১. কেসিসুত্তং-কেসি সূত্র
১১১. একসময় অশ্ব দমনকারী সারথি কেসি ভগবানের নিকট উপস্থিত হলেন। উপস্থিত হয়ে ভগবানকে অভিবাদন করতঃ একপার্শ্বে উপবেশন করলেন। তখন ভগবান উপবিষ্ট কেসিকে এরূপ বললেন-
“কেসি! তোমাকে তো প্রসিদ্ধ অশ্ব দমনকারী বলা হয়। তুমি কিভাবে অদমিত অশ্বকে দমন কর?” “ভন্তে! আমি অদমিত অশ্বকে আস্তে আস্তে দমন করি; কঠোরভাবে দমন করি; আস্তে আস্তে এবং কঠোরভাবে দমন করি।” “কেসি! যদি তোমার অদমিত অশ্ব আস্তে আস্তে দমনে দমিত না হয়; কঠোরভাবে দমনে দমিত না হয়; আস্তে আস্তে এবং কঠোরভাবে দমনে দমিত না হয়, তাহলে সেই অশ্বকে কি কর?” “ভন্তে! আমার অদমিত অশ্ব যদি আস্তে আস্তে দমনে দমিত না হয়; কঠোরভাবে দমনে দমিত না হয়; আস্তে আস্তে এবং কঠোরভাবে দমনে দমিত না হয়, তাহলে আমি সেই অশ্বকে হত্যা করি। তার কারণ কি? আমার আচার্যকুলের নিন্দা করা হবে বলে।”
“ভন্তে! ভগবানকে তো পুরুষদমনকারী সারথি বলা হয়। ভগবান কিভাবে অদম্য পুরুষকে দমন করেন?” “কেসি! আমি অদম্য পুরুষকে আস্তে আস্তে দমন করি; কঠোরভাবে দমন করি; আস্তে আস্তে এবং কঠোরভাবে দমন করি। তন্মধ্যে আস্তে আস্তে দমন এরূপ- এটি কায় সুচরিত, কায় সুচরিতের এ’ফল; এটি বাক সুচরিত, বাক সুচরিতের এ’ফল; এটি মনো সুচরিত, মনো সুচরিতের এ’ফল; এরূপে দেবলোকে উৎপন্ন হওয়া যায়; এরূপে মনুষ্যলোকে জন্ম লাভ হয়। কঠোরভাবে দমন এরূপ- এটি কায় দুশ্চরিত, কায় দুশ্চরিতের এ’ফল; এটি বাক দুশ্চরিত, বাক দুশ্চরিতের এ’ফল; এটি মনো দুশ্চরিত, মনো দুশ্চরিতের এ’ফল; এরূপে নিরয়ে উৎপন্ন হয়; এরূপে তির্যককুলে গমন করে; এরূপে প্রেতলোকে গমন করে।”
“কেসি! আস্তে আস্তে এবং কঠোরভাবে দমন এরূপ- এটি কায় সুচরিত, কায় সুচরিতের এ’ফল; এটি কায় দুশ্চরিত, কায় দুশ্চরিতের এ’ফল; এটি বাক সুচরিত, বাক সুচরিতের এ’ফল; এটি বাক দুশ্চরিত; বাক দুশ্চরিতের এ’ফল; এটি মনো সুচরিত, মনো সুচরিতের এ’ফল; এটি মনো দুশ্চরিত, মনো দুশ্চরিতের এ’ফল; এরূপে দেবলোকে উৎপন্ন হওয়া যায়, এরূপে মনুষ্যলোকে জন্ম লাভ হয়; এরূপে নিরয়ে উৎপন্ন হয়, এরূপে তির্যককুলে গমন করে, এরূপে প্রেতলোকে গমন করে।”
“ভন্তে! আপনার অদম্য পুরুষ যদি আস্তে আস্তে দমনে দমিত না হয়, কঠোরভাবে দমনে দমিত না হয়, আস্তে আস্তে এবং কঠোরভাবে দমনে দমিত না হয়, তাহলে তাকে কি করেন?” “কেসি! যদি আমার অদম্য পুরুষ আস্তে আস্তে দমনে দমিত না হয়, কঠোরভাবে দমনে দমিত না হয়, আস্তে আস্তে এবং কঠোরভাবে দমনে দমিত না হয়, তাহলে আমি তাকে বধ করি।” “ভন্তে! ভগবানের পক্ষে তো প্রাণীহত্যা করা অসম্ভব, অথচ ভগবান এরূপ বলছেন- ‘কেসি, আমি তাকে বধ করি।” “সত্যই, কেসি! তথাগতের পক্ষে প্রাণীহত্যা করা অসম্ভব। তবুও যেই অদম্য পুরুষ আস্তে আস্তে দমিত হয় না, কঠোরভাবে দমিত হয় না, আস্তে আস্তে এবং কঠোরভাবে দমিত হয় না; তথাগত তাকে বলা, অনুশাসন করা উচিত বলে মনে করেন না। এবং বিজ্ঞ সব্রহ্মচারীগণও তাকে বলা, অনুশাসন করা উচিত মনে করে না। আর্য বিনয়ে সেই পুরুষ মৃত- যাকে তথাগত বলা, অনুশাসন করা উচিত মনে করেন না এবং বিজ্ঞ সব্রহ্মচারীগণও বলা, অনুশাসন করা উচিত মনে করে না।”
“ভন্তে! সত্যিই সেই পুরুষ মৃত- যাকে তথাগত বলা, অনুশাসন করা উচিত মনে করেন না এবং বিজ্ঞ সব্রহ্মচারীগণও বলা, অনুশাসন করা উচিত মনে করেন না।
ভন্তে, খুবই আশ্চর্য! খুবই অদ্ভুত! যেমন অধোমুখী পাত্রকে উর্ধ্বমুখী করা হয়, আচ্ছাদিত বস্তুকে উন্মুক্ত করা হয়, পথভ্রষ্টকে পথ দেখানো হয়, চক্ষুষ্মান রূপ দেখবার জন্য তৈল প্রদীপ ধারণ করা হয়, তেমনিভাবে তথাগত কর্তৃক অনেক প্রকারে ধর্ম প্রকাশিত হয়েছে। আমি ভগবানের শরণ, তাঁর ধর্মের এবং ভিক্ষুসঙ্ঘের শরণ গ্রহণ করতেছি। আজ হতে জীবনের শেষকাল পর্যন্ত আমাকে আপনার শরণাগত উপাসক হিসেবে গ্রহণ করুন।” (প্রথম সূত্র)
২. জবসুত্তং-দ্রুতগতি সূত্র
১১২. “হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার গুণে সমন্বিত ভদ্র আজানেয় অশ্ব রাজার যোগ্য, রাজভোগ্য এবং রাজার উপযুক্ত বলে পরিগণিত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- মন্থরগতি, দ্রুতগতি, ধৈর্য, সংযম। এ’চার প্রকার গুণে সমন্বিত ভদ্র আজানেয় অশ্ব রাজার যোগ্য, রাজভোগ্য এবং রাজার উপযুক্ত বলে পরিগণিত হয়।
ভিক্ষুগণ, ঠিক এভাবেই চার ধর্মে সমন্বিত ভিক্ষু আহ্বানের যোগ্য, পূজা পাবার যোগ্য, দক্ষিণা পাবার যোগ্য, অঞ্জলি পাবার যোগ্য এবং ত্রিলোকের অনুত্তর পুণ্যক্ষেত্র। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- মন্থরগতি, দ্রুতগতি, ক্ষান্তি, সংযম। এ’চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ভিক্ষু আহ্বানের যোগ্য, পূজা পাবার যোগ্য, দক্ষিণা পাবার যোগ্য, অঞ্জলি পাবার জন্য এবং ত্রিলোকের অনুত্তর পুণ্যক্ষেত্র।” (দ্বিতীয় সূত্র)
৩. পতোদসুত্তং-চাবুক সূত্র
১১৩. “হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ভদ্র আজানেয় অশ্ব জগতে বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- এজগতে কোন ভদ্র আজানেয় অশ্ব চাবুকের ছায়া দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে- কি কারণে সারথি আজ আমার প্রতি এরূপ ব্যবহার করছে, আমি কী-ই-বা তার বিরুদ্ধ কার্য করছি। এজগতে কোন ভদ্র আজানেয় অশ্ব এরূপ হয়। এ’প্রথম ভদ্র আজানেয় অশ্ব জগতে বিদ্যমান।
পুুনঃ, এজগতে কোন ভদ্র আজানেয় অশ্ব চাবুকের ছায়া দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে না, কিন্তু লোমে আঘাত পেলে উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে- কি কারণে সারথি আজ আমার প্রতি এরূপ ব্যবহার করছে, আমি কী-ই-বা তার বিরুদ্ধ কার্য করেছি। এজগতে কোন ভদ্র আজানেয় অশ্ব এরূপ হয়। এ’দ্বিতীয় ভদ্র আজানেয় অশ্ব জগতে বিদ্যমান।
পুনঃ, এজগতে কোন ভদ্র আজানেয়ে অশ্ব চাবুকের ছায়া দেখে কিংবা লোমে আঘাত পেলে উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে না, কিন্তু চর্মে আঘাত পেলে উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে- কি কারণে সারথি আজ আমার প্রতি এরূপ ব্যবহার করছে, আমি কী-ই-বা তার বিরুদ্ধ কার্য করেছি। এজগতে কোন ভদ্র আজানেয় অশ্ব এরূপ হয়। এ’তৃতীয় ভদ্র আজানেয় অশ্ব জগতে বিদ্যমান।
পুনঃ, এজগতে কোন ভদ্র আজানেয় অশ্ব চাবুকের ছায়া দেখে, লোমে কিংবা চর্মে আঘাত পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে না, কিন্তু অস্থিতে আঘাত পেলে উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে- কি কারণে সারথি আজ আমার প্রতি এরূপ ব্যবহার করছে, আমি কী-ই-বা তার বিরুদ্ধ কার্য করছি। এজগতে কোন ভদ্র আজানেয় অশ্ব এরূপ হয়। এ’চতুর্থ ভদ্র আজানেয় অশ্ব জগতে বিদ্যমান।
ভিক্ষুগণ! ঠিক এরূপে জগতে চার প্রকার শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ বিদ্যমান। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- এজগতে কোন শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ শুনে যে- “অমুক গ্রামে বা নিগমে স্ত্রী বা পুরুষ দুঃখিত বা কালপ্রাপ্ত। তদ্বারা সে উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে। সংবেগে উদ্যমী হয়ে একাগ্রচিত্তে কায়ানুদর্শনে পরম সত্য সাক্ষাৎ করে এবং প্রজ্ঞা দ্বারা তন্ন তন্ন করে দেখে। যেমন সেই ভদ্র আজানেয় অশ্ব চাবুকের ছায়া দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে। এশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষকে আমি তাদৃশ-ই বলি। জগতে কোন শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ এরূপ হয়। এই প্রথম শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ জগতে বিদ্যমান।
পুনঃ, এজগতে কোন শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ শুনে যে- “অমুক গ্রামে বা নিগমে স্ত্রী বা পুরুষ দুঃখিত বা কালপ্রাপ্ত। তদ্বারা সে উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে না, সংবেগে উদ্যমী হয়ে একাগ্রচিত্তে কায়ানুদর্শনে পরম সত্য সাক্ষাৎ করে না এবং প্রজ্ঞা দ্বারা তন্ন তন্ন করে দেখে না। কিন্তু সে স্বয়ং দুঃখিত বা কালপ্রাপ্ত স্ত্রী বা পুরুষকে দেখলে উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে, সংবেগে উদ্যমী হয়ে একাগ্রচিত্তে কায়ানুদর্শনে পরম সত্য সাক্ষাৎ করে এবং প্রজ্ঞা দ্বারা তন্ন তন্ন করে দেখে। যেমন ভদ্র আজানেয় অশ্ব চাবুকের ছায়া দেখে উদ্বিগ্ন না হলেও লোমে আঘাত পেলে উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে। এ’শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষকে আমি তাদৃশ বলি। জগতে কোন শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ এরূপ হয়। এই দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ জগতে বিদ্যমান।
পুনঃ, এজগতে কোন শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ শুনে যে- ‘অমুক গ্রামে বা নিগমে স্ত্রী বা পুরুষ দুঃখিত বা কালপ্রাপ্ত, অথবা সে নিজে দুঃখিত বা কালপ্রাপ্ত স্ত্রী বা পুরুষ দেখে তদ্বারা উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে না। সংবেগে উদ্যমী হয়ে একাগ্রচিত্তে কায়ানুদর্শনে পরম সত্য সাক্ষাৎ করে না, প্রজ্ঞা দ্বারা তন্ন তন্ন করে দেখে না। কিন্তু তার জ্ঞাতি, আত্মীয়-স্বজন দুঃখিত বা কালপ্রাপ্ত হলে তদ্বারা উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে, সংবেগে উদ্যমী হয়ে একাগ্রচিত্তে কায়ানুদর্শনে পরম সত্য সাক্ষাৎ করে, প্রজ্ঞা দ্বারা তন্ন তন্ন করে দেখে। যেমন ভদ্র আজানেয় অশ্ব চাবুকের ছায়া কিংবা লোমে আঘাত পেয়ে উদ্বিগ্ন না হলেও চর্মে আঘাত পেলে উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে। এ’শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষকে আমি তাদৃশ বলি। জগতে কোন শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ এরূপ হয়। এই তৃতীয় শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ জগতে বিদ্যমান।
পুনঃ, এজগতে কোন শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ শুনে যে- ‘অমুক গ্রামে বা নিগমে স্ত্রী বা পুরুষ দুঃখিত বা কালপ্রাপ্ত’, অথবা সে নিজে দুঃখিত বা কালপ্রাপ্ত কোন স্ত্রী বা পুরুষ দেখে, অথবা তার জ্ঞাতি, আত্মীয়-স্বজন দুঃখিত বা কালপ্রাপ্ত হয়, তদ্বারা সে উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে না, সংবেগে উদ্যমী হয়ে একাগ্রচিত্তে কায়ানুদর্শনে পরম সত্য সাক্ষাৎ করে না, প্রজ্ঞা দ্বারা তন্ন তন্ন করে না। কিন্তু স্বয়ং নিজে তীব্র রুক্ষ, তিক্ত শারীরিক দুঃখ বেদনা এবং অনোজ্ঞ, সাংঘাতিক মানসিক যন্ত্রণায় জর্জরিত হলে তদ্বারা উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে, সংবেগে উদ্যমী হয়ে একাগ্রচিত্তে কায়ানুদর্শনে পরম সত্য সাক্ষাৎ করে, প্রজ্ঞা দ্বারা তন্ন তন্ন করে দেখে। যেমন, ভদ্র আজানেয় অশ্ব চাবুকের ছায়া দেখে, লোমে আঘাত পেয়ে কিংবা চর্মে আঘাত পেয়ে উদ্বিগ্ন না হলেও অস্থিতে আঘাত পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে সংবেগ উৎপন্ন করে। এ’শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষকে আমি তাদৃশ বলি। জগতে কোন শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ এরূপ হয়। এই চতুর্থ শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ জগতে বিদ্যমান।
ভিক্ষুগণ, জগতে এই চার প্রকার শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ বিদ্যমান।” (তৃতীয় সূত্র)
৪. নাগসুত্তং-হস্তী সূত্র
১১৪. “হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার গুণে সমন্বিত রাজহস্তী রাজার যোগ্য, রাজভোগ্য এবং রাজার উপযুক্ত বলে পরিগণিত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- এজগতে রাজহস্তী শ্রবণকারী হয়, হত্যাকারী হয়, সহিষ্ণু হয়, দ্রুত গমনকারী হয়।
কিরূপে রাজহস্তী শ্রবণকারী হয়? এজগতে হস্তী দমনকারী সারথি রাজহস্তীকে যা করতে বলে- ‘পূর্বে কৃত হোক বা না হোক,’ হস্তী তা’ উত্তমরূপে শ্রবণ করে (বা মেনে চলে)। এরূপে রাজহস্তী শ্রবণকারী হয়।
কিরূপে রাজহস্তী হত্যাকারী হয়? এজগতে যুদ্ধরত রাজহস্তী হস্তী হত্যা করে, হস্তীতে আরোহী সৈন্য হত্যা করে; ঘোড়া হত্যা করে, ঘোড়ায় আরোহী সৈন্য হত্যা করে; রথ ধ্বংস করে, রথে আরোহী সৈন্য হত্যা করে এবং পদাতিক সৈন্য হত্যা করে। এরূপে রাজহস্তী হত্যাকারী হয়।
কিরূপে রাজহস্তী সহিষ্ণু হয়? এজগতে যুদ্ধরত রাজহস্তী বর্শার আঘাত, অসির আঘাত, তীরের আঘাত, কুঠারের আঘাত এবং রণ ঢোল, শঙ্খ-মৃদঙ্গের উচ্চ শব্দ সহ্য করে। এরূপে রাজহস্তী সহিষ্ণু হয়।
কিরূপে রাজহস্তী দ্রুত গমনকারী হয়? এজগতে হস্তী দমনকারী সারথি রাজহস্তীকে যেদিকে পরিচালনা করে- সামনে হোক বা পিছনে হোক, দ্রুত সেদিকে গমন করে। এরূপে রাজহস্তী দ্রুত গমনকারী হয়। এ’চার অঙ্গে সমন্বিত রাজহস্তী রাজার যোগ্য, রাজভোগ্য এবং রাজার উপযুক্ত বলে পরিগণিত হয়।
ভিক্ষুগণ! ঠিক এভাবে চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ভিক্ষু আহ্বানের যোগ্য, পূজা পাবার যোগ্য, দক্ষিণা পাবার যোগ্য, অঞ্জলি পাবার যোগ্য এবং ত্রিলোকের অনুত্তর পুণ্যক্ষেত্র। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- এজগতে ভিক্ষু শ্রবণকারী হয়, হত্যাকারী হয়, সহিষ্ণু এবং দ্রুত গমনকারী হয়।
কিরূপে ভিক্ষু শ্রবণকারী হয়? এজগতে ভিক্ষু তথাগতের প্রচারিত, দেশিত ধর্ম বিনয়কে জ্ঞাত হতে মনে-প্রাণে, একাগ্রতা ও মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করে। এরূপে ভিক্ষু শ্রবণকারী হয়।
কিরূপে ভিক্ষু হত্যাকারী হয়? এজগতে ভিক্ষু উৎপন্ন কাম বির্তক গ্রহণ করে না বরং উহাকে পরিত্যাগ, অপনোদন করে; সমূলে বিনষ্ট করে, (যাতে পুনরুৎপন্ন হতে না পারে তজ্জন্য) সম্পূর্ণ নিবৃত্তি করে। উৎপন্ন ব্যাপাদ বির্তক গ্রহণ করে না বরং উহাকে পরিত্যাগ, অপনোদন করে; সমূলে বিনষ্ট করে, সম্পূর্ণ নিবৃত্তি করে। উৎপন্ন বিহিংসা বির্তক গ্রহণ করে না বরং উহাকে পরিত্যাগ, অপনোদন করে; সমূলে বিনষ্ট করে, সম্পূর্ণ নিবৃত্তি করে। উৎপন্ন-অনুৎপন্ন অকুশল পাপধর্ম গ্রহণ করে না বরং উহাকে পরিত্যাগ, অপনোদন করে; সমূলে বিনষ্ট করে, সম্পূর্ণ নিবৃত্তি করে। এরূপে ভিক্ষু হত্যাকারী হয়।
কিরূপে ভিক্ষু সহিষ্ণু হয়? এজগতে ভিক্ষু শীত-উষ্ণ, ক্ষুধা-পিপাসা, ডংশক-মশক, বায়ুতাপ, সরীসৃপ-বৃশ্চিকাদির আক্রমণ সহ্য করে; অপরের নিন্দাবাক্য, অনাদর, কুযুক্তি ও উৎপন্ন শারীরিক তীব্র, কটু, তিক্ত বিরক্তিকর দৈহিক যন্ত্রণা এবং অমনোজ্ঞ, সাংঘাতিক, প্রাণহরণকর মানসিক যন্ত্রণায় সহনশীল, ধৈর্যশীল হয়। এরূপে ভিক্ষু সহিষ্ণু হয়।
কিরূপে ভিক্ষু দ্রুত গমনকারী হয়? যেমন, কোন ব্যক্তি ইতিপূর্বে দীর্ঘক্ষণ ধীর গতিতে চলার পর দ্রুত গতিতে গমন করে ঠিক তেমনি, এজগতে ভিক্ষু সব সংস্কার উপশম, সব আসক্তি পরিত্যাগ, তৃষ্ণা ক্ষয়, বিরাগ, নিরোধ করে দ্রুত নির্বাণলাভী হয়- সেই দ্রুত গমনকারী মতো। এরূপে ভিক্ষু দ্রুত গমনকারী হয়।
ভিক্ষুগণ! এই চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ভিক্ষু আহ্বানের যোগ্য, পূজা পাবার যোগ্য, দক্ষিণা পাবার যোগ্য, অঞ্জলি পাবার যোগ্য এবং ত্রিলোকের অনুত্তর পুণ্যক্ষেত্র।” (চতুর্থ সূত্র)
৫. ঠানসুত্তং-বিষয় সূত্র
১১৫. “হে ভিক্ষুগণ! বিষয় চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- এমন কিছু বিষয় আছে, যেখানে কিছু করা অপছন্দনীয়। তথায় কিছু করতে গেলে অনর্থের জন্ম হয়। এমন কিছু বিষয় আছে, যেখানে কিছু করা অপছন্দনীয়। অথচ তথায় কিছু করলে কল্যাণকর হয়। এমন কিছু বিষয় আছে, যেখানে কিছু করা পছন্দনীয়। অথচ তথায় কিছু করতে গেলে অনর্থের জন্ম হয়। এমন কিছু বিষয় আছে, যেখানে কিছু করা পছন্দনীয়। এবং তথায় কিছু করলে কল্যাণ হয়।
হে ভিক্ষুগণ! যে বিষয়ে কিছু করা অপছন্দনীয়; তেমন বিষয়ে কিছু করলে যদি অনর্থের কারণ হয়ে থাকে, সে বিষয় উভয় ক্ষেত্রেই বর্জনীয় বলে জানা কর্তব্য। যে বিষয়ে কিছু করা অপছন্দনীয়, তেমন বিষয়ে কিছু করা অকর্তব্য বলে মনে করি। যদি সেই বিষয়ে কিছু করলে অনর্থের জন্ম হতে পারে বলে মনে হয়, তেমন বিষয়ে কিছু না করাই কর্তব্য।
যে বিষয়ে কিছু করা অপছন্দনীয়, তথায় কিছু করলে যদি কল্যাণ জনক হয়। সে বিষয়ে জ্ঞানী, অজ্ঞানী উভয়েই জানা কর্তব্য যে পুরুষের বীর্য-পরাক্রমতা দ্বারা তার সম্পাদন কর্তব্য। অজ্ঞানীদের পক্ষে এরূপ ধারণা শিক্ষা করা সম্ভব নহে যে, কিছু বিষয় অপছন্দনীয় হলেও তথায় কিছু করা কল্যাণ করই হয়ে থাকে। তাই অজ্ঞানী সে বিষয়ে কিছু করা থেকে বিরত থাকে। জ্ঞানী ব্যক্তির এরূপ ধারণা শিক্ষা করা সম্ভব যে, এই বিষয়ে কিছু করা কষ্টকর হলেও যদি তাতে কিছু করি তাহলে সদর্থকর হবে। তাই জ্ঞানী তথায় কিছু করে এবং তদ্বারা তথায় (কিছু করাতে) সদর্থই থাকে।
যে বিষয়ে কিছু করা সহজতর বটে, কিন্তু তথায় কিছু করাতে অনর্থ সাধিত হয়। এমন বিষয়ে জ্ঞানী, অজ্ঞানীর উভয়ের জানা কর্তব্য যে, সেখানেও পুরুষ বীর্য-পরাক্রমতা প্রয়োজন। কিন্তু অজ্ঞানী পক্ষে এরূপ ধারণা শিক্ষা করা সম্ভব নয় যে, এ’বিষয়ে কিছু করা সহজ বটে অথচ তদ্বারা অকল্যাণেরই জন্ম হবে। এ’বিষয়ে না জেনে সে যেখানে কিছু করে, তাতে অকল্যাণের জন্ম হয়। জ্ঞানী ব্যক্তির এ’শিক্ষা করে, এরূপ জানে যে, এ’বিষয়ে কিছু করা কষ্টকর বটে কিন্তু সেখানে কিছু করলে তাতে অকল্যাণের জন্ম হবে; তাই সে সেই বিষয়ে কিছু করে না। তার এই না করার কারণে তথায় সদর্থই হয়ে থাকে। এখানে উভয় ক্ষেত্রে কিছু করা কর্তব্য তাহলে সদর্থকর হবে।
যে বিষয়ে কিছু করা পছন্দনীয়; তেমন বিষয়ে কিছু করলে যদি অর্থের কারণ হয়ে থাকে, সে বিষয় উভয় ক্ষেত্রেই গ্রহণীয় বলে জানা কর্তব্য। যে বিষয়ে কিছু করা পছন্দনীয়, তেমন বিষয়ে কিছু করা কর্তব্য বলে মনে করি। যদি সেই বিষয়ে কিছু করলে অর্থের জন্ম হতে পারে বলে মনে হয়, তেমন বিষয়ে কিছু করাই কর্তব্য। ভিক্ষুগণ, এই চার প্রকার বিষয়।” (পঞ্চম সূত্র)
৬. অপ্পমাদসুত্তং-অপ্রমাদ সূত্র
১১৬. “হে ভিক্ষুগণ! চারটি বিষয়ে অপ্রমত্ত হওয়া কর্তব্য বা উচিত। সেই চার বিষয় কি কি? যথা- ভিক্ষুগণ, তোমরা কায় দুশ্চরিত ত্যাগ কর, কায় সুচরিত বৃদ্ধি কর এবং তথায় অপ্রমত্ত হও; বাক দুশ্চরিত ত্যাগ কর, বাক সুচরিত বৃদ্ধি কর এবং তথায় অপ্রমত্ত হও; মন দুশ্চরিত ত্যাগ কর, মন সুচরিত বৃদ্ধি কর এবং তথায় অপ্রমত্ত হও; মিথ্যাদৃষ্টি ত্যাগ কর, সম্যকদৃষ্টি বৃদ্ধি কর এবং তথায় অপ্রমত্ত হও।
যখন ভিক্ষুর কায় দুশ্চরিত প্রহীন হয়, কায় সুচরিত বৃদ্ধি পায়; বাক দুশ্চরিত প্রহীন হয়, বাক সুচরিত বৃদ্ধি পায়; মনো দুশ্চরিত প্রহীন হয়, মনো সুচরিত বৃদ্ধি পায়; মিথ্যাদৃষ্টি প্রহীন হয়, সম্যকদৃষ্টি বৃদ্ধি পায়; তখন সেই ভিক্ষু মৃত্যুকে ভয় করে না।” (ষষ্ঠ সূত্র)
৭. আরক্খসুত্তং-রক্ষা সূত্র
১১৭. “হে ভিক্ষুগণ! চারটি বিষয়ে স্বীয় মঙ্গলার্থে অপ্রমত্ত চিত্তে স্মৃতি রক্ষা করা উচিত। সেই চারটি কি কি? যথা- ‘কামোদ্দীপক ধর্মসমূহে আমার চিত্ত অনুরক্ত হয়নি’ বলে স্বীয় মঙ্গলার্থে অপ্রমত্ত চিত্তে স্মৃতি রক্ষা করা উচিত। ‘হিংসা উৎপাদক ধর্মসমূহে আমার চিত্ত প্রদুষ্ট হয়নি’ বলে স্বীয় মঙ্গলার্থে অপ্রমত্ত চিত্তে স্মৃতি রক্ষা করা উচিত। ‘মোহ উৎপাদক ধর্মসমূহে আমার চিত্ত মোহিত হয়নি’ বলে স্বীয় মঙ্গলার্থে অপ্রমত্ত চিত্তে স্মৃতি রক্ষা করা উচিত। ‘মত্ততাজনক ধর্মসমূহে আমার চিত্ত উন্মত্ত হয়নি’ বলে স্বীয় মঙ্গলার্থে অপ্রমত্ত চিত্তে স্মৃতি রক্ষা করা উচিত।
যখন ভিক্ষুর চিত্ত কামোদ্দীপক ধর্মসমূহে অনুরক্ত না হয়ে আসক্তিহীন হয়; হিংসা উৎপাদক ধর্মসমূহে প্রদুষ্ট না হয়ে দ্বেষহীন হয়; মোহ উৎপাদক ধর্মসমূহে মোহিত না হয়ে মোহহীন হয়; মত্ততাজনক ধর্মসমূহে উন্মত্ত না হয়ে উন্মত্তহীন হয়; তখন সেই ভিক্ষু ভীত, কম্পিত, বিচলিত, ত্রাসিত হয় না এবং শ্রমণবচন হেতুতে সেরূপ স্থানে গমন করে না।” (সপ্তম সূত্র)
৮. সংবেজনীযসুত্তং-আবেগজনক সূত্র
১১৮. “হে ভিক্ষুগণ! শ্রদ্ধাসম্পন্ন কুলপুত্রের নিকট চারটি স্থান আবেগজনক, দর্শনীয়। সেই চারটি স্থান কি কি? যথা- ‘এস্থানে তথাগত জন্মগ্রহণ করেছেন’ বলে তথাগতের জন্ম স্থান শ্রদ্ধাসম্পন্ন কুলপুত্রের নিকট আবেগজনক, দর্শনীয় স্থান। ‘এস্থানে তথাগত বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভ করেছেন’ বলে তথাগতের বুদ্ধত্ত্ব লাভ স্থান শ্রদ্ধাসম্পন্ন কুলপুত্রের নিকট আবেগজনক, দর্শনীয় স্থান। ‘এস্থানে তথাগত অনুত্তর ধর্মচক্র প্রবর্তন করেছেন’ বলে তথাগতের ধর্মচক্র প্রবর্তন স্থান শ্রদ্ধাসম্পন্ন কুলপুত্রের নিকট আবেগজনক, দর্শনীয় স্থান। ‘এস্থানে তথাগত অনুপাদিশেষ নির্বাণ ধাতুতে পরিনির্বাপিত হয়েছে’ বলে তথাগতের পরিনির্বাণের স্থান শ্রদ্ধাসম্পন্ন কুলপুত্রের নিকট আবেগজনক, দর্শনীয় স্থান।
ভিক্ষুগণ, এই চারটি স্থান শ্রদ্ধাসম্পন্ন কুলপুত্রের নিকট আবেগজনক, দর্শনীয় স্থান। (অষ্টম সূত্র)
৯. পঠমভযসুত্তং-ভয় সূত্র (প্রথম)
১১৯. “হে ভিক্ষুগণ! ভয় চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- জন্ম ভয়, জরা ভয়, ব্যাধি ভয়, মরণ ভয়। এগুলোই চার প্রকার ভয়।” (নবম সূত্র)
১০.দুতিযভযসুত্তং-ভয় সূত্র (দ্বিতীয়)
১২০. “হে ভিক্ষুগণ! ভয় চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- অগ্নি ভয়, জল ভয়, রাজ ভয়, চোর ভয়। এগুলোই চার প্রকার ভয়।” (দশম সূত্র)
কেসি বর্গ সমাপ্ত
স্মারক গাথা-
কেসি, দ্রুতগতি, চাবুক, হস্তী, বিষয়সহ পাঁচ,
অপ্রমাদ, রক্ষা, আবেগজনক, দু’ভয় মিলে দশ।”