১. সংখিত্তসুত্তং-সংক্ষিপ্ত সূত্র
১৬১. “হে ভিক্ষুগণ! প্রতিপদা (উপায়)চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা দুঃখ প্রতিপদা মন্থর অভিজ্ঞা (কষ্টকর বা দুঃসাধ্য প্রতিপদা যার ফলে ক্রমে ক্রমে বা ধীরে ধীরে জ্ঞান অর্জন করা যায়)। দুঃখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা (কষ্টকর বা দুঃসাধ্য, তবে দ্রুত জ্ঞানার্জন করা যায়)। সুখ প্রতিপদা মন্থর অভিজ্ঞা (সুখকর বা সুসাধ্য প্রতিপদা যার ফলে ক্রমে ক্রমে বা ধীরে ধীরে জ্ঞান অর্জন করা যায়)। সুখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা (সুখকর বা সুসাধ্য প্রতিপদা যার ফলে দ্রুত জ্ঞানার্জন করা যায়।
ভিক্ষুগণ! এগুলোই হচ্ছে চার প্রকার প্রতিপদা।” (প্রথম সূত্র)
২. বিত্থারসুত্তং-বিস্তার সূত্র
১৬২. “হে ভিক্ষুগণ! প্রতিপদা চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- দুঃখ প্রতিপদা মন্থর অভিজ্ঞা, দুঃখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা, সুখ প্রতিপদা মন্থর অভিজ্ঞা ও সুখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা।
ভিক্ষুগণ! দুঃখ প্রতিপদা মন্থর অভিজ্ঞা কিরূপ? এজগতে কোন কোন ব্যক্তি স্বভাব অনুযায়ী তীব্র রাগ বা আসক্তিশ্রেণীর হয় এবং সর্বদা রাগজনিত (আসক্তিজনিত) দুঃখ ও দৌর্মনস্য অনুভব করে। স্বভাব অনুযায়ী তীব্র দোষশ্রেণীর হয় ও সর্বদা দোষজনিত দুঃখ এবং দৌর্মনস্য অনুভব করে। স্বভাব অনুযায়ী তীব্র মোহশ্রেণীর হয় এবং সর্বদা মোহজনিত দুঃখ ও দৌর্মনস্য অনুভব করে। তার শ্রদ্ধেন্দ্রিয়, বীর্যেন্দ্রিয়, স্মৃতিন্দ্রিয়, সমাধিন্দ্রিয় ও প্রজ্ঞেন্দ্রিয় এ পঞ্চেন্দ্রিয়সমূহ মৃদু বা দুর্বলভাবে প্রাদুর্ভাব হয়। সে এপঞ্চেন্দ্রিয়সমূহের মৃদুতার দরুন অনুক্রমিকভাবে মন্থর গতিতে আস্রবসমূহ ক্ষয় করতে সক্ষম হয়। একেই বলা হয় দুঃখ প্রতিপদা মন্থর অভিজ্ঞা।
দুঃখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা কিরূপ? এজগতে কোন কোন ব্যক্তি স্বভাব অনুযায়ী তীব্র রাগ বা আসক্তি শ্রেণীর হয় এবং সর্বদা রাগজনিত দুঃখ ও দৌর্মনস্য অনুভব করে। স্বভাব অনুযায়ী তীব্র দোষশ্র্রেণীর হয় ও সর্বদা দোষজনিত দুঃখ এবং দৌর্মনস্য অনুভব করে। স্বভাব অনুযায়ী তীব্র মোহশ্রেণীর হয় এবং সর্বদা মোহজনিত দুঃখ ও দৌর্মনস্য অনুভব করে। তার শ্রদ্ধেন্দ্রিয়, বীর্যেন্দ্রিয়, স্মৃতিন্দ্রিয়, সমাধিন্দ্রিয় ও প্রজ্ঞেন্দ্রিয় এপঞ্চেন্দ্রিয়সমূহ অত্যাধিকভাবে প্রার্দুভাব হয়। সে এপঞ্চেন্দ্রিয়সমূহের আধিক্যের দরুন অনুক্রমিকভাবে দ্রুত গতিতে আস্রবসমূহ ক্ষয় করতে সক্ষম হয়। একে বলে দুঃখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা।
সুখ প্রদিপদা মন্থর অভিজ্ঞা কিরূপ? এজগতে কোন কোন ব্যক্তি স্বভাব অনুযায়ী তীব্র রাগ বা আসক্তিশ্রেণীর হয় না এবং সর্বদা রাগজনিত দুঃখ এবং দৌর্মনস্য অনুভব করে না। স্বভাব অনুযায়ী তীব্র দোষশ্রেণীর হয় না ও সর্বদা দোষজনিত দুঃখ এবং দৌর্মনস্য অনুভব করে না। স্বভাব অনুযায়ী তীব্র মোহশ্রেণীর হয় না এবং সর্বদা মোহজনিত দুঃখ ও দৌর্মনস্য অনুভব করে না। তার শ্রদ্ধেন্দ্রিয়, বীর্যেন্দ্রিয়, স্মৃতিন্দ্রিয়, সমাধিন্দ্রিয় ও প্রজ্ঞেন্দ্রিয় এপঞ্চেন্দ্রিয়সমূহ মৃদু বা দুর্বলভাবে প্রাদুর্ভাব হয়। সে এপঞ্চেন্দ্রিয়সমূহের মৃদুতার দরুন অনুক্রমিকভাবে মন্থরগতিতে আস্রবসমূহ ক্ষয় করতে সক্ষম হয়। ভিক্ষুগণ! একেই বলা হয় সুখ প্রতিপদা মন্থর অভিজ্ঞা।
সুখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা কিরূপ? এজগতে কোন কোন ব্যক্তি স্বভাব অনুযায়ী তীব্র রাগ বা আসক্তি শ্রেণীর হয় না এবং সর্বদা রাগজনিত দুঃখ ও দৌর্মনস্য অনুভব করে না। স্বভাব অনুযায়ী তীব্র দোষশ্রেণীর হয় না ও সর্বদা দোষজনিত দুঃখ এবং দৌর্মনস্য অনুভব করে না। স্বভাব অনুযায়ী তীব্র মোহজশ্রেণীর হয় না এবং সর্বদতা মোহজনিত দুঃখ ও দৌর্মনস্য অনুভব করে না। তার শ্রদ্ধেন্দ্রিয়, বীর্যেন্দ্রিয়, স্মৃতিন্দ্রিয়, সমাধিন্দ্রিয় ও প্রজ্ঞেন্দ্রিয় এপঞ্চেন্দ্রিয়সমূহ অত্যাধিকভাবে প্রাদুর্ভাব হয়। সে এপঞ্চেন্দ্রিয়সমূহের আধিক্যের দরুন অনুক্রমিকভাবে দ্রুতগতিতে আস্রসমূহ ক্ষয় করতে সক্ষম হয়। একেই বলে সুখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা। ভিক্ষুগণ, আর এগুলোই হচ্ছে চার প্রতিপদা।” (দ্বিতীয় সূত্র)
৩. অসুভসুত্তং - অশুভ সূত্র
১৬৩. “হে ভিক্ষুগণ! প্রতিপদা চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- দুঃখ প্রতিপদা মন্থর অভিজ্ঞা, দুঃখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা, সুখ প্রতিপদা মন্থর অভিজ্ঞা, সুখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞ।
ভিক্ষুগণ! প্রতিপদা মন্থর অভিজ্ঞা কিরূপ? এজগতে ভিক্ষু কায়ে অশুভানুদর্শী, আহারে প্রতিকুলসংজ্ঞী, সর্বলোকে অনভিরতিসংজ্ঞী ও সর্বসংস্কারে অনিত্যানুদর্শী হয়ে অবস্থান করে; তার মৃত্যুসংজ্ঞা আধ্যাত্মিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। সে পঞ্চবিধ শৈক্ষ্যবলকে উপনিশ্রয় করে অবস্থান করে, যথা-শ্রদ্ধাবল, হ্রীবল (পাপের প্রতি লজ্জাবল), ঔত্তাপ্যবল (পাপে ভয়বল), বীর্যবল ও প্রজ্ঞাবল। তার শ্রদ্ধেন্দ্রিয়, বীর্যেন্দ্রিয়, স্মৃতিন্দ্রিয় ও প্রজ্ঞেন্দ্রিয় এপঞ্চেন্দ্রিয়সমূহ মৃদু বা দুর্বলভাবে প্রাদুর্ভাব হয়। সে এ’পঞ্চেন্দ্রিয় সমূহের মৃদুতার দরুন অনুক্রমিকভাবে মন্থর গতিতে আস্রবসমূহ ক্ষয় করতে সক্ষম হয়। একেই বলে দুঃখ প্রতিপদা মন্থর অভিজ্ঞা।
দুঃখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা কিরূপ? এজগতে ভিক্ষু অশুভানুদর্শী আহারে প্রতিকুলসংজ্ঞী, সর্বলোকে অনভিরতিসংজ্ঞী ও সর্বসংস্কারে অনিত্যানুদর্শী হয়ে অবস্থান করে; তার মৃত্যুসংজ্ঞা আধ্যাত্মিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। সে পঞ্চবিধ শৈক্ষ্যবলকে উপনিশ্রয় করে অবস্থান করে, যথা- শ্রদ্ধবল, হ্রীবল, ঔত্তাপ্যবল, বীর্যবল ও প্রজ্ঞাবল। তার শ্রদ্ধেন্দ্রিয়, বীর্যেন্দ্রিয়, স্মৃতিন্দ্রিয়, সমাধিন্দ্রিয় ও প্রজ্ঞেন্দ্রিয় এপঞ্চেন্দ্রিয়সমূহ অত্যাধিকভাবে প্রাদুর্ভাব হয়। সে এ’পঞ্চেন্দ্রিয়সমূহের আধিক্যের দরুন অনুক্রমিকভাবে গতিতে আস্রবসমূহ ক্ষয় করতে সক্ষম হয়। একেই বলে দুুঃখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা।
সুখ প্রদিপদা মন্থর অভিজ্ঞা কিরূপ? এজগতে ভিক্ষু কাম (কামনা) ও অকুশল ধর্মসমূহ হতে পৃথক হয়ে সবির্তক, সবিচার ও বিবেকজনিত প্রীতি-সুখমণ্ডিত প্রথম ধ্যান লাভ করে অবস্থান করে। বির্তক ও বিচারের উপশমে আধ্যাত্মিক সমপ্রসাদী, চিত্তের একীভাব আনয়নকারী, অবির্তক, অবিচার সমাধিজনিত প্রীতি-সুখমণ্ডিত দ্বিতীয় ধ্যান লাভ করে অবস্থান করে। সে প্রীতির প্রতি ও বিরাগী হওতঃ উপেক্ষাশীল হয়ে অবস্থান করে এবং স্মৃতিমান ও সমপ্রজ্ঞানী হয়ে কায়িক সুখ অনুভব করে; যে অবস্থায় থাকলে আর্যগণ ‘উপেক্ষক, স্মৃতিমান, সুখবিহারী বলে অভিহিত করেন সেই তৃতীয় ধ্যান লাভ করে অবস্থান করেন। সর্ববিধ সুখ-দুঃখ পরিত্যাগ করে পূর্বেই মানসিক সৌমনস্য ও দৌর্মনস্যের বিনাশ সাধন করে সুখ-দুঃখহীন ‘উপেক্ষা স্মৃতি পরিশুদ্ধি’ নামক চতুর্থ ধ্যান লাভ করে অবস্থান করে। সে পঞ্চবিধ শৈক্ষ্যবলকে উপনিশ্রয় করে অবস্থান করে, যথা- শ্রদ্ধাবল, হ্রীবল, ঔত্তাপ্যবল, বীর্যবল ও প্রজ্ঞাবল। তার শ্রদ্ধেন্দ্রিয়, বীর্যেন্দ্রিয়, স্মৃতিন্দ্রিয়, সমাধিন্দ্রিয় ও প্রজ্ঞেন্দ্রিয় এ’পঞ্চেন্দ্রিয়সমূহ মৃদু বা দুর্বলভাবে প্রার্দুভাব হয়। সে এ’পঞ্চেন্দ্রিয়সমূহের মৃদুতার দরুন অনুক্রমিকভাবে মন্থর গতিতে আস্রবসমূহ ক্ষয় করতে সক্ষম হয়। ভিক্ষুগণ! একেই বলে সুখ প্রতিপদা মন্থর অভিজ্ঞা।
সুখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা কিরূপ? এজগতে ভিক্ষু কাম (কামনা) ও অকুশল ধর্মসমূহ হতে পৃথক হয়ে সবির্তক, সবিচার ও বিবেকজনিত প্রীতি-সুখমণ্ডিত প্রথম ধ্যান লাভ করে অবস্থান করে। বির্তক ও বিচারের উপশমে আধ্যাত্মিক সমপ্রসাদী, চিত্তের একীভাব আনয়নকারী, অবির্তক অবিচার সমাধিজনিত প্রীতি-সুখমণ্ডিত দ্বিতীয় ধ্যান লাভ করে অবস্থান করে। সে প্রীতির প্রতিও বিরাগী হয়ে উপেক্ষাশীল হয়ে অবস্থান করে এবং স্মৃতিমান ও সমপ্রজ্ঞানী হয়ে কায়িক সুখ অনুভব করে; যে অবস্থায় থাকলে আর্যগণ ‘উপেক্ষক, স্মৃতিমান, সুখবিহারী’ বলে; অভিহিত করেন সেই তৃতীয় ধ্যান লাভ অবস্থান করে। সর্ববিধ সুখ-দুখ পরিত্যাগ করে, পূর্বেই মানসিক সৌমনস্য ও দৌর্মনস্যের বিনাশ সাধন করে সুখ-দুঃখহীন ‘উপেক্ষা স্মৃতি পরিশুদ্ধি’ নামক চতুর্থ ধ্যান লাভ করে অবস্থান করে। সে পঞ্চবিধ শৈক্ষ্যবলকে উপনিশ্রয় করে অবস্থান করে, যথা- শ্রদ্ধাবল, হ্রীবল, ঔত্তাপ্যবল, বীর্যবল ও প্রজ্ঞাবল। তার শ্রদ্ধেন্দ্রিয়, বীর্যেন্দ্রিয়, স্মৃতিন্দ্রিয়, সমাধিন্দ্রিয় ও প্রজ্ঞেন্দ্রিয় এ’পঞ্চেন্দ্রিয়সমূহ অত্যাধিকভাবে প্রাদুর্ভাব হয়। সে এ’পঞ্চেন্দ্রিয়সমূহের আধিক্যের দরুন অনুক্রমিকভাবে দ্রুতগতিতে আস্রবসমূহ ক্ষয় করতে সক্ষম হয়। একে সুখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞান বলে। ভিক্ষুগণ, এগুলোই হচ্ছে চার প্রকার প্রতিপদা।” (তৃতীয় সূত্র)
৪. পঠমখমসুত্তং-ক্ষমাশীল সূত্র (প্রথম)
১৬৪. “হে ভিক্ষুগণ! প্রতিপদা চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- অক্ষমা (ক্ষমাহীনতা) প্রতিপদা, ক্ষমা বা ক্ষমাশীল প্রতিপদা, আত্মদমন প্রতিপদা ও সমা বা মনের সমভাব প্রতিপদা।
ভিক্ষুগণ!অক্ষমা (ক্ষমাহীন) প্রতিপদা কিরূপ? এজগতে কোন কোন ব্যক্তি আক্রোশকারীকে প্রতি-আক্রোশ করে, রোষকারীকে প্রতিরোষ করে ও বিবাদকারীর সঙ্গে প্রতিবিবাদ করে। একেই বলে অক্ষমা প্রতিপদা।
ক্ষমা বা ক্ষমাশীল প্রতিপদা কিরূপ? এজগতে কোন কোন ব্যক্তি আক্রোশকারীকে প্রতি-আক্রোশ করে না, রোষকারীকে প্রতিরোষ করে না, আর বিবাদকারীর সঙ্গে প্রতিবিবাদ করে না। একেই বলে ক্ষমা বা ক্ষমাশীল প্রতিপদা।
আত্মদমন প্রতিপদা কিরূপ? এজগতে ভিক্ষু চক্ষু দিয়ে রূপ দেখে নিমিত্তগ্রাহী , অনুব্যঞ্জনগ্রাহী হয় না। এহেতুতে সামান্য অসংযতভাবে বিচরণকারী চক্ষু ইন্দ্রিয়কে অভিধ্যা-দৌর্মনস্যাদি অকুশল পাপধর্ম আক্রমণ করলেও আচ্ছন্ন করতে পারে না। যেহেতু ভিক্ষু চক্ষু সংবরণে অভিনিবিষ্ট থাকে, চক্ষু ইন্দ্রিয়কে রক্ষা করে, চক্ষু ইন্দ্রিয়ে সংবরণ উৎপন্ন করে। কর্ণ দিয়ে শব্দ শুনে নিমিত্তগ্রাহী, অনুব্যঞ্জনগ্রাহী হয় না। এহেতুতে সামান্য অসংযতভাবে বিচরণকারী কর্ণ ইন্দ্রিয়কে অভিধ্যা-দৌর্মনস্যাদি অকুশল পাপধর্ম আক্রমণ করলেও আচ্ছন্ন করতে পারে না। যেহেতু ভিক্ষু কর্ণ সংবরণে অভিনিবিষ্ট থাকে, কর্ণ ইন্দ্রিয়কে রক্ষা করে, কর্ণ ইন্দ্রিয়ে সংবরণ উৎপন্ন করে। নাসিকা দিয়ে ঘ্রাণ নিয়ে নিমিত্তগ্রাহী, অনুব্যঞ্জনগ্রাহী হয় না। এহেতুতে সামান্য অসংযতভাবে বিচরণকারী নাসিকা ইন্দ্রিয়কে অভিধ্যা-দৌর্মনস্যাদি অকুশল পাপধর্ম আক্রমণ করলেও আচ্ছন্ন করতে পারে না। যেহেতু ভিক্ষু নাসিকা সংবরণে অভিনিবিষ্ট থাকে, নাসিকা ইন্দ্রিয়কে রক্ষা করে, নাসিকা ইন্দ্রিয়ে সংবরণ উৎপন্ন করে। জিহ্বা দিয়ে রস আস্বাদন করে নিমিত্তগ্রাহী, অনুব্যঞ্জনগ্রাহী হয় না। এহেতুতে সামান্য অসংযতভাবে বিচরণকারী জিহ্বা ইন্দ্রিয়কে অভিধ্যা-দৌর্মনস্যাদি অকুশল পাপধর্ম আক্রমণ করলেও আচ্ছন্ন করতে পারে না। যেহেতু ভিক্ষু জিহ্বা সংবরণে অভিনিবিষ্ট থাকে, জিহ্বা ইন্দ্রিয়কে রক্ষা করে, জিহ্বা ইন্দ্রিয়ে সংবরণ উৎপন্ন করে। কায় দিয়ে স্পর্শ অনুভব করে নিমিত্তগ্রাহী, অনুব্যঞ্জনগ্রাহী হয় না। এহেতুতে সামান্য অসংযতভাবে বিচরণকারী কায় ইন্দ্রিয়কে অভিধ্যা-দৌর্মনস্যাদি অকুশল পাপধর্ম আক্রমণ করলেও আচ্ছন্ন করতে পারে না। যেহেতু ভিক্ষু কায় সংবরণে অভিনিবিষ্ট থাকে, কায় ইন্দ্রিয়কে রক্ষা করে, কায় ইন্দ্রিয়ে সংবরণ উৎপন্ন করে। মন দিয়ে ধর্ম জেনে নিমিত্তগ্রাহী, অনুব্যঞ্জনগ্রাহী হয় না। এহেতুতে সামান্য অসংযতভাবে বিচরণকারী মন ইন্দ্রিয়কে অভিধ্যা-দৌর্মনস্যাদি অকুশল পাপধর্ম আক্রমণ করলেও আচ্ছন্ন করতে পারে না। যেহেতু ভিক্ষু মন সংবরণে অভিনিবিষ্ট থাকে, মন ইন্দ্রিয়কে রক্ষা করে, মন ইন্দ্রিয়ে সংবরণ উৎপন্ন করে। একেই বলা হয় আত্মদমন প্রতিপদা।
সমা (মনের সমভাব) প্রতিপদা কিরূপ? এজগতে ভিক্ষু উৎপন্ন কাম বির্তক গ্রহণ না করে বরং উহাকে পরিত্যাগ, অপনোদন করে সমূলে বিনষ্ট করে এবং চিত্ত পরিশুদ্ধ করে। উৎপন্ন ব্যাপাদ বির্তক গ্রহণ না করে বরং উহাকে পরিত্যাগ, অপনোদন করে সমূলে বিনষ্ট করে এবং চিত্ত পরিশুদ্ধ করে। উৎপন্ন বিহিংসা বির্তক গ্রহণ না করে বরং উহাকে পরিত্যাগ, অপনোদন করে সমূলে বিনষ্ট করে এবং চিত্ত পরিশুদ্ধ করে। উৎপন্ন-অনুৎপন্ন পাপ ও অকুশল ধর্মসমূহ গ্রহণ না করে বরং উহাকে পরিত্যাগ, অপনোদন করে সমূলে বিনষ্ট করে এবং চিত্ত পরিশুদ্ধ করে। একেই সমা প্রতিপদা বলে। ভিক্ষুগণ! এই চার প্রকার প্রতিপদা।” (চতুর্র্থ সূত্র)
৫. দুতিয়খমসুত্তং-ক্ষমাশীল সূত্র (দ্বিতীয়)
১৬৫. “হে ভিক্ষুগণ! প্রতিপদা চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- অক্ষমা (ক্ষমাহীনতা) প্রতিপদা, ক্ষমা বা ক্ষমাশীল প্রতিপদা, আত্মদমন প্রতিপদা ও সমা (মনের সমভাব) প্রতিপদা।
ভিক্ষুগণ! অক্ষমা প্রতিপদা কিরূপ? এজগতে কোন কোন ব্যক্তি শীত-উষ্ণ, ও ক্ষুধা-পিপাসা, ডাঁশ-মশা, বায়ু-তাপ ও সরীসৃপ বৃশ্চিকাদির আক্রমণ সহ্য করতে পারে না। অপরের নিন্দাবাক্য, অনাদর, কুযুক্তি ও উৎপন্ন শারীরিক তীব্র, কটু, বিরক্তিকর দৈহিক যন্ত্রণা, এবং অমনোপুত, প্রাণহরণকর মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে না এবং তাতে ধৈর্যশীলও হয় না। একেই বলে অক্ষমা প্রতিপদা।
ক্ষমা বা ক্ষমাশীল প্রতিপদা কিরূপ? এজগতে কোন কোন ব্যক্তি, শীত-উষ্ণ ও ক্ষুধা-পিপাসা ডাঁশ-মশা, বায়ু-তাপ ও সরীসৃপ বৃশ্চিকাদির আক্রমণ সহ্য করতে পারে। অপরের নিন্দাবাক্য, অনাদর, কুযুক্তি ও উৎপন্ন শারীরিক তীব্র, কটু, বিরক্তিকর দৈহিক যন্ত্রণা এবং অমনোপুত, প্রাণহরণকর মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে এবং ধৈর্যশীলও হয়। একেই ক্ষমা বা ক্ষমাশীল প্রতিপদা বলে।
আত্মদমন প্রতিপদা কিরূপ? এজগতে ভিক্ষু চক্ষু দিয়ে রূপ দেখে নিমিত্তগ্রাহী, অনুব্যঞ্জনগ্রাহী হয় না। এহেতুতে সামান্য অসংযতভাবে বিচরণকারী চক্ষু ইন্দ্রিয়কে অভিধ্যা-দৌর্মনস্যাদি অকুশল পাপধর্ম আক্রমণ করলেও আচ্ছন্ন করতে পারে না। যেহেতু ভিক্ষু চক্ষু সংবরণে অভিনিবিষ্ট থাকে, চক্ষু ইন্দ্রিয়কে রক্ষা করে, চক্ষু ইন্দ্রিয়ে সংবরণ উৎপন্ন করে। কর্ণ দিয়ে শব্দ শুনে নিমিত্তগ্রাহী, অনুব্যঞ্জনগ্রাহী হয় না। এহেতুতে সামান্য অসংযতভাবে বিচরণকারী কর্ণ ইন্দ্রিয়কে অভিধ্যা-দৌর্মনস্যাদি অকুশল পাপধর্ম আক্রমণ করলেও আচ্ছন্ন করতে পারে না। যেহেতু ভিক্ষু কর্ণ সংবরণে অভিনিবিষ্ট থাকে, কর্ণ ইন্দ্রিয়কে রক্ষা করে, কর্ণ ইন্দ্রিয়ে সংবরণ উৎপন্ন করে। নাসিকা দিয়ে ঘ্রাণ নিয়ে নিমিত্তগ্রাহী, অনুব্যঞ্জনগ্রাহী হয় না। এহেতুতে সামান্য অসংযতভাবে বিচরণকারী নাসিকা ইন্দ্রিয়কে অভিধ্যা-দৌর্মনস্যাদি অকুশল পাপধর্ম আক্রমণ করলেও আচ্ছন্ন করতে পারে না। যেহেতু ভিক্ষু নাসিকা সংবরণে অভিনিবিষ্ট থাকে, নাসিকা ইন্দ্রিয়কে রক্ষা করে, নাসিকা ইন্দ্রিয়ে সংবরণ উৎপন্ন করে। জিহ্বা দিয়ে রস আস্বাদন করে নিমিত্তগ্রাহী, অনুব্যঞ্জনগ্রাহী হয় না। এহেতুতে সামান্য অসংযতভাবে বিচরণকারী জিহ্বা ইন্দ্রিয়কে অভিধ্যা-দৌর্মনস্যাদি অকুশল পাপধর্ম আক্রমণ করলেও আচ্ছন্ন করতে পারে না। যেহেতু ভিক্ষু জিহ্বা সংবরণে অভিনিবিষ্ট থাকে, জিহ্বা ইন্দ্রিয়কে রক্ষা করে, জিহ্বা ইন্দ্রিয়ে সংবরণ উৎপন্ন করে। কায় দিয়ে স্পর্শ অনুভব করে নিমিত্তগ্রাহী, অনুব্যঞ্জনগ্রাহী হয় না। এহেতুতে সামান্য অসংযতভাবে বিচরণকারী কায় ইন্দ্রিয়কে অভিধ্যা-দৌর্মনস্যাদি অকুশল পাপধর্ম আক্রমণ করলেও আচ্ছন্ন করতে পারে না। যেহেতু ভিক্ষু কায় সংবরণে অভিনিবিষ্ট থাকে, কায় ইন্দ্রিয়কে রক্ষা করে, কায় ইন্দ্রিয়ে সংবরণ উৎপন্ন করে। মন দিয়ে ধর্ম জেনে নিমিত্তগ্রাহী, অনুব্যঞ্জনগ্রাহী হয় না। এহেতুতে সামান্য অসংযতভাবে বিচরণকারী মন ইন্দ্রিয়কে অভিধ্যা-দৌর্মনস্যাদি অকুশল পাপধর্ম আক্রমণ করলেও আচ্ছন্ন করতে পারে না। যেহেতু ভিক্ষু মন সংবরণে অভিনিবিষ্ট থাকে, মন ইন্দ্রিয়কে রক্ষা করে, মন ইন্দ্রিয়ে সংবরণ উৎপন্ন করে। একেই বলা হয় আত্মদমন প্রতিপদা।
ভিক্ষুগণ! সমা (মনের সমভাব) প্রতিপদা কিরূপ? এজগতে ভিক্ষু উৎপন্ন কাম বির্তক গ্রহণ না করে বরং উহাকে পরিত্যাগ, অপনোদন করে, সমূলে বিনষ্ট করে এবং চিত্ত পরিশুদ্ধ করে। উৎপন্ন ব্যাপাদ বির্তক গ্রহণ না করে বরং উহাকে পরিত্যাগ, অপনোদন করে সমূলে বিনষ্ট করে এবং চিত্ত পরিশুদ্ধ করে। উৎপন্ন বিহিংসা বির্তক গ্রহণ না করে বরং উহাকে পরিত্যাগ, অপনোদন করে সমূলে বিনষ্ট করে এবং চিত্ত পরিশুদ্ধ করে। উৎপন্ন-অনুৎপন্ন পাপ অকুশল ধর্মসমূহ গ্রহণ না করে বরং উহাকে পরিত্যাগ, অপনোদন করে সমূলে বিনষ্ট করে এবং চিত্ত পরিশুদ্ধ করে। একেই সমা প্রতিপদা বলে। ভিক্ষুগণ! এই চার প্রকার প্রতিপদা।” (পঞ্চম সূত্র)।
৬. উভযসুত্তং-উভয় সূত্র
১৬৬. “হে ভিক্ষুগণ! প্রতিপদা চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- সুখ প্রতিপদা মন্থর অভিজ্ঞা, দুঃখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা, সুখ প্রতিপদা মন্থর অভিজ্ঞা ও সুখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা।
ভিক্ষুগণ! দুঃখ প্রতিপদা মন্থরাভিজ্ঞা- এ’প্রতিপদটি উভয় ক্ষেত্রে হীনরূপে আখ্যায়িত হয়। দুঃখ বিধায় এ’প্রতিপদা হীনরূপে আখ্যায়িত হয় আবার মন্থর বিধায়ও এ’প্রতিপদা হীনরূপে আখ্যায়িত হয়। উভয় ক্ষেত্রেই এ’প্রতিপদাটি হীনরূপে আখ্যায়িত হয়।
দুঃখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা- এ’প্রতিপদাটি দুঃখতার জন্য হীনরূপে আখ্যায়িত হয়।
সুখ প্রতিপদা মন্থরাভিজ্ঞা- এ’প্রতিপদাটি মন্থর গতির জন্য হীনরূপে আখ্যায়িত হয়।
সুখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা- এ’প্রতিপদাটি উভয় ক্ষেত্রে উৎকৃষ্টরূপে আখ্যায়িত হয়। সুখকর বিধায় এ’প্রতিপদা উৎকৃষ্টরূপে আখ্যায়িত হয় আবার ক্ষিপ্র বিধায় এ’প্রতিপদা উৎকৃষ্টরূপে আখ্যায়িত হয়। উভয় ক্ষেত্রেই এ’প্রতিপদাটি উৎকৃষ্টরূপে আখ্যায়িত হয়। ভিক্ষুগণ! এই চার প্রকার প্রতিপদা।” (ষষ্ঠ সূত্র)
৭. মহামোগ্গল্লানসুত্তং-মহামৌদ্গল্যায়ন সূত্র
১৬৭. একসময় আয়ুষ্মান শারীপুত্র আয়ুষ্মান মহামৌদ্গল্যায়নের নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে সম্বোধন করলেন। প্রীতিপূর্ণ কুশল বিনিময় করে একান্তে উপবেশন করলেন। একান্তে উপবিষ্ট আয়ুষ্মান শারীপুত্র আয়ুষ্মান মহামৌদ্গল্যায়নকে এরূপ বললেন-
“হে আবুসো মৌদ্গল্যায়ন! প্রতিপদা চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- দুঃখ প্রতিপদা মন্থরাভিজ্ঞা, দুঃখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা, সুখ প্রতিপদা মন্থরাভিজ্ঞা ও সুখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা। এ’চার প্রকার প্রতিপদা। আবুসো! চার প্রকার প্রতিপদার মধ্যে কোন প্রতিপদার মাধ্যমে আপনার চিত্ত উপাদানহীন ও আস্রবসমূহ হতে বিমুক্ত হয়েছে?”
“আবুসো শারীপুত্র! প্রতিপদা চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- দুঃখ প্রতিপদা মন্থরাভিজ্ঞা, দুঃখ প্রতিপদা প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা, সুখ প্রতিপদা মন্থরাভিজ্ঞা ও সুখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা। এ’চার প্রকার প্রতিপদা। আবুসো! এ’চার প্রকার প্রতিপদার মধ্যে দুঃখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞার মাধ্যমে আমার চিত্ত উপাদানহীন ও আস্রবসমূহ হতে বিমুক্ত হয়েছে।” (সপ্তম সূত্র)
৮. সারিপুত্তসুত্তং-শারীপুত্র সূত্র
১৬৮. অতঃপর আয়ুষ্মান মহামৌদ্গল্যায়ন আয়ুষ্মান শারীপুত্রের নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে সম্বোধন করলেন। প্রীতিপূর্ণ কুশল বিনিময় করে একান্তে উপবেশন করলেন। একান্তে উপবিষ্ট মহামৌদ্গল্যায়ন আয়ুষ্মান শারীপুত্রকে এরূপ বললেন-
“হে আবুসো শারীপুত্র! প্রতিপদা চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- দুঃখ প্রতিপদা মন্থরাভিজ্ঞা, দুঃখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা, সুখ প্রতিপদা মন্থরাভিজ্ঞা ও সুখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা। এ’চার প্রকার প্রতিপদা। আবুসো! চার প্রকার প্রতিপদার মধ্যে কোন প্রতিপদার মাধ্যমে আপনার চিত্ত উপাদানহীন ও আস্রবসমূহ হতে বিমুক্ত হয়েছে?”
“আবুসো মৌদ্গল্যায়ন! প্রতিপদা চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- দুঃখ প্রতিপদা মন্থরাভিজ্ঞা, দুঃখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা, সুখ প্রতিপদা মন্থরাভিজ্ঞা ও সুখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞা। এ’চার প্রকার প্রতিপদা। আবুসো! চার প্রকার প্রতিপদার মধ্যে সুখ প্রতিপদা ক্ষিপ্র অভিজ্ঞার মাধ্যমে আমার চিত্ত উপাদানহীন ও আস্রবসমূহ হতে বিমুক্ত রয়েছে।” (অষ্টম সূত্র)
৯. সসঙ্খারসুত্তং-সসংস্কার সূত্র
১৬৯. “হে ভিক্ষুগণ! পৃৃথিবীতে চার প্রকার পুদ্গল বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- কোন পুদ্গল ইহজন্মে সসংস্কার পরিনির্বাণ (অরহত্ব) লাভ করে। কোন পুদ্গল দেহ ত্যাগের পর সসংস্কার পরিনির্বাণ লাভ করে। কোন পুদ্গল ইহজন্মে অসংস্কার পরিনির্বাণ লাভ করে। আর কোন পুদ্গল দেহ ত্যাগের পর অসংস্কার পরিনির্বাণ লাভ করে।
ভিক্ষুগণ! কিরূপে পুদ্গল ইহজন্মে সসংস্কার পরিনির্বাণ লাভ করে? এজগতে ভিক্ষু কায়ে অশুভানুদর্শী, আহারে প্রতিকুলসংজ্ঞী, সর্বলোকে অনভিরতিসংজ্ঞী ও সর্বসংস্কারে অনিত্যানুদর্শী হয়ে অবস্থান করে। তার মৃত্যুসংজ্ঞা আধ্যাত্মিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। সে পঞ্চবিধ শৈক্ষ্যবলকে উপনিশ্রয় করে অবস্থান করে, যথা- শ্রদ্ধাবল, হ্রীবল (পাপে লজ্জাবল), ঔত্তাপ্যবল (পাপে ভয়বল), বীর্যবল ও প্রজ্ঞাবল। তার শ্রদ্ধেন্দ্রিয়, বীর্যেন্দ্রিয়, স্মৃুতিন্দ্রিয়, সমাধিন্দ্রিয় ও প্রজ্ঞেন্দ্রিয় এ’পঞ্চেন্দ্রিয়সমূহ অত্যাধিকভাবে প্রাদুর্ভাব হয়। সে এ’পঞ্চেন্দ্রিয়সমূহের আধিক্যের দরুন ইহজন্মে সসংস্কার পরিনির্বাণ লাভ করে। এরূপে পুদ্গল ইহজন্মে সসংস্কার পরিনির্বাণ লাভ করে।
কিরূপে পুদ্গল দেহ ত্যাগের সসংস্কার পরিনির্বাণ লাভ করে? এজগতে ভিক্ষু কায়ে অশুভানুদর্শী, আহারে প্রতিকুলসংজ্ঞী, সর্বলোকে অনভিরতিসংজ্ঞী ও সর্বসংস্কারে অনিত্যানুদর্শী হয়ে অবস্থান করে। তার মৃত্যুসংজ্ঞা আধ্যাত্মিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। সে পঞ্চবিধ শৈক্ষ্যবলকে উপনিশ্রয় করে অবস্থান করে, যথা- শ্রদ্ধাবল, হ্রীবল (পাপের প্রতি লজ্জাবল), ঔত্তাপ্যবল (পাপে ভয়বল) বীর্যবল ও প্রজ্ঞাবল। তার শ্রদ্ধেন্দ্রিয়, বীর্যেন্দ্রিয়, স্মৃতিন্দ্রিয়, সমাধিন্দ্রিয় ও প্রজ্ঞেন্দ্রিয় এ’পঞ্চেন্দ্রিয়সমূহ মৃদু বা দুর্বলভাবে প্রার্দুভাব হয়। সে এ’পঞ্চেন্দ্রিয়সমূহের মৃদুতার দরুন দেহ ত্যাগের পর সসংস্কার পরিনির্বাণ লাভ করে। এরূপে পুদ্গল দেহ ত্যাগের পর সসংস্কার পরিনির্বাণ লাভ করে।
কিরূপে পুদ্গল ইহ জন্মে অসংস্কার পরিনির্বাণ লাভ করে? ভিক্ষুগণ! এজগতে ভিক্ষু কাম (কামনা) ও অকুশল ধর্মসমূহ হতে পৃথক হয়ে সবির্তক, সবিচার ও বিবেকজনিত প্রীতি-সুখমণ্ডিত প্রথম ধ্যান লাভ করে অবস্থান করে। বির্তক ও বিচারের উপশমে আধ্যাত্মিক সমপ্রসাদী, চিত্তের একীভাব আনয়নকারী, অবির্তক অবিচার সমাধিজনিত প্রীতি-সুখমণ্ডিত দ্বিতীয় ধ্যান লাভ করে অবস্থান করে। সে প্রীতির প্রতিও বিরাগী হওতঃ উপেক্ষাশীল হয়ে অবস্থান করে এবং স্মৃতিমান ও সমপ্রজ্ঞানী হয়ে কায়িক সুখ অনুভব করে; যে অবস্থায় থাকলে আর্যগণ ‘উপেক্ষক, স্মৃতিমান, সুখবিহারী’ বলে অভিহিত করেন সেই তৃতীয় ধ্যান লাভ করে অবস্থান করে। সর্ববিধ সুখ-দুঃখ পরিত্যাগ করে মানসিক সৌমনস্য ও দৌর্মনস্যের বিনাশ সাধন করে সুখ-দুঃখহীন ‘উপেক্ষা স্মৃতি পরিশুদ্ধি’ নামক চতুর্থ ধ্যান লাভ করে অবস্থান করে। সে পঞ্চবিধ শৈক্ষ্যবলকে উপনিশ্রয় করে অবস্থান করে, যথা-শ্রদ্ধাবল, হ্রীবল, ঔত্তাপ্যবল, বীর্যবল ও প্রজ্ঞাবল। তার শ্রদ্ধেন্দ্রিয়, বীর্যেন্দ্রিয়, স্মৃতিন্দ্রিয়, সমাধিন্দ্রিয় ও প্রজ্ঞেন্দ্রিয় এ’পঞ্চেন্দ্রিয়সমূহ অত্যাধিভাবে প্রাদুর্ভাব হয়। সে এ’পঞ্চেন্দ্রিয়সমূহের আধিক্যের দরুন ইহজন্মে অসংস্কার পরিনির্বাণ লাভ করে। এরূপেই পুদ্গল ইহজন্মে অসংস্কার পরিনির্বাণ লাভ করে।
কিরূপে পুদ্গল দেহ ত্যাগের পর অসংস্কার পরিনির্বাণ লাভ করে? এজগতে ভিক্ষু কাম (কামনা) ও অকুশল ধর্মসমূহ হতে পৃথক হয়ে সবির্তক, সবিচার ও বিবেকজনিত প্রীতি-সুখমণ্ডিত প্রথম ধ্যান লাভ করে অবস্থান করে। বির্তক ও বিচারের উপশমে আধ্যাত্মিক সমপ্রসাদী, চিত্তের একীভাব আনয়নকারী, অবির্তক অবিচার সামধিজনিত প্রীতি-সুখমণ্ডিত দ্বিতীয় ধ্যান লাভ করে অবস্থান করে। সে প্রীতির প্রতিও বিরাগী হওতঃ উপেক্ষাশীল হয়ে অবস্থান করে এবং স্মৃতিমান ও সম্প্রজ্ঞানী হয়ে কায়িক সুখ অনুভব করে; যে অবস্থায় থাকলে আর্যগণ ‘উপেক্ষক, স্মৃতিমান, সুখবিহারী’ বলে অভিহিত করেন সেই তৃতীয় ধ্যান লাভ করে অবস্থান করে। সর্ববিধ সুখ-দুঃখ পরিত্যাগ করে পূর্বেই মানসিক সৌমনস্য ও দৌর্মনস্যের বিনাশ সাধন করে সুখ-দুঃখহীন ‘উপেক্ষা স্মৃতি পরিশুদ্ধি’ নামক চতুর্থ ধ্যান লাভ করে অবস্থান করে। সে পঞ্চবিধ শৈক্ষ্যবলকে উপনিশ্রয়, করে অবস্থান করে, যথা-শ্রদ্ধাবল, হ্রীবল, ঔত্তাপ্যবল, বীর্যবল ও প্রজ্ঞাবল। তার শ্রদ্ধেন্দ্রিয়, বীর্যেন্দ্রিয়, স্মৃতিন্দ্রিয়, সমাধিন্দ্রিয় ও প্রজ্ঞেন্দ্রিয় এ’পঞ্চেন্দ্রিয়সমূহ মৃদু বা দুর্বলভাবে প্রাদুর্ভাব হয়। সে এ’পঞ্চেন্দ্রিয়সমূহের মৃদুতার দরুন দেহ ত্যাগের পর অসংস্কার পরিনির্বাণ লাভ করে। এরূপেই পুদ্গল দেহ ত্যাগের পর অসংস্কার পরিনির্বাণ লাভ করে। ভিক্ষুগণ! পৃথিবীতে চার প্রকার পুদ্গল বিদ্যমান।” (নবম সূত্র)
১০. যুগনদ্ধসুত্তং-সুমানঞ্জস্য সূত্র
১৭০. আমি এরূপ শুনেছি- এক সময় আয়ুষ্মান আনন্দ কৌশাম্বির ঘোষিতারামে অবস্থান করছিলেন। তথায় আয়ুষ্মান আনন্দ “আবুসো ভিক্ষুগণ” বলে ভিক্ষুগণকে আহ্বান করলেন। সেই ভিক্ষুগণও “হ্যাঁ আবুসো” বলে আয়ুষ্মান আনন্দের আহ্বানে প্রত্যুত্তর দিলেন। তখন আয়ুষ্মান আনন্দ এরূপ বললেন- “হে আবুসোগণ! যে ভিক্ষু বা ভিক্ষুণী আমার কাছে অরহত্ব প্রাপ্তির বিষয় বলে থাকে, সে চারিমার্গের মধ্যে যে কোন এক মার্গের দ্বারা অরহত্ব প্রাপ্ত হয়েছে।
সেই চার প্রকার কি কি? এজগতে ভিক্ষু পূর্বে শমথ ভাবনা করতঃ বিদর্শন ভাবনা ভাবিত করে। পূর্বে শমথ ভাবনা করতঃ বিদর্শন ভাবনা ভাবিত করায় তার মার্গ উৎপন্ন হয়। সে সেই মার্গ অভ্যাস, ভাবিত ও বহুলীকৃত করে। তার সেই মার্গ অভ্যাসকৃত, ভাবিত ও বহুলীকৃত হওয়ায় সংযোজনসমূহ প্রহীন হয় এবং অনুশয়সমূহ ধ্বংস হয়।
পুনঃ, আবুসোগণ! ভিক্ষু পূর্বে বিদর্শন ভাবনা করতঃ শমথ ভাবনা ভাবিত করে। পূর্বে বিদর্শন ভাবনা করতঃ শমথ ভাবনা ভাবিত করায় তার মার্গ উৎপন্ন হয়। সে সেই মার্গ অভ্যাস করে, ভাবিত ও বহুলীকৃত করে। তার সেইমার্গ অভ্যাসকৃত, ভাবিত ও বহুলীকৃত হওয়ায় সংযোজনসমূহ প্রহীন হয় এবং অনুশয়সমূহ ধ্বংস হয়।
পুনঃ, ভিক্ষু শমথ ও বিদর্শন এই উভয় ভাবনা একসঙ্গে ভাবিত করে। শমথ ও বিদর্শন ভাবনা একসঙ্গে ভাবিত হয়ে তার মার্গ উৎপন্ন হয়। সে সেই মার্গ অভ্যাস করে, ভাবিত ও বহুলীকৃত করে। তার সেই মার্গ অভ্যাসকৃত, ভাবিত ও বহুলীকৃত হয়ে সংযোজনসমূহ প্রহীন হয় এবং অনুশয়সমূহ ধ্বংস হয়।
পুনঃ, ভিক্ষুর মন হতে ধর্মসম্বন্ধীয় সন্দেহ দূরীভূত হয়। সেসময় তার চিত্ত আধ্যাত্মিকভাবে স্থির হয়, সুস্থির হয়, একীভূত হয় ও সমাধিস্থ হয়। তার মার্গ উৎপন্ন হয়। সে সেই মার্গ অভ্যাস করে, ভাবিত ও বহুলীকৃত করে। তার সেই মার্গ অভ্যাসকৃত, ভাবিত ও বহুলীকৃত হওয়ায় সংযোজনসমূহ প্রহীন হয় এবং অনুশয়সমূহ ধ্বংস হয়।
আবুসোগণ! যেই ভিক্ষু বা ভিক্ষুণী আমার নিকট অরহত্ব প্রাপ্তির বিষয় বলে থাকে, সে এই চার মার্গের যে কোন এক মার্গের দ্বারা অরহত্বপ্রাপ্ত হয়েছে।” (দশম সূত্র)
প্রতিপদা বর্গ সমাপ্ত।
স্মারক গাথা ঃ
সংক্ষিপ্ত, বিস্তার, অশুভ, দুই ক্ষমাশীল উভয় সূত্র;
মৌদ্গল্যায়ন, শারীপুত্র, সসংস্কার ও সুসামঞ্জস্য দশ।