১. সঙ্ঘভেদকসুত্তং-সংঘভেদ সূত্র
২৪৩. একসময় ভগবান কোশম্বীস্থ ঘোষিতারামে অবস্থান করছিলেন। সে সময়ে আয়ুষ্মান আনন্দ ভগবানের নিকট উপস্থিত হয়ে ভগবানকে অভিবাদন করে একপার্শ্বে বসলেন। একপার্শ্বে উপবিষ্ট আয়ুষ্মান আনন্দকে ভগবান এরূপ বললেন- ‘‘হে আনন্দ! এখনও কি সেই কলহ উপশম হয়নি? ‘‘ভন্তে! কি করে সেই কলহ উপশম হবে! কারণ, আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধের বাহিয়ো নামক সহবিহারী দীর্ঘদিন ধরে সংঘভেদে জড়িত আছে। তাছাড়া আয়ুষ্মান অনুরুদ্ধ তাকে একটি বাক্যও বলা উচিত মনে করে না।’’
‘‘আনন্দ! কেন অনুরুদ্ধ সংঘের মধ্যে সেই কলহ উত্থাপন করেনি! কোন কলহ বা বিবাদ উৎপন্ন হলে অবশ্যই তোমরা সারিপুত্র ও মোগ্গল্লায়নের সাথে তা সমাধান করিও।
‘‘আনন্দ! চারটি কারণ দেখতে পেয়ে পাপী ভিক্ষু সংঘভেদে ইচ্ছা পোষণ করে। সেই চারটি কি কি? যথা- এজগতে পাপী ভিক্ষু দুঃশীল, কলুষিত, পাপধর্মী, পাপাচারী, গোপনে পাপকর্ম সম্পাদনকারী, অশ্রমণ, শ্রমণের মিথ্যাগুণ বর্ণনাকারী, অব্রহ্মচারী, ব্রাহ্মণের মিথ্যাগুণ বর্ণনাকারী, দুশ্চরিত্র, কামুক ও অপবিত্র বা নিন্দনীয় হয়। তখন তার এরূপ চিন্তা হয়- ‘যদি ভিক্ষুগণ আমাকে বা আমার সম্বন্ধে জানে যে, ‘আমি দুঃশীল, কলুষিত, পাপধর্মী, পাপাচারী, গোপনে পাপকর্মকারী, অশ্রমণ, শ্রমণের মিথ্যাগুণ বর্ণনাকারী, অব্রহ্মচারী, ব্রাহ্মণের মিথ্যাগুণ বর্ণনাকারী, দুশ্চরিত্র, কামুক ও নিন্দনীয়। তাহলে একতাবদ্ধ শীলবান সংঘ আমার সুখ হরণ করবে, কিন্তু সংঘ বিভক্ত হলে আমাকে কিছু করতে পারবে না।’ এই প্রথম কারণ দেখতে পেয়ে পাপী ভিক্ষু সংঘভেদে ইচ্ছা পোষণ করে।
‘‘পুনঃ, পাপী ভিক্ষু মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্ন ও কুলপ্রথানুরূপ মতবাদে সমন্বিত হয়। তখন তার এরূপ চিন্তা হয়- ‘যদি ভিক্ষুগণ আমার সম্বন্ধে জানে যে, ‘আমি মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্ন ও কুলপ্রথানুরূপ মতবাদে সমন্বিত; তাহলে একতাবদ্ধ শীলবান সংঘ আমার সুখ হরণ করবে। কিন্তু সংঘ বিভক্ত হলে আমাকে কিছু করতে পারবে না।’ এই দ্বিতীয় কারণ দেখতে পেয়ে পাপী ভিক্ষু সংঘভেদে ইচ্ছা পোষণ করে।
‘‘পুনঃ, পাপী ভিক্ষু মিথ্যাজীবিকা সম্পন্ন হয় এবং মিথ্যাজীবিকা দ্বারা জীবন ধারণ করে। তখন তার এরূপ চিন্তা হয়- ‘যদি ভিক্ষুগণ আমার সম্বন্ধে জানে যে, ‘আমি মিথ্যাজীবিকা সম্পন্ন ও মিথ্যাজীবিকা দ্বারা জীবন ধারণ করি। তাহলে একতাবদ্ধ শীলবান সংঘ আমার সুখ হরণ করবে; কিন্তু সংঘ বিভক্ত হলে আমাকে কিছু করতে পারবে না।’ এই তৃতীয় কারণ দেখতে পেয়ে পাপী ভিক্ষু সংঘভেদে ইচ্ছা পোষণ করে।
‘‘পুনঃ, পাপী ভিক্ষু লাভ-সৎকারকামী ও নির্বাণ লাভে অনিচ্ছাকামী হয়। তখন তার এরূপ চিন্তা হয়- ‘যদি ভিক্ষুগণ আমার সম্বন্ধে জানে যে, আমি লাভ-সৎকারকামী ও নির্বাণ লাভে অনিচ্ছাকামী তাহলে একতাবদ্ধ শীলবান সংঘ আমাকে সৎকার করবে না, গৌরব করবে না, শ্রদ্ধা করবে না এবং পূজাও করবে না; কিন্তু সংঘ বিভক্ত হলে আমাকে সৎকার করবে, গৌরব-শ্রদ্ধা-পূজা করবে।’ এই চতুর্থ কারণ দেখতে পেয়ে পাপী ভিক্ষু সংঘভেদে ইচ্ছা পোষণ করে। আনন্দ! এই চার প্রকার কারণ দেখতে পেয়ে পাপী ভিক্ষু সংঘভেদে ইচ্ছা পোষণ করে।’’ (প্রথম সূত্র)
২. আপত্তিভযসুত্তং-আপত্তিভয় সূত্র
২৪৪. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার আপত্তি ভয় রয়েছে। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- যেমন দোষী চোরকে বেঁধে রাজার নিকট উপস্থিত করে বলে যে- ‘হে দেব! এই ব্যক্তি দোষী, চোর। একে দণ্ড বিধান করুন।’ তখন রাজা এরূপ বলে যে- ‘যাও, একে দৃঢ় রশিতে শক্তভাবে পিছমোড়া করে হস্ত বন্ধন করতঃ মস্তক মুণ্ডিত করে বিকট শব্দে ভেরী বাজিয়ে এক পথ হতে আরেক পথে এবং চৌরাস্তার মোড়ে নিয়ে যাও। তারপর দক্ষিণ দ্বার দিয়ে বের করে নগরের দক্ষিণ দিকে নিয়ে গিয়ে তার মস্তক ছেদন কর।’ অতঃপর রাজার লোকেরা তাকে দৃঢ় রশিতে শক্তভাবে পিছমোড়া করে বন্ধন করতঃ মস্তক মুণ্ডিত করে বিকট শব্দে ভেরী বাজিয়ে এক পথ হতে আরেক পথে এবং চৌরাস্তার মোড়ে নিয়ে গেল। তারপর দক্ষিণ দ্বার দিয়ে বের করে নগরের দক্ষিণ দিকে নিয়ে গিয়ে তার মস্তক ছেদন করল। তখন স্থানীয় জনতাদের এরূপ চিন্তা হয়- ‘সত্যিই এই ব্যক্তি নিন্দার্হ ও শিরশ্চেদনীয় পাপ কার্য করেছে। যে কারণে রাজার লোকেরা কাউকে দৃঢ় রশিতে শক্তভাবে পিছমোড়া হস্ত বন্ধন করে মস্তক মুণ্ডিত করে বিকট শব্দে ভেরী বাজিয়ে এক পথ হতে আরেক পথে এবং চৌরাস্তার মোড়ে নিয়ে যাবে। তারপর দক্ষিণ দ্বার দিয়ে বের করে নগরের দক্ষিণ দিকে নিয়ে গিয়ে তার মস্তক ছেদন করবে। সেরূপ নিন্দার্হ, শিরছেদনীয় পাপ কার্য আমি কখনও করব না। হে ভিক্ষুগণ, যেই ভিক্ষু বা ভিক্ষুণীর নিকট পারাজিকা ধর্মসমূহের প্রতি তীব্র ভয় সংজ্ঞা বিদ্যমান থাকে, তার প্রতি এটাই প্রত্যাশিত যে, সে পারাজিকা অপরাধ করবে না। আর পারাজিকা অপরাধে দোষী হলে যে নিয়মানুযায়ী প্রতিকার করবে।’’
ভিক্ষুগণ! যেমন কোন ব্যক্তি কালবস্ত্র পরিধান করে, চুল কেটে এলোমেলো চুলে মুষল (লৌহদণ্ড) কাঁধে নিয়ে মহাজনতার কাছে উপস্থিত হয়ে এরূপ বলে যে- ‘মহাশয়! আমি নিন্দার্হ, দণ্ডনীয় পাপকার্য করেছি।’ আপনারা ইচ্ছা মতো আমাকে শাস্তি দিন। তখন অন্য স্থানীয় ব্যক্তির এরূপ চিন্তা হয়- সত্যিই, এই ব্যক্তি নিন্দার্হ, দণ্ডনীয় পাপকার্য করেছে। যেরূপ কার্য করলে কোন ব্যক্তি কালবস্ত্র পড়ে এলোমেলো মুষল কাঁধে নিয়ে মহাজনতার নিকট এসে এরূপ বলবে যে- ‘মহাশয়! আমি নিন্দার্হ, দণ্ডনীয়, পাপকার্য করেছি, আপনারা ইচ্ছা মতো আমাকে শাস্তি দিন; সেরূপ নিন্দার্হ, দণ্ডনীয়, পাপকার্য আমি কখনও করব না।’ ঠিক তদ্রুপ যেই ভিক্ষু বা ভিক্ষুণীর নিকট সংঘাদিশেষ ধর্মসমূহের প্রতি এরূপ তীব্র ভয় সংজ্ঞা বিদ্যমান থাকে, তার প্রতি এটিই প্রত্যাশিত যে, সে সংঘাদিশেষ অপরাধ করবে না। আর সংঘাদিশেষ অপরাধে দোষী হলে নিয়মানুযায়ী প্রতিকার করবে।
‘‘ভিক্ষুগণ! যেমন কোন ব্যক্তি কালবস্ত্র পরিধান করে এলোমেলো চুলে ছাইপূর্ণ বস্তা কাঁধে নিয়ে মহাজনতার কাছে উপস্থিত হয়ে এরূপ বলে যে- ‘মহাশয়! আমি নিন্দার্হ, (ভস্মপুট) অকরণীয় পাপকার্য করেছি। আপনারা ইচ্ছা মতো আমাকে শাস্তি দিন।’ তখন অন্য স্থানীয় ব্যক্তির এরূপ চিন্তা হয়- ‘সত্যিই এই ব্যক্তি নিন্দার্হ, অকরণীয়, পাপকার্য করেছে। যেরূপ কার্য করলে কোন ব্যক্তি কালবস্ত্র পড়ে এলোমেলো চুলে ছাইপূর্ণ বস্তা নিয়ে মহাজনতার নিকট এসে এরূপ বলবে যে- ‘মহাশয়! আমি নিন্দার্হ, অকরণীয় পাপকার্য করেছি। আপনারা ইচ্ছা মতো আমাকে শাস্তি দিন। সেরূপ নিন্দার্হ, অকরণীয়, পাপকার্য অবশ্যই আমি কখনও করব না।’ ভিক্ষুগণ! ঠিক তন্দ্রুপ যেই ভিক্ষু বা ভিক্ষুণীর নিকট পাচিত্তিয় ধর্মসমূহের প্রতি এরূপ ভয় সংজ্ঞা বিদ্যমান থাকে, তার প্রতি এটাই প্রত্যাশিত যে, সে পাচিত্তিয় অপরাধ করবে না। আর পাচিত্তিয় অপরাধে দোষী হলে সে নিয়মানুযায়ী প্রতিকার করবে।
পুনঃ, কোন ব্যক্তি কালবস্ত্র পরিধান করে এলোমেলো মহাজনতার কাছে উপস্থিত হয়ে এরূপ বলে যে- ‘মহাশয়! আমি ঘৃণার্হ বা হীন, নিন্দনীয় পাপকার্য করেছি, আপনারা ইচ্ছা মতো আমাকে শাস্তি দিন। তখন অন্য স্থানীয় ব্যক্তির এরূপ চিন্তা হয়- ‘সত্যিই এই ব্যক্তি হীন বা ঘৃণার্হ, নিন্দনীয় পাপকার্য করেছে। যেরূপ কার্য করলে কোন ব্যক্তি এরূপ কালবস্ত্র পড়ে এলোমেলো মহাজনতার নিকট এসে এরূপ বলবে যে- ‘মহাশয়! আমি হীন, নিন্দনীয় পাপকার্য করেছি, আপনারা ইচ্ছা মতো আমাকে শাস্তি দিন। সেরূপ হীন, নিন্দনীয় পাপকার্য কখনও করব না।’’ ঠিক তদ্রুপ যেই ভিক্ষু বা ভিক্ষুণীর নিকট পাটিদেশনীয় ধর্মসমূহের প্রতি এরূপ তীব্র ভয় সংজ্ঞা বিদ্যমান থাকে, তাদের প্রতি এটাই প্রত্যাশিত যে, সে পাটিদেশনীয় অপরাধ করবে না। আর পাটিদেশনীয় অপরাধে দোষী হলে নিয়মানুযায়ী প্রতিকার করবে।
ভিক্ষুগণ! এই চার প্রকার আপত্তি ভয় রয়েছে।’’ (দ্বিতীয় সূত্র)
৩. সিক্খানিসংসসুত্তং-শিক্ষানিশংস সূত্র
২৪৫. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! শিক্ষানিশংস, শ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞা, বিমুক্তিসার ও প্রধান মনোযোগিতার উদ্দেশ্যেই ব্রহ্মচর্য উদ্যাপিত হয়।
শিক্ষানিশংস কিরূপ? এজগতে অপ্রসন্নদের প্রসন্নতার জন্য এবং প্রসন্নদের আরো অধিকতর প্রসন্নতার দরুন আমার কর্তৃক শ্রাবকদের নিকট অভিসমাচারিক বা উপযুক্ত শিক্ষা প্রদত্ত হয়েছে। অপ্রসন্নদের প্রসন্নতার জন্য এবং প্রসন্নদের আরো অধিকতর প্রসন্নতার দরুন আমার কর্তৃক যেভাবে যেভাবে শ্রাবকদের নিকট উপযুক্ত শিক্ষা বা (ঐ) প্রজ্ঞাপ্ত হয়েছে; সেভাবে সেভাবে তারা সেই শিক্ষার জন্য অখণ্ডকারী, অচ্ছিদ্রকারী, অসবলকারী ও সামঞ্জস্যকারী হয়ে শিক্ষাপদসমূহ গ্রহণ করে শিক্ষা করে।
পুনঃ, ভিক্ষুগণ! সম্যকরূপে সমস্ত দুঃখক্ষয়ের জন্য আমার কর্তৃক শ্রাবকদের নিকট যেভাবে যেভাবে আদি ব্রহ্মচর্য শিক্ষা প্রজ্ঞাপ্ত হয়েছে। সম্যকরূপে সমস্ত দুঃখক্ষয়ের জন্য আমার কর্তৃক শ্রাবকদের নিকট আদি ব্রহ্মচর্য শিক্ষা প্রজ্ঞাপ্ত হয়েছে, সেভাবে সেভাবে তারা সেই শিক্ষার জন্য অখণ্ডকারী, অচ্ছিদ্রকারী, অসবলকারী ও সামঞ্জস্যকারী হয়ে শিক্ষাপদসমূহ গ্রহণ করে শিক্ষা করে।এরূপেই শিক্ষানিশংস হয়।
কিরূপে শ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞা লাভ হয়? এজগতে সম্যকরূপে সমস্ত দুঃখক্ষয়ের জন্য আমার কর্তৃক শ্রাবকদের নিকট ধর্মসমূহ দেশিত হয়েছে। সম্যকরূপে সমস্ত দুঃখক্ষয়ের জন্য যেভাবে যেভাবে আমার কর্তৃক শ্রাবকদের নিকট যে ধর্মসমূহ দেশিত হয়েছে; সেভাবে সেভাবে সেই ধর্মসমূহ তাদের কর্তৃক প্রজ্ঞা দ্বারা পর্যবেক্ষণ বা ধারণ করা হয়। ভিক্ষুগণ! এরূপেই শ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞা লাভ হয়।
কিরূপে বিমুক্তিসার লাভ হয়? এজগতে সম্যকরূপে সমস্ত দুঃখক্ষয়ের জন্য আমার কর্তৃক শ্রাবকদের নিকট ধর্মসমূহ দেশিত। সম্যকরূপে সমস্ত দুঃখক্ষয়ের জন্য যেভাবে যেভাবে আমার কর্তৃক যে ধর্মসমূহ দেশিত হয়েছে, সেভাবে সেভাবে সেই ধর্মসমূহ তাদের কর্তৃক বিমুক্তি দ্বারা স্পর্শিত হয় বা (অনুভূত হয়)। ভিক্ষুগণ! এরূপেই বিমুক্তিসার লাভ হয়।
কিরূপে প্রবল মনোযোগিতা সম্পন্ন হয়? আমি অপরিপূর্ণ এরূপ উপযুক্ত শিক্ষাকে পরিপূর্ণ করব এবং পরিপূর্ণ উপযুক্ত শিক্ষাকে তথায় তথায় অনুগৃহীত বা প্রদর্শন করব’,- এরূপে আধ্যাত্মিক চিত্ত সমাধিস্থ বা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। অপরিপূর্ণ এরূপ আদি ব্রহ্মচর্য শিক্ষাকে পরিপূর্ণ করব এবং পরিপূর্ণ আদি ব্রহ্মচর্য শিক্ষাকে তথায় তথায় প্রজ্ঞা দ্বারা অনুগৃহীত বা প্রদর্শন করব’- এরূপে আধ্যাত্মিক চিত্ত সমাধিস্থ হয়। অননুশীলন এরূপ ধর্মকে প্রজ্ঞা দ্বারা অনুশীলন বা ধারণ করব’- এরূপে আধ্যাত্মিক চিত্ত সমাধিস্থ হয়। অননুভূত এরূপ ধর্মকে প্রজ্ঞা দ্বারা অনুভূত বা স্পর্শ করব এবং অনুভূত বা স্পর্শিত ধর্মকে তথায় তথায় প্রজ্ঞা দ্বারা অনুগৃহীত করব’-এরূপেও আধ্যাত্মিক চিত্ত সমাধিস্থ হয়। এরূপেই প্রবল বা প্রধান মনোযোগিতা সম্পন্ন হয়। ভিক্ষুগণ! শিক্ষানিশংস শ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞা, বিমুক্তসার ও প্রবল মনোযোগিতার উদ্দেশ্যেই ব্রহ্মচর্য উদ্যাপিত হয় (এরূপে যা বলা হয়েছে একেই ভিত্তি করে কথিত)। (তৃতীয় সূত্র)
৪. সেয্যাসুত্তং-শয়ন সূত্র
২৪৬. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! শয়ন বা শয্যা চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- প্রেত শয়ন, কামভোগী শয়ন, সিংহ শয়ন ও তথাগত শয়ন।
প্রেত শয়ন কিরূপ? প্রেতগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিত হয়ে শয়ন করে। একে বলে প্রেত শয়ন।
কামভোগী শয়ন কিরূপ? অধিকাংশ ক্ষেত্রে কামভোগীরা বাম পার্শ্ব হয়ে শয়ন করে। একে বলে কামভোগী শয়ন।
সিংহ শয়ন কিরূপ? পশুরাজ সিংহ দক্ষিণ পার্শ্ব করে শয়নে অবস্থান করে এবং পায়ের উপর পা রেখে দুই উরু মাঝখানে লেজ স্থাপন করে। সে জাগ্রত হয়ে প্রথমে দেহকে খাড়াভাবে রাখে এবং পরে অবলোকন করে। পশুরাজ সিংহ যদি দেহের কিঞ্চিত মাত্র বিক্ষিপ্ত ও পরিব্যাপ্ত দেখে, তখন সে নিরানন্দিত হয়। আর পশুরাজ সিংহ যদি কিঞ্চিত মাত্র দেহের বিক্ষিপ্ত ও পরিব্যাপ্ত না দেখে, তখন সে আনন্দিত হয়। একেই বলে সিংহ শয়ন।
তথাগত শয়ন কিরূপ? এজগতে তথাগত সুখ-দুঃখের পরিত্যাগ এবং পূর্বেই মানসিক সৌমনস্য-দৌর্মনস্য পরিহার পূর্বক সুখ-দুঃখহীন উপেক্ষা ও স্মৃতি পরিশুদ্ধি নামক চতুর্থ ধ্যানস্তর লাভ করে অবস্থান করে। একে বলে তথাগত শয়ন। ভিক্ষুগণ! এটিই চার প্রকার শয়ন বা শয্যা।’’ (চতুর্থ সূত্র)
৫. থূপারহসুত্তং-স্মৃতিস্তম্ভ সূত্র
২৪৭. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! স্মৃতিস্তম্ভ চার প্রকার । সেই চার প্রকার কি কি? যথা- তথাগত অরহত সম্যক সম্বুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, পচ্চেক বুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ, তথাগত শ্রাবকের স্মৃতিস্তম্ভ ও চক্রবর্তী রাজার স্মৃতিস্তম্ভ। এটি চার প্রকার স্মৃতিস্তম্ভ। (পঞ্চম সূত্র)
৬. পঞ্ঞাবুদ্ধিসুত্তং-প্রজ্ঞাবৃদ্ধি সূত্র
২৪৮. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্ম প্রজ্ঞা বৃদ্ধির জন্য সংবর্তিত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- সৎপুরুষের সেবা, সদ্ধর্ম শ্রবণ, জ্ঞানযোগে চিন্তা ও পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ধর্মাচরণ। ভিক্ষুগণ! এই চার প্রকার ধর্ম প্রজ্ঞা বৃদ্ধির জন্য সংবর্তিত হয়।’’ (ষষ্ঠ সূত্র)
৭. বহুকারসুত্তং-বহু উপকার সূত্র
২৪৯. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকার ধর্ম দেব-মানবের বহু উপকার করে। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- সৎপুরুষের সেবা, সদ্ধর্ম শ্রবণ, জ্ঞানযোগে চিন্তা ও ধর্মানুধর্ম প্রতিপালন। ভিক্ষুগণ! এই চার প্রকার ধর্ম দেব-মানবের বহু উপকার করে।’’ (সপ্তম সূত্র)
৮. পঠমবোহারসুত্তং-লক্ষণ সূত্র (প্রথম)
২৫০. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! অনার্য লক্ষণ চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- অদৃষ্টতে দৃষ্টবাদী, অশ্রুতে শ্রুতবাদী, অননুভূতে অনুভূতবাদী ও অজ্ঞাতে জ্ঞাতবাদী। ভিক্ষুগণ! এটিই চার প্রকার অনার্য লক্ষণ।’’ (অষ্টম সূত্র)
৯. দুতিযবোহরসুত্তং- লক্ষণ সূত্র (দ্বিতীয়)
২৫১. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! আর্য লক্ষণ চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- অদৃষ্টতে অদৃষ্টবাদী, অশ্রুতে অশ্রুতবাদী, অননুভূতে অননুভূতবাদী ও অজ্ঞাতে অজ্ঞাতবাদী। ভিক্ষুগণ! এটিই চার প্রকার আর্য লক্ষণ।’’ (নবম সূত্র)
১০. ততিযবোহরসুত্তং-লক্ষণ সূত্র (তৃতীয়)
২৫২. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! অনার্য লক্ষণ চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- দৃষ্টতে অদৃষ্টবাদী, শ্রুতে অশ্রুতবাদী, অনুভূতে অননুভূতবাদী এবং জ্ঞাতে অজ্ঞাতবাদী। ভিক্ষুগণ! এটিই চার প্রকার অনার্য লক্ষণ।’’ (দশম সূত্র)
১১. চতুত্থবোহারসুত্তং-লক্ষণ সূত্র (চতুর্থ)
২৫৩. ‘‘হে ভিক্ষুগণ! আর্য লক্ষণ চার প্রকার। সেই চার প্রকার প্রকার কি কি? যথা- দৃষ্টতে দৃষ্টবাদী, শ্রুতে শ্রুতবাদী, অনুভূতে অনুভূতবাদী এবং জ্ঞাতে জ্ঞাতবাদী। ভিক্ষুগণ! এটিই চার প্রকার আর্য লক্ষণ।’’ (একাদশ সূত্র)
আপত্তিভয় বর্গ সমাপ্ত
স্মারকগাথাঃ
ভেদ, আপত্তি, শিক্ষা, শয্যা, স্তম্ভ, প্রজ্ঞাবৃদ্ধি,
বহুপকার ও চার লক্ষণে স্থিত।
পঞ্চম পঞ্চাশক সমাপ্ত