১.ত্রিকিংকণিপুষ্পিয়স্থবির অপদান
১.আমি তখন কনিকার পুষ্পের মতো উজ্জল, পর্বতন্তরে উপবিষ্ট, বিরজ লোকনায়ক বিপশ্বী বুদ্ধকে দেখতে পেয়েছিলাম।
২.আমি তখন তিনটি কিংকণিপুষ্প নিয়ে বুদ্ধকে দান করেছিলাম। সম্বুদ্ধকে পূজা করার পর আমি দক্ষিণমুখী হয়ে চলে গিয়েছিলাম।
৩.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুযায়ী মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মগ্রহণ করেছিলাম।
৪.আজ থেথে একানব্বই কল্প আগে আমি যেই বুদ্ধপূজা করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার বুদ্ধাপূজারই ফল।
৫.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
৬.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
৭.চারি প্রতিসম্ভিদা ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনেকৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মান তৃণমুষ্টিদায়কস্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [তৃণমুষ্টিদায়কস্থবির অপদান প্রথম সমাপ্ত]
২.পাংশুকূরপূজকস্থবির অপদান
৮.হিমালয়ের অনতিদূরে উদঙ্গণ নামক এক পর্বত ছিল। সেখানে আমি গাছে ঝুলানো পাংশুকূলকে দেখতে পেয়েছিলাম।
৯.তখন আমি তিনটি কিংকণিপুষ্প সংগ্রহ করে অতীব হৃষ্ট চিত্তেসেই পাংশুকূলকে পূজা করেছিলাম।
১০.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুযায়ী মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মেছিলাম।
১১.আজ থেথে একানব্বই কল্প আগে আমি যেই কর্ম করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার অর্হৎ ধ্বজা পাংশুকূল পূজা করারইফল।
১২.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
১৩.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
১৪.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মান পাংশুকূলপূজকস্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [পাংশুকূলপূজকস্থবির অপদান দ্বিতীয় সমাপ্ত]
৩.কোরণ্ডপুষ্পিয়স্থবির অপদান
১৫.অতীতে আমি মাতাপিতার মৃত্যুর পর এক বনকর্র্মী ছিলাম এবং আমি পশুহত্যা করেই জীবন যাপন করতাম। তখন আমার জীবনে কুশল বলতে কিছুই ছিল ।না
১৬.আমার প্রতি অশেষ অনুকম্পাবশতচক্ষুষ্মান লোকগ্রনায়ক তিষ্য ভগবান আমার ঘরে অদূরে তিনটি পদচিহ্ন প্রদশর্র্ন করেছিলেন।
১৭.তিষ্য শাস্তার হেঁটে যাওয়ার পদচিহ্ন দেখে আমি অতীব হৃষ্ট চিত্তে সেই পদচিহ্নের প্রতিচিত্তপ্রসন্নতা উৎপন্ন করেছিলাম।
১৮.ধরণীজাত সুপুষ্পিত কোরণ্ডপুষ্প দেখে আমি তা সকোষ নিয়ে বুদ্ধের শেষ্ঠ পদচিহ্নকে পূজা করেছিলাম।
১৯.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুযায়ী মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্ম নিয়েছিলাম।
২০.আমি দেবলোকে অথবা মনুষ্যলোকে যেখানেই জন্মগ্রহণ করি না কেন, সব সময় আমার দেহের চামরা কোরণ্ডপুষ্পের মতো উজ্জল হতো।
২১.আজ থেথে বিরানব্বই কল্প আগে আমি যেই কর্ম করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার বুদ্ধের পদচিহ্নপূজা করারই ফল।
২২.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
২৩.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
২৪.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানকোরণ্ডপুষ্পিয়স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [কোরণ্ডপুষ্পিয়স্থবির অপদান তৃতীয়সমাপ্ত]
৪.কিংশুকপুষ্পিয়স্থবির অপদান
২৫.সুপুষ্পিত কিংশুকপুষ্প দেখে আমি সেগুলো হাতে নিয়ে কৃতাঞ্জলি হয়ে বুদ্ধশ্রেষ্ঠকে স্মরণ করে আকাশের দিকে পূজা করেছিলাম।
২৬.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুযায়ী মনুষ্যদেহ ত্যাগ করেআমি তাবতিংস
স্বর্গে জন্ম নিয়েছিলাম।
২৭.আজ থেকে একত্রিশ কল্প আগে আমি যেই কর্ম করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার বুদ্ধপূজারই ফল।
২৮.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
২৯.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
৩০.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানকোরণ্ডপুষ্পিয়স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [কিংশুকপুষ্পিয়স্থবির অপদান চর্তুথসমাপ্ত]
৫.উপর্ধবস্ত্রদায়ক স্থবির অপদান
৩১.সেই সময় পদুমুত্তর ভগবানের সুজাত নামক এক শ্রাবক পাংশুকূল বস্ত্র খুঁজতে খুঁজ আবর্জনা স্তুপে ঘোরাফেরা করছিলেন।
৩২.তখন আমি হংসবতী নগরে এক ভৃত্য ছিলাম। পরের কাজ করেই আমি জীবিকা নির্বাহ করতাম। আমি বুদ্ধশ্রাবক সুজাতকে অর্ধেক কাপড় দান করে নতশিরে বন্দনা করেছিলাম।
৩৩.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুযায়ী মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মনিয়েছিলাম।
৩৪.আমি তেত্রিশবার দেবেন্দ্র হয়ে দেবরাজত্ব করেছিলাম এবং সাতাত্তরবার চক্রবর্তী রাজা হয়েছিলাম।
৩৫.আর প্রাদেসিক রাজা অসংখ্যবার অকুতোভয়ী হয়ে আমোদিতহতাম।
৩৬.আজ আমি চাইলেই কাননসহ সমগ্র পর্বতও ক্ষৌমবস্ত্রে ঢেকে দিতে পারি। ইহা আমার অর্ধক বস্ত্র দানেরই ফল।
৩৭.আজ থেকে লক্ষ কল্প আগে আমি যেই কর্ম করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার অর্ধেক বস্ত্র দানেরই ফল।
৩৮.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
৩৯.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
৪০.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানউপর্ধবস্ত্রদায়ক স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন।
[উপর্ধবস্ত্রদায়ক স্থবির অপদান পঞ্চম সমাপ্ত]
৬. ঘৃতমণ্ডদায়কস্থবির অপদান
৪১-৪৫. আমি বাতব্যাধিতে ভীষণভাবে পীড়িত, মহারন্যে উপবিষ্ট, লোকশ্রেষ্ঠ, নরোত্তম সুচিন্তিত ভগবানকে দেখতে পেয়েছিলাম। তারপর প্রসন্নমনে তাঁকে ঘৃতমণ্ড পান করিয়েছিলাম। আমার এই কৃতকর্মের ফলে গঙ্গা, ভাগীরথী নদীসহ চারিমহাসমুদ্র আমার জন্যে ঘৃতউৎপন্ন করে। আমার মনের সংকল্পে কথা অবগত হয়ে এই ঘোর কঠিন, বিশাল পৃথিবীও আমার কাছে হয়ে মধুর টুকরো। চারিমহাদ্বীপেও পৃথিবীতে জন্মানো এই সমস্ত বৃক্ষও আমার সংকল্পের কথা জেনে আমার কাছে হয়ে যেত কল্পবৃক্ষ। আমি পঞ্চাশবার দেবেন্দ্র হয়ে দেবলোকে রাজত্ব করেছিলাম।
৪৬.একান্নবার আমি চক্রবর্তী রাজা হয়েছিলাম। আর প্রাদেসিক রাজা তো অসংখ্যবার হয়েছিলাম।
৪৭.আজ থেকে চুরানব্বই কল্প আগে আমি যেই দান করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার ঘৃতমণ্ডর দানেরইফল।
৪৮.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
৪৯.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
৫০.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানকোরণ্ডপুষ্পিয়স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [ঘৃতমণ্ডদায়কস্থবির অপদান ষষ্ঠ সমাপ্ত
৭.উদকদায়ক স্থবির অপদান
৫১.আমি পদুমুত্তর বুদ্ধের অনুত্তরপুণ্যক্ষেত্র ভিক্ষসংঘকে অতীব প্রসন্নমনে পানীয় জলের ঘট দান করেছিলাম।
৫২.পর্বতশীষে, গাছের উপর, আকাশে কিংবা মাটিতে আমি যেখানেই যেই মুহুর্তে পানীয় জল ইচ্ছা করি তৎক্ষণাৎ আমার জন্য পানীয় জল উৎপন্ন হয়।
৫৩.আজ থেকে চুরানব্বই কল্প আগে আমি যেই দান করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার ঘৃতমণ্ডর দানেরই ফল।
৫৪.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
৫৫.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
৫৬.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানউদকদায়ক স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [উদকদায়ক স্থবির অপদান সপ্তম সমাপ্ত]
৮.পুলিনস্তুপিয়স্থবির অপদান
৫৭.হিমালয়ের অদূরে যমক নামক একটি পর্বত ছিল। তাতে আমি একটি আশ্রম ও একটি পর্ণশালা তৈরি করেছিলাম।
৫৮.তখন আমি ছিলাম নারদ নামক একজন কঠোর তপশ্চর্যাকারী জটিল সন্ন্যাসী। মোট চৌদ্দ হাজার শিষ্য নিত্য আমার পরিচর্যা করত।
৫৯.একদিন নির্জনে বসে থাকার সময় আমার মনে এই চিন্তা উদিত হয়েছিল: ‘সবাই আমাকে পূজা করে; কিন্তু আমিতোকাউকে পূজা করি না।’
৬০.আমার কোনো উপদেশদাতা নেই। আমার কোনো বক্তা নেই। আমি আচার্য-উপাধ্যায়হীন হয়েই বনে বসবাস করছি।
৬১.আমি যাঁকে উপাসনা করতে পারি, গৌরব করতে পারি, সেবা করতে পারি এমন কোনো আচার্য আমার নেই। আমার বনে বাস নিরর্থক।
৬২.আমি একটি দানশালায় খোঁজ করব, একজন গারবনীয় গুরুর খোঁজ করব। আমি কোনো একজনের আশ্রয়েই বসবাস করব। তখন কেই আমাকে নিন্দা করবে না।
৬৪.তখন আমি অমরিক নামক নদীতে গিয়ে বালি কুড়িয়ে একটি বালির চৈত্য তৈরি করেছিলাম।
৬৫.যেসব ভবের অন্তসাধনকারী মুনি সম্বুদ্ধ ছিলেন, তাদের স্তুপগুলো এমনই ছিল। তখন আমি সেই স্তুপগুলোর অবিকল প্রতিরূপ তৈরি করেছিলাম।
৬৬.বালির স্তুপ তৈরি করার পর আমি সেটিকে তিন হাজারসুবর্ণকিংকনিপুষ্প দিয়ে পূজা করেছিলাম।
৬৭.আমি সাক্ষাৎ সম্বুদ্ধেকে বন্দনা করার ন্যায় পরম শ্রদ্ধায় কৃতাঞ্জলি হয়ে সকাল-সন্ধ্যা সেই বালির চৈত্যকে বন্দনা করেছিলাম, নমস্কার করেছিলাম।
৬৮.যখন আমার চিন্তা নামক চিত্তগৃহের আশ্রমে ক্লেশ উৎপন্ন হয়, তখন আমি আমার সেই সুনির্মিতস্ত্রপটির কথা স্মরণ করি, গভীর মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করি।
৬৯.[আমি স্বগত উচ্চারণ করে বলতাম] তুমি সার্থবাহ বিনায়ক বুদ্ধকে আশ্রয় করে বসবাস কর, ক্লেশসমূকে সংযত কর। ক্লেশতে বুঁদ হয়ে থাকা তোমার পক্ষে মোটেই ক্তযুক্তি নয়।
৭০.স্তুপের কথা চিন্তা করলে পরে তখন আমার গৌরব বোধ হতো। আমি অঙকুশ দ্বারা চালিত হাতির ন্যায় সমস্ত কুবির্তক দূর করে দিতাম।
৭১.এভাবে বসবাস করতে করতে একসময় আমাকে মুত্যুরাজ আক্রমণ করেছিল। আমি মৃত্যুর পর ব্রহ্মলোকে জন্মেছিলাম।
৭২.সেখানে যথা-আয়ুষ্কাল বসবাস করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্মনিয়েছিলাম। সেখানে আমি আশিবার দেবেন্দ্র হয়ে দেবরাজত্ব করেছিলাম।
৭৩.তিনশবার চকচক্রবর্তী রাজা হয়েছিলাম। আর প্রাদেসিক রাজা তো অসংখ্যবার হয়েছিলাম।
৭৪.সুবর্ণ কিংকণিপুষ্প দিয়ে পূজা করার বিপাক আমি ভোগ করেছিলাম। জন্মে জন্মে লক্ষধাত্রী আমাকে পরিবৃত করে থাকত।
৭৫.স্তুপের সঠিক পরিচর্যা করার ফলস্বরূপ আমাকে কখনও মলিনতা স্পর্শ করত না, গায়ে ঘাম হতো না। জন্মে জন্মে আমি উজ্জল বর্ণের অধিকারী হতোম।
৭৬.অহো, আমি অমরিকা নদীর বালির চড়ে একটি স্তুপ তৈরি করে কত সুকর্মই না করেছিলাম! তার ফলে আজ আমি অচলপদ নির্বাণ লাভ করেছি।
৭৭.সারগ্রহণেচ্ছু ওকুশল কর্ম করতে ইচ্ছু ব্যক্তির কাছে ক্ষেত্র-অক্ষেত্র বলে কিছু নেই। আচরণ বা কর্মসম্পাদনই হচ্ছে সার কথা।
৭৮.বলবান ভৃত্য যেমন স্রাতস্বিনী েনদী পার হবার ইচ্ছায় সামান্য মাত্র কাষ্ঠ খণ্ড নিয়ে বিশাল হ্রদে ঝাপ দেয়।
৭৯.সেই ব্যক্তি নদী পাড়ি দেওয়ার ন্যায় আমি ও এই কাষ্ঠখণ্ডকে আশ্রয় প্রবল উৎসাহ-বীর্য সহকারে এই বিশাল সংসার সাগকে পাড়ি দেব।
৮০.অনুরূপভাবে আমার কৃতকর্ম সামান্যমাত্র হলেও সেই কর্মের আশ্রয়েই আমি এই সংসার সাগর পাড়ি দিয়েছি।
৮১.পূর্বকৃতপুণ্যপ্রভাবে এই অন্তিম জন্মে আমি শ্রাবস্তী এক ধনাঢ্য মহাশাল কুলে জন্মেছি।
৮২.আমার মাতাপিতা দুজনেই শ্রদ্ধাশীল, বুদ্ধেরশরণাগত উপাসক-উপাসিকা। উভয়েই মুক্তির স্বাদ পেয়েছেন। তারা বুদ্ধের উপদেশ যথাযথভাবে পালন করেন।
৮৩.তারা বোধিবৃক্ষের একটি শাখা নিয়ে তাতে একটি স্বর্ণময় স্তুপ তৈরি করেছেন। তারা সেটিকে সম্মুখ বুদ্ধের ন্যায় সকাল-সন্ধ্যা প্রনাম নিবেদন করেন।
৮৪.তারা উপোসথ দিনে সেই স্বর্ণময় স্তুপের কাছে গিয়ে বুদ্ধের গুণ বর্ণনা করতে করতে ত্রিযাম অতিবাহিত করতেন।
৮৫.তাঁদের এভাবে স্তুপ পূজা করতে দেখে আমি আমার পূর্বের বালির চৈত্যটিকে স্মরণ করেছিলাম। তারপর আমি সেই আসনে বসেই অর্হত্ত্ব লাভ করেছিলাম। [বাইশতম ভাণবার সমাপ্ত]
৮৬.তখন আমি সেই কাঙ্কিত বীর বুদ্ধকে খুঁজতে খুঁজতে ধর্মসেনাপতিকে দেখতে পেয়েছিলাম। তারপর আমি গৃহত্যাগ করে তার কাছে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম।
৮৭.আমি জন্মের মাত্র সাত বৎসর বয়সে অর্হত্ত্ব লাভ করেছিলাম। চক্ষুষ্মান বুদ্ধ আমার গুন অবগত হয়ে আমাকে উপসম্পদা প্রদান করেছিলেন।
৮৮.বালক অবস্থাতেই আমার সমস্ত করণীয় শেষ হয়েছে। এখন আমি শাক্যপুত্রের শাসনে কৃত-করণীয়।
৮৯.হে মহাবীর, এখন আমি আপনার বৈরীভয়ের অতীত ও সর্ব শঙ্কার অতীত একজন ঋষি-শ্রাবক। ইহা আমার স্বর্নময় স্তুপ তৈরি করারই ফল।
৯০.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
৯১.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
৯২.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানপুলিনস্তুপিয়স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [পুলিনস্তুপিয়স্থবির অপদান অষ্টম সমাপ্ত]
৯.নলকুটিদায়কস্থবির অপদান
৯৩.হিমালয়ের অদূরে হারিত নামক একটি পর্বত ছিল। সেখানে তখন সয়মূ্ভ নারদ একবৃক্ষমূলে বসবাস করছিলেন।
৯৪.তখন আমি একটি নলখাগড়ায় বাসগৃহতৈরি করে দিয়ে তাতে তৃৃণাচ্ছাদনী দিয়েছিলাম এবং একটি চংক্রমণস্থান পরিস্কার করে দিয়ে সেই সয়মূ্ভ নারদকে দানকরেছিলাম।
৯৫.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুযায়ী মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে আমি তাবতিংস দেবলোকে জন্ম নিয়েছিলাম।
৯৬.সেখানে আমার জন্য নলকুটি নির্মিতপুণ্যফলে ষাটযোজন দীর্ঘ ও ত্রিশ যোজন প্রস্থ ব্যাম প্রাসাদ নির্মিত হয়েছিল।
৯৭.এভাবে আমি চক্রবর্তী রাজা হয়েছিলাম। একত্তরবার আমি দেবরাজত্ব করেছিলাম।
৯৮.চৌত্রিশবার আমি চক্রবর্তী রাজা হয়েছিলাম। আর প্রাদেসিক রাজা তো অসংখ্যবার হয়েছিলাম।
৯৯.আমি ধর্মরূপ প্রাসাদে আরোহণ করে সর্বাাকার পরিপীর্ণ হয়ে শাক্যপুত্রের শাসনে যেখানে ইচ্ছা সেখানে বসবাস করি।
১০০.আজ থেকে একত্রিশ কল্প আগে আমি যেই কর্ম করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার নলকুটিদানেরই ফল।
১০১.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
১০২.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
১০৩.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মাননলকুটিকদায়কস্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [নলকুটিদায়কস্থবির অপদান নবম সমাপ্ত]
১০.পিয়াল ফলদায়ক স্থবির অপদান
১০৪.পূর্বে আমি পশুশিকারী ছিলাম। তখন আমি গহীন বনে বিচরণ করতাম। একদিন আমি সর্ববিধ ধর্মে বিষেশ পারদর্শী বিরজ বুদ্ধকে দেখতে পেয়েছিলাম।
১০৫.তখন আমি পিয়ালফল নিয়ে নিজ হাতে প্রসন্নমনে পুণ্যক্ষেত্র বীর বুুদ্ধশ্রেষ্ঠকে দান করেছিলাম।
১০৬.আজ থেকে একত্রিশ কল্প আগে আমি যেই ফল দান করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার ফল দানেরই ফল।
১০৭.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
১০৮.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
১০৯.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানপিয়ালফলদায়ক স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [পিয়ালফদায়ক স্থবির অপদান দশম সমাপ্ত]
[কিংকণিপুষ্প বর্গ পঞ্চশতম সমাপ্ত]
অতঃপর বর্গের স্মারক-গাথা
মৈত্রেয় বর্গ, ভদ্দালি, সকিংসম্মার্জক ও একবিহারী, বিভীতকী, জগতি, শালপুষ্পিয়, নলাগার, পাংশুকূলও কিংকণিপুষ্পিয়বর্গ মিলে
মোট চৌদ্দশ বিরাশিটি গাথায় হয়েছে সমাপ্ত। [মৈত্রেয় বর্গ দশক সমাপ্ত]
[পঞ্চম শতক সমাপ্ত]