(২৭) ৭. কম্মপথবগ্গো-কর্মপথ বর্গ

১. পাণাতিপাতীসুত্তং-প্রাণীহত্যাকারী সূত্র

২৬৪. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে প্রাণীহত্যাকারী হয়, অপরকেও প্রাণীহত্যা করার জন্য উৎসাহিত করে, প্রাণীহত্যার অনুমোদনকারী হয় এবং প্রাণীহত্যার গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়।

‘‘ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে প্রাণীহত্যা হতে বিরত হয়, অপরকেও প্রাণীহত্যা হতে বিরত থাকার জন্য উৎসাহিত করে, প্রাণীহত্যা হতে বিরত হওয়ার অনুমোদনকারী বা সম্মতি প্রদানকারী হয় এবং প্রাণীহত্যা হতে বিরত হওয়ার গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে।’’ (প্রথম সূত্র)

২. অদিন্নাদাযীসুত্তং-অদত্তবস্তুগ্রহণকারী সূত্র

২৬৫. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে অদত্তবস্তুগ্রহণকারী হয়, অপরকেও অদত্ত বস্তু গ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করে, অদত্ত বস্তু গ্রহণ করার জন্য অনুমোদনকারী হয় এবং অদত্ত বস্তু গ্রহণ করার গুণ ভাষণ করে। এ’চার প্রকার ধর্মে সমৃদ্ধ ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়।

ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে অদত্ত বস্তু গ্রহণ হতে বিরত হয়, অপরকেও অদত্ত বস্তু গ্রহণ হতে বিরত থাকার জন্য উৎসাহিত করে, অদত্ত বস্তু গ্রহণ হতে বিরত থাকার জন্য সম্মতি প্রদানকারী হয় এবং অদত্ত বস্তু গ্রহণ হতে বিরত হওয়ার গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে। (দ্বিতীয় সূত্র)

৩. মিচ্ছাচারীসুত্তং-মিথ্যাচারী সূত্র

২৬৬. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে মিথ্যাকামাচারী হয়, অপরকেও মিথ্যাকামাচারে উৎসাহিত করে, মিথ্যাকামাচারে সম্মতি প্রদানকারী হয় এবং মিথ্যাকামাচারের গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়।

ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে। সেই চার প্রকার প্রকার কি কি? যথা- নিজে মিথ্যাকাচার হতে বিরত হয়, অপরকেও মিথ্যাকামাচার হতে বিরত থাকার জন্য উৎসাহিত করে, মিথ্যাকামাচার হতে বিরত হওয়ার জন্য সম্মতি প্রদানকারী হয় এবং মিথ্যাকামাচার হতে বিরত থাকার গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে।’’ (তৃতীয় সূত্র)

৪. মুসাবাদীসুত্তং-মিথ্যাবাদী সূত্র

২৬৭. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজেই মিথ্যাবাদী হয়, অপরকেও মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে, মিথ্যাবাদে সম্মতি প্রদানকারী হয় এবং মিথ্যা বলার গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়।

ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজেই মিথ্যাভাষণ হতে বিরত হয়, অপরকেও মিথ্যাভাষণ হতে বিরত থাকার জন্য উৎসাহিত করে, মিথ্যাভাষণ হতে বিরত থাকার সম্মতি দানকারী হয় এবং মিথ্যাভাষণ হতে বিরত থাকার গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে।’’ (চতুর্থ সূত্র)

৫. পিসুনবাচাসুত্তং-পিশুনবাক্য সূত্র

২৬৮. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে পিশুনবাক্যভাষী হয়, অপরকেও পিশুনবাক্য বলার জন্য উৎসাহিত করে, পিশুনবাক্য বলার সম্মতি প্রদানকারী হয় এবং পিশুনবাক্য বলার গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়।

ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজেই পিশুনবাক্য ভাষণ হতে বিরত হয়, অপরকেও পিশুনবাক্য ভাষণ হতে বিরত থাকার উৎসাহিত করে, পিশুনবাক্য ভাষণ হতে বিরত থাকার সম্মতি প্রদানকারী হয় ও পিশুনবাক্য হতে বিরত থাকার গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে।’’ (পঞ্চম সূত্র)

৬. ফরূসবাচাসুত্তং-কর্কশবাক্য সূত্র

২৬৯. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে কর্কশবাক্যভাষী হয়, অপরকেও কর্কশবাক্য ভাষণ করার জন্য উৎসাহিত করে, কর্কশবাক্য ভাষণে সম্মতি প্রদানকারী হয় এবং কর্কশবাক্য বলার গুণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়।

ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে কর্কশবাক্য ভাষণ হতে বিরত হয়, অপরকেও কর্কশবাক্য ভাষণ হতে বিরত থাকার উৎসাহিত করে, কর্কশবাক্য ভাষণ হতে বিরত হওয়ার সম্মতি প্রদানকারী হয় এবং কর্কশবাক্য ভাষণ হতে বিরত হওয়ার গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে।’’ (ষষ্ঠ সূত্র)

৭. সম্ফপ্পলাপসুত্তং-সমপ্রলাপ সূত্র

২৭০. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে সমপ্রলাপবাক্য ভাষী হয়, অপরকেও সমপ্রলাপবাক্য ভাষণ করার জন্য উৎসাহিত করে, সমপ্রলাপবাক্য ভাষণে সম্মতি প্রদানকারী হয় এবং সমপ্রলাপ বাক্য ভাষণের গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়।

ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে সমপ্রলাপবাক্য ভাষণ হতে বিরত হয়, অপরকেও সমপ্রলাপবাক্য ভাষণ হতে বিরত থাকার উৎসাহিত করে, সমপ্রলাপবাক্য ভাষণ হতে বিরত হওয়ার সম্মতি প্রদানকারী হয় এবং সমপ্রলাপবাক্য ভাষণ হতে বিরত থাকার গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে।’’ (সপ্তম সূত্র)

৮. অভিজ্ঝালুসুত্তং-লোলুপ সূত্র

২৭১. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে লোভী হয়, অপরকে লোভী হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে, লোভী হওয়ার সম্মতি প্রদানকারী হয় ও লোভী হওয়ার গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়।

ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে নির্লোভী হয়, অপরকেও নির্লোভী হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে, নির্লোভী হওয়ার সম্মতি প্রদানকারী হয় ও নির্লোভী হওয়ার গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে।’’ (অষ্টম সূত্র)

৯. ব্যাপন্নচিত্তসুত্তং-হিংসাচিত্ত সূত্র

২৭২. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে দ্বেষ বা হিংসাপরায়ণ হয়, অপরকেও হিংসাপরায়ণ হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে, হিংসাপরায়ণের প্রতি সম্মতি প্রদানকারী হয় ও হিংসাপরায়ণের গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়।

ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে অহিংসাত্মক চিত্তসম্পন্ন হয়, অপরকেও অহিংসাত্মক চিত্তসম্পন্ন হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে, অহিংসা পরায়ণের প্রতি সম্মতি প্রদানকারী হয় ও অহিংসা পরায়ণের গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে।’’ (নবম সূত্র)

১০. মিচ্ছাদিট্‌িঠসুত্তং-মিথ্যাদৃষ্টি সূত্র

২৭৩. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে মিথ্যাদৃষ্টি সম্পন্ন হয়, অপরকেও মিথ্যাদৃষ্টিতে উৎসাহিত করে বা আকৃষ্ট করে, মিথ্যাদৃষ্টিতে সম্মতি প্রদানকারী হয় ও মিথ্যাদৃষ্টির গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে নিরয়ে নিক্ষিপ্ত হয়।

ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- নিজে সম্যকদৃষ্টি সম্পন্ন হয়, অপরকেও সম্যকদৃষ্টিতে উৎসাহিত করে, সম্যকদৃষ্টিতে সম্মতি প্রদানকারী হয় ও সম্যকদৃষ্টির গুণ ভাষণ করে। এচার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বর্গে গমন করে।’’ (দশম সূত্র)

কর্মপথ বর্গ সমাপ্ত