ব্রেকিং নিউজ

গৃহী সমাজের শ্রদ্ধা উৎপাদনে সমর্থবান শিষ্যদের মধ্যে স্থবির কালুদায়ীই সর্বশ্রেষ্ঠ —– তথাগত কেন বলিয়াছিলেন? (পর্ব ২)

 

ইলা মুৎসুদ্দী

b11

 

তখন শাস্তা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন “উদায়ী, তুমি এত মধুর স্বরে আমাকে স্বগ্রামে যাইতে উৎসাহ প্রদান করিতেছ কেন?”

উদায়ী সবিনয়ে বরিলেন, “ভন্তে, আপনার বৃদ্ধ পিতা মহারাজ শুদ্ধোধন আপনাকে দর্শন করিতে একান্ত অভিলাষী। আপনি তাঁহাকে একবার দর্শন দান করিয়া জ্ঞাতি কর্তব্য সম্পদন করুন।” উদায়ীর অনুরোধে সম্মত হইয়া শাস্তা কহিলেন “হ্যাঁ উদায়ী, এইবার আমি সত্যই কপিলাবস্তুতে গিয়া আত্মীয়গণকে দর্শন দান কবির।” তথাগত কপিলাবস্তু যাত্রার জন্য ইচ্ছা করিয়াছেন এবং আমার অনুগামী হওয়ার জন্য সকলকে প্রস্তুত হইতে বল।” ইহাতে স্থবির সমধিক আনন্দিত হইলেন এবং সানন্দে তাহা ভিক্ষু সংঘের মধ্যে প্রচার করিলেন।

অতঃপর ভগবান বুদ্ধ ফাল্গুনী পূর্ণিমার পর প্রতিপদ দিবসে অঙ্গমগধবাসী দশ হাজার কুলপুত্র এবং কপিলাবস্তু নিবাসী দশ হাজার এই সর্বমোট বিশ হাজার ক্ষীনাশ্রব ভিক্ষু পরিবৃত হইয়া রাজগৃহ নগর হইতে কপিলাবস্তুর উদ্দেশ্যে যাত্রা করিলেন। রাজগৃহ হইতে ষাটযোজন দূরবর্তী কপিলাবস্তু নগরে দুইমাস পৌঁছবার উদ্দেশ্যে তিনি প্রত্যহ এক যোজন করিয়া ধীর ও মন্থর গতিতে পথ চলিতে লাগিলেন।

ভগবান বুদ্ধ রাজগৃহ হইতে কপিলাবস্তু অভিমুখে রওনা হইয়াছেন-এই সংবাদ রাজা শুদ্ধোধনের কর্ণগোচর করিবার জন্য স্থবির উদায়ী ঋদ্ধিযোগে সহসা আকাশ পথে আগমন করিয়া কপিলাবস্তুর রাজবাড়ীতে আবির্ভূত হইলেন। উদায়ীকে দেখিয়া রাজা প্রীতি প্রফল্ল হৃদয়ে তাঁহাকে মহামূল্য আসনে উপবেশন করাইয়া আপনার জন্য প্রস্তুত বিবিধ স্বাদযুক্ত খাদ্যদ্রব্য পাত্রপূর্ণ করিয়া দান করিলেন। দান গ্রহণের পর স্থবির শাস্তার আগমনের সংবাদ বিবৃত করিয়া চলিয়া যাওয়ার উদ্যোগ করিলে রাজা তাঁহাকে এই অনুরোধ করিলেন, “ভন্তে আপনি এখানে বসিয়াই ভোজন করুন।”

“না মহারাজ, আমি শাস্তার নিকট গিয়া ভোজন করিব” বলিয়া স্থবির উত্তর দিলেন।

রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, “ভন্তে শাস্তা এখন কোথায় আছেন?”

স্থবির প্রত্যুত্তরে বলিলেন, “তিনি বিশ সহস্র ক্ষীণাশ্রব ভিক্ষু পরিবৃত হইয়া আপনাকে দর্শন করিবার জন্য রাজগৃহ হইতে কপিলাবস্তুর দিকে রওনা হইয়াছেন, এখন পথিমধ্যে রহিয়াছেন।”

এই শুভ সংবাদে রাজা অত্যধিক সন্তুষ্ট হইয়া স্থবিরকে আবার বলিলেন, “ভন্তে, আপনি স্বয়ং ইহা ভোজন করুন। আমি শাস্তার জন্যও আহার্য প্রদান করিতেছি। আপনার কাছে আমার একটি অনুরোধ -এই নগরে পৌঁছানো পর্য্যন্ত আমার পুত্রের জন্য আপনি এখন হইতেই প্রত্যহ ভিক্ষান্ন লইয়া যাইবেন।” স্থবির তাহাতে সম্মতি জ্ঞাপন করিলেন।

স্থবিরের ভোজন সমাপ্ত হইলে রাজা ভিক্ষাপাত্রটি সুগন্ধ চূর্ণাদি দ্বারা উত্তমরূপে পরিস্কার করাইয়া পুষ্টিকর ভোজ্যদ্রব্যে পরিপূর্ণ করিয়া তাহা স্থবিরের হাতে তুলিয়া দিয়া বলিলেন “ভন্তে, এই আহার্য বস্তু তথাগতকে প্রদান করুন।”

স্থবির উদায়ী সকলের দৃষ্টিপথের সম্মুখেই পাত্রটি উর্ধ্বে ক্ষেপন করিলেন এবং নিজেও আকাশে উত্থিত হইয়া ভিক্ষাপাত্রটি অন্তরীক্ষ পথে আনয়ন পূর্বক শাস্তার হস্তে সমর্পণ করিলেন। শাস্তা তৃপ্তির সহিত তাহা ভোজন করিলেন। এই প্রকারে স্থবির কালুদায়ী কপিলাবস্তুর রাজপ্রাসাদ হইতে প্রত্যেকদিন তথাগতের জন্য ভিক্ষা সংগ্রহ করিয়া আনিতেন এবং শাস্তাও পথিমধ্যে রাজার প্রেরিত দান ভোজন করিতেন। স্থবিরকে প্রত্যহ রাজ অন্তপুরে আহার দ্বারা পূজা করা হইত। প্রত্যহ রাজ অন্তপুরে ভেজান সমাপনান্তে স্থবির “অদ্য ভগবান এতদূর পৌঁছিয়াছেন -অদ্য এতদূর -এইরূপে প্রতিদিন বুদ্ধের আগমন সংবাদ প্রচার ও বুদ্ধের গুণকীর্তন করিতে করিতে বুদ্ধের দর্শন লাভের পূর্বেই শাস্তার প্রতি সমস্ত রাজ অন্তপুরবাসীর শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিয়াছিলেন। এই কারণে পরবর্তীকালে ভগবান বুদ্ধ স্থবির কালুদায়ীকে এই পদে অগ্রস্থান প্রদান করিয়া ভিক্ষুগণকে বলিয়াছিলেন- “হে ভিক্ষুগণ, গৃহী সমাজের শ্রদ্ধা উৎপাদনে সমর্থবান আমার শিষ্যদের মধ্যে স্থবির কালুদায়ীই সর্বশ্রেষ্ঠ।”

 

সূত্র – বুদ্ধের সমকালীন ভিক্ষুসংঘ, মুদিতারত্ন ভিক্ষু

সম্মন্ধে ela mutsuddi

এটা ও দেখতে পারেন

খুব সংক্ষেপে মহাসতিপট্ঠান সহায়িকা

একূশটি উপায়ে অরহ্ত্ত্ব লাভের উপায় তথা কর্মস্থান সংযূক্ত গভীর অর্থসংযুক্ত মহাসতিপট্ঠান সূত্তI এখানে একুশটি উপায়ে …

Leave a Reply

Translate »