“সেই ভগবান অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধকে বন্দনা”
খুদ্দকনিকায়ে অপদান(দ্বিতীয় খণ্ড)
১.সকিংসম্মার্জক স্থবির অপদান
১.বিপশ্বী ভগবানের পাটলি বোধিবৃক্ষের পাদপাগ্রকে দেখে আমার চিত্ত তখন প্রসন্নতায় ভরে উঠেছিল।
২.তৎক্ষণাৎ ঝাড়ু হাতে নিয়ে বোধিবৃক্ষের চারপাশে ঝাঁট দিয়েছিলাম এবং ঝাঁট দেওয়ার পর পাটলি বোধিবৃক্ষকে বন্দনা করেছিলাম।
৩.তখন অতীব প্রসন্ন চিত্তে নতশিরে হাতদ্বয় অঞ্জলিবদ্ধ করেছিলাম এবং বোধিবৃক্ষকে বন্দনা করার পর আমি স্বগৃহের দিকে চলে যচ্ছিলাম।
৪.বোধিবৃক্ষের কথা স্মরণকরতে করতে পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম এমন সময় ঘোরতর বিষধর শক্তিশালী এক অজগর সাপ আমাকে দংশন করেছিল।
৫.কিছুক্ষণ আগে আমার কৃতকর্ম আমাকে ফল দিয়ে পরিতুষ্ট করেছিল। সাপটি যখন আমার কলেবর গিলছিল, তখন আমি দেবলোকে রমিত হচ্ছিলাম।
৬.আমার চিত্ত সব সময় অনাবিল, বিশুদ্ধ ও পশুর। শোকশল্য কী জিনিস তা আমার জানা নেই। আমার চিত্তসন্তাপ বলতে কিছু নেই।
৭.আমার কখনো কুষ্ঠ, গণ্ড, চর্মরোগ, অপমার, খোঁচ-পাঁচড়া, দাউদ ও কণ্ডুরোগ হয় না। ইহা আমার সম্মার্জনেরই ফল।
৮.আমার হৃদয়ে বিন্দুমাত্র শোক, পরিদেবন নেই। আমার চিত্ত, অতীব শান্ত ও ঋজু। ইহা আমার সম্মার্জনেরই ফল।
৯.আমি সমাধিতে নিয়ত মগ্ন থাকি না। কিন্তু আমার মন সব সময় বিশুদ্ধ ও পবিত্র। আমি যখনি যেই সমাধি ইচ্ছা করি, সেই সমাধিতে নিমজ্জিত হই।
১০.আমি লোভনীয় বিষয়ে লুব্ধ হইনা, দোষনীয় বিষয়ে দ্বেষদুষ্ট হই না এবং মোহনীয় বিষয়ে মূর্ছিতহই না। ইহা আমার সম্মার্জনেরই ফল।
১১.আজ থেকে একানব্বই কল্প আগে আমি যেই কর্ম করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার সম্মার্জনেরই ফল।
১২.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে এখন আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
১৩.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
১৪.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মান সকিংসম্মার্জক স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [সকিংসম্মার্জক স্থবির অপদান প্রথম সমাপ্ত]
২.একবস্ত্রদায়ক স্থবির অপদান
১৫.হংসবতি নগরে আমি ছিলাম এক তৃণকাটিয়ে। আমি তৃণ কেটেই জীবিকা নির্বাহ করতাম এবং স্ত্রী-পুত্রের ভরণপোষণ করতাম।
১৬.সর্ববিধ ধর্মে বিশেষ পারদর্শী, লোকনায়ক পদুমুত্তর জিন সমস্ত অন্ধকার দূরিতবি করে উৎপন্ন হয়েছিলেন।
১৭.তখন আমি নিজের ঘরে বসে চিন্তা করছিলাম এভাবে : পৃথিবীতে বুদ্ধ উৎপন্ন হয়েছেন; অথচ আমার কাছে দান দেওয়ার মতো কিছুই নেই।
১৮.এই একটি মাত্র বস্ত্র আমার আছে। আমার কোনো দায়ক নেই। নিরয়ে গমন অতীব দুঃখপ্রদ। তাই দক্ষিণাস্বরূপ পুণ্যবীজ রোপন করব।
১৯.এভাবে চিন্তা করার পর আমার চিত্ত প্রসন্নতায় ভরে উঠেছিল। সেই একটি মাত্র বস্ত্র হাতে নিয়ে বুদ্ধশ্রেষ্ঠকে দান করেছিলাম।
২০.এই একটি মাত্র বস্ত্র দান করে আমি বেশ উৎফুল্ল হয়ে হর্ষধ্বনি করেছিলাম। হে বীর, হে মহামুনি, সত্যি যদি আপনি বুদ্ধ হয়ে থাকেন, তবে আমাকে তীর্ণ করুন।
২১.পরম পূজনীয় লোকবিদ পদুমুত্তর বুদ্ধ আমার দানের ভূয়শী প্রশংসা করতে করতে আমাকে এই বলে উপদেশ দিয়েছিলেন :
২২.এই একটি মাত্র বস্ত্র দানের ফলে ও প্রার্থনা অনুযায়ী তুমি লক্ষকল্প কাল বিনিপাত নিরয়ে গমন করবে না।
২৩.দেবলোকে ছত্রিশবার দেবেন্দ্র হয়ে দেবরাজত্ব করবে এবং তেত্রিশবার রাজ চক্রবর্তী
হবে।
২৪-২৫. আর প্রাদেসিক রাজা অসংখ্যবার হবে। দেবলোকে ও মনুষ্যলোকে জন্মপরিভ্রমণকালে তুমি অত্যন্ত রূপবান, গুণবান ও সুন্দর অঙ্গসৌষ্ঠবসম্পন্ন হবে। এবং তুমি চাহিবা মাত্র সুক্ষ কোমল বস্ত্র লাভ করবে।
২৬.ইহা বলার পর বীর পদুমুত্তর সম্বুদ্ধ আকাশে হংসরাজ বিচরণের ন্যায় নভোমণ্ডল দিয়ে চলে গিয়েছিলেন।
২৭.আমি দেবলোকে অথবা মনুষ্যলোকে যেখানেই জন্মগ্রহণ করি না কেন, সর্বত্রই আমার ভোগসম্পত্তির ঘাটতি ছিল না। ইহা আমার একটি মাত্র বস্ত্র দানেরই ফল।
২৮.প্রতি পদক্ষেপে আমার জন্য বস্ত্র উৎপন্ন হয়। নিচের বস্ত্রের উপর আমি দাঁড়াই এবং উপরের বস্ত্রগুলো আমাকে শামিয়ানার মতো ছায়া দেয়।
২৯.কানন, পাহাড়-পর্বতসহ সমস্ত চক্রবালকেও আমি চাইলেই মুহূর্তের মধ্যে বস্ত্র দিয়ে আচ্ছাদিত করতে পারি।
৩০.সেই একটি মাত্র বস্ত্রদানের ফলে ভবভবান্তরে জন্মসঞ্চরণকালে সুবর্ণবর্ণের অধিকারী হয়ে জন্মধারণ করি।
৩১.সেই একটি মাত্র বস্ত্রদানের ফল কখনো ক্ষয় হবার নয়। এমনকি এই আমার শেষ জন্মেও বিপাক প্রদান করছে।
৩২.আজ থেকে লক্ষকল্প আগে আমি যেই বস্ত্র দান কর্ম করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার একটি মাত্র বস্ত্রদানেরই ফল।
৩৩.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
৩৪.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
৩৫.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মান একবস্ত্রদায়কস্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [একবস্ত্রদায়ক স্থবির অপদান দ্বিতীয় সমাপ্ত]
৩.একাসনদায়ক স্থবির অপদান
৩৬.হিমালয়ের অনতিদূরে গোসিত নামক এক পর্বত ছিল। সেখানে আমি একটি আশ্রম ও পর্ণশালা তৈরি করেছিলাম।
৩৭.আমার নাম নারদ হলেও আমাকে সবাই কাল্যপ বলেই চিনত। আমি শুদ্ধিমার্গ গবেষণা করতে করতে গোসিত পর্বতে বসবাস করছিলাম।
৩৮.সর্বধর্মে বিশেষ পারদর্শী জিন পদুমুত্তর সম্বদ্ধ বিবেককামী হয়ে সুনীলাকাশমার্গঅ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
৩৯.বনে যাবার সময় মহর্ষি বুদ্ধের উজ্জ্বল রশ্মি দেখে আমি কাঠের তৈরি মঞ্চ প্রস্তুত করেছিলাম এবং আমার মৃগচর্ম বিছিয়ে দিয়েছিলাম।
৪০.বসার আসন দেওয়ার পর নতশিরে কৃতাঞ্জলিপুটে গভীর আনন্দ প্রকাশ করে এই কথা বিবেদন করেছিলাম।
৪১.হে শল্যবিনোদক মহাবীর, আপনি হচ্ছেন রোগগ্রস্ত ব্যক্তিদের মহান চিকিৎসক। হে নায়ক, আপনি এখন ভীষণ রোগগ্রস্ত। আমাকে আপনি উপযুক্ত চিকিৎসা দিন।
৪২.হে বুদ্ধশ্রেষ্ঠ মহামুনি, যেসকল বুদ্ধিমান ব্যক্তি আপনাকে দেখতে পান, তারাই কেবল ধ্রুবসিদ্ধি লাভ করেন, তারাই অজর অমর হন।
৪৩.আপনাকে দান দেওয়ার মতো আমার কিছু নেই। আমি স্বয়ং পতিত ফল খেয়েই জবিন ধারণ করি। এই একটি মাত্র বসার আসন আমার আছে। অনুগ্রহ করে আমার কাষ্ঠময় বসার আসনে বসুন।
৪৪.ভগবান সেখানে নির্ভীক পশুরাজ সিংহের ন্যায় বসেছিলেন। কিছুক্ষণ বসার পর তিনি এই কথা বলেছিলেন।
৪৫.নিশ্চিন্ত হও। ভয় পেয়ো না। তুমি জ্যোতিরসেরঅধিকারী হবে। তুমি যা যা চাও, সবই ভবিষ্যতে পূরণ হবে।
৪৬.তুমি অনুত্তরপুণ্যক্ষেত্রে যে দান দিয়েছে তা তুচ্ছকরার মতো না। যখন তোমার চিত্ত নিষ্কলুষ হবে তখন তুমি নিজেই তোমকে উদ্ধার করতে সক্ষম হবে।
৪৭.এই একটি মাত্র আসন দানের ফলেও প্রার্থনা অনুসারে তুমি লক্ষ কল্পকাল বিনিপাত অপায়ে গমন করবে না।
৪৮.তুমি দেবলোকে দেবেন্দ্র হয়ে পঞ্চাশবার দেবরাজত্ব করবে এবং আশিবার রাজ চক্রবর্তী হবে।
৪৯.আর প্রাদেসিক রাজা তো অসংখ্যবার হবে। সর্বত্রই সুখী হয়ে তুমি সংসারে জন্ম পরিভ্রমণ করবে।
৫০.এই কথা বলার পর বীর পদুমুত্তর সম্বুদ্ধ আকাশে হংসরাজ বিচরণের ন্যায় নভোমণ্ডল দিয়ে চলে গিয়েছিলেন।
৫১.আমি জন্মেজন্মে সচল ও চাকাওয়ালা হস্তিযান, অশ্বযান সবকিছু লাভ করেছি। ইহা আমার একটি মাত্র বসার আসন দানেরই ফল।
৫২.কাননে প্রবেশের পর আমি যখনি বসার আসন ইচ্ছা করতাম, তখনি আমার মনের ইচ্ছার কথা জেনে আমার জন্য পালঙ্ক আর্বিভূত হতো।
৫৩.জলের মধ্যে থেকে আমি যখনি বসার আসন ইচ্ছা করতাম, তখনি আমার মনের ইচ্ছার কথা জেনে আমার জন্য পালঙ্ক আবির্ভূত হতো।
৫৪.দেবলোকে অথবা মনুষ্যলোকে আমি যেখানে জন্মগ্রহণ করিনা কেন, আমাকে সবসময লাখো পালঙ্ক পরিবেষ্টিত করে থাকত।
৫৫.আমি দেবলোকে অথবা মনুষ্যলোকে মাত্র এই দুই ভবে জন্মগ্রহণ করেছি এবং ক্ষত্রিয় অথবা ব্রাহ্মণ এই কুলে জন্মগ্রহণ করেছি।
৫৬.অনুত্তরপুণ্যক্ষেত্র একটি মাত্র বসার আসন দান করে আজ আমি ধর্মপালঙ্ক লাভ করেছি এবং সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
৫৭.আজ থেকে লক্ষকল্প আগে আমি যেই দান কর্ম করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার একটি মাত্র বসার আসন দানেরই ফল।
৫৮.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
৫৯.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্যহয়েছি।
৬০.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মান একাসনদায়কস্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [একাসনদায়ক স্থবির অপদান তৃতীয়সমাপ্ত]
৪.সপ্তকদম্বপুষ্পিয়স্থবির অপদান
৬১.হিমালয়ের অনতিদূরে কুক্কুট কনামএক পর্বত ছিল। সেই পর্বতের পাদদেশে সাতবার পচ্চেক বুদ্ধ বসবাস করছিলেন।
৬২.একদিন আমি প্রস্ফুটিত কদম্ব ফুল দেখে কৃতাঞ্জলি পুটে সাতটি মালা হাতে নিয়ে পুণ্যচিত্তে ছিটিয়ে দিয়েছিলেন।
৬৩.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুসারে আমি মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে তাবতিংস স্বর্গে জন্মেছিলাম।
৬৪.আজ থেকে চুরানব্বই কল্প আগে আমি যেই কর্ম করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার বুদ্ধপূজা করারই ফল।
৫৮.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
৫৯.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
৬০.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মান সপ্তকদম্বপুষ্পিয়স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [সপ্তকদম্বপুষ্পিয়স্থবির অপদান চতুথসমাপ্তর্]
৫.কোরণ্ডপুষ্পিয়স্থবির অপদান
৬৮.পূর্বে আমি মাতাপিতার মৃত্যুর পর এক বনকর্মী ছিলাম। আমি পশু হত্যা করেই জীবন জীবিকা নির্বাহ করতাম। তাই আমার কুশলপুণ্যবলতে কিছুই ছিল না।
৬৯.আমার আবাসের একদম কাছে চক্ষুষ্মান লোকাগ্রনায়ক তিষ্য ভগবানআমার প্রতি অশেষ অনুকম্পাবশত তিনতি পদচিহ্ন প্রদর্শন করেছিলেন।
৭০.আমি তিষ্যশাস্তার সেই তিনটি পদচিহ্ন দেখে অতীব আনন্দিত হয়েছিলাম এবং পদচিহ্নের প্রতি আমার মন প্রসন্নতায ভরে উঠেছিল।
৭১.পাশে সুপুষ্পিত কোরণ্ড পুষ্প দেখে আমি আঁটিসহ কোরণ্ডপুষ্প ছিড়ে নিয়ে বুদ্ধের শ্রেষ্ঠ পদচিহ্নকে পুজা করেছিলাম।
৭২.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুযায়ী আমি মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে তাবতিংস দেবলোকে জন্মেছিলাম।
৭৩.দেবলোকে অথবা মনুষ্যলোকে আমি যেখানেই জন্ম নিই না কেন, সব সময় উজ্জ্বল কোরণ্ডবর্ণের অধিকারী হতাম।
৭৪.আজ থেকে বিরানব্বই কল্প আগে আমি যেই কর্ম করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার বুদ্ধের পদচিহ্ন পূজা করারই ফল।
৭৫.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
৭৬.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
৭৭.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানকোরণ্ডপুষ্পিয়স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [কোরণ্ডপুষ্পিয়স্থবির অপদান পঞ্চম সমাপ্ত]
৬.ঘৃতমণ্ডদায়কস্থবির অপদান
৭৮.একদিন আমি গভীর অরন্যে উপবিষ্ট তীব্র বাতব্যাধিতে পীড়িত লোকশ্রেষ্ঠ নরোত্তম সুচিন্তিত ভগবানকে দেখতে পেয়েছিলাম।
৭৯-৮০. তখন আমি অতীব প্রসন্নচিত্ত হয়ে ঘৃতমণ্ড পান করিয়েছিলাম। এই সুকৃতপুণ্যকর্ম
করার ফলে এই গঙ্গা ভাগীরথী, চারিমহাসমুদ্র এবং এই বিশাল কর্কশ পৃথিবী ও আমার জন্য ঘৃত উৎপন্ন করে।
৮১-৮২. আমার সংকল্পের কথা অবগত হয়ে উপর্যুক্ত নদগিুলো মধুপিণ্ডতে পরিণত হতো। আমার সংকল্পের কথা অবগত হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া চৌদিকের সমস্ত বৃক্ষগুলো কল্পতরু হয়ে যেত। আমি পঞ্চাশ বার দেবেন্দ্র হয়ে দেবরাজত্ব করেছিলাম।
৮৩.আমি একান্নবার রাজচক্রবর্তী হয়েছিলাম। আর প্রাদেসিক রাজা তো অসংখ্যবার হয়েছিলাম।
৮৪.আজ থেকে চুরানব্বই কল্প আগে আমি যেই দান কর্ম করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার ঘৃতমণ্ড দানকরারই ফল।
৮৫.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
৮৬.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
৮৭.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মান ঘৃতমণ্ডলদায়ক স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [ঘৃতমণ্ডলদায়কস্থবির অপদান ষষ্ঠ সমাপ্ত]
৭.একধর্মশ্রবণীয় স্থবির অপদান
৮৮.সর্ববিধ ধর্মে বিশেষ পারদর্শী জিন পদুমুত্তর ভগবান চতুরার্যসত্য প্রকাশ করে বহু সত্ত্বকে মুক্ত করছিলেন।
৮৯.সেই সময় আমি কঠোর তপস্যাকারী জটিল সন্ন্যাসী ছিলাম। তখন আমি বল্কলবস্ত্র ধুনতে ধুনতে আকাশমার্গে যাচ্ছিলাম।
৯০.আকাশমার্গ দিয়ে যেতে যেতে যখনি ঠিক বুদ্ধ শ্রেষ্ঠের উপরপৌঁছলাম, তখন আর যেতে পারছিলাম না। তীর বিদ্ধ পাখির ন্যায় আমি সম্পূর্ণ অচল হয়ে গিয়েছিলাম।
৯১.জলকে পাশ কাটিয়ে আমি আকাশপথে গমন করে থাকি। অতীতে আমার তো এমন কোনো ঈর্যাপথ বিপর্যয় দেখা যায়নি।
৯২.আমাকে অবশ্যই বিষয়টি খোঁজ করে দেখতে হবে। নিশ্চয় কোনো একটি কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে। তারপর আমি আকাশ থেকে নেমে প্রথমে শাস্তার শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম।
৯৩.তখন তিনি পৃথিবীর যত মনোজ্ঞ, প্রিয়বস্ত্র ও শ্রুতিমধুর শব্দ্তসবকিছুই অনিত্য, ক্ষয়শীল, ব্যয়শীল বলে দেশনা করছিলেন। তখন শাস্তার সেই কথাটিই আমার বেশ মনে ধরল। এভাবে শাস্তার কাছ থেকে অনিত্যসংজ্ঞা শিখে নিয়ে আমি আমার আশ্রমে চলে গিয়েছিলাম।
৯৪.যথা-আয়ুষ্কাল বেঁচে থাকার পর আমি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেছিলাম। যত দিন বেঁচে ছিলাম, তত দিন আমি সেই যে সদ্ধর্মশ্রবণ করেছিলাম তা মনে মনে স্মরণ করেছিলাম।
৯৫.সেই সুকৃত কমের্র ফলে এবং প্রার্থনা অনুযায়ী আমি মনুষ্যদেহ ত্যাগ করে তাবতিংস দেবলোকে জন্ম নিয়েছিলাম।
৯৬.ত্রিশ হাজার কল্প আমি দেবলোকে রমিত হয়েছিলাম। একান্নবার দেবলোকে দেবরাজত্ব করেছিলাম।
৯৭.একুশবার আমি রাজচক্রবর্তী হয়েছিলাম। আর প্রাদেসিক রাজা তো অসংখ্যবার হয়েছিলাম।
৯৮.আমি আমার পুণ্যভোগ করেছিলাম। জন্মজন্মান্তরে সুখী হতোম। আমি ভবভবান্তরে ভ্রমণকালে সব সময় বুদ্ধের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনিত্যসংজ্ঞা স্মরণ করতাম। তারপরও আমি সংসারের শেষ পরিণতি অচ্যুতপদ নির্বাণ লাভ করিনি।
৯৯.পিতৃগৃহে বসে একদিন ভাবিতেন্দ্রিয় শ্রমণ এই বলে অনিত্যমূলক দেশনা করছিলেন।
১০০.সংসারের যাবতীয় সংস্কারই অনিত্য, উৎপত্তি ও বিলয়শীল। উৎপত্তি হয়ে আবার নিরুদ্ধ হয়। সেই সংস্কারসমূহের চরম উপশমই পরমসুখ।
১০১.এই গাথা শুনার সাথে সাথেই আমার পূর্বলব্ধ অনিত্যসংজ্ঞার কথা মনে পড়েছিল। সেই আসনে বসেই আমি অর্হত্ত্ব লাভ করেছিলাম।
১০২.জন্মের মাত্র সাত বৎসর বয়সে আমি অর্হত্ত্ব লাভ করেছিলাম এবং তারপর বুদ্ধ আমাকে উপসম্পদা প্রদান করেছিলেন। ইহা আমার ধর্মশ্রবণেরই ফল।
১০৩.আজ থেকে লক্ষকল্প আগে আমি যেই ধর্মশ্রবণ করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার ধর্মশ্রবণেরই ফল।
১০৪.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
১০৫.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
১০৬.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানএকধর্মশ্রবনীয় স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [একধর্মশ্রবণীয় স্থবির অপদান ষষ্ঠ সমাপ্ত]
৮.সুচিন্তিতস্থবির অপদান
১০৭.হংসবতী নগরে আমি এক কৃষক হয়ে জন্মেছিলাম। কৃষিকাজ করেই আমি জীবিকা নির্বাহ করতাম এবং স্ত্রী-পুত্রদের ভরণপোষণ করতাম।
১০৮.তখন আমার কৃষিক্ষেত্র ছিল সুজলা, সুফলা ও ধনধান্যেপরিপূণ। জমির ধান যখন
থেকে আসল, তখন আমি এরূপ চিন্তা করেছিলাম :
১০৯.ইহা আমার পক্ষে মোটেই উচিত নয় যে, অনুত্তরপুণ্যক্ষেত্র, পরম গুণের অধিকারী সংঘকে দান না দিয়ে অগ্রে ভোজন করা।
১১০.জগতে বুদ্ধ অদ্বিতীয়, অসদৃশ ও বত্রিশ মহপুরূষলক্ষণ সম্পন্ন এবংতাঁরই আদর্শে উজ্জীবিত অনুত্তরপুণ্যক্ষেত্র সংঘ।
১১১.আমি সেই অনুত্তরপুণ্যক্ষেত্র সংঘের উদ্দেশেই নতুন শষ্য আগে আগে দান করব। এভাবে চিন্তা করার পর আমার মন প্রসন্নতায় ভরে উঠেছিল।
১১২.তারপর আমি জমি থেকে ধান নিয়ে এসে সম্বুদ্ধের কাছে উপস্থিত হয়েছিলাম। লোকশ্রেষ্ঠ নরোত্তম সম্বুদ্ধের কাছে উপস্থিত হয়ে শাস্তার পদবন্দনা করে এই কথা নিবেদন করেছিলাম।
১১৩.হে চক্ষুষ্মানমুনি, আপনিই হচ্ছেন এই নতুন শষ্যরাশির যোগ্য গ্রহীতা। আমার প্রতি অনুকম্পাপরবশ হয়ে এই দান গ্রহণ করুণ।
১১৪.পরম পূজনীয় লোকবিদপদুমুত্তর বুদ্ধ আমার সংকল্পের কথা অবগত হয়ে এই কথা বলেছিলেন।
১১৫.চারি মার্গের অধিকারী, চারিফলে প্রতিষ্ঠিত এই সংঘ ঋজুভূত, প্রজ্ঞা ও শীলে সুসমন্বিত। পুণ্যপ্রাণি ও পুণ্যাকাঙ্কী দানেচ্ছু মানুষদের পরম দানের ক্ষেত্র।
১১৬.সংঘক্ষেত্রে দান দিলে অধিক পুণ্যহয় মহাফল প্রদান করে। তাই তোমার নতু শষ্য
অথবা অন্য কিছু সংঘক্ষেত্রেই দান দেওয়া উচিত।
১১৭.সংঘকে নিমস্ত্রণ করে নিজ ঘরে ভিক্ষুসংঘকে নিয়ে গিয়ে ঘরে যা কিছু তৈরি করা আছে তা-ই তুমি ভিক্ষুসংঘকে দান কর।
১১৮.সংঘকে নিমস্ত্রন করে নিজঘরে ভিক্ষুসংঘকে নিয়ে গিয়ে আসর ঘরে যা কিছু প্রস্তুত আছে তা-ই ভিক্ষুসংকে দান করেছিলাম।
১১৯.সেই সুকৃত কর্মের ফলে ও প্রার্থনা অনুযায়ী আমি মনুষ্য দেহ ত্যাগ করে তাবতিংস স্বর্গে জন্মেছিলাম।
১২০.সেখানে আমার ব্যামপ্রভা ছিল সুবর্ণময় ও প্রভাস্বর। আমার দেববিমানটি ছিল ষাট যোজন দীর্ঘ ও ত্রিশ যোজন প্রস্থ।
[উনিশতম ভাণবার সমাপ্ত]
১২১.আমার সমগ্র দিব্যভবনটিকে ঘিরে প্রতিনিয়ত সুন্দরী নারীগণ পরিবেষ্টিত করে থাকত। সেখানেই আমি খেয়ে-দেয়ে বসবাস করতাম।
১২২.আমি তিনশত বার দেবলোকে দেবরাজত্ব করেছিলাম। পাঁচশত বার রাজ চক্রবর্তী হয়েছিলাম। আর প্রাদোসক রাজা তো অসংখ্যবার হয়েছিলাম।
১২৩.ববসংসারে পরিভ্রমনকালে আমি অমিত ধনসম্পত্তির অধিকরী হতাম। ভোগসম্পত্তির ঘাটতি আমার কখনো ছিল না। ইহা আমার নতুন শষ্য দানেরই ফল।
১২৪.সচল চাকাওয়ালা হস্তিযান ও অশ্বযান প্রভৃতি সমস্ত কিছুই লাভ করতাম। ইহা আমার নতুন শষ্য দানেরই ফল।
১২৫.জন্মে জন্মে আমি নতুন বস্ত্র, নতুন ফল, নবাগ্রবস ভোজন প্রভৃতি সমস্তকিছুই লাভ করতাম। ইহা আমার নতুন শষ্য দানেরই ফল।
১২৬.জন্মে জন্মে আমি কোশেয়্য কম্বল ক্ষৌমবস্ত্র, কার্পাস প্রভৃতি সবকিছুই লাভ করতাম। ইহা আমার নতুন শষ্য দানেরই ফল।
১২৭.জন্মে জন্মে আমি দাসদাসী ও সসজ্জিত নারী সবকিছুই লাভ করতাম। ইহা আমার নতুন শষ্য দানেরই ফল।
১২৮.আমার শীত-উষ্ণ অথবা পরিদাহ বলতে কিছুই ছিল না। এমকি আমার হৃদয়ে চৈতসিক দুঃখও ছিল না।
১২৯.জন্মে জন্মে আমি ‘ইহা খাও, ইহা ভোজন কর, এই শয্যায় শয়ন কর’ প্রভৃতি সবকিছুই লাভ করতাম। ইহা আমার নতুন শষ্য দানেরই ফল।
১৩০.ভবসংসারে জন্মপরিভ্রমণ শেষে এই আমার শেষ জন্ম। আজও আমার সেই পূর্বকৃত পুণ্যআমাকে প্রতিনিয়ত ফল দিয়ে পুরতুষ্ট করছে।
১৩১.গুণোত্তম শ্রেষ্ঠ সংঘকে নতুন শষ্য দান করে আমি আমার কর্মানুরূপ আটটি সুফল ভোগ করেছি।
১৩২.জন্মে জন্মে আমি রূপবান, যশস্বী, মহাধনাঢ্য, সুস্থ, প্রিয় জ্ঞাতি-পরিজন পরিবেষ্টিত ও ঐক্যবদ্ধ পরিষদের অধিকারী হতাম।
১৩৩.পৃথিবীর সকলেই আমাকে সম্মান করত এবংযা কিছু দানীয় বস্তু আছে সবকটি আগে আগে আমিই পেতাম।
১৩৪.ভিক্ষুসংঘের মধ্যে অথবা বুদ্ধশ্রেষ্ঠের সামনে অন্য সবাইকে অতিক্রম করে দায়কগণ আমাকেই দান দিয়ে থাকেন।
১৩৫.গুনোত্তম সংঘক্ষেত্রে এভাবে নতুন শষ্য দান করে এই সমস্ত সুফল ভোগ করেছি। ইহা আমার নতুন শষ্য দানেরইফল।
১৩৬.আজ থেকে লক্ষকল্প আগে আমি যেই নতুন শষ্য দান করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার নতুন শষ্য দানেরইফল।
১৩৭.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
১৩৮.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
১৩৯.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানসুচিন্তিতোস্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [সুচিন্তিতোস্থবির অপদান অষ্টম সমাপ্ত]
৯.সুবর্ণকিঙ্কনীয় স্থবির অপদান
১৪০.আমি গৃহত্যাগ করে শ্রদ্ধায় অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেছিলাম। তখন আমি ছিলাম বল্কবস্ত্রধারী ও কঠোর তপস্যাকারী।
১৪১.সেই সময় লোকশ্রেষ্ঠ, নরোত্তম অর্থদর্শী ভগবান জগতে জন্মেছিলেন এবং বহু মানুষকে দুঃখমুক্ত করছিলেন।
১৪২.তখন আমি ছিলাম ভীষণ ব্যাধিগ্রস্ত ও দুর্বল বালির উপর স্তুপ তৈরি করে আমি বুদ্ধশ্রেষ্ঠকে স্মরণ করেছিলাম।
১৪৩.ভীষণ রকম কষ্ট-প্রহৃষ্ট চিত্তে আমি নিজ হাতে তাতে সুবর্ণকিংকণি পুষ্প ছিটিয়ে দিয়েছিলাম। তখন আমার মন বিমল আনন্দে ভরে উঠেছিল।
১৪৪-১৪৫. আমি অথদর্শী ভগবানে সেই স্তুপকে সাক্ষাৎ বুদ্ধ পূজা করার ন্যায় পরিচর্যা করেছিলাম এবং সেই চিত্তপ্রসন্নতার দরুণ আমি দেবলোকে জন্ম নিয়ে বিপুল সুখ লাভ করেছিলাম। সেখানে আমি সুবর্ণবর্ণের অধিকারী হয়েছিলাম। ইহা আমার বুদ্ধপূজা করারই ফল।
১৪৬.আশি কোটি সমলংকৃত নারীসব সময় আমাকে সেবা করত। ইহা আমার বুদ্ধপূজা করারই ফল।
১৪৭.সেখানে প্রতিনিয়ত ষাট হাজার তূর্য, ভেরি, ঢোল, শঙ্ক, দুন্দুভি বাজানো হতো। ১৪৮-১৪৯. চুরাশি হাজার সমলংকৃত ত্রিধপ্রভিন্ন ষাট বর্ষীয় মাতঙ্গ হাতি হেমজালে
আচ্ছাদিত হয়ে আমাকে সেবা করত। মহাজনতা ও হাতির কোনো ঘাটতি তখন আমার ছিল না।
১৫০.এভাবেই আমি সুবর্ণ কিংকনি পুষ্পদানের বিপাক আমি ভোগ করছিলাম। আমি আটান্নবার দেবলোকে দেবরাজত্ব করেছিলাম।
১৫১.একাত্তর বার রাজ চক্রবর্তী হয়েছিলাম। আর এই পৃথিবীতে একশবার রাজত্ব করেছিলাম।
১৫২.এখন আমি সুদর্শন, অসংস্কৃত, অমৃত নির্বাণ অধিগত হয়েছে। এখন আর আমার পুনর্জন্ম নেই।
১৫৩.আজ থেকে একশ আঠার কল্প আগে আমি যেই নতুনযে পুষ্প পূজা করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার নতুনবুদ্ধকে পুষ্প পূজাকরারই ফল।
১৫৪.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
১৫৫.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
১৫৬. চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মান সুবর্নকিংকনীয়স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [সুবর্ণকিঙ্কনীয় স্থবির অপদান নবম সমাপ্ত]
১০. সোন্নকোন্তরিক স্থবির অপদান
১৫৭-১৫৯. মনোভাবনীয় বুদ্ধ, আত্মদান্ত, সমাহিত, শ্রেষ্ঠপথে চলমান, চিত্তের ক্লেশমলের পরম উপশমে নিরত, স্রোতোত্তীর্ণ সম্বুদ্ধ, ধ্যানী, ইন্দ্রপ্রভাসম্পন্ন বুদ্ধশ্রেষ্ঠের নিকট অলাবুর জল (লাউয়ের জল) নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম। বুদ্ধে রাতুল শ্রীপাদদ্বয় ধুইয়ে দিয়ে অলাবুর জল দান করেছিলাম।
১৬০.পদুমুত্তর সম্বুদ্ধ আমাকে আদেশ করেছিলেন, এই অলাবুর জল নিয়ে এসে আমার পদমূলে রাখ।
১৬১.আমি ‘অতি ভালো’ বলে শাস্তার গৌরববশত অলাবুর জল নিয়ে এসে বুদ্ধশ্রেষ্ঠের কাছে গিয়েছিলাম।
১৬২.মহাবীর বুদ্ধ আমার চিত্তকে শান্তির সলিলধারায় সিক্ত করে এই বলে অনুমোদন করেছিলেন : ‘এই অলাবু দানের ফলে তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হোক!’
১৬৩.(এই দানের ফলে) আমি পনের কল্প ধরে দেবলোকে রমিত হয়েছিলাম। আর ত্রিশবার রাজ চক্রবর্তী হয়েছিলাম।
১৬৪.কী রাতে, কী দিনে, আমি যখনি হাঁটতাম অথবা দাঁড়াতাম, তখনি আমার সামনে সোনার কৌটা আবির্ভূত হতো।
১৬৫.বুদ্ধকেঅলাবু দান করে আমি সোনার কৌর্টা লাভ করেছিলাম। আশ্চর্য, আমার সেই অল্পমাত্র দান কী বিপুল ফলই না প্রদান করেছিল!
১৬৬.আজ থেকে লক্ষ কল্প আগে আমি যেই অলাবু দান করেছিলাম, সেই থেকে একবারও আমাকে অপায় দুর্গতিতে পড়তে হয়নি। ইহা আমার অলাবু দানেরই ফল।
১৩৭.আমার সমস্ত ক্লেশ দগ্ধ হয়েছে, আমার সমস্ত জন্ম বিধ্বংস হয়েছে এবং নাগের ন্যায় সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে আমি সম্পূর্ণ অনাসক্ত হয়ে অবস্থান করছি।
১৩৮.বুদ্ধের কাছে আসাটা আমার অতীব শুভপ্রদ হয়েছে। ত্রিবিদ্যা লাভ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
১৩৯.চারি প্রতিসম্ভিদা অষ্ট বিমোক্ষ ও ষড়াভিজ্ঞা সাক্ষাৎ করে আমি বুদ্ধের শাসনে কৃতকার্য হয়েছি।
ঠিক এভাবেই আয়ুষ্মানসোন্নকোন্তরিক স্থবির এই গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন। [সোন্নকোন্তরিক স্থবির অপদান দশম সমাপ্ত]
স্মারক-গাথা
সকিংসম্মার্জক, একবস্ত্রী, একাসনী, কদম্বদায়ক, কোরণ্ডদায়ক, ঘৃতমণ্ডদায়ক ও একশ্রবনীয় স্থবির; সুচিন্তিত, কিংকনীয় ও সোন্নকোন্তরিক স্থবির, মোট একশত উনসত্তর গাথা এই বর্গ সমাপ্ত।