৩.কুণ্ডলকেশা বর্গ

১.কুণ্ডলকেশা থেরী অপদান

১.আজ থেকে লক্ষ কল্প আগে পৃথিবীতেসর্ববিধ ধর্মে বিশেষপারদর্শী নায়ক পদুমুত্তর জিন উৎপন্ন হয়েছিলেন।

২.তখন আমি হংসবতি নগরে এক শ্রেষ্ঠী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলাম। আমি নানাবিধ রত্ন পরিবেষ্টিত হয়ে মহাসুখে দিনাতিপাত করছিলাম।

৩.একদিন আমি সেই মহাবীর জিনের কাছে গিয়ে ধর্মদেশনা শুনেছিলাম। তাতে আমার শ্রদ্ধা উৎপন্ন হয়েছিল এবং আমি বুদ্ধের শরণ গ্রহণ করেছিলাম।

৪.তখন মহাকারুনিক পদুমুত্তর বুদ্ধ একভিক্ষুণীকে ক্ষিপ্রাভিজ্ঞাসম্পন্নদেন মধ্যে শ্রেষ্ঠপদে প্রতিষ্ঠিত করছিলেন।

৫.তা শুনে আমি ভীষণ রকমভাবে খুশি হয়েছিলাম এবং মহর্ষি বুদ্ধকে মহাদান দিয়েতাঁর পায়ে মাথা ঠেকিয়ে সেই শ্রেষ্ঠপদ প্রার্থনা করেছিলাম।

৬.মহাবীর বুদ্ধ আমার প্রার্থনা অনুমোদন করেছিলেন এই বলে: ‘ভদ্রে, তোমার প্রার্থনা সফল হবে। তুমি সুখিনী ও নিবৃত ।’হও

৭.আজ থেকে লক্ষ কল্প পরে ওক্কাকুকুলে গৌতম নামক শাস্তা পৃথিবীতেউৎপন্ন হবেন।

৮.তাঁর ধর্মে ধর্মৌরসজাত উত্তরাধিকারিনী ভদ্রা কুণ্ডলকেশ নামী শাস্তাশ্রাবিকা হবে।

৯.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মেছিলাম।

১০.সেখান থেকে চ্যুত হয়ে যাম দেবলোকে, সেখান থেকে চ্যুত হয়ে তুষিত দেবলোকে, সেখান থেকে চ্যুত হয়ে নির্মাণরতি দেবলোকে, এবং সেখান থেকে চ্যুত হয়ে পরনির্মিত বশবর্তী দেবলোকে জন্মগ্রহণ করেছিলাম।

১১.সেই কর্মের ফলে আমি যেখানেই জন্মগ্রহণ করি না কেন, সর্বত্রই রাজাগণের মহেষী হয়েছিলাম।

১২.সেখান থেকে চ্যুত হয়ে আমি বহুবার মনুষ্যগণের মধ্যে রাজচক্রবর্তী ও প্রাদেসিক রাজাদের মহিষী হয়েছিলাম।

১৩.দেবমনুষ্যলোকে উভয় সম্পত্তি ভোগ করে সর্বত্রই আমি সুখী হয়েবহুকল্পকাল বিচরণ করেছিলাম।

১৪.এই ভদ্রকল্পে ব্রহ্মবন্ধু মহাযশস্বী কাশ্যপ বুদ্ধ পৃথিবীতে উৎপন্ন হয়েছিলেন।

১৫.তখন বারাণসী নগরের কাশিরাজ কিকী নরেশ্বর মহর্ষি বুদ্ধের সেবক ছিলেন।

১৬.আমি তখন সেই রাজার চতুর্থ কন্যা ছিলাম। আমার নাম ছিল ভিক্ষুণী দায়িকা। আমি জিনশ্রেষ্ঠের ধর্মকথা শুনে প্রব্রজ্যা গ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম।

১৭.বাবা আমাদের অনুমতি দেননি। তারপর আমরা বোনেরা সবাই মিলে গৃহে থেকেই বিশ হাজার বৎসর অতন্দ্রভাবে বিচরণ করেছিলাম।

১৮.আমরা সাতজন সুখিনী রাজকন্যা সবাই মিলে খুশি মনে ব্রহ্মচর্যাও বুদ্ধসেবায় নিয়োজিত ছিলাম।

১৯.সেই সাতজন রাজকন্যা হচ্ছে, সমনী, সমণগুত্তা, ভিক্ষুণী, ভিক্ষুদায়িকা, ধম্মা, সুধম্মা ও সংঘদায়িকা।

২০.বর্তমানে যথাক্রমে ক্ষেমা, উৎপলবর্ণা, পটাচারা, আমি, কৃশাগৌতমী, ধর্মদিন্না ও বিশাখা।

২১.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মেছিলাম।

২২-২৩. এই শেষ জন্মে আমি রাজগৃহের এক সমান্ত্ভ শ্রেষ্ঠী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। আমি যখন যৌবনে পদার্পন করলাম, তখন এক চোকে বধের জন্যে নিয়ে যেতে দেখে আমি তার প্রেমে পড়ে গেলাম। বিষয়টি পিতাকে জানালে তিনি হাজার টাকা দিয়ে তাকে শাস্তি থেকে মুক্ত করলেন।

২৪.আমি ছিলাম পিতার অতি আদরের কন্যা। তাই তিনি আমার প্রতি স্নেহ পরবশ হয়ে সেই চোরের সাথে বিয়ে দিলেন।

২৫.সেই চোর আমার বস্ত্রালংকারের লোভে ‘বধের জন্য নিয়ে যাবার সময় একটা মানত করেছি’ বলে আমাকে এক গিরিশৃঙ্গে নিয়ে গেল। আমি তার অভিপ্রায় বুঝতে পারলাম।

২৬.তখন আমি হাত জোড় করে প্রনামের ভঙ্গিতে আমার প্রাণ রক্ষার আকুতি জানিয়ে এই কথা নিবেদন করেছি:

২৭.“এই সোনাদানা, মণি, মুক্তা, বেলুরিয়, সবকিছুই তো তোমার। হে স্বামীন, আমাকে দাসী হিসেবে গ্রহণ কর। আমি নিয়ত তোমার সেবা করব।”

২৮.“হে কল্যাণী, বাদ দাও ওসব। তোমার স্বর্ণালংকার সবকিছু খুলে ফেল। মূর্খের মতো কেদোঁনা। আমি অন্য কিছু বুঝি ।নাআমি শুধু তোমার স্বর্ণালংকার চাই।”

২৯.প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যেদিন থেকে স্মরণ করতে পারি সেই থেকে আমি শুধু তোমাকেই ভালোবেসেছি। অন্যকাইকে ভলোবেসেছি বলে আমার জানা নেই।

৩০.এসো প্রিয়ে, আমি তোমাকে প্রদক্ষিণ করে শেষ বারের মতো চুম্বন ও আলিঙ্গণ করতে চাই।

৩১.শুধু পুরুষেরাই সর্বক্ষেত্রে পণ্ডিত হয়না, মেয়েরাও পণ্ডিত ও বিচক্ষণ হয়ে থাকে।

৩২.শুধুপুরুষেরাই সর্বক্ষেত্রেই সর্বক্ষেত্রে পণ্ডিত হয় না, মেয়েরাও পণ্ডিত, সূক্ষ্ণ বুুদ্ধিমতি ও প্রত্যুৎপন্নমতি সম্পন্না হয়ে থাকে।

৩৩.অহো, তখন আমি ক্ষীপ্রগতিতে সেই লোলুপ চোর স্বামীকে মৃগশিকারেরন্যায় বধ করলাম।

৩৪.যে ব্যক্তি, যথা শীঘ্রই পরিস্থিতি বুঝতে না পারে, সেই ব্যক্তি এই মন্দবুদ্ধিসম্পন্ন চোরের ন্যায় গিরিশৃঙ্গে নিহত হয়।

৩৫.“আর যে ব্যক্তি খুব শীঘ্রই পরিস্থিতি বুঝতে পারে, সে ব্যক্তি ঠিক আমার মতো করে শত্রুর হাত থেকে মুক্তি পায়।”

৩৬.তখন আমি তাকে গিরিশৃঙ্গে ফেলে দিয়েশ্বেত গৃহীবস্ত্র ত্যাগ করে অন্যতীর্থিয়দের কাছে গিয়ে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছি।

৩৭.তখন তারা আমার সমস্ত চুলকে কুণ্ডলায়িত করে বাঁধিয়ে দিয়ে প্রব্রজ্যা দিয়ে নিরন্তর শিক্ষা দিতে লাগল।

৩৮.তাদের শিক্ষা শেষ করে একদিন আমি একাকী বসে বসে সেই সমস্ত শিক্ষার কথা মনে মনে ভাবতে লাগলাম।

৩৯.আমি আমার স্বামীকে গিরিশৃঙ্গে ফেলে দিয়ে চলে এসেছি। এখন আমি তার সেই হাত-পায়ের অস্থিকংকাল নির্মিত দেখতেপাচ্ছি।

৪০.আমি ভীষণ সংবিগ্ন হলাম। তারপর উঠে গিয়ে সহবিহারীদের জিজ্ঞেস করলাম। তারা আমায় বলল, সেটির সম্বন্ধে শাক্যপুত্রীয় ভিক্ষুরাই ভালো জানেন।

৪১.তারপর আমি বুদ্ধশ্রাবকদের কাছে গিয়ে বিষয়টি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম। তারা আমাকে বুদ্ধশ্রেষ্ঠের কাছে নিয়ে গেলেন।

৪২.তখন বুদ্ধ আমাকে স্কন্ধ, আয়তন, ধাতু, অশুভ, অনিত্য, দুঃখ, অনাত্ন প্রভৃতি বিষয়ে ধর্মদেশনা করলেন।

৪৩.তাঁর ধর্মদেশনা শুনে আমি বিশুদ্ধ ধর্মচক্ষু লাভ করেছি। আমি সদ্ধর্ম জ্ঞাতি হয়েছি। আমি প্রব্রজ্যা ও উপসম্পদা লাভ করেছি।

৪৪.তখন আমার দ্বারা যাচিত হয়ে নায়ক বুদ্ধ আমাকে ‘এসো ভদ্রে’ বললেন। তাতেই আমি পরিশুদ্ধ পবিত্র উপসম্পদা লাভ করেছি।

৪৫.আমি যখন পা ধোয়ার জন্য গেলাম, তখনি উদয়-ব্যয় জেনে, সর্বসংস্কার অনিত্য জেনে এভাবে চিন্তা করলাম।

৪৬.ঠিক তখনি আমার চিত্ত সম্পূর্ণ তৃষ্ণামুক্ত হয়ে বিমুক্ত হলো। তারপর বুদ্ধ আমাকে ক্ষিপ্রাভিজ্ঞাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠপদে বসালেন।

৪৭-৪৮. আমি বিবিধ ঋদ্ধি, দিব্যশ্রোত্র, পরচিত্তবিজাননজ্ঞান ও পূর্বনিবাসানুস্মৃতি জ্ঞান সর্বাসব ক্ষয় করে এখন আমি বিশুদ্ধ, সুনির্মল।

৪৯.বুদ্ধের উপদেশ আমি পালন করেছি। বুদ্ধের শাসনে আমি কৃতকার্য হয়েছি। আমার কাঁধ থেকে দুঃখভার নেমে গিয়েছে। আমার ভবনেত্রি তৃষ্ণা সমূলে বিনষ্ট হয়েছে।

৫০.যেই উদ্দেশে নিয়ে আমি গৃহত্যাগ করে অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছি, আমার সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। আমার সর্ববিধ সংযোজন ক্ষয় হয়েছে।

৫১.বুদ্ধশ্রেষ্ঠের শাসনে অ,র্ ধর্ম, নিরুক্তি, প্রতিভাণ এই চারি প্রতিসমিদায়্ভ আমার জ্ঞান অত্যন্ত বিমল, বিশুদ্ধ।

৫২.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

৫৩.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

৫৪.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই কুণ্ডলকেশা ভিক্ষুণীএই গাথাগুলে ভাষণ করেছিলেন। [কুণ্ডলকেশা থেরী অপদান প্রথম সমাপ্ত]

২.কৃশাগৌতমী থেরীঅপদান

৫৫.আজ থেকে লক্ষ কল্প আগে পৃথিবীতে সর্ববিধ ধর্মে পারদর্শী নায়ক পদুমুত্তর জিন উৎপন্ন হয়েছিলেন।

৫৬.তখন আমি হংসবতি নগরে জনৈক পরিবরে জন্মনিয়েছিলাম। একদিন নরশ্রেষ্ঠ বুদ্ধের কাছে গিয়ে শরণ গ্রহণ করেছিলাম।

৫৭.তখন আমি তাঁর মুখ থেকে চতুর্সত্য বিষয়ক, মধুর, পরম স্বদযুক্ত, বর্ত শান্তিসুখাবহ ধর্মকথা শুনেছিলাম।

৫৮.পুরুষোত্তম বুদ্ধ তখন একভিক্ষুণীকে রুক্ষচীবর ধারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে ভূয়শী প্রশংসা করছিলেন।

৫৯.সেই ভিক্ষুণীর গুণের কথা শুনে আমার মনে ভীষণ রকম প্রীতি উৎপন্ন হয়েছিল। তারপর আমি যথাশক্তি বুদ্ধশ্রেষ্ঠকে দান করেছিলাম।

৬০.তারপর আমি মুনিবরের পায়ে নিপতিত হয়ে সেই শ্রেষ্পপদ প্রাথর্না করেছিলাম। তখন পদুমুত্তর নায়কসম্বুদ্ধ আমার প্রার্থনা অনুমোদন করেছিলেন।

৬১.আজ থেকে লক্ষ কল্প পরে ওক্কাকুকুলে গৌতম শাস্তা পৃথিবীতে উৎপন্ন হবেন।

৬২.তারধর্মে ধর্মৌরসজাত উত্তরাধিকারিনী কৃশাগৌতমী নামী শাস্তাশ্রাবিকা হবে।

৬৩.তা শুনে আমি ভীষণভাবে খুশি হয়েছিলাম। তারপর আমি আজীবন মৈত্রীতগতচিত্তে চতুর্প্রত্যয়ে বিনায়ক বুদ্ধকে সেবাপরিচর্যা করেছিলাম।

৬৪.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মেছিলাম।

৬৫.এই ভদ্রকল্পে ব্রহ্মবন্ধু, মহাযশস্বী কাশ্যপ বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছিলেন।

৬৬.তখন বারাণসী নগরে কাশিরাজ কিকী নরেশ্বর মহর্ষি বুদ্ধের সেবক ছিলেন।

৬৭.সেই রাজার পঞ্চম কন্যা ছিলাম আমি। আমার নাম ছিল ধম্মা। জিনশ্রেষ্ঠী বুদ্ধের ধর্মকথা শুনে আমি প্রব্রজ্যা লাভের আকাঙ্খা করেছিলাম।

৬৮.কিন্তু বাবা আমাদের প্রব্রজ্যা লাভের গৃহে থেকেই বিশ হাজার বৎসর অতন্দ্রভাবে বিচরণ করেছিলাম।

৬৯.আমরা সাতজন সুখিনী রাজকন্যা সবাই মিলে খুশি মনে ব্রহ্মচর্যা ও বুদ্ধসেবায় নিয়োজিত ছিলাম।

৭০.সেই সাতজন রাজকন্যা হচ্ছে, সমণী, সমণগুত্তা, ভিক্ষুণী, ভিক্ষুদায়িকা, ধম্মা, সুধম্মা ও সংঘদাসিকা।

৭১.বর্তমানে যথাক্রমে ক্ষেমা, উৎপলবর্ণা, পটচারা, কুণ্ডলা, আমি, ধর্মদিন্না ও বিশাখা।

৭২.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্ম নিয়েছিলাম।

৭৩.এই শেষজন্মে আমি এক শ্রেষ্ঠী পরিবারে জন্ম নিয়েছিলাম। মূলত দরিদ্র পরিবারে জন্ম হলেও একধনী পরিবারে আমার বিয়ে হয়েছিল।

৭৪.একমাত্র স্বামী ছাড়া পরিবারের অন্য সবাই আমাকে দরিদ্র ঘরের মেয়ে হওয়ার কারণে নানাভাবে কষ্ট দিত। কিন্তু যখনি আমি একটি সন্তান প্রসব করলাম, তখন থেকে সকলের প্রিয় হলাম।

৭৫.আমার সেই সন্তানটি একটু বড় হয়ে সকলের আদরনীয় হলে পরে অকস্মাৎ মারা গেল।

৭৬.এতে আমি ভীষণ শোকগ্রস্ত হলাম। অশ্রুমুখেকাঁদতে কাঁদতে আমার পুত্রের মৃতদেহ নিয়ে বিলাপ করতে করতে এখানে-ওখানে যেতে লাগলাম।

৭৭.তখন আমি এক হিতৈষীর নির্দেশে শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক বুদ্ধের কাছে গিয়ে বললাম, ‘প্রভু, আমাকে ওষুধ দিন, যাতে মৃত পুত্র বেঁচে ।’যায়

৭৮.বিয়োপায় বিশারদ বুদ্ধ আমাকে বললেন, তোমাকে যেই ঘরে কোনো ব্যক্তি মারা যায়নি এমন ঘর থেকে একমুষ্টিপরিমাণ সর্ষপ আনতে হবে।

৭৯.তখন আমি গোটা শ্রাবস্তীনগর ঘরে তেমন কোনো ঘর পেলাম না। কোথায় আবার সর্ষপ। এই ঘটনার পর আমার জ্ঞান ফিরে আসল।

৮০.তারপর আমি আমার সন্তনের মৃতদেহ ফেলে দিয়ে লোকনায়ক বুদ্ধের কাছে গেলাম। তিনি আমার দূর হতে আসতে দেখে মধুর স্বরে বললেন:

৮১.উদয়-ব্যয় দর্শন না করে একশত বৎসর জীবিত থাকার চাইতে উদয়-ব্যয় দশর্ন করে একদিন মাত্র বেঁচে থাকাও শ্রেয়।

৮২.এই অনিত্যতা শুধু গ্রাম, নিগম বা কোনো এক পরিবরের ধর্ম বা স্বভাব নয়, ইহা সমস্ত সদেবলোকের ধর্ম।

৮৩.এই গাথাটি শুনে আমার বিশুদ্ধ ধর্মচক্ষু হয়েছিল। সদ্ধর্ম জ্ঞাত হয়ে আমি অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম।

৮৪.প্রব্রজ্জিত হওয়ার পর জিনশাসনে রত থেকে আমি অচিরেই অর্হত্ত্ব লাভ করেছিলাম।

৮৫-৮৬. আমি বিবিধ ঋদ্ধি, দিব্যশ্রোত্র পরচিত্তবিজাননজ্ঞান ও পূর্বানিবাসানুস্মৃতি জ্ঞান লাভ করেছি। আমার দিব্যচক্ষু অত্যন্ত বিশুদ্ধ। সর্বাসব ক্ষয় করে এখন আমি বিশুদ্ধ, সুনির্মল।

৮৭.বুদ্ধের উপদেশ আমি পালন করেছি। বুদ্ধের শাসনে আমি কৃতকার্য হয়েছি। আমার কাঁধ থেকে দুঃখভার নেমে গিয়েছে। আমার ভবনেত্রি তৃষ্ণঅ সমূলে বিনষ্ট হয়েছে।

৮৮.যেই উদ্দেশে নিয়ে আমি গৃহত্যাগ করে অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছি, আমার সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। আমার সর্ববিধ সংযোজন ক্ষয় হয়েছে।

৮৯.বুদ্ধশ্রেষ্ঠের প্রভাবে অ,র্ ধর্ম, নিরুক্তি, প্রতিভাণ এই চারিপ্রতিসমিদায়্ভ আমার জ্ঞান অত্যন্ত বিমর, বিশুদ্ধ।

৯০.আমি শ্মশান, অর্বজনাস্তুপ, রাস্তাঘাট হতে জীর্ণ, শীর্ণ, বস্ত্র নিয়ে উত্তরাসঙ্গাটি তৈরি করে রুক্ষ চীবর ধারণ করে থাকে।

৯১.জিনশ্রেষ্ঠ বিনায়ক বুদ্ধ আমার এই গুণ দেখে পরিষদের মধ্যে আমাকে রুক্ষচীবরধারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠপদে বসালেন।

৯২.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

৯৩.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

৯৪.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনেকৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই কৃশাগৌতমীভিক্ষুণীএই গাথাগুলে ভাষণ করেছিলেন। [কৃশাগৌতমী থেরী অপদানদ্বিতীয় অপদান সমাপ্ত]

৩.ধর্মদিন্না থেরী অপদান

৯৫.আজ থেকে লক্ষ কল্প আগে সর্ববিধ ধর্মে বিশেষ পারদর্শী নায়ক পদুমুত্তর জিন উৎপন্ন হয়েছিলেন।

৯৬.তখন আমি হংবতি নগরে জনৈক পরিবারে এক পরিচারিকা ছিলাম। আমি ছিলাম শীলবতী ও জ্ঞানবতী।

৯৭.একদিন পদুমুত্তরবুদ্ধের অগ্রশ্রাবক সজাত স্থবির বিহার হতে বের হয়ে ভিক্ষার জন্য যাচ্ছিলেন।

৯৮.তখন আমি ঘটে করে জল নিয়ে যাচ্ছিলাম। তাকে দেখে আমি প্রসন্নমনে নিজ হাতে পিঠা দান করেছিলাম।

৯৯.আমার পিঠাগুলো নিয়ে তিনি সেখানে বসেই খেলেন। তারপর আমি তাঁকে ঘরে নিয়ে গিয়ে ভোজন দান করেছিলাম।

১০০.তারপর সেই গৃহস্বামী খুশী হয়ে আমাকে তার পুত্রবধু করেছিলেন। একদিন আমি শ্বাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে বিহারে গিয়ে সম্বুদ্ধকে অভিবাদন করেছিলাম।

১০১.তখন তিনি এক ধর্মকথিকা ভিক্ষুণীর ভূয়শী প্রশংসা করে তাকেধর্মকথিকা শ্রেষ্ঠপদে বসিয়েছিলেন। তা শুনে আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম।

১০২. তারপর আমি সশ্রাবক লোকনায়ক সুগতকে নিমন্ত্রণ করে মহাদান দিয়ে সেই শ্রেষ্ঠপদ প্রার্থনা করেছিলাম।

১০৩-১০৪. তখন সুগত আমাকে মধুর স্বরে বলেছিলেন, তুমি আমার ওসংঘের সেবায় সদা নিরত, সদ্ধর্মশ্রবণে নিরত এবং তোমার মন বহুগুণে গুণান্বিত। হে ভদ্রে, খুশি হও। তোমার প্রার্থনা সফল হবে।

১০৫.আজ থেকে লক্ষ কল্প পরে ওক্কাকুকুলে গৌতম নামক শাস্তা পৃথিবীতে উৎপন্ন হবেন।

১০৬.তাঁর ধর্মে তুমি ধর্মৌরসজাত উত্তরাধিকারী ধর্মদিন্না নামী শাস্তাশ্রাবিকা হবে।

১০৭.তা শুনে আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। তার পর থেকে আমি আজীবন মহামুনি বিনায়ক বুদ্ধকে মৈত্রীতদ্গতচিত্তে চতুর্প্রত্যয়ে পরিচর্যা করেছিলাম।

১০৮.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মনিয়েছিলাম।

১০৯.এই ভদ্রকল্পে ব্রহ্মবন্ধু, মহাযশস্বী কাশ্যপ বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছিলেন।

১১০.তখন বারাণসী নগরে কাশিরাজ কিকী নরেশ্বর মহর্ষি বুদ্ধের সেবক ছিলেন।

১১১.সেই রাজার ষষ্ঠ কন্যা ছিলাম আমি। আমার নাম ছিল সুধম্মা। জিনশ্রেষ্ঠ বুদ্ধের ধর্মকথা শুনে আমি প্রব্রজ্যা লাভের আকাঙ্কা করেছিলাম।

১১২.কিন্তু বাবা আমাদের প্রব্রজ্যা গ্রহণের অনুমতি দেননি। তাই তখন আমরা গৃহে

থেকেই বিশ হাজার বৎসর অতন্দ্রভাবে বিচরণ করেছিলাম। [তৃতীয় ভাণবার সমাপ্ত]

১১৩.আমরা সাতজন সুখিনী রাজকন্যা সবাই মিলে খুশি মনে ব্রহ্মচর্যা ও বুদ্ধসেবায় নিয়োজিত ছিলাম।

১১৪.সেই সাতজন রাজকন্যা হচ্ছে, সমনী, সমণগুত্তা, ভিক্ষুণী, ভিক্ষুদায়িকা, ধম্মা, সুধম্মা ও সংঘদায়িকা।

১১৫.বর্তমানে যথাক্রমে ক্ষেমা, উৎপলাবর্ণা, পটাচারা, কুণ্ডলাকেশা, কৃশাগৌতমী, আমি ও বিশাখা।

১১৬.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মেছিলাম।

১১৭.এই শেষ জন্মে আমি রাজগৃহের এক ধনাঢ্য, সমান্ত্ভ্র শ্রেষ্ঠী পরিবারে জন্ম নিয়েছি।

১১৮.আমি ভীষণ রূপবতী হলাম। যৌবনে পর্দাপণ করার পর আমি স্বামীগৃহে গিয়ে বেশ সুখেই বসবাস করতে লাগলাম।

১১৯.একদিন আমার স্বামী লোকশরণ বুদ্ধের কাছে গিয়ে ধর্মদেশনা শুনে অনাগামীফল লাভ করেছে।

১২০.আমিও তার অনুমতি নিয়ে অনাগরিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছি তারপর আমি অচিরেই অর্হত্ত্ব লাভ করেছি।

১২১.তখন আমার (পূর্বতন স্বামী) উপাসক আমার কাছে এসে কিছু গমীর্ভ ও নিপুণ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে আমি তার যথাযথ উত্তর দিয়েছি।

১২২.জিনশ্রেষ্ঠ বুদ্ধ আমার গুণে খুশি হয়ে আমাকে এই বলে শ্রেষ্ঠপদে বসালেন:‘আমি ধর্মাদিন্নার মতো ধর্মকথিকা অন্য একজন ভিক্ষুণীকেও দেখতে পাচ্ছি না।’

১২৩.হে ভিক্ষুগণ, ধর্মদিন্না ভিক্ষুণীঅত্যন্ত ধীরা। তোমরা তাকে এভবেই অবধারণ করো।

১২৪.বুদ্ধের উপদেশ আমি পালন করেছি। বুদ্ধের শাসনে আমি কৃতকার্য হয়েছি। আমার কাঁধ থেকে দুঃখভার নেমে গিয়েছে। আমার ভবনেত্রি তৃষ্ণা সমূলেবিনষ্ট হয়েছে।

১২৫.যেই উদ্দেশ্য নিয়ে আমি গৃহত্যাগকরে অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছি, আমার সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। আমার সর্ববিধ সংযোজন ক্ষয় হয়েছে।

১২৬-১২৭. আমি বিবিধ ঋদ্ধি, দিব্যশ্রোত্র, পরচিত্তবিজাননজ্ঞান ও পূর্বনিবাসানুস্মৃতিজ্ঞান লাভ করেছি। আমার দিব্যচক্ষু অত্যন্ত বিশুদ্ধ। সর্বাসব ক্ষয় করে এখন আমি বিশুদ্ধ, সুনির্মল।

১২৮.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

১২৯.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

১৩০.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি। ঠিক এভাবেই ধর্মদিন্না ভিক্ষুণীএই গাথাগুলে ভাষণ করেছিলেন।

[ধর্মদিন্না থেরী অপদান তৃতীয়অপদান সমাপ্ত]

৪.সকুলা থেরীঅপদান

১৩১.আজ থেকে লক্ষ কল্প অগে সর্ববিধ ধর্মে বিশেষ পারদর্শী, নায়ক, পদুমুত্তর জিন উৎপন্ন হয়েছিলেন।

১৩২-১৩৬. তিনি সকল সত্ত্বের পরম হিতৈষী, অথর্-তিহকারী, পুরুষশ্রেষ্ঠ, যশস্বী, শ্রীমান, কীর্তিমান জিন, সর্বলোকের দ্বারা পূজিত, বিশ্ববিশ্রুত, বিচিকিৎসা-উত্তীর্ণ, সম্পূর্ণ সন্দেহমুক্ত, পরিপূর্ণ মনস্কাম, পরম সম্বোধিপ্রাপ্ত, অনুৎপন্ন মার্গের উৎপন্নকারী নরোত্তম, অব্যাখ্যাতের ব্যাখ্যাকারী, অসঞ্জাতের সঞ্জাতকারী, মার্গজ্ঞ, মার্গবিদ, মার্গদেশক, নবশ্রেষ্ঠ, মার্গকশল শাস্তা ও শ্রেষ্ঠসারথী।

১৩৭.মহাকারুণিক নায়ক শাস্তা তখন কামপঙ্কে নিমগ্ন প্রাণিদের উদ্ধারের তরে ধর্মদেশনা করতেন।

১৩৮.তখন আমি হংসবতি নগরে একরাজকন্যা হয়ে জন্মেছিলাম। আমি ছিলাম ভীষণ রূপবতি, ধনী, দয়ামতি ও পরমাসুন্দরী।

১৩৯.আমি তখন মহারাজ আনন্দের পরমা সুন্দরী কন্যা। আর পদুমুত্তর বুদ্ধেরবৈমাত্রেয়া বোন।

১৪০.একদিন আমি অন্যরাজকন্যাদের সাথে সর্বালংকারে ভূষিতা হয়ে মহাবীর বুদ্ধের কাছে গিয়ে ধর্মদেশনা শুনেছিলাম।

১৪১.তখন তিনি পরিষদের মধ্যে এক দিব্যচক্ষুধারিনীভিক্ষুণীর ভূয়শী প্রশংসা করছিলেন এবং সেই ভিক্ষুণীকে শ্রেষ্ঠপদে বসিয়েছিলেন।

১৪২.তা শুনে আমি ভীষণরকম খুশি হয়েছিলাম। তারপর শাস্তা সম্বুদ্ধকে দান দিয়ে পূজা করে সেই শ্রেষ্ঠপদ প্রার্থনা করেছিলাম।

১৪৩.তখন শাস্তা আমাকে বলেছিলেন, নন্দে, তোমার প্রার্থনা সফল হবে। তুমি যে প্রদীপ দান করেছ, তাতে তার ফল একদম সুনিশ্চিত।

১৪৪.আজ থেকে লক্ষ কল্প পরে ওক্কাকুকুলে গৌতম নামক শাস্তাৃপিথবীতে উৎপন্ন হবেন।

১৪৫.তাঁর ধর্মে তুমি ধর্মৌরসজাত উত্তরাধিকারী সকুলা নামী শাস্তাশ্রাবিকা হবে।

১৪৬.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্ম নিয়েছিলাম।

১৪৭.এই ভদ্রকল্পে ব্রহ্মবন্ধু, মহাযশস্বী, কাশ্যপ বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছিলেন।

১৪৮.তখন আমি এক একাচারিনী পরিব্রাজিকা ছিলাম। ভিক্ষার জন্যে বিচরণ করে আমি মাত্র কিছু তেল পেয়েছিলাম।

১৪৯.সেই তেল দিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে অতীবপ্রসন্নমনে দ্বিপদশ্রেষ্ঠ বুদ্ধের চৈত্যকে পূজা করেছিলাম।

১৫০.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে আমি মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে তাবতিংস দেবলোকে জন্মনিয়েছিলাম।

১৫১.সেই কর্মের ফলে আমি যেখানেই জন্মগ্রহণ করি না কেন, সর্বত্রই বড় বড় প্রজ্জ্বলিত থাকত।

১৫২.আমি পাহাড়-পর্বত ভেদ করে দিকবিদিক যেদিকে ইচ্ছা করতাম সেদিকে অনায়াসে দেখতে পেতাম। ইহা আমার প্রদীপ দানেরই ফল।

১৫৩.জন্মে জন্মে আমি বিশুদ্ধ চক্ষুর অধিকারী হতাম। আমি যশস্বী হয়ে জ্বল জ্বল করতাম। ইহা আমার প্রদীপ দানেরই ফল।

১৫৪.এই শেষ জন্মে আমি এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। আমি রাজপ্রদত্ত প্রভূত ধনধান্য নিয়ে বেশ সুখে দিনাতিপাত করেছি।

১৫৫.একদিন সুগত নগরে প্রবেশ করছিলেন এমন সময় আমি সর্বাঙ্গে অলংকার পরিধান করে জানালার পাশে দাঁড়ালাম।

১৫৬.তখন আমি দেবমনুষ্যপূজিত, অনব্যঞ্জনসম্পন্ন, মহাপুরুষলক্ষণে ভূষিত জ্যোতির্ময় ও যশস্বী বুদ্ধকে দেখতে পেলাম।

১৫৭. তখন আমি উদগ্রচিত্ত হয়ে প্রব্রজ্যা প্রার্থনা করেছি। আমি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করে অচিরেই অর্হত্ত্ব লাভ করেছি।

১৫৮-১৫৯. আমি বিবিধ ঋদ্ধি, দিব্যশ্রোত্র, পরচিত্তবিজাননজ্ঞান ও পূর্বনিবাসানুস্মৃতি জ্ঞান লাভ করেছি। আমার দিব্যচক্ষু অত্যন্ত বিশুদ্ধ। সর্বাসবক্ষয় করে এখন আমি বিশুদ্ধ, সুনির্মল।

১৬০.আমি বুদ্ধের উপদেশ পালন করেছি। বুদ্ধের শাসনে আমি কৃতকার্য হয়েছি। আমার কাঁধ থেকে দুঃখভার নেমে গিয়েছে। আমার ভবনেত্রি তৃষ্ণা সমূলে বিষষ্ট হয়েছে।

১৬১.যেই উদ্দেশে নিয়ে আমি গৃহত্যাগ করে অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছি, আমার সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। আমার সর্ববিধ সংযোজন ক্ষয় হয়েছে।

১৬২.তারপর নরোত্তম মহাকারুণিক শাস্তা আমাকে দিব্যচক্ষুধারী ভিক্ষুণীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠপদে বসালেন।

১৬৩.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

১৬৪.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

১৬৫.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই সকুলাভিক্ষুণীএই গাথাগুলে ভাষণ করেছিলেন। [সকুলাথেরী অপদান চর্তুথঅপদান সমাপ্ত]

৫.নন্দা থেরী অপদান

১৬৬.আজ থেকে লক্ষ কল্প আগে সর্ববিধ ধর্মে বিশেষ পারর্দশী, নায়ক পদুমুত্তর বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছিলেন।

১৬৭.উপদেষ্টা, বিজ্ঞাপক, সকল প্রাণির উদ্ধারকারী, দেশনাকুশল বুদ্ধ বহুজনতাকে তীর্ণ করেছিলেন।

১৬৮.সকল প্রাণির পরম হিতৈষী, অনুকম্পকম্পপরায়ন, কারুণিক, বুদ্ধ সকল অন্যতীর্থিয়কে পঞ্চশীলে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

১৬৯-১৭০. এভাবেই তিনি ছিলেন নিরাঙ্কুর, তীর্থিয়শূন্য, বৈচিত্রপূর্ণ বশীভূত অর্হৎ পরিবেষ্টিত, আটান্ন প্রকার রত্ন উজ্জ্বল মহামুনি, সুবর্ণ তুল্য ও বত্রিশ মহাপুষুলক্ষণ বিশিষ্ট।

১৭১.তৎকালীন স্বাভাবিক আয়ু লক্ষ বৎসর জীবিত থেকে তিনি বহু জনতাকে তীর্ণ করেছিলেন।

১৭২.তখন আমি হংসবতি নগরে এক শ্রেষ্ঠী পরিবারে জন্মেছিলাম। আমি নানাবিধ রত্ন সমন্বিত হয়ে মহাসুখে দিনাতিপাত করেছিলাম।

১৭৩.একদিন আমি মহাবীর বুদ্ধের কাছে গিয়ে অমৃতোপম, পরমাস্বাদযুক্ত, পরমার্থনিবেক ধর্ম দেশনা শুনেছিলাম।

১৭৪.তখন আমি সশ্রাবক লোকনায়ক বুদ্ধকে নিমন্ত্রণ করে নিজ হাতে প্রসন্নমনে মহাদান দিয়েছিলাম।

১৭৫.তারপর আমি সশ্রাবক লোকনায়ক ধীর বুদ্ধের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে ধ্যানী ভিক্ষুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠপদে আসীন হবার প্রার্থনা নিবেদন করেছিলাম।

১৭৬.তখন অদান্তাকে দমনকারী, ত্রিলোকশরণ, প্রভু নরসারথি বুদ্ধ আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমার প্রাথর্না সফল হবে।’

১৭৭.আজ থেকে লক্ষ কল্প পরে ওক্কাকুকুলে গৌতম নামক শাস্তা পৃথিবীতে উৎপন্ন হবেন।

১৭৮.তাঁর ধর্মে তুমি ধর্মৌরসজাত উত্তরাধিকারী নন্দা নামী শাস্তাশ্রাবিকা হবে।

১৭৯.তা শুনে আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। তারপর থেকে আজীবন আমি মৈত্রীতদ্গতচিত্তে বিনায়ক বুদ্ধকে চতুর্প্রত্যয় দিয়ে সেবা-পরিচর্যা করেছিলাম।

১৮০.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে মনুষ্যদেহত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মেছিলাম।

১৮১.সেখান থেকে চ্যুত হয়ে যাম দেবলোকে, সেখান চ্যুত হয়ে তুষিত দেবলোকে, সেখান থেকে চ্যুতহয়ে নিমার্ণরতি দেবলোকে এবং সেখান থেকে চ্যুত হয়ে পরণির্মাত বশবর্তী দেবলোকে জন্মেছিলাম।

১৮২.সেই কর্মের ফলে আমি যেখানেই জন্মগ্রহণ করেছি সর্বত্রই রাজমহেষী হয়েছিলাম।

১৮৩.সেখান থেকে চ্যুত হয়ে আমি বহুবার চক্রবর্তী রাজা ও প্রাদেসিক রাজার মহেষী হয়েছিলাম।

১৮৪.দেবমনুষ্যসম্পত্তি ভোগ করে আমি দেবমনুষ্যলোকে সর্বত্রই সুখী হয়ে বহুকল্প বিচরণ করেছিলাম।

১৮৫.এই শেষ জন্মে আমি কপিলাববস্তু নগরে শুদ্ধোদন রাজার অনিন্দিতা কন্যা হয়েছিলাম।

১৮৬.আমার রূপশ্রী দেখে সেই কুল আনন্দিত হয়েছিল। সে কারণে আমার নাম রাখা হলো ‘নন্দা’

১৮৭.সেই কপিলাবস্তু নগরে একমাত্র যমোধরা ব্যতীত সকল যুবতির মধ্যে আমিই কল্যাণী তথা সুন্দরী বলে পরিচিত হয়েছিলাম।

১৮৮.আমার বড় ভাই ত্রিলোকাগ্র বুদ্ধ আর মেঝো ভাই অর্হৎ, আমিই শুধু একাকী গৃহস্থ হয়ে আছি। মাতা আমাকে এই বলে উৎসাহ বাক্যে আপ্যায়িত করেছিলেন:

১৮৯.তুমি শাক্যকুলে জন্ম নেওয়া বুদ্ধের অনুজা তাট ছেবান। নন্দও প্রব্রজ্যা নিয়েছে। একাকী তুমি গৃহে থেকে কী করবে?

১৯০.এই যৌবন একদিন জরাগ্রস্ত হবে। এই রূপ বড়ই অশুচি। এই নীরোগ দেহে যেকোনো সময় রোগ জেঁকে বসতে পারে। এই জীবন যেকোনো সময় মৃত্যু মুখে পড়তে পারে।

১৯১-১৯৩. নানাবিধ অলংকারে ভূষিত এই রূপকে এখন মনে হচ্ছে শুভ, কান্ত, মনোহর ও সুন্দর স্তুপের মতো। এই পুঞ্জিত লোকসার, নয়ন রসায়ন, পুণ্যকীর্তি জনক ও ওক্কাকুকুলের নন্দন তোমার এই দেহে অচিরেই জরা তুমি মহাকারুনিকের অনিন্দিত ধর্মে বিচরণ কর।

১৯৪.মায়ের কথা শুনে আমি অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম। তারপরও আমি মনে মনে দেহের যে রূপ যৌবন লোলুপতা ত্যাগ করতে পারিনি।

১৯৫.মাত আমাকে গভীর মনযোগ দিয়ে ধ্যান করতে বললেও আমি কিন্তু তাতে কোনো উৎসাহ পেতাম না।

১৯৬-১৯৭. তারপর মহাকারুণিক বুদ্ধ আমাকে কামলালসাগ্রস্ত দেখে রূপের প্রথি অনাসক্ত উৎপাদনার্ ে আমার চক্ষুপথে স্বীয় ঋদ্ধিবলে এক স্ত্রীলোক তৈরি করলেন। মেয়েটি ভীষণ সুন্দরী, অভিরূপা, মমতাময়ী ও সুশী।

১৯৮.তাকে দেখে আমি বিস্মিত হলাম। আরও বেশি বিস্মিত হলাম তার রূপ দেখে। আমি ভাবলাম, আমার মনুষ্যচক্ষু লাভ আজ সফল হলো।

১৯৯.আমি তাকে বললাম, এসো সুভগে, তোমার কী প্রয়োজন আমাকে বলো। যদি আমায় প্রিয় ভাবো, তবে তোমার কুল, নাম, গোত্র, কী তা আমায় বলো।

২০০.হে সুভগে, আমায় বঞ্চিত করো না। আমার কোলে শয়ন করো। আমার কোলে শায়িত হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করো।

২০১.তারপর সেই সুলোচনা কন্যা আমার কোলে মাথা রেখে শয়ন করল। অকম্মাৎ তার কপালে এক ভয়ংকর মাকড়সার কামড়ে এক ফোঁসকাদেখা দিল। সাথে সাথে সেটি ফুলে উঠল, ঘৃন্য ও রক্তাক্ত হলো।

২০৩.ফুরেফেঁপে উঠা মুখ থেকে অশুচি দুর্গন্ধ তেছড়ালাগল। সেটি ক্রমে আরওস্ফীত হলো। সেখান থেকে রক্তাক্ত পূজঁ বের হতে লাগল।

২০৪.তার সবাঙ্গে প্রবল যন্ত্রনা শুরু হলো। সে যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগল, আর করুণ সুরে বিলাপ করতে লাগল এই:

২০৫.আমি বিষম দুঃক পাচ্ছি, অসমব্ভ যন্ত্রনা ভোগ করছি। হে সুখী, এখন আমি মহাদুঃখে নিমগ্ন, তুমিই আমারআশ্রয় হও।

২০৬.তখন আমি মনে মনে ভাবলাম, কোথায় তোমার মুখের শোভা! কোথায় তোমার উন্নত নাক! কোথায় গেল তোমার লাল ললট! কোথায় গেল তোমার মুখ!

২০৭.কোথায় তোমার শশীর ন্যায় স্নিগ্ধ বর্ণ! কোথায় গেল তোমার সেই উন্নত গ্রীবা! তোমার সেই কর্তদুটি আজ ঝুলে পড়েছে আর বিবর্ণ শ্রীবি হয়েছে।

২০৮.তোমার উন্নত স্তনদ্বয় এখন শুষ্ক হয়ে ঝুলে পড়েছে! এই স্তনদ্বয় হতে অশুচি দুগন্ধ বের হচ্ছে।

২০৯.তোমার কটিদেশ কতই না বিশ্রী হয়েছে! এই দেহ আসলে জঘন্য কষাইখানা তুল্য! সে কারণেই এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির উদব্ভ হয়েছে! অহো, এই দেহ যে বড়ই অশ্বাশত!

২১০.এই দেহ হতে উৎপন্ন সবকিছুই পূতি দুর্গন্ধময় ও ভয়ানক, শ্মাশানের ন্যায় বীভৎস! মূর্খরাই এই দেহে রমিত হয়।

২১১.তখন আমার ভাই মাহাকারুণিক লোকনায়ক বুদ্ধ আমাকে সংবিগ্নচিত্ত দেখে এই গাতাগুলো ভাষণ করলেন:

২১২.হে নন্দা, এই পূতি দুর্গন্ধময়, অশুচি দেহকে দেখ। অশুভ ভাবনা কর। চিত্তকে একাগ্র ও সমাহিত কর।

২১৩.এই দেহ যেমন, অন্যদেহগুলোও তেমন। অন্য দেহগুলো যেমন, এই দেহও তেমন। এই দুর্গন্ধপূর্ণ অশুচি দেহকে কেবল মূর্খরাই অভিনন্দিত করে।

২১৪.এই দেহকে যারা রাতদিন অতন্দ্রভাবে এভাবে পর্যবেক্ষণ করে, তারা নিজ জ্ঞানে এই দেহের প্রকৃতধর্মদেখতে পায় ও বুঝতে পারে।

২১৫.বুদ্ধের এই গাথাগুলো শুনে আমি আরও বেশি সংবিগ্ন হলাম। আর তাতে আমি সেখানে দাঁড়িয়েই অর্হত্ত্ব লাভ করলাম।

২১৬.আমি যেখানেই বসি না কেন, সব সময় ধ্যানপরায়ণ হয়ে থাকি। বুদ্ধ আমার এই গুণে তুষ্টহয়ে আমাকে শ্রেষ্ঠপদে বসালেন।

২১৭.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

২১৮.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

২১৯.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই নন্দা বা জনপদকল্যাণী ভিক্ষুণীএই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [নন্দা থেরী অপদান পঞ্চম অপদান সমাপ্ত]

৬.সোণা থেরী অপদান

২২০.আজ থেকে লক্ষ কল্প আগে সর্ববিধ ধর্মে বিশেষ পারদর্শী নায়ক পদুমুত্তর নজি উৎপন্ন হয়েছিলেন।

২২১.তখন আমি শ্রেষ্ঠীকুলে জন্ম নিয়ে বেশ সুখে অবস্থান করেছিলাম। আমি ছিলাম সকলের পূজিত ও প্রিয়। একদিন মুনিবর বুদ্ধের কাছে গিয়ে আমিতাঁর মধুর উপদেশ শুনেছিলাম।

২২২-২২৩. তখন জিনশ্রেষ্ঠ বুদ্ধ আরদ্ধবীর্যদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ একভিক্ষুণীর ভূয়শী প্রশংসা করেছিলেন। তা শুনে আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। আমি শাস্তাকে মহাদান দিয়েছিলাম। তারপর আমি সম্বুদ্ধকে অভিবাদন করে সেই শ্রেষ্ঠপদ প্রার্থনা করেছিলাম। মহাবীর বুদ্ধ অনুমোদন করেছিলেন এই বলে:‘তোমার প্রার্থনা পুর্ণ হবে।’

২২৪.আজ থেকে লক্ষ কল্প পরে ওক্কাকুকুলে গৌতম নামক শাস্তা পৃথিবীতে উৎপন্ন হবেন।

২২৫.তাঁর ধর্মে তুমি ধর্মৌরসজাত উত্তরাধিকারী সোণা নামী শাস্তাশ্রাবিকা হবে।

২২৬.তা শুনে আমি ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। তারপর আমি আজীবন জিনশ্রেষ্ঠ বিনায়ক বুদ্ধকে মৈত্রীচিত্তে চত্যুর্প্রত্যয়ের দ্বারা সেবা-পরিচর্যা করেছিলাম।

২২৭.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে মনুষ্যদেহ ত্যাগরে আমিক তাবতিংস দেবলোকে জন্মেছিলাম।

২২৮.এই শেষ জন্মে আমি শ্রাবস্তী নগরে এক ধনাঢ্য ও সমান্ত্ভ শ্রেষ্ঠী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি।

২২৯.যৌবনে পর্দাপন করার পর পরই আমার বিয়ে হয়েছে। তারপর আমি সুন্দর ফুটফুটে দশটি পুত্রসন্তান প্রসব করেছি।

২৩০.তারা সবাই ছিল অত্যন্ত সুখী ও জনতার চোখে অতীব মনোহর। এমকি তারা শত্রুদের কাছেও অত্যন্ত প্রিয়। আর আমার কাছে তো অবশ্যই প্রিয়।

২৩১.আমার দশ দশটি পুত্র আমার যথাযথ ভরণপোষণে সবিশেষ অপারাগ। তারা আমাকে দেবাতিদেব বুদ্ধের শাসনে প্রব্রজ্জিত হওয়ার পরামর্শ দিল।

২৩২.তখন আমি একাকী বসে চিন্তা করলাম, এভাবে থেকে আমার কী লাভ ? এখন আমি আমার গর্ভজাত পুত্রদের দ্বারাই বজিত।

২৩৩.আমি সেখানেই চলে যাব, যেখানে আমার স্বামী চলে গিয়েছে। এভাবে চিন্তা করার পর আমি অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম।

২৩৪.তখন ভিক্ষুণীরা আমাকে একভিক্ষুণী নিবাসে নিয়ে গিয়ে কিছু উপদেশ দিয়ে জল গরম করতে বললেন।

২৩৫.তখন আমি নির্দেশ মোতাবেক জল এনে কলসিতে ভরে চুলায় চড়ালাম এবং তাতে মনযোগ দিলাম।

২৩৬.পঞ্চস্কন্ধকে অনিত্য, দুঃখ ও অনাত্ন বশে দেখে সর্বাসব ক্ষয় করে আমি অর্হত্ত্ব লাভ করেছি।

২৩৭.তখন ভিক্ষুণীরা সেখানে এসে জল গরম করা হয়েছে নি-না জিজ্ঞেস করলে আমি তৎক্ষনাৎ তেজকৃৎস্ন ধ্যানে মগ্ন হয়ে শিগগির জল গরম করে দিয়েছিলাম।

২৩৮.তারা বিস্মিত হয়ে জিনবর বুদ্ধকে বিষয়টি অবগত করলেন। তা শুনে নাথ বুদ্ধ অত্যন্ত খুশি হয়ে এই গাথাটি বললেন:

২৩৯.আরস্যপরায়ন ও হীনবীর্য হয়ে শত বৎসর বেঁেচ থাকা অপেক্ষা উদ্যম শীল ও আরদ্ধবীর্য হয়ে একদিন মাত্র বেঁচে থাকাও শ্রেয়।

২৪০.এভবে আমার দ্বারা মহাবরি বুদ্ধ আরাধিত, পূজিত হলেন। মহামুনি বুদ্ধ আমাকে আরদ্ধবীর্যদের মধ্যে শ্রেষ্ঠপদে বসালেন।

২৪১.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

২৪২.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমারঅতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

২৪৩.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই সোণা ভিক্ষুণীএই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [সোণা থেরী অপদান ষষ্ঠ অপদান সমাপ্ত]

৭.ভদ্রাকাপিলানী থেরী অপদান

২৪৪.আজ থেকে লক্ষ কল্প আগে সর্ববিধ ধর্মে বিশেষ পারদর্শী নায়ক পদুমুত্তর জিন উৎপন্ন হয়েছিলেন।

২৪৫.তখন হংসবতি নগরে বিদেহ নামী এক মহাধনাঢ্য শ্রেষ্ঠী ছিল। আমি তার ভার্যা ছিলাম।

২৪৬.একদিন শ্রেষ্ঠী সপরিষদ নরাদিত্য বুদ্ধের কাছে গিয়ে সর্ববিধ দুঃখ-ভয়বিদূরক ধর্মদেশনা শুনেছিল।

২৪৭-২৪৯. তখন নায়ক পদুমুত্তর বুদ্ধতাঁর এক শ্রাবকে ধুতাঙ্গধারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে গুণকীর্তন করছিলেন। তা শুনে সে বুদ্ধকে সাতদিন যাবৎ দান দিয়েতাঁর পায়ে মাথা ঠেকিয়ে সেই শ্রেষ্ঠপদ প্রার্থনা করেছিল। সেই নরপুঙ্গব তখন পরিষদকে আনন্দিত করে শ্রেষ্ঠীর প্রতি অনুকম্পা করেএই গাথাগুলো বলেছিলেন, ‘তোমার প্রার্থনা পূর্ণ হবে। হে পুত্র, তুমি নিশ্চিন্ত হও।’

২৫০.আজ থেকে লক্ষ কল্প পরে ওক্কাকুকুলে গৌতম নামক শাস্তা পৃথিবীতে জন্ম নেবেন।

২৫১.তাঁর ধর্মে তুমি ধর্মৌরসজাত উত্তরাধিকারী কাশ্যপ নামক শাস্তাশ্রাবক হবে।

২৫২.তা শুনে শ্রেষ্ঠী ভীষণ খুশি হয়েছিলেন। তারপর থেকে আজীবন মৈত্রীচিত্তে বিনায়ক বুদ্ধকে চতুর্প্রত্যয়ের দ্বারা সেবা-পরিচর্যা করেছিলেন।

২৫৩.শাসনকে উজ্জ্বল করে, অন্যতীর্থিদের দমন করে, দুর্বিনীতদের বিনীত করে সশ্রাবক পদুমুত্তর বুদ্ধ পরিাপির্তনব হয়েছিলেন।

২৫৪-২৫৫. পরিনির্বাপিত লোকাগ্র শাস্তাকে পূজাকরার জন্যে শ্রেষ্ঠী জ্ঞাতিপরিজনদের সঙ্গে নিয়ে সাত যোজন উচ্চতা বিশিষ্ট, সম্পূর্ণ রত্নময়, শতরশ্মি সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল, শালরাজের ন্যায় সুপুষ্পিত একটি স্তুপ নির্মাণ করেছিলেন।

২৫৬.সেখানে তিনি সপ্তবিধ রত্ন দিয়ে তৈরি সাত লক্ষ মৃন্ময় পাত্র তৈরি করিয়েছিলেন। সেগুলো নলাগ্নি মতো উজ্জ্বল হয়েছিল।

২৫৭.সকল সত্ত্বের প্রতি অনুকম্পাপরায়ণ মহর্ষি বুদ্ধকে পূজা করার জন্যেতিনি সুগন্ধ তৈল পূরিয়ে প্রদীপ জালিয়েছিলেন।

২৫৮.মহর্ষি বুদ্ধকে পূজা করার জন্যে তিনি সপ্তবিধ রত্নে পরিপূর্ণ সাতলক্ষ কুম ্ভ তৈরি করেছিলেন।

২৫৯.মাঝে মাঝে বহু মূল্যবান কাঞ্চনে পরিপূর্ণ আটটি করে কুম্ভ শরতের আকাশে দিবাকরের মতো উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছিল।

২৬০.চৌদিকের চারটি দ্বারে প্রতিষ্ঠিত তোরণগুলো এবং রত্নময় উন্নত ফলকগুলো অতিশয় শোভা বর্ধন করছিল।

২৬১.চতুর্দিকে পরিবেষ্টিত করে থাকা সুনির্মিত কণিকাগুলো ও রত্নময় উড্ডীন পাতাগুালো বেশ আলোকিত করছিল।

২৬২.সুরক্ত, সুনির্মিত ও সুসজ্জিত রত্নময় চৈত্যটি উজ্জ্বলদিবাকরের মতো দেদীপ্যমান হচ্ছিল।

২৬৩.সেই স্তুপটির তিনটি বেদীর মধ্যে একটি হরিদ্বর্ণে, একটি মনোশিালায় ও অপরটি অঞ্জন দিয়ে পূর্ণ চৈত্যটিকে পূজা করে তিনি আজীবন যথাশক্তি সংঘকে দান করেছিলেন।

২৬৪.এভাবে রমনীয় চৈত্যটিকে পূজা করে তিনি আজীবন যথাশক্তি সংঘকে দান করেছিলেন।

২৬৫.তখন আমি শ্রেষ্ঠীর সাথে আজীবন সে সকল পুণ্যকর্ম করে তার সাথেই সুগতি স্বর্গলোকে জন্মেছিলাম।

২৬৬.দেবমনুষ্য লোকে উভয় সম্পত্তি ভোগ করে শরীরের ছায়ার ন্যায় তার সাথেই সংসারে বিচরণ করেছিলাম।

২৬৭.আজ থেকে একানব্বই কল্প আগে সর্ববিধ ধর্মে বিদর্শক, চারুদর্শন, নায়ক বিপশ্বী বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছিলেন।

২৬৮.তখন তিনি (শ্রেষ্ঠী) বন্ধুমতি নগরে এক হতদরিদ্র, কিন্তু গুণবান ও সৎ ব্রাহ্মণ হয়ে জন্মেছিলেন।

২৬৯.তখনও আমি তার সহধর্মিনী হয়ে জন্মেছিলাম। একদিন তিনি মহামুনি বুদ্ধের কাছে ধর্মশ্রবণের জন্যে গিয়েছিলেন।

২৭০.শ্রোতৃমণ্ডলীরএকপ্রান্তে বসে অমৃতোপম ধর্মদেশনা শুনে ভীষণ আনন্দিত হয়েছিলেন এবং একটি পরিধেয় বস্ত্র দান করেছিলেন।

২৭১.অন্য একটি পরিধেয় বস্ত্রে ঘরে এসে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি যে বুদ্ধকে একটি বস্ত্র দান করেছি, তুমি সেই মহাপুণ্যঅনুমোদন করো।’

২৭২.তখন আমি হাত জোড় করে এই বলে অনুমোদন করেছিলাম, ‘হে প্রভু, তুমি যে বুদ্ধশ্রেষ্ঠকে একটি বস্তু দান করেছ, তা খুব ভালোকরেছ।’

২৭৩.বেশ সুখে ভবসংসারে বিচরণ করে তিনি বারাণসী নগরে এক মহিপতি রাজা হয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

২৭৪.তখনো আমি তার প্রধানা মহেষি হয়েছিলাম। পূর্বস্নেহবশত আমি তার অতীব প্রিয় ছিলাম।

২৭৫.একদিন পিণ্ডার্থে বিচরণরত আটজন পচ্চেক বুদ্ধকে দেখে অত্যন্ত খুশি হয়ে তিনি তাঁদের উত্তম দান করেছিলেন।

২৭৬.পুনরায় তিনি তাদের নিমন্ত্রণ করেছিলেন। তারপর জন্য দক্ষ কারিগর দিয়ে রত্নময় মণ্ডপ ও স্বর্ণময় ছাড়া তৈরি করেছিলেন।

২৭৭.তারপর সেই পচ্চেক বুদ্ধগণকে সমবেত করিয়ে স্বর্ণময় আসলে বসিয়ে নিজ হাতে প্রসন্নমনে সেগুলো দান করেছিলেন।

২৭৮.তখনো আমি তার সহদাতা ছিলাম। পুনরায় আমি বারাণসীর এক কাশিগ্রামে জন্মেছিলাম।

২৭৯.এক সমান্ত্ভ্র কুটুম্বিকের গরে বেশ সুখে দেবর-ননদসহ বাস করছিলাম। আমি ছিলাম জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার অসমব্ভ পতিব্রতা ভার্যা।

২৮০.তখন আমি এক পচ্চেক বুদ্ধকে দেখে আমার ছোট ননদের ভাগের অন্ন দান দিয়ে তাকে তা জানিয়েছিলাম।

২৮১.সে তা অনুমোদ করেনি। আমি তার অন্ন তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। আমার ননদ পুনরায় পচ্চেক বুদ্ধকে সেই অন্ন দান দিয়েছিল।

২৮২.তখন আমি রাগতচিত্তে সেই অন্ন ফেলে দিয়ে পচ্চেক বুদ্ধের পাত্রকাঁদা মাটিতে পূর্ণ করে দিয়েছিলাম।

২৮৩.এমনকি পদুষ্টমনে পচ্চেক বুদ্ধগণকে সমচিত্তসম্পন্ন দেখে তখন আমি সংবিগ্ন হয়েছিলাম।

২৮৪.পুনরায় পাত্রনিয়ে উহা খালি করে সুগন্ধি চূর্ণে মেজে প্রসন্নমনে সুমিষ্ট খাদ্য পূর্ণ করে দান করেছিলাম।

২৮৫.প্রার্থনা করেছিলাম। , এই দানের প্রভাবে জন্মে জন্মে আমি যেনসুশ্রী ও উজ্জ্বল দেহ প্রাপ্ত হই এবং আমার মুখ থেকে দুগর্ন্ধ না ছড়ায়।

২৮৬.পুনরায় আমি খুশিমনে মহাবীর কাশ্যপ বুদ্ধের ধাতুচৈত্যএকটি সেনার ইট দান করেছিলাম।

২৮৭.সেই ইটে চারি প্রকার সুগন্ধ চূর্ণ মাখিয়ে দিয়ে আমি সর্বাঙ্গ সুন্দর ও সম্পূর্ণ দুর্গন্ধ দোষমুক্ত হয়েছিলাম।

২৮৮-২৮৯. এভাবে সাত প্রকার রত্ন দিয়ে তৈরি সাত হাজার ঘৃততৈলের প্রদীপ লোকনাথ বুদ্ধকে পূজা করার জন্যে অতীব প্রসন্নমনে স্থাপন করেছিলাম

২৯০.তখন সেই পুণ্যপ্রভাবে কাশিরাজ্যে জন্মেছিল। তার নাম রাখা হয়েছিল সুমিত্তা।

২৯১.আমি কাশি রাজের অত্যন্ত প্রিয় ভার্যা হয়ে জন্মেছিলাম। তখন আমি এক পচ্চেক বুদ্ধকে একটি শালবস্ত্র দান করেছিলাম।

২৯২.সেই দান অনুমোদন করলে আমি পুন্যের ভাগীদার হয়েছিলাম। পুনরায় তিনি কাশিরাজ্যের কোলিয় জাতিতে জন্মেছিলেন।

২৯৩.তখন তিনি পাঁচশত কোলিয় পুত্রের সাথে পাঁচশত পচ্চেক বুদ্ধকে সেবা-পূজা করেছিলেন।

২৯৪.তিনি তাদের তিনমাস যাবৎ ভোজনে তৃপ্ত করিয়ে ত্রিচীবর দান করেছিলেন। তখন আমি তার ভার্যা ছিলাম এবং পুণ্যকর্মে সহায়তাকারিনী ছিলাম।

২৯৫.সেখান থেকে চ্যুত হয়ে তিনি নন্দনামক মহাযশস্বী রাজা হয়েছিলেন। তখনো আমি তার সর্বৈশ্বর্যশালিনী রানী হয়েছিলাম।

২৯৬-২৯৭. তখন ব্রহ্মদত্ত রাজা মহিপতি হয়েছিলেন। তখন আমি পদুমবতীর পুত্র পাচঁশত পচ্চেক বুদ্ধকে আজীবন সেবা করেছিলাম। তাদের সকলকে রাজোদ্যানে নিয়ে গিয়ে পরিনির্বাপিত হওয়ার পরও পূজাকরেছিলাম।

২৯৮.তাদের উদ্দেশে চৈত্য তৈরি করিয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী উভয়েই প্রব্রজ্জিত হয়েছিলাম এবং অপ্রমেয় তথা ব্রহ্মাবিহার ভাবনা করে ব্রহ্মলোকে জন্মেছিলাম।

২৯৯.সেখান থেকে চ্যুত হয়ে তিনি মহাতীর্থে পিপ্‌ফলি নামক যুবক হয়ে জন্মেছিলেন। তার মাতার নাম সমনাদেবী ও তার পিতা কোশিগোত্রীয় ব্রাহ্মণ।

৩০০.আর আমি মর্দ জনপদের সাগল নগরে ব্রাহ্মণের কন্যা হয়ে জন্মেছিলাম। আমার মাতার নাম সচীমতি।

৩০১.আমার পিতা আমাকে ঘনকাঞ্চনের প্রতিমা তুল্য দেখে কামনাবর্জিত কাশ্যপ ধীরের সাথে বিবাহ দিয়েছিলেন।

৩০২.সেই কাশ্যপ ধীর একদিন নিজ কর্মস্থলে গিয়ে কাক প্রভৃতি পাখিগুলো অন্যপ্রাণিদের খেতে দেখে ভীষণ সংবেগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।

৩০৩.এদিকে আমিও ঘরের মধ্যে জলাধারে জাত কৃমিকুলকে কাক প্রভৃতি পাখিগুলো খেতে দেখে সংবেগপ্রাপ্ত হয়েছিলাম।

৩০৪.তারপর সেই কাশ্যপ ধীর প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলেন। তাকে দেখে আমিও তার সাথে প্রব্রজ্যাগ্রহণ করেছিলাম। আমি পাঁচবৎসর যাবৎ পরিব্রাজক আশ্রমে বাস করেছিলাম।

৩০৫.বুদ্ধকে লালনপালনকারিনী মাসিমা গৌতমী যখন প্রব্রজ্যা গ্রহণ করলেন তখন আমিও তার কাছে গিয়ে বুদ্ধের দ্বারা অনুশাসিত হয়েছিলাম।

৩০৬.আমি অচিরেই অর্হত্ত্ব লাভ করেছিলাম। অহো, কাশ্যপের কী মহৎ কল্যাণমিত্রতা!

৩০৭.বুদ্ধের যোগ্য উত্তরসূরি কাশ্যপ অতীব সুসমাহিত তিনিপূর্বনিবাসাজ্ঞান লাভ করেছেন। তিনি স্বর্গলাভের উপায় পরিস্কার দেখতে পান।

৩০৮.তিনি জন্মক্ষয়ী ও অভিজ্ঞালাভী মুনি এবং ত্রিবিদ্যালাভী ব্রাহ্মণ।

৩০৯.ঠিক তদ্রুপ এই ভদ্রাকপিলানী ও ত্রিবিদ্যালাভী, জন্মক্ষয়ী। তিনিও সসৈন্য মারকে পরাজিত করে অন্তিম দেহ ধারণ করেছেন।

৩১০.পৃথিবীর যত সব আদীনবতথা দোষ দেখেই আমরা উভয়ে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছি। এখন আমরা দমিত শীতিভূত, নিবৃত, ক্ষীণাসব অর্হৎ।

৩১১.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

৩১২.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

৩১৩.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই ভদ্রাকাপিলানী ভিক্ষুণীএই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [ভদ্রাকাপিলানী থেরী অপদান সপ্তম অপদান সমাপ্ত]

৮.যশোধরা থেরী অপদান

৩১৪.একসময় নরনায়ক বুদ্ধ সমৃদ্ধ ও রমনীয় রাজগৃহে নগরের পর্বত কন্দরে বাস করছিলেন।

৩১৫.সেই নগরের ভিক্ষনীনিবাসে বাস করার সময় যশোধরা ভিক্ষুণীর মনে এরূপ চিন্তার উদয় হয়েছিল:

৩১৬-৩১৮. শুদ্ধেধন মহারাজ, মহাপ্রজাপতি গেতমী, অভিজ্ঞালাভী মহাথেরগণ, বৃন্দা সবাই লোকনাথ বুদ্ধের জীবতাবস্থায়দীপশিখার ন্যায় পরম শান্তিপদ নির্বাণ প্রাপ্ত হয়েছেন। ‘আমি ও সেই শান্তিপদ নির্বাণে গমন করব’ এই ভেবে নিজের আয়ূ আরও কতদিন আছে তা দেখতে লাগলেন। তিনি দেখতে পেলেন যে, আজই তার আয়ুষ্কাল শেষ।

৩১৯-৩২০. তারপর তিনি পাত্র-চীবর নিয়ে নিজ আশ্রম হতে বের হয়ে পাঁচশত ভিক্ষুণী পরিবেষ্টিত হয়ে মহাঋদ্ধিমান, মহাপ্রাজ্ঞ সম্বুদ্ধের কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন। সম্বুদ্ধকে অভিবাদন করে শাস্তার একপার্শ্বে বসে এই কথা নিবেদন করেছিলেন:

৩২১.হে মহামুনি, আমার বয়স এখন আটাত্তর বৎসর। জীবনের একদম শেষ প্রান্তে উপনীত। এই পর্বত কন্দরে এসে আমি আপনাকে অবগত করছি।

৩২২.আমার বয়স এখন পরিপক্ক। আমার জীবনের সামান্য মাত্র অবশিষ্ট আছে। এখন আমি আপনাদের ত্যাগ করে চলে যাব। আমার শরণ আমি নিজেই করে নিয়েছি।

৩২৩.এখন আমার জীবনের একদম শেষ সময়। মরণ আমাকে গ্রাস করে ফেলবে। হে মহাবীর, আজ রাতেই আমি পরিনির্বাণ লাভ করব।

৩২৪.হে মহামুনি, যেখানে জন্ম, জরা, ব্যাধি, মৃত্যু কোনোটিই নেই, সেই অজর, অমর অসংস্কৃত নির্বাণে গমন করব।

৩২৫.শাস্তার সামনে বসে থাকা সমগ্র পরিষদের কাছে কোনো অপরাধ করে থাকলে আপনারা মহামুনির সামনেই আমায় ক্ষমা করুন।

৩২৬.সংসারে বিচরণ করে আমি যদি আপনার কাছে কোনো অপরাধ করে থাকি, হে মহাবীর, আমার সেই কৃত অপরাধ অকপটে স্বীকার করছি। আপনি আমায় ক্ষমা করুন।

৩২৭-৩২৮. তার কথা শুনে মুনিন্দ্র বুদ্ধ এই কথা তাকে বলেছিলেন, ‘নির্বাণগামিনীকে এর চাইতে বেশি কী আর বলব ? তুমি আমার উপদেশ পালকারিনী, তুমি ঋদ্ধিপ্রদর্শন কর। এই পরিষদের সমস্ত সন্দেহ দূর কর।

৩২৯.মুনিন্দ্র বুদ্ধের থকা শুনে যমোধরা ভিক্ষুণীমুনিন্দ্র বুদ্ধকে বন্দনা করে এই কথা নিবেদন করেছিলেন:

৩৩০.হে বীর, আমার নাম যশোধরা। আমি আপনার গৃহীকালী ভার্যা। আমার জন্ম শাক্যকুলে। আমি একজন সর্বাঙ্গ পরিপূর্ণা স্ত্রী।

৩৩১.হে বীর, গৃহীকালীন আমিই ছিয়ানব্বই লক্ষ নারীর মধ্যে সবচেয়ে প্রমুখা ও শ্রেষ্ঠা ছিলাম।

৩৩২.আমি ছিলাম ভীষণ রূপবতী, গুণবতী, যুবতি ও প্রিয়া। লোকেরা সবাই আমাকে দেবতার ন্যায় সম্মান করত।

৩৩৩.শাক্যপুত্রের নিবাসে আমিই ছিলাম। লাখো কন্যার মধ্যে প্রমুখা ও সমসুখ-দুঃখের অধিকারী দেবতাতুল্য নন্দন।

৩৩৪.কামধাতু অতিক্রম করে তারা রূপধাতুতে স্থিত হয়েছে। একমাত্র লোকনায়ক বুদ্ধব্যতীত অন্য কেউ তার রূপের তুল্য ছিল ।না

৩৩৫.সম্বুদ্ধকে অভিবাদন করে তিনি শাস্তাকে ঋদ্ধি দেখালেন, বহুধরনের মহান সব ঋদ্ধি দেখালেন।

৩৩৬-৩৩৮. দেহকে চক্রবালের সমান করলেন। মাথাটি রাখলেন উত্তরকুরুতে। উভয় পাখা দুটি দীপে আর শরীরটি রাখলেন জমু্বদীপে। দক্ষিণের সরোবরে রাখলেন পুচ্ছ আর পত্রপল্লবে সুশোভিত ডালাপাল, চন্দ্রসূর্যরূপ দুটি চোখকে রমেূপর্বতের উপর রাখলেন। চক্রবালগিরিকে করলেন মুখতুণ্ড তথা ঠোঁট আর সমূলক জম্বুবৃক্ষকে ব্যজনী বানিয়েতাস করতে করতে লোকনায়ক বুুদ্ধের কাছে গিয়ে বন্দনা করলেন।

৩৩৯.অনুরূপভাবে তিনি কখনোহস্তিবর্ণ, কখনো, পর্বত, সাগর, চন্দ্র, সূর্য, মেরু ও শত্রুবর্ণ ধারণ করে ঋদ্ধি দেখালেন।

৩৪০.হে বীর, আমি যশোধরা হে চক্ষুষ্মান, আমি আপনার পায়ে বন্দনা নিবেদন করছি। তার পর তিনি সহস্রলোকধাতুকে পদ্মফুল দিয়ে ছেয়ে ফেললেন।

৩৪১.নিজে ব্রহ্মবর্ণ ধারন করে শূণ্যে ধর্মদেশনা করলেন। তারপর আরও বললেন, হে বীর, আমি যশোধরা। হে চক্ষুষ্মান, আমি আপনার পায়ে বন্দনা নিবেদন করছি।

৩৪২-৩৪৩. আমি বিবিধ ঋদ্ধি, দিব্যশ্রেত্র, পরচিত্তবিজাননজ্ঞান ও পূর্বনিবাসানুস্মৃতিজ্ঞান লাভ করেছি। আমার দিব্যচক্ষু অত্যন্ত বিশুদ্ধ। সর্বাসব ক্ষয় করে এখন আমি বিশুদ্ধ, সুনির্মল।

৩৪৪.হে মহাবীর, অথর্, ধর্ম, নিরুক্তি ও প্রতিভাণ এই চারিপ্রতিসমিদায়্ভ আমার জ্ঞান উৎপন্ন হয়েছে, একমাত্র আপনার কাছে এসেই।

৩৪৫.পূর্ব পূর্ব লোকনাথ বুদ্ধগণ আপনার সাথে আমার সর্ম্পকের কথা বলে দিয়েছিলেন। হে মহামুনি, একমাত্র আপনার উদ্দেশেই আমি বহুপুণ্যকর্ম করেছি।

৩৪৬.হে মুনি, আমি করুন। হে মহাবীর, একমাত্র আপনার উদ্দেশেই আমি পুণ্যসঞ্চয় করেছি।

৩৪৭.অযোগ্যস্থান বর্জন করে আমি বহু অনাচার তথা অন্যায় কাঝ ত্যাগ করেছি। হে মহাবীর, একমাত্র আপনার উদ্দেশেই আমি বহুবার জীবন পর্যন্ত ত্যাগ করেছি।

৩৪৮.বহুকোটি সহস্রবার আপনি আমায় স্ত্রীর আসনে বসিয়েছেন। তাতে আমি কখনো অখুশি হইনি। হে মহামুনি, তা একমাত্র আপনার জন্যেই।

৩৪৯.বহু কোটি সহস্রবার আপনি আমায় উপকার করেছিলেন। তাতে আমি কখনো অখুশি হইনি। হে মহামুনি, তা একমাত্র আপনার জন্যেই।

৩৫০.বহু কোটি সহস্রবার আপনি আমায় ভোজন দিয়েছিলেন। আমি তাতে কখনো অখুশি হইনি। হে মহামুনি, তা একমাত্র আপনার জন্যেই।

৩৫১.আমি বহু কোটি সহস্রবার জীবন ত্যাগ করেছিলাম। ভয় থেকে মুক্ত করব এই আশা আমি জীবন পর্যন্ত দান করেছি।

৩৫২.অঙ্গভূষণ, অলংকার ও নানা প্রকার বস্ত্র আমি কখনো লুকানোর চেষ্টা করিনি। হে মহামুনি, তা একমাত্র আপনার জন্যেই।

৩৫৩.হে মহামুনি, আমি অসংখ্য হস্তি, অশ্ব, গরু, দাস-দাসী ও পরিচারিকা ত্যাগ করেছি, তা একমাত্র আপনার জন্যেই।

৩৫৫.আমি যখনই ভেবেছি যে ‘আমি যাচকদের দান করব’ কখনো নিজেকে মনক্ষুন্ন হতে দেখিনি। তাই আমি উত্তম দান দিয়েছি।

৩৫৬.হে মহাবীর, সংসারে বিচরণকালে ভোগ করেছি, আর তা একমাত্র আপনার জন্যেই।

৩৫৭.হে মহামুনি, আমি সুখেআত্মহারা হইনি, দুঃখে দর্মনা হইনি। সর্বত্রই আমি পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি। আর তা একমাত্র আপনার জন্যেই হয়েছি।

৩৫৮.সম্বুদ্ধ যেই ধর্ম আবিস্কার করেছেন, হে মহামুনি, আমি ও সেই পথে হেঁটে সুখ-দুঃখ ভোগ করে পরম বোধি লাভ করেছি।

৩৫৯.আমি বহুবার দেব, ব্রহ্মা, লোকনায়ক গৌতম সম্বুদ্ধ ও অন্যান্য লোকনাথ বুদ্ধগণের সাক্ষাৎ পেয়েছি।

৩৬০.হে মহামুনি, একমাত্র আপনার জন্যেই আমি বহুবার পুণ্যকর্ম করেছি। বুদ্ধধর্ম গবেষণা করতে গিয়ে আমি বহুবার আপনার পরিচারিকা হয়েছি।

৩৬১.আজ থেকে লক্ষাধিক চারি অসংখ্যেয় কল্প আগে পৃথিবীতে লোকনায়ক মহাবীর দীপংকর বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছিলেন।

৩৬২.একসময় এক প্রত্যন্তদেশে তথাগত নিমন্ত্রিত হলে পরে তার আগমেনের রাস্তাটি বহু মানুষ মিলে খুশিমনে পরিস্কার করছিল।

৩৬৩.সেই সময় সুমেধ নামক এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি সর্বদশী বুদ্ধের আগমন রাস্তাটি ঋদ্ধিযোগে ঠিক করে দিয়েছিলেন।

৩৬৪.সেই সময় আমি এক ব্রাহ্মণ কন্যা ছিলাম। আমার নাম ছিল সুমিত্তা। আমি সেই জনসমাগমে গিয়েছিলাম।

৩৬৫.আমি শাস্তাকে পূজা করার জন্যে হাতে আটটি উৎপলপুষ্প নিয়ে বিশাল জনতার মধ্যে এক মহানুভব ঋষিকে দেখতে পেয়েছিলাম।

৩৬৬.এমন চিরানুগত, দয়াময়, অতি মনোহর ঋষিকে দেখে এখন আমার মনে হয়েছিল যে, ‘আমার জীবন সফল’।

৩৬৭.তখন সেই ঋষির প্রচেষ্টা সফল হতে দেখেছিলাম। পূর্বকৃত কর্ম প্রভাবে আমার চিত্ত সম্বুদ্ধের প্রতিও প্রসন্ন ছিল।

৩৬৮.তার চেয়ে আরও বেশি মহৎপ্রাণ ঋষির প্রতি প্রসন্নচিত্ত হয়েছিলাম। আমি তাকে দান দেওয়ার মতো কিছুই দেখতে পাইনি। তাই আমি ঋষিকে সেই ফুলগুলোই দান করব।

৩৬৯.হে মহান ঋষি, এই পাচঁটি ফুলআপনার হোক, আর এই তিনটি আমার হোক। হে মহান ঋষি, বোধি জ্ঞান লাভের সময়ও তদ্রুপ ফল হোক।

[চতুর্থ ভাণবার সমাপ্ত]

৩৭০.ঋষি সেই ফুলগুলো নেওয়ার পর তখন মহাযশস্বী বুদ্ধ আসছিলেন। মহাঋষি তখন বিপুল জনতার সামনে বোধিজ্ঞান লাভের জন্যে সেই ফুলগুলো দিয়ে পূজা করেছিলেন।

৩৭১.মহামুনি, মহাবীর দীপংকর বুদ্ধ বিশাল জনতার মধ্যে মহৎপ্রাণ ঋষিকে দেখে বর্ণনা করেছিলেন।

৩৭২.আজ থেকে অপরিমেয় কল্প আগে মহামুনি দীপংকর বুদ্ধ আমার কর্মসম্বন্ধে বলেছিলেন।

৩৭৩.হে মহাঋষি, এই কৃতকর্মের প্রভাবে একমাত্র তোমার জন্যেই সে সমচিত্তসম্পন্না, সমকর্মা, সমকারিনী ও প্রিয়া হবে।

৩৭৪.তোমার ধর্মে সে সুদর্শনা, সুপ্রিয়া, মনোজ্ঞা, প্রিয়বাদিনী, ঋদ্ধিমতি উত্তরাধিকারী হয়ে অবস্থান করবে।

৩৭৫.পোষ্য যেমন প্রভুর জিনিসপত্রগুলো রক্ষা করে থাকে, তদ্রুপ এই মেয়েটিও নিজ কুশলধর্মগুলো রক্ষা করবে।

৩৭৬.সেই কুশলধর্মগুলো তাকে অনুকম্পা করবে। সে পারমী পূরণ করবে। আর সিংহের ন্যায় পিঞ্জর ভেদ করে বোধিজ্ঞান লাভ করবে।

৩৭৭.আজ থেকে অপরিমেয় কল্প আগে বুদ্ধ আমার সম্পর্কে যে কথাগুলো বলেছিলেন আমি তাঁর কথা অনুমোদন করেছিলাম আর সেভাবেই জীবন যাপন করেছিলাম।

৩৭৮.সেই সুকৃত কর্মের প্রতি আমি প্রসন্নচিত্ত হয়েছিলামআর দেবমনুষ্য লোকে অসংখ্যবার জন্মেছিলাম।

৩৭৯.দেবমনুষ্যলোকে বহু সুখ-দুঃখ ভোগ করে এই শেষ জন্মে আমি শাক্যকুলে জন্মেছি।

৩৮০.আমি অত্যন্ত, রূপবতী, ভোগবতী, যশবতী, শীলবতী, সর্বাঙ্গ পরিপূর্ণা ও কুলসমূহে সম্মানার্হ হয়েছি।

৩৮১.লাভ, সৎকার, খ্যাতি প্রভৃতি অষ্টলোকধর্ম বিষয়ে আমার মনে কোনো দুঃখ বা খেদ নেই। আমি অকুতোভয় হয়েই বসবাস করি।

৩৮২. তখন রাজন্তপুরে ভগবান বুদ্ধ এভাবেই বরেছেন। বীর বুদ্ধ ক্ষত্রিয়দের নগরে উপকার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।

৩৮৩-৩৯৯. যে সকল নারী সুখে-দুঃখে ভীষণ উপকারী, অর্থবাদী ও অনুকম্পাপরায়না এবং পাঁচশত কোটি ও নয়শত কোটি দেবাতিদেব বুদ্ধকে আমি মহাদান দিয়েছিলাম। হে ধর্মরাজ, আমার কৃতকর্ম সর্ম্পকে শুনুন। আমি এগার শত কোটি ও বারকোটি দেবাতিদেব বুদ্ধকে মহাদান দিয়েছিলাম। হে ধর্মরাজ, আমার কৃতকর্ম সম্বন্ধে শুনুন। আমি বিশ শত কোটি ও ত্রিশশত কোটি দেবাতিদেব বুদ্ধকে মহাদান দিয়েছিলাম। হে ধর্মরাজ, আমার কৃতকর্ম সম্বন্ধে শুনুন। আমি চলিশ শতকোটি ও পঞ্চাশ শতকোটি দেবাতিদেব বুদ্ধকে মহাদান দিয়েছিলাম। হে ধর্মরাজ, আমার কৃতকর্ম সম্বন্ধে শুনুন। আমি ষাট শতকোটি ও সত্তর শতকোটি দেবাতিদেব বুদ্ধকে মহাদান দিয়েছিলাম। হে ধর্মরাজ, আমার কৃতকর্ম সম্বন্ধে শুনুন। আমি আশিশত কোটি ও নব্বইশত কোটি দেবাতিদেব বুদ্ধকে মহাদান দিয়েছিলাম। হে ধর্মরাজ, আমার কৃতকর্ম সম্বন্ধে শুনুন। আমি লক্ষকোটি লোকাগ্রনায়ক দেবাতিদেব বুদ্ধকে মহাদান দিয়েছিলাম। হে ধর্মরাজ, আমার কৃতকর্ম সম্বন্ধে শুনুন। আমি অন্য নয় হাজার কোটি লোকনায়ক দেবাতিদেব বুদ্ধকে মহাদান দিয়েছিলাম। হে ধর্মরাজ, আমার কৃতকর্ম সম্বন্ধে শুনুন। আমি লক্ষকোটি ও পঁচাশি মহর্ষিবুদ্ধকে ও পচাঁশি শত কোটি ও সাঁইত্রিশ কোটি দেবাতিদেব বুদ্ধকে মহাদান দিয়েছিলাম। হে ধর্মরাজ, আমার কৃতকমৃ সম্বন্ধে শুনুন। আমি এই আট অষ্টক কোটি বীতরাগ পচ্চেক বুদ্ধ ও অসংখ্য ক্ষীনাসব, বীতরাগ বুদ্ধ শ্রাবককে মহাদান দিয়েছিলাম। হে ধর্মরাজ, আমার সেই মহান কৃতকর্ম সম্বন্ধে শুনুন।

৪০০.এভাবে সদা ধর্মাচরণকারীরাই ইহ-পরলোকে সুখলাভ করে থাকে।

৪০১.তাই সুষ্ঠুভাবে ধর্মাচরণ কর, দুশ্চরিত কর্ম করিও না। কারণ, ধর্মচারীই ইহ-পরলোকে সুখ লাভ করে থাকে।

৪০২.আমি সংসারে প্রতি বীতৃষ্ণা হয়ে আমি অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম। আমি একদম শূন্যহাতে সহস্র পরিজন পরিবেষ্টিত হয়ে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম।

৪০৩.গৃহত্যাগ করে আমি অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম। অর্ধ মাসের মধ্যেই আমি চতুরার্যসত্যজ্ঞান লাভ করেছিলাম।

৪০৪.বহু মানুষ সাগরের ঢেউয়ের মতো চীবর, পিণ্ডপাত, শয্যাসন, ওষুধপথ্যাদি আমাকে দান করে থাকে।

৪০৫.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

৪০৬.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

৪০৭.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্যহয়েছি।

৪০৮.এভাবে বহুদুঃখ ও সম্পত্তিভোগ করে আজ আমি বিশুদ্ধভাবে উপনীত হয়েছি। এখন আমি সর্ববিধ সম্পত্তি লাভ করেছি।

৪০৯.পুণ্যলাভের জন্য মহর্ষি বুদ্ধকে যারা দান দিয়ে থাকে, সেটি তাদের অসংস্কৃত নির্বাণপদ লাভের সহায় হয়।

৪১০.এখন আমার অতীত, অনাগত বা বর্তমান পরিক্ষীণ হয়েছে। আমার সমস্ত কর্ম ক্ষীণ হয়েছে। হে চক্ষুষ্মান, আমি আপনার পায়ে বন্দনা নিবেদন করছি।

ঠিক এভাবেই যশোধরা ভিক্ষুণী ভগবানের সামনে এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিালেন। [যশোধরা থেরী অপদান অষ্টম সমাপ্ত]

৯.যশোধরা প্রমুখা দশ হাজারভিক্ষুণী অপদান

৪১১.আজ থেকে লক্ষাধিক চারিঅসংখ্যেয় কল্প আগে লোকনায়ক দীপঙকর জিন উৎপন্ন হয়েছিলেন।

৪১২.বিনায়ক মহাবীর দীপংকর বুদ্ধ সমসুখদুঃখী সুমেধ ও সুমিত্তার কথা বলেছিলেন।

৪১৩.সদেবলোক দেখতে দেখতে ও বিচরণ করতে করতে আমরা সেই মহাজনসমাবেশে তাদের ভূয়শী প্রশংসা করার সময় এসেছিলাম।

৪১৪.ভবিষ্যতে আপনিই আমাদের সকলের প্রভু হবেন। আমরা সবাই আপনার মনোজ্ঞা ও প্রিয় বাদীকা ভার্যা হবো।

৪১৫.আমাদের দান, শীল, ভাবনা বহু মহামুনি, দীর্ঘদিন হলো সেসব আমাদের পরিত্যক্ত হয়েছে।

৪১৬.হে মহামুনি, সুগন্ধ, বিলেপন, মাল্য রত্নময়দীপ প্রভৃতি আমাদের প্রার্থিত সবকিছুই এখন পরিত্যক্ত হয়েছে।

৪১৭.হে মহামুনি, অমাদের অন্য সকল কৃতকর্ম ও মনুষ্য ভোগসম্পত্তি সবকিছুই। দীর্ঘদিন হলো আমরা পরিত্যাগ করেছি।

৪১৮.বহু জন্মপরিভ্রমণকালে আমরা বহুপুণ্যকর্ম করেছি। আমরা সেগুলো পরিভোগ করেই ভবভবান্তরে বিচরণ করেছি।

৪১৯.এই শেষ জন্মে আমরা শাক্যপুত্রের নিবাসে নানা কুলে জন্মগ্রহণ করেছি। আমরা দেব অস্পরা সদৃশ ও অনিন্দসুন্দরী।

৪২০.আমরা লাভ, যশ, অন্নপানীয় লাভী। সর্বত্রই সকলের দ্বারা সম্মানিত ও পূজিত হই।

৪২১.গৃহত্যাগ করে আমরা অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছি। মাত্র অর্ধমাসের মধ্যে আমরা শান্তি নির্বাণ লাভ করেছি।

৪২২.আমরা অন্নপানীয়, বস্ত্র, শয্যাসন প্রভৃতি লাভী। সকলেই আমাদের চতুর্প্রতয় দান করে। আমরা সকলেই প্রতিনিয়ত সম্মানিত ও পূজিত।

৪২৩.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

৪২৪.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

৪২৫.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

ঠিক এভাবেই যশোধরা প্রমুখা দশ হাজারভিক্ষুণী ভগবানের সামনে এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন।

[যশোধরা প্রমুখাদশ হাজার ভিক্ষুণীঅপদান নবম সমাপ্ত]

১০.যশোধরা প্রমুখা আঠার হাজার ভিক্ষুণীঅপদান

৪২৬.শাক্যকুলে জন্ম নেওয়া যশোধরা প্রমুখা আঠার হাজার ভিক্ষুণী সম্বুদ্ধের কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন।

৪২৭.সেই মহাঋদ্ধিমতি আঠার হাজার ভিক্ষুণী মহামুনির পায়ে বন্দনা নিবেদন করে নিজেদের কথা অবগত করতে লাগলেন।

৪২৮.হে মহামুনি, জন্ম, জরা, ব্যাধি, মরণ, অনাসব, শান্তিপদ, অমৃতপুর নির্বাণে যাব।

৪২৯.হে মহামুনি, পূর্বে আমদের যা কিছু অপরাধ ছিল, সেসব অপরাধ আমরা অকপটে স্বীকার করছি। হে বিনায়ক, আমাদের মার্জনা করল।

৪৩০.ভগবান বললেন, হে আমার উপদেশ পালনকারিনী, তোমরা ঋদ্ধি প্রদর্শন করো। সমস্ত পরিষদের সন্দেহ দূর করো।

৪৩১.হে মহাবীর, প্রিয় দর্শনা, মনোজ্ঞা যশোধরাসহ আমরা সবাই অপনার গৃহীকালীন প্রজাপতি তথা ভার্যা ছিলাম।

৪৩২.হে বীর, গৃহী থাকাকালীন আমরাই ছিয়ানব্বই লক্ষনারীর মধ্যে সবচেয়ে প্রমুখা ও শ্রেষ্ঠা ছিলাম।

৪৩৩.আমরা ছিলাম ভীষণ রূপবতী, গুণবতী, যুবতি ও প্রিয়া। লোকেরা সবাই আমারদের দেবতার ন্যায় সম্মান করত।

৪৩৪.তখন এই শাক্যকুলে জন্ম নেওয়া যশোধরাসহ আঠার হাজারভিক্ষুণীই ছিল প্রমুখা ও শ্রেষ্ঠা।

৪৩৫. কামধাতু অতিক্রম করে তারা রূপধাতুতে স্থিত হলো। তখন তাদের সমতুল্য কেউই ছিল না।

৪৩৬-৪৪০. পূর্বোক্ত ৩৩৫ নং থেকে ৩৩৯ নং পর্যন্ত একই।

৪৪১. হে বীর, হে চক্ষুষ্মান, যশোধরা প্রমুখা আমরা সবাই আপনার পায়ে বন্দনা নিবেদন করছি। হে নরনায়ক, আপনার প্রভাবেই আজ আমরা সফল হয়েছি।

৪৪২-৪৬৩. পূর্বোক্ত ৩৪২ নং হতে ৩৬৩ নং পর্যন্ত একই।

৪৬৪.সেই সময় আমরা সবাই ছিলাম ব্রাহ্মণ কন্যা। আমরা সেই জনসমাবেশে বহুস্থলজ পুষ্প আহরণ করেছিলাম।

৪৬৫.সেই সময় মহাযশস্বী, মহাবীর দীপংকর বুদ্ধ সেইমহৎপ্রাণ ঋষি সুমেধ সম্বন্ধে কথা বলেছিলেন।

৪৬৬.তিনি যখন মহৎপ্রাণ ঋষি সুমেধ কাপসের কৃতকর্মের কথা বলছিলেন তখন দেবলোকসহ এই পৃথিবী কম্পিত হচ্ছিল, প্রকম্পিত হচ্ছিল এবং চিৎকার করছিল।

৪৬৭.বহু দেবকন্যা, মনুষ্যকন্যা, এমনকি আমরাও নানাবিধ পূজনীয় দ্রব্যসমার্ভ নিয়ে শাস্তাকে পূজা করে প্রার্থনা করেছিলাম।

৪৬৮.তখন জ্যোতিময় বুদ্ধ আমাদের সম্পর্কে বলেছিলেন যে, আজ যারা প্রার্থনা করেছে তাদের প্রার্থনা পূরণ হবে।

৪৬৯-৪৭৫. পূর্বোক্ত ৩৭৭ নং থেকে ৩৮৩ নং পর্যন্ত একই।

৪৭৬.সুষ্ঠুভাবে ধর্মাচরণ করো। কখনো দুশ্চরিত কর্ম করিও না। কারণ, ধর্মচারীই ইহ-পরলোকে সুখ লাভ করে থাকে।

৪৭৭.গৃহত্যাগ করে আমরা অনাগারিক প্রবৃজ্যা গ্রহণ করেছি। মাত্র অর্ধমাসের মধ্যে আমরা চতুর্সত্য জ্ঞান লাভ করেছি।

৪৭৮.বহু মানুষ সাগরের ঢেউয়ের মতো আমাদের চীবর, পিণ্ডপাত, শয্যাসন ও ওষুধপথ্য দান করে থাকে।

৪৭৯.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।

৪৮০.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।

৪৮১.চারি প্রতিসমিদা্ভ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্যহয়েছি।

৪৮২.এভাবে বহুদুঃখ ও সম্পত্তি ভোগ করে আজ আমরা বিশুদ্ধভাবে উপনীত হয়েছি। এখন আমরা সর্ববিধ সম্পত্তি লাভ করেছি।

৪৮৩.পুণ্যলাভের জন্য যারা মহর্ষি বুদ্ধকে দান দিয়ে থাকে, সেটি তাদের অসংস্কৃত নির্বাণপদ লাভের সহায় হয়।

৪৮৪.এখন আমাদের অতীত বর্তমান বা ভবিষৎ পরিক্ষীণ হয়েছে। আমাদের সমস্ত কর্ম ক্ষীণ হয়েছে। হে চক্ষুষ্মান, আমরা আপনার পায়ে বন্দনা নিবেদন করছি।

৪৮৫.যারা নির্বাণের কথা বলে থাকে তাদের আমরা আর কী-ই যা বলব। আপনারা সবাই শান্ত, সংস্কৃত দোষ বর্জিত অমৃতপদ নির্বাণ লাভ করুন।

ঠিক এভাবেই যশোধরা প্রমুখা আঠারাহাজারভিক্ষুণীভগবানের সামনে এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন।

[যশোধরা প্রমুখা আঠার হাজারভিক্ষুণীঅপদান দশম সমাপ্ত]

[কুণ্ডলকেশী বর্গ তৃতীয় সমাপ্ত]

স্মারক-গাথা

কুণ্ডলা, গৌতমী, ধর্মদিন্না, সাকুলা, রবনন্দা, সোণা, কাপিলানী ও যশোধরা। দশ হাজার ও আঠার হাজার ভিক্ষুণী মোট চারশ পঁচাশি গাথা এই বর্গে বর্ণিত।