ব্রেকিং নিউজ

কাঁদা মিশিয়ে চীবর দান করে পুণ্যার্জন!

উজ্জ্বল বড়ুয়া বাসু : নতুন চীবরখানায় বেশ কিছু কাঁদা মিশিয়ে দিলেন ভদ্রমহিলা। পাশের লোকজন তা দেখে হায়! হায়! করে উঠলেন এ যে মহাপাপ! ভিক্ষুর চীবরে নোংরা আবর্জনা মিশানোর ফলে সে নরকে যাবে, এভাবেই নানা মন্তব্য শুরু হয়ে গেল। ভদ্রমহিলাকে একজন সাহস করে কাছে গিয়ে বলল তুমি তো অনেক ধর্মকর্ম করো, এত বড় পাপ করতে গেলে কেন? কেন নতুন চীবর এনে তাতে কাঁদা মিশিয়ে ভান্তের পিন্ডাচরণে যাওয়ার পথে ফেলে রাখলে? ভান্তে দেখলেও তো মনে বেশ কষ্ট পাবেন।

ভদ্রমহিলা শান্তচিত্তে কোমলভাবে উত্তর দিলেন-আমি পাপ নয় পূণ্যার্জনের জন্য এটা করেছি। প্রিয় পাঠক, বৌদ্ধধর্মে বুদ্ধের শিষ্যরা অর্থাৎ ভিক্ষুসংঘরা সংযত কঠোর ব্রহ্মচর্য জীবন প্রতিপালন করেন।আর যারা দ্রুত লোভ, দ্বেষ, মোহের ক্ষয় সাধন করতে অতি উৎসাহী তাঁদের জন্য তথাগত বুদ্ধ ধুতাঙ্গ ব্রতের দেশনা করেছেন। বুদ্ধ তের প্রকার ধুতাঙ্গব্রতের কথা বলেছেন। সেগুলোর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে পাংশুকুলিক ধুতাঙ্গ। যেসব ভিক্ষু পাংশুকুলিক ধুতাঙ্গ প্রতিপালন করেন তাঁরা অধিষ্ঠান করেন যে, আমি গৃহপতিদের দানীয় চীবর প্রত্যাখান করলাম, পাংশুকুলিক ব্রত গ্রহণ করলাম।
দাতা প্রদত্ত কোন বস্ত্র এই ব্রতধারী ভিক্ষু হাchibor-2তে হাতে গ্রহণ করতে পারে না। কেউ শ্রদ্ধায় দান দিলে তা নিতে পারেন বটে নিজে ব্যবহার করতে পারেন না। পথে, ঘাটে, শ্মশানে, আবর্জনা স্তুপে পরিত্যক্ত, অব্যবহার্য্ বস্ত্র খন্ড কুড়িয়ে আপন পরিধেয় বস্ত্র তৈরী করতে হয় এ ব্রত পালনকারী ভিক্ষুকে।

যে কোন পুন্যার্থী উল্লেখিত স্থান সমূহে এ ব্রত পালনকারী ভিক্ষুদের গমনাগমন পথে চীবর বস্ত্রাদি ফেলে দিলে ভিক্ষু তা গ্রহণ করে ব্যবহার করতে পারেন। এ রকম দাতারা হতে পারেন মহাপুণ্যের অধিকারী। পাংশুকুলিক ধুতাঙ্গ তারতম্য ভেদে ত্রিবিধ, যথা-উৎকৃষ্ট, মধ্যম ও মৃদু।
উৎকৃষ্ট- যাঁরা শুধু শ্মশান হতে সংগৃহীত বস্ত্রে চীবর প্রস্তুত করে ব্যবহার করেন তাঁদেরকে উৎকৃষ্ট পাংশুকুলিক ধুতাঙ্গধারী বলা হয়।বর্তমান সময়ে শ্মশানে কাপড় তেমন বেশী পড়ে থাকে না বলে এই ধরণের ধুতাঙ্গধারী খুব কম পাওয়া যায়।

মধ্যম-প্রব্রজিতগণই এই বস্ত্র বা চীবর গ্রহণ করুক এই মনে করে কোন দায়ক চীবর বা বস্ত্র পথিমধ্যে ধুলার বালুতে রেখে গেলে যাঁরা তা গ্রহণ করে এবং পাংশুকুলিক ধুতাঙ্গ অধিষ্ঠান করে ব্যবহার করেন তাঁদেরকে মধ্যম পাংশুকুলিক ধুতাঙ্গধারী বলা হয়।
মৃদু- কোন ভিক্ষু পথ চলার সময় দায়ক যদি ঐ ভিক্ষু দেখে মত তাঁর পাদমূলে চীবর বা বস্ত্র ত্যাগ করে প্রস্থান করে, ভিক্ষুও তা গ্রহণ করেন এবং পাংশুকুলিক ধুতাঙ্গের বিধান অনুসারে ব্যবহার করেন তবে তাঁকে মৃদু পাংশুকুলিক ধুতাঙ্গধারী বলা হয়। গৃহী প্রদত্ত যে কোন চীবর বা বস্ত্র স্বীয় রুচিবশে গ্রহণ করা মাত্রেই পাংশুকুলিক ব্রত ভগ্ন হয়ে যায়।

chibor এবার ভাবুন প্রিয় পাঠক, ভদ্রমহিলা কি আসলেই পাপ করেছেন? ভদ্রমহিলা মহান পুণ্যের ভাগী হওয়ার জন্যই এসব করেছেন। আমাদের আশেপাশে শ্মশানে, পাহাড়ে অনেক ভিক্ষু থাকেন যারা পাংশুকুলিক অধিষ্টান করেছেন কিন্তু তারা তা বলে বেড়ান না। আমাদের উপাসক/উপাসিকাদেরই সচেতন হতে হবে। এতে একদিকে আমাদের মহাকুশল সাধিত হবে অন্যদিকে ভান্তেও চীবরের অভাব বোধ করবেন না। কারণ অনেক ভিক্ষু আছেন যারা মাত্র তিনটা চীবর নিয়ে দিন কাটান অর্থ্যাৎ ত্রিচীবরের অধিষ্টান করে তারা। তাদের অন্য কোন চীবর থাকে না। তাই চলুন সচেতন হই, জ্ঞানী হই, মহাপুণ্যের ভাগী হই।

লেখক : সরকারী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগ, ঢাকা।

সম্মন্ধে Uzzal Barua Basu

এটা ও দেখতে পারেন

মেডিটেশান এবং আপনার ব্রেইন

Leave a Reply

Translate »