১. পাণাতিপাতসুত্তং-প্রাণীহত্যা সূত্র
৮১. “হে ভিক্ষুগণ! চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে নিরয়ে উৎপন্ন হয়? সেই চার ধর্ম কি কি? যথা- প্রাণীহত্যাকারী হলে, অদত্তবস্তু গ্রহণকারী হলে, ব্যভিচারী হলে, মিথ্যাবাক্য ভাষণকারী হলে। এ’চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে নিরয়ে উৎপন্ন হয়।
ভিক্ষুগণ, চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে স্বর্গে উৎপন্ন হয়। সেই চার ধর্ম কি কি? যথা- প্রাণীহত্যা হতে প্রতিবিরত হলে, অদত্তবস্তু গ্রহণ হতে প্রতিবিরত হলে, ব্যভিচার হতে প্রতিবিরত হলে, মিথ্যাবাক্য ভাষণ হতে প্রতিবিরত হলে। এই চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে স্বর্গে উৎপন্ন হয়।” (প্রথম সূত্র)
২. মুসাবাদসুত্তং-মিথ্যাবাক্য সূত্র
৮২. “হে ভিক্ষুগণ! চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে নিরয়ে উৎপন্ন হয়। সেই চার ধর্ম কি কি? যথা- মিথ্যাবাক্য ভাষণকারী হলে, পিশুনবাক্য ভাষণকারী হলে, পৌরুষবাক্য ভাষণকারী হলে এবং সমপ্রলাপবাক্য ভাষণকারী হলে। এই চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে নিরয়ে উৎপন্ন হয়।
ভিক্ষুগণ, চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে স্বর্গে উৎপন্ন হয়। সেই চার ধর্ম কি কি? যথা- মিথ্যাবাক্য ভাষণ হতে প্রতিবিরত হলে, পিশুনবাক্য ভাষণ হতে প্রতিবিরত হলে, পৌরুষবাক্য ভাষণ হতে প্রতিবিরত হলে এবং সমপ্রলাপবাক্য ভাষণ হতে প্রতিবিরত হলে। এই চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে স্বর্গে উৎপন্ন হয়।” (দ্বিতীয় সূত্র)
৩. অবন্নারহসুত্তং-নিন্দাযোগ্য সূত্র
৮৩. “হে ভিক্ষুগণ! চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে নিরয়ে উৎপন্ন হয়। সেই চার ধর্ম কি কি? যথা- সম্যকভাবে জ্ঞাত না হয়ে, অনুসন্ধান না করে নিন্দনীয়ের প্রশংসা করা; সম্যকভাবে জ্ঞান না হয়ে, অনুসন্ধান না করে প্রশংসনীয়ের নিন্দা করা; সম্যকভাবে জ্ঞান না হয়ে, অনুসন্ধান না করে নিরানন্দ বিষয়ে আনন্দ প্রকাশ করা; সম্যকভাবে জ্ঞান না হয়ে, অনুসন্ধান না করে আনন্দ বিষয়ে নিরানন্দ প্রকাশ করা। এই চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে নিরয়ে উৎপন্ন হয়।
ভিক্ষুগণ, চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে স্বর্গে উৎপন্ন হয়। সেই চার ধর্ম কি কি? যথা- সম্যকভাবে জ্ঞাত হয়ে, অনুসন্ধান করে নিন্দনীয়ের নিন্দা করা; সম্যকভাবে জ্ঞাত হয়ে, অনুসন্ধান করে প্রশংসনীয়ের প্রশংসা করা; সম্যকভাবে জ্ঞাত হয়ে, অনুসন্ধান করে নিরানন্দ বিষয়ে আনন্দ প্রকাশ করা; সম্যকভাবে জ্ঞাত হয়ে, অনুসন্ধান করে আনন্দ বিষয়ে নিরানন্দ প্রকাশ করা। এই চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে স্বর্গে উৎপন্ন হয়।” (তৃতীয় সূত্র)
৪. কোধগরূসুত্তং- ক্রোধপরায়ণ সূত্র
৮৪. “হে ভিক্ষুগণ! চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে নিরয়ে উৎপন্ন হয়। সেই চার ধর্ম কি কি? যথা- ক্রোধপরায়ণ হয়ে সদ্ধর্মের প্রতি অবিশ্বাসী হওয়া, পরনিন্দাকারী হয়ে সদ্ধর্মের প্রতি অবিশ্বাসী হওয়া, লাভের প্রত্যাশী হয়ে সদ্ধর্মের প্রতি অবিশ্বাসী হওয়া, সৎকারের প্রত্যাশী হয়ে সদ্ধর্মের প্রতি অবিশ্বাসী হওয়া। এই চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে নিরয়ে উৎপন্ন হয়।
ভিক্ষুগণ, চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে স্বর্গে উৎপন্ন হয়। সেই চার ধর্ম কি কি? যথা- ক্রোধপরায়ণ না হয়ে সদ্ধর্মের প্রতি বিশ্বাসী হওয়া, পরনিন্দাকারী না হয়ে সদ্ধর্মের প্রতি বিশ্বাসী হওয়া, লাভের প্রত্যাশী না হয়ে সদ্ধর্মের প্রতি বিশ্বাসী হওয়া, সৎকারের প্রত্যাশী না হয়ে সদ্ধর্মের প্রতি বিশ্বাসী হওয়া। এই চার ধর্মে সমন্বিত, সমর্পিত হলে নিঃসন্দেহে স্বর্গে উৎপন্ন হয়।” (চতুর্থ সূত্র)
৫. তমোতমসুত্তং-তমোঃপরায়ণ সূত্র
৮৫. “হে ভিক্ষুগণ! জগতে চার প্রকার পুদগল বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- তমঃ তমোপরায়ণ, তমঃ জ্যোতিপরায়ণ, জ্যোতিঃ তমপরায়ণ, জ্যোতিঃ জ্যোতিপরায়ণ।
কিরূপ পুদগল তমঃ তমোপরায়ণ? এজগতে কোন ব্যক্তি নীচকুলে জন্মগ্রহণ করে। যেমন- চণ্ডালকুলে, বেনকুলে, ব্যাধকুলে, চর্মকারকুলে, ঝাড়ুদারকুলে, অন্ন-পান-ভোজন অভাবক্লিষ্ট দরিদ্রকুলে- যেখানে অতি দুঃখকষ্টে গ্রাসাচ্ছাদন লাভ হয়। সে দুর্বর্ণ, দুর্দর্শনীয়, কদাকার, বহুরোগগ্রস্ত, অন্ধ, খঞ্জ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়। অন্ন, পানীয়, বস্ত্র, যান, মালা-গন্ধদ্রব্য পেষণ-লেপন, শয্যাসন, আবাস, তৈল-প্রদীপ ইত্যাদি দ্রব্যসম্ভার লাভ করতে পারে না। সে কায়ে দুশ্চরিত আচরণ করে, বাক্যে দুশ্চরিত আচরণ করে, মনে দুশ্চরিত আচরণ করে। সেই কায়-বাক-মন দ্বারা দুশ্চরিত আচরণ করার ফলে দেহান্তে মরণের পর অপায় দুর্গতি নিরয়ে উৎপন্ন হয়। এরূপ পুদগল তমঃ তমোপরায়ণ।
কিরূপ পুদগল তমঃ জ্যোতিপরায়ণ? এজগতে কোন ব্যক্তি নীচকুলে জন্মগ্রহণ করে। যেমন- চণ্ডালকুলে, বেনকুলে, ব্যাধকুলে, চর্মকারকুলে, ঝাড়ুদারকুলে, অন্ন-পান-ভোজন অভাবক্লিষ্ট দরিদ্রকুলে- যেখানে অতি দুঃখকষ্টে গ্রাসাচ্ছাদন লাভ হয়। সে দুর্বর্ণ, দুর্দর্শনীয়, কদাকার, বহুরোগগ্রস্ত, অন্ধ, খঞ্জ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়। অন্ন, পানীয়, বস্ত্র, যান, মালা-গন্ধদ্রব্য পেষণ-লেপন, শয্যাসন, আবাস, তৈল-প্রদীপ ইত্যাদি দ্রব্যসম্ভার লাভ করতে পারে না। কিন্তু সে কায়ে দুশ্চরিত আচরণ করে না, বাক্যে দুশ্চরিত আচরণ করে না, মনে দুশ্চরিত আচরণ করে না। সেই কায়-বাক-মন দ্বারা সুচরিত আচরণ করার ফলে দেহান্তে মরণের পর সুগতি স্বর্গে উৎপন্ন হয়। এরূপ পুদগল তমঃ জ্যোতিপরায়ণ।
কিরূপ পুদগল জ্যোতিঃ তমোপরায়ণ? এজগতে কোন ব্যক্তি উচ্চকুলে জন্মগ্রহণ করে। যেমন- মহা বিত্তবান ক্ষত্রিয়কুলে, মহা বিত্তবান ব্রাহ্মণকুলে, মহা বিত্তবান গৃহপতিকুলে অথবা মহা ভোগ-সম্পদ, স্বর্ণ-রৌপ্য ও প্রভূত বিত্তোপকর এবং ধন-ধান্যসম্পন্ন পরিবারে। সে অতি সুশ্রী, সুদর্শন, মনোহর ও উৎকৃষ্ট বর্ণ বিশিষ্ট হয়। অন্ন, পানীয়, বস্ত্র, যান, মালা ও প্রসাধনীয় সুগন্ধ দ্রব্য, শয্যাসন, আবাস, প্রদীপ ইত্যাদি দ্রব্যসম্ভার লাভ করে। তবে সে কায়ে দুশ্চরিত আচরণ করে, বাক্যে দুশ্চরিত আচরণ করে, মনে দুশ্চরিত আচরণ করে। সেই কায়-বাক-মন দ্বারা দুশ্চরিত আচরণ করার ফলে দেহান্তে মরণের পর অপায় দুর্গতি বিনিপাত নিরয়ে উৎপন্ন হয়। এরূপ পুদগল জ্যোতিঃ তমোপরায়ণ।
কিরূপ পুদগল জ্যোতিঃ জ্যোতিপরায়ণ? এজগতে কোন ব্যক্তি উচ্চকুলে জন্মগ্রহণ করে। যেমন- মহা বিত্তবান ক্ষত্রিয়কুলে, মহা বিত্তবান ব্রাহ্মণকুলে, মহা বিত্তবান গৃহপতিকুলে অথবা মহা ভোগ-সম্পদ, স্বর্ণ-রৌপ্য ও প্রভূত বিত্তোপকর এবং ধন-ধান্যসম্পন্ন পরিবারে। সে অতি সুশ্রী, সুদর্শন, মনোহর ও উৎকৃষ্ট বর্ণ বিশিষ্ট হয়। অন্ন, পানীয়, বস্ত্র, যান, মালা ও প্রসাধনীয় সুগন্ধ দ্রব্য, শয্যাসন, আবাস, প্রদীপ ইত্যাদি দ্রব্যসম্ভার লাভ করে। সে কায়ে সুচরিত আচরণ করে, বাক্যে সুচরিত আচরণ করে, মনে সুচরিত আচরণ করে। সেই কায়-বাক-মন দ্বারা সুচরিত আচরণ করার ফলে দেহান্তে মরণের পর সুগতি স্বর্গে উৎপন্ন হয়। এরূপ পুদগল জ্যোতিঃ জ্যোতিপরায়ণ। এই চার প্রকার পুদগল জগতে বিদ্যমান।” (পঞ্চম সূত্র)
৬. ওণতোণতসুত্তং-অবনতাবনত সূত্র
৮৬. “হে ভিক্ষুগণ! জগতে চার প্রকার পুদগল বিদ্যমান। সেই চার প্রকার পুদগল কি কি? যথা- অবনতাবনত, অবনতোন্নত, উন্নতাবনত, উন্নতোন্নত। এই চার প্রকার পুদগল জগতে বিদ্যমান। (ষষ্ঠ সূত্র)
৭. পুত্তসুত্তং-পুত্র সূত্র
৮৭. “হে ভিক্ষুগণ! জগতে চার প্রকার পুদগল বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- শ্রমণাচল, শ্রমণ-পুণ্ডরীক, শ্রমণ-পদ্ম, শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল।
কিরূপ পুদগল শ্রমণাচল হয়? এজগতে কোন ভিক্ষু প্রতিপদায় শৈক্ষ্য হয়; অনুত্তর যোগক্ষেম আকাঙক্ষী হয়ে অবস্থান করে। যেমন, রাজপদে অভিষিক্ত ক্ষত্রিয় রাজার অনভিষিক্ত জ্যেষ্ঠপুত্র অভিষেকে উদগ্রীব থাকে; ঠিক তেমনিভাবে সেই ভিক্ষু প্রতিপদায় শৈক্ষ্য হয়, অনুত্তর যোগক্ষেম আকাঙক্ষী হয়ে অবস্থান করে। এরূপ পুদগল শ্রমণাচল।
কিরূপ পুদগল শ্রমণ-পুণ্ডরীক? এজগতে কোন ভিক্ষু আস্রবসমূহ ক্ষয় করে এ’জীবনে স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা অনাসক্তিপূর্ণ চিত্ত বিমুক্তি, প্রজ্ঞা বিমুক্তি সাক্ষাৎ করে, তবে নামকায় দ্বারা অষ্ট সমাপত্তি লাভ না করে অবস্থান করে। এরূপ পুদগল শ্রমণ-পুণ্ডরীক।
কিরূপ পুদগল শ্রমণ-পদ্ম? এজগতে কোন ভিক্ষু আস্রবসমূহ ক্ষয় করে এ’জীবনে স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা অনাসক্তিপূর্ণ চিত্ত বিমুক্তি, প্রজ্ঞা বিমুক্তি সাক্ষাৎ এবং নামকায় দ্বারা অষ্ট সমাপত্তি লাভ করে অবস্থান করে। এরূপ পুদগল শ্রমণ-পদ্ম।
কিরূপ পুদগল শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল? এজগতে কোন ভিক্ষু প্রার্থিত হয়েই বহু বা অধিকাংশ চীবর পরিভোগ করে, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে; প্রার্থিত হয়েই অধিকাংশ ভোজন পরিভোগ করে, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে; প্রার্থিত হয়েই অধিকাংশ শয্যাসন পরিভোগ করে, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে; প্রার্থিত হয়েই অধিকাংশ ভৈষজ্য উপকরণাদি পরিভোগ করে, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে। সে যেসব সব্রহ্মচারীর সাথে অবস্থান করে, তারা তার সাথে কায়-বাক্য-মন দ্বারা অধিকাংশ মনোজ্ঞ আচরণ করে; অল্পই অমনোজ্ঞ আচরণ করে। তাকে অধিকাংশ মনোজ্ঞ বস্তু দান দেয়, অল্পই অমনোজ্ঞ। পিত্তজনিত, শ্লেষ্মাজনিত, বাত, সন্নিপাতিক ঋতুপরিবর্তনজনিত, বায়ুজনিত, শারীরিক রসজাত, কর্মবিপাকজনিত যেসব রোগ জগতে বিদ্যমান, সেসব বহুবার উৎপন্ন হয় না; অল্পই উৎপন্ন হয়। চার প্রকার ধ্যানে, আত্মজ্ঞানে নির্ভরশীল হয়ে সুখে অবস্থানকারীদের মধ্যে সন্তুষ্টলাভী, অকৃত্যলাভী, বিনাশ্রমে লাভী হয়; আস্রবসমূহ ক্ষয় করে এজীবনে স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা অনাসক্তিপূর্ণ চিত্ত বিমুক্তি, প্রজ্ঞাবিমুক্তি সাক্ষাৎ করে অবস্থান করে। এরূপ পুদগল শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল।
ভিক্ষুগণ, যথার্থভাবে বললে আমাকেই শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল বলা হয়। কারণ আমি প্রার্থিত হয়েই অধিকাংশ চীবর পরিভোগ করি, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে; প্রার্থিত হয়েই অধিকাংশ ভোজন পরিভোগ করি, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে; প্রার্থিত হয়েই অধিকাংশ শয্যাসন পরিভোগ করি, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে; প্রার্থিত হয়েই অধিকাংশ ভৈষজ্য উপকরণাদি পরিভোগ করি, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে। যেসব ভিক্ষুগণের সাথে আমি অবস্থান করি, তারা আমার সাথে কায়-বাক্য-মন দ্বারা অধিকাংশ মনোজ্ঞ আচরণ করে, অল্পই অমনোজ্ঞ আচরণ করে। আমাকে অধিকাংশ মনোজ্ঞ বস্ত্র দান দেয়, অল্পই অমনোজ্ঞ। পিত্তজনিত, শ্লেষ্মাজনিত, বাত, সন্নিপাতিক ঋতুপরিবর্তনজনিত, বায়ুজনিত, শারীরিক রসজাত, কর্মবিপাকজনিত যেসব রোগ জগতে বিদ্যমান, সেসব আমার বহুবার উৎপন্ন হয় না; অল্পই উৎপন্ন হয়। চার প্রকার ধ্যানে, আত্মজ্ঞানে নির্ভরশীল হয়ে সুখে অবস্থানকারীদের মধ্যে সন্তুষ্টলাভী, অকৃত্যলাভী, বিনাশ্রমে লাভী হই; আস্রবসমূহ ক্ষয় করে এ’জীবনে স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা অনাসক্তিপূর্ণ চিত্ত বিমুক্তি, প্রজ্ঞাবিমুক্তি সাক্ষাৎ করে অবস্থান করি। তাই যথার্থভাবে বললে আমাকেই শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল বলা হয়। এই চার প্রকার পুদগল জগতে বিদ্যমান।” (সপ্তম সূত্র)
৮. সংযোজনসুত্তং-সংযোজন সূত্র
৮৮. “হে ভিক্ষুগণ! জগতে চার প্রকার পুদগল বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- শ্রমণাচল, শ্রমণ-পুণ্ডরীক, শ্রমণ-পদ্ম, শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল।
কিরূপ পুদগল শ্রমণাচল? এজগতে ভিক্ষু তিন প্রকার সংযোজন ক্ষয় করে অবিনিপাতধর্মী , নিয়ত সম্বোধি পরায়ণ স্রোতাপন্ন হয়। এরূপ পুদগল শ্রমণাচল।
কিরূপ পুদগল শ্রমণ-পুণ্ডরীক? এজগতে ভিক্ষু তিন প্রকার সংযোজন ক্ষয় করে; রাগ, দ্বেষ, মোহ ক্ষীণ করে সকৃদাগামী হয়। একবার মাত্র পুনর্জন্ম গ্রহণ করে দুঃখের ক্ষয়সাধন করে। এরূপ পুদগল শ্রমণ-পুণ্ডরীক।
কিরূপ পুদগল শ্রমণ-পদ্ম? এজগতে ভিক্ষু পাঁচ প্রকার উর্দ্ধভাগীয় সংযোজন ক্ষয় করে উপপাতিকসত্ত্ব হয় এবং সেখানেই পরিনির্বাপিত হয়, আর পুনর্জন্ম গ্রহণ করে না। এরূপ পুদগল শ্রমণ-পদ্ম।
কিরূপ পুদগল শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল? এজগতে ভিক্ষু আস্রবসমূহ ক্ষয় করে এ’জীবনে স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা অনাসক্তিপূর্ণ চিত্ত বিমুক্তি, প্রজ্ঞা বিমুক্তি সাক্ষাৎ করে অবস্থান করে। এরূপ পুদগল শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল। এই চার প্রকার পুদগল জগতে বিদ্যমান।” (অষ্টম সূত্র)
৯. সম্মাদিটিঠসুত্তং-সম্যকদৃষ্টি সূত্র
৮৯. “হে ভিক্ষুগণ! জগতে চার প্রকার পুদগল বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- শ্রমণাচল, শ্রমণ-পুণ্ডরীক, শ্রমণ-পদ্ম, শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল।
কিরূপ পুদগল শ্রমণাচল? এজগতে ভিক্ষু সম্যকদৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধিসম্পন্ন হয়। এরূপ পুদগল শ্রমণাচল।
কিরূপ পুদগল শ্রমণ-পুণ্ডরীক? এজগতে ভিক্ষু সম্যকদৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি, সম্যক জ্ঞান, সম্যক বিমুক্তিসম্পন্ন হয় এবং নামকায় দ্বারা অষ্ট সমাপত্তি লাভ না করে অবস্থান করে। এরূপ পুদগল শ্রমণ-পুণ্ডরীক।
কিরূপ পুদগল শ্রমণ-পদ্ম? এজগতে ভিক্ষু সম্যকদৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি, সম্যক জ্ঞান, সম্যক বিমুক্তিসম্পন্ন হয় এবং নামকায় দ্বারা অষ্ট সমাপত্তি লাভ করে অবস্থান করে। এরূপ পুদগল শ্রমণ-পদ্ম।
কিরূপ পুদগল শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল? এজগতে ভিক্ষু প্রার্থিত হয়েই অধিকাংশ চীবর পরিভোগ করে, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে; প্রার্থিত হয়েই অধিকাংশ ভোজন পরিভোগ করে, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে; প্রার্থিত হয়েই অধিকাংশ শয্যাসন পরিভোগ করে, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে; প্রার্থিত হয়েই অধিকাংশ ভৈষজ্য উপকরণাদি পরিভোগ করে, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে। সে যেসব সব্রহ্মচারীর সাথে অবস্থান করে, তারা তার সাথে কায়-বাক্য-মন দ্বারা অধিকাংশ মনোজ্ঞ আচরণ করে; অল্পই অমনোজ্ঞ আচরণ করে। তাকে অধিকাংশ মনোজ্ঞ বস্তু দান দেয়, অল্পই অমনোজ্ঞ। পিত্তজনিত, শ্লেষ্মাজনিত, বাত, সন্নিপাতিক, ঋতুপরিবর্তনজনিত, বায়ুজনিত, শারীরিক রসজাত, কর্মবিপাকজনিত যেসব রোগ জগতে বিদ্যমান, সেসব বহুবার উৎপন্ন হয় না; অল্পই উৎপন্ন হয়। চার প্রকার ধ্যানে, আত্মজ্ঞানে নির্ভরশীল হয়ে সুখে অবস্থানকারীদের মধ্যে সন্তুষ্টলাভী, অকৃত্যলাভী, বিনাশ্রমে লাভী হয়; আস্রবসমূহ ক্ষয় করে এজীবনে স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা অনাসক্তিপূর্ণ চিত্ত বিমুক্তি, প্রজ্ঞাবিমুক্তি সাক্ষাৎ করে অবস্থান করে। এরূপ পুদগল শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল। তাই যথার্থভাবে বললে আমাকে শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল বলা হয়। এই চার প্রকার পুদগল জগতে বিদ্যমান।” (নবম সূত্র)
১০. খন্ধসুত্তং-স্কন্ধ সূত্র
৯০. “হে ভিক্ষুগণ! জগতে চার প্রকার পুদগল বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- শ্রমণাচল, শ্রমণ-পুণ্ডরীক, শ্রমণ-পদ্ম, শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল।
কিরূপ পুদগল শ্রমণাচল? এজগতে ভিক্ষু সাধারণ চিত্তসম্পন্ন শৈক্ষ্য হয় এবং অনুত্তর যোগক্ষেম আকাঙক্ষী হয়ে অবস্থান করে। এরূপ পুদগল শ্রমণাচল।
কিরূপ পুদগল শ্রমণ-পুণ্ডরীক? এজগতে ভিক্ষু পঞ্চ উপাদানস্কন্ধে উদয়-ব্যয়দর্শী হয়ে অবস্থান করে- ‘এটি রূপ’, ‘এটি রূপ সমুদয়’, ‘এটি রূপ নিরোধ’; ‘এটি বেদনা’, ‘এটি বেদনা সমুদয়’, ‘এটি বেদনা নিরোধ’; ‘এটি সংজ্ঞা’, ‘এটি সংজ্ঞা সমুদয়’, ‘এটি সংজ্ঞা নিরোধ’; ‘এটি সংস্কার’, ‘এটি সংস্কার সমুদয়’, ‘এটি সংস্কার নিরোধ’; ‘এটি বিজ্ঞান’, ‘এটি বিজ্ঞান সমুদয়’, ‘এটি বিজ্ঞান নিরোধ’। এবং নামকায় দ্বারা অষ্ট সমাপত্তি লাভ না করে অবস্থান করে। এরূপ পুদগল শ্রমণ-পুণ্ডরীক।
কিরূপ পুদগল শ্রমণ-পদ্ম? এজগতে ভিক্ষু পঞ্চ উপাদানস্কন্ধে উদয়-ব্যয়দর্শী হয়ে অবস্থান করে- ‘এটি রূপ’, ‘এটি রূপ সমুদয়’, ‘এটি রূপ নিরোধ’; ‘এটি বেদনা’, ‘এটি বেদনা সমুদয়’, ‘এটি বেদনা নিরোধ’; ‘এটি সংজ্ঞা’, ‘এটি সংজ্ঞা সমুদয়’, ‘এটি সংজ্ঞা নিরোধ’; ‘এটি সংস্কার’, ‘এটি সংস্কার সমুদয়’, ‘এটি সংস্কার নিরোধ’; ‘এটি বিজ্ঞান’, ‘এটি বিজ্ঞান সমুদয়’, ‘এটি বিজ্ঞান নিরোধ’। এবং নামকায় দ্বারা অষ্ট সমাপত্তি লাভ করে অবস্থান করে। এরূপ পুদগল শ্রমণ-পদ্ম।
কিরূপ পুদগল শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল? এজগতে ভিক্ষু প্রার্থিত হয়েই অধিকাংশ চীবর পরিভোগ করে, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে; প্রার্থিত হয়েই অধিকাংশ ভোজন পরিভোগ করে, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে; প্রার্থিত হয়েই অধিকাংশ শয্যাসন পরিভোগ করে, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে; প্রার্থিত হয়েই অধিকাংশ ভৈষজ্য উপকরণাদি পরিভোগ করে, অল্পই অপ্রার্থিত হয়ে। সে যেসব সব্রহ্মচারীর সাথে অবস্থান করে, তারা তার সাথে কায়-বাক্য-মন দ্বারা অধিকাংশ মনোজ্ঞ আচরণ করে; অল্পই অমনোজ্ঞ আচরণ করে। তাকে অধিকাংশ মনোজ্ঞ বস্তু দান দেয়, অল্পই অমনোজ্ঞ। পিত্তজনিত, শ্লেষ্মাজনিত, বাত, সন্নিপাতিক, ঋতুপরিবর্তনজনিত, বায়ুজনিত, শারীরিক রসজাত, কর্মবিপাকজনিত যেসব রোগ জগতে বিদ্যমান, সেসব বহুবার উৎপন্ন হয় না; অল্পই উৎপন্ন হয়। চার প্রকার ধ্যানে, আত্মজ্ঞানে নির্ভরশীল হয়ে সুখে অবস্থানকারীদের মধ্যে সন্তুষ্টলাভী, অকৃত্যলাভী, বিনাশ্রমে লাভী হয়; আস্রবসমূহ ক্ষয় করে এজীবনে স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা অনাসক্তিপূর্ণ চিত্ত বিমুক্তি, প্রজ্ঞাবিমুক্তি সাক্ষাৎ করে অবস্থান করে। এরূপ পুদগল শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল। তাই যথার্থভাবে বললে আমাকে শ্রমণগণের মধ্যে শ্রমণ-সুকোমল বলা হয়। এই চার প্রকার পুদগল জগতে বিদ্যমান।” (দশম সূত্র)
মচল বর্গ সমাপ্ত
স্মারক গাথা ঃ
“প্রাণীহত্যা, মিথ্যাবাক্য, নিন্দাবাক্য, ক্রোধ আর তমোঃ
অবনতাবনত, পুত্র, সংযোজন, সম্যকদৃষ্টি, স্কন্ধ মিলে দশ।”