ব্রেকিং নিউজ

☸★•°•‍‌‌~ ঋদ্ধিমান মোদ্গল্যায়ন স্থবিরের পরিনির্বাণ ~•°•★☸

 

ইলা মুৎসুদ্দী ✍

2
আজ অগ্রহায়ন পুর্ণিমা।

বুদ্ধের পরিভাষায় কর্মবিপাক অখন্ডনীয়। অগ্রহায়ন মাসের অমাবস্যায় পরিনির্বাপিত হয়েছিলেন মহাঋদ্ধিমান অগ্রশ্রাবক মৌদ্গল্যায়ন স্থবির।

ঋদ্ধিমান মৌদ্গল্যায়ন স্থবির দেবলোক ব্রক্ষ্মলোক যাঁর নখদর্পনে সেই ঋদ্ধিশ্রেষ্ঠ স্থবির পরিনির্বাণ লাভ করেছেন অগ্রহায়ণ মাসের অমাবস্যায় বেণুবন উদ্যানে। একদিন তথাগত বুদ্ধ ধর্মদেশনা শেষ করার পরে মৌদ্গল্যায়ন স্থবির তথাগতের চরণ বন্দনা করতঃ ধ্যান করার উদ্দেশ্যে সপ্তপর্ণী গুহার অভ্যন্তরে এর সুরম্য নির্জন স্থানে উপবিষ্ট হয়ে গভীর ধ্যানমগ্ন হলেন। সেই সময়ে হাতে বিরাট লৌহদন্ড নিয়ে বৃহৎ আকারে এক দুর্বৃত্ত স্থবিরকে হত্যার উদ্দেশ্যে আসলেন। সেই দুর্বৃত্তকে ভিন্ন ধর্মালম্বীরা মোদ্গল্যায়ন স্থবির এর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রেরণ করেছিল। ঘাতক প্রথম ও দ্বিতীয় দিন যখন হত্যা করতে যায়, তখন স্থবির ঋদ্ধিবলে অদৃশ্য হয়ে যান। ৩য় বারও যখন হত্যা করতে আসলো তখন তিনি তার অতীত কর্মবিপাকের কথা চিন্তা করে আর অদৃশ্য হলেন না। কারণ তিনি জেনে গেছেন এই ঘাতকের হাতেই তাঁর মৃত্যু অবধারিত। স্থবির যখন গভীর ধ্যানাবস্থায় তখন ঘাতক লৌহদন্ড দিয়ে সজোরে আঘাত করল, ধ্যানাবস্থায় তা তিনি বুঝতে পারেননি। ধ্যানভঙ্গ হলে তিনি অনুভব করলেন লৌহদন্ডের আঘাতে শরীরের অস্থিসমূহ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে মাংসপিন্ডে পরিণত হয়েছে। তখন তিনি তীব্র বেদনা অনুভব করলেন। তিনি আবার ঋদ্ধিবলে নিজ দেহ গঠন করে বেণুবনে তথাগতের পাদমূলে পতিত হয়ে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন। অতপর অরহত মৌদগল্যায়ন প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ধ্যানপরায়ণ হয়ে ধীরে ধীরে নির্বাণ ধাতুতে বিলীন কলেন।

ঋদ্ধিশক্তিতে সর্বপ্রধান, যিনি সবসময় স্বর্গ, দেবলোক এবং ব্রস্মলোকে ইচ্ছেমত যাওয়া আসা করতেন, যিনি এক নিমেষে ত্রিলোক ঘুরে আসার ক্ষমতা রাখেন বুদ্ধের সেই অগ্রশ্রাবক অরহত মৌদগল্যায়নকে কেন ঘাতক দ্বারা এভাবে নিহত হতে হল? বুদ্ধ বললেন, সূদুর অতীতে বারাণসীতে তিনি এক সাধারণ গৃহস্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তারা পিতা-মাতা বৃদ্ধ এবং ক্ষীণদৃষ্টি সম্পন্ন ছিলেন বিধায় তার স্ত্রী শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর সেবা-যতœ করতে খুবই বিরক্ত বোধ করতেন। স্ত্রী সবসময় শ্বশুর-শ্বাশুড়ীকে নির্বাসন অথবা মেরে ফেলার জন্য স্বামীকে প্ররোচিত করতেন। একদিন বিরক্ত হয়ে তিনি মাতা-পিতাকে বললেন, ঋণ গ্রহণকারী কিছু লোক আপনাদের প্রদত্ত টাকা ফেরৎ দি্েছ না। আপনারা দুইজন গেলে টাকা ফেরৎ দিবে। চলুন আপনাদের সঙ্গে নিয়ে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকাগুলি নিয়ে আসি। এভাবে মিথ্যা ছলনা করে মা-বাবাকে এক গরুর গাড়ীতে উঠিয়ে বনে প্রবেশ করে। অন্ধ পিতা-মাতা সরল বিশ্বাসে ছেলের কথা মেনে নিলেন। অরণ্যের মধ্যে হঠাৎ ছেলে গরুর গাড়ী থেকে লাফিয়ে পরে ডাকাত ডাকাত চিৎকার করে মা-বাবার উপর পাথর ছুড়ে মারতে লাগল। প্রস্তরের আঘাতে মা-বাবার দেহ ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলল। তবুও মা-বাবা বলতে লাগল, ডাকাত আমাদের মারছে, তুই পালিয়ে যা। মাতা-পিতার এরকম মৈত্রী করুণা দেখে হঠাৎ তার মনের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেল। নিজের ভুল বুঝতে পেরে আবার মা-বাবাকে নিয়ে বাড়ীতে চলে আসল। পিতা-মাতার প্রতি পাথর ছুঁড়ে মারার কারণে মৃত্যুর পর সুদীর্ঘকাল পয়ন্ত নরকের অসীম দুঃখ যন্ত্রণা ভোগ করেছে। মানুষরূপে জন্ম নিয়ে কয়েক হাজার জন্ম ডাকাত দ্বারা প্রহৃত হয়ে দুঃখ ভোগ করেছেন। শেষ জন্মে তিনি অরহত হয়েও সেই কর্মের বিপাকাবসানে ডাকাতের প্রহারেই পরিনির্বাণ প্রাপ্ত হলেন।

সূত্র ঃ শিক্ষক দীপংকর বড়য়া রচিত বুদ্ধ জীবন পরিক্রমা।

সম্মন্ধে ela mutsuddi

এটা ও দেখতে পারেন

খুব সংক্ষেপে মহাসতিপট্ঠান সহায়িকা

একূশটি উপায়ে অরহ্ত্ত্ব লাভের উপায় তথা কর্মস্থান সংযূক্ত গভীর অর্থসংযুক্ত মহাসতিপট্ঠান সূত্তI এখানে একুশটি উপায়ে …

Leave a Reply

Translate »