ব্রেকিং নিউজ

বৌদ্ধ ধর্মে ঈশ্বর- নশ্বর সুজয়

ভগবান বুদ্ধ মতে, ঈশ্বর বলতে কিছুই নাই। কেননা ঈশ্বর যদি বিশ্বব্রম্মান্ড মনে করেন, তবে তার একটা উদ্দেশ্য থাকবে। উদ্দেশ্য থাকলে তার তৃষ্ণা বা বাসনা থাকবে। তৃষ্ণার একান্ত কারন লোভ। ফলে ঈশ্বর তার সংজ্ঞা হারায়!

এছাড়া বৌদ্ধ ধর্ম মতে, অন্যান্য ধর্মের god অর্থাৎ generator, operator, destructor। অর্থাৎ ঈশ্বর এই কাজ করে থাকে। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মে ঈশ্বর নাই। তাই এই কাজগুলো কিভাবে সংঘটিত হবে? তাদের মতে এগুলো স্বয়ংক্রিয় একটি ‘নির্ভরশীলতা বা আপেক্ষিক’ একটি
পদ্ধতির মাধ্যমে হয়ে থাকে। এই
স্বয়ংক্রিয় পদ্বতিকে ‘বিশ্বজনীন
নীতি’ বা ‘Cosmological Laws’ বলা যায়। বৌদ্ধ ধর্মে যদি সৃষ্টিকর্তা,
ধ্বংসকর্তা, পরিচালনকর্তা রূপে কাউকে বসানো একান্ত প্রয়োজন হয়
তাহলে এই নীতি বসান যায়। সেই
স্বয়ংক্রিয় নীতি সমূহ কি? যেগুলোর
দ্বারা আমাদের সৃষ্টি হয়, পরিচালন হয়, ধ্বংস হয়? এগুলো হচ্ছে-
ক. ঋতু নিয়ম (Rules of Physics or matter)
খ. চিত্ত নিয়ম (Rules of Mind or citta)
গ. বীজ নিয়ম (Rules of Germinal order)
ঘ. কর্ম নিয়ম (Rules of Karma ) এবং
ঙ. ধর্ম নিয়ম ( Rules of Dharma)।

এই পঞ্চনিয়ম একটি অপরটির উপর
নির্ভর করে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড নিয়তঃ
তৈরি করছে, পরিচালন করছে, ধ্বংস
করছে। যদিও বৌদ্ধ ধর্মে ঈশ্বর বলতে
কিছুই নাই তথাপি যদি সৃষ্টিকারী,
ধ্বংসকারী এবং পরিচালনকারী কোন
কিছুকে ধরে নেওয়া হয় তবে বৌদ্ধ
ধর্মে এই পঞ্চনিয়মই হচ্ছে তা।
এ সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞান এবং বুদ্ধের ব্যাখ্যা অভিন্ন। “অগ্গঞা সূত্রে” বুদ্ধের ব্যাখ্যা হলো, লক্ষ লক্ষ বছরের দীর্ঘ সময় ব্যাপী প্রাকৃতিক বিবর্তনের ধারায় সৌরমন্ডল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় সৌরমন্ডলের বর্তমান ঘূর্ণায়মান অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বপ্রকৃতির প্রথম প্রাণীর সৃষ্টি হয় জলে, এককোষী প্রাণী হিসেবে। পরবর্তী পর্যায়ে বিবর্তনের মাধ্যমে এককোষী প্রাণী বহুকোষী যৌগিক প্রাণীতে রুপান্তরীত হয়। প্রাকৃতিক কার্য-কারণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই রুপান্তর ঘটেছে, যা বুদ্ধের “প্রতীত্য সমুৎপাদ সূত্রে”ও দেশিত হয়েছে।
আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না। আমরা মানুষের অপরিমেয় শক্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা বিশ্বাস করি, প্রত্যেক মানুষ মূল্যবান এবং প্রতিটি মানুষের মধ্যে অনন্ত মেধা সুপ্ত আছে। কর্মসাধনায় প্রতিটি মানুষ বুদ্ধের মত প্রজ্ঞা লাভ করে কোন বিষয় আসলে যে রকম ঠিক সেই রকম প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হতে পারেন। আমরা বিশ্বাস করি, মনের ঈর্ষা, ক্রোধ ও ঘৃণার স্থলে করুণা, ক্ষমা ও মৈত্রীর অনূভূতিতে উজ্জিবীত হয়ে প্রতিটি মানুষ নিজ জ্ঞানশক্তির সাহায্যে জীবন জগতের সকল সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। বুদ্ধ বলেছেন আমাদের অন্য কেউ রক্ষা করতে পারে না, নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে হয়।
অজ্ঞতা ধূর করে জ্ঞানের আলোকে জীবনের স্বরুপ জ্ঞাত হয়ে আপন কর্মশক্তির সাহায্যে নিজ নিজ সমস্যা সমাধান করতে হয়। বাস্তব অভিজ্ঞতার জ্ঞানাআলোকে বুদ্ধ স্পষ্ট ভাবে সেই পথ চলার সন্ধান দিয়েছেন।

বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, ” যদি কোন ধর্ম আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সমান
তালে চলে, তা হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্ম।”

এদিক থেকে বৌদ্ধরা খুবই ভাগ্যবান…..

অবশ্য এই ব্যাপারে আরেক মহাপুরুষ ভেন. প্রফেসর আনন্দ কৌশল্যায়না বলেছেন, ” বৌদ্ধরা এতই ভাগ্যবান যে তাদেরকে জন্মের পর
থেকেই ‘কেউনা’ নামক কোন অশরীরি শক্তির নির্দেশ, আদেশ অথবা কোন প্রেরিত বা নাজেলকৃত মতবাদকে অন্ধের মত বিশ্বাস করে জীবন পরিচালনা করতে হয়না।”
ভারত বাংলা উপমহাদেশের প্রখ্যাত পন্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে –
“অজ্ঞানতারই অপর নাম ঈশ্বর। আমরা আমাদের অজ্ঞানতাকে স্বীকার করতে লজ্জা পাই এবং তার জন্য বেশ ভারী গোছের একটা নামের আড়ালে আত্মগোপন করি। সেই ভারী গোছের আড়ালটির নামই ঈশ্বর। ঈশ্বর বিশ্বাসের আরও একটি কারণ হল বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের অপারগতা ও অসহায়ত্ব।”

—-

সম্মন্ধে SNEHASHIS Priya Barua

এটা ও দেখতে পারেন

পূজনিয় শরনংকর বনাম ডঃ হাছান মাহমুদ বা এরশাদ শিরোনামটা শতভাগ সঠিক নয়

(লেখাটি যে কোন কেউ ছাপাতে পারেন আমার অনুমতির প্রয়োজন নাই) পূজনিয় শরনংকর বনাম ডঃ হাছান …

Leave a Reply

Translate »