১. পঠম উরুবেলসুত্তং- উরুবেলা সূত্র (প্রথম)
২১. আমি এরূপ শুনেছি- একসময় ভগবান শ্রাবস্তীতে অনাথপিণ্ডিকের নির্মিত জেতবন বিহারে অবস্থান করছিলেন। তখন ভগবান ভিক্ষুগণকে “হে ভিক্ষুগণ” বলে আহ্বান করলেন। “হ্যাঁ ভদন্ত” বলে ভিক্ষুগণ ভগবানের আহ্বানে প্রত্যুত্তর প্রদান করলেন। ভগবান এরূপ বললেন-
“হে ভিক্ষুগণ! একসময় আমি উরুবেলাতে নৈরঞ্জনা নদীর তীরে অজপাল নিগ্রোধমূলে অবস্থান করছিলাম, সম্বোধি জ্ঞান লাভের পর। তখন আমার ধ্যান নিমগ্ন চিত্তে এরূপ পরিবির্তক উদয় হয়েছিল যে-“জীবনে দুঃখের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে অবস্থান করা কঠিন। আমি কি অন্য কোন শ্রমণ, ব্রাহ্মণকে সম্মান প্রদর্শন করতঃ গুরু মেনে তাদের উপনিশ্রয়ে অবস্থান করবো?”
ভিক্ষুগণ! এমন পরিবিতর্কে আমার এরূপ চিন্তা উদয় হয়েছিল যে- “আমার শীলস্কন্ধ কি এখনো অপরিপূর্ণ যে, আমি কি অন্য কোন শ্রমণ, ব্রাহ্মণকে সম্মান প্রদর্শন করে গুরু মেনে তার উপনিশ্রয়ে অবস্থান করবো? তখন আমি দেবলোক, ব্রহ্মলোক, মারভুবনসহ এজগতে শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, দেব-মনুষ্যের মধ্যে এমন কোন শ্রমণ, ব্রাহ্মণকে নিজের চেয়ে শ্রেষ্ঠ শীলসম্পন্ন দেখতে পাইনি, যাকে আমি সম্মান প্রদর্শন করতঃ গুরু মেনে তার আশ্রয়ে অবস্থান করতে পারি।
আমার সমাধিস্কন্ধ কি এখনো অপরিপূর্ণ যে, আমি কি অন্য কোন শ্রমণ, ব্রাহ্মণকে সম্মান প্রদর্শন করে গুরু মেনে তার উপনিশ্রয়ে অবস্থান করবো? তখন আমি দেবলোক, ব্রহ্মলোক, মারভুবনসহ এজগতে শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, দেব-মনুষ্যের মধ্যে এমন কোন শ্রমণ, ব্রাহ্মণকে নিজের চেয়ে শ্রেষ্ঠ সমাধিসম্পন্ন দেখতে পাইনি, যাকে আমি সম্মান প্রদর্শন করতঃ গুরু মেনে তার আশ্রয়ে অবস্থান করতে পারি।
আমার প্রজ্ঞাস্কন্ধ কি এখনো অপরিপূর্ণ যে, আমি কি অন্য কোন শ্রমণ, ব্রাহ্মণকে সম্মান প্রদর্শন করে গুরু মেনে তার উপনিশ্রয়ে অবস্থান করবো? তখন আমি দেবলোক, ব্রহ্মলোক, মারভুবনসহ এজগতে শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, দেব-মনুষ্যের মধ্যে এমন কোন শ্রমণ, ব্রাহ্মণকে নিজের চেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞাসম্পন্ন দেখতে পাইনি, যাকে আমি সম্মান প্রদর্শন করতঃ গুরু মেনে তার আশ্রয়ে অবস্থান করতে পারি।
আমার বিমুক্তিস্কন্ধ কি এখনো অপরিপূর্ণ যে, আমি কি অন্য কোন শ্রমণ, ব্রাহ্মণকে সম্মান প্রদর্শন করে গুরু মেনে তার উপনিশ্রয়ে অবস্থান করবো? তখন আমি দেবলোক, ব্রহ্মলোক, মারভুবনসহ এজগতে শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, দেব-মনুষ্যের মধ্যে এমন কোন শ্রমণ, ব্রাহ্মণকে নিজের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বিমুক্তিসম্পন্ন দেখতে পাইনি, যাকে আমি সম্মান প্রদর্শন করতঃ গুরু মেনে তার আশ্রয়ে অবস্থান করতে পারি।
“ভিক্ষুগণ! একারণে আমার এরূপ উদয় হয়েছিল যে-‘তাহলে এখন যে ধর্ম আমার উপলব্ধ হয়েছে, আমি সে-ই ধর্মকে সম্মান প্রদর্শন করতঃ গুরু মেনে তার উপনিশ্রয়ে অবস্থান করতে পারি।”
অতঃপর সহম্পতি ব্রহ্মা আমার চিত্ত পরিবিতর্ক জানতে পেরে যেমন কোন বলবান পুরুষ মুহূর্তের মধ্যে সঙ্কোচিত বাহু প্রসারিত অথবা প্রসারিত বাহু সঙ্কোচিত করে ঠিক তেমনি সময়ের মধ্যেই ব্রহ্মলোক হতে অন্তর্হিত হয়ে আমার সম্মুখে অবির্ভূত হলেন। আর উত্তরীয় বস্ত্র একাংশ করে দক্ষিণ জানুমণ্ডল ভূমিতে স্পর্শ করে আমাকে কৃতাঞ্জলিপূর্ণ প্রণাম করতঃ এরূপ বললেন- “প্রভূ ভগবান! আপনি এরূপ করুন; সুগত! আপনি এরূপ করুন। ভন্তে, অতীতে অরহত সম্যক সম্বুদ্ধগণ যেভাবে ধর্মকে-ই সম্মান প্রদর্শন করতঃ গুরু মেনে অবস্থান করেছিলেন; ভবিষ্যতে অরহত সম্যক সম্বুদ্ধগণ যেভাবে ধর্মকে-ই সম্মান প্রদর্শন করতঃ গুরু মেনে অবস্থান করবেন; আপনিও তাঁদের মতোন অরহত সম্যক সম্বুদ্ধ হয়ে ধর্মকে-ই সম্মান প্রদর্শন করতঃ গুরু মেনে অবস্থান করুন।’ সহস্পতি ব্রহ্মা এরূপ বললেন। এরূপ বলার পর এ’গাথা উচ্চারণ করলেন-
“অতীত আর অনাগতের বুদ্ধগণ প্রত্যেকে,
সম্বুদ্ধ প্রাপ্ত হলেন বহুজনের শোক নাশে।
গুরু মেনে সদ্ধর্মে সবে ছিলেন বিহার-বিচরণে,
বুদ্ধগণের ধর্মতা ইহা এমতো অবস্থানে।
আত্মপ্রেম সাথে নিয়ে মহৎ আকাঙক্ষায়,
অগ্রসর হোন প্রভু, বুদ্ধশাসন প্রতিষ্ঠায়।”
ভিক্ষুগণ! সহম্পতি ব্রহ্মা এরূপ বলার পর আমাকে অভিবাদন করতঃ প্রদক্ষিণ শেষে তথা হতে অন্তর্ধান হন। অতঃপর আমি ব্রহ্মার সেই প্রার্থনা জ্ঞাত হয়ে, যে ধর্ম আমার উপলব্ধ হয়েছে সে-ই ধর্মকে সম্মান প্রদর্শন করতঃ গুরু মেনে তার উপনিশ্রয়ে অবস্থান করেছি। এহেতুতে সঙ্ঘ ধর্মগুণ মহত্ত্বতায় সমন্বিত হলে আমার এবং সঙ্ঘের উভয়েরই গৌরব হয়।”
(প্রথম সূত্র)
২. দুতিয-উরূবেলসুত্তং- উরুবেল সূত্র (দ্বিতীয়)
২২. “হে ভিক্ষুগণ! একসময় আমি উরুবেলাতে নৈরঞ্জনা নদীর তীরে অজপাল নিগ্রোধমূলে অবস্থান করছিলাম, সম্বোধি জ্ঞান লাভের পরে। তখন বৃদ্ধ, জ্ঞানী, সম্মানিত, মধ্যবয়ষ্ক এবং প্রাপ্তবয়স্ক বহু ব্রাহ্মণ আমার কাছে উপস্থিত হলেন। উপস্থিত হয়ে আমার সাথে প্রীতিপূর্ণ কুশলালাপ করলেন। আলাপান্তে একপার্শ্বে উপবেশন করলেন। একপার্শ্বে উপবিষ্ট সেই ব্রাহ্মণগণ এরূপ বললেন- মহাশয় গৌতম! আমরা এরূপ শুনেছি যে, শ্রমণ গৌতম নাকি বৃদ্ধ, জ্ঞানী, সম্মানিত, মধ্যবয়স্ক এবং প্রাপ্তবয়স্ক ব্রাহ্মণকে অভিবাদন, প্রত্যুত্থান করেন না বা আসন প্রদানের মাধ্যমে আহ্বান করেন না। মহাশয় গৌতম! আপনি সেরূপ করেন কি? যদি মহাশয় গৌতম বৃদ্ধ, জ্ঞানী, সম্মানিত মধ্যবয়স্ক এবং প্রাপ্তবয়স্ক ব্রাহ্মণকে অভিবাদন, প্রত্যুত্থান না করেন বা আসন প্রদানের মাধ্যমে আহ্বান না করে থাকেন তাহলে, মহাশয় গৌতম! এটা তো সাধুতাপূর্ণ আচরণ নয়।”
ভিক্ষুগণ! সে কারণে আমার মনে এরকম উদয় হয়েছিল যে, এ’আয়ুষ্মানগণ স্থবির বা স্থবির করণ বিষয়ে জানেন না। যদি আশি, নব্বই কিংবা শতবর্ষী বৃদ্ধ জন্ম দ্বারা বৃদ্ধ হয় এবং অকালবাদী, অভূতবাদী, অনর্থবাদী, অধর্মবাদী, অবিনয়বাদী ও অকালে অর্থ, কারণ ও বিবেচনাহীন, অনর্থপূর্ণবাক্য ভাষণকারী হয়, তাহলে সে তো ‘মূর্খ স্থবির’ এর সংখ্যাতেই গণিত হয়।
যদি অল্পবয়স্ক যুবক কালো কেশধারী, ভদ্রযৌবনে সমন্বিত এবং প্রথম বয়স হতেই কালবাদী, ভূতবাদী, অর্থবাদী, ধর্মবাদী, বিনয়বাদী ও যথাকালে অর্থ ও কারণযুক্ত, বিবেচনাপ্রসূত, অর্থপূর্ণবাক্য ভাষণকারী হয়, তাহলে সে ‘পণ্ডিত স্থবির’ এর সংখ্যাতেই গণিত হয়।”
ভিক্ষুগণ! স্থবির করণ ধর্ম চার প্রকার। সেই চার প্রকার (স্থবির করণ ধর্ম) কি কি? যথা- এজগতে ভিক্ষু শীলবান হয়, প্রাতিমোক্ষ সংবরসংযুক্ত হয়ে অবস্থান করে, আচার গোচরসম্পন্ন হয়, অনুমাত্র পাপেও ভয়দর্শী হয়, শিক্ষাপদসমূহ গ্রহণ করে শিক্ষা করে; শ্রুতিধর, শ্রুতসঞ্চয়ী বহুশ্রুত হয়; যে ধর্মসমূহ আদিকল্যাণ, মধ্যেকল্যাণ, অন্তেকল্যাণ-অর্থসহ সব্যঞ্জনে পরিপূর্ণ, পরিশুদ্ধ ব্রহ্মচর্য প্রকাশ করে, সেরূপ ধর্মসমূহ দ্বারা বহুশ্রুত, তৃপ্ত, পরিচিত, মনোনিবেশকৃত, সুবোধ্য হয়। চার প্রকার ধ্যানে, আত্মজ্ঞানে নির্ভরশীল হয়ে দৃষ্টধর্মে সুখে অবস্থানকারীদের মধ্যে সন্তুষ্টলাভী, অকৃত্যলাভী, বিনাশ্রমেলাভী হয়। আস্রবসমূহ ক্ষয় সাধন করে এজীবনে স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা সাক্ষাৎ করে অনাসক্তিযুক্ত চিত্ত বিমুক্তি, প্রজ্ঞা বিমুক্তি লাভ করে অবস্থান করে। ভিক্ষুগণ! এই চার প্রকার স্থবির করণ ধর্ম।
“উদ্ধতচিত্তে ভাষে যে বহু বৃথাবাক্য,
অস্থির সংকল্পি হয়ে করে অসদ্ধর্মে সখ্য।
স্থবিরতা থেকে হয় সে বহু দূরবর্তী,
অনাদরনীয় গণ্য, তার পাপদৃষ্টি।
শীলসম্পন্ন শ্রুতবান আর প্রতিভ যেজন,
ধর্মে সংযত ধীর, বিদর্শনে অর্থ পরিজ্ঞান।
পারদর্শী সবধর্মে, অপ্রতিরোধ্য সেই হয়,
জন্ম-মৃত্যু প্রহীন তার ব্রহ্মচর্য পূর্ণ সে নিশ্চয়।
সর্বাস্রব বিহনে ভিক্ষু হলে আসবমুক্ত,
প্রকৃত স্থবির বলে তিনিই হন উক্ত।
(দ্বিতীয় সূত্র)
৩. লোকসুত্তং- লোকসুত্র
২৩. “হে ভিক্ষুগণ! তথাগত লোক সম্বন্ধে উত্তমভাবে জ্ঞাত; লোক হতে বিসংযুক্ত। তিনি লোক সমুদয় (উৎপত্তি) সম্বন্ধে উত্তমভাবে জ্ঞাত। লোক সমুদয় প্রহীণ সম্বন্ধে উত্তমভাবে জ্ঞাতি। লোক নিরোধ সম্বন্ধে উত্তমরূপে প্রত্যক্ষকৃত। এবং লোক নিরোধগামী প্রতিপদা তথাগতের ভাবিত।
দেবলোক, ব্রহ্মলোক, মারভুবনসহ এজগতে শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, দেবতা-মনুষ্যগণ কর্তৃক যেসব বিষয় মন দ্বারা দৃষ্ট, শ্রুত, অনুমিত, জ্ঞাত, প্রাপ্ত, নির্ণীত, ভাবিত সে সব-ই তথাগত কর্তৃক জ্ঞাত। তদ্ধেতু ‘তথাগতো’ বলা হয়।
তথাগত যে রাতে অনুত্তর সম্যক সম্বোধি লাভ করেন, যে রাতে অনুপাদিশেষ নির্বাণ ধাতুতে পরিনির্বাপিত হন- এ দু’য়ের মধ্যে যা ভাষণ, প্রকাশ, নির্দেশ করেন সবই সে ভাবেই হয়; অন্যভাবে হয় না। তদ্ধেতু ‘তথাগতো’ বলা হয়।
তথাগত যেভাবে বলেন সেভাবেই সম্পাদন করেন, যেভাবে সম্পাদন করেন সেভাবেই বলেন। এরূপে তিনি যথাবাদী তথাকারী; যথাকারী তথাবাদী হন। তদ্ধেতু ‘তথাগতো’ বলা হয়।
ভিক্ষুগণ! দেবলোক, ব্রহ্মলোক, মার ভুবনসহ এজগতে শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, দেবতা-মনুষ্যগণের কাছে তথাগত-ই একমাত্র প্রভু, অপরাজিত, প্রত্যক্ষ ক্ষমতাসম্পন্ন। তদ্ধেতু ‘তথাগতো’ বলা হয়।
“সর্বলোকের সম্পর্কে যিনি উত্তম অভিজ্ঞাত,
বিসংযুক্ত হন তিনি ত্রিলোক অনাসক্ত।
সব বিষয়ে ধীর আর পুনর্জন্ম বিমুক্ত,
নির্বাণে অকুতোভয় পরম শান্তি প্রাপ্ত;
ক্ষীনাস্রব বুদ্ধ তিনি সংশয়-ক্লেশ মুক্ত।
সিংহসম অনুত্তর বুদ্ধ ভগবান যিনি,
প্রবর্তিলেন ধর্মচক্র দেব-নরে তিনি।
দেব-নর সবের শরণ বুদ্ধ তথাগত,
তাদের দ্বারা পূজিত হন সম্যক সম্বুদ্ধ।
দমনে শ্রেষ্ঠ দান্ত, মহাজ্ঞানী ঋষি,
মুক্তিতে শ্রেষ্ঠ, অগ্র প্রদর্শক বিমুক্তি।
মানিত হন সেই মহাজ্ঞানী বুদ্ধ প্রভু বলে,
নেই কোন জন তাহার সম দেব-নরলোকে।
(তৃতীয় সূত্র)
৪. কালকারামসুত্তং- কালকারাম সূত্র
২৪. একসময় ভগবান সাকেত নগরে কালকারামে অবস্থান করছিলেন। তথায় ভগবান “হে ভিক্ষুগণ” বলে ভিক্ষুগণকে আহ্বান করলেন। “হ্যাঁ ভদন্ত” বলে সেই ভিক্ষুগণ ভগবানকে প্রত্যুত্তর প্রদান করলেন। অতঃপর ভগবান এরূপ বললেন-
“হে ভিক্ষুগণ! দেবলোক, ব্রহ্মলোক, মারভুবনসহ এজগতে শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, দেবতা-মনুষ্যগণের মন দ্বারা যা দৃষ্ট, শ্রুত, অনুমিত, জ্ঞাত, প্রাপ্ত, নির্ণীত, ভাবিত, বিবেচিত তা’ আমি (বিশেষভাবে) জানি।
দেবলোক, ব্রহ্মলোক, মারভুবনসহ এজগতে শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, দেবতা-মনুষ্যগণের মন দ্বারা যা দৃষ্ট, শ্রুত, অনুমিত, জ্ঞাত, প্রাপ্ত, নির্ণীত, ভাবিত, বিবেচিত তা’ আমার অভিজ্ঞাত হয়েছে। তা তথাগতের বিদিত, অবিদিত নহে।
দেবলোক, ব্রহ্মলোক, মারভুবনসহ এজগতে শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, দেবতা-মনুষ্যগণের মন দ্বারা যা দৃষ্ট, শ্রুত, অনুমিত, জ্ঞাত, প্রাপ্ত, নির্ণীত, ভাবিত, বিবেচিত তা আমি জানি বললে, আমার মিথ্যা বলা হবে না।
দেবলোক, ব্রহ্মলোক, মারভুবনসহ এজগতে শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, দেবতা-মনুষ্যগণের মন দ্বারা যা দৃষ্ট, শ্রুত, অনুমিত, জ্ঞাত, প্রাপ্ত, নির্ণীত, ভাবিত, বিবেচিত তা আমি জানি। আবার জানিও না বললে মিথ্যা বলা হবে। দেবলোক, ব্রহ্মলোক, মারভুবনসহ এজগতে শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, দেবতা-মনুষ্যগণের মন দ্বারা যা দৃষ্ট, শ্রুত, অনুমতি, জ্ঞাত, প্রাপ্ত, নির্ণীত, ভাবিত, বিবেচিত তা আমি জানি না আবার জানিও না বললে আমার মিথ্যা বলা হবে।
এ’রূপে ভিক্ষুগণ! তথাগত দ্রষ্টব্য বিষয় দেখেন এবং দৃষ্ট বিষয় মনে স্থান দেন না; অদৃষ্ট বিষয় মনে স্থান দেন না, দর্শনীয় বিষয় ও মনে স্থান দেন না; অনুমান করেন, কিন্তু অনুমিতব্য মনে করেন না; অনুমান যোগ্য মনে করেন না, আবার অনুমিত বলেও মনে করেন না; অনুমানকারী মনে করেন না; জ্ঞাত হয়ে জ্ঞাতব্য মনে করেন না, জ্ঞাত মনে করেন না, অজ্ঞাত মনে করেন না, উপলব্ধি মনে করেন না। এভাবে, ভিক্ষুগণ! দৃষ্ট, শ্রুত, অনুুমিত, জ্ঞাত বিষয়ে আগের বুদ্ধগণ যেরূপ, অনাগত বুদ্ধগণও সেরূপ। এ হতে অন্যতর অধিকতর উৎকৃষ্ট নহে বলে আমি বলি।
“আছে যত দৃষ্ট, শ্রুত বা অনুমিত,
অপরের তা সত্য নহে, মিথ্যায় গৃহীত।
সংযত নাহি হয়, যদি কোন জনে,
সত্যকে মিথ্যারূপে বলিবে তখনে।
যে বিষয়ে সত্ত্বগণ আসক্তিতে রত,
তাহা দেখি তথাগত হন অবগত।
বলেন তিনি জেনে আর দেখে দৃষ্টিশল্য,
তথাগতের নেই জান আসক্তিরূপ অন্য।”
(চতুর্থ সূত্র)
৫. ব্রহ্মচরিযসুত্তং-ব্রহ্মচর্য সূত্র
২৫. “হে ভিক্ষুগণ! এ’ব্রহ্মচর্য জনসাধারণকে প্রবঞ্চনা অর্থে, জনসাধারণের সামনে চাতুরালি প্রদর্শনার্থে, লাভ-সৎকার প্রত্যাশা অর্থে, অনর্থক বাক্যে লাভ উৎপাদনার্থে এবং “এরূপে জনসাধারণ আমাকে জানুক’ এ’অর্থে বলা হয়নি।
এ’ব্রহ্মচর্য সংযম, ত্যাগ, বিরাগ এবং নিরোধ অর্থে বলা হয়েছে।
“জনশ্রুতিতে নহে ব্রহ্মচর্য, সংযম আর ত্যাগে,
উপদেশ দেন বুদ্ধ, নিরোধ নির্বাণে।
“মহাঋষি বুদ্ধের অনুসৃত এই মার্গ,
নেই কোন সংশয়, পালনে অপবর্গ।
বুদ্ধদেশিত ব্রহ্মচর্য করেন যারা পালন,
দুঃখ ক্ষয়ে তারা রক্ষেণ বুদ্ধশাসন।”
(পঞ্চম সূত্র)
৬. কুহসুত্তং- অসৎ সূত্র
২৬. “হে ভিক্ষুগণ! যেসব ভিক্ষু অসৎ, নির্দয়, প্রবঞ্চক, মিথ্যাবাদী, অহংকারী এবং অস্থির, সেসব ভিক্ষু আমার প্রতি অনুরক্ত নয়। তারা এ’ধর্মবিনয় হতে অপসারিত। তারা এ’ধর্মবিনয়ে সাফল্য, উন্নতি এবং বৈপুল্য লাভ করতে পারে না।
যেসব ভিক্ষু সৎ, অপ্রবঞ্চক, পণ্ডিত, সদয় এবং সুস্থির, সেসব ভিক্ষু আমার প্রতি অনুরক্ত। তারা এ’ধর্মবিনয় হতে অপসারিত নয়। তারা এ’ধর্মবিনয়ে সাফল্য, উন্নতি এবং বৈপুল্য লাভ করতে পারে।”
“অসৎ অহংকারী নির্দয় ধূর্ত মিথ্যাবাদী আর,
অস্থির হয়ে ব্রহ্মচর্যায় করে দিন পার।
ধর্মবিনয়ে শ্রীবৃদ্ধি তাদের কভূ নাহি হয়,
সম্বুদ্ধের ভাষণ ইহা জানিও নিশ্চয়।
সৎ অধূর্ত সদয়, পণ্ডিত আর সুস্থির,
ধর্মবিনয়ে উন্নতি তার বলেন বুদ্ধ ধীর।”
(ষষ্ঠ সূত্র)
৭. সন্তুট্ঠিসুত্তং-সন্তুষ্ঠি সূত্র
২৭. “হে ভিক্ষুগণ! এ’চার প্রত্যয় অল্প, সুলভ এবং নির্দোষ। সেই চার প্রত্যয় কি কি? যথা- চীবরের মধ্যে পাংসুকুল-ই অল্প, সুলভ এবং নির্দোষ। ভোজনের মধ্যে ভিক্ষালব্ধ পিণ্ড-ই অল্প, সুলভ এবং নির্দোষ। শয়নাসনের মধ্যে বৃক্ষমূল-ই অল্প, সুলভ এবং নির্দোষ। ভৈষজ্যের মধ্যে পূতিমূত্র-ই অল্প, সুলভ এবং নির্দোষ।
ভিক্ষুগণ! এ’চার প্রত্যয়, অল্প, সুলভ এবং নির্দোষ। যেহেতু ভিক্ষু অল্পতে তুষ্ট হয়, সুলভে তুষ্ট হয়; এভাবে অবস্থান করাকে আমি অন্যতর শ্রমণ অঙ্গ বলি।”
“অল্পতে অতুষ্ট যারা সুলভে, অনবদ্যে,
ভোজনে শয়নাসনে ও চীবরে ভৈষজ্যে।
এসবে যারা হয় অতুষ্ট আর অসংযত,
জানিবে তাদের চিত্ত দুঃখে উৎপীড়িত।
শ্রমণত্ব অনুলোমে যে ধর্ম ব্যাখ্যাত,
তুষ্টে হয় অধিগত, শিক্ষাতে অপ্রমত্ত।”
(সপ্তম সূত্র)
৮. অরিযবংসসুত্তং- আর্যবংশ সূত্র
২৮. “ হে ভিক্ষুগণ! চার আর্যবংশ প্রসিদ্ধ, শীর্ষস্থানীয়, কুলীনবংশজাত, প্রাচীন, অসংকীর্ণ ও অসংকীর্ণপূর্ব; বর্তমানেও সন্দেহাতীত, ভবিষ্যতেও তাই এবং শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, বিজ্ঞগণ দ্বারা প্রশংসিত। সেই চার আর্যবংশ কি কি?
যথা- এজগতে ভিক্ষু যে কোন চীবরে সন্তুষ্ট হয়, যে কোন চীবরে সন্তুষ্টির প্রশংসাকারী হয়। চীবর হেতু অসঙ্গত, নিন্দনীয় কাজ সম্পাদন করে না। অলব্ধ চীবরে স্পৃহা দেখায় না, লব্ধ চীবরে অনুরাগহীন, অলোভী, অনাসক্ত হয়ে আদীনবদর্শী ও মুক্তি লাভের আশায় পরিভোগ করে। যে কোন চীবরে সন্তুষ্ট থাকার দরুন আত্মপ্রশংসা করে না, অপরকে নিন্দা করে না। এ’কাজে দক্ষ, নিরলস, শিষ্টাচারসম্পন্ন, মনোযোগী হয়। এ’ভিক্ষুকে বলা হয় প্রাচীন, প্রসিদ্ধ, আর্যবংশে স্থিত।
পুনঃ, ভিক্ষু যে কোন পিণ্ডপাতে সন্তুষ্ট হয়, যে কোন পিণ্ডপাতে সন্তুষ্টির প্রশংসাকারী হয়। পিণ্ডপাত হেতু অসঙ্গত, নিন্দনীয় কাজ সম্পাদন করে না। অলব্ধ পিণ্ডপাতে স্পৃহা দেখায় না, লব্ধ পিণ্ডপাতে অনুরাগহীন অলোভী, অনাসক্ত হয়ে আদীনবদর্শী ও মুক্তি লাভের আশায় পরিভোগ করে। যে কোন পিণ্ডপাতে সন্তুষ্ট থাকার দরুন আত্মপ্রশংসা করে না, অপরকে নিন্দা করে না। এ’কাজে দক্ষ, নিরলস, শিষ্টাচারসম্পন্ন, মনোযোগী হয়। এ’ভিক্ষুকে বলা হয় প্রাচীন, প্রসিদ্ধ, আর্যবংশে স্থিত।
পুনঃ, ভিক্ষু যে কোন শয়নাসনে সন্তুষ্ট হয়, যে কোন শয়নাসনে সন্তুষ্টির প্রশংসাকারী হয়। শয়নাসন হেতু অসঙ্গত, নিন্দনীয় কাজ সম্পাদন করে না। অলব্ধ শয়নাসনে স্পৃহা দেখায় না, লব্ধ শয়নাসনে পরিভোগহীন, অলোভী, অনাসক্ত হয়ে আদীনবদর্শী ও মুক্তি লাভের আশায় পরিভোগ করে। যে কোন শয়নাসনে সন্তুষ্ট থাকার দরুন আত্মপ্রশংসা করে না। অপরকে নিন্দা করে না। এ’কাজে দক্ষ, নিরলস, শিষ্টাচারসম্পন্ন, মনোযোগী হয়। এ’ভিক্ষুকে বলা হয় প্রাচীন, প্রসিদ্ধ, আর্যবংশে স্থিত।
পুনঃ, কোন ভিক্ষু ভাবনাময় সুখে ভাবনারত হয়, ত্যাগময় সুখে ত্যাগরত, শিষ্টাচারসম্পন্ন, মনোযোগী হয়। এ’ভিক্ষুকে বলা হয় প্রাচীন, প্রসিদ্ধ আর্যবংশে স্থিত। এ’চার আর্যবংশ প্রসিদ্ধ, শীর্ষস্থানীয়, কুলীনবংশজাত, প্রাচীন, অসংকীর্ণ, অসংকীর্ণপূর্ব, বর্তমানেও সন্দেহাতীত, ভবিষ্যতেও তাই এবং শ্রমণ, ব্রাহ্মণ, বিজ্ঞগণ কর্তৃক প্রশংসিত।”
ভিক্ষুগণ! এ’চার আর্যবংশে সমন্বিত ভিক্ষু পূর্বদিকে অবস্থানকালে নিরানন্দকে অতিক্রম করে, সেই নিরানন্দ তাকে অতিক্রম করে না; পশ্চিমদিকে অবস্থানকালে নিরানন্দকে অতিক্রম করে, সেই নিরানন্দ তাকে অতিক্রম করে না; উত্তরদিকে অবস্থানকালে নিরানন্দকে অতিক্রম করে, সেই নিরানন্দ তাকে অতিক্রম করে না; দক্ষিণদিকে অবস্থানকালে নিরানন্দকে অতিক্রম করে, সেই নিরানন্দ তাকে অতিক্রম করে না। তার কারণ কি? আনন্দ-নিরানন্দকে অতিক্রমকারীই হচ্ছে ধীর।”
“ধীরকেও নাহি ছাড়ে নিরানন্দ কভু,
নিরানন্দ অতিক্রমে ধীর সুখী তবু।
সর্বকর্ম বর্জনকারী বর্জনকে কেবা নিবারিবে?
খাঁটি সোনা অনিন্দনীয় যথা ত্রিভুবনে;
ধীরও প্রশংসিত হয় দেব-ব্রহ্মগণে।”
(অষ্টম সূত্র)
৯. ধম্মসপদসুত্তং-ধর্মপদ সূত্র
২৯. “হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মপদ প্রসিদ্ধ, শীর্ষস্থানীয়, কুলীনবংশজাত, প্রাচীন, অসংকীর্ণ, অসংকীর্ণপূর্ব, বর্তমানেও সন্দেহাতীত, ভবিষ্যতেও তাই এবং শ্রমণ, ব্রাহ্মণ, বিজ্ঞগণ কর্তৃক প্রশংসিত। সেই চার প্রকার ধর্মপদ কি কি? যথা- অনভিধ্যা ধর্মপদ প্রসিদ্ধ, শীর্ষস্থানীয়, কুলীনবংশজাত, প্রাচীন, অসংকীর্ণ, অসংকীর্ণপূর্ব, বর্তমানেও সন্দেহাতীত, ভবিষ্যতেও তাই এবং শ্রমণ, ব্রাহ্মণ, বিজ্ঞগণ কর্তৃক প্রশংসিত।”
“অব্যাপদ ধর্মপদ প্রসিদ্ধ, শীর্ষস্থানীয়, কুলীনবংশজাত, প্রাচীন, অসংকীর্ণ, অসংকীর্ণপূর্ব, বর্তমানেও সন্দেহাতীত, ভবিষ্যতেও তাই এবং শ্রমণ, ব্রাহ্মণ, বিজ্ঞগণ কর্তৃক প্রশংসিত।
সম্যক সমাধি ধর্মপদ প্রসিদ্ধ, শীর্ষস্থানীয়, কুলীনবংশজাত, প্রাচীন, অসংকীর্ণ, অসংকীর্ণপূর্ব, বর্তমানেও সন্দেহাতীত, ভবিষ্যতেও তাই এবং শ্রমণ, ব্রাহ্মণ, বিজ্ঞগণ কর্তৃক প্রশংসিত।
ভিক্ষুগণ! এ’চার প্রকার ধর্মপদ প্রসিদ্ধ, শীর্ষস্থানীয়, কুলীনবংশজাত, প্রাচীন, অসংকীর্ণ, অসংকীর্ণপূর্ব, বর্তমানেও সন্দেহাতীত, ভবিষ্যতেও তাই এবং শ্রমণ, ব্রাহ্মণ, বিজ্ঞগণ কর্তৃক প্রশংসিত।
“অলোলুপতা অহিংস চিত্তে অবস্থানকারী হলে,
আধ্যাত্মিক সমাধি লভে পরিপূর্ণ শীলে।”
(নবম সূত্র)
১০. পরিব্বাজকসুত্তং-পরিব্রাজক সূত্র
৩০. একসময় ভগবান রাজগৃহে গিজ্ঝকূট পর্বতে অবস্থান করছিলেন। তখন বহু অভিজ্ঞাত পরিব্রাজক সিপ্পিনিকা তীরে অবস্থান করত। যেমন- অন্নভার, বরধর, সকুলুদায়ীসহ আরো অভিজ্ঞাত অভিজ্ঞাত পরিব্রাজক। একদিন ভগবান সন্ধ্যার সময় নির্জনতা হতে উঠে সিপ্পিনিকা তীরে পরিব্রাজকারামে উপস্থিত হলেন, এবং প্রজ্ঞাপ্ত আসনে উপবেশন করলেন। উপবিষ্ট ভগবান সেই পরিব্রাজকগণকে এরূপ বললেন-
“হে পরিব্রাজকগণ! চার প্রকার ধর্মপদ প্রসিদ্ধ, শীর্ষস্থানীয়, কুলীনবংশজাত, প্রাচীন, অসংকীর্ণ, অসংকীর্ণপূর্ব, সন্দিহান নয়, সন্দিহান হবেনা এবং শ্রমণ, ব্রাহ্মণ, বিজ্ঞগণ, কর্তৃক প্রশংসিত। সেই চার প্রকার ধর্মপদ কি কি? যথা- অনভিধ্যা ধর্মপদ প্রসিদ্ধ, শীর্ষস্থানীয়, কুলীনবংশজাত, প্রাচীন, অসংকীর্ণ, অসংকীর্ণপূর্ব, সন্দিহান নয়, সন্দিহান হবে না এবং শ্রমন, ব্রাহ্মণ, বিজ্ঞগণ কর্তৃক প্রশংসিত।
অব্যাপদ ধর্মপদ প্রসিদ্ধ, শীর্ষস্থানীয়, কুলীনবংশজাত, প্রাচীন, অসংকীর্ণ, অসংকীর্ণপূর্ব, সন্দিহান নয়, সন্দিহান হবে না এবং শ্রমণ, ব্রাহ্মণ, বিজ্ঞগণ কর্তৃক প্রশংসিত।
সম্যক স্মৃতি ধর্মপদ প্রসিদ্ধ, শীর্ষস্থানীয়, কুলীনবংশজাত, প্রাচীন, অসংকীর্ণ, অসংকীর্ণপূর্ব, সন্দিহান নয়, সন্দিহান হবে না এবং শ্রমণ, ব্রাহ্মণ, বিজ্ঞগণ কর্তৃক প্রশংসিত।
সম্যক সমাধি ধর্মপদ প্রসিদ্ধ, শীর্ষস্থানীয়, কুলীনবংশজাত, প্রাচীন, অসংকীর্ণ, অসংকীর্ণপূর্ব, সন্দিহান নয়, সন্দিহান হবে না এবং শ্রমণ, ব্রাহ্মণ, বিজ্ঞগণ কর্তৃক প্রশংসিত।
পরিব্রাজকগণ! এ’চার প্রকার ধর্মপদ প্রসিদ্ধ, শীর্ষস্থানীয়, কুলীনবংশজাত, প্রাচীন, অসংকীর্ণ, অসংকীর্ণপূর্ব, সন্দিহান নয়, সন্দিহান হবে না এবং শ্রমণ, ব্রাহ্মণ, বিজ্ঞগণ কর্তৃক প্রশংসিত। কেউ যদি এরূপ বলে-‘আমি এ’অনভিধ্যা ধর্মপদ প্রত্যাখ্যান করে অভিধ্যাসম্পন্ন, কামের প্রতি তীব্র বাসনাযুক্ত শ্রমণ-ব্রাহ্মণকে প্রকাশ করবো।’ তখন আমি তাকে এরূপ বলবো- ‘আসুক, বলুক বা না বলুক আমি তার প্রভাব দেখছি।’ পরিব্রাজকগণ! সে অবশ্যই যে, অনভিধ্যা ধর্মপদ প্রত্যাখান করে অভিধ্যাসম্পন্ন, কামের প্রতি তীব্র বাসনাযুক্ত শ্রমণ-ব্রাহ্মণকে প্রকাশ করবে একারণ বিদ্যমান নেই।
পরিব্রাজকগণ! কেউ যদি এরূপ বলে- ‘আমি এ’অব্যাপাদ ধর্মপদ প্রত্যাখান করে দূষিত চিত্তসম্পন্ন ও সংকল্পে প্রদুষ্টমনা শ্রমণ-ব্রাহ্মণকে প্রকাশ করবো।’ তখন আমি তাকে এরূপ বলবো- ‘আসুক, বলুক বা না বলুক আমি তার প্রভাব দেখছি।’ পরিব্রাজকগণ, সে অবশ্যই যে, অব্যাপাদ ধর্মপদ প্রত্যাখান করে দূষিত চিত্তসম্পন্ন ও সংকল্পে প্রদুষ্টমনা শ্রমণ-ব্রাহ্মণকে প্রকাশ করবে এ’কারণ বিদ্যমান নেই।
পরিব্রাজকগণ! কেউ যদি এরূপ বলে- ‘আমি এ’সম্যক স্মৃতি ধর্মপদ প্রত্যাখান করে স্মৃতিহীন, অশিষ্টাচারসম্পন্ন শ্রমণ-ব্রাহ্মণকে প্রকাশ করবো। তখন আমি তাকে এরূপ বলবো- ‘আসুক, বলুক বা না বলুক আমি তার প্রভাব দেখছি।’ পরিব্রাজকগণ, সে অবশ্যই যে, সম্যক স্মৃতি ধর্মপদ প্রত্যাখান করে স্মৃতিহীন, অশিষ্টাচারসম্পন্ন শ্রমণ-ব্রাহ্মণকে প্রকাশ করবে এ’কারণ বিদ্যমান নেই।
পরিব্রাজকগণ! কেউ যদি এরূপ বলে- ‘আমি এ’সম্যক সমাধি ধর্মপদ প্রত্যাখান করে অসমাহিত, বিক্ষিপ্ত চিত্তসম্পন্ন শ্রমণ-ব্রাহ্মণকে প্রকাশ করবো। তখন আমি তাকে এরূপ বলবো- ‘আসুক, বলুক বা না বলুক আমি তার প্রভাব দেখছি।’ পরিব্রাজকগণ, সে অবশ্যই যে, সম্যক সমাধি ধর্মপদ প্রত্যাখান করে অসমাহিত, বিক্ষিপ্ত চিত্তসম্পন্ন শ্রমণ-ব্রাহ্মণকে প্রকাশ করবে এ’কারণ বিদ্যমান নেই।
পরিব্রাজকগণ! যে এ’চার ধর্মপদ নিন্দা করে প্রত্যাখান করা উচিত মনে করে, তার দৃষ্টধর্মে চারধর্ম সম্বন্ধনীয় নিন্দার কারণ হয়। সেই চার ধর্ম কি কি? যথা- কোন সম্মানিত ব্যক্তি যদি অনভিধ্যা ধর্মপদ নিন্দা করে প্রত্যাখান করে, তাহলে সে অভিধ্যাসম্পন্ন, কামের প্রতি তীব্র কাসনাযুক্ত শ্রমণ-ব্রাহ্মণদের কাছে পূজিত, প্রশংসিত হয়।
কোন সম্মানিত ব্যক্তি যদি অব্যাপাদ ধর্মপদ নিন্দা করে প্রত্যাখান করে, তাহলে সে দূষিত চিত্তসম্পন্ন, সংকল্পে প্রদুষ্টমনা শ্রমণ-ব্রাহ্মণদের কাছে পূজিত, প্রশংসিত হয়।
কোন সম্মানিত ব্যক্তি যদি সম্যক স্মৃতি ধর্মপদ নিন্দা করে প্রত্যাখান করে, তাহলে সে স্মৃতিহীন, অশিষ্টাচারসম্পন্ন শ্রমণ-ব্রাহ্মণদের কাছে পূজিত, প্রশংসিত হয়।
কোন সম্মানিত ব্যক্তি যদি সম্যক সমাধি ধর্মপদ নিন্দা করে প্রত্যাখান করে, তাহলে সে অসমাহিত, বিক্ষিপ্ত চিত্তসম্পন্ন শ্রমণ-ব্রাহ্মণদের কাছে পূজিত, প্রশংসিত হয়।
পরিব্রাজকগ! যে ব্যক্তি এ’চার ধর্মপদ নিন্দাযোগ্য, প্রত্যাখানযোগ্য মনে করে, তার এ’চার ধর্ম সম্বন্ধনীয় বাদানুবাদ দৃষ্টধর্মে নিন্দার কারণ হয়। যারা উক্কলবাসী পরিব্রাজক ছিলেন, তারা অহেতুকবাদী, অক্রিয়াবাদী, নাস্তিকবাদী হয়েও এ’চার ধর্মপদকে নিন্দাযোগ্য, প্রত্যাখানযোগ্য মনে করেনি। তার কারণ কি? হিংসা, নিন্দা, তিরস্কারের ভয় হেতু।”
“স্মৃতিমান লোভমুক্ত, অধ্যাত্মিক সুসমাহিত,
অত্যাগ্রাহী বিনয় শিক্ষায় বলে তাকে অপ্রমত্ত।”
(দশম সূত্র)
স্মারক গাথা ঃ
দুই উরুবেলা, এক লোক, কালক, ব্রহ্মচর্যসহ পঞ্চম
অসৎ, সন্তুষ্টি, বংশ, ধর্মপদ, পরিব্রাজক মিলে দশম।