(১৬) ১. ইন্দ্রিযবগ্গো-ইন্দ্রিয় বর্গ

১. ইন্দ্রিযসুত্তং-ইন্দ্রিয় সূত্র

১৫১. “হে ভিক্ষুগণ! ইন্দ্রিয় চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- শ্রদ্ধা ইন্দ্রিয়, বীর্য ইন্দ্রিয়, স্মৃতি ইন্দ্রিয়, সমাধি ইন্দ্রিয়। এই চার প্রকার ইন্দ্রিয়।” (প্রথম সূত্র)

২. সদ্ধাবলসুত্তং-শ্রদ্ধাবল সূত্র

১৫২. “হে ভিক্ষুগণ! বল চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- শ্রদ্ধাবল, বীর্যবল, স্মৃতিবল, সমাধিবল। এই চার প্রকার বল।” (দ্বিতীয় সূত্র)

৩. পঞঞাবলসুত্তং-প্রজ্ঞাবল সূত্র

১৫৩. “হে ভিক্ষুগণ! বল চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- প্রজ্ঞাবল, বীর্যবল, অনবদ্যবল, সংযমবল। এই চার প্রকার বল।” (তৃতীয় সূত্র)

৪. সতিবলসুত্তং-স্মৃতিবল সূত্র

১৫৪. “হে ভিক্ষুগণ! বল চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- স্মৃতিবল, সমাধিবল, অনবদ্যবল, সংযমবল। এই চার প্রকার বল।” (চতুর্থ সূত্র)

৫. পটিসঙ্খানবলসুত্তং-সতর্কতা বল সূত্র

১৫৫. “হে ভিক্ষুগণ! বল চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- সতর্কতাবল, ভাবনাবল, অনবদ্যবল, সংযমবল। এই চার প্রকার বল।” (পঞ্চম সূত্র)

৬. কপ্পসুত্তং-কল্প সূত্র

১৫৬. “হে ভিক্ষুগণ! কল্পের চার প্রকার অসংখ্যেয় কাল। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- যখন কল্পের উৎপত্তি হয়, সেই উৎপত্তিকাল গণনা করা দুঃসাধ্য- এত বছর, এত শত বছর, এত হাজার বছর বা এত লক্ষ বছর।

যখন কল্প উৎপত্তি হয়ে চলমান থাকে, সেই চলমানকাল গণনা করা দুঃসাধ্য- এত বছর, এত শত বছর, এত হাজার বছর বা এত লক্ষ বছর।

যখন কল্প ধ্বংস হয়, সেই ধ্বংসকাল গণনা করা দুঃসাধ্য- এত বছর, এত শত বছর, এত হাজার বছর বা এত লক্ষ বছর।

যখন কল্প ধ্বংস হয়ে স্থিত থাকে (অর্থাৎ নতুন কল্প পুনর্বার আরম্ভ হওয়া) সেই স্থিতকাল গণনা করা দুঃসাধ্য- এত বছর, এত শত বছর, এত হাজার বছর বা এত লক্ষ বছর।

ভিক্ষুগণ, এই কল্পের চার প্রকার অসংখ্যে কাল।” (ষষ্ঠ সূত্র)

৭. রোগসুত্তং-রোগ সূত্র

১৫৭. “হে ভিক্ষুগণ! রোগ চার প্রকার। সেই দুই প্রকার কি কি? যথা- কায়িক রোগ, চৈতসিক রোগ।

যেসব সত্ত্ব কায়িক রোগে আক্রান্ত, তাদেরকে এক বছরেও আরোগ্য লাভ করতে দেখা যায়। অনুরূপভাবে দুই, তিন, চার, পাঁচ, দশ, বিশ, ত্রিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ এমনকি শত বছরের পরেও আরোগ্য লাভ করতে দেখা যায়। কিন্তু যেসব সত্ত্ব চৈতসিক রোগে আক্রান্ত, তাদের মুহুর্ত সময়ের জন্যও আরোগ্য লাভ করা দুঃসাধ্য, তবে ক্ষীণাস্রবের ক্ষেত্রে এ’কথা প্রযোজ্য নয়।

ভিক্ষুগণ! প্রব্রজিতগণের চার প্রকার রোগ বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- এ শাসনে কোন ভিক্ষু যে কোন চীবর, পিণ্ডপাত, শয্যাসন, ভৈষজ্য উপকরণাদিতে সন্তুষ্ট না থেকে মহতী ইচ্ছাপরায়ণ ও মনস্তাপগ্রস্ত হয়। সে চীবর, পিণ্ডপাত, শয্যাসন, ভৈষজ্য উপকরণাদিতে সন্তুষ্ট না থেকে মহতী ইচ্ছাপরায়ণ, মনস্তাপগ্রস্ত, অহংকারী হয়ে প্রশংসা, লাভ-সৎকার প্রতিলাভার্থে পাপ ইচ্ছা ইৎপন্ন করে। এবং প্রশংসা, লাভ-সৎকার প্রতিলাভার্থে তৎপর, চেষ্টাশীল ও উদ্যমশীল হয়। অতঃপর সে গৃহীকুলে উপস্থিতকালে, উপবেশনকালে, ধর্মভাষণকালে এবং পায়খানা-প্রস্রাব কার্যাদি সম্পাদন কালেও এসব চিন্তা করে বা এসব চিন্তায় মগ্ন থাকে। প্রব্রজিতগণের এ’চার প্রকার রোগ বিদ্যমান।

তদ্ধেতু, ভিক্ষুগণ! তোমাদের এরূপ শিক্ষা করা উচিত- ‘আমরা যে কোন চীবর, পিণ্ডপাত, শয্যাসন, ভৈষজ্য উপকরণাদিতে সন্তুষ্ট থেকে মহতী ইচ্ছাপরায়ণ ও মনস্তাপগ্রস্ত হবো না। প্রশংসা, লাভ-সৎকার প্রতিলাভার্থে পাপ ইচ্ছা উৎপন্ন করবো না। প্রশংসা, লাভ-সৎকার প্রতিলাভার্থে তৎপর, চেষ্টাশীল, উদ্যমী হবো না। শীত-উষ্ণ, ক্ষুধা-পিপাসা, ডংশক-মশক, বায়ুতাপ, সরীসৃপ, বৃশ্চিকাদির আক্রমণ সহ্য করবো। অপরের নিন্দাবাক্য, অনাদর, কুযুক্তি এবং উৎপন্ন তীব্র, রুক্ষ, তিক্ত শারীরিক দুঃখ বেদনা আর অমনোজ্ঞ, সাংঘাতিক মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করবো, (এসবে) ক্ষমাশীল হবো।’ এভাবেই ভিক্ষুগণ, তোমাদের শিক্ষা করা উচিত।” (সপ্তম সূত্র)

৮. পরিহানিসুত্তং-পরিহানি সূত্র

১৫৮. “হে ভিক্ষুগণ! একসময় আয়ুষ্মান শারীপুত্র “আবুসোগণ” বলে ভিক্ষুগণকে আহ্বান করলেন। তখন ভিক্ষুগণ “হ্যাঁ আবুসো” বলে তাঁকে প্রত্যুত্তর দিলেন। আয়ুষ্মান শারীপুত্র এরূপ বললেন-

“হে ভিক্ষুগণ! চার ধর্ম নিজে দর্শন করে যে কোন ভিক্ষ,ু ভিক্ষুণীর এরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া উচিত- ‘কুশল ধর্ম ব্যতীত আমার পরিহানি ঘটবে’, পরিহানি সম্বন্ধে ভগবান এরূপ বলেছেন। সেই চার ধর্ম কি কি? যথা- রাগ বহুল, দ্বেষ বহুল, মোহ বহুল এবং জ্ঞান বিষয়াদিতে প্রজ্ঞা চক্ষু উৎপন্ন না হওয়া। এ’চার ধর্ম নিজে দর্শন করে যে কোন ভিক্ষু, ভিক্ষুণীর এরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া উচিত- ‘কুশল ধর্ম ব্যতীত আমার পরিহানি ঘটবে’, পরিহানি সম্বন্ধে ভগবান এরূপ বলেছেন।

আবুসোগণ! চার ধর্ম নিজে দর্শন করে যে কোন ভিক্ষু, ভিক্ষুণীর এরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া উচিত- ‘কুশল ধর্ম দ্বারা আমার পরিহানি ঘটবে না’, অপরিহানি সম্বন্ধে ভগবান এরূপ বলেছেন। সেই চার ধর্ম কি কি? যথা- রাগক্ষয়, দ্বেষক্ষয়, মোহক্ষয় এবং জ্ঞান বিষয়াদিতে প্রজ্ঞা চক্ষু উৎপন্ন হওয়া। এ’চার ধর্ম নিজে দর্শন করে যে কোন ভিক্ষু, ভিক্ষুনীর এরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া উচিত- ‘কুশল ধর্ম দ্বারা আমার পরিহানি ঘটবে না’, অপরিহানি সম্বন্ধে ভগবান এরূপ বলেছেন।” (অষ্টম সূত্র)

৯. ভিক্‌খুনীসুত্তং-ভিক্ষুণী সূত্র

১৫৯. আমি এরূপ শুনেছি- একসময় আয়ুষ্মান আনন্দ কৌশাম্বীতে ঘোষিতারামে অবস্থান করছিলেন। তখন জনৈকা ভিক্ষুণী জনৈক পুরুষকে আহ্বান করে এরূপ বলল- হে পুরুষ! তুমি এখানে এসে কথা শুন। আর্য আনন্দের নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে কৃতাঞ্জলিপূর্ণ বন্দনা করে বলবে- ‘ভন্তে, অমুক ভিক্ষুণী অধিকতর পীড়িতা, দুঃখিতা। তিনি আপনাকে বন্দনা করছেন। ভন্তে, এটা উত্তম হবে যদি আপনি অনুকম্পা পূর্বক ভিক্ষুণী আবাসে উপস্থিত হয়ে সেই ভিক্ষুণীকে দেখে আসেন’।

“আর্যে তাই হোক” বলে সেই পুরুষ ভিক্ষুণীকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আয়ুষ্মান আনন্দের নিকট উপস্থিত হয়ে অভিবাদন পূর্বক একপার্শ্বে উপবেশন করল। অতঃপর আয়ুষ্মান আনন্দকে এরূপ বলল- “ভন্তে! অমুক ভিক্ষুণী অধিকতর পীড়িতা, দুঃখিতা। তিনি আপনাকে বন্দনা করছেন। ভন্তে, এটা উত্তম হবে যদি আপনি অনুকম্পা পূর্বক ভিক্ষুণী আবাসে উপস্থিত হয়ে সেই ভিক্ষুণীকে দেখে আসেন”। আয়ুষ্মান আনন্দ তুষ্ণীভাবে সম্মতি দিলেন।

অতঃপর আয়ুষ্মান আনন্দ চীবর পরিধান পূর্বক পাত্র গ্রহণ করে ভিক্ষুণী আবাসে সেই ভিক্ষুণীর নিকট উপস্থিত হলেন। সেই ভিক্ষুণী আয়ুষ্মান আনন্দকে দূর থেকে আসতে দেখে আপাদমস্তক আবৃত করে মঞ্চে শয়ন করল। আনন্দ ভিক্ষুণীর নিকট উপস্থিত হয়ে প্রজ্ঞাপ্ত আসনে উপবেশন করলেন। উপবিষ্ট অবস্থায় সেই ভিক্ষুণীকে এরূপ বললেন- “ভগিনী! এ’শরীর আহারজাত, আহারাশ্রিত হলেও আহার ত্যাগ করা উচিত; তৃষ্ণাজাত, তৃষ্ণাশ্রিত হলেও তৃষ্ণা ত্যাগ করা উচিত; মানজাত, মানাশ্রিত হলেও মান ত্যাগ করা উচিত। এই শরীর মৈথুনজাত হলেও মৈথুনে (নির্বাণ) সেতু ধ্বংস হয় বলে ভগবান কর্তৃক ব্যক্ত হয়েছে।

“ভগিনী, এ’শরীর আহারজাত, আহারাশ্রিত হলেও আহার ত্যাগ করা উচিত’, এরূপে এটি বলা হয়েছে। কি কারণে তা বলা হয়েছে? এজগতে ভিক্ষু সতর্কতার সাথে আহার পরিভোগ করে- ‘ক্রীড়ার জন্য নয়, প্রমত্ততার জন্য নয়, (অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ) বৃদ্ধি সাধনের জন্য নয়, সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নয়, শুধুমাত্র এ’চতুর্মহাভৌতিক দেহের স্থিতি ও রক্ষার জন্য, ক্ষুধা-রোগ নিবারণার্থ, ব্রহ্মচর্যের অনুগ্রহার্থ, পুরানো ক্ষুধা-যন্ত্রণা বিনাশার্থ, নতুন যন্ত্রণা অনুৎপাদনার্থ আমি ভোজন করছি। এ’পরিমিত ভোজন আমার মধ্যম প্রতিপদার অবস্থা প্রকাশিত হবে এবং আমি অনবদ্য সুখে অবস্থান করতে পারবো।’ সে অন্য সময় আহারে আশ্রিত হলেও (পরে) আহার ত্যাগ করে। ‘ভগিনী, এ’শরীর আহারজাত, আহারাশ্রিত হলেও আহার ত্যাগ করা উচিত’- এরূপে যা বলা হয়েছে, তা একারণে বলা হয়েছে।

“ভগিনী! এ’শরীর তৃষ্ণাজাত, তৃষ্ণাশ্রিত হলেও তৃষ্ণা ত্যাগ করা উচিত’, এরূপে ইহা বলা হয়েছে। কি কারণে তা বলা হয়েছে? এজগতে ভিক্ষু শ্রবণ করে যে- ‘অমুক ভিক্ষু আস্রবসমূহ ক্ষয় করে স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা এজীবনে অনাসক্তিপূর্ণ চিত্তবিমুক্তি, প্রজ্ঞাবিমুক্তি সাক্ষাৎ করে অবস্থান করছে।’ তখন সে এরূপ চিন্তা করে- আমিও বা কেন আস্রবসমূহক্ষয় করে স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা এজীবনে অনাসক্তিপূর্ণ চিত্তবিমুক্তি, প্রজ্ঞাবিমুক্তি সাক্ষাৎ করে অবস্থান করতে পারবো না। সে অন্যসময় তৃষ্ণায় আশ্রিত হলেও (পরে) তৃষ্ণা ত্যাগ করে। ভগিনী, এ’শরীর তৃষ্ণাজাত, তৃষ্ণাশ্রিত হলেও তৃষ্ণা ত্যাগ করা উচিত- এরূপে যা বলা হয়েছে, তা’ একারণে বলা হয়েছে।

“ভগিনী! এ’শরীর মানজাত, মানাশ্রিত হলেও মান ত্যাগ করা উচিত’, এরূপে ইহা বলা হয়েছে। কি কারণে তা বলা হয়েছে? এজগতে ভিক্ষু শ্রবণ করে যে- ‘অমুক ভিক্ষু আস্রবসমূহ ক্ষয় করে এজীবনে স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা অনাসক্তিপূর্ণ চিত্তবিমুক্তি, প্রজ্ঞাবিমুক্তি সাক্ষাৎ করে অবস্থান করছে।’ তখন সে এরূপ চিন্তা করে- ‘সেই আয়ুষ্মান আস্রবসমূহ ক্ষয় করে স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা এজীবনে অনাসক্তিপূর্ণ চিত্তবিমুক্তি, প্রজ্ঞাবিমুক্তি সাক্ষাৎ করে অবস্থান করতে পারলে, আমি কেন পারবো না। সে অন্য সময় মানাশ্রিত হলেও (পরে) মান ত্যাগ করে। ‘ভগিনী, এ’শরীর মানজাত, মানাশ্রিত হলেও মান ত্যাগ করা উচিত’- এরূপে যা বলা হয়েছে, তা এ’কারণে বলা হয়েছে।

“ভগিনী! এ’শরীর মৈথুনজাত, কিন্তু মৈথুনে (নির্বাণ) সেতু ধ্বংস হয় বলে ভগবান কর্তৃক ব্যক্ত।”

অতঃপর সেই ভিক্ষুণী মঞ্চ হতে উঠে উত্তরাসঙগ একাংশ করে আয়ুষ্মান আনন্দের পাদদ্বয়ে অবনত শিরে বন্দনা করে এরূপ বলল- “ভন্তে! আমার অপরাধ হয়েছে; আমি মূর্খ ও নির্বোধের ন্যায় যা প্রকাশ করেছি তা’ অকুশল। আমার যে অপরাধ কৃত হয়েছে তজ্জন্য আমাকে ক্ষমা করুন। আমি ভবিষ্যতের জন্য সংযত হবো।” “যথার্থই, ভগিনী। তোমার অপরাধ হয়েছে; তুমি মূর্খ ও নির্বোধের ন্যায় যা প্রকাশ করেছ, তা অকুশল। যখন তুমি স্বীয় অপরাধ দর্শন করে যথাধর্ম প্রতিকার করেছ, তাই আমরা তোমাকে ক্ষমা করলাম। আর্য বিনয়ে সে-ই সাফল্য লাভ করে, যেজন স্বীয় অপরাধ দর্শন করে যথাধর্ম প্রতিকার করে এবং ভবিষ্যতের জন্য সংযত হয়।” (নবম সূত্র)

১০.সুগতবিনয়সুত্তং-সুগত বিনয় সূত্র

১৬০. “হে ভিক্ষুগণ! সুগত বা সুগত বিনয় বহুজনের হিত-সুখার্থে, লোকানুকম্পায় জগতে বিদ্যমান থাকলে দেব-মনুষ্যের হিত-সুখ, মঙ্গল সাধিত হয়।

কাকে সুগত বলা হয়? ভিক্ষুগণ, তথাগত এজগতে অর্হৎ, সম্যক সম্বুদ্ধ, বিদ্যা ও সু-আচরণসম্পন্ন, সুগত, লোকবিদূ, অনুত্তর পুরুষদমনকারী সারথি, দেব-মানবের শাস্তা, বুদ্ধ, ভগবানরূপে আবির্ভূত হন। ইনি-ই সুগত।

সুগত বিনয় কি? তিনি যা ধর্মদেশনা করেন, তা আদিতে কল্যাণ, মধ্যে কল্যাণ, অন্তে কল্যাণ; অর্থ ও ব্যঞ্জনযুক্ত এবং সর্বপ্রকারে পরিপূর্ণ পরিশুদ্ধ ব্রহ্মচর্য প্রকাশ করে। ইহাই সুগত বিনয়। এই সুগত বা সুগত বিনয় বহুজনের হিত-সুখার্থে, লোকানুকম্পায় জগতে বিদ্যমান থাকলে দেব-মনুষ্যের হিত-সুখ, মঙ্গল সাধিত হয়।

ভিক্ষুগণ! চার প্রকারে সদ্ধর্মের অবনতি, অন্তর্ধান হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- এজগতে ভিক্ষু পরিষদ অস্পষ্ট বা অবিন্যস্ত পদব্যঞ্জন দ্বারা ক্রটিপূর্ণভাবে ত্রিপিটক শিক্ষা করে। অস্পষ্ট পদব্যঞ্জনের অর্থও অস্পষ্ট হয়। এ’প্রথম প্রকারে সদ্ধর্মের অবনতি, অন্তর্ধান হয়।

পুনঃ, ভিক্ষু পরিষদ অনমনীয় (একগুঁয়ে) হয়। সেই অসহিষ্ণু বা অবাধ্যতা ধর্মে সমন্বিত হয়ে তারা অনুশাসনে অনুপযুক্ত হয়। এ’দ্বিতীয় প্রকারে সদ্ধর্মের অবনতি, অন্তর্ধান হয়।

পুনঃ, যে সব ভিক্ষু বহুশ্রুত, ত্রিপিটকধর, ধর্মধর, বিনয়ধর, মাতিকাধর, তারা উত্তমরূপে অপরকে ধর্মশিক্ষা প্রদান করে না। তাদের মৃত্যুর পর ত্রিপিটক অরক্ষিত, মূলোচ্ছিন্ন হয়। এ’তৃতীয় প্রকারে সদ্ধর্মের অবনতি, অন্তর্ধান হয়।

পুনঃ, স্থবির ভিক্ষুগণ ভোগী ও অলস হয়। একাকীবাস পরিত্যাগ করে লাভ-সৎকারে পূর্বগামী হয়। অপ্রাপ্ত বিষয় (নির্বাণ সম্বন্ধীয়) প্রাপ্তির জন্য, অনধিগত বিষয় অধিগত করার জন্য, অপ্রত্যক্ষকৃত বিষয় প্রত্যক্ষ করার জন্য চেষ্টা করে না। পরবর্তী ভিক্ষুসঙ্ঘ তাদেরকে অনুসরণ করে। তারাও ভোগী, অলস হয়। একাকীবাস পরিত্যাগ করে লাভ-সৎকারে পূর্বগামী হয়। অপ্রাপ্ত বিষয় প্রাপ্তির জন্য, অনধিগত বিষয় অধিগত করার জন্য, অপ্রত্যক্ষকৃত বিষয় প্রত্যক্ষ করার চেষ্টা করে না। এ’চতুর্থ প্রকারে সদ্ধর্মের অবনতি, অন্তর্ধান হয়। ভিক্ষুগণ, এই চার প্রকারে সদ্ধর্মের অবনতি, অন্তর্ধান হয়।

পুনঃ, ভিক্ষুগণ! চার প্রকারে সদ্ধর্মের স্থিতি, উন্নতি হয়; অন্তর্ধান হয় না। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- এজগতে ভিক্ষু পরিষদ সুস্পষ্ট বা সুবিন্যাস্ত পদ ব্যঞ্জন দ্বারা পরিশুদ্ধভাবে ত্রিপিটক শিক্ষা করে। সুস্পষ্ট পদ ব্যঞ্জনের অর্থও সুস্পষ্ট হয়। এ’প্রথম প্রকারে সদ্ধর্মের স্থিতি ও উন্নতি হয়; অন্তর্ধান হয় না।

পুনঃ, ভিক্ষু পরিষদ নমনীয় (বিনীত) হয়। সেই সহিষ্ণু, সুবাধ্যতা ধর্মে সমন্বিত হয়ে অনুশাসনে উপযুক্ত হয়। এ’দ্বিতীয় প্রকারে সদ্ধর্মের স্থিতি ও উন্নতি হয়; অন্তর্ধান হয় না।

পুনঃ, যেসব ভিক্ষু বহুশ্রুত, ত্রিপিটকধর, ধর্মধর, বিনয়ধর, মাতিকাধর; তারা উত্তমরূপে অপরকে ধর্মশিক্ষা প্রদান করে। তাই তাদের মৃত্যুর পরও ত্রিপিটক অরক্ষিত, মূলোচ্ছিন্ন হয় না। এ’তৃতীয় প্রকারে সদ্ধর্মের স্থিতি ও উন্নতি হয়; অন্তর্ধান হয় না।

পুনঃ, স্থবির ভিক্ষুগণ ভোগী ও অলস হয় না। লাভ-সৎকার পরিত্যাগ করে একাকীবাসে পূর্বগামী হয়। অপ্রাপ্ত বিষয় প্রাপ্তির জন্য, অনধিগত বিষয় অধিগত করার জন্য, অপ্রত্যক্ষকৃত বিষয় প্রত্যক্ষ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে। পরবর্তী ভিক্ষুসঙ্ঘ তাদেরকে অনুসরণ করে। তারাও ভোগী, অলস হয় না। লাভ-সৎকার পরিত্যাগ করে একাকীবাসে পূর্বগামী হয়। অপ্রাপ্ত বিষয় প্রাপ্তির জন্য, অনধিগত বিষয় অধিগত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে। এ’চতুর্থ প্রকারে সদ্ধর্মের স্থিতি ও উন্নতি হয়; অন্তর্ধান হয় না।

ভিক্ষুগণ, এই চার প্রকারে সদ্ধর্মের স্থিতি ও উন্নতি হয়; অন্তর্ধান হয় না।” (দশম সূত্র)

ইন্দ্রিয় বর্গ সমাপ্ত

স্মারক গাথা-

ইন্দ্রিয়, শ্রদ্ধা, প্রজ্ঞা, স্মৃতি, সতর্কতাসহ পাঁচ,

কল্প, রোগ, পরিহানি, ভিক্ষুণী, সুগত মিলে দশ।