(১৩) ৩. ভযবগ্গো-ভয় বর্গ

১. অত্তানুবাদসুত্তং-আত্মনিন্দা সূত্র

১২১. “হে ভিক্ষুগণ! ভয় চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- আত্মনিন্দা ভয়, পরনিন্দা ভয়, দণ্ড ভয়, দুর্গতি ভয়।

আত্মনিন্দা ভয় কিরূপ? এজগতে কেউ এরূপ চিন্তা করে- ‘আমি যদি কায়-বাক্‌-মনো দুশ্চরিত আচরণ করি, তাহলে আমি শীল হতে চ্যুত হয়েছি বলে নিজের কাছে নিজে নানাভাবে নিন্দনীয় হবো’? এভাবে সে আত্মনিন্দা ভয়ে ভীত হয়ে কায়-বাক্‌-মনো দুশ্চরিত পরিত্যাগ করে; এবং কায়-বাক-মনো সুচরিত বৃদ্ধি করতঃ নিজেকে বিশুদ্ধভাবে রক্ষা করে। এটিই আত্মনিন্দা ভয়।

পরনিন্দা ভয় কিরূপ? এজগতে কেউ এরূপ চিন্তা করে- ‘আমি যদি কায়-বাক্‌-মনো দুশ্চরিত আচরণ করি, তাহলে শীল হতে চ্যুত হয়েছি বলে অন্যজনেরা আমাকে নানাভাবে নিন্দা করবে’? এভাবে সে পরনিন্দা ভয়ে ভীত হয়ে কায়-বাক্‌-মনো দুশ্চরিত পরিত্যাগ করে; এবং কায়-বাক-মনো সুচরিত বৃদ্ধি করতঃ নিজেকে বিশুদ্ধভাবে রক্ষা করে। এটিই পরনিন্দা ভয়।

দণ্ড ভয় কিরূপ? এজগতে কেউ দেখে যে, রাজাগণ দুষ্কৃতিকারী চোরকে বন্দী করে বিবিধ শাস্তি প্রদান করে। যেমন- তীব্র, অসহ্য শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা প্রদান করায়, রাহুমুখ করায়, বল্কল পরিচ্ছদ করায়, তেলের ঘানিতে আবদ্ধ করে ঘুরায়, কুকুরকে খাওয়ায়, জলন্ত আগুনে এবং উত্তপ্ত তেলে নিক্ষেপ করায়; কশাঘাত, বেত্রাঘাত এবং দণ্ডাঘাত করায়; হস্ত ছেদন, পদ ছেদন, হস্ত-পদ ছেদন, কর্ণ ছেদন, নাসিকা ছেদন এবং কর্ণ-নাসিকা ছেদন করায়; হস্ত দগ্ধ, বড়শিতে বিদ্ধ এবং মাংস খণ্ড খণ্ড করায়; প্রহারে অস্থি চুরমার, জীবিত অবস্থায় শূলে বিদ্ধ এবং অসি দ্বারা মস্তক ছেদন করায়।”

সে এরূপ চিন্তা করে- ‘এরূপ পাপকর্ম সম্পাদনের হেতুতে রাজাগণ দুষ্কৃতিকারী চোরকে বন্দী করে বিবিধ শাস্তি প্রদান করে। যেমন- তীব্র, অসহ্য শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা প্রদান করায়, রাহুমুখ করায়, বল্কল পরিচ্ছদ করায়, তেলের ঘানিতে আবদ্ধ করে ঘুরায়, কুকুরকে খাওয়ায়, জলন্ত আগুনে এবং উত্তপ্ত তেলে নিক্ষেপ করায়; কশাঘাত, বেত্রাঘাত এবং দণ্ডাঘাত করায়; হস্ত ছেদন, পদ ছেদন, হস্ত-পদ ছেদন, কর্ণ ছেদন, নাসিকা ছেদন এবং কর্ণ-নাসিকা ছেদন করায়; হস্ত দগ্ধ, বড়শিতে বিদ্ধ এবং মাংস খণ্ড খণ্ড করায়; প্রহারে অস্থি চুরমার, জীবিত অবস্থায় শূলে বিদ্ধ এবং অসি দ্বারা মস্তক ছেদন করায়। সে দণ্ড ভয়ে ভীত হয়ে পরদ্রব্য চুরি করে না। সাথে সাথে কায়-বাক্‌-মনো দুশ্চরিত পরিত্যাগ করে; এবং কায়-বাক-মনো সুচরিত বৃদ্ধি করতঃ নিজেকে বিশুদ্ধভাবে রক্ষা করে। এটিই দণ্ড ভয়।

দুর্গতি ভয় কিরূপ? এজগতে কেউ এরূপ চিন্তা করে- ‘কায়-বাক-মনো দুশ্চরিত্রের ফলে পরকালে দুঃখময় বিপাক উৎপন্ন হয়। আমিও যদি কায়-বাক্‌-মনো দুশ্চরিত্র আচরণ করি, তাহলে মৃত্যুর পর অপায় দুর্গতি বিনিপাত নিরয়ে উৎপন্ন হবো’? সে দুর্গতি ভয়ে ভীত হয়ে কায়-বাক্‌-মনো দুশ্চরিত্র পরিত্যাগ করে এবং কায়-বাক্‌-মনো সুচরিত বৃদ্ধি করতঃ নিজেকে বিশুদ্ধভাবে রক্ষা করে। এটিই দুর্গতি ভয়।

ভিক্ষুগণ, এই চার প্রকার ভয়।” (প্রথম সূত্র)

২. উমিভযসুত্তং-উর্মি ভয় সূত্র

১২২. “হে ভিক্ষুগণ! মহাসমুদ্রে অবতরণকারীর নিঃসন্দেহে চার প্রকার ভয় বিদ্যমান থাকে। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- উর্মি ভয়, কুমির ভয়, আবর্ত ভয়, শুশুক ভয়। মহাসমুদ্রে অবতরণকারীর এই চার প্রকার ভয় বিদ্যমান থাকে। ঠিক এরূপে এ’ধর্মবিনয়ে আগার হতে অনাগারিকভাবে প্রব্রজিত কোন কোন কুলপুত্রের নিঃসন্দেহে চার প্রকার ভয় বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? উর্মি ভয়, কুমির ভয়, আবর্ত ভয়, শুশুক ভয়।

উর্মি ভয় কিরূপ? এজগতে কোন কোন কুলপুত্র শ্রদ্ধায় আগার হতে অনাগারিকভাবে প্রব্রজিত হয়। সে এরূপ চিন্তা করে- ‘আমি জন্ম, জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য, উপায়াস নানাবিধ দুঃখে অবতীর্ণ, উৎপীড়িত ছিলাম; এসমস্ত দুঃখরাশির উপশম অল্প হলেও আমার জ্ঞাত হয়েছে নয় কি! তথায় সব্রহ্মচারীগণ তাকে এরূপে উপদেশ, অনুশাসন করে- ‘তোমার এভাবে গমনাগমন, অবলোকন, বিলোকন, সংকোচন, প্রসারণ; সংঘাটি-পাত্র-চীবর ধারণ করা উচিত।’ ফলে তার এরূপ চিন্তা উদয় হয়- ‘আমি আগে গৃহী অবস্থায় অন্যকে উপদেশ, অনুশাসন করতাম। অথচ এখানে এরা আমাকে পুত্র, নাতি বিবেচনায় উপদেশ, অনুশাসন করা উচিত মনে করতেছে।’ সে ক্ষুব্ধ, অসন্তুষ্ট মনে শিক্ষাপদ প্রত্যাখান করে হীন গৃহীজীবনে ফিরে যায়। এটাকে বলা হয় উর্মি ভয়ে ভীত হয়ে শিক্ষাপদ প্রত্যাখান করে হীনত্ব প্রাপ্ত বা গৃহীজীবনে ফিরে যাওয়া। এখানে উর্মি ভয় বলতে ক্রোধ, উপায়াসের অধিবচন। উর্মি ভয় এরূপ-ই।

কুমির ভয় কিরূপ? এজগতে কোন কোন কুলপুত্র শ্রদ্ধায় আগার হতে অনাগারিকভাবে প্রব্রজিত হয়। সে এরূপ চিন্তা করে- ‘আমি জন্ম, জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য, উপায়াস নানাবিধ দুঃখে অবতীর্ণ, উৎপীড়িত ছিলাম; এসমস্ত দুঃখরাশির উপশম অল্প হলেও আমার জ্ঞাত হয়েছে নয় কি?’ তথায় সব্রহ্মচারীগণ তাকে এরূপ উপদেশ, অনুশাসন করে- ‘এটা তোমার খাওয়া উচিত, এটা খাওয়া অনুচিত; এটা ভোজন করা উচিত, এটা ভোজন করা অনুচিত; এটার আস্বাদ গ্রহণ করা উচিত, এটার আস্বাদ গ্রহণ করা অনুচিত; এটা পান করা উচিত, এটা পান করা অনুচিত; কপ্পিয় খাওয়া উচিত, অকপ্পিয় খাওয়া অনুচিত; কপ্পিয় ভোজন করা উচিত, অকপ্পিয় ভোজন করা অনুচিত; কপ্পিয় আস্বাদ গ্রহণ করা উচিত, অকপ্পিয় আস্বাদ গ্রহণ করা অনুচিত; কপ্পিয় পান করা উচিত, অকপ্পিয় পান করা অনুচিত; সকালে খাওয়া উচিত, বিকালে খাওয়া অনুচিত; সকালে ভোজন করা উচিত, বিকালে ভোজন করা অনুচিত; সকালে আস্বাদ গ্রহণ করা উচিত, বিকালে আস্বাদ গ্রহণ করা অনুচিত; সকালে পান করা উচিত, বিকালে পান করা অনুচিত।’ ফলে তার মনে এরূপ চিন্তা উদয় হয়- ‘আমি আগে গৃহী থাকাকালিন যা ইচ্ছা করতাম তা খেতাম, যা ইচ্ছা করতাম না তা খেতাম না; যা ইচ্ছা করতাম তা ভোজন করতাম, যা ইচ্ছা করতাম না তা ভোজন করতাম না; যা ইচ্ছা করতাম তা আস্বাদ করতাম, যা ইচ্ছা করতাম না তা আস্বাদ করতাম না; যা ইচ্ছা করতাম তা পান করতাম, যা ইচ্ছা করতাম না তা পান করতাম না; কপ্পিয়ও খেতাম, অকপ্পিয়ও খেতাম; কপ্পিয়ও ভোজন করতাম, অকপ্পিয়ও ভোজন করতাম; কপ্পিয়ও আস্বাদ করতাম, অকপ্পিয়ও আস্বাদ করতাম; কপ্পিয়ও পান করতাম, অকপ্পিয়ও পান করতাম; সকালেও খেতাম, বিকালেও খেতাম; সকালেও ভোজন করতাম, বিকালে ভোজন করতাম; সকালেও আস্বাদ গ্রহণ করতাম, বিকালেও আস্বাদ গ্রহণ করতাম; সকালেও পান করতাম, বিকালেও পান করতাম। যদিও শ্রদ্ধাবান গৃহীরা আমাকে সকালে, বিকালে উৎকৃষ্ট খাদ্য-ভোজ্যাদি দান দিচ্ছে, কিন্তু এরা (সব্রহ্মচারীগণ) সেসব খেতে বারণ করবে বলে মনে হচ্ছে। ফলে সে ক্ষুব্ধ, অসন্তুষ্ট মনে শিক্ষাপদ প্রত্যাখান করে হীন গৃহীজীবনে ফিরে যায়। এটাকে বলা হয় কুমির ভয়ে ভীত হয়ে শিক্ষাপদ প্রত্যাখান করে হীনত্বপ্রাপ্ত বা গৃহীজীবনে ফিরে যাওয়া। এখানে কুমির ভয় বলতে উদরপূর্ণ করণের-ই অধিবচন। কুমির ভয় এরূপ-ই।

আবর্ত ভয় কিরূপ? এজগতে কোন কোন কুলপুত্র শ্রদ্ধায় আগার হতে অনাগারিকভাবে প্রব্রজিত হয়। সে এরূপ চিন্তা করে- ‘আমি জন্ম, জরা মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য, উপায়াস নানাবিধ দুঃখে অবতীর্ণ, উৎপীড়িত ছিলাম; এসমস্ত দুঃখরাশির উপশম অল্প হলেও আমার জ্ঞাত হয়েছে, নয় কি?’ সে পূর্বাহ্ন সময়ে পিণ্ডচারণের নিমিত্তে চীবর পরিধান ও পাত্র গ্রহণ করে কায়-বাক-মন অরক্ষিত, ইন্দ্রিয়সমূহে অসংযত এবং স্মৃতি বিভ্রম অবস্থায় গ্রামে বা নিগমে প্রবেশ করে। তথায় সে গৃহপতি, গৃহপতিপুত্রকে পঞ্চকামগুণে সমন্বিত, সমর্পিত হয়ে আমোদ-প্রমোদে রত দেখতে পায়। যার ফলে তার মনে এরূপ চিন্তা উদয় হয়- ‘আগে আমি গৃহী অবস্থায় পঞ্চকামগুণে সমন্বিত, সমর্পিত হয়ে আমোদ-প্রমোদ করতাম। আমার গৃহীকুলে ভোগ-সম্পদ ছিল। সেই ভোগ-সম্পদ পরিভোগ করতঃ পুণ্যকর্ম সম্পাদন করতেও সক্ষম আমি। এটাই ভালো হয়, যদি আমি শিক্ষাপদ প্রত্যাখান করতঃ গৃহী হয়ে সেই ভোগ-সম্পদ পরিভোগ করে পুণ্যকর্ম সম্পাদন করি। ফলে সে শিক্ষাপদ প্রত্যাখান করে গৃহী হয়ে যায়। এটাকে বলা হয় আবর্ত ভয়ে ভীত হয়ে শিক্ষাপদ প্রত্যাখান করে হীনত্বপ্রাপ্ত বা গৃহীজীবনে ফিরে যাওয়া। আবর্ত ভয় বলতে পঞ্চকামগুণের-ই অধিবচন। আবর্ত ভয় এরূপ-ই।

শুশুক ভয় কিরূপ? এজগতে কোন কোন কুলপুত্র শ্রদ্ধায় আগার হতে অনাগারিকভাবে প্রব্রজিত হয়। সে এরূপ চিন্তা করে- ‘আমি জন্ম, জরা, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, দৌর্মনস্য, উপায়াস নানাবিধ দুঃখে অবতীর্ণ, উৎপীড়িত ছিলাম; এসমস্ত দুঃখরাশির উপশম অল্প হলেও আমার জ্ঞাত হয়েছে, নয় কি? সে পূর্বাহ্ন সময়ে পিণ্ডচারণের নিমিত্তে চীবর পরিধান ও পাত্র গ্রহণ করে কায়-বাক-মন অরক্ষিত, ইন্দ্রিয়সমূহে অসংযত এবং স্মৃতি বিভ্রম অবস্থায় গ্রামে বা নিগমে প্রবেশ করে। তথায় সে স্ত্রীলোককে স্বল্প বসনে, অর্ধ আবৃত দেহে দেখতে পায়। স্ত্রীলোককে সেভাবে দেখে কামরাগে তার চিত্ত দূষিত হয়। কামরাগে দূষিত চিত্ত নিয়ে সে শিক্ষাপদ প্রত্যাখান করে গৃহী হয়ে যায়। এটাকে বলা হয় শুশুক ভয়ে ভীত হয়ে শিক্ষাপদ প্রত্যাখান করে হীনত্বপ্রাপ্ত বা গৃহীজীবনে ফিরে যাওয়া। শুশুক ভয় বলতে স্ত্রীলোকের এ অবস্থার-ই অধিবচন। শুশুক ভয় এরূপ-ই।

ভিক্ষুগণ, এধর্মবিনয়ে আগার হতে অনাগারিকভাবে প্রব্রজিত কোন কোন কুলপুত্রের নিঃসন্দেহে এই চার প্রকার ভয় বিদ্যমান।” (দ্বিতীয় সূত্র)

৩. পঠম নানাকরণসুত্তং-নানাকরণ সূত্র (প্রথম)

১২৩. “হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার পুদগল জগতে বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- এজগতে কোন পুদগল কামনা ও অকুশল পাপধর্ম হতে বিরত হয়ে বিতর্ক , বিচার সহিত বিবেকজ (নির্জনতাজনিত) প্রীতি, সুখ সমন্বিত প্রথম ধ্যানস্তরে আরোহন করে অবস্থান করেন। সে তা উপভোগ করে বার বার আকাঙক্ষা করে এবং তদ্বারা আনন্দ লাভ করে। তথায় স্থিত, অভিনিবিষ্ট হয়ে বহুবার অবস্থান করে এবং তা বিনষ্ট হয় না। পরে কোন একসময়ে কালপ্রাপ্ত হয়ে ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। সেই ব্রহ্মলোকের আয়ু এক কল্প। তথায় পৃথকজন যথাআয়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে নিরয়ে, তীর্যককুলে, প্রেতকুলে গমন করে। আর ভগবানের শ্রাবকগণ তথায় যথাআয়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে সেখানে-ই পরিনির্বাপিত হয়। এখানে নানাকরণ বলতে শ্রুতবান আর্যশ্রাবকের এবং অশ্রুতবান পৃথকজনের গতি, উৎপত্তির এ’ পার্থক্য বিশেষ।

পুনঃ, এজগতে কোন পুদগল বিতর্ক ও বিচার প্রশমিত করার কারণে আভ্যন্তরীণ সমপ্রসাদ (আনন্দ) ও চিত্তের একাগ্রতাযুক্ত বিতর্ক ও বিচারহীন এবং সমাধিজনিত প্রীতি, সুখ সমন্বিত দ্বিতীয় ধ্যানস্তরে আরোহন করে অবস্থান করে। সে তা উপভোগ করে, বার বার আকাঙক্ষা করে এবং তদ্বারা আনন্দ লাভ করে। তথায় স্থিত, অভিনিবিষ্ট হয়ে বহুবার অবস্থান করে এবং তা বিনষ্ট হয় না। পরে কোন একসময়ে কালপ্রাপ্ত হয়ে আভস্‌সর ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। আভস্‌সর ব্রহ্মলোকের আয়ু দুই কল্প। তথায় পৃথকজন যথায়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে নিরয়ে, তির্যককুলে, প্রেতকুলে গমন করে। আর ভগবানের শ্রাবকগণ তথায় যথায়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে সেখানেই পরিনির্বাপিত হয়। এখানে নানাকরণ বলতে শ্রুতবান আর্যশ্রাবকের এবং অশ্রুতবান পৃথকজনের গতি, উৎপত্তির এপার্থক্য বিশেষ।

পুনঃ, এজগতে কোন পুদগল প্রীতিতে বিরাগ উৎপন্ন করে উপেক্ষাশীল (সুখে দুঃখে সমভাবাপন্ন) হয়ে অবস্থান করে, স্মৃতিমান ও সমপ্রজ্ঞাত হয়ে দৈহিক সুখ অনুভব করে। যে অবস্থায় থাকলে আর্যগণ বলেন- ‘উপেক্ষাশীল স্মৃতিমান সুখবিহারী;’ সেই তৃতীয় ধ্যানস্তরে আরোহন করে অবস্থান করে। সে তা উপভোগ করে, বার বার আকাঙক্ষা করে এবং তদ্বারা আনন্দ লাভ করে। তথায় স্থিত, অভিনিবিষ্ট হয়ে বহুবার অবস্থান করে; এবং তা’ বিনষ্ট হয় না। পরে কোন একসময়ে কালপ্রাপ্ত হয়ে সুভকিণ্‌হ ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। সুভকিণ্‌হ ব্রহ্মলোকের আয়ু চার কল্প। তথায় পৃথকজন যথায়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে নিরয়ে, তির্যককুলে, প্রেতকুলে গমন করে। আর ভগবানের শ্রাবকগণ তথায় যথায়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে সেখানেই পরিনির্বাপিত হয়। এখানে নানাকরণ বলতে শ্রুতবান আর্যশ্রাবকের এবং অশ্রুতবান পৃথকজনের গতি, উৎপত্তির এপার্থক্য বিশেষ।

পুনঃ, এজগতে কোন পুদগল যাতে শারীরিক সুখ-দুঃখ পরিত্যাজ্য হয় এবং পূর্বেই মানসিক সুখ-দুঃখ অস্তগত হয়; সেই সুখ-দুঃখহীন উপেক্ষা ও স্মৃতি পরিশুদ্ধি নামক চতুর্থ ধ্যানস্তরে আরোহন করে অবস্থান করে। সে তা উপভোগ করে, বার বার আকাঙক্ষা করে এবং তদ্বারা আনন্দ লাভ করে। তথায় স্থিত, অভিনিবিষ্ট হয়ে বহুবার অবস্থান করে; এবং তা’ বিনষ্ট হয় না। পরে কোন একসময়ে কালপ্রাপ্ত হয়ে বেহপ্‌ফল ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। বেহপ্‌ফল ব্রহ্মলোকের আয়ু পাঁচ কল্প। তথায় পৃথকজন যথায়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে নিরয়ে, তির্যককুলে, প্রেতকুলে গমন করে। আর ভগবানের শ্রাবকগণ তথায় যথায়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে সেখানেই পরিনির্বাপিত হয়। এখানে নানাকরণ বলতে শ্রুতবান আর্যশ্রাবকের এবং অশ্রুতবান পৃথকজনের গতি, উৎপত্তির এপার্থক্য বিশেষ।

ভিক্ষুগণ, এই চার প্রকার পুদগল জগতে বিদ্যমান।” (তৃতীয় সূত্র)

৪. দুতিযনানাকরণসুত্তং-নানাকরণ সূত্র (দ্বিতীয়)

১২৪. “হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার পুদগল জগতে বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- এজগতে কোন পুদগল কামনা ও অকুশল পাপধর্ম হতে বিরত হয়ে বিতর্ক, বিচার সহিত বিবেকজ প্রীতিসুখ সমন্বিত প্রথম ধ্যানস্তরে আরোহন করে অবস্থান করে। সে তথায় রূপগত, বেদনাগত, সংজ্ঞাগত, সংস্কারগত, বিজ্ঞানগত হয়; এবং সেই ধর্মসমূহ অনিত্য, দুঃখ, রোগ, গণ্ড, শেল, বিপদ, ক্লেশ, শত্রু, ভগ্ন, শূন্য, অনাত্মরূপে দর্শন করে। তাই সে মৃত্যুর পর শুদ্ধাবাস ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। পৃথকজনের এই উৎপত্তি অসাধারণ।

পুনঃ, এজগতে কোন পুদগল বিতর্ক, বিচার প্রশমিত করার কারণে আভ্যন্তরীণ সমপ্রসাদ (আনন্দ) ও চিত্তের একাগ্রতাযুক্ত বিতর্ক ও বিচারহীন এবং সমাধিজনিত প্রীতি, সুখ সমন্বিত দ্বিতীয় ধ্যানস্তরে আরোহণ করে অবস্থান করে। সে তথায় রূপগত, বেদনাগত, সংজ্ঞাগত, সংস্কারগত, বিজ্ঞানগত হয়; এবং সেই ধর্মসমূহ অনিত্য, দুঃখ, রোগ, গণ্ড, শেল, বিপদ, ক্লেশ, শত্রু, ভগ্ন, শূন্য, অনাত্মরূপে দর্শন করে। তাই সে মৃত্যুর পর শুদ্ধাবাস ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। পৃথকজনের এই উৎপত্তি অসাধারণ।

পুনঃ, এজগতে কোন পুদগল প্রীতিতে বিরাগ উৎপন্ন করে উপেক্ষাশীল হয়ে অবস্থান করে, স্মৃতিমান ও সমপ্রজ্ঞাত হয়ে দৈহিক সুখ অনুভব করে। যে অবস্থায় থাকলে আর্যগণ বলেন- ‘উপেক্ষাশীল স্মৃতিমান সুখবিহারী;’ সেই তৃতীয় ধ্যানস্তরে আরোহণ করতঃ অবস্থান করে। সে তথায় রূপগত, বেদনাগত, সংজ্ঞাগত, সংস্কারগত, বিজ্ঞানগত হয়; এবং সেই ধর্মসমূহ অনিত্য, দুঃখ, রোগ, গণ্ড, শেল, বিপদ, ক্লেশ, শত্রু, ভগ্ন, শূন্য, অনাত্মরূপে দর্শন করে। তাই সে মৃত্যুর পর শুদ্ধাবাস ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। পৃথকজনের এই উৎপত্তি অসাধারণ।

পুনঃ, এজগতে কোন পুদগল যাতে শারীরিক সুখ-দুঃখ পরিত্যাজ্য হয়, এবং পূর্বেই মানসিক সুখ-দুঃখ অস্তগত হয়; সেই সুখ-দুঃখহীন উপেক্ষা ও স্মৃতি পরিশুদ্ধ নামক চতুর্থ ধ্যানস্তরে আরোহণ করে অবস্থান করে। সে তথায় রূপগত বেদনাগত, সংজ্ঞাগত, সংস্কারগত, বিজ্ঞানগত হয়; এবং সেধর্মসমূহ অনিত্য, দুঃখ, রোগ, গণ্ড, শেল, বিপদ, ক্লেশ, শত্রু, ভগ্ন, শূন্য, অনাত্মরূপে দর্শন করে। তাই সে মৃত্যুর পর শুদ্ধাবাস ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। পৃথকজনের এই উৎপত্তি অসাধারণ।

ভিক্ষুগণ, এই চার প্রকার পুদগল জগতে বিদ্যমান।” (চতুর্থ সূত্র)

৫. পঠমমেত্তাসুত্তং-মৈত্রী সূত্র (প্রথম)

১২৫. “হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার পুদগল জগতে বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- এজগতে কোন পুদগল মৈত্রীসহগত চিত্তে একদিকে পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে; সেরূপে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থদিক পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। এরূপে উর্দ্ধে, অধেঃ, তির্যকক্রমে সর্বদা, সর্বস্থানে, সর্বলোকে; বিপুল, মহদ্‌গত, অপ্রমাণ, অবৈরী, প্রশান্ত, মৈত্রী সহগত চিত্তে পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। সে তা’ উপভোগ করে, বার বার আকাঙক্ষা করে এবং তদ্বারা আনন্দ লাভ করে। তথায় স্থিত, অভিনিবিষ্ট হয়ে বহুবার অবস্থান করে এবং তা বিনষ্ট হয় না। পরে কোন একসময়ে কালপ্রাপ্ত হয়ে ব্রহ্মকায়িক ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। ব্রহ্মকায়িক ব্রহ্মলোকের আয়ু এক কল্প। তথায় পৃথকজন যথায়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে নিরয়ে, তির্যককুলে, প্রেতকুলে গমন করে। আর ভগবানের শ্রাবকগণ তথায় যথায়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে সেখানেই পরিনির্বাপিত হয়। এখানে নানাকরণ বলতে শ্রুতবান আর্যশ্রাবকের এবং অশ্রুতবান পৃথকজনের গতি, উৎপত্তির এ’পার্থক্য বিশেষ।

পুনঃ, এজগতে কোন পুদগল করুণা সহগত চিত্তে একদিকে পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। এরূপে উর্দ্ধে, অধেঃ, তির্যকক্রমে সর্বদা, সর্বস্থানে, সর্বলোকে; বিপুল, মহদ্‌গত, অপ্রমাণ, অবৈরী, প্রশান্ত, করুণা সহগত চিত্তে পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। সে তা’ উপভোগ করে, বার বার আকাঙক্ষা করে এবং তদ্বারা আনন্দ লাভ করে। তথায় স্থিত, অভিনিবিষ্ট হয়ে বহুবার অবস্থান করে এবং তা বিনষ্ট হয় না। পরে কোন একসময়ে কালপ্রাপ্ত হয়ে আভস্‌সর ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। আভস্‌সর ব্রহ্মলোকের আয়ু দুই কল্প। তথায় পৃথকজন যথায়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে নিরয়ে, তির্যককুলে, প্রেতকুলে গমন করে। আর ভগবানের শ্রাবকগণ তথায় যথায়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে সেখানেই পরিনির্বাপিত হয়। এখানে নানাকরণ বলতে শ্রুতবান আর্যশ্রাবকের এবং অশ্রুতবান পৃথকজনের গতি, উৎপত্তির এ’পার্থক্য বিশেষ।

পুনঃ, এজগতে কোন পুদগল মুদিতা সহগত চিত্তে একদিক পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে; সেরূপে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থদিক পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। এরূপে উর্দ্ধে, অধেঃ, তির্যকক্রমে সর্বদা, সর্বস্থানে, সর্বলোকে; বিপুল, মহদ্‌গত, অপ্রমাণ, অবৈরী, প্রশান্ত, মুদিতা সহগত চিত্তে একদিকে পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। সে তা’ উপভোগ করে, বার বার আকাঙক্ষা করে এবং তদ্বারা আনন্দ লাভ করে। তথায় স্থিত, অভিনিবিষ্ট হয়ে বহুবার অবস্থান করে এবং তা বিনষ্ট হয় না। পরে কোন একসময়ে কালপ্রাপ্ত হয়ে শুভকিণ্‌হ ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। শুভকিণ্‌হ ব্রহ্মলোকের আয়ু চার কল্প। তথায় পৃথকজন যথায়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে নিরয়ে, তির্যককুলে, প্রেতকুলে গমন করে। ভগবানের শ্রাবকগণ তথায় যথায়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে সেখানেই পরিনির্বাপিত হয়। এখানে নানাকরণ বলতে শ্রুতবান আর্যশ্রাবকের এবং অশ্রুতবান পৃথকজনের গতি, উৎপত্তির এ’পার্থক্য বিশেষ।

পুনঃ, এজগতে কোন পুদগল উপেক্ষা সহগত চিত্তে একদিক পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে; সেরূপে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থদিক পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। এরূপে উর্দ্ধে, অধেঃ, তির্যকক্রমে সর্বদা, সর্বস্থানে, সর্বলোকে; বিপুল, মহদ্‌গত, অপ্রমাণ, অবৈরী, প্রশান্ত, উপেক্ষা সহগত চিত্তে পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। সে তা’ উপভোগ করে, বার বার আকাঙক্ষা করে এবং তদ্বারা আনন্দ লাভ করে। তথায় স্থিত, অভিনিবিষ্ট হয়ে বহুবার অবস্থান করে এবং তা বিনষ্ট হয় না। পরে কোন একসময়ে কালপ্রাপ্ত হয়ে বেহপ্‌ফল ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। বেহপ্‌ফল ব্রহ্মলোকের আয়ু পাঁচ কল্প। তথায় পৃথকজন যথায়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে নিরয়ে, তির্যককুলে, প্রেতকুলে গমন করে। আর ভগবানের শ্রাবকগণ তথায় যথায়ুষ্কাল অবস্থান করে আয়ু শেষে সেখানেই পরিনির্বাপিত হয়। এখানে নানাকরণ বলতে শ্রুতবান আর্যশ্রাবকের এবং অশ্রুতবান পৃথকজনের গতি, উৎপত্তির এ’পার্থক্য বিশেষ।

ভিক্ষুগণ, এই চার প্রকার পুদগল জগতে বিদ্যমান।” (পঞ্চম সূত্র)

৬. দুতিযমেত্তাসুত্তং-মৈত্রী সূত্র (দ্বিতীয়)

১২৬. “হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার পুদগল জগতে বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- এজগতে কোন পুদগল মৈত্রী সহগত চিত্তে একদিক পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। সেরূপে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থদিক পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। এরূপে উর্দ্ধে, অধেঃ তির্যকক্রমে সর্বদা সর্বস্থানে, সর্বলোকে বিপুল, মহদগত, অপ্রমাণ, অবৈরী, প্রশান্ত, মৈত্রী সহগত চিত্তে পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। সে তথায় রূপগত, বেদনাগত, সংজ্ঞাগত, সংস্কারগত, বিজ্ঞানগত হয়। এবং ধর্মসমূহে অনিত্য, দুঃখ, রোগ, গণ্ড, শেল, বিপদ, ক্লেশ, শত্রু, ভগ্ন, শূন্য, অনাত্মরূপে দর্শন করে। তাই সে মৃত্যুর পর শুদ্ধবাস ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। পৃথকজনের এ উৎপত্তি অসাধারণ।

পুনঃ, এজগতে কোন পুদগল করুণা সহগত চিত্তে একদিক পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। সেরূপে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থদিক পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। এরূপে উর্দ্ধে, অধেঃ, তির্যকক্রমে সর্বদা, সর্বস্থানে, সর্বলোকে বিপুল, মহদগত, অপ্রমাণ, অবৈরী, প্রশান্ত, করুণা সহগত চিত্তে পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। সে তথায় রূপগত, বেদনাগত, সংজ্ঞাগত, সংস্কারগত, বিজ্ঞানগত হয়। এবং ধর্মসমূহে অনিত্য, দুঃখ, রোগ, গণ্ড, শেল, বিপদ, ক্লেশ, শত্রু, ভগ্ন, শূন্য, অনাত্মরূপে দর্শন করে। তাই সে মৃত্যুর পর শুদ্ধবাস ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। পৃথকজনের এ’উৎপত্তি অসাধারণ।

পুনঃ, এজগতে কোন পুদগল মুদিতা সহগত চিত্তে একদিক পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। সেরূপে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থদিক পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। এরূপে উর্দ্ধে, অধেঃ, তির্যকক্রমে সর্বদা, সর্বস্থানে, সর্বলোকে বিপুল, মহদগত, অপ্রমাণ, অবৈরী, প্রশান্ত, মুদিতা সহগত চিত্তে পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। সে তথায় রূপগত, বেদনাগত, সংজ্ঞাগত, সংস্কারগত, বিজ্ঞানগত হয়। এবং ধর্মসমূহে অনিত্য, দুঃখ, রোগ, গণ্ড, শেল, বিপদ, ক্লেশ, শত্রু, ভগ্ন, শূন্য, অনাত্মরূপে দর্শন করে। তাই সে মৃত্যুর পর শুদ্ধবাস ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। পৃথকজনের এ’উৎপত্তি অসাধারণ।

পুনঃ, এজগতে কোন পুদগল উপেক্ষা সহগত চিত্তে একদিক পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। সেরূপে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থদিক পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। এরূপে উর্দ্ধে, অধেঃ, তির্যকক্রমে সর্বদা, সর্বস্থানে, সর্বলোকে বিপুল, মহদগত, অপ্রমাণ, অবৈরী, প্রশান্ত, উপেক্ষা সহগত চিত্তে পরিব্যপ্ত করে অবস্থান করে। সে তথায় রূপগত, বেদনাগত, সংজ্ঞাগত, সংস্কারগত, বিজ্ঞানগত হয়। এবং ধর্মসমূহে অনিত্য, দুঃখ, রোগ, গণ্ড, শেল, বিপদ, ক্লেশ, শত্রু, ভগ্ন, শূন্য, অনাত্মরূপে দর্শন করে। তাই সে মৃত্যুর পর শুদ্ধবাস ব্রহ্মলোকে উৎপন্ন হয়। পৃথকজনের এ’উৎপত্তি অসাধারণ।ভিক্ষুগণ, এই চার প্রকার পুদগল জগতে বিদ্যমান।” (ষষ্ঠ সূত্র)

৭. পঠম তথাগত অচ্ছরিযসুত্তং-তথাগত আশ্চর্য সূত্র (প্রথম)

১২৭. “হে ভিক্ষুগণ! তথাগত অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাবে চার প্রকার আশ্চর্য অদ্ভুত ধর্ম প্রাদুর্ভাব হয়। সেই চার প্রকার ধর্ম কি কি? যথা- বোধিসত্ত্ব যখন তুষিত দেবলোক ত্যাগ করে স্মৃতি সমপ্রজ্ঞানে মাতৃগর্ভে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করেন, তখন দেবলোক, ব্রহ্মলোক, মার ভুবনসহ এজগতে শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, দেব-মনুষ্যগণের দেবানুভাব অতিক্রম করে অপরিমেয় বিপুল দীপ্তি প্রাদুর্ভূত হয়। অনন্তঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন লোকান্তরিক নিরয় যেখানে মহাঋদ্ধিসম্পন্ন এবং মহানুভাব চন্দ্র-সূর্যের কিরণ প্রবেশ করতে অক্ষম, সেখানেও দেবানুভাব অতিক্রম করে অপরিমেয় বিপুল দীপ্তি প্রাদুর্ভূত হয়। যেসব সত্ত্ব ঐ স্থানে উৎপন্ন হয়েছে তারাও সেই আলোতে পরস্পরকে জানতে পারে- ওহো অন্যান্য সত্ত্বও এখানে উৎপন্ন হয়েছে।’ তথাগত অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাবে এ’প্রথম আশ্চর্য, অদ্ভুত ধর্ম প্রাদুর্ভূত হয়।

পুনঃ, বোধিসত্ত্ব যখন স্মৃতি সমপ্রজ্ঞানে মাতৃকুক্ষি হতে ভূমিষ্ট হন; তখন দেবলোক, ব্রহ্মলোক, মার ভুবনসহ এজগতে শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, দেব-মনুষ্যগণের দেবানুভাব অতিক্রম করে অপরিমেয় বিপুল দীপ্তি প্রাদুর্ভূত হয়। অনন্তঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন লোকান্তরিক নিরয় যেখানে মহাঋদ্ধিসম্পন্ন এবং মহানুভাব চন্দ্র-সূর্যের কিরণ প্রবেশ করতে অক্ষম, সেখানেও দেবানুভাব অতিক্রম করে অপরিমেয় বিপুল দীপ্তি প্রাদুর্ভূত হয়। যেসব সত্ত্ব ঐ স্থানে উৎপন্ন হয়েছে তারাও সেই আলোতে পরস্পরকে জানতে পারে- ওহো অন্যান্য সত্ত্বও এখানে উৎপন্ন হয়েছে।’ তথাগত অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাবে এ’দ্বিতীয় আশ্চর্য, অদ্ভুত ধর্ম প্রাদুর্ভূত হয়।

পুনঃ, তথাগত যখন অনুত্তর সম্যক বুদ্ধত্ব জ্ঞান প্রাপ্ত হন, তখন দেবলোক, ব্রহ্মলোক, মার ভুবনসহ এজগতে শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, দেব-মনুষ্যগণের দেবানুভাব অতিক্রম করে অপরিমেয় বিপুল দীপ্তি প্রাদুর্ভূত হয়। অনন্তঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন লোকান্তরিক নিরয় যেখানে মহাঋদ্ধিসম্পন্ন এবং মহানুভাব চন্দ্র-সূর্যের কিরণ প্রবেশ করতে অক্ষম, সেখানেও দেবানুভাব অতিক্রম করে অপরিমেয় বিপুল দীপ্তি প্রাদুর্ভূত হয়। যেসব সত্ত্ব ঐ স্থানে উৎপন্ন হয়েছে তারাও সেই আলোতে পরস্পরকে জানতে পারে- ওহো অন্যান্য সত্ত্বও এখানে উৎপন্ন হয়েছে।’ তথাগত অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাবে এ’তৃতীয় আশ্চর্য, অদ্ভুত ধর্ম প্রাদুর্ভূত হয়।

পুনঃ, তথাগত যখন অনুত্তর ধর্মচক্র প্রবর্তন করেন, তখন দেবলোক, ব্রহ্মলোক, মার ভুবনসহ এজগতে শ্রমণ-ব্রাহ্মণ, দেব-মনুষ্যগণের দেবানুভাব অতিক্রম করে অপরিমেয় বিপুল দীপ্তি প্রাদুর্ভূত হয়। অনন্তঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন লোকান্তরিক নিরয় যেখানে মহাঋদ্ধিসম্পন্ন এবং মহানুভাব চন্দ্র-সূর্যের কিরণ প্রবেশ করতে অক্ষম, সেখানেও দেবানুভাব অতিক্রম করে অপরিমেয় বিপুল দীপ্তি প্রাদুর্ভূত হয়। যেসব সত্ত্ব ঐ স্থানে উৎপন্ন হয়েছে তারাও সেই আলোতে পরস্পরকে জানতে পারে- ওহো অন্যান্য সত্ত্বও এখানে উৎপন্ন হয়েছে।’ তথাগত অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাবে এ’চতুর্থ আশ্চর্য, অদ্ভুত ধর্ম প্রাদুর্ভূত হয়।

ভিক্ষুগণ, তথাগত অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাবে এই চার প্রকার আশ্চর্য, অদ্ভুত ধর্ম প্রাদুর্ভূত হয়।” (সপ্তম সূত্র)

৮. দুতিয তথাগত অচ্ছরিযসুত্তং-তথাগত আশ্চর্য সূত্র (দ্বিতীয়)

১২৮. “হে ভিক্ষুগণ! তথাগত অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাবে চার প্রকার আশ্চর্য, অদ্ভুত ধর্ম প্রাদুর্ভূত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- পঞ্চকামগুণে রমিত, পঞ্চকামগুণেরত, পঞ্চকামগুণে মত্ত ব্যক্তিও যদি তথাগতের দেশিত অনাসক্ত ধর্ম মনোযোগের সহিত শ্রবণ করে, তাহলে তার চিত্তে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয়। তথাগত অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাবে এ’প্রথম আশ্চর্য, অদ্ভুত ধর্ম প্রাদুর্ভূত হয়।

অহংকারে রমিত, অহংকারেরত, অহংকারে মত্ত ব্যক্তিও যদি তথাগতের দেশিত অহংকার বিনাশক ধর্ম মনোযোগের সহিত শ্রবণ করে, তাহলে তার চিত্তে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয়। তথাগত অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাবে এ’দ্বিতীয় আশ্চর্য, অদ্ভুত ধর্ম প্রাদুর্ভূত হয়।

তৃষ্ণায় রমিত, তৃষ্ণায়রত, তৃষ্ণায় মত্ত ব্যক্তিও যদি তথাগতের দেশিত নিবৃত্তির ধর্ম মনোযোগের সহিত শ্রবণ করে, তাহলে তার চিত্তে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয়। তথাগত অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাবে এ’তৃতীয় আশ্চর্য, অদ্ভুত ধর্ম প্রাদুর্ভূত হয়।

অবিদ্যাগত, অবিদ্যাচ্ছন্ন, অবিদ্যাযুক্ত ব্যক্তিও যদি তথাগতের দেশিত অবিদ্যা বিনাশক ধর্ম মনোযোগের সহিত শ্রবণ করে, তাহলে তার চিত্তে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয়। তথাগত অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাবে এ’চতুর্থ আশ্চর্য, অদ্ভুত ধর্ম প্রাদুর্ভূত হয়।

ভিক্ষুগণ, তথাগত অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধের আবির্ভাবে এই চার প্রকার আশ্চর্য, অদ্ভুত ধর্ম প্রাদুর্ভূত হয়। ” (অষ্টম সূত্র)

৯. আনন্দ অচ্ছরিযসুত্তং-আনন্দ আশ্চর্য সূত্র

১২৯. “হে ভিক্ষুগণ! আনন্দের চার প্রকার আশ্চর্য, অদ্ভুত ধর্ম বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- ভিক্ষু পরিষদ যদি আনন্দকে দর্শনার্থে উপস্থিত হয়, তাহলে সেই দর্শন লাভে তারা আনন্দিত হয়। তখন যদি আনন্দ ধর্মদেশনা প্রদান করে, তাহলে সেই ধর্মদেশনা শ্রবণ করে তারা আনন্দিত হয়। আর আনন্দ মৌন থাকলে ভিক্ষু পরিষদের তৃপ্তি মিটে না।

ভিক্ষুণী পরিষদ যদি আনন্দকে দর্শনার্থে উপস্থিত হয়, তাহলে সেই দর্শন লাভে তারা আনন্দিত হয়। তখন যদি আনন্দ ধর্মদেশনা প্রদান করে, তাহলে সেই ধর্মদেশনা শ্রবণ করে তারা আনন্দিত হয়। আর আনন্দ মৌন থাকলে ভিক্ষুণী পরিষদের তৃপ্তি মিটে না।

উপাসক পরিষদ যদি আনন্দকে দর্শনার্থে উপস্থিত হয়, তাহলে সেই দর্শন লাভে তারা আনন্দিত হয়। তখন যদি আনন্দ ধর্মদেশনা প্রদান করে, তাহলে সেই ধর্মদেশনা শ্রবণ করে তারা আনন্দিত হয়। আর আনন্দ মৌন থাকলে উপাসক পরিষদের তৃপ্তি মিটে না।

উপাসিকা পরিষদ যদি আনন্দকে দর্শনার্থে উপস্থিত হয়, তাহলে সেই দর্শন লাভে তারা আনন্দিত হয়। তখন যদি আনন্দ ধর্মদেশনা প্রদান করে, তাহলে সেই ধর্মদেশনা শ্রবণ করে তারা আনন্দিত হয়। আর আনন্দ মৌন থাকলে উপাসিকা পরিষদের তৃপ্তি মিটে না।” (নবম সূত্র)

১০.চক্কবত্তি অচ্ছরিযসুত্তং-চক্রবর্তী আশ্চর্য সূত্র

১৩০. “হে ভিক্ষুগণ! চক্রবর্তী রাজার চার প্রকার আশ্চর্য, অদ্ভুত ধর্ম বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- ক্ষত্রিয় পরিষদ যদি চক্রবর্তী রাজার দর্শনার্থে উপস্থিত হয়, তাহলে সেই দর্শন লাভে তারা আনন্দিত হয়। তখন যদি চক্রবর্তী রাজা উপদেশ প্রদান করে, তাহলে সেই উপদেশ শ্রবণ করে তারা আনন্দিত হয়। আর চক্রবর্তী রাজা মৌন থাকলে ক্ষত্রিয় পরিষদের তৃপ্তি মিটে না।

ব্রাহ্মণ পরিষদ যদি চক্রবর্তী রাজার দর্শনার্থে উপস্থিত হয়, তাহলে সেই দর্শন লাভে তারা আনন্দিত হয়। তখন যদি চক্রবর্তী রাজা উপদেশ প্রদান করে, তাহলে সেই উপদেশ শ্রবণ করে তারা আনন্দিত হয়। আর চক্রবর্তী রাজা মৌন থাকলে ব্রাহ্মণ পরিষদের তৃপ্তি মিটে না।

গৃহপতি পরিষদ যদি চক্রবর্তী রাজার দর্শনার্থে উপস্থিত হয়, তাহলে সেই দর্শন লাভে তারা আনন্দিত হয়। তখন যদি চক্রবর্তী রাজা উপদেশ প্রদান করে, তাহলে সেই উপদেশ শ্রবণ করে তারা আনন্দিত হয়। আর চক্রবর্তী রাজা মৌন থাকলে গৃহপতি পরিষদের তৃপ্তি মিটে না।

শ্রমণ পরিষদ যদি চক্রবর্তী রাজার দর্শনার্থে উপস্থিত হয়, তাহলে সেই দর্শন লাভে তারা আনন্দিত হয়। তখন যদি চক্রবর্তী রাজা উপদেশ প্রদান করে, তাহলে সেই উপদেশ শ্রবণ করে তারা আনন্দিত হয়। আর চক্রবর্তী রাজা মৌন থাকলে শ্রমণ পরিষদের তৃপ্তি মিটে না। ভিক্ষুগণ, চক্রবর্তী রাজার এই চার প্রকার আশ্চর্য, অদ্ভুদ ধর্ম বিদ্যমান।

ভিক্ষুগণ! ঠিক এরূপে আনন্দের চার প্রকার আশ্চর্য, অদ্ভুত ধর্ম বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- ভিক্ষু পরিষদ যদি আনন্দকে দর্শনার্থে উপস্থিত হয়, তাহলে সেই দর্শন লাভে তারা আনন্দিত হয়, তখন যদি আনন্দ ধর্মদেশনা প্রদান করে, তাহলে সেই ধর্মদেশনা শ্রবণ করে তারা আনন্দিত হয়। আর আনন্দ মৌন থাকলে ভিক্ষু পরিষদের তৃপ্তি মিটে না।

ভিক্ষুণী পরিষদ যদি আনন্দকে দর্শনার্থে উপস্থিত হয়, তাহলে সেই দর্শন লাভে তারা আনন্দিত হয়, তখন যদি আনন্দ ধর্মদেশনা প্রদান করে, তাহলে সেই ধর্মদেশনা শ্রবণ করে তারা আনন্দিত হয়। আর আনন্দ মৌন থাকলে ভিক্ষুণী পরিষদের তৃপ্তি মিটে না।

উপাসক পরিষদ যদি আনন্দকে দর্শনার্থে উপস্থিত হয়, তাহলে সেই দর্শন লাভে তারা আনন্দিত হয়, তখন যদি আনন্দ ধর্মদেশনা প্রদান করে, তাহলে সেই ধর্মদেশনা শ্রবণ করে তারা আনন্দিত হয়। আর আনন্দ মৌন থাকলে উপাসক পরিষদের তৃপ্তি মিটে না।

উপাসিকা পরিষদ যদি আনন্দকে দর্শনার্থে উপস্থিত হয়, তাহলে সেই দর্শন লাভে তারা আনন্দিত হয়, তখন যদি আনন্দ ধর্মদেশনা প্রদান করে, তাহলে সেই ধর্মদেশনা শ্রবণ করে তারা আনন্দিত হয়। আর আনন্দ মৌন থাকলে উপাসিকা পরিষদের তৃপ্তি মিটে না।

ভিক্ষুগণ, আনন্দের এই চার প্রকার আশ্চর্য, অদ্ভুত ধর্ম বিদ্যমান।” (দশম সূত্র)

ভয় বর্গ সমাপ্ত

স্মারক গাথা-

অত্তানুবাদ, উর্মি, নানাকরণ দু’টি করে সবই

মৈত্রী, আশ্চর্য দু’টি দু’টি মিলে হয় দশমই।