ব্রেকিং নিউজ

লিখেছন -নশ্বর সুজয়

একটি মেয়ের গৌরব আজও সারা ভারতের গৌরব-

মহাদান-উৎসবের দিন।
ভগবান বুদ্ধের মহিমা প্রচারের উদ্দেশ্যে মহারাজ আশোক ভারতভূমিতে চুরাশী হাজার বৌদ্ধ-বিহার তৈরী করিয়েছেন। এই সববিহারের ভিক্ষুদের আজ তিনি দান করবেন, তাই আজ মহাদান উৎসব।
মহাজ্ঞানী ভিক্ষু-শ্রেষ্ঠ মহাস্থবীর তীষ্য রাজসভায়এসেছেন, তিনি আসন পেয়েছেন রাজাসনেরও উপর। মহারাজ অশোক তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন—ভদন্ত‌, শ্রেষ্ঠ দান কি?
–নিজের পুত্র কন্যাকে ধর্মের জন্য উৎসর্গ করাই শ্রেষ্ঠ দান। আর যিনি সেই দান করতে পারেন তিনিই শ্রেষ্ঠ দাতা।
মহারাজের পাশে বসেছিলেন কন্যা সঙ্ঘমিত্রা আর পুত্র মহেন্দ্র সম্রাট তাঁদের পানে তাকালেন। সঙ্ঘমিত্রা এই শুভ মুহূর্তটির প্রতীক্ষা করছিলেন, বললেন—মহারাজ, আপনার অনুমতি পেলে আমি ভিক্ষুণী হয়ে দেশে দেশে সদধর্মের বাণী প্রচার করি—এই আমার চিরদিনের কামনা।
রাজকুমার মহেন্দ্র এসে দাঁড়ালেন বোনের পাশে, বললেন—মহারাজা আমাকেও অনুমতি করুন।
সভার মাঝে সজল চোখে মহারাজ অশোক পুত্র ও কন্যাকে তুলে দিলেন মহাস্থবিরের হাতে।
গেরুয়া বসনে রাজপুত্র ও রাজকন্যা এসে দাঁড়ালেন মায়ের কাছে। মা সজল চোখে—সম্রাট শেষে তোমাদের রাজভোগে বঞ্চিত করলেন।
সঙ্ঘমিত্রা বললেন—না মা, রাজভোগে আমার আকাঙ্ক্ষা নেই, তাই স্বেচ্ছায় এই পবিত্র ধর্মে দীক্ষা নিলাম, এ আমার আশৈশবের স্বপ্ন।
তারপর শাস্ত্রপাঠ শেষ করে ভাইয়ের হাত ধরে ভিক্ষুণী সঙ্ঘমিত্রা যাত্রা করলেন দিগ্বিজয়ে। ভিক্ষুণী সম্রাট-নন্দিনীকে দেখার জন্য ভারতের প্রান্ত থেকে প্রান্তান্তরে সাড়া পড়ে গেল, পায়ের ধুলো নিয়ে ধন্য মনে করলো নিজেকে।
কন্যাকুমারী থেকে ভাইবোন একদিন এসে পৌঁছলেন সিংহল-তটে। সিংহল রাজ মৃগয়া করতে বেরিয়ে ছিলেন, বনের মাঝে অপরূপ দেবমূর্তি দেখে তিনি বিস্মিত হলেন, বললেন—কে আপনারা?
–আমরা ভারতসম্রাটের ছেলেমেয়ে। ভিক্ষু ও ভিক্ষুণী। তলোয়ারের জেরে আপনার দেশ জয় করতে আসিনি, এসেছি ভগবান বুদ্ধের অমর বাণী শুনিয়ে আপনাদের অন্তর জয় করতে।
সিংহল রাজ বিস্মিত হলেন, সারা ভারত যাঁদের অস্ত্রের ঝঞ্জনায় কেঁপে উঠতে পারতো তারা কিনা সর্বহারা ভিক্ষু আর ভিক্ষুণী। রাজা তাঁদেরকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন প্রাসাদে। পুরমহিলারা সঙ্ঘমিত্রার চারিপাশে ভীড় করলো, তাঁর মুখে অপূর্ব ধর্মকথা শুনে সকলে আত্মসমর্পণ করলো তাঁর চরণে। সিংহল-রাজকুমারী অনুলা হলেন ভিক্ষুণী।
তারপর সারা সিংহল দীক্ষা নিল বৌদ্ধধর্মে। রাজকুমারী অনুলা গয়া থেকে বোধিবৃক্ষের শাখা আনিয়ে প্রতিষ্ঠা করালেন সিংহলে।
ভারত-সম্রাটের ভিক্ষুণী-মেয়ের ত্যাগ ও আদর্শের কাছে একটি রাজ্য মাথা নত করলো। তেইশ-শো-বছর আগের সেই জ্ঞানভাস্বর দিগ্বিজয়ের রেশটুকু আজও সিংহলবাসীরা সগৌরবে বহন করে চলেছে। সেই একটি মেয়ের গৌরব আজও সারা ভারতের গৌরব।

সম্মন্ধে SNEHASHIS Priya Barua

এটা ও দেখতে পারেন

পূজনিয় শরনংকর বনাম ডঃ হাছান মাহমুদ বা এরশাদ শিরোনামটা শতভাগ সঠিক নয়

(লেখাটি যে কোন কেউ ছাপাতে পারেন আমার অনুমতির প্রয়োজন নাই) পূজনিয় শরনংকর বনাম ডঃ হাছান …

Leave a Reply

Translate »