করেন। মহামেঘ প্রবলভাবে বর্ষিত হতে থাকে। ইহাই বুদ্ধগণের রীতি।

১২৬.এমনই সেই মহানাগ, অতুল, মহাযশস্বী বুদ্ধগণ! তথাগতগণ বর্ণের দিক দিয়ে অনতিক্রম্য ও অপ্রমেয়।

১২৭.আমার সকল শিষ্য তখন সগৌরবে আমার কথা অনুমোদন করেছিল। তারা যথাশক্তি সেভাবেই মনন করেছিল।

১২৮.তারা আমার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে বুদ্ধকে সৎকার করার মাসসে নিজ নিজ কর্ম দিয়ে বালির চৈত্যকে পূজা করেছিল।

১২৯.ঠিক সেই সময় মহযশস্বী দেবপুত্র তুষিত স্বর্গ হতে চ্যুত হয়ে মাতৃগর্ভে জন্মেছিলেন। তখন দশ সহস্র চক্রবাল কম্পিত হয়েছিল।

১৩০.আমি যখন আশ্রমের অনতিদূরে চংক্রমণ স্থানেদাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন আমার শিষ্যরা সবাই হয়ে আমার কাছে এসেছিল।

১৩১.প্রভু, এই পৃথিবী বৃষভের ন্যায় ডাক দিচ্ছে, পশুরাজ সিংহের ন্যায় কূজন করছে, আর কুমীরের ন্যায় চলাচল করছে!ইহা কীসের লক্ষণ ?

১৩২.আমি তোমাদের কাছে যেই সম্বুদ্ধের কথা বলেছিলাম, সেই ভগবান শাস্তাই এখন মাতৃগর্ভে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করেছেন।

১৩৩.আমি তাদের ধর্মকথা চলে মহামুনি বুদ্ধের ভূয়শী প্রশংসা করেছিলাম। তারপর তাদের বিদায় দিয়ে আমি আমার পালঙ্কে শুয়ে পড়েছিলাম।

১৩৪.তখন আমার শরীর খুব দুর্বল ও ব্যাধিপীড়িত। তাই বুদ্ধশ্রেষ্ঠকে স্মরণ করে আমি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেছিলাম।

১৩৫.আমার মৃত্যুর পর শিষ্যরা সকলে মিলে আমাকে দাহ করার জন্য একটি শ্মশান তুলেছিল। তারা আমার শবদেহকে নিয়ে শ্মশানে তুলেছিল।

১৩৬.শ্মশানের চাপাশে সমবেত হয়ে তারা নতশিরে কৃতাঞ্জলি হয়ে শোকাভিভূত হয়ে ভীষণভাবে কেঁদেছিল।

১৩৭.তারা যখন শোকাভিভূত হয়েকাঁদছিল তখন আমি শ্মশানে গিয়েছিলাম। আমি তাদের বলেছিলাম, সুমেধগণ তোমরা শোক করিও না। আমিই তোমাদের আচার্য।

১৩৮.তোমরা রাতদিন অতন্দ্রভাবে সৎপ্রচেষ্টায় রত থাক। কখনও প্রমত্ত হইও না। এখন তোমাদের প্রতিটি ক্ষণই গুরুত্বপূর্ণ।]

১৩৯.এভাবে আমি আমার শিষ্যদের অনুশাসন করে দেবলোকে ফিরে গিয়েছিলাম এবং সেখানে মোট আঠার কল্প রমিত হয়েছিলাম।

১৪০.আমি একশ পঞ্চাশবার চক্রবর্তী রাজা হয়েছিলাম। বহু শতবার দেবলোকে দেবরাজত্ব করেছিলাম।

১৪১.অবশিষ্ট কল্পেও আমি সেভাবেই জন্মসঞ্চরণ করেছিলাম। সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা অমার বালির চৈত্য পূজা কারারই ফল।

১৪২.কার্তিক মাসে যেমন বহুফুলফোটে, তদ্রুপ আমিও মহর্ষি বুদ্ধের সময়েপুষ্পিত হয়েছি অর্থাৎ জন্মগ্রহণ করেছি।

১৪৩.বীর্যই আমার দৃঢ়ভাবে বেঁধে রাখা শক্ত রশির ন্যায় ও যোগক্ষেম সমাধিই আমার একমাত্র বাহন। আমি নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে সম্পূর্ন অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

১৪৪.আজ থেকে লক্ষ কল্প আগে আমি যেই, বুদ্ধস্তুতি, করেছিলাম। সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার বুদ্ধস্তুতিরইফল।

১৪৫.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

১৪৬.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

১৪৭.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানপুলিনুপ্পদকস্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [পুলিনুপ্পাদকস্থবির অপদান সপ্তম সমাপ্ত]

৮.তরনীয় স্থবির অপদান

১৪৮.একসময় সয়মূ্ভ লোকনায়ক তথাগত র্অদর্শী ভগবান বিনতা নদীর তীরে গিয়েছিলেন।

১৪৯.সেই নদীতে তখন আমি ছিলাম জলচর কচ্ছপ। গভীর জল থেকে ভেসে উঠে লোকনায়ক বুদ্ধকে পরপারে পার করিয়ে দেবার ইচ্ছায় আমি তার নিকট গিয়েছিলাম।

১৫০.হে মহামুনি অর্থদর্শী বুদ্ধ, আপনি আমার উপর উঠে পড়ন!ু হে দুঃখের অন্তসাধনকারী, আমিই আপনাকে পার করিয়ে দেব।

১৫১.আমার সংকল্পের কথা অবগত হয়ে মহাযশস্বী লোকনায়ক অর্থদর্শী ভবান আমার পিঠে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন।

১৫২.প্রাঁপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকেযত দিন আমি নিজের সর্ম্পকে স্মরণ করতে পারি, বুদ্ধের পদযুগল আমার পিঠে স্পর্শ করায় জীবনে পাইনি।

১৫৩.মহাযশস্বী অর্থদর্শী সম্বুদ্ধ নদী পার হওয়ার পর নদীতীরেদাঁড়িয়ে এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন।

১৫৪.আমি যখনি এই নদীর স্রোত পার হবো বলে মনে মনে সংকল্প করেছি, ঠিক সেই মুহুর্তে এই প্রজ্ঞাবান কচ্ছপরাজই আমাকে পার করে দিয়েছে।

১৫৫.এই কচ্ছপ মৈত্রীচিত্তে বুদ্ধকে পার করিয়ে দেওয়ার ফলে একশ আঠার কল্প দেবলোকে রমিত হবে।

১৫৬.দেবলোক হতে এখানে এসে সে পূর্বকৃতপুণ্যপ্রভাবে একাসনে বসেই সন্দেহ স্রোত পার হবে।

১৫৭.উর্বর ক্ষেত্রে অল্পমাত্র বীজ রোপন করা হলেও সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে বারি বর্ষণ হলে কৃষক যেমন বিপুল ফল লাভে খুশি।হয়

১৫৮.অনুরূপভাবে সম্যকসম্বুদ্ধ দেশিত বুদ্ধক্ষেত্রে অল্পমাত্রপুণ্যবীজ রোপিত হওয়া সত্ত্বেও যথাসময়ে ও সঠিক পরিমাণে বারি বর্ষণ হলে পরে একেও ফলে তুষ্ট করবে।

১৫৯.এখন আমি ভাবনানিরত, ভাবিতচিত্ত, উপশান্ত, উপধিহীন, সর্বাসব ক্ষয় করে সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

১৬০.আজ থেকে একশ আঠার কল্প আগে আমি যেই, কর্ম করেছিলাম। সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার বুদ্ধকে পারকরিয়ে দেওয়ারই ফল।

১৬১.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

১৬২.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

১৬৩.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মান তরনীয়স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [তরণীয় স্থবির অপদান অষ্টম সমাপ্ত]

৯.ধর্মরুচিয় স্থবির অপদান

১৬৪.দীপংকর বুদ্ধযখন সুমেধ তাপস সর্ম্পকে ভবিষ্যদ্বাবাণী করেছিলেন এই বলে যে, আজ থেকে অপরিমেয় কল্প পরে এই ব্যক্তি বুদ্ধহবে।

১৬৫.তখন এই ব্যক্তির মাতার নাম হবে মায়াদেবী আর পিতার নাম হবে শুদ্ধোধন। তার নাম হবে গৌতম।

১৬৬.এই ব্যক্তি কঠোর সাধনা করে ও দুষ্কর চর্যা অনুশীলন করে পরিশেষে অশ্বত্থ বৃক্ষমূলে মহাযশস্বী সম্বুদ্ধ হবে।

১৬৭.তখন তার অগ্রশ্রাবকদের নাম যথাক্রমে উপতিষ্য ও কোলিত এবং আনন্দ নামক তার সেবক নিত্য তাকে সেবা করবে।

১৬৮.তার অগ্রশ্রাবিকাদ্বয় যথাক্রমে ক্ষেমা ও উৎপলবর্ণা এবং উপাসকদের মধ্যে চিত্ত গৃহপতি ও আলবকই হবেশ্রেষ্ঠ বা প্রধান।

১৬৯.উপাসিকাদের মধ্যে খুজ্জুত্তরা নন্দমাতাই শ্রেষ্ঠ। এই বীরের বোধিবৃক্ষের নাম হবে অশ্বত্থ।

১৭০.অদ্বিতীয় মহর্ষির এই কথা শোনার পর আনন্দিত নর মরুগণ কৃতাঞ্জলি হয়ে তাকে নমস্কার করেছিল।

১৭১.তখন আমি মেঘো নামক সুশিক্ষিত মানব ছিলাম এবং আমি সুমেধ তাপস সর্ম্পকে মহামুনির শ্রেষ্ঠ ভবিষ্যদ্বাণী শুনেছিলাম।

১৭২.সেই প্রব্রজ্যাধারী মহাবীর, করুণাসাগর সুমেধ তাপসের সহগামী হয়ে তার সাথেই প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম।

১৭৩.আমি ছিলাম প্রাতিমেক্ষ শীলে ও পঞ্চেন্দ্রিয়ে সুসংযত, শুদ্ধজীবী, স্মৃতিমান, বীর এবং জিনশাসন অনুশীলনকারী।

১৭৪.ভীষণরকম দুশ্চিন্তা করতে করতে হঠাৎ একদিন আমি প্রব্রজ্যা ত্যাগ করেছিলাম। পরে সেই পাপমিত্রের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে মাতৃহত্যা করেছিলাম।

১৭৬.আমি আন্তরিক কর্ম করেছিলাম। প্রদুষ্টমনে মাতৃহত্যা করেছিলাম। তাই মৃত্যুর পর আমি নিদারুণ দুঃখময় মহাঅবীচি নরকে জন্মেছিলাম।

১৭৭.আমি বিনিপাত নিরয়গামী হয়ে সুদীর্ঘ কালব্যাপী অত্যন্ত দুঃখের সাথে বসবাস করেছিলাম। আমি তার কখনও নরশ্রেষ্ঠ বীর সুমেধ তাপসকে দেখতে পাইনি।

১৭৮.এই ভদ্রকল্পে আমি সমুদ্রে বিশাল এক তিমিমাছ হয়ে জন্মেছিলাম। সাগরে বিশাল একটি জাহাজ দেখে আমি আহারের খোঁজে সেটির কাছকাছি গিয়েছিলাম।

১৭৯.আমাকে দেখে বণিকেরা ভীষণভাবে ভীত হয়েছি। এবং বুদ্ধশ্রেষ্ঠকে স্মরণ করছিল। আমি তাদের সেই উচ্চরিত ‘গৌতম’ শব্দটি শুনতে পেয়েছিলাম।

১৮০.শব্দটি শোনার সাথে সাথে আমার পূর্বলব্দ সংজ্ঞ মনের পর্দায় ভেসে উঠেছিল। তৎক্ষণাৎ আমি মরে গিয়েছিলাম। তারপর শ্রাবস্তীর এক ধনাঢ্য ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মনিয়েছিলাম।

১৮১-১৮২. আমি সর্বপাপের প্রতি ঘৃণা পোষণকারী ‘ধর্মরুচি’ নাম ধারণ করেছিলাম। একদিন আমি লোকপ্রদ্যেৎ ভগবান বুদ্ধকে দেখতে পেয়েছিলাম। তারপর আমি মাত্র সাতবৎসর

বয়সে মহাজেতবনে গিয়ে অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম। দিনে আর রাতে মিলে আমি মোট তিনবার বুদ্ধের কাছে উপসিস্থত হয়েছিলাম।

১৮৩.তখন মহামুনি আমায় দেখে বললেন, ‘ধর্মরুচি, বড্ড দেরি হয়ে গেছে!’ তারপর আমি পূর্বকৃত কর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বুদ্ধকে বললাম:

১৮৪.সুদীর্ঘ কাল পরে আমি শতপুণ্যলক্ষণ বিশিষ্ট, বিশুদ্ধপ্রত্যয়ী, নিরূপম বিগ্রহধারী আপনাকে দেখতে পাচ্ছি। অহো, ইহা আমার পক্ষে কতো যে শুভক্ষণ !

১৮৫.সুদীর্ঘকাল আমি নিজেকে নষ্ট করেছি। সুদীর্ঘকালব্যাপী এতই চোখের জল ফেলেছি যে অক্ষিনদী পর্যন্ত শুকিয়ে গিয়েছে। হে মহামুনি, দীর্ঘকাল পরে হলেও এখন আমার চক্ষুদ্বয়কে বিশুদ্ধ জ্ঞানময় এ নির্মল করুন!

১৮৬.দীর্ঘকাল আপনার সাহচর্যে থাকায় এই সুদীর্ঘকাল পরেও আমার সবকিছু এখনও শেষ হয়ে যায়নি। তাই পুনরায় আপনার দেখা আমি পেয়েছি। হে গৌতম, আমার সেই পূর্বকৃত কর্ম এখনও নষ্ট হয়নি।

১৮৭.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

১৮৮.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

১৮৯.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধেরশাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানধর্মরুচিয় স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [ধর্মরুচিয় স্থবির অপদান নবম সমাপ্ত]

১০.শালমণ্ডপিয় স্থবির অপদান

১৯০.আমি শালবনে প্রবেশ করে শালপষ্পে সমাচ্ছ একটি আশ্রম তৈরি করেছিলাম। তখন আমি এভাবে গহীন অরন্যে বসবাস করছিলাম।

১৯১.একদিন সয়মূ্ভ অগ্রপুদুগল, বিবেককামী সম্বুদ্ধ প্রিয়দর্শী ভগবান শালবনে উপস্থিত হয়েছিলেন।

১৯২.আমি আশ্রম থেকে বের হয়ে গভীর অরন্যে গিয়েছিলাম। তখন আমি ফলমূল খঁজতে খঁজতে বনে বিচরণ করছিলাম।

১৯৩.সেই গভীর বনে আমি সুউপবিষ্ট, উজ্জল, জ্যোতির্ময়, মহাযশস্বী প্রিয়দর্শী সম্বুদ্ধকে দেখতে পেয়েছিলাম।

১৯৪.আমি তখন চারদিকে চারটি খুটি গাড়িয়ে বুদ্ধের জন্য একটি মণ্ডপ তৈরি করেছিলাম এবং গোটা মণ্ডপটি শালপুষ্পে দিয়ে আচ্ছন্ন করেছিলাম।

১৯৫.এভাবে আমি শালপুষ্পচ্ছন্ন মণ্ডপটি সাতদিন যাবৎ ধারণ করেছিলাম। তাতে অতীব চিত্ত প্রসন্ন হয়ে আমি বুদ্ধশ্রেষ্ঠকে বন্দনা নিবেদন করেছিলাম।

১৯৬.সপ্তাহকাল পরে সমাধি হতেহ উঠে পুরুষোত্তম ভগবান যুগমাত্র সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।

১৯৭.তখন বরুণ নামক তাঁর এক শিষ্য লাখো ক্ষীণাসব অর্হকে সঙ্গে নিযে বিনায়ক প্রিয়দর্শী শাস্তার কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন।

১৯৮.লোকশ্রেষ্ঠ নরোত্তম জিন প্রিয়দর্শী ভগবান ভিক্ষুসংঘের মাঝে উপবেশনকরে সামান্য হেঁসেছিলেন।

১৯৯.তখন প্রিয়দর্শী শাস্তার সেবক অনুরুদ্ধ উত্তরাসঙ্গ একাংশ করে মহামুনিকে জিজ্ঞেস করছিলেন।

২০০.হে ভগবান, শাস্তার হাঁসির কারণ কী ? কারণ, শাস্তা তো বিনা কারণে হাঁসেন না।

২০১.যেই মানব (ব্যক্তি) সপ্তাহকাল যাবৎ আমার মাথায় শালপুষ্পাচ্ছাদ ধারণ করেছে, তার কৃতকর্ম স্মরণ করেই আমার সামান্য হাঁসি পেয়েছে।

২০২.আমি এমন কোনো স্থান দেখতে পাচ্ছি না, যেখানে এই পুণ্যবিপাক দিতে পারবে না। কী দেবলোকে, কী মনুষ্যলোকে সর্বত্রই সে বিপাক দেবে।

২০৩.পুণ্যকর্মসমন্বিত হয়ে সে যখন দেবলোকে বসবাস করবে, তখন সপরিষদে সে শালপুষ্পচ্ছন্ন হয়ে াকবে।

২০৪.তখন সেখানে সে পুণ্যকর্মসমন্বিত হয়ে নিত্য দিব্য নাচ-গান আর বাদ্যযন্ত্রে রমিত হয়ে থাকবে।

২০৫.তার সমগ্র পরিষদ তখন নিত্য সুগন্ধীময় থাকবে। তখন সপরিষদ তার উপর শালপুষ্পবৃষ্টি বর্ষিত হবে।

২০৬.সেখান থেকে চ্যুত হয়ে সে যেখন মনুষ্যলোকে মানুণ হয়ে জন্মগ্রহণ করবে, তখন এখানেও তার উপর সব সময় শালপুষ্পচ্ছাদনী ধারণ করা হবে।

২০৭.এখানেও তাকে ঘিরে সব সময় নাচ-গান ও মনোজ্ঞ বাদ্যবাজনা পরিবেশিত হবে। ইহা তার বুদ্ধপূজরই ফল।

২০৮.সূর্যোদয়ের সাথে সাথে তার উপর শালপুষ্পবৃষ্টি বর্ষিত হবে। পুণ্যকর্মসমন্বিত হওয়ায় তার উপর সব সময় এভাবেই পুষ্পবর্ষন হতে থাকবে।

২০৯.আজ থেকে একশ আঠার কল্প পরে ওক্কাকুকুলে গৌতম গোত্রে এক শাস্তা পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করবেন।

২১০.তাঁর ধর্মে সে ধর্মৌরসজাত উত্তরাধিকারী হবে এবং অভিজ্ঞা দ্বারা সর্বাসব ক্ষয় করে সম্পুর্ন অনাসক্ত হয়ে পরিনির্বাপিত হবে।

২১১.ধর্মজ্ঞান লাভের সময়ও তার উপর শালপুষ্পাচ্ছাদনী থাকবে এবং শ্মশানে দগ্ধ করার সময়ও তার উপর পুষ্পচ্ছাদনী থাকবে।

২১২.প্রিযদর্শী মহামুনি এভাবে আমার ভাবীবিপাক সর্ম্পকে বলার পর সেই ভিক্ষুপরিষদে ধর্মদেশনা করেছিলেন, ধর্মবারিবর্ষনে পরিতৃপ্ত করেছিলেন।

২১৩.আমি দেবলোকে ত্রিশ কল্প ধরে দেবরাজত্ব করেছিলাম এবং সাতষট্টিবার চক্রবর্তী রাজা হয়েছিলাম।

২১৪.দেবলোক হতে চ্যুত হয়ে এখানে জন্মগ্রহণ করেও আমি বিপুল সুখ ও শালপুষ্পচ্ছাদনী লাভ করেছি। ইহা আমার মণ্ডপদানেরই ফল।

২১৫.এই ভবসংসারে এই আমার শেষ জন্ম। এই শেষ জন্মেও আমার উপর নিত্য শালপুষ্পচ্ছাদনী বিদ্যমান থাকে।

২১৬.শাক্যপুঙ্গব মহামুনিগৌতমকে পুরিতুষ্ট করে আজ আমি সমস্তজয়-পরাজয় ত্যাগ করে অচলস্থান নির্বাণ লাভ করেছি।

২১৭.আজ থেকে একশ আঠার কল্প আগে আমি যেই, বুদ্ধপূজা করেকুশলকর্ম করেছিলাম। সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার বুদ্ধপূজারইফল।

২১৮.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

২১৯.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

২২০.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানশালমণ্ডপিয় স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [শালমণ্ডপিয় স্থবির অপদান দশম সমাপ্ত]

[পাংশুকূল বর্গ ঊনপঞ্চশতম সমাপ্ত]

স্মারক-গাথা

পাংশুকূল, বুদ্ধসংজ্ঞক, ভিসদায়ক, জ্ঞানথবিক, চন্দনমালিয়, ধাতুপূজক, পুলিনুপ্পাদক, তরনীয়, ধর্মরুচিয় ও শালমণ্ডপিয় স্থবির, এই দশে মোট দুশ বিশ গাথায় সমাপ্ত।