ব্রেকিং নিউজ

প্রবারণা নিয়ে আসুক শান্তির বারতা ******ইলা মুৎসুদ্দী

ekauahm_1237718200_1-img_1144বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। সবাইকে প্রবারণা পূর্ণিমার মৈত্রীময় শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশী বৌদ্ধরা বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে আশ্বিনী পূর্ণিমা তথা প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করে থাকি। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিনমাস ভিক্ষুদের বর্ষাবাস পালন এবং গৃহীরা ও তিনমাসব্যাপী অষ্টশীল পালন শেষে আসে প্রবারণা পূর্ণিমা। তাই এই পূর্ণিমা আমাদের নিকট অতীব গুরুত্বপূর্ণ। পালিতে পবারণা শব্দের ব্যাপক অর্থ আছে। যেমন ঃ আপত্তি দেশনা, আশার তৃপ্তি, দোষ ত্রুটি স্বীকার, মানা বা নিষেধ, আমন্ত্রণ বা বরণ ও বারণ। ‘প্র’ উপসর্গের সাথে ‘বারণ’ শব্দ যোগে প্রবারণা, অর্থাৎ প্রকৃষ্টভাবে অকুশল কর্ম করা বারণ। বিনয় মতে পবারণা তথা প্রবারণা শব্দের অর্থ হলো তিন মাসে জ্ঞান অর্জন, ধ্যান-সাধনা করতে গিয়ে কোন ভুলত্র“টি হয়ে থাকলে তা নির্দেশ করার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ। বিনয় পিটকের মহাবগ্গ হতে জানা যায়, বুদ্ধ যখন সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তখন কিন্তু প্রবারণা উৎসবের রীতি ছিল না। বুদ্ধ যখন শ্রাবস্তীর জেতববন বিহারে অবস্থান করছিলেন, তখন কোশল হতে একদল ভিক্ষু বর্ষাবাস সমাপনান্তে বুদ্ধের নিকট উপস্থিত হলে বুদ্ধ তাঁদেরকে কীভাবে বর্ষাবাস যাপন করেছেন জানতে চাইলে ভিক্ষুগণ বলেন, তাঁরা ঝগড়া-বিবাদ এড়ানোর জন্য মৌনভাবে দিন যাপন করেছেন এবং বর্ষাবাস শেষে কারো সাথে কথা না বলে বুদ্ধকে দর্শন করতে এসেছেন। ভিক্ষুদের এরূপ কথা শুনে বুদ্ধ বললেন — হে ভিক্ষুগণ, তোমাদের এরূপ আচরণ প্রশংসাযোগ্য নহে। যেহেতু একসাথে থাকলে বাদ-বিবাদ হতেই পারে। কারণ প্রত্যেকেরই দোষ-ত্র“টি আছে। একস্থানে বাস করার সময় পরষ্পর পরষ্পরকে অনুশাসন করলে উভয়েরই মংগল হবে এবং বুদ্ধ শাসন পরিশুদ্ধ হবে। এতে সমগ্র ভিক্ষুসংঘের উন্নতি ও শ্রীবৃদ্ধি হয়। তখন বুদ্ধ বলেন, বর্ষাবাস সমাপ্তির পর তোমরা একত্রিত হয়ে প্রবারণা করবে। সেই থেকে বুদ্ধ প্রতিবছর বর্ষাব্রত পালন শেষে বাধ্যতামূলকভাবে প্রবারণা করার অনুজ্ঞা প্রদান করেন। বুদ্ধ বলেন, বর্ষাবাস শেষে তোমরা পরষ্পরের দোষ-ত্র“টি স্বীকার করে, পরষ্পরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। বড় ভিক্ষু ছোট ভিক্ষুর সামনে ছোট ভিক্ষু বড় ভিক্ষুর সামনে বসে উক্ত কথা গুলো উচ্চারণ করবে। এতে করে সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে থাকে। আবার বুদ্ধ বুদ্ধত্বলাভের পরবর্তী প্রথম বর্ষাবাসান্তে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথিতে জগতের কল্যাণার্থে ভিক্ষুসংঘকে আহবান করে বলেছিলেন, হে ভিক্ষুগণ — তোমরা দিকে দিকে বিচরণ কর; বহুজনের হিতের জন্য, বহুজনের সুখের জন্য, জগতের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শনের জন্য, দেবতা ও মনুষ্যের সুখের জন্য। কিন্তু দুইজন একসাথে যেওনা। হে ভিক্ষুগণ! তোমরা ধর্ম দেশনা কর, যার আদিতে কল্যাণ, মধ্যে কল্যাণ ও অন্তে কল্যাণ এবং অর্থযুক্ত, ব্যঞ্জনযুক্ত সমগ্র পরিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধ ব্রক্ষ্মচর্য প্রকাশিত কর। ধর্ম প্রচারের জন্য ভিক্ষুসংঘের প্রতি এটাই বুদ্ধের প্রথম নির্দেশ। দেবলোক হইতে বুদ্ধের সাংকাস্য নগরে অবতরণ ঃ শ্রাবস্তীর গন্ডাম্র বৃক্ষমূলে তথাগত বুদ্ধ যমক প্রতিহার্য্য ঋদ্ধি প্রদর্শন করে বুদ্ধের মাতাকে ধর্মদেশনা প্রদান করার জন্য তাবতিংস স্বর্গে গমন করেন। সেখানে তিন মাস অবস্থানের পর সপ্তম বর্ষাবাস সমাপ্ত করে মর্ত্যভূমিতে আসার জন্য দেবরাজের নিকট অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। দেবরাজ ইন্দ্র সাংকাস্য নগরের পূরুদ্বার পর্যন্ত তিনখানি সোপান রচনা করলেন। মধ্যম সোপান মণিবর্ণ, ডান সোপান স্বর্ণবর্ণ ও বাম সোপান রৌপ্য বর্ণ। যখন মণি বর্ণ সোপান দিয়ে বুদ্ধ দেবলোক হতে অবতরণ করছিলেন তখন সম্মুখে দেবপুত্রগণ বীণাবাদন করেন এবং মহাব্রক্ষ্মা শ্বেতচ্ছত্র ধারণ করেন। স্বর্ণ সোপান দিয়ে মহাব্রক্ষ্মাগণ ও রৌপ্য সোপান দিয়ে দেবগণ শোভাযাত্রা করেছিলেন। তখন সাংকাস্য নগরে দেবতা, ব্রক্ষ্মা ও মনুষ্যে একাকার হয়ে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। দেবলোক হতে বুদ্ধগণের অবতরণের অন্যকোন স্থান নেই। এই স্থান অপরিবর্তনীয়। প্রবারণা দুই প্রকার। যথা – পূর্ব কার্তিক প্রবারণা ও পশ্চিম কার্তিক প্রবারণা। বিনয়ের বিধান অনুযায়ী আষাঢ়ী পূর্ণিমা হতে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত এ তিন মাস বর্ষাব্রত পালন শেষে আশ্বিনী পূর্ণিমা উদযাপনকে পূর্ব কার্তিক প্রবারণা বলা হয়। পূর্ব কার্তিক প্রবারণার পর দিন হতে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ কোন কারণে কোন ভিক্ষু বা ভিক্ষুসংঘ যদি কোন বিহারে আষাঢ়ী পূর্ণিমা হতে বর্ষাব্রত পালন না করে শ্রাবণী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত বর্ষাবাস পালন শেষে কার্তিকী পূর্ণিমা উদযাপন করে থাকে তবে তাকে পশ্চিম কার্তিক প্রবারণা বলে। এক কথায় প্রবারণা হচ্ছে যথার্থরূপে বারণ ও প্রকৃষ্টরূপে বরণ সকল প্রকার অসুন্দর ও অন্যায়কে বর্জন বা বারণ করে কুশল সত্য ও সুন্দরকে বরণ করার মধ্যে দিয়ে আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংযমের অনুশীলন। প্রবারণার মাধ্যমে বুদ্ধ আমাদের মৈত্রী চিত্তে সমভাবে চলার শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষ যেহেতু তাই আমাদের মধ্যে ভুলভ্রান্তি, ঝগড়া-বিবাদ হবেই। সেগুলিকে মনের মধ্যে জমা না রেখে পরষ্পর পরষ্পরের সহিত ক্ষমা প্রার্থনা করে একত্রে সুন্দরভাবে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন। অনেক বিহারে কিন্তু উপাসক-উপাসিকারা ও প্রবারণার দিন পরষ্পর পরষ্পরের সহিত ক্ষমা প্রার্থনা করে। প্রবারণা উৎসব বর্তমান সমাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তিনমাসব্যাপী উপোসথ পালন শেষে প্রবারণার দিন সকলে পঞ্চশীল ও অষ্টশীলে অধিষ্টিত হয়ে খুবই জাকজমকভাবে প্রবারণা উৎসব পালন করে। বিশেষ আকর্ষণ থাকে সন্ধ্যার সময় বিভিন্ন বিহারে ফানুষ উড়ানো। প্রবারণার পরদিন থেকেই শুরু হয় কঠিন চীবর দানোৎসব। প্রবারণা দিনটি সকলের আনন্দে উৎসবের আমেজে কাটুক এই প্রত্যাশা করছি। সকলেই সুখী হোন। পরিশেষে বাংলাদেশ সরকারের নিকট আবেদন জানাচ্ছি, বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমার দিন সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হোক। এটি বৌদ্ধদের প্রাণের দাবী।

সম্মন্ধে vuato2

এটা ও দেখতে পারেন

খুব সংক্ষেপে মহাসতিপট্ঠান সহায়িকা

একূশটি উপায়ে অরহ্ত্ত্ব লাভের উপায় তথা কর্মস্থান সংযূক্ত গভীর অর্থসংযুক্ত মহাসতিপট্ঠান সূত্তI এখানে একুশটি উপায়ে …

Leave a Reply

Translate »