ব্রেকিং নিউজ

রাজার নামে শুধু -রাজানগর রাজবাড়ি

রাজার নামে শুধু #রাজানগর_রাজবিহার
সাইনবোডটিই নামে মাএই আছে!

রাঙ্গুনিয়া রাজানগরে চাকমা রাজবাড়িটি সংস্কারের অভাবে কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রসিদ্ধ ও প্রাচীন চাকমা রাজবাড়িটি ইতিহাসের একটি অধ্যায়। প্রায় ২৭৬ বছর আগে রাঙ্গুনিয়ার উত্তর রাজানগরে ৩৬ একর ভূমিতে রাজবাড়ি স্থাপন করা হয়। মূল রাজবাড়িটি প্রায় ৩০ শতক জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে। রাজবাড়ির সীমানায় বিশাল ২টি দিঘী খনন, ১টি পুকুর রয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে সাক্ষ্যমনি রাজবিহার নামে ২টি খেয়াং। প্রাচীনতম সেই স্থাপনাগুলো এখনো কালের সাক্ষী হিসেবে বিদ্যমান। রাজবাড়িটি রক্ষায় সরকারি-বেসরকারিভাবে কোন সহায়তা বা সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশিষ রায়ের দাদা ৮০ বছরের বৃদ্ধ প্রমোতোষ দেওয়ান জানান।

সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়,
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে চাকমাদের ঐতিহাসিক রাজবাড়িটি অবস্থিত। তৎকালীন আদিবাসী চাকমা রাজবাড়ির পাশে রাজারহাট নামে একটি বিশাল এলাকাজুড়ে বাজার গড়ে ওঠে, যা এখনো বিদ্যমান রয়েছে। তৎকালীন রাজবাড়ির চাকমারা রাজত্ব করার কারণে রাজানগর ইউনিয়ন হিসেবে এই এলাকাটি পরিচিত। রাজা সেখান থেকে অত্র এলাকার জমির খাজনা আদায়, বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। রাজা পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন।

রাঙ্গুনিয়া চাকমাদের ইতিহাস সম্পর্কে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তৎকালীন আরাকানিদের অত্যাচারে চাকমারা মোগল নবাবের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন। তখন চট্টগ্রামের রাজা ছিলেন জুলকদর খাঁ। তিনি শের মুস্তখাকে রাঙ্গুনিয়া পাহাড়ি অঞ্চলে (বর্তমান রাজানগর) বসতি স্থাপনের অনুমতি প্রদান করেন। ১৭৩৭ সালে এখানে চাকমা রাজত্বের গোড়াপত্তন হয়। ১৭৫৭ সালে মুস্তখার মৃত্যুর পর সুখদের রায় রাজা হন। তিনি শের মুস্তখার পোষ্যপুত্র ছিলেন। রাজা সুখদেব রায় পূর্বের রাজধানী আলীকদম ত্যাগ করে চাকমা অধ্যুষিত রাঙ্গুনিয়ার পদুয়ায় শিলক নদীর তীরে প্রাসাদ নির্মাণ করে সুখবিলাস নাম প্রদান করে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। তার রানীর নাম ছিল ছেলেমা। রানীর নামানুসারে রাজপ্রাসাদের পশ্চিমাংশে ছেলেমার নামে একটি পুকুরের নামকরণ করা হয়। নিঃসন্তান সুখ দেবের মৃত্যুর পর ১৭৭৬ সালে শের দৌলত খাঁ রাজ্যভার গ্রহণ করেন।

এখানে উল্লেখ্য, রাজা ফতেহ খাঁর তিন পুত্র। রাজা শের দৌলত খাঁ ছিলেন রাজা ফতেহ খাঁর দ্বিতীয় পুত্র। রাজা শের দৌলত ব্রিটিশ কোম্পানি আমলের প্রথম চাকমা রাজা। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র জানবক্স খাঁ ১৭৮২ সালে রাজা হন। তিনি ১৭৯৯ সাল পর্যন্ত রাজস্ব করেন। তিনি নানাবিধ অসুবিধার দরুন সুখবিলাস হতে রাঙ্গুনিয়া চাকমা অধ্যুষিত রাজানগরে রাজধানী স্থানান্তর করেন। অতঃপর জানবক্স খাঁর মৃত্যুর পর ১৮০০ সালে তার পুত্র টববর খাঁ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার সময়ে রাজানগরের সাগরদীঘি খনন করা হয়। সরেজমিন পরিদর্শন করে রাজবাড়ির যে ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়, তাতে চাকমা রাজত্বের গৌরবময় অতীত যেন ডুকরে কেঁদে ওঠে। ধ্বংসাবশেষ বলতে এখানে শুধু ইটের স্তূপ ও গাছপালার জঙ্গলই দেখা যায়। যত্নের অভাবে এক সময়ের পরাক্রমশালী চাকমা রাজত্বের সর্বশেষ প্রত্ননিদর্শনটুকুও আজ ধ্বংসের মুখে। সর্বশেষ গত বছরের শেষের দিকে ঢাকা থেকে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রকৌশলীর দল চাকমা রাজবাড়িটি পরিদর্শন করেন। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো রক্ষা ও সংস্কার করে জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারকে অবগত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারকরা এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব বলে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিমত।

১৮১২ সালে রাজার মৃত্যু হলে তার পুত্র ধরমবক্স খাঁ রাজা হন। রাজা ধরম বক্ম বার কালিন্দি দেবী, আটকবি ও হারিবি নামে তিন রানী ছিলেন। হারিবির একমাত্র কণ্যার নাম চিকনবী। প্রথম দুই রানী নিঃসন্তান ছিলেন। ১৮৩২ সালে রাজার মৃত্যুর পর তার প্রথমা স্ত্রী কালিন্দি রাজ্যভার গ্রহণ করেন। চাকমা রাজত্বের মধ্যে কালিন্দি দেবী রানী সময়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, ধর্মপরায়না ও সৎগুণের অধিকারী। তার সময়ে সক্রিয়ভাবে ব্রিটিশ শাসনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি ফরাসি ভাষার পরিবর্তে ইংরেজী ভাষা চালু করেন। তিনি এখানে বৌদ্ধদের জন্য মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। শুধু নিজ ধর্মের প্রতি নয়, অন্যান্য ধর্মের প্রতিও তার অসীম শ্রদ্ধা ছিল। তিনি জানান, জন্ম গ্রহণের পর থেকে চাকমা রাজবাড়িটি পাশে কুড়েঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন। রাজার বংশধররা সবাই রাজানগরের রাজবাড়ি ছেড়ে রাঙ্গামাটিতে বসবাস করলেও তিনি একদিনের জন্য রাজবাড়ি ফেলে যাননি। যতদিন বেঁচে থাকবেন প্রাচীনতম রাজবাড়িটি পাহাড়া দিয়ে যাবেন বলে প্রমোতোষ জানান। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক চাকমা রাজবাড়িটির প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। রাজবাড়ির আশপাশেসহ চারদিক বনজঙ্গলে ছেয়ে গেছে। সংস্কারের অভাবে রাজবাড়ির দেয়াল খসে পড়ছে।

তার নামানুসারে শিলক হতে পদুয়া পর্যন্ত এবং রাজাঘাট হতে পারুয়ার মধ্য দিয়ে যে রাস্তাটি রাজা ভুবনে মিশেছে, এই দুটি সড়কের নামকরণ করা হয় কালিন্দি রানী দেবী সড়ক। ১৮৭৭ সালে রানীর মৃত্যুর পর পৌত্র হরিশ চন্দ্রকে ব্রিটিশ সরকার রাজা উপাধি দিয়ে রাজ্যভার প্রদান করে। হরিশ চন্দ্র হারিবির কণ্যা চিকবির পুত্র। তার পিতা ছিলেন গোপীনাথ দেওয়ান। তদানীন্তন লেফটেনেন্ট গবর্নরের আদেশে ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে রাজা হরিশ চন্দ্র রায় চাকমা রাজত্বের রাজধানী রাজানগর হতে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটিতে স্থানান্তর করেন। ১৮৯৫ সালে রাজার যুবরাজ পুত্র ভুবন মোহন রায়ের বিয়ে মহাসমারোহে রাজা নগরের রাজবাড়িতে সম্পন্ন হয়।

উল্লেখ্য,
নবাব সিরাজুদ্দিন খাঁ চাকমা রাজাদের ওপর খুশি হয়ে তাদেরকে খাঁ উপাধি প্রদান করেন। কালিন্দি রানীর সময় হতে চাকমা রাজাদের সঙ্গে হিন্দুদের ঘনিষ্ঠাতা জন্মায়। সেই সময় থেকে চাকমা রাজারা তাদের নামের শেষে খাঁ বর্জন করে রায় লেখা শুরু করেন। চাকমা রাজাদের শেষ উত্তরসুরি ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় রাজা হিসেবে এখনো অধিষ্ঠিত রয়েছেন।
তথ্য_সুএ:

সম্মন্ধে Debapriya Barua

এটা ও দেখতে পারেন

দানবীর প্রমথ বড়ুয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

দানপতি প্রমথ বড়ুয়া চলমান সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য প্রথম অংশ:- তথ্য সংগ্রহে- দিপানন্দ ভিক্ষু (এম.এ ডবল ও …

Leave a Reply

Translate »