ব্রেকিং নিউজ

মাতা-পিতার সেবা করা, ধর্মতঃ স্ত্রী-পুত্রের লালন-পালন ও উপকার করা, নিষ্পাপ কর্ম সম্পাদন করা উত্তম মঙ্গল।–কেন?

ইলা মুৎসুদ্দী

22

মাতা-পিতু উপট্ঠানং পুত্তদারস্স সঙ্গহো

অনাকুলা চ কম্মন্তা এতং মঙ্গল মুত্তমং।

মাতা-পিতার সেবা করা, ধর্মতঃ স্ত্রী-পুত্রের লালন-পালন ও উপকার করা, নিষ্পাপ কর্ম সম্পাদন করা উত্তম মঙ্গল।

এই সংসারে পুত্র-কন্যাগণের পক্ষে মাতা-পিতা আদি গুরু ও মহাব্রহ্মা। মাতা-পিতার গুণ অনন্ত অপ্রমেয়। এঁরা পুত্র-কন্যার জন্মদাতা অঙ্গবর্ষণকারী পোষণকারী ও সংসারের পথ প্রদর্শক। এরূপ অনন্ত গুণ সম্পন্ন মাতা-পিতার সেবা করা পুত্র-কন্যাগণের অবশ্যই কর্তব্য। মাতা-পিতার পায়ের নীচেই পুত্র-কন্যাগণের স্বর্গভূমি। যারা মাতা-পিতার সেবা-পূজা না করে, তাদের স্বর্গ-মোক্ষ লাভের আশা সুদূর পরাহত। সাধারণতঃ পণ্ডিত জ্ঞানী মাতা-পিতাগণ পাঁচটি কারণ সন্দর্শন করে পুত্র-সন্তান কামনা করেন। তাঁরা চিন্তা করেন-

(১) আমরা পুত্রকে যেরূপ লালন-পালন করেছি, পুত্রও আমাদিগকে বৃদ্ধকালে শেষ বয়সে উপাদেয় নানা খাদ্য-ভোজ্য দ্বারা সেবা করবে।

(২) দ্বিতীয়তঃ আমাদের কোন প্রকার জরুরী কার্য উপস্থিত হলে, পুত্র তা’ সমাধা করে নেবে।

(৩) তৃতীয়তঃ উপার্জিত ধন-সম্পদ অনর্থক অপচয় না করে সুন্দরভাবে রক্ষা করতঃ কুল মর্যাদা চিরস্থায়ী রাখবে। অথবা যেভাবে আমরা পালাক্রমে শ্রমণ-ব্রাহ্মণদিগকে পিণ্ড-ভৈষজ্যাদি দিয়ে আসছি, পুত্রেরাও সেভাবে দিয়ে বংশ চিরোজ্জ্বল করে রাখবে।

(৪) চতুর্থতঃ কুল-মর্যাদা রক্ষা করে বংশানুক্রমে আগত পুণ্যক্রিয়াদি সম্পাদন করে নিজকে বংশের উত্তরাধিকারী করবে।

(৫) পঞ্চমতঃ আমরা পরলোক গমন করলে আমাদের উদ্দেশ্যে শীলবান শ্রমণ ব্রাহ্মণকে দান দিয়ে পুণ্য দক্ষিণা প্রদান করবে। এই পাঁচটি আশা মাতা-পিতাগণ অবশ্যই করে থাকেন।

কৃতজ্ঞ পণ্ডিত পুত্রগণ মাতা-পিতার উপরোক্ত পাঁচটি আশা পূর্ণ করেন। যদি এরূপ সদাশয়া মাতাকে এক স্কন্ধে, সদাশয় পিতাকে একস্কন্ধে রেখে শত বৎসর যাবৎ সেবা-শুশ্রƒযা করে অথবা সপ্তরতœ সমন্বিত চক্রবর্তীর রাজ সিংহাসনের অধিকারী করে, তবুও মাতা-পিতার ঋণ পরিশোধ করা যায় না। পরন্তু যেই কৃতজ্ঞ পুত্র মাতা-পিতাকে শরণ-শীলে, দান-ধর্মে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারেন, দান-শীল-ভাবনায় নিবিষ্ট করান, তাতেই মাতা-পিতার ঋণ পরিশোধ হয়। তখন পুত্র ঋণ-মুক্ত হয়।

মাতা-পিতা মাত্রেই পুত্র কন্যার উপকার করে থাকেন। মাতা-পিতা অজ্ঞ হোক বা জ্ঞানী হোক পুত্র-কন্যার উপকার না করে বসে থাকেন না। কিভাবে পুত্র-কন্যা মানুষ হবে, লিখা-পড়া শিখে জ্ঞানী হবে, দেশে সমাজে আÍপ্রতিষ্ঠা অর্জন করবে বা সুখে জীবন ধারণ করতে পারবে ইত্যাদি বিষয় মাতা-পিতাগণ চিন্তা করে থাকেন। মাতা-পিতা পুত্র-কন্যাদিগকে আরো নানাভাবে উপকার করে থাকেন। যেমন পাপকার্য হতে নিবারণ, মঙ্গলকর কার্যে নিয়োগ, সৎশিক্ষা দ্বারা জ্ঞান অর্জন, ভদ্রোচিত বয়সে বিবাহ কার্য সম্পাদন এবং সঞ্চিত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী করণ ইত্যাদি। সুতরাং এমন গুণী-জ্ঞানী মাতা-পিতার সেবা করা প্রত্যেক পুত্র-কন্যাগণের অবশ্যই কর্তব্য।

স্ত্রী-পুত্রের উপকার করা। স্ত্রী-পুত্রকে লালন-পালন ও ভরণ পোষণ দেবার জন্য গৃহস্বামী আপ্রাণ চেষ্টা করেন। তৎগতপ্রাণ হয়ে গৃহস্বামী রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, হাড়কাঁপা ঠাণ্ডায় দুই পয়সা অর্জন করে স্ত্রী-পুত্রকে পোষণ করেন। ইহ জীবনে সুখে চলবার জন্যে বা দশজনের সাথে সমকক্ষ হয়ে অবস্থানের জন্য যে চেষ্টা করেন তাহা নহে, ধার্মিক গৃহস্বামী তাদের পরলোক বিষয়ও চিন্তা করে ধর্মতঃ অনুশাসন করেন। তারা যাতে নির্বিঘেœ দানর্ধম করতে পারে, উপোসথ দিবসে উপোসথ গ্রহণ করতে পারে বা দেশে কোন ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠিত হলে তাতে যোগ দিতে পারে সেদিকেও বিশেষ লক্ষ্য রাখেন। তাই দেবরাজ ইন্দ্রের ভাষিত গাথাটি প্রণিধান যোগ্য-

যে গহ্টঠ পুঞঞকর সীলবন্ত উপাসক

ধম্মেন দারং পোসেন্তি তে নমস্সামি মাতলি।

যেই গৃহস্বামী শীলবান, সর্বদা পুণ্যার্জনে সচেষ্ট, ধর্মতঃ স্ত্রী-পুত্র পোষণ করেন এবং দশ উপাসকগুণে স্থিত তাঁকেই আমি নমস্কার করি।

নিষ্পাপ কর্ম সম্পাদন করা। গৃহী জীবন এতই কর্মবহুল যে এই জীবনে নিষ্পাপভাবে জীবন যাগপন করা বড়ই দুঃসাধ্য। এমন একটি দিন বা মুহূর্ত নাই সংসার জীবন চালনার জন্য পাপ করতে হয় না। ত্রিদ্বার অসংযমের কারণেই প্রমত্ত গৃহীরা পাপকর্ম করতে ছাড়ে না। গৃহী জীবনে পঞ্চ অধর্ম বাণিজ্য বিষবৎ ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। পরলোক ভয়দর্শী গৃহীরা পঞ্চশীলকে অক্ষুণœভাবে রক্ষা করে এবং পঞ্চ অধর্ম বাণিজ্য ত্যাগ করে ধর্মতঃ জীবিকার মাধ্যমে জীবন যাপন করে।

সূত্র ঃ বিশ্বমঙ্গল ও বিবিধ প্রসঙ্গ, শ্রী কোণ্ডাঞো ভিক্ষু।

 

সম্মন্ধে ela mutsuddi

এটা ও দেখতে পারেন

খুব সংক্ষেপে মহাসতিপট্ঠান সহায়িকা

একূশটি উপায়ে অরহ্ত্ত্ব লাভের উপায় তথা কর্মস্থান সংযূক্ত গভীর অর্থসংযুক্ত মহাসতিপট্ঠান সূত্তI এখানে একুশটি উপায়ে …

Leave a Reply

Translate »