ব্রেকিং নিউজ

বুদ্ধের পিতা রাজা শুদ্ধোধন কখন কিভাবে ধর্মচক্ষু লাভ করেছিলেন?

ইলা মুৎসুদ্দী

b11

বুদ্ধ পরদিন প্রত্যুষ সময়ে গাত্রোত্থান করিয়া কি উপায়ে অদ্য ভোজন সমাধান করিবেন চিন্তা করিয়া “অদ্য পূর্ববুদ্ধগণের প্রতিপদা* আচরণ করাই সর্বোত্তম হইবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলেন। তাঁহার মনে হইল -পূর্ব পূর্ব বুদ্ধগণ নিমন্ত্রণ ব্যতীত জনগণের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষাচরণ করিয়া জীবন ধারণ করিয়াছিলেন। বিনা নিমন্ত্রণে কাহারো গৃহে ভোজন করেন নাই। বুদ্ধ এই প্রতিপদকে সর্বোত্তম বলিয়া প্রশংসা করার পর দুই অযুত ভিক্ষুসংঘ সমবিভ্যাহারে নগরের সর্বসাধারণের গ্রহের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষার্থ নিষ্ক্রান্ত হইলেন। তাহা দর্শন করিয়া শাক্যবংশীয়গণ আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া বক্ষে করাঘাত করিয়া দলে দলে বলাবলি করিতে লাগিল- “গৌতম শাক্য রাজবংশের গৌরব ও বংশ মর্যাদা পদদলিত করিয়া ভিখারীর ন্যায় অপরের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করিয়া জীবন ধারণ করিবে, ইহা কি শাক্য রাজবংশের অপমান নহে?” কপিলাবস্তু নগরীর দ্বিতল ত্রিতল বিশিষ্ট সুউচ্চ অট্টালিকা সমূহের উন্মুক্ত বাতায়ন হইতে পরম উৎসুক ভারাক্রন্ত নেত্রে অসংখ্য নরনারী সেই দৃশ্য দেখিতে লাগিল। সিদ্ধার্থের জীবনসঙ্গিনী দেবী রাহুলমাতা অত্যধিক মর্মবেদনায় বলিতে লাগিলেন- “একসময় আর্যপুত্র এই নগরে অত্যন্ত আগম্বরপূর্ণ স্বর্ণ শিবিকায় বিচরণ করিতেন। অথচ তিনি আজ কেশশ্মশ্রু মুন্ডন করিয়া এবং কাষায় বস্ত্রে দেহ আচ্ছাদিত করিয়া লোকের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষাপাত্র হাতে ভিক্ষা করিতেছেন! তাঁহার পক্ষে ইহা কি শোভনীয় হইয়াছে? তিনি রাজপ্রাসাদের মুক্ত বাতায়ন হইতে ¯পষ্ট দেখিতে পাইলেন বৈরাগ্যোজ্জ্বল আলোক প্রভায় নগরবীথি উদ্ভাসিত করিয়া ভগবান বুদ্ধ অগ্রসর হইতেছেন। অপূর্ব ব্যামপ্রভা বিকীরণশীল, অশীতিঅনুভিজ্ঞানাভিষিক্ত, বত্রিশ মাঙ্গল্য লক্ষণে সুপরিস্ফুট ও অনুপম বুদ্ধশ্রীতে পরিশোভিত সিদ্ধার্থের আপাদ মস্তক লক্ষ্য করিয়া পাশে অবস্থানরত পুত্র রাহুলের দৃষ্টি সেইদিকে আকর্ষণ করিয়া অষ্টবিধ নরসিংহ গাথার সাহায্যে তাঁহার পিতার অপূর্ব অত্যাশ্চর্য্যগুণ বর্ণনা করিয়া ব্যাখ্যা করিলেন। ইহার পর রাজা শুদ্ধোধনের সমীপে আগমন করতঃ এইভাবে সংবাদ জ্ঞাপন করিলেন “হে পিতঃ, শাক্যকুল অধিপতি, আপনার পুত্র পিতামাতা, স্ত্রী, পুত্র, বংশ ও জাতির মর্য্যাদা পদদলিত করিয়া শুধু খাদ্য লাভ বা জীবন ধারণের আশায় সর্বসাধারণের দ্বারে দ্বারে স্থিত হইয়া ভিক্ষা করিয়া বিচরণ করিতেছেন। ইহা কি আপনি পছন্দ করেন পিতঃ?” এই বলিয়া রাহুলমাতা যশোধারা অভিযোগ করিলেন। রাজা শুদ্ধোধন এই সংবাদ শ্রবণ করিয়া বিস্ময়াপন্ন হইলেন এবং তৎক্ষণাৎ রাজপ্রাসাদ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া বুদ্ধ সমীপে উপনীত হইলেন। বুদ্ধকে বলিলেন, “প্রিয় তথাগত বুদ্ধ, পিতামাতা, স্ত্রী-পুত্র, ও জ্ঞাতিগণের মান মর্যাদা জলাঞ্জলি দিয়া এই রকম ভিক্ষান্নে জীবন ধারণ করা আমাদের অত্যন্ত লজ্জার কারণ নহে কি? কি কল্যাণ কারণ দর্শন করিয়া সমগ্র রাজপরিবার এবং শাক্যবংশকে ভিখারী বলিয়া পরিচয় দিতে চাহিতেছেন? এই দুই অযুত ভিক্ষু সংঘকে খাদ্যদানে আপনার পিতা কি সক্ষম নহে বলিয়া ভাবিয়াছেন?” এই বলিয়া রাজা শুদ্ধোধন বুদ্ধকে প্রশ্ন করিলেন।

বুদ্ধ পিতা রাজা শুদ্ধোধন এই প্রশ্ন শ্রবণ করিলে উত্তর প্রদান করিলেন, “এইভাবে ভিক্ষাচরণ করিয়া জীবন ধারণ করাই আমার বংশগত নিয়ম এবং ইহাই অতি উত্তম প্রশংসিত নিয়ম।” তদুত্তরে রাজা শুদ্ধোধন মনক্ষুন্ন হইয়া বলিলেন, “হে তথাগত বুদ্ধ, মহাসম্মত রাজা হইতে  ক্রমাগত চারিসহস্র পাঁচশত সত্তরজন রাজা এই সুবিখ্যাত ক্ষত্রিয় বংশে রাজত্ত্ব করিয়া গিয়াছেন। বর্তমানে আমি এই বংশের রাজা, এই বংশের মধ্যে এই যাবত কেহ ভিক্ষাচরণ করিয়া জীবন ধারণ করিয়াছে বলিয়া আমি শ্রবণ করি নাই। আপনি এই সুবিখ্যাত ক্ষত্রিয় বংশের রাজপুত্র, আপনি কেন ভিক্ষাচরণ করিতেছেন?”

বুদ্ধ তাহা শুনিয়া রাজাকে সান্ত¦না প্রদান পূর্বক বলিলেন-“মহারাজ সত্যই আপনার বংশ ক্ষত্রিয় রাজবংশ। কিন্তু আমার বংশ এখন অন্য। আমার বংশ বুদ্ধগণের বংশ। দীপঙ্কর, কোন্ডন্য আদি বুদ্ধ হইতে আরম্ভ করিয়া ককুসন্ধ, কোনাগমন ও কাশ্যপ বুদ্ধ পর্য্যন্ত এই বংশকে বলা হয় বুদ্ধ বংশ। আমি তাঁহাদেরই বংশধারা সেই বহু সহস্র সংখ্যক পূর্ব পূর্ব বুদ্ধগণ সকলেই ভিক্ষাচারী ছিলেন। কাহারো দ্বারা আমন্ত্রিত না হইলে তাঁহারা সকলেই ভিক্ষাচরণ দ্বারাই জীবিকা নির্বাহ করিয়াছিলেন এই বলিয়া বুদ্ধ রাজপথে দন্ডায়মান অবস্থায় রাজাকে লক্ষ্য করিয়া এই গাথা ভাষণ করিলেনঃ

                                উঠ্ঠিত্তে নপ্পমজেঝয় ধম্মং সচরিতং চরে,

                                ধম্মচারী সুখংচেতি অম্মিংলোকে পরম্হি-চ।”

অনুবাদঃ উঠো, জাগো, প্রমত্ত ভাবে বৃথা কাল ক্ষেপন করিও না। সচেতন হইয়া সদ্ধর্ম আচরণ কর। যেইজন এই ধর্ম আচরণ করে সেই ব্যক্তিই ইহকাল ও পরকালে সুখলাভ করিয়া থাকে।

গাথাটি শ্রবণ করিয়া রাজা শুদ্ধোধন স্রোতাপত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হইলেন।

স্রোতাপত্তি ফল লাভ করিয়াই রাজা শুদ্ধোধন ভগবান বুদ্ধের হাত হইতে ভিক্ষাপাত্রটি গ্রহণ করিয়া সশিষ্য বুদ্ধকে রাজ অন্তঃপুরে লইয়া গেলেন এবং উত্তম খাদ্য ভোজ্যদ্বারা সকলকে পরিতৃপ্ত করিলেন।

সূত্র – বুদ্ধের সমকালীন ভিক্ষুসংঘ, মুদিতারত্ন ভিক্ষু

 

সম্মন্ধে ela mutsuddi

এটা ও দেখতে পারেন

খুব সংক্ষেপে মহাসতিপট্ঠান সহায়িকা

একূশটি উপায়ে অরহ্ত্ত্ব লাভের উপায় তথা কর্মস্থান সংযূক্ত গভীর অর্থসংযুক্ত মহাসতিপট্ঠান সূত্তI এখানে একুশটি উপায়ে …

Leave a Reply

Translate »