২. দ্বিতীয় পঞ্চাশক
১. পঠম পুঞাভিসন্দনসুত্তং- পুণ্যফল সূত্র (প্রথম)
৫১. শ্রাবস্তী নিদানঃ
“হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকারে পুণ্যফল, কুশলসম্পদ, সুখাহার, স্বর্গসুখ, সুখজনকফল, স্বর্গ সংবতর্নিক; মঙ্গলার্থে, প্রীতিকরার্থে, প্রফুল্লার্থে, হিতার্থে, সুখার্থে সংবর্তিত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা-
চীবর পরিভোগকালে কোন ভিক্ষু যদি অপ্রমাণ চিত্ত সমাধি উৎপন্ন করে, তাহলে তার নিকট অপ্রমেয় পুণ্যফল, কুশলসম্পদ, সুখাহার, স্বর্গসুখ, সুখজনকফল, স্বর্গসংবর্তনিক; মঙ্গলার্থে, প্রীতিকরার্থে, প্রফুল্লার্থে হিতার্থে, সুখার্থে সংবর্তিত হয়।
পিণ্ডপাত পরিভোগকালে কোন ভিক্ষু যদি অপ্রমাণ চিত্ত সমাধি উৎপন্ন করে, তাহলে তার নিকট অপ্রমেয় পুণ্যফল, কুশলসম্পদ, সুখাহার, স্বর্গসুখ, সুখজনকফল, স্বর্গসংবর্তনিক; মঙ্গলার্থে, প্রীতিকরার্থে, প্রফুল্লার্থে হিতার্থে, সুখার্থে সংবর্তিত হয়।
শয়নাসন পরিভোগকালে কোন ভিক্ষু যদি অপ্রমাণ চিত্ত সমাধি উৎপন্ন করে, তাহলে তার নিকট অপ্রমেয় পুণ্যফল, কুশলসম্পদ, সুখাহার, স্বর্গসুখ, সুখজনকফল, স্বর্গসংবর্তনিক; মঙ্গলার্থে, প্রীতিকরার্থে, প্রফুল্লার্থে হিতার্থে, সুখার্থে সংবর্তিত হয়।
গিলান-প্রত্যয়-ভৈষজ্য উপকরণ পরিভোগকালে কোন ভিক্ষু যদি অপ্রমাণ চিত্ত সমাধি উৎপন্ন করে, তাহলে তার নিকট অপ্রমেয় পুণ্যফল, কুশলসম্পদ, সুখাহার, স্বর্গসুখ, সুখজনকফল, স্বর্গসংবর্তনিক; মঙ্গলার্থে, প্রীতিকরার্থে, প্রফুল্লার্থে হিতার্থে, সুখার্থে সংবর্তিত হয়।
এই চার প্রকারে পুণ্যফল, কুশলসম্পদ, সুখাহার, স্বর্গসুখ, সুখজনকফল, স্বর্গসংবর্তনিক; মঙ্গলার্থে, প্রীতিকরার্থে, প্রফুল্লার্থে হিতার্থে, সুখার্থে সংবর্তিত হয়।
ভিক্ষুগণ! এই চার প্রকারে পুণ্যফল, কুশলসম্পদে সমন্বিত আর্যশ্রাবকের পুণ্যের পরিমাণ নির্ণয় করা দুঃখসাধ্য-তার নিকট এ’পরিমাণ পুণ্যফল, কুশলসম্পদ, সুখাহার, স্বর্গসুখ, সুখজনক ফল, স্বর্গসংবর্তনিক; মঙ্গলার্থে, প্রীতিকরার্থে, প্রফুল্লার্থে, হিতার্থে, সুখার্থে, সংবর্তিত হয়। তাই এটা অসঙ্খেয়, অপ্রমেয়, মহাপুণ্য রাশির সংখ্যায় গণিত হয়।
যেমন, মহাসমুদ্রের জলের পরিমাণ নির্ণয় করা দুঃসাধ্য- এত পাত্র জল, এত শত পাত্র জল, এত হাজার পাত্র জল, এত লক্ষ পাত্র জল; তাই এটা অসঙ্খেয়, অপ্রমেয় মহা জলরাশির সংখ্যায় গণিত হয়। এভাবে-ই ভিক্ষুগণ, এ’চার প্রকারে পুণ্যফল, কুশলসম্পদে সমন্বিত আর্যশ্রাবকের পুণ্যের পরিমাণ নির্ণয় করা দুঃসাধ্য-তার নিকট এ’পরিমাণ পুণ্যফল, কুশলসম্পদ, সুখাহার, স্বর্গসুখ, সুখজনক ফল, স্বর্গসংবর্তনিক; মঙ্গলার্থে, প্রীতিকরার্থে, প্রফুল্লার্থে, হিতার্থে, সুখার্থে, সংবর্তিত হয়। তাই এটা অসঙ্খেয়, অপ্রমেয়, মহাপুণ্য রাশির সংখ্যায় গণিত হয়।
“ভয়ঙ্কর মহাসমুদ্রের বিশাল জলরাশি,
সেথায় বিদ্যমান কিন্তু উৎকৃষ্ট রত্নরাজি।
বারণ করে না নদী কেহকে জল আহরণে,
সতত প্রবাহিত হয় যেন সমুদ্র পানে।
এভাবে পণ্ডিত নর সম্পাদনে বহুদান,
অন্ন-বস্ত্র, পানীয় আর উত্তম শয্যাসন;
পুণ্যধারা উপনীত, মহাসমুদ্রে যেমন।”
(প্রথম সূত্র)
২. দুতিযপুঞ্ঞাভিসন্দসুত্তং- পুণ্যফল সূত্র (দ্বিতীয়)
৫২. “হে ভিক্ষুগণ! চার প্রকারে পুণ্যফল, কুশল সম্পদ, সুখাহার, স্বর্গসুখ, সুখজনকফল, স্বর্গসংবর্তনিক; মঙ্গলার্থে, প্রীতিকরার্থে, প্রফুল্লার্থে সংবর্তিত হয়। সেই চার প্রকার কি কি? যথা-
এজগতে আর্যশ্রাবক বুদ্ধের প্রতি অটল শ্রদ্ধাসম্পন্ন হন- “ইনি সেই ভগবান অর্হৎ, সম্যক সম্বুদ্ধ, বিদ্যা ও সু-আচরণসম্পন্ন, সুগত, লোকজ্ঞ, অনুত্তর (শ্রেষ্ঠ) পুরুষদমনকারী সারথি, দেব-মানবের শাস্তা, বুদ্ধ, ভগবান।” এ’প্রথম প্রকারে পুণ্যফল কুশলসম্পদ, সুখাহার, স্বর্গসুখ, সুখজনক ফল, স্বর্গসংবর্তনিক; মঙ্গলার্থে, প্রীতিকরার্থে, প্রফুল্লার্থে, হিতার্থে, সুখার্থে, সংবর্তিত হয়।
এজগতে আর্যশ্রাবক ধর্মের প্রতি অটল শ্রদ্ধাসম্পন্ন হন- “ভগবান কর্তৃক ধর্ম সুন্দররূপে ব্যাখ্যাত, সন্দৃষ্টিক (স্বয়ং দর্শনীয়), অকালিক (ফল প্রদানে কালাকাল নেই), এসে দেখার যোগ্য, ঔপনায়িক (নির্বাণে উপনয়নকারী), বিজ্ঞগণ কর্তৃক প্রত্যক্ষীভূত।” এ’দ্বিতীয় প্রকারে পুণ্যফল, কুশলসম্পদ, সুখাহার, স্বর্গসুখ, সুখজনক ফল, স্বর্গসংবর্তনিক; মঙ্গলার্থে, প্রীতিকরার্থে, প্রফুল্লার্থে, হিতার্থে, সুখার্থে, সংবর্তিত হয়।
এজগতে আর্যশ্রাবক সঙ্ঘের প্রতি অটল শ্রদ্ধাসম্পন্ন হন- “ভগবানের শ্রাবকসঙ্ঘ সুপথে প্রতিপন্ন, সোজাপথে প্রতিপন্ন, ন্যায়পথে প্রতিপন্ন, সমীচিনপথে প্রতিপন্ন, চারিযুগল এবং অষ্টপুদ্গল ভগবানের শ্রাবকসঙ্ঘ আহ্বানের যোগ্য, পূজার যোগ্য, দক্ষিণার যোগ্য, অঞ্জলিবদ্ধ নমস্কারের যোগ্য এবং জগতের অনুত্তর পুণ্যক্ষেত্র।” এ’তৃতীয় প্রকারে পুণ্যফল, কুশলসম্পদ, সুখাহার, স্বর্গসুখ, সুখজনক ফল, স্বর্গসংবর্তনিক; মঙ্গলার্থে, প্রীতিকরার্থে, প্রফুল্লার্থে, হিতার্থে, সুখার্থে, সংবর্তিত হয়।
এজগতে আর্যশ্রাবক অখণ্ড, অছিদ্র, পরিপূর্ণ, বিশুদ্ধ, বিমুক্ত, বিজ্ঞগণ কর্তৃক প্রশংসিত, নির্মল, সমাধি সংবর্তনিক, আর্যপ্রশংসিত শীলে সমন্বিত হন। ভিক্ষুগণ, এ’চতুর্থ প্রকারে পুণ্যফল, কুশলসম্পদ, সুখাহার, স্বর্গসুখ, সুখজনক ফল, স্বর্গসংবর্তনিক; মঙ্গলার্থে, প্রীতিকরার্থে, প্রফুল্লার্থে, হিতার্থে, সুখার্থে, সংবর্তিত হয়।
“শ্রদ্ধা যার তথাগতে, অচল সুপ্রতিষ্ঠিত,
শীলে কল্যাণ, আর্যদের প্রশংসিত।
সংঘে যার প্রসন্নতা ঋজুমার্গ দর্শন,
মহাধনী জান, অব্যর্থ তার জীবন।
তাই শ্রদ্ধা, শীল, প্রসন্ন ধর্ম দর্শনে,
নিয়োজিত হয় মেধাবী! বুদ্ধশাসনে।”
(দ্বিতীয় সূত্র)
৩. পঠমসংবাসসুত্তং- মিলন সূত্র (প্রথম)
৫৩. একসময় ভগবান মধুরা এবং বৈরঞ্জের মধ্যবর্তী দীর্ঘরাস্তা দিয়ে গমন করছিলেন। বহু গৃহপতি, গৃহপত্নীও সেপথে গমন করছিল। কিছুক্ষণ পর ভগবান পথপার্শ্বস্থ কোন এক বৃক্ষমূলে উপবিষ্ট হলেন। গৃহপতি, গৃহপত্নীগণ ভগবানকে বৃক্ষমূলে উপবিষ্ট অবস্থায় দেখতে পেয়ে ভগবানের কাছে উপস্থিত হয়ে অভিবাদন পূর্বক একপার্শ্বে উপবেশন করল। ভগবান তাদেরকে এরূপ বললেন- “হে গৃহপতিগণ! গৃহীদের মিলন চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- অসুরের সাথে অসুরীর মিলন, অসুরের সাথে দেবীর মিলন, দেবের সাথে অসুরীর মিলন এবং দেবের সাথে দেবীর মিলন।
অসুরের সাথে অসুরীর মিলন কিরূপ? এজগতে কোন স্বামী প্রাণীহত্যা করে, চুরি করে, ব্যভিচারে রত হয়, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে, মদ্যপান করে; দুঃশীল, পাপধর্ম পরায়ণ হয় এবং মাৎসর্যমল চিত্তে গৃহে অবস্থান করে, শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের তিরস্কারকারী হয়। তার স্ত্রীও প্রাণীহত্যা করে, চুরি করে, ব্যভিচারে রতা হয়, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে, মদ্যপান করে; দুঃশীলা, পাপধর্ম পরায়ণা হয় এবং মাৎসর্যমল চিত্তে গৃহে অবস্থান করে; শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের তিরস্কারকারীনী হয়। এটি হল অসুরের সাথে অসুরীর মিলন।
অসুরের সাথে দেবীর মিলন কিরূপ? এজগতে কোন স্বামী প্রাণীহত্যা করে, চুরি করে, ব্যভিচারে রত হয়, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে, মদ্যপান করে; দুঃশীল, পাপধর্ম পরায়ণ হয় এবং মাৎসর্যমল চিত্তে গৃহে অবস্থান করে; শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের তিরস্কারকারী হয়। কিন্তু তার স্ত্রী প্রাণীহত্যা করে না, চুরি করে না, ব্যভিচারে রতা হয় না, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে না, মদ্যপান করে না; সুশীলা, সদ্ধর্ম পরায়ণা হয় এবং মাৎসর্যমল বিহীন চিত্তে গৃহে অবস্থান করে; শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের প্রশংসাকারীনী হয়। এটি হল অসুরের সাথে দেবীর মিলন।
দেবের সাথে অসুরীর মিলন কিরূপ? এজগতে কোন স্বামী প্রাণীহত্যা করে না, চুরি করে না, ব্যভিচারে রত হয় না, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে না, মদ্যপান করে না; সুশীল, সদ্ধর্ম পরায়ণ এবং মাৎসর্যমল বিহীন চিত্তে গৃহে অবস্থান করে; শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের প্রশংসাকারী হয়। কিন্তু তার স্ত্রী প্রাণীহত্যা করে, চুরি করে, ব্যভিচারে রতা হয়, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে, মদ্যপান করে; দুঃশীলা, পাপধর্ম পরায়ণা হয় এবং মাৎসর্যমল চিত্তে গৃহে অবস্থান করে; শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের তিরস্কারকারীনী হয়। এটি হল দেবের সাথে অসুরীর মিলন।
দেবের সাথে দেবীর মিলন কিরূপ? এজগতে কোন স্বামী প্রাণীহত্যা করে না, চুরি করে না, ব্যভিচারে রত হয় না, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে না, মদ্যপান করে না; সুশীল, সদ্ধর্ম পরায়ণ এবং মাৎসর্যমল বিহীন চিত্তে গৃহে অবস্থান করে; শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের প্রশংসাকারী হয়। তার স্ত্রীও প্রাণীহত্যা করে না, চুরি করে না, ব্যভিচারে রতা হয় না, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে না, মদ্যপান করে না; সুশীলা, সদ্ধর্ম পরায়ণা এবং মাৎসর্যমল বিহীন চিত্তে গৃহে অবস্থান করে; শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের প্রশংসাকারীনী হয়। এটি হল দেবের সাথে দেবীর মিলন। গৃহপতি! এই চার প্রকার মিলন।”
“স্বামী স্ত্রী উভয়ে হলে দুঃশীল, কদর্যভাষী,
সেই মিলনকে বলা হয় অসুর- অসুরী।
স্বামী হলে দুঃশীল, কদর্যভাষী ভীষণ,
স্ত্রী মিষ্টভাষী, শীলবতী আর মাৎসর্যহীন।
এটাকে বলে অসুরের সনে দেবীর মিলন,
স্বামী হলে শীলবান, মিষ্টভাষী, মাৎসর্যহীন।
স্ত্রী হলে কদর্যভাষিণী আর দুঃশীলা ভীষণ,
এটাকে বলে অসুরীর সনে দেবের মিলন।
উভয়ে শ্রদ্ধাশীল, মিষ্টভাষী, সংযত ধার্মিক,
দম্পতি তারা, পরস্পরের আনন্দদায়ক।
ভোগাকাঙক্ষা বহুল, আমোদপ্রিয়ে আবির্ভাব,
সমআচরিতে লভে অমিত্র, দুঃখ কারাবাস।
উভয়ে হলে লোকে শীলবান ও ধর্মচারী,
দেবলোকে আনন্দিত, সব ইচ্ছা পূর্ণকারী।”
(তৃতীয় সূত্র)
৪. দুতিযসংবাসসুত্তং- মিলন সূত্র (দ্বিতীয়)
৫৪. “হে ভিক্ষুগণ! মিলন চার প্রকার। সেই চার প্রকার কি কি? যথা- অসুরের সাথে অসুরীর মিলন, অসুরের সাথে দেবীর মিলন, দেবের সাথে অসুরীর মিলন, দেবের সাথে দেবীর মিলন।
অসুরের সাথে অসুরীর মিলন কিরূপ? এজগতে কোন স্বামী প্রাণীহত্যা করে, চুরি করে, ব্যভিচারে রত হয়, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে, মদ্যপান করে; দুঃশীল, পাপধর্ম পরায়ণ হয় এবং মাৎসর্যমল চিত্তে গৃহে অবস্থান করে; শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের তিরস্কারকারী হয়। তার স্ত্রীও প্রাণীহত্যা করে, চুরি করে, ব্যভিচারে রতা হয়, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে, মদ্যপান করে; দুঃশীলা, পাপধর্ম পরায়ণা হয় এবং মাৎসর্যমল চিত্তে গৃহে অবস্থান করে; শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের তিরস্কারকারীনী হয়। এটি হল অসুরের সাথে অসুরীর মিলন।
অসুরের সাথে দেবীর মিলন কিরূপ? এজগতে কোন স্বামী প্রাণীহত্যা করে, চুরি করে, ব্যভিচারে রত হয়, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে, মদ্যপান করে; দুঃশীল, পাপধর্ম পরায়ণ হয় এবং মাৎসর্যমল চিত্তে গৃহে অবস্থান করে; শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের তিরস্কারকারী হয়। কিন্তু তার স্ত্রী প্রাণীহত্যা করে না, চুরি করে না, ব্যভিচারে রতা হয় না, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে না, মদ্যপান করে না; সুশীলা, সদ্ধর্ম পরায়ণা হয় এবং মাৎসর্যমল বিহীন চিত্তে গৃহে অবস্থান করে; শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের প্রশংসাকারীনী হয়। এটি অসুরের সাথে দেবীর মিলন।
দেবের সাথে অসুরীর মিলন কিরূপ? এজগতে কোন স্বামী প্রাণীহত্যা করে না, চুরি করে না, ব্যভিচারে রত হয় না, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে না, মদ্যপান করে না; সুশীল, সদ্ধর্ম পরায়ণ এবং মাৎসর্যমল বিহীন চিত্তে গৃহে অবস্থান করে; শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের প্রশংসাকারী হয়। কিন্তু তার স্ত্রী প্রাণীহত্যা করে, চুরি করে, ব্যভিচারে রতা হয়, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে, মদ্যপান করে; দুঃশীলা, পাপধর্ম পরায়ণা হয় এবং মাৎসর্যমল চিত্তে গৃহে অবস্থান করে; শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের তিরস্কারকারীনী হয়। এটি হল দেবের সাথে অসুরীর মিলন। ভিক্ষুগণ! এ’চার প্রকার মিলন।”
দেবের সাথে দেবীর মিলন কিরূপ? এজগতে কোন স্বামী প্রাণীহত্যা করে না, চুরি করে না, ব্যভিচারে রত হয় না, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে না, মদ্যপান করে না; সুশীল, সদ্ধর্ম পরায়ণ এবং মাৎসর্যমল বিহীন চিত্তে গৃহে অবস্থান করে; শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের প্রশংসাকারী হয়। তার স্ত্রীও প্রাণীহত্যা করে না, চুরি করে না, ব্যভিচারে রত হয় না, মিথ্যাবাক্য ভাষণ করে না, মদ্যপান করে না; সুশীলা, সদ্ধর্ম পরায়ণা এবং মাৎসর্যমল বিহীন চিত্তে গৃহে অবস্থান করে; শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের প্রশংসাকারীনী হয়। এটি হল দেবের সাথে দেবীর মিলন। ভিক্ষুগণ! এই চার প্রকার মিলন।”
“স্বামী স্ত্রী উভয়ে হলে দুঃশীল, কদর্যভাষী,
সেই মিলনকে বলা হয় অসুর- অসুরী।
স্বামী হলে দুঃশীল, কদর্যভাষী ভীষণ,
স্ত্রী মিষ্টভাষী, শীলবতী আর মাৎসর্যহীন;
এটাকে বলে অসুরের সনে দেবীর মিলন।
স্বামী হলে শীলবান, মিষ্টভাষী ও মাৎসর্যহীন,
স্ত্রী হলে কদর্যভাষিণী আর দুঃশীলা ভীষণ;
এটাকে বলে অসুরীর সনে দেবের মিলন।
উভয়ে শ্রদ্ধাশীল, মিষ্টভাষী, সংযত ধার্মিক,
দম্পতি তারা, পরস্পরের আনন্দদায়ক।
ভোগাকাঙক্ষা বহুল, আমোদপ্রিয়ে আবির্ভাব,
সমআচরিতে লভে অমিত্র, দুঃখ কারাবাস।
উভয়ে হলে লোকে শীলবান ও ধর্মচারী,
দেবলোকে আনন্দিত, সব ইচ্ছা পূর্ণকারী।”
(চতুর্থ সূত্র)
৫. পঠমসমজীবীসুত্তং-সমজীবী সূত্র (প্রথম)
৫৫. আমি এরূপ শুনেছি- একসময় ভগবান ভগ্গরাজ্যের সুংসুমারগিরিস্থ ভেসকলাবন মৃগদায়ে অবস্থান করছিলেন। একদিন ভগবান পূর্বাহ্ন সময়ে চীবর পরিধান করতঃ পাত্র গ্রহণ করে গৃহপতি নকুলপিতার গৃহে উপস্থিত হলেন। উপস্থিত হয়ে প্রজ্ঞাপ্ত আসনে উপবেশন করলেন। তখন গৃহপতি নকুলপিতা এবং গৃহপত্নী নকুলমাতা ভগবানের কাছে উপস্থিত হয়ে অভিবাদন করতঃ একপার্শ্বে উপবেশন করল। উপবিষ্ট নকুলপিতা ভগবানকে এরূপ বলল-‘ভন্তে! যে সময় গৃহপত্নী নকুলমাতা নিতান্ত অল্পবয়স্কা, তখন তাকে আমার গৃহে আনা হয়েছিল। সে হতে আমি তাকে মনে মনেও পাপাচারিনী বলে জানি না, কায়িকভাবে পাপাচারিণী বলে কিভাবে জানবো? ভন্তে, আমরা বর্তমান জন্মে যেভাবে একে অপরকে দর্শন করছি, ভবিষ্যত জন্মেও ঠিক সেভাবে একে অপরকে দর্শন করতে ইচ্ছাপোষণ করি। গৃহপত্নী নকুলমাতাও এরূপ বলল- “যে সময় আমি নিতান্ত অল্পবয়স্কা, তখন আমাকে গৃহপতি নকুলপিতার গৃহে আনা হয়েছিল। সে হতে আমি তাকে মনে মনেও পাপাচারী বলে জানি না। কায়িকভাবে পাপাচারী বলে কিভাবে জানবো? ভন্তে, আমরা বর্তমান জন্মে যেভাবে একে অপরকে দর্শন করছি, ভবিষ্যত জন্মেও ঠিক সেভাবে একে অপরকে দর্শন করতে ইচ্ছাপোষণ করি।”
অতঃপর ভগবান বললেন- হে গৃহপতি ও গৃহপত্নী! যদি কোন স্বামী-স্ত্রী বর্তমান জন্মে যেভাবে একে অপরকে দর্শন করছে, ঠিক সেভাবে ভবিষ্যত জন্মেও একে অপরকে দর্শন করতে ইচ্ছুক হওতঃ উভয়ে সমশ্রদ্ধাসম্পন্ন, সমশীলসম্পন্ন, সমত্যাগী, সমপ্রজ্ঞাসম্পন্ন হয়; তাহলে তারা বর্তমান জন্মে যেভাবে একে অপরকে দর্শন করছে, ভবিষ্যত জন্মেও ঠিক সেভাবে একে অপরকে দর্শন করতে পারবে।
“উভয়ে শ্রদ্ধাশীল, মিষ্টভাষী সংযত ধার্মিক,
দম্পতি তারা, পরস্পরের আনন্দদায়ক।
ভোগাকাঙক্ষা বহুল, আমোদপ্রিয়ে আবির্ভাব,
সমআচরিতে লভে অমিত্র, দুঃখ কারাবাস।
উভয়ে হলে লোকে শীলবান ও ধর্মচারী।
দেবলোকে আনন্দিত, সবইচ্ছা পূরণকারী।”
(পঞ্চম সূত্র)
৬. দুতিযসমজীবীসুত্তং-সমজীবী সূত্র (দ্বিতীয়)
৫৬. “হে ভিক্ষুগণ! কোন স্বামী-স্ত্রী যদি বর্তমান জন্মে যেভাবে একে অপরকে দর্শন করছে, ঠিক সেভাবে ভবিষ্যত জন্মেও একে অপরকে দর্শন করতে ইচ্ছুক হওতঃ উভয়ে সমশ্রদ্ধাসম্পন্ন, সমশীলসম্পন্ন, সমত্যাগী, সমপ্রজ্ঞাসম্পন্ন হয়; তাহলে তারা বর্তমান জন্মে যেভাবে একে অপরকে দর্শন করছে, ভবিষ্যত জন্মেও ঠিক সেভাবে একে অপরকে দর্শন করতে পারবে।”
“উভয়ে শ্রদ্ধাশীল, মিষ্টভাষী সংযত ধার্মিক,
দম্পতি তারা, পরস্পরের আনন্দদায়ক।
ভোগাকাঙক্ষা বহুল, আমোদপ্রিয়ে আবির্ভাব,
সমআচরিতে লভে অমিত্র, দুঃখ কারাবাস।
উভয়ে হলে লোকে শীলবান ও ধর্মচারী।
দেবলোকে আনন্দিত, সবইচ্ছা পূরণকারী।”
(ষষ্ঠ সূত্র)
৭. সুপ্পবাসাসুত্তং-সুপ্রবাসা সূত্র
৫৭. একসময় ভগবান কোলিয়রাজ্যে পজ্জনিক নামক কোলিয় নিগমে অবস্থান করছিলেন। একদিন ভগবান পূর্বাহ্ন সময়ে চীবর পরিধান পূর্বক পাত্র গ্রহণ করে, কোলিয়কন্যা সুপ্রবাসার গৃহে উপস্থিত হলেন। উপস্থিত হয়ে প্রজ্ঞাপ্ত আসনে উপবেশন করলেন। তখন কোলিয়কন্যা সুপ্রবাসা স্বহস্তে ভগবানকে উৎকৃষ্ট খাদ্য ভোজনাদি দান দিয়ে পরিতৃপ্ত, পরিতুষ্ট করলেন। অতঃপর ভগবানের ভোজনকৃত্য শেষ হলে একপার্শ্বে উপবেশন করলেন। উপবিষ্টা সুপ্রবাসাকে ভগবান এরূপ বললেন- সুপ্রবাসে! ভোজনদাতা আর্যশ্রাবিকা প্রতিগ্রাহকদেরকে চারটি বিষয় দান করে। সেই চারটি কি কি? যথা- আয়ু দান করে, বর্ণ দান করে, সুখ দান করে, বল দান করে। আয়ু দান করে দাতা মনুষ্যলোকে মনুষ্যআয়ু এবং দেবলোকে দেবআয়ুর ভাগী হয়। বর্ণ দান করে মনুষ্যলোকে মনুষ্যবর্ণ এবং দেবলোকে দেববর্ণের ভাগী হয়। সুখ দান করে মনুষ্যলোকে মনুষ্যসুখ এবং দেবলোকে দেবসুখের ভাগী হয়। বল দান করে মনুষ্যলোকে মনুষ্যবল এবং দেবলোকে দেববলের ভাগী হয়। সুপ্রবাসে! ভোজনদাতা আর্যশ্রাবিকা প্রতিগ্রাহকদেরকে এই চারটি বিষয় দান করে।”
“উত্তম ভোজন দান করে যেজন,
লভে সে উত্তম, বিশুদ্ধ ব্যঞ্জন।
ঋজুভাবে সম্পন্ন হলে দাক্ষিণ্য,
ফল লভে মহা, অমূল্য।
পুণ্য সম্পাদনে, পুণ্যে উপযুক্ত,
ফলদায়ক ইহা, লোকজ্ঞ বর্ণিত।
এরূপ পুণ্যযজ্ঞে যারা অনুচারি,
এজগতে তারা আনন্দ বিচরি।
অপসারণ করে যেবা মাৎসর্যমল,
অনিন্দিত সেই, স্বর্গে উৎপন্ন।”
(সপ্তম সূত্র)
৮. সুদত্তসুত্তং- সুদত্ত সূত্র
৫৮. একসময় গৃহপতি অনাথপিণ্ডিক ভগবানের নিকট উপস্থিত হলেন। উপস্থিত হয়ে ভগবানকে অভিবাদন করতঃ একপার্শ্বে উপবেশন করলেন। উপবিষ্ট গৃহপতি অনাথপিণ্ডিককে ভগবান এরূপ বললেন-“হে গৃহপতি! ভোজনদাতা আর্যশ্রাবক প্রতিগ্রাহকদেরকে চারটি বিষয় দান করে। সেই চারটি বিষয় কি কি? যথা- আয়ু দান করে, বর্ণ দান করে, সুখ দান করে, বল দান করে। আয়ু দান করে দাতা মনুষ্যলোকে মনুষ্যআয়ু এবং দেবলোকে দেবআয়ুর ভাগী হয়। বর্ণ দান করে মনুষ্যলোকে মনুষ্যবর্ণ এবং দেবলোকে দেববর্ণের ভাগী হয়। সুখ দান করে মনুষ্যলোকে মনুষ্যসুখ এবং দেবলোকে দেবসুখের ভাগী হয়। বল দান করে মনুষ্যলোকে মনুষ্যবল এবং দেবলোকে দেববলের ভাগী হয়। গৃহপতি! ভোজন দাতা আর্যশ্রাবক প্রতি গ্রাহকদেরকে এই চারটি বিষয় দান করে।
“সংযত, নির্লোভীকে করে ভোজন দান,
আয়ু, বর্ণ, সুখ, বল লাভ এ’চার স্থান।
হয়ে আয়ু, বর্ণ, সুখ বল দানকারী,
ভবে জন্ম নেয় সে, দীর্ঘায়ু, যশস্বী।”
(অষ্টম সূত্র)
৯. ভোজনসুত্তং-ভোজন সূত্র
৫৯. “হে ভিক্ষুগণ! ভোজনদাতা দায়ক প্রতিগ্রাহকদেরকে চারটি বিষয় দান করে। সেই চারটি কি কি? যথা- আয়ু দান করে, বর্ণ দান করে, সুখ দান করে, বল দান করে। আয়ু দান করে দাতা মনুষ্যলোকে মনুষ্যআয়ু এবং দেবলোকে দেবআয়ুর ভাগী হয়। বর্ণ দান করে মনুষ্যলোকে মনুষ্যবর্ণ এবং দেবলোকে দেববর্ণের ভাগী হয়। সুখ দান করে মনুষ্যলোকে মনুষ্যসুখ এবং দেবলোকে দেবসুখের ভাগী হয়। বল দান করে মনুষ্যলোকে মনুষ্যবল এবং দেবলোকে দেববলের ভাগী হয়। ভিক্ষুগণ! ভোজনদাতা দায়ক প্রতিগ্রাহকদেরকে এই চারটি বিষয় দান করে।”
“সংযত, নির্লোভীকে করে ভোজন দান,
আয়ু, বর্ণ, সুখ, বল লাভ এ’চার স্থান।
হয়ে আয়ু, বর্ণ, সুখ বল দানকারী,
ভবে জন্ম নেয় সে, দীর্ঘায়ু, যশস্বী।”
(নবম সূত্র)
১০. গিহিসামীচিসুত্তং-গৃহী প্রতিপদা সূত্র
৬০. একসময় গৃহপতি অনাথপিণ্ডিক ভগবানের কাছে উপস্থিত হলেন। উপস্থিত হয়ে ভগবানকে অভিবাদন করতঃ একপার্শ্বে উপবেশন করলেন। উপবিষ্ট গৃহপতি অনাথপিণ্ডিককে ভগবান বললেন-“হে গৃহপতি! চার ধর্মে সমন্বিত আর্যশ্রাবক গৃহী জীবনের উপযুক্ত ধারায় প্রবিষ্টকারী, যশ-কীর্ত্তিলাভী এবং স্বর্গমোক্ষলাভী হয়। সেই চার ধর্ম কি কি? যথা-
এজগতে কোন আর্যশ্রাবক ভিক্ষুসঙ্ঘকে চীবর, খাদ্য-ভোজ্য, শয়নাসন ও গিলান প্রত্যয়-ভৈষজ্যাদি দান দিয়ে সেবা করে। গৃহপতি, এ’চার ধর্মে সমন্বিত আর্যশ্রাবক গৃহী জীবনের উপযুক্ত ধারায় প্রবিষ্টকারী, যশকীর্তিলাভী এবং স্বর্গমোক্ষলাভী হয়।”
“পণ্ডিতজনে সেবে গৃহী সমুচিত পদে,
দান দেয় চীবর, শীলবান সম্যকগতে।
পিণ্ডপাত, শয্যাসন আর গিলান প্রত্যয়ে,
এসবে বাড়ে পুণ্য, দিন আর রাতে।
স্বর্গে উৎপন্ন, উৎকৃষ্ট কর্ম সম্পাদনে,
বুদ্ধের বাণী ইহা, সদা মঙ্গল আনে।”
(দশম সূত্র)
পুণ্যসম্পদ বর্গ সমাপ্ত
স্মারক গাথা-
দুই পুণ্যফল, দুই মিলন, দু’সমজীবী,
সুপ্রবাসা, সুদত্ত, ভোজন আর গৃহীনীতি।