(২৬) ৬. অভিঞ্‌ঞাবগ্গো-অভিজ্ঞা বর্গ

১. অভিঞ্‌ঞাসুত্তং-অভিজ্ঞা সূত্র

২৫৪. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! ধর্ম চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- অভিজ্ঞা দ্বারা পরিজ্ঞেয় ধর্ম, অভিজ্ঞা দ্বারা পরিত্যাগ যোগ্য ধর্ম, অভিজ্ঞা দ্বারা ভাবনীয় বা অনুশীলনীয় ধর্ম এবং অভিজ্ঞা দ্বারা লাভের যোগ্য ধর্ম।

অভিজ্ঞা দ্বারা পরিজ্ঞেয় ধর্ম কিরূপ? পঞ্চুপাদান স্কন্ধ- একে বলে অভিজ্ঞা দ্বারা পরিজ্ঞেয় ধর্ম।

‘‘অভিজ্ঞা দ্বারা পরিত্যাগ যোগ্য ধর্ম কিরূপ? অবিদ্যা ও তৃষ্ণা- একে বলে অভিজ্ঞা দ্বারা পরিত্যাগ যোগ্য বা প্রহানীয় ধর্ম।

‘‘অভিজ্ঞা দ্বারা ভাবনীয় বা অনুশীলনীয় ধর্ম কিরূপ? শমথ ও বিদর্শন- একে বলে অভিজ্ঞা দ্বারা অনুশীলনীয় ধর্ম।

অভিজ্ঞা দ্বারা লাভেরযোগ্য বা লাভনীয় ধর্ম কিরূপ? বিদ্যা ও বিমুক্তি- একে বলে অভিজ্ঞা দ্বারা লাভেরযোগ্য ধর্ম। ভিক্ষুগণ! এটিই চার প্রকার ধর্ম।’’ (প্রথম সূত্র)

২. পরিযেসনাসুত্ত-পর্যবেক্ষণ সূত্র

২৫৫. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! অনার্য পর্যবেক্ষণ চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? ভিক্ষুগণ! এজগতে কোন কোন ব্যক্তি নিজের জরাধর্মকে জরাধর্মরূপেই পর্যবেক্ষণ করে, নিজের ব্যাধিধর্মকে ব্যাধিধর্মরূপেই পর্যবেক্ষণ করে, নিজের মরণধর্মকে মরণধর্মরূপেই পর্যবেক্ষণ করে এবং নিজের সংক্লেশধর্মকে সমান সংক্লেশধর্মরূপেই পর্যবেক্ষণ করে। এগুলোই চার প্রকার অনার্য পর্যবেক্ষণ।

ভিক্ষুগণ! আর্য পর্যবেক্ষণ চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? এজগতে কোন কোন ব্যক্তি নিজের জরাধর্মকে জরা ধর্মের আদীনব সদৃশজ্ঞাত হয়ে অজর, অনুত্তর যোগক্ষেম বা অরহত ও নির্বাণ পর্যবেক্ষণ করে। নিজের ব্যাধিধর্মকে ব্যাধিধর্মের আদীনব সদৃশজ্ঞাত হয়ে অব্যাধি, অনুত্তর যোগক্ষেম বা অরহত ও নির্বাণ পর্যবেক্ষণ করে, নিজের মরণধমর্কে মরণধর্মের আদীনব সদৃশজ্ঞাত হয়ে আমরণ বা অমৃত, অনুত্তর অরহত ও নির্বাণ পর্যবেক্ষণ করে এবং নিজের সংক্লেশকে সংক্লেশধর্মের আদীনব সদৃশজ্ঞাত হয়ে অসংক্লিষ্ট, অনুত্তর যোগক্ষেম ও নির্বাণকে পর্যবেক্ষণ করে। ভিক্ষুগণ! এগুলোই চার প্রকার আর্য পর্যবেক্ষণ।’’ (দ্বিতীয় সূত্র)

৩. সঙ্গহবত্থুসুত্তং-সংগ্রহ বস্তু সূত্র

২৫৬. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! সংগ্রহ বস্তু চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- দান, প্রিয়বাক্য, ন্যায়পরতা বা উপকার ও সমদর্শিতা। এগুলোই চার প্রকার সংগ্রহ বস্তু বা বিষয়।’’ (তৃতীয় সূত্র)

৪. মালুক্যপুত্তসুত্তং-মালুক্যপুত্র সূত্র

২৫৭. একসময় আয়ুষ্মান মালুক্যপুত্র ভগবানের নিকট উপস্থিত হয়ে ভগবানকে অভিবাদন পূর্বক একপার্শ্বে বসলেন। একপার্শ্বে উপবিষ্ট আয়ুষ্মান মালুক্যপুত্র ভগবানকে এরূপ বললেন-

‘‘উত্তম, ভন্তে! আপনি আমাকে সংক্ষিপ্তরূপে ধর্মদেশনা প্রদান করুন, যাতে আমি ভগবানের ধর্ম শ্রবণ করে একাকী, ধ্যান পরায়ণ, অপ্রমত্ত, অত্যুৎসাহী ও উদ্যমশীল হয়ে অবস্থান করতে পারি। ‘হে মালুক্যপুত্র! এখানে কি নবীন ভিক্ষুদেরকেও বলব; যেহেতু তুমি জীর্ণ, প্রবীন ও বৃদ্ধ হয়ে আগতের নিকট সংক্ষিপ্তরূপে ধর্মদেশনা বা উপদেশ প্রার্থনা করেছ?

‘‘ভন্তে! আমাকে সংক্ষিপ্তরূপে ধর্ম দেশনা প্রদান করুন। হে সুগত, সংক্ষিপ্তরূপে ধর্ম দেশনা প্রদান করুন। অল্প হলেও আমি ভগবানের ভাষিত অর্থ বুঝতে পারব এবং ভগবানের ভাষণ কিঞ্চিত হলেও আমার জন্য উপকার হবে।’’

‘‘হে মালুক্যপুত্র! চার প্রকারে তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়, যাতে ভিক্ষুর উৎপন্নশীল তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- চীবরের কারণে ভিক্ষুর উৎপন্নশীল তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়, পিণ্ডপাতের কারণে ভিক্ষুর উৎপন্নশীল তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়, শয়নাসনের কারণে ভিক্ষুর উৎপন্নশীল তৃষ্ণা উৎপন্ন হয় এবং ‘অমুক স্থানে উৎপন্ন হব’, ‘অমুক স্থানে হব না’ এরূপ হেতুতে বা (ইতিভবাভবহেতু) ভিক্ষুর উৎপন্নশীল তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়। মালুক্যপুত্র! এই চার প্রকারে তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়, যাতে বা যে কারণে ভিক্ষুর উৎপন্নশীল তৃষ্ণা উৎপন্ন হয়। মালুক্যপুত্র! যখন হতে ভিক্ষুর তৃষ্ণা উচ্ছিন্নমূল তালবৃক্ষের ন্যায় প্রহীন হয়, ভবিষ্যতে আর পুনরুৎপত্তি হয় না; মালুক্যপুত্র! তখন এরূপ বলা হয়, ‘ভিক্ষু তৃষ্ণা ক্ষয় করেছে, সংযোজন রুদ্ধ এবং সম্যকরূপে মান-অভিমান জ্ঞাত হয়ে দুঃখের অন্তঃসাধন করেছে।’

আয়ুষ্মান মালুক্যপুত্র ভগবান কর্তৃক এরূপ উপদেশে উপদিষ্ট হয়ে আসন হতে উঠে ভগবানকে অভিবাদন করে প্রদক্ষিণ করতঃ চলে গেল। অতঃপর আয়ুষ্মান মালুক্যপুত্র একাকী, ধ্যানপরায়ণ, অপ্রমত্ত, অত্যুৎসাহী ও উদ্যমশীল হয়ে অবস্থান করতে করতে অচিরেই যার জন্য কুলপুত্রগণ সম্যকরূপে আগার হতে অনাগারিক প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন, সেই অনুত্তর ব্রহ্মচর্যাবসান এজীবনে স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা সাক্ষাত করে, অবস্থান করতে লাগলেন। তিনি বুঝতে পারলেন- ‘আমার জন্ম ক্ষীণ হয়েছে, ব্রহ্মচর্য ব্রত উদযাপিত হয়েছে, করণীয়কৃত হয়েছে এবং আস্রব ক্ষয়ের নিমিত্ত আর অন্য কোন করণীয় নাই।’ আয়ুষ্মান মালুক্যপুত্র অন্যতর অরহত হলেন। (চতুর্থ সূত্র)

৫. কুলসুত্তং-কুল সূত্র

২৫৮. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! যে সব কুল বা গৃহী মহা ভোগ প্রাপ্ত, কিন্তু তাদের ভোগ চিরস্থায়ী হয় না; চারটি কারণে তাদের সেসব ভোগ সম্পত্তি বিনষ্ট হয়, এটি ছাড়া অন্য কারণ নেই। সেই চারটি কারণ কি কি? যথা- বিনষ্ট (বা বিনষ্টের কারণ) অন্বেষণ করে না, জীর্ণ সংস্কার করে না, অপরিমিত ভোজনকারী হয় এবং দুঃশীল স্ত্রী বা পুরুষকে উচ্চপদ মর্যাদায় নিয়োগ করে। যেসব কুল মহা ভোগ প্রাপ্ত, কিন্তু তাদের ভোগ চিরস্থায়ী হয় না; এই চারটি কারণে তাদের সেই সব ভোগসম্পত্তি বিনষ্ট হয়। এটি ছাড়া অন্য কারণ নেই।

‘‘ভিক্ষুগণ! যেসব কুল বা গৃহী মহাভোগ প্রাপ্ত এবং তাদের ভোগ চিরস্থায়ী হয়; চারটি কারণে তাদের সেসব ভোগসম্পত্তি বিনষ্ট হয় না। এটি ছাড়া অন্য কারণ নেই। সেই চারটি কারণ কি কি? যথা- বিনষ্ট অন্বেষণ করে, জীর্ণ সংস্কার করে, পরিমিত ভোজনকারী হয় এবং শীলবান স্ত্রী বা পুরুষকে উচ্চপদ মর্যাদায় নিয়োগ করে।

ভিক্ষুগণ! এই চারটি কারণে বা অন্যকোন কারণে তাদের সেই ভোগসম্পত্তি বিনষ্ট হয় না। এটি ছাড়া অন্য কারণ নেই। যেসব কুল বা গৃহী মহাভোগে প্রাপ্ত এবং তাদের ভোগ চিরস্থায়ী হয়।’’ (পঞ্চম সূত্র)

৬. পঠম আজানীযসুত্তং- আজানেয় সূত্র (প্রথম)

২৫৯. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চারটি গুণে গুণান্বিত হয়ে ভদ্র আজানেয় অশ্ব রাজার যোগ্য, রাজভোগ্য এবং রাজ অঙ্গরূপে বিবেচিত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- রাজার ভদ্র আজানেয় অশ্ব বর্ণসমপদে সমৃদ্ধ, বলসম্পন্ন, গতিসম্পন্ন ও আরোহ পরিণাহ (দীর্ঘ ও বিস্তৃত) সম্পন্ন হয়। ভিক্ষুগণ! ঠিক তদ্রুপ চার ধর্মে সমন্বিত ভিক্ষু ভক্তি বা পূজারযোগ্য, আতিথেয়তার যোগ্য, দানের যোগ্য, অঞ্জলির যোগ্য এবং জগতের অনুত্তর বা শ্রেষ্ঠ পুণ্যক্ষেত্র। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- এজগতে ভিক্ষু বর্ণসম্পন্ন, বলসম্পন্ন, গতি বা প্রজ্ঞাসম্পন্ন এবং আরোহ পরিনাহ (বা লাভে আরোহী) সম্পন্ন হয়।

কিরূপে ভিক্ষু বর্ণসম্পন্ন হয়? এজগতে ভিক্ষু শীলবান, উত্তম আচার অনুশীলনে দক্ষ হয়। সামান্য দোষেও ভয় প্রদর্শন করে এবং শিক্ষাপদ সমূহ উত্তমরূপে শিক্ষা করে। এরূপেই ভিক্ষু বর্ণসম্পন্ন হয়।

কিরূপে ভিক্ষু বলসম্পন্ন হয়? এজগতে ভিক্ষু আরদ্ধবীর্য হয়ে বাস করে। অকুশল ধর্মসমূহ পরিত্যাগ করে এবং কুশল ধর্মসমূহ গ্রহণে নিয়ত বীর্যবান, দৃঢ় পরাক্রমী হয় ও কুশল ধর্মের কার্যভার অপরিত্যাগী হয়। এরূপেই ভিক্ষু বলসম্পন্ন হয়।

কিভাবে ভিক্ষু গতিবান হয়? এজগতে ভিক্ষু যথাযথভাবে জানে- ‘এটি দুঃখ, এটি দুঃখ সমুদয়, এটি দুঃখ নিরোধ এবং এটি দুঃখ নিরোধগামী প্রতিপদা’। এভাবেই ভিক্ষু গতিবান বা প্রজ্ঞা উপলব্ধি সম্পন্ন হয়।

‘‘কিরূপে ভিক্ষু আরোহ পরিণাহ বা লাভে আরোহী সম্পন্ন হয়? এজগতে ভিক্ষু চীবর-পিণ্ডপাত-শয্যাসন-গিলান প্রত্যয়-ভৈষজ্য লাভী হয়। এরূপেই ভিক্ষু আরোহপরিণাহ সম্পন্ন হয়।

ভিক্ষুগণ! এই চার ধর্মে সমন্বিত ভিক্ষু ভক্তি বা পূজারযোগ্য, আতিথেয়তার যোগ্য, দানের যোগ্য, অঞ্জলির যোগ্য এবং জগতে অনুত্তর বা শ্রেষ্ঠ পুণ্যক্ষেত্র।’’ (ষষ্ঠ সূত্র)

৭. দুতিয আজানীযসুত্তং-আজানীয় সূত্র (দ্বিতীয়)

২৬০. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চারটি গুণে গুণান্বিত ভদ্র আজানেয় অশ্ব রাজার যোগ্য, রাজভোগ্য এবং রাজ অঙ্গরূপে বিবেচিত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? ভিক্ষুগণ! রাজার ভদ্র অশ্ব বর্ণসমপদে সমৃদ্ধ, বলসম্পন্ন, গতিসম্পন্ন ও আরোহপরিণাহ (দীর্ঘ বিস্তৃত) সম্পন্ন হয়। এই চারটি গুণে গুণান্বিত হয়ে ভদ্র আজানেয় অশ্ব রাজার যোগ্য, রাজ্যভোগ্য এবং রাজার অঙ্গরূপে বিবেচিত হয়। ঠিক তদ্রুপ চার ধর্মে সমন্বিত ভিক্ষু ভক্তি বা পূজার যোগ্য, আতিথেয়তার যোগ্য, দানের যোগ্য, অঞ্জলির যোগ্য এবং জগতের অনুত্তর পুন্যক্ষেত্র। সেই চার প্রকার কি কি? এজগতে ভিক্ষু বর্ণসম্পন্ন, বলসম্পন্ন, গতিসম্পন্ন ও আরোহ পরিণাহ (লাভে আরোহী) সম্পন্ন হয়।

‘‘ভিক্ষুগণ! কিরূপে ভিক্ষু বর্ণসম্পন্ন হয়? এজগতে ভিক্ষু শীলবান, উত্তম আচার অনুশীলনে দক্ষ হয়। সামান্য দোষেও ভয় প্রদর্শন করে এবং শিক্ষাপদ সমূহ উত্তমরূপে শিক্ষা করে। এরূপেই ভিক্ষু বর্ণসম্পন্ন হয়।

‘‘কিরূপে ভিক্ষু বলসম্পন্ন হয়? ভিক্ষুগণ! এজগতে ভিক্ষু আরদ্ধবীর্য সম্পন্ন হয়ে অবস্থান করে, অকুশল ধর্মসমূহ পরিত্যাগ করে এবং কুশল ধর্মসমূহ গ্রহণে নিয়ত বীর্যবান, দৃঢ় পরাক্রমশালী হয়ে কুশল ধর্মের কার্যভার অপরিত্যাগী হয়। এভাবেই ভিক্ষু বলসম্পন্ন হয়।

‘‘কিভাবে ভিক্ষু গতিবান বা প্রজ্ঞা সম্পন্ন হয়? এজগতে ভিক্ষু আস্রবসমূহের ক্ষয়ে অনাস্রব হয়ে এজীবনে স্বয়ং অভিজ্ঞা দ্বারা চিত্ত বিমুক্তি ও প্রজ্ঞা বিমুক্তি উপলব্ধি করে অবস্থান করে। এরূপেই ভিক্ষু গতিবান বা প্রজ্ঞাসম্পন্ন হয়।

‘‘কিরূপে ভিক্ষু আরোহপরিণাহ সম্পন্ন হয়? ভিক্ষুগণ! এজগতে ভিক্ষু চীবর-পিণ্ডপাত-শয্যাসন-গিলান প্রত্যয়-ভৈষজ্য লাভী হয়। এভাবেই ভিক্ষু আরোহপরিণাহ সম্পন্ন হয়।

ভিক্ষুগণ! এই চার ধর্মে সমৃদ্ধ ভিক্ষু ভক্তি বা পূজার যোগ্য, আতিথেয়তার যোগ্য, দানের যোগ্য, অঞ্জলির যোগ্য এবং জগতের অনুত্তর পুণ্যক্ষেত্র।’’ (সপ্তম সূত্র)

৮. বলসুত্তং-বল সূত্র

২৬১. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! বল চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- বীর্যবল, স্মৃতিবল, সমাধিবল ও প্রজ্ঞাবল। ইহাই চার প্রকার বল। (অষ্টম সূত্র)

৯. অরঞ্‌ঞসুত্তং-অরণ্যে সূত্র

২৬২. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চার ধর্মে সমন্বিত ভিক্ষু অরণ্যে বনপ্রান্তে শয্যাসন পরিভোগের জন্য অনুপযুক্ত। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- কামচিন্তা, হিংসা চিন্তা, অহিতকর চিন্তা ও দুষপ্রাজ্ঞতা, মূর্খতা (জলো এলমূগো) হয়। ভিক্ষুগণ! এই চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ভিক্ষু অরণ্যে বনপ্রান্তে শয্যাসন পরিভোগের অনুপযুক্ত।

‘‘ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্মে সমন্বিত ভিক্ষু অরণ্যে বনপ্রান্তে শয়নস্থান পরিভোগের জন্য উপযুক্ত। সেই চারটি কি কি? যথা- ব্রহ্মচর্য বা নৈষ্ক্রম্য চিন্তা, অহিংসা চিন্তা, হিতকর চিন্তা ও প্রজ্ঞাবান, বাকপটু (অজলো অনেলমূগো)। ভিক্ষুগণ! এই চার ধর্মে সমন্বিত ভিক্ষু অরণ্যে বনপ্রান্তেশয্যাসন পরিভোগের জন্য উপযুক্ত।’’ (নবম সূত্র)

১০. কম্মসুত্তং-কর্ম সূত্র

২৬৩. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চার ধর্মে সমন্বিত মূর্খ, অনবিজ্ঞ ও অসৎ পুরুষ নিজেকে ক্ষত, উপহত করে এবং বিজ্ঞজনের নিকট দোষনীয় ও নিন্দনীয় হয়ে বহু অপুণ্য উৎপন্ন করে। সেই চার ধর্ম কি কি? যথা- নিন্দার্হ কায়কর্ম, নিন্দার্হ বাক্যকর্ম, নিন্দার্হ মনোকর্ম ও নিন্দার্হ মিথ্যাদৃষ্টি।

এ’চার ধর্মে সমন্বিত মূর্খ, অনবিজ্ঞ ও অসৎ পুরুষ নিজেকে ক্ষত উপহত করে রাখে এবং বিজ্ঞজনের নিকট দোষী ও নিন্দনীয় হয়ে বহু অপুণ্য উৎপন্ন করে।

এচার ধর্মে সমন্বিত পণ্ডিত, বিজ্ঞ ও সৎপুরুষ নিজেকে অক্ষত, অনাহত রাখে এবং বিজ্ঞজনের নিকট অনিন্দনীয়, প্রশংসনীয় হয়ে বহু পুণ্য প্রসব করে। সেই চার ধর্ম কি কি? যথা- অবর্জনীয় বা নির্দোষ কায়কর্ম, অবর্জনীয় বাক্যকর্ম, অবর্জনীয় মনোকর্ম ও অবর্জনীয় সম্যকদৃষ্টি।

এ’চার ধর্মে সমন্বিত পণ্ডিত, বিজ্ঞ ও সৎপুরুষ নিজেকে অক্ষত ও অনাহত রাখে এবং বিজ্ঞগণের নিকট নির্দোষী, প্রশংসনীয় হয়ে বহু পুণ্য উৎপন্ন করে।’’ (দশম সূত্র)

অভিজ্ঞা বর্গ সমাপ্ত

স্মারকগাথাঃ

অভিজ্ঞা, পর্যবেক্ষণ, সংগ্রহ ও মালুক্যপুত্র,

কুল এবং দুই আজানীয়, বল, অরণ্য, কর্ম সূত্র।